নিজেকে আল্লাহর একান্ত মুখলিস, অনুগত বান্দা হিশেবে প্রতিষ্ঠা করুন। নিজের আমলকে বাড়িয়ে দিন। পাপগুলো থেকে বেরিয়ে এসে ইবাদাত-আমলে নিজেকে এমন স্থানে উন্নীত করুন যেখানে পৌঁছাতে পারলে আপনার অনুপস্থিতিতে আল্লাহ আপনার সন্তান, আপনার পরিবার-পরিজনদের দেখভালের জন্য একজন খিযিরকে পাঠিয়ে দেবেন।

মৃত্যুর কথা চিন্তা করলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি।
 নিজেদের পাপের কথা ভেবে, যে অনিশ্চিত গন্তব্যে পাড়ি জমাতে হবে, কেমন হবে সেখানকার জীবন— সেসব ভেবে।
 
তবে, আরো একটা ব্যাপারেও দুশ্চিন্তা গ্রাস করে আমাদের, আর তা হলো— আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের পরিবারের কী হবে? আমার অনুপস্থিতিতে কে হাল ধরবে আমার সাজানো-গোছানো সংসারের?
যদিও চিন্তাটা অমূলক, তাকদির-বিরোধি এবং তাওয়াক্কুল-পরিপন্থী, তথাপি অধিকাংশ মানুষ মৃত্যুর কথা ভাবতে গেলেই শয়তান এই চিন্তাটাকে তার সামনে এনে হাজির করে।
 
যদি আগামিকাল আপনি মারা যান, আপনার ছোট্ট বাচ্চাটার কী হবে তাহলে? তার দেখভাল কে করবে? কে তাকে আগলে রাখবে পরম মমতায়?
যদি আপনি মারা যান, আপনার বিধবা স্ত্রী কিভাবে কাটাবে বাকিটা জীবন? আপনার বৃদ্ধা মা আর বিছানায় পড়ে থাকা অসুস্থ পিতা— কী হবে তাদের সকলের?
সাধারণত এমন চিন্তায় আমরা ঘাবড়ে যাই। ভবিষ্যতের এক ঘোর অনিশ্চয়তার আঁধার ঝেঁকে বসে আমাদের মনে।
 
 
তবে, এই ধরণের ভাবনা থেকে বাঁচতে কুরআন আমাদের একটা সুন্দর সমাধান বাতলে দিতে পারে।
সমাধানটার জন্য আমরা চলে যেতে পারি সূরা আল কাহাফের মূসা আলাইহিস সালাম এবং খিযির আলাইহিস সালামের ঘটনায়। 
 
আমরা জানি— খিযির আলাইহিস সালামের একের পর এক অদ্ভুত কান্ড দেখে মুসা আলাইহিস সালাম আশ্চর্যান্বিত হয়ে পড়ছিলেন। খিযির আলাইহিস সালাম এমনসব কাজ করছিলেন যার আপাতদৃষ্টিতে কোন যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা নেই। দরিদ্র মাঝির নৌকা ফুঁটো করে দেওয়া, একটা বালককে হত্যা করা আর একটা জনপদ থেকে তিরস্কিত হয়েও সেখানকার প্রায় ভেঙে যাওয়া দেয়াল মেরামত করে দেওয়ার মতো কাজ করে তিনি চমকে দিচ্ছিলেন মুসা আলাইহিস সালামকে।
 
এদিকে, সবকিছু ধৈর্য সহকারে পর্যবেক্ষণ করা এবং বিনা বাক্য-ব্যয়ে দেখে যাওয়ার শর্তে খিযির আলাইহিস সালামের সফর-সাথী হওয়ার পরেও বারংবার ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছিলেন মুসা আলাইহিস সালাম। তিনি প্রতিটি ঘটনায় হতবাক হচ্ছিলেন আর প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন খিযির আলাইহিস সালামকে।
ওই সফরে যে তিনটি অবাক কান্ড খিযির আলাইহিস সালামের হাতে সংঘটিত হয়েছিলো তার মধ্যে একটি ছিলো— একটা জনপদে খাবার চেয়ে তিরস্কিত হওয়ার পরেও, ওই জনপদের-ই একটা প্রায় ভেঙে যাওয়া, ভগ্ন দেয়ালকে তিনি নিজের হাতে মেরামত করে দিয়েছিলেন।
 
খিযির আলাইহিস সালামের এই কান্ড দেখে অবাক হলেন মুসা আলাইহিস সালাম। তিনি ভাবলেন, 'আরে, এই লোকগুলোর কাছে আমরা একটু খাবার চাইলাম তা তো দিলো-ই না, উপরন্তু তিরস্কার করে আমাদের তাড়িয়ে দিলো। কিন্তু এই লোক কী-না সেই অকৃতজ্ঞ মানুষগুলো উপকারে লেগে গেলো! উপকার করুক, অন্তত তার পারিশ্রমিক তো নিতে পারে যা দিয়ে আমরা খাবার কিনে খেতে পারতাম'।
খিযির আলাইহিস সালামকে তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রশ্ন করে বসেন যে— কেনো এই অকৃতজ্ঞ লোকগুলোর ভগ্ন দেয়াল তিনি মেরামত করে দিলেন বিনা পারিশ্রমিকে? এই প্রশ্নের উত্তরে খিযির আলাইহিস সালাম বলেছিলেন,
'আর ঐ দেয়ালটির বিষয় হলো— তা ছিল ঐ জনপদের দু’জন ইয়াতীম বালকের। তার নীচে তাদের জন্য কিছু সম্পদ রক্ষিত ছিলো। তাদের পিতা ছিলেন একজন সৎকর্মশীল ব্যক্তি। তাই আপনার প্রতিপালক চাইলেন— বালকদ্বয় যৌবনে উপনীত হোক আর তাদের গচ্ছিত সম্পদ বের করে নিক। এটা তাদের ওপর আপনার প্রতিপালকের রহমত বিশেষ'- আল কাহাফ ৮২
 
বাচ্চা দুটো ছিলো ইয়াতীম। তাদের পিতা মারা যাওয়ার আগে তাদের জন্য কিছু সম্পদ গোপনে ওই দেয়ালের নিচে পুঁতে রেখে যান। কিন্তু, এই দেয়াল যদি সত্যি সত্যি ভেঙেই পড়ে, তাহলে তার নিচে থাকা সম্পদগুলো সকলের সম্মুখে চলে আসবে এবং তা বালকদের দেওয়ার বিপরীতে, অন্যেরা ভাগ-বাটোয়ারা করে সাবাড় করে ফেলবে। ফলে, বালকেরা যথেষ্ট বড় না হওয়া অবধি আল্লাহ সেই সম্পদকে উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া থেকে আটকে দিলেন।
 
আচ্ছা, খেয়াল করে দেখুন তো, বাচ্চা দুটোর ওপর আল্লাহর এই যে বিশেষ রহমত, তারা না চাইতেও তাদের সম্পদের এই যে রক্ষণাবেক্ষণ— আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা এটা কেনো করলেন?
উত্তরটা উপরিউক্ত আয়াতের মধ্যেই আছে। ওই আয়াতের একটা জায়গায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেছেন,
'তাদের পিতা ছিলো একজন সৎকর্মশীল ব্যক্তি'।
 
বালকদ্বয়ের প্রতি আল্লাহর এই বিশেষ অনুগ্রহ তাদের কর্মের কারণে আসেনি, বরং তাদের বাবার কর্মের কারণেই এসেছে। বাচ্চা দুটোর সম্পদকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা রক্ষা করেছিলেন এই জন্যে যে— তাদের বাবা ছিলেন একজন নেককার ব্যক্তি। একজন সালেহ বান্দা। তিনি ছিলেন আল্লাহর একনিষ্ঠ ইবাদাতকারী। ফলে, তিনি মারা যাওয়ার পরেও তার বাচ্চাদের ভবিষ্যত রক্ষার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা খিযির আলাইহিস সালামের মতো একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তিকে নিয়োগ করে দিলেন।
যদি আজ আপনার মৃত্যু হয়, আগামীকাল থেকে আপনার পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ কে করবে সে ভয়ে কি আপনি ভীত?
আপনার মৃত্যুর পরে আপনার পরিবারের কী হাল হবে— তা কি আপনাকে শঙ্কিত করে?
আপনার মৃত্যু হলে আপনার বৃদ্ধা মা'কে দেখে রাখবে কে, আপনার অসুস্থ বাবার প্রয়োজন কে মেটাবে— সেই চিন্তায় কি আপনি কাতর?
 
মৃত্যু হলে, আপনার জমানো সম্পদ সন্তানদের কাজে আসবে কী-না, তা-ও কি আপনাকে চিন্তিত করে?
আপনার মৃত্যুর পর, সন্তানদের ওপর যদি কোন বিপদ আসে, তা কে সামলাবে, পরিবারে কোন বিপদ হলে তা কে দেখবে তা নিয়েও কি আপনি পেরেশান?
 
যদি উপরের সবগুলো প্রশ্নের উত্তর 'হ্যাঁ' হয়, তাহলে সেই ইয়াতীম বালকদের ঘটনাটাকে পুনরায় স্মরণ করুন যেখানে তাদের জন্য রেখে যাওয়া সম্পদকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা নিরাপত্তা দান করেছিলেন, রক্ষা করেছিলেন কেবলমাত্র একটা কারণে— তাদের পিতার নেক আমল।
 
যদি চান যে আপনার মৃত্যুর পর আপনার সন্তানাদি, আপনার পরিবার সহ সবকিছুর দায়-দায়িত্ব আল্লাহ নিক, তাহলে নিজেকে আল্লাহর একান্ত মুখলিস, অনুগত বান্দা হিশেবে প্রতিষ্ঠা করুন। নিজের আমলকে বাড়িয়ে দিন। পাপগুলো থেকে বেরিয়ে এসে ইবাদাত-আমলে নিজেকে এমন স্থানে উন্নীত করুন যেখানে পৌঁছাতে পারলে আপনার অনুপস্থিতিতে আল্লাহ আপনার সন্তান, আপনার পরিবার-পরিজনদের দেখভালের জন্য একজন খিযিরকে পাঠিয়ে দেবেন।
 
 
Fb CP 

অপকারী জ্ঞান আর অহংকার থেকে পানাহ চাই।

 

কেউ গায়ক ছিল, তবু নেশা ভুলে, রুটিরুজির পথ বন্ধ করে গান ছেড়ে এলো। মাশাআল্লাহ, আল্লাহ তার জন্য দ্বীনের পথ আবাদ করুন। 
 
অন্যদিকে কেউ কুরআনিক সায়েন্স পড়ে মানুষকে ইসলামের নতুন সংজ্ঞা শেখায়, একই সাথে পাবলিক পোস্ট দিয়ে বলিউডি নাচগানের বিবরণ দেয়, দেশের মাটিতে বলিউডি মুভি বানানোর স্বপ্ন দেখায়! বাহ, ইসলামের কী "উন্নত" সংজ্ঞা শিখছে সবাই তার কাছে, আমি চিন্তা করি। 
 
দ্বীন এত সস্তা না।
 দিনশেষে যে যার পথ বেছে নিবে। সমস্ত জাহেলিয়াতকে সাদরে সম্ভাষণ করা লোকের অনেক খ্যাতি, অনেক অনুসারী থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলেই তার শেখানো বুলি ইসলাম হয়ে যায় না।
 আল্লাহর দ্বীন আল্লাহই হেফাজত করেন, করবেন।
 খড়কুটোর মতো কোনো অচেনা লোকের মাধ্যমে দিয়ে হলেও করবেন। 
যে হয়তো কুরআনিক সায়েন্সে পড়ে নাই, কোনো সাবজেক্টে পি এইচ ডি প্রাপ্ত না, কিন্তু তাকে দেখলে আপনি বুঝবেন সে নবীজির ﷺ সুন্নত বুকে ধারণ করেছে। নবীজির ﷺ দ্বীন হলো সেই দ্বীন যা দেখে জাহেলিয়াত ভয়ে কেঁপে উঠেছিল, সেই দ্বীন যে দ্বীন পালনের দৃঢ়তা দেখে শত্রুও তার শত্রুতা ভুলে ইসলাম গ্রহণ করেছে।
 
 আর আমরা আছি, জাহেল দুনিয়ার সমস্ত কিছুর সাথে তাল মিলিয়ে সেটাকেই দ্বীন মনে করি, সেটাকেই দ্বীন বলে শেখাতে চাই।
 আমাদের নিজেদেরই দ্বীন পালনের কোনো দৃঢ়তা নাই। 
খুব পড়াশোনা আর অভিজ্ঞতার কথা বলে উল্টাই, কিন্তু এইটুকুও বুঝি নাই যে হিজাব কীভাবে করতে হবে, বলিউডি নাচগান দেখা কেন জায়েজ না এইটুকু মাথায় ঢুকে নাই,
 এই সহজ ব্যাপারটা বুঝি নাই যে ফেমিনিজমের তালে তালে নারী-পুরুষ সমঅধিকারের বুলিতে বিশ্বাস আনা দ্বীনের কথা না।
 অথচ যার দ্বীন নিয়ে এত জ্ঞান নাই, যে ইসলাম পালন করতে চায় মাত্র দুইদিন হইসে, সে-ও বোঝে এইগুলা দ্বীন না। কারণ সে নিজের সাথে সৎ, আল্লাহর সাথে সৎ। 
 
কোনো কোনো সময় জ্ঞানও মানুষের জন্য ফিতনা হয়ে যায়। 
পশ্চিমাদের শেখানো ইসলাম নিয়ে অহংকার করতে গিয়ে পুরোনোদিনের আলেমদের বোকা মনে হয়। আসলে অহংকার মানুষকে পথভ্রষ্ট করে ফেলে। 
ইবলিসও অহংকারের কারণেই পথভ্রষ্ট হইসিল। এমন অপকারী জ্ঞান আর অহংকার থেকে পানাহ চাই। আল্লাহর উপর ঈমান নিয়ে রাসূলের ﷺ পথে মরতে চাই। আমীন।
 
{CP}