কয়েকদিন আগে একটা ছোট সিরিজ দেখেছিলাম।নাথিং ইম্পর্ট্যান্ট!অস্থির চিন্তাগুলোকে ডাইভার্ট করার জন্য হালকা কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকা আর কি!
 
আমেরিকার ছোট একটা বাচ্চা ও তার পরিবারকে নিয়ে ঘটনা।বাচ্চাকে নিয়ে ছিলো বলে প্যারেন্টিংও ফোকাসড ছিলো।
তাদের প্যারেন্টিং এর ব্যাপারগুলো আমাকে খুবই নাড়া দিয়েছে! নিজের বাচ্চাগুলোকে নিয়ে স্ট্রাগল করে চলেছি,তাই হয়ত!
 
আরেকটা ব্যাপার বেশ নাড়া দিয়েছে আমাকে,তা হলো,প্যারেন্টিং এর জন্য ওরা যা করছে,তার শিক্ষা ইসলাম আরো অনেক আগেই আমাদের দিয়েছে! কিন্তু মুসলিম হয়েও আমরা তা ফলো করতে পারছিনা! 
 
তাই ভাবলাম,প্যারেন্টিং নিয়ে যা শিখলাম,তা পয়েন্ট আকারে লিখে রাখি।আল্লাহ যেন আমাকে একজন ভালো প্যারেন্ট হওয়ার তাওফিক দেয়।
 
.
বাচ্চাকে বাচ্চা নয়, একজন বড়, বুঝদার মানুষের মতো ট্রিট করা।
অর্থাৎ ঘরের একজন বড় মানুষের সাথে আমরা যেমন আচরন করি,যেভাবে সম্মান দিয়ে কথা বলি,নিজের বাচ্চার সাথেও সেরকম আচরণ করা।
 সে বাচ্চা,কিন্তু সেও একজন পরিপূর্ণ মানুষ! তার অনুভূতি একজন বড় মানুষের চেয়ে কম তো নয়ই বরং আরো নাজুক! সে আমার সন্তান,তাই বলে তার সাথে যেমন খুশি তেমন আচরন করতে পারিনা! আমি তার মালিক না! আল্লাহ তার মালিক! সে জাষ্ট আমার কাছে আল্লাহর আমানত! আমি যেমন আল্লাহর বান্দা,সে ও আল্লাহর বান্দা! 
 
এই একটা পয়েন্টের ভেতরেই আসলে অনেক কিছু চলে আসে! ঘরের একজন বড় মানুষের সাথে, আমরা অকারণ চিৎকার, চেঁচামেচি, নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া(এটা করতেই হবে তোমাকে, এখনই,টাইপ), আরেকজনের উপর করা রাগ ঝাড়া(যেটা আমরা মায়েরা প্রায়ই করি! জামাইর উপর করা রাগ বাচ্চার উপর ঝাড়ি!),বকা দেওয়া বা মার লাগানো এসব কোনোদিনই করতে পারব না! কিন্তু বাচ্চাদের সাথে ঠিকই করি! 
 
২.
বাচ্চার সাথে অনেক, অনেক কথা বলা!
  যেকোনো কিছু নিয়েই তা হতে পারে! যেকোনো টপিকে!
এবং মনোযোগ দিয়ে বাচ্চার কথা শোনা,তা যত ছোট ব্যাপার নিয়েই হোক না কেন!
 আমার কাছে ছোট ব্যাপার,আমার বাচ্চার কাছে হয়ত তা বড় কিছু!
 নিজের আনন্দ বা কষ্ট নিয়েও বাচ্চার সাথে কথা বলা যেতে পারে!তাদের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে!যেমন,আমি আমার বড় ছেলের সাহায্য চাচ্ছিলাম যে,আমি তোমাদের সাথে রাগ করতে চাই না,কিন্তু মা পারছি না!তোমদের কাজে আমার সবর ভেঙে যায় বারবার! প্লিজ আমাকে হেল্প করো! 
 
৩.
পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহনেও বাচ্চাদের রাখা,তাদের মতামত শোনা। 
এতে বাচ্চারা অনুভব করে যে,তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে! সেও পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।এতে সে দায়িত্ব নেওয়া শেখে।
 
৪.
বাচ্চাদের নিজেদের কাজ নিজেদের করতে শেখানো। 
এর পাশাপাশি ঘরের কাজও বয়স অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া।তুমি এই পরিবারের, এই ঘরের একজন সদস্য।তাই ঘরটাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে তোমাকেও অংশগ্রহণ করতে হবে! সবাই মিলেই তো পরিবার! 
 
৫.
বাচ্চাদের গায়ে কক্ষনোই হাত না তোলা।
 বাচ্চাদের কাজে রাগ হলেও যথাসম্ভব ঠান্ডা থাকার চেষ্টা করা।বকা দেওয়ার সময় ভাষার ব্যবহারে সাবধান থাকা।একান্তই না পারলে স্রেফ বাচ্চার সামনে থেকে সরে যাওয়া।এভাবে বলে যে,তোমার কাজে আমার রাগ হচ্ছে।আমি এখন তোমার সামনে থেকে সরে যাচ্ছি।এটা নিয়ে পরে কথা বলব তোমার সাথে।
তারপর মাথা ঠান্ডা হলে বাচ্চার সাথে সে ব্যাপারে কথা বলা।বাচ্চাকেও ভাবতে বলা যে,সে যেই কাজটা করেছে,তা ঠিক হয়েছে কিনা।
 
৬.
বাচ্চাকে "এটা করো"," ওটা করো" না বলে,কেন কাজটা করতে হবে,এটা সহ বুঝিয়ে বললে,সেই কাজ বাচ্চারা মন থেকে করার চেষ্টা করে। 
 
 এটার জন্যেও আসলে বাচ্চাদের সাথে মন খুলে কথা বলার প্রয়োজন।
 
বাচ্চার সাথে সম্পর্কটা এমন রাখার চেষ্টা করতে হবে,যেকোনো পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে মানসিক এবং মোরাল সাপোর্ট দিতে হবে যেন যেকোনোকিছুতে বাচ্চা বন্ধুবান্ধব বা এমন কারো কাছে ছুটে না যেয়ে আপনার কাছেই ছুটে আসে!
 
 বাচ্চা অপরাধ করলে একগাদা বকা দিয়ে দিলে সে পরবর্তীতে তার অপরাধ আপনার থেকে লুকাবে।কিন্তু যদি বুঝিয়ে বলেন,কেন তার কাজটা ভুল হয়েছে এবং আপনি কষ্ট পেয়েছেন,তাহলে বরং সে আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য স্যরি ফিল করবে।
 
৭.
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ক্ষমা চাওয়া এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার প্রচলন করা। 
ভুল হলে স্যরি বলতে দ্বিধা না করা।বাচ্চার কাজে খুশি হলে জাযাকাল্লাহু খাইরান / ধন্যবাদ বলা,বাচ্চার প্রশংসা করা,বাচ্চার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা বা সন্তান হিসেবে তাকে পেয়ে আপনি গর্বিত, এটা প্রকাশ করা খুব জরুরি!
বাচ্চাকে একবার বকা দিলে, পাঁচবার আদর করে দিবেন।যেন সে বকাটা ভুলে যায়,ভালোবাসাটা মনে রাখে! 
 
৮.
একসাথে পারিবারিক সময় কাটানো এবং প্রতিটা বাচ্চার সাথে আলাদা করে সময় কাটানো। 
 
এটা খুব এফেক্ট করে বাচ্চাদের সাথে সম্পর্ক মজবুত করতে!
যেমন,একসাথে সবাই মিলে রাতের খাবার খাওয়া আর টুকটাক গল্প করা।
সবার দিন কেমন কাটলো,সেই খোঁজ নেওয়া।সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেড়াতে যাওয়া।অন্তত একটু রিকশায় করে ঘুরে আসা বাচ্চাকে নিয়ে আর পুরোটা সময় বাচ্চার সাথে কথা বলা,তার কথা শোনা।
বাবা একটা বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে গেলে মা আরেকটা বাচ্চার সাথে ঘরে একটা কিছু গেইম খেলল বা দুজন মিলে কিছু বানালো আর গল্প করল!
এভাবে অল্টারনেট করে বাবা, মা দুজনে প্রতিটা বাচ্চার সাথে আলাদা কোয়ালিটি টাইম কাটানো।
 
দুনিয়াটা খুব র্যাপিডলি চেঞ্জ হচ্ছে।এখন একটা বাচ্চার লালনপালনে আমরা যেসব অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছি,আমাদের বাবা মা বা আমাদের দাদা দাদীর সময় অবস্থা অন্যরকম ছিলো! এই জেনারেশনকে আল্লাহ এই সময়ের জন্য উপযুক্ত করেই তৈরি করেছেন! তাই প্যারেন্টিং এর বিষয়টাকে ছোট করে দেখলে চলবে না!
বাবা মা দুজনকেই এই কাজে অংশ নিতে হবে! 
আর আল্লাহর কাছে অনেক, অনেক দুয়া করে যেতে হবে প্রতিনিয়ত! সন্তানের জন্য করা বাবা মায়ের দুয়া আল্লাহ কখনোই ফিরিয়ে দেন না।
সেই ছোট ছেলেটার একটা কথা আমার খুব কানে বাজে! ও ওর মা কে বলেছিলো,এই পৃথিবীতে ৭০০মিলিয়ন মানুষ, কিন্তু তুমিই আমার জন্য পারফেক্ট মা! তাই তো স্রষ্টা তোমাকেই আমার মা বানিয়েছেন!
এই জীবনে আমার বাচ্চারা কোনোদিন আমাকে নিয়ে এমন ভাববে কিনা জানিনা! আমার চেষ্টা করে যেতে দোষ কি?! আল্লাহ আমাকে তাওফিক দিক,আল্লাহর এই বান্দাদের যথাযথ তারবিয়ত দেওয়ার।
-তাহমীনা আপু ( আল্লাহ ওনার সন্তানদের সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করুন এবং তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দিন।)

 Post link