কম খান ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।

সাধারণ ভাবে একজন পড়াশোনা না জানা অর্থবিত্তহীন লোকের কাছে যদি আপনি খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ চান, সে আপনাকে পেট পুরে খাবার পরামর্শ দিবে। কারণ জীবনে অধিকাংশ সময়ই পেট পুরে খেতে পারেনি। সে মনে করবে বেশী খেলে শরীর ভাল থাকবে এবং শরীরে শক্তি পাওয়া যাবে।

কিন্তু দুনিয়াবী পড়াশোনা না থাকা সত্ত্বেও এবং লাক্সারীতে বড় না হওয়া সত্ত্বেও রসূলুল্লাহ (স) আমাদের কম খাবার পরামর্শ দিয়ে গেলেন। তিন ভাগের এক ভাগের বেশী খেতে মানা করলেন, পেটে ক্ষুধা থাকতেই উঠে যেতে বললেন, এবং অধিক পরিমানে পেট পুরে খাওয়াকে কাফিরদের খাওয়া বলেও উল্লেখ করলেন।

ছোটকালে যখন এই খাওয়ার সুন্নাত যখন পড়তাম বা শুনতাম ,তখন অবাক হতাম। তখন ভাবতাম এত কম খেলে শরীরে পুষ্টির অভাব হবেনা ? ক্যালরির অভাব হবে না? মিলেনা তো?

আজকে ১০-১২ বছর পর এই হাদীসগুলো আমার কাছে জাজ্বল্যমান। রসূল(স) সত্যিই বলেছিলেন। আসলে পূর্ণবয়স্ক মানুষের এত খাওয়ার দরকার নেই। খুব অল্প পরিমাণ খাওয়াই যথেষ্ঠ। দিনে মাত্র ২০০০ ক্যালরী হলেই হয়। মাত্র এক কাপ ভাতে যেখানে মাত্র ২০০ ক্যালরী। এক চামচ চিনিতে ৫০ ক্যালরী। [ অতি অল্প পরিমান খাদ্যেই অনেক ক্যালরি সঞ্চিত থাকে]

ইনফ্যাক্ট , পার্টিতে গেলে তো আমরা এক বসাতেই ২০০০ এর বেশী ক্যালরী খেয়ে ফেলি। এজন্যই আমরা এত মোটা হই। পুরো দুনিয়াতে , স্পেশালি ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলোতে ওবেসিটি একটা বড় সমস্যা। আর আমেরিকায় সর্বাধিক যে কারণে মানুষ মারা যায় , তা হল হার্ট এটাক, যার উৎপত্তি বেশী ফ্যাট খাওয়া থেকে।

বাংলাদেশেও এখন শুরু হয়েছে। আজ অমুক, কাল তমুক হার্ট এটাকের স্বীকার হচ্ছেন। এবং ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষই এখন হয়তো মোটা। একটু অবস্থাপন্ন পরিবারে গেলেই দেখবেন, মানুষগুলো মোটা মোটা হয়ে গেছে। কারও হার্ট এ প্রবলেম, কারো কিডনীতে। মূল কারণই বেশী খাওয়া।

এখানে একটা ব্যাপার উল্লেখযোগ্য, জাতি যেটাকে স্বাভাবিক খাওয়া ভাবছেন, আমি কিন্তু সেটাকেই বেশী খাওয়া বলছি। কারণ আসলেও ওটা বেশী খাওয়া। ওরকম খেয়েই তো আপনি মোটা হচ্ছেন।

তাই সুন্নত তরীকায় খান, পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাওয়া , এক ভাগ পানি, আর এক ভাগ ফাকা রাখুন -- এভাবে খান। পেটে ক্ষুধা থাকতে থাকতেই উঠে যান। পেট ভরে খাওয়ার কোন দরকার নাই। মু'মিন এক পেটে খায়, আর কাফির সাত পেটে খায়, মনে রাখবেন।

মাংস বেশী খেলে ইউরিক এসিড বেড়ে যাবে শরীরে। তার থেকে শরীরের প্রতিটা জয়েন্টে বাতের ব্যাথা হবে। পুরো শরীর জুড়ে শুধু রোগ আর রোগ হবে। সারাদিন ডাক্তারের পিছনে দৌড়াতে হবে। তারপর ডাক্তার আপনাকে পরামর্শ দিবে, অমুক ডায়েট , তমুক ডায়েট ফলো করেন। ডায়েট ফলো করতে গিয়ে দেখবেন, আসলে ডাক্তার আপনাকে সুন্নাহ মোতাবেক খেতে বলেছেন, বুঝেছেন?

এই সব ডায়েট টায়েট ভেজাল, অনেক হিসাব করা লাগে। সব হিসাব বাদ দিন। রসূল(স) সহজ করে দিয়েছেন। তিন ভাগের এক ভাগ খাবেন, ব্যস , ঝামেল শেষ। গরু খাবেন ঠিক আছে, ৩-৪ টুকরা খেলেই তো হয়, এক কেজি একবারে খাওয়ার দরকার কি?
কম খান ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। সুন্নাহ্ মেনে চলুন...
একবার এক ভুড়িঅলাকে দেখে উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) বললেন, (ভুড়িকে উদ্দেশ্য করে) এটা কি?
ভুড়িঅলা বললো, এটা আল্লাহর রহমত।
উমার(রা) বললো, এটা আল্লাহর রহমত না, এটা আল্লাহর আযাব....

_
লেখা - M. Rezaul Karim Bhuyan
>> কালেক্টেড পোস্ট << - SALAT

এক মৃত ভাইয়ের কথা আজ বারবার মনে পড়ছে।

ইউএসএ যেতে ইচ্ছুক এক মৃত ভাইয়ের কথা আজ বারবার মনে পড়ছে।
মুখে সুন্নাতি দাঁড়ি, সবসময় টাখনুর উপর পাজামা, ফর্সা, লম্বা মানুষটিকে দেখতে একেবারে নিস্পাপ মনে হত। আগে যখন বুয়েট কোয়ার্টারে থাকতাম, প্রায়ই দেখা হত তাঁর সাথে। আর দেখা হলেই সুন্দর করে একটি হাসি দিতেন। কুশল বিনিময় করতেন।
.
ফজর নামাযের সময় সেখানকার রাস্তার দু'ধারে রিকশা রেখে অনেক রিকশাওয়ালারা ঘুমান। টং দোকানও রয়েছে কিছু। প্রায় ফজরেই দেখতাম এ সমস্ত রাস্তায় ঘুমানো মানুষদের পিঠে হাত বুলিয়ে নামাজের জন্য উঠাচ্ছেন। কেউ হয়তো ধমকও দিয়ে দিত, উনি কিছুই বলতেন না। এত সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষ হয়েও এভাবে রিকশাওয়ালাদের পিঠে হাত বুলাতে তাঁর বিন্দুমাত্র সংকোচ হত না।
.
মানুষটির সাথে আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে শেষ দেখা হয়েছিলো।
প্রথমে চিনতে পারি নি, পরিচয় দেয়ার পর চিনলাম। অনেক পরিবর্তন। দাঁড়ি সেভ করে ফেলেছেন। আগে সবসময় পাঞ্জাবি-পাজামা পড়তেন। আজ ছিলেন প্যান্ট শার্ট পরিহিত। প্যান্টখানা আবার টাখনুর নিচ গড়িয়ে রাস্তার ধুলো বালি পরিষ্কারে ব্যস্ত।
বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে বেশ কিছুক্ষন পর জিজ্ঞেস করলাম, এ পরিবর্তন কেন?
কাঁচুমাচু হয়ে উত্তর দিলেন,
- আসলে আমেরিকা যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। পাসপোর্টে দাঁড়িসহ ছবি থাকলে নাকি ভিসা পেতে কষ্ট হয়। তাই ভাবলাম আপাতত কেটে ফেলি, ভিসার ব্যপারটি নিশ্চিত হলে আবার রেখে দিব।
- তো ভিসা পেয়েছেন?
- একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে... নাহ পাইনি। অনেক চেষ্টা করেছি, হল না। এখন আপাতত দেশেই কিছু করার চেষ্টা করছি।
- ভিসা না পেলে তো দাঁড়ি আবার রাখবেন বললেন, রাখলেন না যে?
- আবার সেই কাঁচুমাচু উত্তর, রাখবো রাখবো করে রাখা হচ্ছে না, ভাই !
মাগরিবের আযান হচ্ছিল। নামাযের দাওয়াত দিলাম।
- আপনি পড়ে আসেন। আমার কাপড় পরিস্কার নাই।


--------------------------


প্রায় দুবছর হতে চললো। প্রায়ই মনে পড়ে তাঁর কথাগুলো। আর প্রতিবারই নিজের কাছে একেবারে অসম্ভব মনে হয়, এরকম মজবুত একজন মানুষ, যাকে দেখে একসময় নিজে ইন্সপায়ার্ড হতাম, যাকে উদাহরন হিসেবে অন্যদের সামনে পেশ করতাম, তাঁর এত পরিবর্তন... কি করে সম্ভব ?
.
মৃত্যর অাগে ভেতরে আবার পরিবর্তন এসেছিল কিনা জানি না, কিন্তু বাইরের আচার আচরণ চলা ফেরা পূর্বের মতই ছিল। আল্লাহ তাআলা তাঁকে ক্ষমা করে দিন।
.
এসব মনে পড়লে নিজেকে খুব ঘৃণিত মনে হয়। নিজেদের আমল ও আখলাক নিয়ে আমরা কত সময় কত অহঙ্কার করি। আমাদের ভাবখানা এমন, এ গুলো যেন আমাদের নিজেদের কামাই। আমরা ভুলে যাই, আল্লাহ তাআলার তৌফিক ছাড়া একটি সিজদা দেয়ার ক্ষমতাও আমার নাই। তিনি চাইলে, আমলের শিখর থেকে গোনাহের সমুদ্রে মুহূর্তেই আমাকে ডুবিয়ে দিতে পারেন।'


কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত নিচের দোয়া দুটি যদি কেউ বুঝে পড়ে, যে কারো চোখ ভিজে যেতে বাধ্য।
.
رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
.
হে আমাদের পালনকর্তা! হেদায়েত দান করার পর আমাদের অন্তরকে পুনরায় বক্র করে দিবেন না। আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর দাতা। -সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৮।


اللهم يا مقلب القلوب ثبت قلوبنا على دينك


হে আল্লাহ ! হে অন্তরসমুহকে ওলটপালটকারী। আমাদের অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন। - সুনানে তিরমিযি।
.
Collected From
Brother
Rizwanul Kabir

জীবনে অর্থহীন অসাড় কাজগুলো বাদ দিয়ে ভালো কাজ করি, ভালো অভ্যেস গড়ে তুলি, আল্লাহর খুশিমত চলার চেষ্টা করি, আমাদের জন্য এই জীবন আর পরকালের জীবন--দুই জীবনেই সাফল্য আসবে ইনশাআল্লাহ।

জন্মদিন পালন করা আমার কাছে খুবই অযথা একটা ব্যাপার মনে হয়।
আমরা বাঙালিরা তো মাথা খাটাতে পছন্দ করি না। বিশেষ করে বাঙালি নারী হলে তো কথাই নেই! ষোলো কলা পূর্ণ! একটা মেয়ে মুখে শশা ঘষতে যেই পরিমাণ সময় ব্যয় করে, তার দশ ভাগের এক ভাগ সময়ও একটা বই পড়ার পেছনে লাগায় না। শশা লাগানোই স্বাভাবিক। আমরা জাতি হিসেবেই ফর্সা পাত্রীর পাগল। তাই খালি নারীদেরকে দোষ দিলেও ভুল হয়। বাংলাদেশের যত আছে রূপ চর্চার ঢল, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। অন্তত হাফ ব্লেইম পুরুষদেরও প্রাপ্য, যারা সাদা মেয়ে হলে গরুগাধা বিয়ে করতেও রাজি...

যে জাতি বই পড়তে পছন্দ করে না, সে জাতির বুদ্ধিমত্তার লেভেল কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই আবজাব যত "ডে" আছে, সব গাধার মত পালন করব আমরা এটাই প্রত্যাশিত। কোন দিন কেন আবিষ্কৃত হয়েছিল, কোন দিনের পেছনে কী ব্যবসা চলে--এইসব ইন্টেলেকচুয়াল ডিসকাশন আমাদের কাছে ভাত পাবে না।
 তাই আমি যদি বলি, এই জন্মদিন পালন ইহুদি-খ্রিস্টানদের থেকে এসেছে। আমি যদি বলি, কার্ড আর চকোলেটের ব্যবসা রমরমা করার জন্যই এসব দিবসকে পপুলার করে তোলা হয়, তাহলে কারোই শুনতে ভালো লাগবে না।

আর আমাদের মত ধর্মীয় অনুভূতি সম্পন্ন মুসলিমদেরকে বার্থডে পালনের ব্যাপারে কিছু বলার আমি কে? হুজুর হয়ে মাথা কিনে নিয়েছি নাকি, হ্যাঁ? একটা কেইক কাটলে কী এমন দোষ হয়? আমরা তো আর পার্টি করছি না!!! ছোট্ট শিশুর আবদার পূরণ করেছি মাত্র। বিশ-তিরিশ বছর বয়সেও এরা কীভাবে যেন নিজেকে ডাইপার পরা গ্যাদা বাচ্চা ভাবতে পছন্দ করে..।

যা বলছিলাম, বার্থডে পালন করা আমার কাছে খুবই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। প্রতি বছর বছর বুড়া হচ্ছি, কোথায় জীবনের গুরুতর বিষয়গুলো নিয়ে ভাববো, তা না। মানুষ ডেকে ডেকে বুড়োপনা উদযাপন করছি! এমনকি মৃত মানুষরাও আমাদের পাগলামো থেকে রক্ষা পায় না। একটা মানুষ কবরে গিয়ে কোথায় শান্তিতে থাকবে, তার জন্য আমরা দু-একটা দু'আ চাইলেও তার লাভ।
 অথচ আমাদের মত হুজুগে জাতি মরা মানুষেরও জন্মদিন পালন করে হুলুস্থূল করে। জীবিত ব্যক্তি হলে তো কথাই নেই। ছোটবেলা থেকেই আমরা বাচ্চাদের বোঝাতে সক্ষম যে, জন্মদিন পালন করলে অনেক লাভ। বাপ-মা কষ্টের টাকায় পার্টি করবে। আর গেস্টরা গণ্ডা গণ্ডা গিফট দিয়ে খেয়ে যাবে। মাঝখানে লাভ কার? বাচ্চার! এভাবে আমাদের বাচ্চারা ছোট থেকেই লোভী হতে শুরু করে.. তাদের মধ্যে লোভের বীজ আমরাই ঢুকাই।

এত গিফট না দিয়ে যদি বছরে দুই-এক দিন তাদেরকে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু কিনে দিতাম, সেই সাথে গরিব বাচ্চাদের কথা শোনাতাম, তাহলে হয়ত তারা কিছুটা মানবিকতা শিখত। এখন আমাদের বাচ্চারা মানবিকতা শিখতে পারে না। তারা শেখে স্বার্থপরতা। এক সমাজে একদিকে মানুষ না খেয়ে মরে, আরেকদিকে আমরা হুদাই একটা দিবস বানায়ে সেলিব্রেইট করি।

কারো কাছে টাকা থাক, না থাক, তাকেও একটা উপহার হাতে করেই পার্টিতে যেতে হবে। এরপর শুধু উপস্থিত হলেই হবে না। পরের মাসে নিজের সন্তানের জন্মদিনে আবার সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াতে হবে। হালাল ভাবে ইনকাম করলে তো এত উপরি টাকা হাতে থাকার কথাও না। বাট আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধবের সামনে মান-ইজ্জত রক্ষা করতে একটা ফাটাফাটি পার্টি দেওয়াই লাগে। হোক তার জন্য ধার-দেনা কিংবা ঘুষ নেওয়া..। কী একটা চক্রের মধ্যে ফেঁসে গেছিরে বাবা! আমার এসব চক্র ভালো লাগে না। দুষ্ট চক্র। এই চক্র থেকে বিরত না হলে আমাদের নৈতিক অধঃপতন ক্রমেই বাড়বে, কমবে না।

আরও অনেক কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু ঐ যে বললাম, বাঙালি জাতি আমরা পড়তে পছন্দ করি না। তাই আর বেশি লিখলাম না। আমাদের জন্য জন্মদিন পালন না করতে একটা কথাই যথেষ্ট থাকা উচিত ছিল। কাজটা আল্লাহ তা'আলার অপছন্দনীয়। তাই এসব সস্তা দিবস পালন থেকে দূরে থাকা উচিত। না, একটিবার উইশ করারও প্রয়োজন নেই। দুয়া চাওয়া, সুন্দর জীবনের শুভকামনা জানানো-- কাজগুলি করার জন্য তো বছরের বাকি ৩৬৪ দিন আছেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য এই একটা বিশেষ দিন ধরে উইশ করা, উপহার দেওয়া, উদযাপন করা বাদ দিই। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এক সময় ঠিক হয়ে যাবে।

জীবনে অর্থহীন অসাড় কাজগুলো বাদ দিয়ে ভালো কাজ করি, ভালো অভ্যেস গড়ে তুলি, আল্লাহর খুশিমত চলার চেষ্টা করি, আমাদের জন্য এই জীবন আর পরকালের জীবন--দুই জীবনেই সাফল্য আসবে ইনশাআল্লাহ।

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুন

আজ এক ভাইয়ের কাছে একটা ঘটনা শুনলাম।

 একবার তিনি তার বাসায় তার এক দ্বীনি ভাইয়ের সাথে খাচ্ছিলেন। আইটেম ছিল গরুর মাংস। সেই দ্বীনি ভাই খুব আরাম করে খাচ্ছিলেন, খাওয়া শেষে হঠাৎ তিনি কান্না করে দিলেন। হাড় ছাড়া সেই মাংসের দাম শুনে সেই ভাই বললেন, ভাই! একসময় আমার কাছে হাড় ছাড়া গরুর মাংস কেনাটা স্বর্ণ কেনার মত মনে হতো, আল্লাহ আপনাকে হাড় ছাড়া গরুর মাংস কেনার তৌফিক দিয়েছেন। মাদ্রাসায় পড়ার সময় তিনি কোনদিন গরুর মাংস খেতে পাননি। বছরে শুধু একদিন তিনি গরুর মাংস খাওয়ার সুযোগ পেতেন, সেটা কুরবানির দিন। সেদিন তারা মাদ্রাসার কিছু ছাত্র মিলে এলাকায় সবার বাড়ী বাড়ী যেতেন, যে মাংসগুলো সংগ্রহ হতো সেগুলো সবাই মিলে রান্না করতেন। এরপর চাকরী জীবনেও তিনি কোনদিন গরুর মাংস কিনে খাওয়ার সাহস করেননি, কারণ উনার অতি নগণ্য বেতনে গরুর মাংস কিনে খাওয়াটা বিলাসিতার মত ছিল। তারপর সেই ভাই বললেন, এখন দুই তিন মাসে একবার হলেও মাংস কেনার চেষ্টা করি, আমার মেয়েটার জন্য, আমি চাইনা আমার মেয়েটাও আমার মত গরুর মাংস খেতে না পেয়ে আফসোস করুক।
.
গরুর মাংস আমারও খুব প্রিয়। আমার বাসায়ও সেটা জানে। তাই আমি বাড়ি গেলে আমার মা খুব যত্ন করে মাংস রান্না করে। আমার পেটে প্রায়ই হজমের সমস্যা হয়। একবার ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার বললেন, মাংস জাতীয় খাবার না খেতে। এরপর থেকে মাংস খাওয়া কমিয়ে দিলাম। বছরের যে দিন মাংস খুব বেশী খাওয়া হয়, সেই কুরবানির দিনই আমি গ্রাম থেকে শহরে চলে আসি, বাড়িতে থাকলে লোভে পড়ে মাংস খেতে হবে এই ভয়ে।
.
খাওয়ার পরে আমরা একটি দোয়া করি যার অর্থ , "সকল প্রসংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে এই আহার করালেন এবং এ রিযিক দিলেন যাতে ছিল না আমার পক্ষ থেকে কোন উপায়, ছিল না কোন শক্তি সামর্থ্য। " এই দোয়ায় আল্লাহ আহার করালেন , রিযিক দিলেন দুইটা তো একই কথা তাহলে একটা বললেই তো হতো, দুইটার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করার কারণ কি। মুফতি মুহাম্মাদ শফি (রাহিমাহুল্লাহ) এই দোয়ার বিষয়ে বলেছেন, আল্লাহ কাউকে রিযিক দিলেই সে আহার করতে পারে না। অনেক মানুষ আছে আল্লাহ যাদেরকে তাদের পছন্দের খাবার কেনার সামর্থ্য দান করেছেন, কিন্তু তারা আহার করতে পারে না, হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস না রোগে সে আক্রান্ত। তাই আপনি কোন খাবার খেতে পেরেছেন সুতরাং এতে আপনার উপর দুইটা নিয়ামত। আল্লাহ আপনাকে রিযিক দিয়েছেন এবং সেই রিযিক আহার করার মত ক্ষমতা দিয়েছেন। তাই খাবার শেষের দোয়াতে এই দুই নিয়ামতের জন্য শুকরিয়া আদায় করা হয়। সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবর!
.
সিরিয়ার একটা বাচ্চার ইন্টারভিউ দেখেছিলাম। সে বলছিল, মরে গেলে সে জান্নাতে যেতে চায়, কারণ জান্নাতে গেলে রুটি পাওয়া যাবে। জান্নাতে গেলে আমরা কে কি করব তার জন্য কত বিলাসী বিলাসী সব প্ল্যান, আর এই অবুঝ শিশুটা জান্নাতে যেতে চায় রুটি খাওয়ার জন্য, কারণ এই দুনিয়ায় একটু রুটিও সে খেতে পায় না।
.
আমি বলছিনা সবাই এখন খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে, উপোস থেকে উম্মাহর সাথে একাত্বতা দেখাতে হবে! আমি বলছি আপনাকে আপনার নিজের অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে। যে নিয়ামত আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করতে। এতে আপনি আল্লাহর প্রতি বিনয়ী হবেন আর না পাওয়ার আফসোস থেকে রেহাই পাবেন। দুনিয়ার পেছনে ছোটা এই যান্ত্রিক জীবনের ফিতনা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন।
.
আর আল্লাহর কাছে যখন কোন নিয়ামত চাইবেন সাথে আরো দু’টো জিনিস চেয়ে নিবেন।
এক, আপনি যেন সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারেন আর
দুই, আপনি যেন সেই নিয়ামতের ফিতনা থেকে বেরোতে পারেন।
সেই নিয়ামত হতে পারে ধন সম্পদ, সেই নিয়ামত হতে পারে বিয়ে, স্ত্রী, সন্তান।
 সেই নিয়ামত হতে পারে ইলম কিংবা হতে পারে ক্ষমতা অথবা যেকোন কিছু।
আল্লাহ এই দুনিয়াতে অসংখ্য মানুষকে নিয়ামতে ভরিয়ে দিয়েছেন।
তাদের কেউ কেউ সেই নিয়ামতের যথাযথ শুকরিয়া আদায় করতে পারেনি।
আবার কেউ শুকরিয়া আদায় করতে পারলেও সেই নিয়ামতের ফিতনা থেকে বেরোতে পারেনি।
 আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুন। আমীন।
.
Brother ইউসুফ আহমেদ

আমাদের চোখে ভালো মানুষের সংজ্ঞাটাও বড্ড সংকীর্ণ হয়ে গেছে।

ছেলেটা খুব ভালোমানুষ ছিল। উদারপ্রাণ, হাসিখুশি, চঞ্চল, বন্ধুদের জন্য সবসময় একপায়ে খাঁড়া। সেন্ট মার্টিনসের পিকনিকটা যেবার প্রায় বাতিল হতে গিয়েছিল, একা মারুফই সেটাকে আটকে ফেললো! নিজের পকেটের টাকা খরচ করে, এর-ওর কাছে দৌড়ে, বন্ধু-বান্ধব-ক্লাসমেটদের ফোন করে অস্থির করে ফেলে--যেভাবে পেরেছে ও-ই সবাইকে রাজি করালো। আর যা ফূর্তিটা হলো সেবার, আহ!

মারুফ, তুই আজ কোথায়? হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে ধুঁকছিস। এতো ভালো মানুষের সাথে এমন কেন হয়?
হ্যাঁ, আমরা এমনটাই বলি। কেন ভালো মানুষেরা বিপদে পড়ে? কেন একটা অকস্মাৎ দুর্ঘটনা কিংবা একটা অচেনা নিষ্ঠুর রোগ এসে ভালো মানুষগুলোকেই আঘাত করে? ওদের কি বাঁচার অধিকার অন্যদের চেয়ে বেশি ছিল না?

এইসব ন্যাকামি আবেগী কথা দেখলে ইদানিং বড়ো জ্বালা হয়। আরেহ, ভালো মানুষের তুই কি চিনিস? নবী-রাসূল, সাহাবী ওরা কি ভালো মানুষ ছিল না?

আমাদের চোখে ভালো মানুষের সংজ্ঞাটাও বড্ড সংকীর্ণ হয়ে গেছে।

এক সাহাবী এসে নবীজির (সা) গায়ে পরা চাদরটা চাইলো, সেই একটা মাত্র চাদরই উনার ছিল তখন, তবুও বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে সঙ্গে সঙ্গে গা থেকে খুলে চাদরটা দিয়ে দিলেন।

নবীজি (সা) যুদ্ধের জন্য টাকা চাইলেন, সাহাবী আবু বকর এসে তাঁর সমস্ত সম্পদই দিয়ে দিলেন! আমাদের মতো দু'-চারশ টাকার ডোনেশন না, পুরো সম্পদ, ঘরে কিছুই ফেলে এলেন না।

খলিফা উমার (রা) তাঁর রাতের আরামের ঘুমটা বাদ দিয়ে বেরোতেন শহরের মানুষদের হালচাল বুঝতে, এক মহিলা খাওয়ার কষ্টে ছিলেন দেখে নিজে গিয়ে কাঁধে চেপে খাবারের বস্তা নিয়ে এলেন, নিজের হাতে রান্না করলেন, মহিলা আর তার বাচ্চাদের খেতে দিলেন।

পারবো আমরা এতো উদার হতে, এতো ভালো হতে? পারবো এভাবে নিজেকে অন্যের জন্য বিলিয়ে দিতে? এমন কতশত কাহিনি আছে। সত্যি কাহিনি--নবীজি আর সাহাবীদের কাহিনি।

আমাদের কাছে এখন নবী-রাসূল-সাহাবীদের গল্প অবাস্তব লাগে। হুমায়ূন আহমেদের মেকি হিমুর গল্প পড়ে আমরা চোখের জল ফেলি। নবীদের কাহিনি পড়লে, সাহাবীদের কাহিনি জানলে বুঝতাম, ভালোমানুষ কাকে বলে।
অথচ এরপরও কিন্তু তাদের সাথে খারাপ হয়েছে। বিপদ এসে আছড়ে পড়েছে মাথার ওপর। নবী আইয়ুব (আ) থকথকে রোগ নিয়ে দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে থাকেন, একা-নিঃসঙ্গ জীবন। নবী ইউসুফকে (আ) তার আপন ভাইয়েরা ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় কুয়ার মধ্যে। নবীজি (সা) কে ডাকা হয় পাগল! নামাজের সময় তাঁর গায়ের ওপর পশুর নাড়িভুড়ি চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করে ফেলা হয়, আল্লাহর ইচ্ছায় এক এক করে মারা যায় তাঁর সব কয়টা ছেলে সন্তান...

সাহাবীদের ওপর তো অত্যাচার, নির্যাতন, এমনকি অন্যায়ভাবে তাদেরকে হত্যা করার ঘটনাও প্রচুর! দুনিয়ার সবচাইতে সেরা মানুষগুলো ছিলেন তাঁরা, তারপরও কেন তাদের ভাগ্যে এতো কষ্ট? কারণটা হলো--এই দুনিয়াটা পরীক্ষার জায়গা। যারা মনে করছে এই পৃথিবীতে তারা সারাজীবন থাকবে, তারা ভুল ভাবছে।

আল্লাহ বলেছেন, "অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।" [সূরা বাক্বারা: আয়াত ১৫৫]


আর হাদীসে আছে, "আল্লাহর রাসূলকে জিজ্ঞেস করা হলো,
- ইয়া আল্লাহর রাসূল, সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা এসে পড়বে কাদের ওপর?
তিনি উত্তর দিলেন, নবী-রাসূলকে, এরপর তাদের পরে যারা সেরা তাদের ওপর। বান্দা তার ঈমানের পরিমাণ অনুপাতে পরীক্ষিত হবে। যদি সে তার দ্বীনের ব্যাপারে মজবুত হয় তাহলে তার পরীক্ষাও কঠিন হবে, আর যদি সে দ্বীনের ব্যাপারে দুর্বল হয় তাহলে তার দ্বীনের পরিধি অনুযায়ী তাকে পরীক্ষা করা হবে, এভাবে বান্দার ওপর বিপদ-আপদ আসতেই থাকবে, আর এর মধ্য দিয়ে একটা সময় এমন হবে যে সে নিষ্পাপ হয়ে যাবে।" [তিরমিযির হাদিস আমি নিজের ভাষায় লিখলাম।]

বিপদ-আপদ দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে কী হয়?

এক. আল্লাহ আমাদেরকে পরীক্ষা করেন যে কে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে উন্নত। সুতরাং এটা হলো নিজের অবস্থান বোঝার একটা পদ্ধতি। ওপরের হাদীস থেকে বোঝাই যাচ্ছে, বেশি ঈমান থাকলে বিপদাপদের পরিমাণও বেশি হবে।

দুই. বিপদ-আপদের মধ্য দিয়ে অটোমেটিকালি আমাদের গুনাহ মাফ হতে থাকে।

তিন. যদি বিপদ-আপদের সময় আমরা ধৈর্য্য ধরি আর আল্লাহর পরীক্ষা নিয়ে হা-হুতাশ না করি, তাহলে আমাদের অনেক সওয়াব হয়।

চার. বিপদ-আপদ হলে আমরা আল্লাহর কাছাকাছি হওয়ার একটা সুযোগ পাই, আল্লাহকে বেশি করে ডাকি, আর এটাও বুঝতে পারি যে, এই দুনিয়াটা ক্ষণস্থায়ী, দুনিয়ার সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। পরকালের জান্নাত ছাড়া কোথাও চিরস্থায়ী সুখ, আনন্দ, সুসাস্থ্য বা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই।

আমরা যদি এই কথাগুলো জানি, তাহলে নেক্সট টাইম দুঃখ-কষ্ট হলেই গাধার মতো বলবো না- কেন আমার সাথেই এমন হলো? কেন ভালো মানুষটাকে আল্লাহ অকালে উঠায় নিয়ে গেলো? আমরা বুঝবো, এই পৃথিবীর জীবনটা অল্প সময়েরই, আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকেই বেশি পরীক্ষা করেন। সেই অর্থে বিপদ-আপদও একরকম ব্লেসিং! আমাদের গুনাহ মাফ হবে, আমরা সওয়াব পাবো! আল্লাহ জুলুম করেন না। আমাদের যতো বিপদ-আপদ-কষ্ট-বেদনা হচ্ছে, তার প্রত্যেকটার বিনিময় আখিরাতে মিটিয়ে দেওয়া হবে। শুধু দরকার ধৈর্য্যের সাথে অপেক্ষা করা, আর মনেপ্রাণে সত্যিই বিশ্বাস করা যে আল্লাহ আছেন, তিনি আমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দিবেন, ছোটো-বড়ো কোনো ভালো কাজকেই তিনি বাদ দিবেন না। আল্লাহ উত্তম দাতা, আল্লাহ সবচেয়ে ন্যায়বিচারক।

>> কালেক্টেড পোস্ট << 

আগামীর উত্তরণের জন্য সিঁড়ি

বাবা, তার ক্লাস নাইন পড়ুয়া ছেলেকে বললেন, ‘যাও তো বাবা, ফ্রিজে যে মাখনের খন্ডটা আছে ওখান থেকে অল্প মাখন কেটে নিয়ে এসো’।
 মা শুনতে পেয়ে হা হা করে তেড়ে এলেন, ‘বল কি? তুমি কোন সাহসে ওকে মাখন কাটতে পাঠাচ্ছ? ও হাত কেটে ফেলবে!’

বাসায় মেহমান এসেছে, মা শুয়ে আছেন দেখে বাবা সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েটিকে বললেন, ‘চাচার জন্য এক কাপ চা আর ক’টা বিস্কিট নিয়ে এসো’। মেয়ে গিয়ে বুয়াকে ধাক্কা দিয়ে শোয়া থেকে তুলে দিল, ‘বুয়া, চা বানাও, আক্কাস চাচা এসেছেন, তাঁকে নাস্তা দাও’। বুয়া তখন মাত্র সারাদিনের কাজ সেরে শুয়েছেন। ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে তুলে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে তিনি আক্কাস সাহেবের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলেন।

ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে, কলেজ পড়ুয়া ছেলে নিজের রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসে গান শুনছে। দরজায় কলিং বেলের শব্দ পেয়ে মেয়ে আওয়াজ দিল, ‘আম্মু, দরজায় কে এসেছে দেখ’! আম্মু রান্নাঘরে ঘর্মাক্ত ব্যতিব্যস্ত, শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে ছুটলেন দরজায় কে দেখতে। ওদিকে সারতে না সারতেই ফোন বাজতে শুরু করল, ছেলে রুম থেকে হাঁক দিয়ে বলল, ‘আম্মু, ফোন ধর, ফোন বাজছে’! আম্মু আঁচল দিয়ে গলা বেয়ে গড়িয়ে পড়া ঘাম মুছতে মুছতে ছেলের রুমের সামনে রাখা ফোনটা ধরতে দৌড় দিলেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হোল, ‘কিয়ামত কবে হবে?’ তিনি বললেন, ‘এ বিষয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ব্যাতীত আর কেউ জানেনা’। তখন তাঁকে অনুরোধ করা হোল কিয়ামত সমাগত হবার কিছু লক্ষণ বলে দেয়ার জন্য যেন আমরা সাবধান হতে পারি। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লক্ষণ সম্পর্কে বলেছেন, তার একটি হোল, ‘যখন দাসীরা তাদের মনিবদের জন্ম দেবে’, অর্থাৎ যখন সন্তানরা তাদের মায়েদের সাথে দাসীসদৃশ ব্যাবহার করবে। এই ঘটনা কি এখন অহরহ ঘটছেনা?

আমরা কেউ মুসয়াব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর চেয়ে বেশী আদর বা বিলাসিতায় বড় হয়েছি বলে দাবী করতে পারিনা, অথচ ‘আমি কিছু পারিনা’ বলে আনন্দ পাই।
 আমরা কেউ আমাদের পিতামাতা উকবার মত ইসলামবিদ্বেষী বলে দাবী করতে পারিনা অথচ ইসলামের অনুসরণ করতে অলসতা করি।
 আমরা কেউ মদীনার ঐ ক্ষুদ্র কিশোরদের পরিমাণ বুদ্ধিবৃত্তিক পরিপক্কতা ধারণ করিনা অথচ নিজের মত প্রতিষ্ঠা করার জন্য গালাগাল, হাতাহাতি, মারামারি থেকে হত্যা পর্যন্ত করে ফেলতে প্রস্তুত!

 তাহলে আমরা কিভাবে নিজেদের প্রস্তুত করব একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে? মা যদি আদর করে বলে, ‘ও এই কাজটা পারবেনা’, আমরা কেন হেসে তাঁকে আশ্বস্ত করিনা, ‘কেন পারবনা মা, একবার করতে দিয়েই দেখনা!’ বাবা বলার আগেই কেন লক্ষ্য করার চেষ্টা করিনা পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি আমার পরিবারের জন্য কি করতে পারি? কেন ভাবিনা যে মানুষটা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমার পরিবারের জন্য কাজ করে তাকে একদিন চা বানিয়ে খাওয়াই? কেন আমাদের মাথায় আসেনা আমরা মাকে সেবা করে তাঁর পায়ের নীচে বেহেস্তের চাবিটা হস্তগত করি? কেন আমাদের জ্ঞান অর্জন এবং চর্চার প্রতি এত অনীহা?
 আজ আমাদের যে শক্তি, উদ্যম, উদ্দীপনা তা কিন্তু চিরস্থায়ী নয়। আমার দাদা একসময় জোয়ান সুপুরুষ ছিলেন, আমার দাদী একসময় সুন্দরী ষোড়শী তন্বি তরুণী ছিলেন। আজ তাদের দেখে কি আমরা তা কল্পনাও করতে পারি? আমাদের এই রঙ্গীন দিনগুলোও কিন্তু চিরকাল রইবেনা। সুতরাং আমাদের আজই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে আগামী দিনের জন্য।
আমরা যারা আজকে কিশোর কিশোরী তারাই কিন্তু কাল মুসয়াব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মত যুবক, উম্মু কুলসুম বিন্ত উকবা রাদ্বিয়াল্লাহুর মত যুবতী হব।
সুতরাং, আজই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা সিনেমা-টেলিভিশন, ফেসবুক-টুইটার, মোবাইল-চ্যাটিং, প্রেম-ফ্রেম জাতীয় ফলাফলশূন্য কাজে আজকের দিনটা ব্যায় করে কাল হায় হায় করব;
নাকি লেখাপড়া, সৎকাজের অনুশীলন, চরিত্র গঠন, সামাজিক সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীলতার চর্চার মাধ্যমে আমার আজকে আমার আগামীর উত্তরণের জন্য সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করব?

★লেখিকা rehenuma binte anis আপুর একটি লেখার কিছু অংশ★

আমাদের দেশের সবাই যে যার অবস্থানে একেকটা জালিম

অ্যাপোলো হসপিটাল থেকে বেরুচ্ছি। দেখলাম আমার গাড়ি পার্কিং লট থেকে বের হতে পারছেনা কারণ সামনের গাড়ি সিকিউরিটির সাথে কিছু একটা নিয়ে ঝগড়া করছে। ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড লাগানো সরকারী গাড়ি।
আমার পাশে দাঁড়ানো এক ভদ্রলোক, তাঁর স্ত্রী এবঙ ১২-১৩ বছরের ছেলে রাগে গজগজ করছে। বুঝলাম তাঁদেরই গাড়ি। তাঁদের রাগের কারণ কেন তাঁদের পার্কিং ফি দিতে হবে। এত বড় সরকারি অফিসার।
---
অনেক বছর আগে একটি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বাংলাদেশী ছাত্রদের সাথে কথা হচ্ছিল। কথায় কথায় তারা জানালো তারা একটি পারকিং লটে জব করে। বেতন অতি সামান্য কিন্তু তারা অনিয়ম করে অনেক টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। বলেই সবার মুখে দেখালাম বিজয়ীর হাঁসি, যেন চুরি করে তারা বিশাল কিছু করে ফেলছে। লজ্জা বা অনুশোচনা দুরের কথা, তারা যে একটি খারাপ কাজ করছে এই নিয়ে তারা একান্তই গর্বিত।
---
হজ্জ উমরাহ নিয়ে কিছু কাজ করছিলাম। কথায় কথায় একজন থেকে শুনলাম তিনি কোন বছর নাকি অনেক টাকা বানিয়েছিলেন, মানুষের কোরবানির টাকা জমা না দিয়ে। এটা নাকি সিস্টেম সবাই করে, তাই সমস্যা নেই। এবং যারা করছে তাঁদের অনেকেই আপাতঃ দৃষ্টিতে ধার্মিক মানুষ।
আরেকজন বললেন তারা সিন্ডিকেট করে আগে থেকে হজ্জের প্লেনের টিকেট কেটে রেখে প্রতিবছর নাকি অনেক টাকা ইনকাম করে থাকেন।
আরও শুনলাম কিভাবে উমরার ভিসাতে গ্রামের মানুষকে বোকা বানিয়ে সৌদি আরবে পাঠিয়ে কিভাবে অনেক সম্পদশালি হয়েছে কিছু মানুষ।
---
উপরের ঘটনাগুলোর মাঝে সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। কেবল আমাদের মানসিকতার মিল ব্যাতিত। আমাদের দেশের সবাই যে যার অবস্থানে একেকটা জালিম, জুলুমের সামান্য সুযোগটাও অপচয় করিনা। এমন হাজারো ঘটনার উল্লেখ করা সম্ভব। আর এই কারণেই আজকে দেশে বিদেশে বাংলাদেশীদের অবস্থা নিতান্তই করুন।

আল্লাহ কুরআনে বলেন -
আল্লাহ অবশ্যই কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে। (১৩-১১

তোমরা যারা হুজুর হয়েছো...

.
চারপাশের মানুষের আচরণ দেখে তোমরা ভাবতে পারো তোমরা অনেক বড় বুযুর্গ আউলিয়া। অথচ তোমরা যা করো, তা একজন মানুষের মুসলিম হিসেবে পরিচিত হওয়ার ন্যূনতম শর্ত।
 পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সময় মতো পড়া (বিশেষত পুরুষদের ক্ষেত্রে মাসজিদে গিয়ে জামাতে পড়া), রামাদ্বান মাসের সকল হক আদায় করে ২৯/৩০টি সওম রাখা, আর্থিক সামর্থ্য থাকলে যাকাত আদায় ও হাজ্জ সম্পন্ন করা, দাড়ি রাখা/হিজাব পরা, সময় পেলে দ্বীনি ইলমের মজলিসগুলোতে হাজিরা দেওয়া...এ সবই কিন্তু সালাফদের যুগের একজন সাধারণ রুটি বিক্রেতার দ্বীনদারির লেভেল।
.
তোমাদের আশেপাশের মানুষগুলো হয়তো তোমাদের চেয়ে আরো নিচের লেভেলের দ্বীনদার। 


তাদের ভিড়ে তোমাদের হয়তো জামানার মোজাদ্দেদ টাইপের কিছু বলে মনে হয়। কিন্তু মনে রেখো, তাদের ফেল করা তোমাদের ৩৩ পেয়ে পাশ করাকে জাস্টিফাই করে না। বরং তারা যে ফেল করছে, এটা তোমাদের মেহনতের কমতি। তোমরা হয়তো মানুষের প্রশংসা চাও না। কিন্তু আল্লাহ হয়তো আখিরাতের প্রতিদানের পাশাপাশি দুনিয়ার সুখ্যাতিও নগদে দিয়ে তোমাদের পুরষ্কৃত করছেন।
.
তবে খেয়াল রাখবে, এসব প্রশংসার হাত ধরে যেন তোমাদের অন্তরে আত্মতৃপ্তি ও অহংকার প্রবেশ না করে।
.
.
اللَّهُمَّ لاَ تُؤَاخِذْنِي بِمَا يَقُولُونَ، وَاغْفِرْ لِي مَا لاَ يَعْلَمُونَ، (وَاجْعَلْنِي خَيْراً مِمَّا يَظُّنُّونَ)
.
হে আল্লাহ, তারা যা বলছে তার জন্য আমাকে পাকড়াও করবেন না, তারা (আমার ব্যাপারে) যা জানে না সে ব্যাপারে আমাকে ক্ষমা করুন। (আর তারা যা ধারণা করে তার চাইতেও আমাকে উত্তম বানান)
.
বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭৬১।
.

হুজুর হয়ে

এই লেখাটি তাদের জন্য যারা ইসলামকে ভালোবাসেন এবং ফেইসবুক বা অন্যান্য সোশাল মিডিয়াতে যারা প্রচুর সময় কাটান।

এই লেখাটি তাদের জন্য যারা ইসলামকে ভালোবাসেন এবং ফেইসবুক বা অন্যান্য সোশাল মিডিয়াতে যারা প্রচুর সময় কাটান।
দয়া করে সবরকম রাজনৈতিক আলোচনা থেকে দূরে থাকুন। এধরণের স্ট্যাটাসে লাইক, শেয়ার, স্মাইলি, বা কমেন্ট দেয়া থেকে বিরত থাকুন। সেটা আপনি দেশেই থাকুন আর বিদেশেই থাকুন। মোটেই ভাববেন না যে বিদেশে থাকলে আপনি খুব সেইফ হয়ে গেলেন এবং যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। আপনার হঠকারী মন্তব্য বা কাজের জন্য শুধু আপনার নয়, অন্যের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে। যে কোনও সময় আল্লাহ্‌র তাকদীর আপনাকে দেশেও ফিরিয়ে আনতে পারে। রাজনৈতিক আলোচনা যারা রাজনীতি করেন তাদের জন্য ছেড়ে দিন। আপনি আদার ব্যাপারি জাহাজ নিয়ে কথা বলতে চান ঠিক আছে, এখন সেসময় নয়।
বরং ইসলামের মৌলিক মেসেজকে মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে মনোযোগী হন। নিজের গুরুত্বপূর্ণ সময়কে কাজে লাগান। কুরআনের মূল বক্তব্য, আল্লাহ্‌র রাসূলের (সা.) সুন্নাহ্‌, ইবাদাতের আলোচনা - এসবের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি, বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি দরকার। আপনার ব্যস্ত জীবনের বেশিরভাগ সময় আপাতত এসব জানার এবং জানানোর ব্যাপারে ব্যয় করুন।
আপনি যদি বুদ্ধিমান হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে কয়েকটি অপরিপক্ক তরুণের হঠকারী সিদ্ধান্ত আমাদের দেশে ইসলামের মূল আলোচনাকে কতটা কষ্টকর করে দিয়েছে। আরও অদূরদর্শিতা এই অবস্থাকে কেবল নিম্নগামীই করবে।
আল্লাহ্‌র রাসূলের (সা.) সেই হাদীসটি মাথায় রাখুন: "যে আল্লাহ্‌ ও শেষ বিচারের দিনে ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।" আপনার প্রত্যেকটি লাইক, শেয়ার, কমেন্ট, স্ট্যাটাস বা স্মাইলি কিন্তু 'ভালো কথার' সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। এবং ভালো কথা বলতে কেবল ভালো কন্টেন্ট বোঝায় না, সেই কথাটা যথার্থ সময়ে বলা হচ্ছে কিনা, যথার্থ ভাবে বলা হচ্ছে কিনা, জেনে শুনে বলা হচ্ছে কিনা - এসব কিছুই ভালো কথার অংশ।
এটা সেসময় নয় যেখানে আপনি এসপার ওসপার দেখে ছাড়বেন, কোনও একটা দল বাছাই করে আপনি যে হিপোক্রিট নন সেটা প্রমাণ করে ছাড়বেন। এটা আপনার বল্‌স দেখানোর সময় নয়। এটা ইবাদতের টাইম, ধৈর্যের টাইম, প্রজ্ঞার টাইম।
চাকরি করুন, ব্যবসা করুন, পড়াশোনা করুন এবং আল্লাহ্‌র কাছে সালাত ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করুন।


http://tinyurl.com/zynoykk

বাড়াবাড়ি


আল্লাহ প্রদত্ত এই দীনের মাঝে কোন বাড়াবাড়ির স্থান নেই। এটা সবাই জানে, বোঝে। তবে যেটা সবাই বোঝে না, তা হল বাড়াবাড়ির সংজ্ঞা কী হবে, সেটা।
একজন উস্তাদ একবার বলছিলেন, যে বিষয়ে শারি’আহ আমাদের অনুমতি দিয়েছে, সেটা পালন কখনই বাড়াবাড়ি নয়। তাই বাড়াবাড়ি বলতে আমরা কী বুঝি, সেটাই মূল আলোচ্য হওয়া উচিৎ।

যেমন একজন নন-প্র্যাক্টিসিং মুসলিমের কাছে ৫ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়াটা বাড়াবাড়ি। কেন বাবা, নামাজ তো বাসাতেও পড়া যায় – এমন বক্তব্য অনেকেরই। আবার অনেকের কাছে লম্বা ছেড়ে দেয়া দাড়িও বাড়াবাড়ি। আরে চাপ দাড়ি রাখলেই চলে বা দাড়ি না রাখলে ঈমান যাবে না – এমনও বলেন অনেকে। আবার অনেকেই আছেন, যারা বোরকা পরাকে বাড়াবাড়ি মনে করেন। শালীন ড্রেস পরলেই হবে মনে করেন।

আবার অন্য দিকে কিছু প্র্যাক্টিসিং মুসলিমও আছেন, তাদের মাঝেও অনেকে আছেন যারা মনে করেন পায়জামা পাঞ্জাবী পরা বাড়াবাড়ি, নিকাব করা বাড়াবাড়ি, হারাম উপার্জন থেকে বাঁচতে সিম্পল লাইফ লিড করা বাড়াবাড়ি, গায়ের মাহরামের সামনে না যাওয়া বাড়াবাড়ি।

খেয়াল করলে দেখা যাবে, একেক লেভেলের মুসলিমদের চোখে বাড়াবাড়িটা একেক রকম। শীলা মনে করছে নীলা মাথায় ওড়না করা হিজাব দিয়েছে এটা বাড়াবাড়ি। আবার নীলা মনে করছে শায়লা ওড়না হিজাবের সাথে আবার কালারফুল বোরকা পরেছে এটা বাড়াবাড়ি। আবার শায়লা মনে করছে আমিনা কালো বোরকা পরেছে এটা বাড়াবাড়ি। আবার আমিনা মনে করছে আইশা নিকাব পরেছে এটা বাড়াবাড়ি। একেক জনের কাছে বাড়াবাড়ির সংজ্ঞা একেক রকম।
অথচ শরিয়তের মানদন্ডে কোনটাই বাড়াবাড়ি নয়, বরং প্রথম কয়েকজনের অনেক কিছুই ছাড়াছাড়ি। শরিয়ত যা আমাকে করতে অনুমতি দিয়েছে, হক্কপন্থী ফকিহ আলিমগণ যে বিষয়ে মতামত দিয়েছেন, তার অনুসরণ কখনই বাড়াবাড়ি নয়।

তার মানে কি বাড়াবাড়ি কিছুই নেই?
 হ্যাঁ আছে।
 অনেক হক্কপন্থী আলিমই বর্তমান যুগে অনেক কিছুকে বাড়াবাড়ি বলেন। যেমন ফিকহ নিয়ে, মাসলা মাসাইল নিয়ে অনেকেই বাড়াবাড়ি করেন, পোশাক পরিচ্ছদের সহজতাকে অস্বীকার করে অনেকে বাড়াবাড়ি করেন, শরিয়তের অনুমতি থাকা কোন বিষয়কে নাজায়েজ বলে ফতোয়া দিয়ে বাড়াবাড়ি করেন, অনেকে অদূরদর্শী হয়ে মানুষ পর্যন্ত হত্যা করেন, এইসব অবশ্যই বাড়াবাড়ি।
এবং এইসব যে বাড়াবাড়ি, তা শরিয়ত থেকেই প্রমাণিত। ফকিহ আলিমগণ দলিল প্রমাণের ভিত্তিতেই বলেন এইসব বাড়াবাড়ি হবার কারণ।

কিন্তু শরিয়তের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও কোন কিছুকে বাড়াবাড়ি আখ্যা দেয়াটা নিতান্তই অজ্ঞতা, মূর্খতা ও জাহালাত। ইসলাম সহজতার দীন। ইসলাম একে অপরকে সহায়তার, সহানুভূতির ও সহনশীলতার দীন। কেউ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে শরিয়তের অনুমিত পন্থায় আমার চাইতে কোন আমল বেশি করলে, যদিও সেটা আমার চোখে কাঠিন্যের পর্যায়ে পড়ে, সেটাতে আমার আপত্তির কোন সুযোগ নেই। আল্লাহর আইন সে সুযোগ আমাকে দেয় না।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে দীনের জ্ঞান দিন।

>>কালেক্টেড পোস্ট<<

আপনি আপনার রবকে ভালোবাসতে পেরেছেন তো?

মেয়েটা চেয়েছিল কোনো এক ফাল্গুনে বসন্তের রঙে নিজেকে অপরূপ করে রাঙাবে, জীবনে প্রথমবার শাড়ি পরবে, খোঁপায় গুজবে বেলীফুলের মালা। শাড়ির প্রতি তার অদ্ভুত একটা দুর্বলতা কাজ করতো।

মেয়েটা চেয়েছিল এলোচুল মেলে দিয়ে লঞ্চের কামরায় বসে জানালার বাইরে পানির ঢেউ দেখবে, হু-হু বাতাসে তার এলোচুল উড়ে গিয়ে পড়বে পাশে বসে থাকা মানুষটার চোখেমুখে.. মানুষটা বিরক্ত হবে, সে মিষ্টি করে হাসবে।

মেয়েটা বৃষ্টি ভালোবাসতো। মেয়েটা চেয়েছিল ঝুম বরষায় বৃষ্টিতে স্নান করবে, গায়ে লেপটে থাকবে ভেজা চুল, জামা; জুতোয় পানি ঢুকে যাবে -- সেদিকে সে মোটেই পরোয়া করবে না। বান্ধবীকে বলেছিল, এতোকিছু খেয়াল করলে জীবনটা 'এনজয়' করা যায় না। 

কিছুই করেনি সে।

 শাড়ির বদলে এখন কেমন ঢোলাঢালা একটা কাপড় পরে, চুলগুলো সযত্নে মুড়ে রাখে বড়ো ওড়নায়। ভেতরে খোঁপা আছে নাকি ফুলের মালা সেই রহস্য আর ভেদ হয় না।
বৃষ্টি হলে একদৌড়ে কোনো ছাউনির নিচে গিয়ে যখন আশ্রয় নেয়, ওর বান্ধবীরা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। তাকে প্রশ্ন করলে বলে - ভিজলে গায়ের শেইপ বোঝা যায়, আমার লজ্জা লাগে।

কী অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন, কী সীমাহীন বৈপরীত্য।

 সেদিনকার সেই মেয়েটা এভাবে বদলে গেছে ভাবাই যায় না। মেয়েটার তীব্র বাসনা, ঘোরলাগা স্বপ্নগুলো আর পূরণ হয় না। কিছু স্বপ্ন সে তুলে রাখে ভবিষ্যৎ স্বামীর জন্যে, কিছু তোলা থাকে জান্নাতে পূরণের আশায়।

 মেয়েটা তো ভিজতে ভালোবাসতো, সাজতে ভালোবাসতো, শাড়ি পরে সবার সামনে ঘুরতে ভালোবাসতো। তাহলে কেন সব ছেড়েছুড়ে বৈরাগী হয়ে গেল? কেন জীবনটাকে "এনজয়" না করে এমন সাদামাটা হয়ে চলা? এর কারণও ভালোবাসা।


 ভালোবাসার অনেকগুলো স্তর আছে। মেয়েটার ভালোবাসার সীমানা তার নিজেকে ছাড়িয়ে গেছে, এই পৃথিবীর জীবনকে, এই পৃথিবীর মানুষগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। মেয়েটা ভালোবাসে তার রবকে--প্রচণ্ড ভালোবাসে। ভক্তি, ভয়, সম্ভ্রমে ওর মাথাটা ঝুঁকে আসে। তীব্র ভালোবাসার জন্যে নিজেকে বদলে নেয়া যায়। ভালোবাসার সামনে ছোটোখাটো ত্যাগগুলোয় কী পরম সুখ লুকিয়ে আছে; সেটা সে ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।
আপনি আপনার রবকে ভালোবাসতে পেরেছেন তো? কতোটা ত্যাগ আমরা আল্লাহর জন্য করতে পারি?

>>কালেক্টেড পোস্ট<<

ভালো বই পড়ুন । উত্তম জীবন গড়ুন

একটা প্রচলিত গল্প আছে, সেদিন একজনের ওয়ালে পড়েছিলাম। এক বারে বসে এক মদ্যপ ব্যক্তি একজন মহিলাকে তার সাথে রাত কাটানোর প্রস্তাব দেন। মহিলা মদ্যপ হলেও নিজেকে অভিজাত ভাবেন। রাগে কটমট করে তার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকান। পুরুষটি চট করে বলেন, “দেখুন মাত্র একটি রাত কাটানোর বিনিময়ে আপনাকে আমি এক শ কোটি টাকা দেবো, আরেকবার ভেবে দেখুন রাজি কি না।” টাকার পরিমাণ শুনে মুহুর্তেই ভাবান্তর ঘটে মহিলার; কটমট ভাবটা চলে যায়, চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে ভাবতে শুরু করেন।
পুরুষটি হঠাৎ বলে ওঠেন, “না, এক শ টাকা দেবো, ভেবে বলুন—রাজি কি না! মহিলা সাথে চিৎকার করে ওঠেন: হ্যা, অসভ্য কোথাকার, আপনি কী মনে করেছেন! আমি কি... নাকি, আমি কি... নাকি?
পুরুষটি বলেন, আপনি কী তা আমি ইতিমধ্যেই বুঝে নিয়েছি; শুধু এমাউন্টটা কত হবে এখন তা নির্ধারণ নিয়ে একটু বার্গেইন করছি আর কি!
আদর্শ-বিশ্বাসকে যদি একবার দর কষাকষির বিষয়ে পরিণত করা হয় তার অবধারিত পরিণতি হলো তা হারিয়ে ফেলা—একটু আগে কিংবা পরে। শয়তানের সাথে ঈমানদারের এমন দর কষাকষি চলে প্রতিনিয়ত।
সে এসে আমাদের ঈমানকে নিলামে তুলে দেয়। বলে, আরে তুমি তো সূদ খাও না, খেতে চাও না। আল্লাহ্‌র অবাধ্যতাও করতে চাও না। ঠিক আছে, কিন্তু পরিবারেরও তো তোমার উপর একটা হক্ব আছে। তারা তোমাকে এতো টাকা পয়সা খরচ করে লেখা পড়া করিয়েছে। আর চাকরিটাও কত ভালো, প্রতিষ্ঠিত একটা ব্যাংক, কত হ্যান্ডসাম স্যালারি। আপাতত কিছু দিন করো, তারপর না হয় অন্য কোথাও তোমার পছন্দমতো কোনো জব খুঁজে নিও।
আপনি রাস্তায় মাথা নিচু করে হাটবেন; সে এসে বলবে, হ্যা ঠিক আছে, তুমি তো মাথা নিচু করেই চলো কিন্তু এটা কোনো সাধারণ চেহারার মেয়ে নয়, না দেখলেই মিস, অসাধারণ। তুমি তো বিয়ের জন্য পাত্রিও খুঁজছো। সেজন্যও তো একবার দেখে নিতে পারো।
শয়তান এসে বলবে, আরে তুমি নিজে তো আর এই পাপ করছো না, এই সূদী ব্যাংকের পোর্টালটা কিংবা ঐ খারাপ সাইটটা ডেভেলপ করে দিলে কী হবে? তুমি না করে দিলে কি তাদের কাজ বন্ধ হয়ে থাকবে? কেউ না কেউ কেউ তো করবে। তাহলে এত বড় কাজটা ছেড়ে দিয়ে তোমার কী লাভ হলো!
শয়তান এসে হতাশায় মনটা ভরিয়ে দেবে। বলবে দেখো, কী পেলে জীবনে। তোমার সাথে একই ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। দেখো, ওর জামাই ওকে সাথে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করতে গেছে; অমুক বসুন্ধরায় ফ্ল্যাট কিনেছে; অমুকের কত দামি দামি শাড়ি-গয়না, অমুকের জামাই সারাক্ষণ বৌএর পেছনেই ঘুরঘুর করে... তুমি একটা কী জামাই পাইলা?
শয়তান এভাবে দারিদ্রের ভয় দেখিয়ে, হতাশ করে আমাদের ঈমানকে নিলামে তোলে। এরপর শুরুতে যদিও দাম হাকা হয় অনেক, কিন্তু বিক্রিতে রাজি হয়ে গেলে হাতে কাচকলা ধরিয়ে দিয়ে চলে যাবে। শয়তান যদি একবার বুঝে ফেলে যে আপনি ঈমানটা বিক্রিতে রাজি আছেন, শুধু একটু বার্গেইনিং এর ব্যাপার, তবে সে আপনার ঈমান নিয়েই ছাড়বে এবং এক রকম বিনামুল্যেই নিয়ে নেবে।
তাই শয়তানকে না বলে দিন, শক্ত করে। কোন হতাশা নয়, কোনো লোভ নয়, কোনো না-পাওয়ার ঘ্যানঘ্যানানি নয়। বলে দিন, আমি আল্লাহকে ভালোবাসি। জীবন দেবো ঈমান দেবো না। বলে দিন, আমার বিশ্বাস কোনো পণ্য নয়, নিলামে তোলার বস্তু নয়। বলে দিন, আমার আল্লাহ আমাকে ঠিক সেই অবস্থানেই রেখেছেন যেটার আমি উপযুক্ত, যেখানে তিনি আমাকে দেখতে পছন্দ করেন, যে অবস্থানের মধ্যে আমার কল্যাণ রেখেছেন। আমি তাঁর প্রতি সর্বাবস্থায় কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে যা দিয়েছেন তা নিয়েই আমি খুশি, আমি বাধিত। তিনি আসমান জমিনের প্রভু, মালিক ও প্রতিপালক। তিনি জানেন আমি জানি না।
ভালো বই পড়ুন । উত্তম জীবন গড়ুন.
>>কালেক্টেড পোস্ট<<

ইয়া রব, হেদায়েত দাও, তোমার পথে চলার শক্তি দাও

মুসলিম হিসেবে তো কতজনই জন্ম নেয়। কিন্তু শেষতক জায়গা করে নেয় জাহান্নামের আগুনে।
 সারাজীবন নাচ, গান, পার্টি কোরে সুদ, ঘুষ খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে নির্লিপ্ত ভাবে চলাফেরা। মুসলিম একটা নাম শুধু বস্তির শিশুদের কোমরে-বাঁধা-তাবিজের মত অযত্নে মানুষটার সাথে লটকে থাকে, কাজেকর্মে ইসলামের কোনো প্রকাশ থাকে না।

তবুও অনেকেই সময় থাকতে মোড় ঘুরে দাঁড়ায়। জীবনের আগাছাগুলো পরিষ্কার করে নতুন করে শুরু করার চেষ্টা করে। জান্নাতে যাওয়ার রহস্যটা এখানেই।

আপনার সামনে যখন ইসলামের আলো হাজির হয়, একে কবুল করুন। 
 যদি কেউ উত্তম উপদেশ দেয়, একে কবুল করুন। 
যখন কেউ ইসলামের দিকে ডাকে, সেই ডাকে সাড়া দিন।
 জীবনটা বদলানো যত কঠিনই হোক না কেন, রবের কাছে কোনো এক রাতের আঁধারে চুপিচুপি বলুন, ইয়া রব, হেদায়েত দাও, তোমার পথে চলার শক্তি দাও।
 জান্নাতের পথে হাঁটার সুযোগ করে দাও।
মন যখন রবের রহমত পাওয়ার আশায় ব্যাকুল হয়ে যায়, আল্লাহ কি তা ফেলতে পারেন?
 মহান তাঁর ক্ষমতা, বিশাল তাঁর দয়া।
 এত দয়া যার, তার কাছে সত্যিই অন্তর থেকে কিছু চাইলে সে ফিরিয়ে দেবে এমন হয় না--নিশ্চয়ই আমাদের রব বান্দাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান।

>>কালেক্টেড পোস্ট<<

এই লেখা সব মায়েদের জন্য ডেডিকেটেড

কিছু কথা যা সম্ভবত প্রতিটা বাচ্চার মাকে কখনো না কখনো শুনতে হয়-

* বাচ্চাকে ঠিকমতো খাওয়াও না কেন? সাস্থ এমন কেন?
* বাচ্চা বেশিদিন অসুস্থ থাকলে, বাচ্চা এখনো সুস্থ হয়না কেন? ভালোমতো দেখাশোনা করনা?
* বাচ্চা নিয়াও ঘরের সব কাজ করতে হবে। আর মানুষের বাচ্চা নাই? ওদের ঘর দেখো কেমন গুছানো (ইয়ে, মেহমান আসার আগে সবাই ঘর গুছিয়েই রাখে!)
* বাচ্চা ব্যথা পেলে, কেমন মা তুমি বাচ্চাকে দেখে রাখতে পারোনা?
* বাচ্চার কারণে কোন কাজ করতে না পারলে, নিজে কাজ করতে পারোনা বাচ্চার নাম দিওনা।
* বাচ্চা যদি ভুল কিছু করে, কেমন মা তুমি বাচ্চাকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারোনা?
* সাথে বোনাস হিসেবে আছে অযাচিত উপদেশ, বাচ্চাকে এভাবে খাওয়াবেন, এভাবে ঘুম পারাবেন, এভাবে গোসল দিবেন, এভাবে এটা করবেন এভাবে সেটা করবেন! আলহামদুলিল্লাহ মানুষের জ্ঞান দেওয়ার অভাব নাই।যেন মা একাই কিছু জানেনা কিন্তু যার এখনো বাচ্চাই হয়নি সেও মায়ের চেয়ে বাচ্চার ব্যাপারে এক্সপার্ট।

মা অনেক কিছুই ভুল করতে পারে,সঠিকটা জানানো সেক্ষেত্রে অবশ্যই উচিৎ তবে তা এমনভাবে না যেন মা কিছুই জানেনা এবং মায়ের মনে কষ্ট দেয়।সুন্দর করে বলা যায়,আচ্ছা আপু আপনি তো এভাবে করেন,অমুক ভাবে করে দেখবেন ইন শা আল্লাহ আরও ভালো ফল পাবেন।

উপরে যা বললাম এসব আসলে মায়েদের যেসব কথা শোনা লাগে তার মাত্র ১০%। হ্যা মাত্র ১০%! বাচ্চা যত বড় হতে থাকবে বাচ্চার প্রতিটা ভুলের জন্য মা দায়ি। মা ছাড়া যেন সবারই বাচ্চার প্রতি ভালোবাসা বেশি।মা শুধু জন্ম দিবে, দুধ খাওয়াবে আর উলটাপালটা বাচ্চা পালবে!

এখন আসি ইসলামে মায়ের মর্যাদার উপর কি বলে। এই হাদিসটা আমরা সবাই জানি সন্তানের উপর মায়ের অধিকার তিনবার বলার পরে বাবার অধিকার। আর বাকিদের কথা তো তাহলে বাদই দিলাম।আল্লাহ যেখানে বাবাকেও মায়ের অধিকারের চেয়ে অনেক কম অধিকার দিয়েছেন তাহলে নিশ্চয় কোন কারণ আছে।মায়ের অধিকার এতো বেশি কেন? একজন মা তার বাচ্চাকে যেভাবে ভালোবাসে, যেভাবে বাচ্চার ভালো চায় তার ধারের কাছে দুনিয়ার কেও চাইতে পারেনা।আই রিপিট,কেও চাইতে পারেনা।
 বাচ্চার কোন সমস্যা হলে মা বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝে ফেলে, বাচ্চার অসুস্থতাতে মা যেভাবে ব্যাকুল হয়ে রাত জেগে সেবা করে,আল্লাহর কাছে দুয়া করে সেভাবে কি আর কেও পারবে? এজন্যেই আল্লাহ সন্তানের জন্য মায়ের দুয়া দ্রুত কবুল করেন।আর কারও দু আ কি এভাবে দ্রুত কবুল হয় সব সময়? আর কার পায়ের নিচে আল্লাহ সন্তানের বেহেস্ত রেখেছেন? এতো বড় মর্যাদা কি আল্লাহ এমনি দিয়েছেন?

একজন মুসলিম মা তার সন্তানকে আল্লাহ প্রদত্ত আমানত হসেবে দেখে।ভালোবাসার পাশাপাশি আল্লাহর বান্দাকে আল্লাহর জন্য তৈরি করা তার দায়িত্ব। যে দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাকে আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। সেই মা নিশ্চয় কখনোই নিজের অক্ষমতাকে সন্তানের নামে চাপিয়ে দিবেনা। নিশ্চয় সে তার সন্তানের ব্যাপারে অবহেলা করবেনা। কিন্তু তবুও মায়েদের কথা শোনা লাগে। আমাদের মায়েদেরওশুনতে হয়েছে,তাদের মায়েদেরও, তাদের মায়েদেরও। যুগ যুগ ধরে সব দোষ সব ভুল শুধু মায়েদেরই, আর মা ছাড়া সবাই বাচ্চাকে বেশি ভালোবাসে!! এমনকি যারা এই অবস্থা ফেইস করেছেন তারাও অন্য মায়েদের খোঁটা দিয়ে থাকেন!

বাচ্চা নিয়ে মাকে কথা শোনানোর আগে একবার ভাববেন যে যাকে বলছেন সে বাচ্চার মা।৯ মাস বাচ্চাকে পেটে নিয়ে সে কষ্ট করেছে, বাচ্চার জন্য রাতের পর রাত জেগেছে, নিজের শখ আহ্লাদ, সুবিধা,ইচ্ছা সব বাদ দিয়েছে সন্তানের ভালোর জন্য।সন্তান জন্মের পর আপনি তার বাবা, মামা, খালা, দাদা দাদি নানা নানি ইত্যাদি হয়েছেন।কিন্তু বাচ্চা পেটে আসার সাথে সাথেই মা মা হয়েছেন। ভুল করলে অবশ্যই সঠিকটা ধরিয়ে দিবেন তবে তা মাকে মা হিসেবে সম্মান করে। বাচ্চার কেয়ারটেকার হিসেবে না।

[এই লেখা সব মায়েদের জন্য ডেডিকেটেড। আমি লিখেছি বলে আবার এটাকে আমার ঘরের চিত্র ভাববেন না। আমি সবার থেকে দূরে একা থাকি।তবে এমন মা খুঁজে পাওয়া যাবেনা যাকে কারও থেকে কথা শুনতে হয়নি।সেটা পাশের বাসার অবিবাহিত পিচ্চি মেয়ে হলেও হতে পারে!!]
>>কালেক্টেড পোস্ট<<

আল্লাহ ক্ষমাশীল, তবে ন্যায়বিচারকও বটে |

আমার পরিচিত আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের বেশিরভাগের জন্মই মুসলিম পরিবারে। সবাই কমবেশি ইসলামের বেসিক রুলগুলো জানেন।

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রমাদানের রোজা, নারীদের জন্য হিজাব, পুরুষদের জন্য দাড়ি, নারী-পুরুষ অবাধে মেলামেশা ও বন্ধুত্ব না করা, গান-মুভি-সিরিয়াল না দেখা, সামর্থ্য থাকলে যাকাত আদায় ও হজ্জ্ব পালন--এই কাজগুলো ইসলামের একেবারেই বেসিক এগুলো সবাই জানেন। এছাড়াও মিথ্যা না বলা, সুদ-ঘুষ না নেওয়া, কথা দিয়ে কথা রাখা- এই বিষয়গুলো তো আমাদেরকে ছোটোবেলা থেকেই শেখানো হয়। অথচ মানে কজনা!

মুসলিম হয়ে বড়ো হয়ে ওঠা বেশিরভাগ লোকই এখন এসব মেনে চলছেন না। এমনকি মানার চেষ্টাও তাদের মধ্যে নেই।

মানার চেষ্টা নেই - কীভাবে বুঝি?

যখন দেখা যায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়াশোনা, আড্ডা, সিনেমা বা খেলা দেখার জন্য ব্যয় করা হচ্ছে, কিন্তু সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা হচ্ছে না। "সময় পাই না" এক্ষেত্রে খোড়া যুক্তি বলাই বাহুল্য!

অফিস, জার্নি, বাচ্চাদের স্কুল বা ফাংশনের জন্য ভোরবেলায় উঠে যেরে পারছেন, কিন্তু ফজরের সালাতটা নিয়মিত মিস হচ্ছে। "ঘুম ভাঙতে চায় না" কথাটা এক্ষেত্রে ফালতু অজুহাত ছাড়া আর কিছু?

এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে, অত উদাহরণ দিয়ে লেখাটা বড়ো আর বিরক্তিকর করতে চাই না, সহজ কথা হলো- আমরা যদি নিজেদের সাথে ধোকাবাজি না করি, তাহলে বুঝতে পারবো বেসিক এই ইবাদতগুলোর ব্যাপারেও আমরা কত্তো উদাসিন! বড়ো বড়ো কঠিন ইবাদতের কথা নাহয় বাদই দিলাম, ইসলামের ন্যূনতম কাজগুলিও আমরা ঠিকমত করতে চাই না। আমাদের অন্তর থেকে যেন আখিরাতের ভয়, বিশ্বাস উঠে গেছে! অথচ মুখে বলছি আমরা আখিরাতে বিশ্বাস করি, আমরা মুসলিম....

ইসলাম সম্পর্কে আমরা অনেকেই কম জানি এটা সত্যি, কিন্তু অজ্ঞতা আমাদের জন্য যতোটা না সমস্যা, তারচেয়েও বড়ো পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জ্ঞান! আমরা অনেক কিছুই জানি, জেনেও মানছি না। আমাদের সমস্যা আমরা আল্লাহকে ভয় পাচ্ছি না। আমরা আখিরাতের কথা ভুলে যাচ্ছি। আল্লাহর দেয়া বিধানগুলোকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলছি, এমনকি পরদিন থেকে মানার নিয়ত পর্যন্ত করছি না! অনেকে তো এটাও বলেন যে, মন থেকে আসলে করব, বা আল্লাহ যেদিন আমার মন বদলায় দিবেন সেদিন সবই করব। সুবহান আল্লাহ! আল্লাহ তার অন্তরই বদলান, যে নিজে আল্লাহর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। নিজের মনে ভালো কাজের নিয়্যত করুন, আল্লাহকে ভয় করুন, আল্লাহ তা'আলার কাছে সাহায্য চান এবং ইসলাম পালনে আপনার চেয়েও এগিয়ে থাকা লোকদের সাথে বেশি সময় কাটান। দেখবেন আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেই করবে।

আখিরাতে আমাদের বিশ্বাস কতোখানি এটা আসলে প্রমাণ হয় আমাদের কাজের মাধ্যমে। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদেরকে আমাদের কাজ, ইবাদত, আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। ইসলামের হুকুমত জেনেও সেগুলো কেন মানি নাই জিজ্ঞেস করবেন। আমরা সেদিন কী জবাব দেব? আল্লাহর কাছে কি আমাদের জবাব গ্রহণযোগ্য হবে? মনে রাখতে হবে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, তবে আল্লাহ ন্যায়বিচারকও বটে। টগবগে যৌবনে যে জন কষ্ট করে ইসলাম পালন করে আর যে লোক সারাজীবন আল্লাহর দ্বীনকে কঠিন বলে এড়িয়ে গেছে, তাদের দুজনের বিনিময় কি কখনও সমান হয়, নাকি সমান হওয়ার?

>কালেক্টেড পোস্ট<

বন্ধু! তুমি গুনাহ ছাড়তে পারছো না?

তাওবা!

নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আবিদের। আজ এক বছর ধরে এভাবেই চলছে। এক মাস নিজের ঈমান যদি পাহাড়ের চূড়ায় থাকে, পরবর্তী মাসে তা পাহাড়ের তলদেশে নেমে যায়।

কতবারই না শপথ করেছে আর টিভি দেখবে না। চ্যানেলের পর চ্যানেল ঘুরাবে না। চিরদিনের জন্যেই ছেড়ে দেবে সমস্ত গুনাহ। কিন্তু সে কিছুতেই নিজেকে বাগে আনতে পারছে না।

এই পর্যন্ত দশ-বারো বার তাওবা করেছে। প্রতিবারই তার এই তাওবা সর্বোচ্চ এক মাস স্থায়ী হয়েছে। মাস খানিক নামাজ ছাড়ে না, মসজিদে গিয়ে পড়ারও চেষ্টা করে, ক্বিমিয়ায়ে সাআদত থেকে শেখা ' আল্লাহু হাজিরী, আল্লাহু নাজিরী, আল্লাহু মায়ী' - এই ধ্যানের সাথে থাকার চেষ্টা করে। আল্লাহ তায়ালা আমার সামনে উপস্থিত, তিনি আমাকে দেখছেন, তিনি আমার সাথে আছেন' - এই ধ্যান জারি থাকে পথ চলার সময়, গাড়িতে, এমনকি ক্লাসে লেকচারের ফাঁকেও।
ঐ সময়গুলোতে অন্তরের অবস্থা থাকে অন্যরকম। সকালে তরজমার সাথে তিলাওয়াতের সময় চোখ দিয়ে পানিও ঝড়ে।

আশ্চর্য!

সেই মানুষটাই কিভাবে যেন আবার সব ছেড়ে দেয়। পুরো মাস টিভি না দেখা ছেলেটা হঠাৎ করে কোন ক্রিকেট-ম্যাচ দেখতে গিয়ে আবার নিজেকে হারিয়ে ফেলে। একা একা খেলা দেখার সময় খেলার বিরতিতে চ্যানেল ঘুরাতে গিয়ে মশগুল হয়ে যায় এমন কিছুতে, যা তার অভিপ্রেত নয়।

হঠাৎ এই পদস্খলন তাকে চূড়া থেকে তলানিতে ফেলে দেয়। কিভাবে যেন আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। নামাজ কাজা হওয়া প্রতিদিনের ব্যাপারে পরিণত হয়। দিলের ভেতরে গুনাহর কালিমা সে স্পষ্ট টের পায়।

এভাবে চলতে চলতে মাস দু'মাস পর আবার তার বোধোদয় হয়। শো-কেস থেকে দিল স্পর্শ করে এমন একটা কিতাব বের করে নেয়। রুমের দরজা বন্ধ করে একান্তে সালাতুত তাওবার জন্যে দাঁড়ায়। দু'হাত তুলে নিজের সমস্ত অপরাধের ফিরিস্তি আল্লাহ তায়ালার সামনে তুলে ধরতে থাকে। শুকনো চোখ দিয়ে অনুতাপের অশ্রু ঝরাতে চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু শক্ত দিলটা যে পাথর হয়ে আছে।

এক ধরনের অপরাধবোধে অন্তরটা ছেয়ে থাকে। নিজেকে দোষী মনে হয়। কয়েকবার এভাবে একান্তে তাওবার জন্যে দাঁড়ায়।জাহান্নাম ও কবরের আযাবের কথা নিজেকে বার বার শুনাতে থাকে। অবশেষে তার পরম আরাধ্য অনুতাপের কান্না অশ্রু হয়ে নামতে থাকে। তার মনে হতে থাকে, অন্তরের সব ময়লাগুলো ধুয়ে ধুয়ে পড়ছে। যখন মুনাজাত শেষ করে দু'হাত মুখে বুলিয়ে নেয়, মনে হয় গুনাহগুলো ধুয়ে গেছে। একরাশ প্রশান্তি সে অন্তরে টের পায়। গতকালের পাপী মানুষটা হঠাৎ বদলে যায়।

আবার মাসখানিক নামাজের পাবন্দী, তিলাওয়াতে অশ্রু ঝরানো, 'আল্লাহু হাজিরী' ধ্যানে পথচলা। চব্বিশঘন্টা মাওলার ধ্যানে কাটানোর চেষ্টা। মাসখানিক পর আবার পদস্খলন।

সে যেন ঐ বানর, যে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠছে আবার পিছলে নেমে যাচ্ছে। দু'হাত উঠে, আবার তিনহাত নেমে আসে।
কিন্তু একটা আমল সে জারি রেখেছে। সম্বিৎ ফিরে পাওয়া মাত্র তাওবা। একদম পরিপূর্ণ তাওবা।

কোন কিতাব পড়ে কিংবা কোন রেকর্ডকৃত বয়ান শুনে দিল নরমের চেষ্টা, এরপর সালাতুত তাওবা, নিজের গুনাহর ফিরিস্তি আল্লাহকে শুনানো, করজোরে মাফ চাওয়া, আর না করার অঙ্গীকার, নিজের বার বার ওয়াদাভঙ্গের জন্য অনুতাপ, সামনে তাওবার উপর অটল থাকার জন্যে সাহায্য প্রার্থনা। এভাবে উত্থান আর পতনেই চললো বছর দুয়েক। হঠাৎ মাওলা তার উপর কৃপা করলেন। যেন হিদায়াতের বৃষ্টি নামলো তার উপরে। বন্ধুরা একদিন ধরে তাকে তিনদিনে নিয়ে গেলো। এই তিনদিন তাকে একদম বদলে দিলো। এমনকি বদলে দিলো তার চেহারা, তার পোষাক-আশাক।

আশ্চর্য!

 গুনাহর উপর সে অনুতপ্ত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু দাঁড়ি রাখবে, সুন্নতি লিবাস ধরবে - এ কখনও কল্পনাই করেনি।
আলহামদুলিল্লাহ, আজ পাঁচ বছর হতে চললো আবিদ টিভি দেখে না। ক্রিকেট-ম্যাচ দেখার সে আসক্তি কবেই গেছে। প্রথম প্রথম পেপারে ম্যাচের স্কোর জেনে নিতো। এখন তারও প্রয়োজন পড়ে না।
বিশ্বকাপ ফুটবল গেছে, বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও এশিয়া কাপ গেছে। তার টিভিতে ম্যাচ দেখার ইচ্ছেটুকুও জাগে নি।
আবিদ বুঝতে পারে, এ কেবলই তার বারংবার তাওবার ফল। যে তাওবাগুলো সে বার বার ভেঙ্গেছে, কিন্তু আশাহত হয় নি। মাস দু'মাসের গাফলতির পর আবার তাওবা করেছে, নামাজ ধরেছে, দিলটা নরম করার চেষ্টা করেছে।
হয়তো এক তাওবায় তার পরিপূর্ণ ওয়াশ হয় নি। কিন্তু তার বারংবারের হাহুতাশ ও অনুতাপ রব ঠিকই ভালোবেসেছেন। তাই অবশেষে তাকে কাছে টেনে নিয়েছেন।

বন্ধু! তুমি গুনাহ ছাড়তে পারছো না?
কিন্তু সাবধান, বারংবার তাওবার কথা ভুলে যেও না!
আত্ তায়িবু মিনায যামবি কামান লা যাম্বালাহু।

সুত্র 

ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভক্তির এই সময়ে ব্যক্তিগত অনুভূতি মাত্র

মসজিদ ও এখন কালো টাকা সাদা করারর জায়গা হয়ে যাচ্ছে।।।

একজন ইমাম সাহেব কেও পাইলাম না যিনি খুতবার পরে মসজিদে দান করার কথা বলার সময় বলেন.... "আপ্নারা আপনাদের হালাল আয় থেকে মসজিদে দান করুন"....
সবাই খালি চায় মসজিদে দান করা হউক।।

 আর পাপীরা ভাবে এই চান্সে আমার গুনাহ কম্বে, যাই পাপের কামাইয়ের কিছু অংশ দান করি...
তাই যেই এলাকায় দুর্নীতি বেশি সেই এলাকার মানুষ দান করে বেশি আর সেই দানে মাস্আল্লাহ সকল উপাসনালয় ফাইভ স্টার অট্টালিকায় পরিনত...

ঢাকার এইসব ফাইভ স্টার মসজিদগুলোতে বসলে কবর হাশরের উপলব্ধি তেমন একটা আসেনা।
 মোনাজাতে চোখে জলও আসে না, চকচকে টাইলসে রিফ্লেক্ট হয়ে ঝাড়বাতির লালনীল আলোটাই আসে....

(ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভক্তির এই সময়ে ব্যক্তিগত অনুভূতি মাত্র,
একই পর্যবেক্ষণ অন্যান্য উপসানালয় এর ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য এবং যা দুঃখজনক হইলেও সত্য)

কালেক্টেড 

বাবা-মার একটু সময় হবে কি প্লিজ!

 নোমান আলী খানের একটি আলোচনা:  আপনার বাচ্চার জন্য অনেক বড় উপকার হতে পারে।

*********************বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম*************************

টিনেজারদের বাবা-মারা প্রায় সময়ই আমার কাছে আসেন। "জানেন, আমার ছেলেটা না, আমার কথা শোনেই না আজকাল। আপনি ওর সাথে একটু কথা বলবেন?" যেন আমি কোনো মহৌষধ সাথে নিয়ে ঘুরি! যেন সেই ছেলেটা আমার কাছে আসলে আমি ওর গায়ে ফু দিয়ে দেব এভাবে। .. আর সাথে সাথেই সে দারুন লক্ষী ছেলে হয়ে যাবে! "একটু যদি কথা বলতেন। ..." না, বরং আপনি আপনার ছেলের সাথে কথা বলছেন না কেন? কোথায় ছিলেন আপনি যখন তার সাথে কথা বলার প্রকৃত সময় ছিল?

আজকে আমি আপনাদের সাথে বাবা-মাদের নিয়ে একটু কথা বলব, তারপর বলব স্বামী-স্ত্রীদের নিয়ে। আজকে এই দু'টো জিনিস নিয়ে বলারই সময় আছে। দু'টো খুবই মৌলিক সম্পর্ক: একটা আপনার সন্তানদের সাথে, আরেকটা আপনার জীবনসঙ্গীর সাথে। এই দু'টো সম্পর্কের ব্যপারেই আমরা খুব বেসিক কিছু ব্যপার নিয়ে আলোচনা করব।
আপনার সন্তান যখন ছোট, খুবই ছোট, ধরুন যখন তাদের বয়স পাঁচ, ছয়, সাত, দুই, তিন, চার, তখন তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন জিনিসটা বলুন তো? আমার নিজের পাঁচটা বাচ্চা আছে, তাই আমি খুব ভালো বলতে পারব এ ব্যপারে। তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার সমর্থন। তারা আপনাকে গর্বিত করতে চায়। তারা যা যা করেছে সব আপনাকে দেখাতে চায়। ধরুন, আমি জরুরী কোনো কাজের আলাপ করছি ফোনে, জরুরী একটা ফোন, আর এ সময় আমার দুই বছরের ছেলে এসে বলবে, "আব্বা আব্বা আব্বা আব্বা আব্বা।" ..."ভাই, একটু লাইনে থাকেন" ... "কি হয়েছে?" ... "হে হে হে" ব্যস! আমি আবার ফোনালাপে ফিরে গেলাম, সে আবার আমাকে ডাকা শুরু করল। আমি বললাম, "আচ্ছা ঠিক আছে, কি হয়েছে বলো" ... "আমি তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো" ... "কি দেখাতে চাও বাবা?" ... ব্যস এটাই! কিন্তু আমার এ ক্ষেত্রে কি করা উচিত বলুন তো? "আল্লাহ! দারুন তো! আবার করো দেখি" ... "আমি আপনাকে পরে ফোন দিচ্ছি" ... আপনার সন্তানরা যা করে আপনার উচিত তার কদর করা। এটা তাদের পরম আরাধ্য। অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে বেশি তারা এটাই চায় আপনার কাছে।

আমার তিনটি মেয়ে আছে। আর ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য কি জানেন তো? ছেলেরা এক জায়গায় বসে থাকতে পারেনা, আর মেয়েরা কথা বলা থামাতে পারে না। তো আমি আমার মেয়েদের স্কুল থেকে যখন নিয়ে আসি - একজন ক্লাস ওয়ানে আরেক জন ক্লাস থ্রিতে পড়ে - আমি ওদের স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে আসি ২৫ মিনিট গাড়ি চালিয়ে। আর এই পুরোটা সময় তারা কি করে জানেন? "জানো আজকে ক্লাসে কি হয়েছে? আমরা একটা ডাইনোসর রং করেছি, এটা করেছি, ওটা করেছি, প্রথমে আমি বেগুনী রং করলাম, তারপর ভাবলাম একটু সবুজ রং-ও দেই" - এভাবে বলতে থাকলো তো বলতেই থাকলো। থামার কোনো নামই নেই। থামা সম্ভবই না ওদের পক্ষে। আর আমাকেও মনযোগ দিয়ে সেটা শুনতে হবে। শুনতে হবে আমাকে। আমি বললাম, "ও তাই? নীল রং দাও নি?" .."না অল্প একটু নীল দিয়েছি"। আমাকে মনোযোগ দিতে হবে। আর আমি এগুলো কেন বলছি জানেন? আচ্ছা দাঁড়ান, আগে অন্য একটা গল্প বলে নেই। তাতে আপনাদের ঘুমটাও একটু কাটবে।

এই গল্পটা আমি প্রায়ই বলি। আমার বড় মেয়েটা, হুসনা, যখন ছোট ছিল তখন আঙ্গুল দিয়ে ছবি আঁকতে খুব পছন্দ করত। সে তার আঙ্গুলগুলো রঙের মধ্যে চুবিয়ে তারপর সেগুলো দিয়ে হাবিজাবি আঁকত। তো একদিন এক বিশাল কার্ডবোর্ড নিয়ে সে আমার কাছে হাজির! সেখানে নীল রং দিয়ে বিশাল কি যেন আঁকা, আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। সে বলল, "আব্বা, দেখো আমি কি এঁকেছি?" আর আমি বললাম, "বাহ, দারুন! একটা পাহাড়!" আর সে বলল, "না, এটা তো আম্মু!" আমি বললাম, "খাইছে!" "আম্মুকে এই কথা বোলো না কিন্তু"
তবে যে কথাটা আমি বলতে চাচ্ছি তা হলো ওরা আপনার সমর্থন পাওয়ার জন্য ব্যাকুল। ব্যাকুল তারা এর জন্য। কিন্তু আপনাদের মধ্যে যাদের সন্তানরা টিনেজার, তাদের যখন স্কুল থেকে আনতে যান, এমন কি হয় যে তারা গাড়িতে উঠে কথা বলা থামাতে পারছে না? হয় এমন? "জানো আজকে স্কুলে কি হয়েছে? টিচার এটা বলেছে, ওটা করেছে, পরীক্ষায় 'এ' পেয়েছি"। না! তারা একদম চুপ! বরং আপনিই বলার চেষ্টা করবেন, "কেমন গেল দিন?" .."মোটামুটি".."কি করলে সারাদিন?" .. "কিছু একটা".. "আজকে কোথায় যাবে?" .. "যাব কোথাও"। কথা বলেই না তারা! তাদের কথা বলানো অনেকটা পুলিশের আসামীকে জেরা করার মত ব্যপার। আপনাকে তারা কিছুই বলে না। আর যখন আপনি তাকে প্রশ্ন করছেন, তখন হয়ত সে তার বন্ধুকে এস,এম,এস পাঠাচ্ছে, "আব্বা আজকে বেশি প্রশ্ন করছে! ঘটনা কি? তুমি ওনাকে কিছু বলেছ নাকি?" ... যা আমি বলতে চাচ্ছি, তা খুবই সহজ। ছোট বয়সে আপনার বাচ্চারা আপনার মনোযোগ পাওয়ার জন্য পাগল থাকে। আর যখন তারা বড় হবে, আপনি তাদের মনোযোগ পাওয়ার জন্য পাগল হবেন।

কিন্তু তারা যখন ছোট থাকে তখন যদি আপনি তাদের মনোযোগ না দেন - তারা খেলনা নিয়ে আপনার কাছে আসলে যদি বলেন, "ঘরে যাও! আমি সংবাদ দেখছি", "খেলা চলছে। এই, তুমি ওকে একটু সরাও তো!", "সারাদিন অনেক কাজ করেছি, এখন ওকে সামলাতে পারব না", "বাসায় আমার বন্ধুরা এসেছে, কি বলবে ওরা? যাও ঘুমাতে যাও। যাও এখান থেকে" - আপনি যখন ওদের সাথে এমন আচরণ করবেন, যেন তারা আপনার জন্য প্রতিবন্ধকতা, আপনার কাজ হচ্ছে চাকরি করা, আর বাসায় এসেছেন শুধু বিশ্রাম নিতে। না রে ভাই! আপনার কাজ শুরু হয়েছে তখনই যখন আপনি ঘরে ফিরেছেন। সেটাই আপনার আসল কাজ। চাকরিতে যে কাজ করেছেন সেটা শুধুমাত্র এজন্য যেন ঘরের আসল কাজটা ঠিকমত করতে পারেন।

একজন প্রকৃত বাবা হন। উপস্থিত পুরুষদেরকে বলছি। একজন প্রকৃত বাবা হন। আপনার সন্তানদের সাথে সময় কাটান। তারা শুধু এ জন্য নেই যে আপনি তাদের স্কুলে ছেড়ে আসবেন, আর বাসায় ফিরে শুধু ঘুমাতে যাবেন, কোনো ঝামেলায় যাবেন না, তাদের সাথে কথা বলবেন না। এবং তাদের সাথে কথা না বলার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে তাদের একটা আইপড টাচ অথবা আইফোন ধরিয়ে দিন, তাদের নিজস্ব রুমে একটা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ দিয়ে দিন হাই-স্পিড ইন্টারনেট সহ। তাহলে আপনাকে তাদের চেহারাও দেখা লাগবে না। তারা সারাদিন তাদের ঘরে থেকেই ফেসবুকিং করতে থাকবে, অনলাইনেই নিজেদের জন্য নতুন বাবা-মা খুঁজে নিবে না হয়।
সিরিয়াস্লি বলছি। প্রকৃত বাবা হন। প্রকৃত মা হন। আপনার মাতৃত্ব বা পিতৃত্বের বদলি হিসেবে এইসব জিনিসকে আসতে দিয়েন না। কারণ যদি তা দেন, তাহলে ওরা যখন স্বাবলম্বী হয়ে যাবে তখন বেশির ভাগ বাবা-মার কি হয় জানেন? আপনাদের বেশিরভাগের ছেলেমেয়েরা আপনাদেরকে দেখে কতগুলো টাকার মেশিন হিসেবে। শুধুমাত্র কখন তারা আপনাদের কাছে আসে? - "বাবা, আমাকে ৫ ডলার দাও তো" জানি আজকাল কেউ আর ৫ ডলার চায় না, কমপক্ষে ২০ ডলার। কিচ্ছু বাচ্চাদের চিনি যারা এত কম টাকা দেখেইনি, ৫ ডলারের নোট্ চিনেই না তারা। "আমাকে ২০ ডলার দাও তো", "শপিং মলে যেতে চাই, আমাকে একটু পৌঁছিয়ে দাও তো", "বন্ধুদের বাসায় যাই?" "এটা করতে পারি?" "ওটা কিনতে পারি?" যখন তাদের কোনো কিছুর দরকার তখন তারা আপনার কাছে আসে। এর বাইরে আপনি তাদের খুঁজে পাবেন না। আর যখন তারা বড় হবে, নিজেরাই একটু আধটু কামাই করতে পারবে, তখন কি হবে? তাদের দেখাই পাবেন না আর। কারণ আপনার টাকার মেশিনও এখন আর দরকার নেই। এর প্রয়োজন শেষ। আপনি যদি এই ধরনের সম্পর্ক তৈরী করেন, তাহলে নিশ্চিত বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছেন। আপনাকে এখনই পরিবর্তন আনতে হবে।
আর পরিবর্তনের উপায় হলোঃ জানি এটা অনেকের জন্যই করাটা কঠিন হবে, কিন্তু আমাদেরকে আমাদের সন্তানদের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। আমাদেরকে তাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হতে হবে। আমাদের সাথে সময় কাটানোটা তাদের কাছে উপভোগ্য হতে হবে।

--- :: --- :: ---
উস্তাদ নুমান আলী খানের লেকচার অবলম্বনে অনুবাদ করেছেনঃ আহমেদুল কবির

ব্যালেন্স

সত্যি কথা বলতে কি দুনিয়াবি সব কিছু সবসময় ঠিকঠাক রেখে পালন করার মত ধর্ম ইসলাম না। ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতে গেলে আপনি দেখবেন জীবনের পদে পদে সংঘর্ষ হচ্ছে। তখন আপনাকে কিছু ছাড় দিতেই হবে- হয়ত আপনার দ্বীনে বা দুনিয়াদারীতে। তবে এক সময় কিন্তু আল্লাহর রহমতে আল্লাহ খুব সহজ করে দেন।

আল্লাহ একেক মানুষকে একেক ভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। কাউকে সম্পদ দ্বারা, কাউকে পরিবার দ্বারা, কাউকে তার চাকরি দ্বারা।

যেমন আমি অনেক বোন ভাইকে দেখেছি যারা ইসলাম মানার শুরুতেই প্রবল পারিবারিক বাধার সম্মুখীন হয়েছে। হয়ত খুব বেসিক ব্যাপারে যেমন দাঁড়ি রাখা নিয়ে বা হিজাব পড়া বা তাখনুর উপর প্যান্ট পড়া নিয়ে। আমি অনেক বোনের ব্যাপারে জানি যাদের পড়ালেখা পর্যন্ত ছেড়ে দিতে হয়েছে, জাস্ট বাবা মায়ের ইগোর কারণে, যে তারা তাদের মেয়েকে বোরখা পড়ে ঘর থেকে বেরুতে দেবেনা।

আবার অনেক ভাইকে দেখেছি সুদের চাকরি ছাড়বে কিনা এই নিয়ে দোদুল্যমান অবস্থায় পড়ে যেতে। আর কাউকে দেখেছি দ্বীনের দাওয়াত পেয়েই অনেক বড় বড় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।

আলহামদুলিল্লাহ যেসকল ভাই বোনেরাই তাদের বিশ্বাসের প্রতি অটল ছিল তাদের কাউকেই আমি অন্তত দুনিয়ার দৃষ্টিতেও বঞ্চিত হতে দেখিনি আর আখিরাতের পুরস্কার আল্লাহর হাতে।

যেমন এক ভাই ইসলামে এসে তাঁর অনেক দিনের গার্লফ্রেন্ডকে ইসলাম বোঝাতে চেয়েছিল এবং বলে দিয়েছিল যেহেতু ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রাখা যাবেনা, তাই তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কিন্তু সেই মেয়ে তখন এসব পাত্তা না দিয়ে তাকে পরিত্যাগ করে। প্রায় ১০ বছর আগের কথা। এখন সেই ভাইয়ের খুব ভাল জায়গায় বিয়ে হয়েছে অনেক সন্তান সন্ততি নিয়ে ভালই আছে।

অনেক জনকে চিনি যারা ব্যাংক বা হারামযুক্ত পেশা ছেড়ে দিয়ে সাময়িকভাবে সমস্যায় জর্জরিত হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহর কসম আমি দেখেছি তাদের প্রত্যেকই এখন অনেক ভাল আছে, এমনকি তাদের কলিগদের তুলনাতেও।
এক বোনের কথা জানি যে পড়া কন্টিনিউ করতে পারেনি হিজাবের কারণে। এখন জানি তিনি মাল্যশিয়াতে স্বামীর সাথে মাস্টার্স করতে গিয়েছেন।

আর যেসকল ভাইবোনেরা শুরুতেই ছাড় দিয়ে দিয়েছেন তাদের দুনিয়াবি পরীক্ষাতে, তারা কিন্তু আর সেভাবে দ্বীনের পথে চলতে পারেনি। তারা ভেবেছিলেন আস্তে আস্তে ঠিক করে নেবেন।

অন্তত আমার অভিজ্ঞতাতে আমি এমন দেখিনি যে দ্বীনও বাঁচবে আবার দুনিয়াও ঠিক থাকবে এমন ব্যালেন্স কেউ করতে পেরেছেন।

আল্লাহর কারণে যদি আপনি ত্যাগ স্বীকার করে থাকেন ইনশাল্লাহ নিশ্চিত থাকুন আখিরাতে তো অবশ্যই দুনিয়াতেই আল্লাহ আপনাকে তাঁর রহমতে ভরে দেবেন এবং এমন ভাবে দেবেন আপনি আশ্চর্য হয়ে যাবেন।

কালেক্টেড

মানুষের জ্ঞান কতো কম, তাই না?

অনেক অনেক বছর আগের কথা বলছি। প্রথম দেখা তার সাথে। প্রথম দেখাতেই এবং আমার সাথে তার প্রথম যে কথা হয়, সেই কথাতেই আমার মেজাজ এমন গরম হয়েছিলো যে, আপনাদের বোঝাতে পারবো না। যখন জানতে পারলাম তার বাসা আমার বাসার কাছেই, তখন তো আমি আরো হতাশ! মনে মনে ভাবছিলাম, "এই লোকটার সাথে প্রতিদিন যাতায়াতও করতে হতে পারে আমাকে! উফ..." আমি এটা মেনে নিতে পারছিলাম না।

একসাথে পাশাপাশি থেকে কাজ করেছি আমরা অনেক বছর এবং আল্‌হাম্‌দুলিল্লাহ্‌ তিনি মাত্র ক'দিনের মাঝেই তার জ্ঞান ও মেধা দিয়ে মুগ্ধ করেন এবং প্রথম সাক্ষাতে তার প্রতি আমার যেরূপ ধারণা হয়েছিলো- মাত্র ক'দিনেই সেই ধারণা একদম পাল্টে যায় এবং তিনি আমার প্রিয় মানুষদের একজন হয়ে যান। আরো আল্‌হাম্‌দুলিল্লাহ্ যে, তিনি এখন একজন দ্বীনি ভাইও।

মানুষের জ্ঞান কতো কম, তাই না? আর আমরা মানুষরা কতো দ্রুত একজন সম্পর্কে ধারণা করে বসি। অল্প তথ্যের উপরে নির্ভর করে দ্রুত ধারণা করা মানেই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল ধারণা হয়ে যায়। আমি যদি প্রথম সাক্ষাতের ধারণার উপর থাকতাম এবং তার সাথে সম্পর্ক না গড়তাম, তাহলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না যে, সেই অসহ্য লোকটা চমৎকার একজন লোক। শুধু উনি একা নন। এমন আরো ক'জনা আছেন যাদের প্রথম ১-২টি আচরণে যদি আমি মন খারাপ করে সরে পড়তাম, চমৎকার কিছু মানুষকে হারাতাম। অথচ আমরা কেউই দোষ-ত্রুটি মুক্ত নই।
আজ আমরা মুসলিমরা অনেক ভাগে বিভক্ত। সামান্য মতের অমিল হলেই আলাদা হয়ে যাই। অথচ আমাদের প্রতি নির্দেশ যেন আমরা একসাথে থাকি। কিন্তু আজ আমরা- চুন থেকে পান খসলেই আলাদা দল হয়ে যাচ্ছি। আর সেই সুযোগটাই ইসলামের শত্রুরা লুফে নিচ্ছে।
[যার কথা দিয়ে এই লেখা শুরু করেছি, তিনিও জানেন বিষয়টি। আমার সেই অনুভূতির কথা তাকে সরাসরিই বলেছিলাম। :] 
 Collected
 

রাষ্ট্রধর্ম!

ফিলহাল-হালচাল-সমকাল:৭২
রাষ্ট্রধর্ম!
-
বাঙলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকা না থাকার মধ্যে আদতে কোনও পার্থক্য নেই। যেহেতু এই সংবিধান কুরআনী সংবিধান নয়। কুরআনী সংবিধানের প্রধান বক্তব্যই হলো ‘হুদুদ’। বলতে গেলে তার কিছুই বাঙলাদেশী সংবিধানে নেই। ড. কামাল হোসেনরা তাদের কমিউনিস্ট ভাবধারার আলোকেই এই সংবিধান রচনা করেছেন।
-
রাষ্ট্রধর্ম হিশেবে ইসলাম থাকার কারণে, সরকার ইসলামবিরোধী কোনও আইন করতে লজ্জা পাচ্ছে, এমন নয়। তারা যখন যা ইচ্ছে আইন পাশ করেই নিচ্ছে। তাহলে তুলে দিতে চাচ্ছে কেন?
= তারা তো জানে, এমনটা করতে গেলে, তাদের ভোট কমে যাওয়ার আশংকা আছে, ইসলামবিরোধী দল হিশেবে স্থায়ী ট্যাগ লেগে যাবে! তারপরও কেন এ-ব্যাপারে উৎসাহ?
(এক) খেয়াল করলে দেখা যাবে, রাষ্ট্রধর্মের বিরুদ্ধে আবেদনকারী ১১ জনের সবাই হিন্দু। এবং প্রায় সবাই ভারতের একনিষ্ঠ এজেন্ট। এবং এরা বা এদের গুরুরাই বর্তমানে বাঙলাদেশের নীতি নির্ধারক। তারা চায় ভারতের মতো এদেশও সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হোক। নামকাওয়াস্তে হলেও।
.
(দুই) বাঙলাদেশের প্রতিটি সেক্টরকে ‘হিন্দুয়ায়ন’ করার কাজ প্রায় সম্পন্ন। রাষ্ট্রপ্রধান-প্রধানমন্ত্রী-স্পীকার ছাড়া প্রায় সবখানেই হিন্দুদের পদায়ন সম্পন্ন। ভবিষ্যতে যাতে অবশিষ্ট পদেও নির্বিঘ্নে কাজ সারা যায়, আগাম ব্যবস্থা করে রাখা হচ্ছে।
.
(তিন) সরকারের ঝুঁকি নেয়ার কারণ হলো, বাঙলাদেশের অমুসলিম ভোটগুলোকে একশ ভাগ নিজেদের জন্যে পাকাপোক্ত করে ফেলা। ভারতের সাথে সম্পর্কটা আরও নিবিড় করা। আর নিজ দলের মুসলিম ভোটারদের নিয়ে ভাবনা কিসের! নিরপেক্ষ ভোটারদেরকে ভোলাতে বেশি কিছু লাগে?
.
(চার) ইসলামের বিধানে টুপি পরা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু বাহ্যিকভাবে প্রতীক হিশেবে টুপিটা নামাযের চেয়েও শক্তিশালী। অন্তত সাময়িকভাবে হলেও। নামায তো সব সময় দেখানো যায় না। টুপি-দাড়ি-হিজাব হলো সাইনবোর্ড। সংবিধানে কী আছে না আছে, সেটা আপাতত বিবেচ্য নয়, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলো টুপির মতো। প্রথমেই এটা চোখে পড়বে। টুপি খুললে যেমন মাথার টাক দেখা যায়, ইসলামকে উঠিয়ে দিলেই সংবিধানের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ দেখানো সহজ হয়ে যাবে। সেজন্যই এত তোড়জোড়।
.
(পাঁচ) এখন আর ব্যাপারটা রাষ্ট্রধর্ম থাকা না থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়িয়েছে কুরআন আর বেদ-ত্রিপিটক-বাইবেলের লড়াই। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আর মুসলমানদের মর্যাদার প্রতীকি লড়াই।
.
(ছয়) আরও একটা ভয়ংকর বিষয়ও থাকতে পারে: মুসলমানরা এখন রাষ্ট্রধর্মের জন্যে লড়াই করছে। তার মানে মুসলমানরা এই সংবিধানকে মেনে নিচ্ছে বা সন্তুষ্ট থাকছে। অর্থাৎ মুসলমানদের জন্যে এমন সংবিধান থাকতে পারে। চলতে পারে। একটা মানবরচিত বিধান মুসলমানদের সংবিধান হতে পারে। শুধু রাষ্ট্রধর্মের মোড়কে ইসলামের টুপিটা পরিয়ে রাখলেই হলো।
.
(সাত) এটা ঠিক, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বহাল রাখার সংগ্রাম করার অর্থ এই নয়, সংবিধানকে মুসলমানদের জন্যে উপযোগী হিশেবে মেনে নেয়া হয়ে যাবে। কিন্তু এটুকু তো হবে, রাষ্ট্রধর্ম বহাল থাকলে মানুষ খুশিমনে চুপ হয়ে যাবে। প্রকারান্তরে ওটাও তাদের একটা সফলতা।
.
(আট) ধরা যাক, রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করা হলো। তখন? হুযুররা আন্দোলনে নামবে! আন্দোলনটা কিসের জন্যে হবে? নামকাওয়াস্তে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা নিয়ে!
তারমানে যাদের মেহনত করার কথা ছিল পুরো সংবিধানটাকেই বদলে সেখানে কুরআনকে বসানোর ব্যাপারে, আজ তাদেরকে নামাতে নামাতে একটা ‘খোসা’ পর্যন্ত নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
.
(নয়) এই যে পুরো দাবি থেকে ছাড়িয়ে শুধু ‘নামকাওয়াস্তে’ পর্যন্ত এনেছে, এটা করতে সময় লেগেছে দুই প্রজন্ম। আগামী এক প্রজন্ম পর কেমন হবে? তখন হুযুররা নামকাওয়াস্তের জন্যেও লড়বে না। এখানেই তাদের সফলতা।
.
(দশ) তাহলে কি আমরা চুপ থাকবো? কিছুই বলবো না?
= উঁহু সেটা বলছি না। আমরা আপাতত খোলসটুকুর জন্যেই লড়বো। পাশাপাশি আমরা আজ কোথায় নেমে এসেছি বা আমাদেরকে কোথায় নামিয়ে আনা হয়েছে, সেটার দিকেও সচেতন মনোযোগ রাখবো। আমরা শুধু নামকাওয়াস্তে রাষ্ট্রধর্ম নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে যাবো না।
.
(এগার) নামকাওয়াস্তে হলেও, এর মূল্যও কম নয়। এই সামান্য খোলসটুকুও কুফর-হুনুদের গায়ে জ্বালা ধরায়। কুরআন কারীম তো বলেছেই (লিয়াগীযাল কুফফার) কাফিরদেরকে যা ক্রুদ্ধ করে, সেটা করতে। শুধু এটুকু মনে রাখতে হবে, আমাদের এখানেই থেমে গেলে চলবে না। সারাক্ষণ মনে প্রশ্ন রাখতে হবে:
= আমরা কি এই সংবিধান চেয়েছিলাম? আল্লাহ এই সংবিধান চান?
.
(বারো) টুপির যথার্থ স্থান কোনটা? অবশ্যই মাথা। টুপিটাকে যদি একটা গাছের আগায় বা অন্য কোনও প্রাণীর মাথায় রাখি? সেটা হবে টুপির চরম অবমাননা। আমাদেরকে ভাবতে হবে, একটা ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের মাথায় ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ব্যাপারটা ‘অন্যকিছুর’ মাথায় টুপি পরিয়ে রাখার মতো হয়ে যাচ্ছে না তো!
.
(তেরো) রাষ্ট্রধর্মের জন্যে জান লড়িয়ে মেহনত করবো। কিন্তু মূল সংবিধানকে ভুলে গেলে চলবে না:
= আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণ করো না। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী শাসন করে না, তারাই কাফের (মায়েদা: ৪৪)।
= আমরা পুরো সংবিধান (কুরআন) ছেড়ে শুধু নামকাওয়াস্তে রাষ্ট্রধর্মের জন্যে লড়ে, অল্পমূল্য গ্রহণ করে ফেলছি না তো!
= আর দ্বিতীয় অংশ? তারা কি আল্লাহর নাযিল করার বিধান দিয়ে শাসন করছে? যদি না করে, তাহলে তারা কী? আয়াতের অর্থ বুঝতে কি কোনও সমস্যা হয়?
.
(চৌদ্দ) আরেকটা আয়াতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেই শেষ করে দিচ্ছি:
= আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে, আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে। তারা তাগুতের কাছে বিচার (ফায়সালা) চাইতে যায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন তাকে (তাগুতকে) না মানে! (নিসা: ৬০)।
= একটা বিষয় পরিষ্কার করতে হবে: আমরা যাদের কাছে বিচারের দাবী নিয়ে যাচ্ছি, তারা তাগুত নাকি হক! কোনটা? মাঝামাঝি কোনও কিছু নেই।
.
= তারা যদি হকপক্ষীয় না হয়, তাহলে নিজেদের আকীদার দিকে চৌকান্না থাকতে হবে। আমরা রাষ্ট্রধর্মের দাবী যে করছি, সেটা তাদের কাছে আবেদন বা বিচার চাওয়ার ভঙ্গিতে নয়, তাগুতের বিরুদ্ধে লড়ছি, এই আকীদার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে করতে হবে। না হলে কিন্তু ঈমান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে!
.
= আমরা যাই করবো, বিচার চাওয়া বা ফয়সালা চাওয়ার ভঙ্গিতে নয়, তাগুতকে বাধ্য করার ভঙ্গিতে করবো। আকীদা-নিয়তে থাকবে:
-আমরা তাগুতবিরোধী অবস্থান শুরু করেছি।
-এখানেই আমরা থেমে যাবো না।
-আমরা আপাতত দুর্বল বলেই শুরুটা নিরীহ হয়েছে হয়তো! কিন্তু ......।
-আমরা টুপির জন্যে লড়লেও, মনে রাখতে হবে, টুপির নিচে কিন্তু মুমিনের মাথা নেই, আছে তাগুতের ‘মগজ’।
-টুপি দিয়ে শুরু হয়েছে, কিন্তু মগয ঠিক না করে থেমে যাওয়া চলবে না।
.
(পনের) আবারও বলছি:
= তাগুত (গণতন্ত্র)-এর কাছে বিচার চাওয়া একপ্রকার কুফুরি।
= বিচার চাওয়ার ভঙ্গিতে নয়, ফায়সালা চাওয়ার আকীদায় নয়। তাহলে ঈমান চলে যাওয়ার সমূহ আশংকা। আমরা চূড়ান্ত লড়াই শুরু করেছি। বিচার চাওয়া নয়, আমরা জোর করে আমাদের অধিকার আদায় করছি, এই আকীদা সবসময় হাযির রাখতে হবে।
= আর টুপিটা চূড়ান্ত ‘অধিকার’ নয়। শুরু মাত্র।
= আর যে পদ্ধতিতে অধিকার আদায়ে নেমেছি, সে পদ্ধতিটা একমাত্র ও অব্যর্থ নয়। রাজপথ বা ফেসবুকও নয়। এসব সাময়িক হিশেবে চলতে পারে। কার্যকর কৌশল এটা নয়: আওর কুচ!

:: ভুল করার পর ::

সকাল থেকে একটা অনুশোচনা আর আফসোসের সূঁচ ক্রমাগত হৃদয়কে বিদ্ধ করে চলেছে। রাশেদ কী নির্বিকার চিত্তে বললো কথাগুলো, “তোমার এইসব মোরাল আর ভ্যালুজ এর কোনো দাম নেই, তুমি নিজেই এসবের দাম দাও না। শুধু সুযোগ বুঝে কাজে লাগাও.. আর আমি একদিন করতে বললেই সমস্যা।”

কীভাবে পারলো বলতে?

সাড়ে তিন বছরের সংসার। কোনোদিন কি রাশেদ মৌরিতাকে ওর হিজাব করার ব্যাপারে সাহায্য করেছে? সে নিজেই তো একা একা যতোটা পারে মেইন্টেইন করেছে বরাবর।

হ্যাঁ, বিয়ের সময় কিছুটা ছাড় সে দিয়েছিল। একটা ঘোরের মধ্যে ছিল সে তখন। হঠাৎ দেখাদেখি, দুই পক্ষের পাকা কথা, দিনক্ষণ মেলানো। চিন্তায়-ভাবনায়, চাওয়া-পাওয়ায় এত মিল সহজে পাওয়া যায় না। দুই পরিবারের সবাই রাজি, সবাই খুশি! রাশের ওই পরিবারের সবচেয়ে ছোট ছেলে আর মৌরিতা এই পরিবারের প্রথম সন্তান হওয়ায় আমোদ-আহ্লাদটা দু পক্ষেরই মাত্রাছাড়া। আর আয়োজনটাও তেমনই জমকালো, মনে রাখার মতো।

এত হুলুস্থূল বিয়েতে সবাই পরী সেজে থাকবে আর মেয়ে খালাম্মার মত ঢেকেঢুকে থাকবে তা কি হয়? মৌরিতার মা আর খালারা প্রথম থেকেই চাপাচাপি করছিল হিজাব ছাড়া থাকার জন্য। প্রথম প্রথম ওর একটুও ইচ্ছা করে নি। সারাবছর সাদাসিধে চলা মেয়ে ও, এত সাজগোজ, দেখানো স্বভাবটা অসহ্য লাগে। তাই বলে বিয়ের দিনেও এভাবে থাকবে? তোর চেয়ে তো তোর খালাকে বেশি সুন্দর লাগবে দেখতে। হিজাব করলে কি মানুষের কোনো শখ থাকতে নেই? একদিন হিজাব না করলে কী এমন হবে? কত রকম কথা। বান্ধবীরা ওভার-স্মার্টনেসের দিক থেকে আরও কয়েকশ ধাপ এগিয়ে, হিজাবের সাথে বিয়ের শাড়ি পরলে নাকি দেখতে বুড়ি-বুড়ি, আনস্মার্ট, আর গেয়ো ভুতের মত লাগবে দেখতে!

মানুষের মন বোঝা দায়। মৌরিতারও কি ছাই ইচ্ছা করেনি হিজাব-ছাড়া থাকতে? হৃদয়ের গোপন একটা প্রকোষ্ঠে ওরও এমন একটা ইচ্ছা যে হয় নি তা না। কিন্তু তবুও মনে হতো-- কাজটা ঠিক হবে না। এতদিন যে বিশ্বাস, নীতি আর আদর্শের ওপর নিজেকে অটল রেখেছে, সেখান থেকে হুট করে একদিনের জন্য সরে দাঁড়ানো একটা চরম পর্যায়ের বোকামি হবে। একদিনের জন্য হিজাবে ছাড় দেওয়াটার কোনো যুক্তিই নেই।

কিন্তু মন মানলো না। আস্তে আস্তে তার অনিচ্ছাটা দ্বিধায় পরিণত হতে থাকলো। শেষে অজান্তেই নিজের সামনে কিছু অপশন তুলে দিলো সে, নিজেকে ছাড় দেওয়া জন্য কতোগুলো অজুহাত মাত্র- বিয়ের দিন কি হিজাব করবো নাকি করবো না? শুধু স্কার্ফটা কি পরবো? আচ্ছা, যদি শাড়ির সাথে ভালো না লাগে তাহলে ছোট হাতা ব্লাউজটাই নাহয় পরবো…

বিয়ের দিন কীভাবে যেন হিজাব না করানোর জন্যই সবকিছু জোট বেধে ষড়যন্ত্র পাকাতে লাগলো। ব্লাইজের কাপড়টা দিয়ে কোনোমতেই ফুল হাতা হবে না দর্জি সাফ জানিয়ে দিলো। একরঙা কাপড় এনে বড়ো হাতা ব্লাউজ বানানো যেতো, কিন্তু তখনই সব আলস্য আর উদাসিনতা পেয়ে বসলো মৌরিতার। সারাদিন বাইরে টো-টো করে ঘুরে শাশুড়ি আর ননদের সাথে মিলে এই শাড়িটা পছন্দ করে কিনেছে, তার সাথে একরঙা সাধারণ একটা কাপড়ের জোড়া দেওয়া ফুলহাতা পরলে কি মানাবে, শাশুড়িই বা কী মনে করবে? এইসব হাবিজাবি শত চিন্তা করতে করতে ছোট হাতা ব্লাউজই বানিয়ে ফেললো। এরপর ছোট হাতা ব্লাউজের সাথে মাথায় স্কার্ফ পরলে কেমন দেখাবে সেই অস্বস্তিতে স্কার্ফটাও পরলো না। বান্ধবী কেয়া নতুন নতুন ফটোগ্রাফি ক্লাবে জয়েন করেছে। তাকেই বলেছিল সুন্দর সুন্দর কয়েকটা ছবি তুলে দিতে, গ্রুপ ফটো তোলার লোকের তো অভাব নেই, স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ছবিগুলো যেন কেয়াই তোলে। কিন্তু কেয়া আবার ওর ক্লাব থেকে সিনিয়র ভাইকে ধরেবেঁধে আনলো- তার ছবির হাত নাকি অসাধারণ, বলিউড ফটো আর্টিস্টও ফেইল! ব্যস, মৌরিতাও গলে গেলো। স্বামী-স্ত্রীর ছবি তো বটেই, মৌরিতার ক্লোজ শটগুলিও তিনিই নিলেন। মেইক-আপঅলা ঝিকিমিকি চেহারার ছবি, গালে হাত-কোমড়ে হাত আকাবাঁকা পোজ দেওয়া ছবি, হিজাববিহীন পোশাকের খোলামেলা ছবি…

সেই হিজাববিহীন পোজ দেওয়া ছবিগুলোর কথা ভাবতেই আজকে মৌরিতার চোখ ঠেলে একগাদা বাষ্প দলা পাকিয়ে বের হয়ে আসলো। ঘেন্নায় রি-রি করছে তার মন। কার প্রতি এত ঘৃণা তার? রাশেদের কথাগুলো রিপ্লে-তে দেওয়া মিউজিকের মতো অনন্তকাল ধরে মাথার মধ্যে বেজেই যাচ্ছে। “তোমার কোনো মোরাল-টোরাল নেই, যখন ভালো লাগে করো, আর যখন ইচ্ছা খুলে ফেলো। এগুলাকে ধর্ম করা বলে না, এগুলাকে বলে সুযোগ নেওয়া। হিজাবকে এতোই ভালোবাসলে বিয়ের দিন করতা না নাকি? ফেসবুকেও তো যখন-তখন হিজাব-ছাড়া ছবি শেয়ার দিচ্ছো, এখন একটা স্পেশাল অকেশনে রিকোয়েস্ট করলাম আর তোমার দশ রকম বাহানা… একটা দিনের জন্য এখন আর হিজাব ছাড়তে পারছো না, কত বড়ো বড়ো অফিসার আসবে আজকে তাদের বউটউ নিয়ে। বিয়ের সময় হাজার হাজার মানুষের সামনে ঠিকই ফ্যাশন শো করলা, এখন একটা অকেশনের জন্য কী হয় … ”

তাই তো। রাশেদ কি খুব মিথ্যে বলেছে? বিয়ের সময় হাজার লোকের আনাগোনা, সেই দিনটাতেই তো হিজাবে থাকার দরকার ছিল সবচেয়ে বেশি। সে যদি সত্যিই আল্লাহর কথা ভেবে হিজাব করতো, তাহলে কি নিজেকে এতো খেলো করে দিতে পারতো? নিজের আত্মসম্মান আর লজ্জাবোধে কি একটুও আঘাত লাগতো না? শাশুড়ির মন জয় করার ধোঁয়া তুলে নিজের ব্যক্তিত্বকেই বিলিয়ে দিলো সে। তার শাশুড়ি অতটা না-বুঝ মানুষও তো ছিল না। শিক্ষিত মেয়ে মৌরিতা, শ্বশুরবাড়ির সবাই একনজরে পছন্দ করেছে দেখে। ও অনুরোধ করলে নিশ্চয়ই তারা গুরুত্ব দিতেন। সত্যি বলতে মৌরিতার এখন মনে হচ্ছে যেন তখন সে নিজের বিশ্বাসের ওপর কাজ করলেই মানুষ তাকে আরও বেশি সম্মান করতো, তার মতামত ও কথার দাম দিতো, বুঝতো যে ওর শিক্ষাটা কেবল সার্টিফিকেট সাঁটা শিক্ষা নয়, বরং মনের ভেতর থেকেই ও একজন আলোকিত মানুষ।

বিয়ের পরেও ঘোরাঘুরি করতে গিয়েও বিভিন্ন সময়ে অনেক ছাড় দিয়েছে। হানিমুনের সময় তো হিজাবের কথা মনেই ছিল না। দুই-একজন পুরোনো বান্ধবী জিজ্ঞেস করেছিল অবশ্য, দায়সারা একটা উত্তর দিয়ে মৌরিতা ওদেরকে পাশ কাটিয়েছে। “তোর চরকায় তেল দে।” কিন্তু মনে মনে ভীষণ দাগ কাটতো ওদের কথাগুলো। প্রাণপণে মাথা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতো চিন্তাটাকে, আর কদিন পরেই হিজাব করবো এই যুক্তিই নিজেকে দিতো সে বারবার। কিন্তু এখন করতে কী সমস্যা? এই প্রশ্নের জবাব কখনোই নিজের কাছে দেওয়া হয় নি।

সুযোগ আর সামর্থ্য একসাথে খুব কমই মেলে। হবু শ্বশুরবাড়িকে রাজি করানোর মত সুযোগ আর বুদ্ধি দুটোই মৌরিতার ছিল। রাশেদের পরিবার ওর কোন কথাটা রাখে নি? বিয়ের সময় যেমন যেমন কাপড়ের সেট আর গহনার ডিজাইন চেয়েছে, ঠিক সেগুলোই কিনেছে। হিজাবটা সে বিয়ের দিন করতে চাইলে সে সুযোগ নিশ্চয়ই ছিল। হয়তো একটু কাঠখড় পোড়াতে হতো, তাও তো চেষ্টা করে দেখতে দোষ ছিল না। এখন আর সেই দিনগুলো ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা নেই। সঠিক কাজটা করার সময় আগেই পার হয়ে গেছে। এখন তো প্রায় সব ঘরোয়া অনুষ্ঠানগুলোতেও সে হিজাব ছাড়াই চলে যায়। মানুষটা তার হিজাবের গুরুত্ব কীভাবেই বা বুঝবে? বন্ধু-বান্ধবীদের দেখাদেখি দু-চারটে ছবি মৌরিতা এখন সবার সাথে শেয়ার করে। সে সবে হিজাব নেই। এত শো-অফ করা তার ধাচে নেই, অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতায় সমানে-সমান কখনোই যেতে পারবে না জানে, তারপরও স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে কয়েকটা ভালো ছবি দেখাতে ইচ্ছে করে। রাশেদের খোঁচা দেওয়া কথাগুলোর সমস্ত ঝাল এখন নিজের ওপর ঝাড়তে ইচ্ছে করছে। দুঃখের ব্যাপার হলো, মানুষ নিজের ওপর রাগ ঝাড়তে পারে না।

দুঃখিনী মৌরিতা চোখে জল নিয়েই আয়নার সামনে সাজতে বসলো। মেয়েরা মনের জল গোপন করেও হাসতে পারে। আজ সন্ধ্যায় পার্টি। রাশেদের বসের ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি। মৌরিতা আজ হিজাব করলে রাশেদ কিছুতেই খুশি হবে না। অভ্যস্ত হাতে সব করে যাচ্ছে সে। অথচ মনটা ব্যথায় অবশ হয়ে আছে। সাড়ে তিন বছরের সংসার। রাশেদের জন্য সব করতে পারে মৌরিতা, তবু সে কি সুখী? সব ছেড়েও কি রাশেদের মন জয় করতে পেরেছে সে? রাশেদ কি তাকে একজন মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে শিখেছে?

কাজল, আইলাইনার, লিপস্টিক সব নিখুঁতভাবে হয়েছে। তার সাজার হাত চমৎকার। কিন্তু এত সেজেও কীসের যেন কমতি। আত্মগ্লানি, অনুশোচনা, লজ্জা, অপমান তাকে ভেঙেচুরে চুরমার করে দিচ্ছে। জানালা দিয়ে হু-হু একটা বাতাস এসে মৌরিতার আয়রন করা চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো। চোখের জলে কাজল লেপটে একাকার হয়ে গেলো সাজানো চেহারা। কী মনে করে ধুম করে উঠে গেলো মৌরিতা।

মাথায় যেন কিচ্ছু নেই। একটা স্বর ভেসে ভেসে তাকে শুধু বলছে - ওয়াশরুম, ওয়াশরুম। রাশেদ খুশি হবে না জানে, তবু আজকে তাকে কাজটা করতেই হবে। বরং অনেক আগেই করা উচিত ছিল। আজ সে কোনো মেইক-আপ করবে না। পরিপূর্ণ হিজাব করবে। এখন থেকে সমস্ত অনুষ্ঠানেই সে পরিপূর্ণ হিজাব করবে। কক্ষণো আর হিজাব ছাড়ার মত ভুল করবে না। যার যা খুশি তাকে নিয়ে ভাবুক। এতদিন সংসারের জন্য অনেক করেছে, স্বামী-সংসারের বাহানা করে নিজের আত্মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আল্লাহর থেকে সরে গিয়েছে যোজন যোজন দূরত্বে। তাতে কোনো লাভ হয় নি। পাপের আনন্দ দুই দিনের, অনুতাপটা চিরকাল তাড়া করে ফেরে। মৌরিতার বুক চিরে একটা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো, হে আল্লাহ, অনেক ভুল করেছি। এবার আমাকে ক্ষমা করো, এবার আমায় পথ দেখাও…

কলের ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা আর চোখের উষ্ণ জল মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। মৌরিতা, তুমি সুখী হও।

 সংকলিত লেখা
লেখক এর লিঙ্ক এখানে

কবে বুঝবো ?

বিআরটিএ তে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। মোটর সাইকেলের লাইসেন্সের জন্য। নিকুঞ্জের পাশে জোয়ারসাহারা। সারাদিনের অফিস মাটি। ন'টার সময়ে লিখিত পরীক্ষা, দু'টায় মৌখিক, তিনটায় ব্যবহারিক।

লিখিত, মৌখিক পাশ-আলহামদুলিল্লাহ। মোটরসাইকেল চালানোর সময় জিগ-জ্যাগ করতে গিয়ে পা নেমে গেল। সাথে সাথে ফেল। আরেকজন বলল, আপনার পরিচিত কেউ আছে? বললাম, না! আহারে... বড় একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে বললেন সজ্জন ব্যক্তিটি।

বৃহষ্পতিবার যেতে হবে অ্যাডমিট কার্ড ফেরত আনতে। আবার ব্যাংকে যাও--১৭৩ টাকা দাও, আবার একদিন সারাদিনের পরীক্ষা, আরেকদিন ফলাফল। অনর্থক কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে জোর করে ফেল করিয়ে দেয়া। হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিলেই পাশ যদিওবা।

আল্লাহর পরীক্ষার সাথে এই পরীক্ষার কত পার্থক্য। আল্লাহ কত চান আমরা পাশ করি। কতভাবে সাহায্য করেন আমাদের। আমাদের কাছে ঘুষ চান না তিনি। আমাদের খালি দেন আর দেন।

তা-ও আল্লাহর পরীক্ষাকে আমরা অবজ্ঞা করি। অথচ পার্থিব পরীক্ষা একবার ফেল করলে আবার দেয়া যায়। কিন্তু আল্লাহর পরীক্ষা শেষে কবরে গেলে ফেরার পথ থাকে না।
মানুষ কবে বুঝবে?

collected

এরাইতো আসলে সাকসেসফুল, এরাইতো আসল সেলিব্রিটি

যে ছেলেটা হঠাৎ করেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে গিয়ে আদায় করা শুরু করল, শেইভ বা ট্রিম করা দাঁড়ি গুলোকে লম্বা রাখতে শুরু করলো, প্যান্টটাকে টাখনুর ওপরে পরা শুরু করলো, মেয়েদের দেখলেই মাথা নিচু করে চলা শুরু করলো, হলিউড বলিউডের মুভি, নাটক, পর্ণ সবকিছু দেখা বাদ দিয়ে দিলো, অবসর সময়ে কোরআনের তাফসিরে মাথা গুজেঁ রাখা শুরু করলো, সুযোগ হলেই দ্বীনি ভাই বা আলিম-উলামাদর কাছে গিয়ে দ্বীন শিখতে শুরু করলো, তাহাজ্জুদে উঠে নিজের সমস্ত গুনাহের জন্য চাপা স্বরে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে শুরু করলো..
.
.....যে মেয়েটা হুট করেই নন মাহরাম বন্ধু বা আত্মীয়দের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো, ক্লাসের বইগুলোর চাইতে ইসলামিক বইগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া শুরু করলো, রুপচর্চার যত আয়োজন,তীব্র ঘাণে ভরা পারফিউমগুলো খুজে খুজে ফেলে দিতে লাগলো, যাতে শরীরের সামান্যতম ভাঁজ বোঝা না যায়, নিজেকে আকর্ষণীয় যাতে মনে না হয় এমন ঢিলেঢালা হিজাব আর নিকাব পড়তে শুরু করলো,গল্প উপন্যাসের বই ছেড়ে মহিলা সাহাবাদের জীবনী,তাঁদের লাইফস্টাইল পড়া শুরু করলো, যে মেয়েটা শেষরাতের অন্ধকারে একজন দ্বীনদার ছেলেকে নিজের সহধর্মী করার আশায় আল্লাহর কাছে পাগলের মত কাঁদতে শুরু করলো..
.
যারা এই "হুট করেই" আল্লাহর প্রতিটা আদেশকে মানা এবং সুন্নাহকে নিজের লাইফে পুরোপুরি ফলো করা শুরু করলো.. সেই তাদেরই আজ আমরা ঠাট্টা উপহাস আর ব্যঙ্গ করে বলছি - মোল্লা, মুনশি, চাচামিয়া, গেয়োঁ, হুজুরনী, বুড়ি, জঙ্গি, আনসোশ্যাল, ব্যাকডেইটেড, ভন্ড, আনস্মার্ট আরও কত্ত কি!! ভাবতেই অবাক লাগছে যে তারা কিভাবে এতকিছু সহ্য করেও এসব আকড়ে ধরে আছে তাই না ?
.
আসলে কি জানেন- তারা এমন একটা কিছুর সন্ধান পেয়েছে এমন একজনের কাছে যার কারণে আসলে এই পৃথিবীর কোন ঠাট্টা উপহাসের কষ্ট তাদের বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে পারে না..আল্লাহর গাইডেন্স আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ্ থেকে আলাদা করতে পারে না..!
.
সেটা কি জানেন? সেটা হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার রাহমাহ্ আর হিদায়াহ্। যা আপনি আমি হয়তো এখনো পাইনি যেটা তারা পেয়েছে! আর কেন পাইনি জানেন কারণ আমরা সেটা কখনো চাই-ই নি আসলে! কিন্তু তারা আল্লাহর আদেশ আর রাসূলের সা. সুন্নাহকে পুরোপুরি মানার মাঝে সেই কাঙ্খিত হিদায়াহ্ কে খুজেঁ পেয়েছে..আর আমরা নিজেদেরটা না খুজে ২৪ ঘন্টা লেগে থাকি তাদের দোষ ধরার জন্য, ভুল ধরার জন্য, খোঁচা মারার জন্য, ঠাট্টা করার জন্য..অথচ আমরা নিজেদের চালাক আর স্মার্ট ভাবি! কতটা নির্বোধ আর বেকুব আমরা, তাইনা?
সেলিব্রেটি তো তারাই যাদের আমরা আল্লাহর আদেশ আর সুন্নাহ্ মানার কারণে ঠাট্টা,বিদ্রুপ আর উপহাস করেই যাচ্ছি, আর তাদের এই মিষ্টি ধৈর্য দেখে আসমানের কোটি কোটি ফেরেশতারাও তাদের জন্য প্রতিটা সময় রাহমাহ্,মাগফিরাত আর জান্নাতের দুআ করেই যাচ্ছে..!
.
সারাটা দিন এত কিছু শুনেও দিনশেষে যখন তারা শুয়ে পড়ে, তখন তারা সবাইকে আল্লাহর খুশির জন্য মাফ করে দিয়ে ঘুমায়। আল্লাহতো তাদেরকেই কিয়ামাতের দিন কোটি কোটি মানুষের চোখের সামনে হাসতে হাসতে জান্নাতে নিয়ে যাবেন.. এরাইতো আসলে সাকসেসফুল, এরাইতো আসল সেলিব্রিটি রে ভাই...
.
ভাবতে পারেন সেদিন কি অবস্থা হবে আপনার, আমার?? আর কোথায়-ই বা যাবো আপনি, আমি...?
-----
--সংগৃহীত ও সংশোধিত

দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর

“আর কয়েকটা মাস মাত্র, তারপরই সালাত আদায় করা শুরু করবো। ব্যবসাটা একটু শক্তভাবে দাড় করিয়ে নেই, তারপর তাওবাহ করে হাজ্জ করে ফেলবো। একবার চাকরিটা হয়ে যাক। বিয়েটা হয়ে নিক, তারপর হিজাব করা শুরু করবো। কোন একটা ভালো অলটারনেটিভ পাই, পাওয়া মাত্রই ব্যাঙ্কের চাকরিটা ছেড়ে দেবো। আর কিছুদিন যাক, তারপর সরকারি চাকরিটা ছেড়ে দেব। আরে একটু গানই তো শুনছি, কয়েকটা সিনেমাই তো দেখছি, কি আর হবে, বুড়ো কালে সব ছেড়ে দেবো। আর কিছু টাকা আয় করে নেই, তারপর দেশে ফিরে যাওয়া যাবে। প্রথমে সবাইকে দাড়ি আর হিজাবের ফযীলাত বোঝায়, আগে সবাইকে হুজুর বানাই তারপর শারীয়াহ কায়েমের দাওয়াহ দেয়া যাবে...”
.
এরকম শত চিন্তাভাবনা ক্রমাগত আমাদের মাথায় খেলে যায়। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আমরা কাঁটিয়ে দেই এই “তারপরের” আশায়। “আর একটু হলেই...” আর “তারপরের” পালা শেষ হয় না। কিন্তু সময় ফুরিয়ে আসে। হিসাবের পাল্লা ভারী হতে থাকে, আর আমরা সময় কাঁটিয়ে দেই নিজেদের প্রবোধ দিয়ে, নিজের সাথে লুকোচুরি করে। “এই তো আর কিছুদিন, তারপরেই করবো...” নিজেদের জন্য বিভিন্ন ইমাজিনারি টার্গেট সেট করে, আল্লাহ্‌ ‘আযযা ওয়া জালের আদেশ পালনকে বিলম্বিত করি, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, টার্গেট আর ফুলফিলড হয় না। এক টার্গেটের পর আরেক টার্গেট আসে। এক সমস্যার পর আরেক সমস্যা আছে। সম্পূর্ণ ভাবে সবকিছু মনমতো গুছিয়ে নেয়া কখনোই সম্ভব না। আর তাই আল্লাহ-র আদেশ পালনও বিলম্বিত হতেই থাকে। ফুরিয়ে আসতে থাকে সময়।
.
কারো মনে কি আছে তা একমাত্র আল-খাবির, আশ-শাহীদ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাই ভালো জানেন। যা মুখে বলছে সেটা কি আসলেই অন্তরে আছে নাকি, মানুষের বুক চিড়ে সে খবর নেয়ার দায়িত্ব আমাদের দেয়া হয় নই। আমরা মানুষকে বিচার করবো তার বাহ্যিক আচরণের ভিত্তিতে। তবে একথাও সত্যি, যদি কারো মনে কোন কিছুর একান্ত ইচ্ছা থাকে, তবে সেটার একটা বাহ্যিক প্রকাশ থাকে। কাজে ইচ্ছার সেই প্রতিফলন দেখা যায়। একটা উদাহরণ দেই।
.
আমরা জানি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পথে আল্লাহ্‌ রাসূলের ﷺ সঙ্গী ছিলেন আবু বাকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। ইতিপূর্বে আবু বাকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মডিনায় হিজরতের জন্য সব গোছগাছ করে একরকম রওনাই করে ফেলেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ আবু বাকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে অপেক্ষা করতে বলেন, কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ আশা করছিলেন, খুব শীঘ্রই আল্লাহ্‌ ‘আযযা ওয়াজাল তাঁকেও ﷺ হিজরতের অনুমতি দেবেন। শেষ পর্যন্ত যখন হিজরতের অনুমতি দেয়া হল, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন হঠাৎ এক ভরদুপুরে, মুখ ঢেকে আবু বাকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বাসায় আসলেন, তখন দেখা গেল আবু বাকর রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করছেন। যদিও তিনি জানতেন না, ঠিক কোনদিন ডাক আসবে। শুধু তাই না, আবু বাকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, শুধুমাত্র হিজরতের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট জাতের দুটো উটনী কিনে চার মাস ধরে বাবলা পাতা খাইয়ে তাদের হৃষ্টপুষ্ট করে তুলেছিলেন, যাতে করে মক্কা থেকে মদীনার দীর্ঘ যাত্রা সুচারু ভাবে সম্পন্ন হয়। [সূত্রঃ আর রাহীকুল মাখতুম]
.
.
এটা হল প্রস্তুতির আর অন্তরের ইচ্ছার বাহ্যিক প্রতিফলনের নমুনা। কিন্তু আমরা যখন নিজেদের জন্য বিভিন্ন টার্গেট সেটা করি – “এই হয়ে গেলেই, আল্লাহ্‌ এই আদেশ পালন করা শুরু করবো” – তখন কি আমাদের চিন্তা ও কাজের মাঝে এরকম মিল থাকে? এর দশভাগের এক ভাগও কি আমাদের মধ্যে দেখা যায়? উৎকৃষ্ট জাতের সবচেয়ে দামী উটনী না হয় বাদ দিলাম, আমরা কি বুড়ো-রুগ্ন একটা খচ্চর ও প্রস্তুত করি? বাবলা না হোক, ভাতের মাড়ও কি খাইয়ে প্রস্তুতি নেই? আমি যা বলছি, নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছি, তার পেছনে কি আসলেই কোন সত্যতা আছে, কোন প্রকৃত সংকল্প ও তার বাস্তবায়ন আছে? না এ নিছক আত্বপ্রতারণা?
.
.
সাহাবাদের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া ইজমাইন, সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম হবার অনেকগুলো কারণের একটি হল তাঁদের কথায় ও কাজে মিল ছিল। তারা নিজেদের জন্য ঠুনকো, মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করাতেন না। তাঁরা আত্বপ্রতারণা করতেন না, নিজেদের প্রবোধ দিতেন না। নিজেদের ভুল স্বীকারে এবং সংশোধনে তাঁরা ছিলেন অগ্রগামী। তাঁরা দুনিয়ার উপর দ্বীনকে শর্তাধীন করেননি। এই দুনিয়াবি লক্ষ্য অর্জনের উপর দ্বীনের হুকুম পালন করা না করাকে নির্ভরশীল করেন নি। দুনিয়ার মাপকাঠি অনুযায়ী দ্বীনকে পরিমাপ করেন নি। দুনিয়া; সমাজ, পারিপারিপার্শ্বিকতা, প্রিযমের ভেতর দিয়ে তাঁরা ইসলামকে দেখেন নি। বরং দ্বীনের মাপকাঠিতে তাঁরা দুনিয়াকে দেখেছেন। আগে দ্বীনকে রেখেছেন, দুনিয়াকে তুচ্ছ করেছেন। আর তাই আল্লাহ্‌ ‘আযযা ওয়া জাল তাঁদেরকে দ্বীন ও দুনিয়া দুটোতেই সম্মানিত করেছেন। রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া ইজমাইন।
.
সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া ইজমাইনের জন্য ইসলামই ছিল একমাত্র মাপকাঠি। তাঁরা প্রথমে রেখেছিলেন ইসলামকে, বাকি সব কিছুকে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী বিচার করেছিলেন। বাকি সব কিছুকে তাঁরা ইসলামের মুখাপেক্ষী করেছিলেন, ইসলাম পালনকে কোন কিছুর মুখাপেক্ষ করেন নি- শর্তাধীন করেন নি। ইসলামে যা সুস্পষ্ট তা সুস্পষ্ট ভাবেই প্রচার করেছিলেন, পালন করেছিলেন। দ্বীনের কিছু অংশ গ্রহণ আর কিছু অংশ ছেড়ে দেন নি। নিজের সুবিধা অনুযায়ী অজুহাত তৈরি করেন নি। নিজেকে তাঁরা যাচাই করতেন দ্বীনের মাপকাঠিতে, নিজের মাপকাঠিতে দ্বীনকে তাঁরা যাচাই করেন নি। আর নিজেদের হিসেব গ্রহনে তাঁরা ছিলেন নিজেদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর। সত্যিই যদি আমরা চাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুসরণ করতে, দ্বীন ইসলামে প্রকৃত ভাবে প্রবেশ করতে এবং এ দ্বীনকে আঁকড়ে ধরতে, তবে সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া ইজমাইনের মতো করে দ্বীন ও দুনিয়াকে বুঝতে হবে। তাঁদের মতো করে পৃথিবীকে দেখতে হবে। আর কোন বিকল্প আমাদের হাতে নেই।
.
".... এবং এই উম্মাহ’র শেষ অংশ কখনও ততক্ষন পর্যন্ত পরিশুদ্ধ হবে না, যতক্ষন পর্যন্ত না তারা এই উম্মার প্রথম অংশ (সাহাবা) যা দিয়ে পরিশুদ্ধ হয়েছিলেন তার দ্বারা পরিশুদ্ধ হয়।" ..
ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ
.collected
‪#‎KnowYourHeroes‬
‪#‎AbuBakrRA‬