বাচ্চাদের নামাজ পড়া বা মসজিদে যাওয়ার প্র্যাকটিস করা

বাচ্চাদের নামাজ পড়া বা মসজিদে যাওয়ার প্র্যাকটিস করা নিয়ে এবং অভ্যস্ত করার ক্ষেত্রে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।
 বিভিন্নভাবে তাকে বোঝাতে হবে, তার সময় বয়স, তার আগ্রহ ইত্যাদির কথা মাথায় রেখে সময় নিয়ে বুঝিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
 
কোন বিষয়ে তার আগ্রহ বেশি সেটার সাথে মসজিদকে রিলেট করতে হবে।
 ছোট ছোট ইসলামী কার্টুন ইসলামী গান যেগুলো মসজিদে যেতে আগ্রহী করে তোলে উৎসাহী করে তোলে সেগুলো শোনানো, দেখানো যেতে পারে। 
এমন কোন গেম আছে কিনা আমার জানা নেই তবে থাকলে সেটিও খেলানোর চেষ্টা করা যেতে পারে যাতে সে আনন্দের মাধ্যমে এবং তার আগ্রহের বিষয় বস্তুর মাধ্যমেই মসজিদে যাওয়া কে পছন্দ করে।
 
আমরা অনেকেই অধৈর্য হয়ে যাই কয়েকবার বললে এবং ছেলে কথা না শুনলে তার উপর ছেড়ে দিতে চাই। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখা উচিত হযরত নূহ আলাইহিস সালামের কথা তিনি তার ছেলেকে শত শত বছর ধরে দাওয়াত দিয়ে গেছেন।

 

নিজেকে আল্লাহর একান্ত মুখলিস, অনুগত বান্দা হিশেবে প্রতিষ্ঠা করুন। নিজের আমলকে বাড়িয়ে দিন। পাপগুলো থেকে বেরিয়ে এসে ইবাদাত-আমলে নিজেকে এমন স্থানে উন্নীত করুন যেখানে পৌঁছাতে পারলে আপনার অনুপস্থিতিতে আল্লাহ আপনার সন্তান, আপনার পরিবার-পরিজনদের দেখভালের জন্য একজন খিযিরকে পাঠিয়ে দেবেন।

মৃত্যুর কথা চিন্তা করলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি।
 নিজেদের পাপের কথা ভেবে, যে অনিশ্চিত গন্তব্যে পাড়ি জমাতে হবে, কেমন হবে সেখানকার জীবন— সেসব ভেবে।
 
তবে, আরো একটা ব্যাপারেও দুশ্চিন্তা গ্রাস করে আমাদের, আর তা হলো— আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের পরিবারের কী হবে? আমার অনুপস্থিতিতে কে হাল ধরবে আমার সাজানো-গোছানো সংসারের?
যদিও চিন্তাটা অমূলক, তাকদির-বিরোধি এবং তাওয়াক্কুল-পরিপন্থী, তথাপি অধিকাংশ মানুষ মৃত্যুর কথা ভাবতে গেলেই শয়তান এই চিন্তাটাকে তার সামনে এনে হাজির করে।
 
যদি আগামিকাল আপনি মারা যান, আপনার ছোট্ট বাচ্চাটার কী হবে তাহলে? তার দেখভাল কে করবে? কে তাকে আগলে রাখবে পরম মমতায়?
যদি আপনি মারা যান, আপনার বিধবা স্ত্রী কিভাবে কাটাবে বাকিটা জীবন? আপনার বৃদ্ধা মা আর বিছানায় পড়ে থাকা অসুস্থ পিতা— কী হবে তাদের সকলের?
সাধারণত এমন চিন্তায় আমরা ঘাবড়ে যাই। ভবিষ্যতের এক ঘোর অনিশ্চয়তার আঁধার ঝেঁকে বসে আমাদের মনে।
 
 
তবে, এই ধরণের ভাবনা থেকে বাঁচতে কুরআন আমাদের একটা সুন্দর সমাধান বাতলে দিতে পারে।
সমাধানটার জন্য আমরা চলে যেতে পারি সূরা আল কাহাফের মূসা আলাইহিস সালাম এবং খিযির আলাইহিস সালামের ঘটনায়। 
 
আমরা জানি— খিযির আলাইহিস সালামের একের পর এক অদ্ভুত কান্ড দেখে মুসা আলাইহিস সালাম আশ্চর্যান্বিত হয়ে পড়ছিলেন। খিযির আলাইহিস সালাম এমনসব কাজ করছিলেন যার আপাতদৃষ্টিতে কোন যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা নেই। দরিদ্র মাঝির নৌকা ফুঁটো করে দেওয়া, একটা বালককে হত্যা করা আর একটা জনপদ থেকে তিরস্কিত হয়েও সেখানকার প্রায় ভেঙে যাওয়া দেয়াল মেরামত করে দেওয়ার মতো কাজ করে তিনি চমকে দিচ্ছিলেন মুসা আলাইহিস সালামকে।
 
এদিকে, সবকিছু ধৈর্য সহকারে পর্যবেক্ষণ করা এবং বিনা বাক্য-ব্যয়ে দেখে যাওয়ার শর্তে খিযির আলাইহিস সালামের সফর-সাথী হওয়ার পরেও বারংবার ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছিলেন মুসা আলাইহিস সালাম। তিনি প্রতিটি ঘটনায় হতবাক হচ্ছিলেন আর প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন খিযির আলাইহিস সালামকে।
ওই সফরে যে তিনটি অবাক কান্ড খিযির আলাইহিস সালামের হাতে সংঘটিত হয়েছিলো তার মধ্যে একটি ছিলো— একটা জনপদে খাবার চেয়ে তিরস্কিত হওয়ার পরেও, ওই জনপদের-ই একটা প্রায় ভেঙে যাওয়া, ভগ্ন দেয়ালকে তিনি নিজের হাতে মেরামত করে দিয়েছিলেন।
 
খিযির আলাইহিস সালামের এই কান্ড দেখে অবাক হলেন মুসা আলাইহিস সালাম। তিনি ভাবলেন, 'আরে, এই লোকগুলোর কাছে আমরা একটু খাবার চাইলাম তা তো দিলো-ই না, উপরন্তু তিরস্কার করে আমাদের তাড়িয়ে দিলো। কিন্তু এই লোক কী-না সেই অকৃতজ্ঞ মানুষগুলো উপকারে লেগে গেলো! উপকার করুক, অন্তত তার পারিশ্রমিক তো নিতে পারে যা দিয়ে আমরা খাবার কিনে খেতে পারতাম'।
খিযির আলাইহিস সালামকে তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রশ্ন করে বসেন যে— কেনো এই অকৃতজ্ঞ লোকগুলোর ভগ্ন দেয়াল তিনি মেরামত করে দিলেন বিনা পারিশ্রমিকে? এই প্রশ্নের উত্তরে খিযির আলাইহিস সালাম বলেছিলেন,
'আর ঐ দেয়ালটির বিষয় হলো— তা ছিল ঐ জনপদের দু’জন ইয়াতীম বালকের। তার নীচে তাদের জন্য কিছু সম্পদ রক্ষিত ছিলো। তাদের পিতা ছিলেন একজন সৎকর্মশীল ব্যক্তি। তাই আপনার প্রতিপালক চাইলেন— বালকদ্বয় যৌবনে উপনীত হোক আর তাদের গচ্ছিত সম্পদ বের করে নিক। এটা তাদের ওপর আপনার প্রতিপালকের রহমত বিশেষ'- আল কাহাফ ৮২
 
বাচ্চা দুটো ছিলো ইয়াতীম। তাদের পিতা মারা যাওয়ার আগে তাদের জন্য কিছু সম্পদ গোপনে ওই দেয়ালের নিচে পুঁতে রেখে যান। কিন্তু, এই দেয়াল যদি সত্যি সত্যি ভেঙেই পড়ে, তাহলে তার নিচে থাকা সম্পদগুলো সকলের সম্মুখে চলে আসবে এবং তা বালকদের দেওয়ার বিপরীতে, অন্যেরা ভাগ-বাটোয়ারা করে সাবাড় করে ফেলবে। ফলে, বালকেরা যথেষ্ট বড় না হওয়া অবধি আল্লাহ সেই সম্পদকে উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া থেকে আটকে দিলেন।
 
আচ্ছা, খেয়াল করে দেখুন তো, বাচ্চা দুটোর ওপর আল্লাহর এই যে বিশেষ রহমত, তারা না চাইতেও তাদের সম্পদের এই যে রক্ষণাবেক্ষণ— আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা এটা কেনো করলেন?
উত্তরটা উপরিউক্ত আয়াতের মধ্যেই আছে। ওই আয়াতের একটা জায়গায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেছেন,
'তাদের পিতা ছিলো একজন সৎকর্মশীল ব্যক্তি'।
 
বালকদ্বয়ের প্রতি আল্লাহর এই বিশেষ অনুগ্রহ তাদের কর্মের কারণে আসেনি, বরং তাদের বাবার কর্মের কারণেই এসেছে। বাচ্চা দুটোর সম্পদকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা রক্ষা করেছিলেন এই জন্যে যে— তাদের বাবা ছিলেন একজন নেককার ব্যক্তি। একজন সালেহ বান্দা। তিনি ছিলেন আল্লাহর একনিষ্ঠ ইবাদাতকারী। ফলে, তিনি মারা যাওয়ার পরেও তার বাচ্চাদের ভবিষ্যত রক্ষার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা খিযির আলাইহিস সালামের মতো একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তিকে নিয়োগ করে দিলেন।
যদি আজ আপনার মৃত্যু হয়, আগামীকাল থেকে আপনার পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ কে করবে সে ভয়ে কি আপনি ভীত?
আপনার মৃত্যুর পরে আপনার পরিবারের কী হাল হবে— তা কি আপনাকে শঙ্কিত করে?
আপনার মৃত্যু হলে আপনার বৃদ্ধা মা'কে দেখে রাখবে কে, আপনার অসুস্থ বাবার প্রয়োজন কে মেটাবে— সেই চিন্তায় কি আপনি কাতর?
 
মৃত্যু হলে, আপনার জমানো সম্পদ সন্তানদের কাজে আসবে কী-না, তা-ও কি আপনাকে চিন্তিত করে?
আপনার মৃত্যুর পর, সন্তানদের ওপর যদি কোন বিপদ আসে, তা কে সামলাবে, পরিবারে কোন বিপদ হলে তা কে দেখবে তা নিয়েও কি আপনি পেরেশান?
 
যদি উপরের সবগুলো প্রশ্নের উত্তর 'হ্যাঁ' হয়, তাহলে সেই ইয়াতীম বালকদের ঘটনাটাকে পুনরায় স্মরণ করুন যেখানে তাদের জন্য রেখে যাওয়া সম্পদকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া'তায়ালা নিরাপত্তা দান করেছিলেন, রক্ষা করেছিলেন কেবলমাত্র একটা কারণে— তাদের পিতার নেক আমল।
 
যদি চান যে আপনার মৃত্যুর পর আপনার সন্তানাদি, আপনার পরিবার সহ সবকিছুর দায়-দায়িত্ব আল্লাহ নিক, তাহলে নিজেকে আল্লাহর একান্ত মুখলিস, অনুগত বান্দা হিশেবে প্রতিষ্ঠা করুন। নিজের আমলকে বাড়িয়ে দিন। পাপগুলো থেকে বেরিয়ে এসে ইবাদাত-আমলে নিজেকে এমন স্থানে উন্নীত করুন যেখানে পৌঁছাতে পারলে আপনার অনুপস্থিতিতে আল্লাহ আপনার সন্তান, আপনার পরিবার-পরিজনদের দেখভালের জন্য একজন খিযিরকে পাঠিয়ে দেবেন।
 
 
Fb CP 

অপকারী জ্ঞান আর অহংকার থেকে পানাহ চাই।

 

কেউ গায়ক ছিল, তবু নেশা ভুলে, রুটিরুজির পথ বন্ধ করে গান ছেড়ে এলো। মাশাআল্লাহ, আল্লাহ তার জন্য দ্বীনের পথ আবাদ করুন। 
 
অন্যদিকে কেউ কুরআনিক সায়েন্স পড়ে মানুষকে ইসলামের নতুন সংজ্ঞা শেখায়, একই সাথে পাবলিক পোস্ট দিয়ে বলিউডি নাচগানের বিবরণ দেয়, দেশের মাটিতে বলিউডি মুভি বানানোর স্বপ্ন দেখায়! বাহ, ইসলামের কী "উন্নত" সংজ্ঞা শিখছে সবাই তার কাছে, আমি চিন্তা করি। 
 
দ্বীন এত সস্তা না।
 দিনশেষে যে যার পথ বেছে নিবে। সমস্ত জাহেলিয়াতকে সাদরে সম্ভাষণ করা লোকের অনেক খ্যাতি, অনেক অনুসারী থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলেই তার শেখানো বুলি ইসলাম হয়ে যায় না।
 আল্লাহর দ্বীন আল্লাহই হেফাজত করেন, করবেন।
 খড়কুটোর মতো কোনো অচেনা লোকের মাধ্যমে দিয়ে হলেও করবেন। 
যে হয়তো কুরআনিক সায়েন্সে পড়ে নাই, কোনো সাবজেক্টে পি এইচ ডি প্রাপ্ত না, কিন্তু তাকে দেখলে আপনি বুঝবেন সে নবীজির ﷺ সুন্নত বুকে ধারণ করেছে। নবীজির ﷺ দ্বীন হলো সেই দ্বীন যা দেখে জাহেলিয়াত ভয়ে কেঁপে উঠেছিল, সেই দ্বীন যে দ্বীন পালনের দৃঢ়তা দেখে শত্রুও তার শত্রুতা ভুলে ইসলাম গ্রহণ করেছে।
 
 আর আমরা আছি, জাহেল দুনিয়ার সমস্ত কিছুর সাথে তাল মিলিয়ে সেটাকেই দ্বীন মনে করি, সেটাকেই দ্বীন বলে শেখাতে চাই।
 আমাদের নিজেদেরই দ্বীন পালনের কোনো দৃঢ়তা নাই। 
খুব পড়াশোনা আর অভিজ্ঞতার কথা বলে উল্টাই, কিন্তু এইটুকুও বুঝি নাই যে হিজাব কীভাবে করতে হবে, বলিউডি নাচগান দেখা কেন জায়েজ না এইটুকু মাথায় ঢুকে নাই,
 এই সহজ ব্যাপারটা বুঝি নাই যে ফেমিনিজমের তালে তালে নারী-পুরুষ সমঅধিকারের বুলিতে বিশ্বাস আনা দ্বীনের কথা না।
 অথচ যার দ্বীন নিয়ে এত জ্ঞান নাই, যে ইসলাম পালন করতে চায় মাত্র দুইদিন হইসে, সে-ও বোঝে এইগুলা দ্বীন না। কারণ সে নিজের সাথে সৎ, আল্লাহর সাথে সৎ। 
 
কোনো কোনো সময় জ্ঞানও মানুষের জন্য ফিতনা হয়ে যায়। 
পশ্চিমাদের শেখানো ইসলাম নিয়ে অহংকার করতে গিয়ে পুরোনোদিনের আলেমদের বোকা মনে হয়। আসলে অহংকার মানুষকে পথভ্রষ্ট করে ফেলে। 
ইবলিসও অহংকারের কারণেই পথভ্রষ্ট হইসিল। এমন অপকারী জ্ঞান আর অহংকার থেকে পানাহ চাই। আল্লাহর উপর ঈমান নিয়ে রাসূলের ﷺ পথে মরতে চাই। আমীন।
 
{CP}
 
কয়েকদিন আগে একটা ছোট সিরিজ দেখেছিলাম।নাথিং ইম্পর্ট্যান্ট!অস্থির চিন্তাগুলোকে ডাইভার্ট করার জন্য হালকা কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকা আর কি!
 
আমেরিকার ছোট একটা বাচ্চা ও তার পরিবারকে নিয়ে ঘটনা।বাচ্চাকে নিয়ে ছিলো বলে প্যারেন্টিংও ফোকাসড ছিলো।
তাদের প্যারেন্টিং এর ব্যাপারগুলো আমাকে খুবই নাড়া দিয়েছে! নিজের বাচ্চাগুলোকে নিয়ে স্ট্রাগল করে চলেছি,তাই হয়ত!
 
আরেকটা ব্যাপার বেশ নাড়া দিয়েছে আমাকে,তা হলো,প্যারেন্টিং এর জন্য ওরা যা করছে,তার শিক্ষা ইসলাম আরো অনেক আগেই আমাদের দিয়েছে! কিন্তু মুসলিম হয়েও আমরা তা ফলো করতে পারছিনা! 
 
তাই ভাবলাম,প্যারেন্টিং নিয়ে যা শিখলাম,তা পয়েন্ট আকারে লিখে রাখি।আল্লাহ যেন আমাকে একজন ভালো প্যারেন্ট হওয়ার তাওফিক দেয়।
 
.
বাচ্চাকে বাচ্চা নয়, একজন বড়, বুঝদার মানুষের মতো ট্রিট করা।
অর্থাৎ ঘরের একজন বড় মানুষের সাথে আমরা যেমন আচরন করি,যেভাবে সম্মান দিয়ে কথা বলি,নিজের বাচ্চার সাথেও সেরকম আচরণ করা।
 সে বাচ্চা,কিন্তু সেও একজন পরিপূর্ণ মানুষ! তার অনুভূতি একজন বড় মানুষের চেয়ে কম তো নয়ই বরং আরো নাজুক! সে আমার সন্তান,তাই বলে তার সাথে যেমন খুশি তেমন আচরন করতে পারিনা! আমি তার মালিক না! আল্লাহ তার মালিক! সে জাষ্ট আমার কাছে আল্লাহর আমানত! আমি যেমন আল্লাহর বান্দা,সে ও আল্লাহর বান্দা! 
 
এই একটা পয়েন্টের ভেতরেই আসলে অনেক কিছু চলে আসে! ঘরের একজন বড় মানুষের সাথে, আমরা অকারণ চিৎকার, চেঁচামেচি, নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া(এটা করতেই হবে তোমাকে, এখনই,টাইপ), আরেকজনের উপর করা রাগ ঝাড়া(যেটা আমরা মায়েরা প্রায়ই করি! জামাইর উপর করা রাগ বাচ্চার উপর ঝাড়ি!),বকা দেওয়া বা মার লাগানো এসব কোনোদিনই করতে পারব না! কিন্তু বাচ্চাদের সাথে ঠিকই করি! 
 
২.
বাচ্চার সাথে অনেক, অনেক কথা বলা!
  যেকোনো কিছু নিয়েই তা হতে পারে! যেকোনো টপিকে!
এবং মনোযোগ দিয়ে বাচ্চার কথা শোনা,তা যত ছোট ব্যাপার নিয়েই হোক না কেন!
 আমার কাছে ছোট ব্যাপার,আমার বাচ্চার কাছে হয়ত তা বড় কিছু!
 নিজের আনন্দ বা কষ্ট নিয়েও বাচ্চার সাথে কথা বলা যেতে পারে!তাদের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে!যেমন,আমি আমার বড় ছেলের সাহায্য চাচ্ছিলাম যে,আমি তোমাদের সাথে রাগ করতে চাই না,কিন্তু মা পারছি না!তোমদের কাজে আমার সবর ভেঙে যায় বারবার! প্লিজ আমাকে হেল্প করো! 
 
৩.
পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহনেও বাচ্চাদের রাখা,তাদের মতামত শোনা। 
এতে বাচ্চারা অনুভব করে যে,তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে! সেও পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।এতে সে দায়িত্ব নেওয়া শেখে।
 
৪.
বাচ্চাদের নিজেদের কাজ নিজেদের করতে শেখানো। 
এর পাশাপাশি ঘরের কাজও বয়স অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া।তুমি এই পরিবারের, এই ঘরের একজন সদস্য।তাই ঘরটাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে তোমাকেও অংশগ্রহণ করতে হবে! সবাই মিলেই তো পরিবার! 
 
৫.
বাচ্চাদের গায়ে কক্ষনোই হাত না তোলা।
 বাচ্চাদের কাজে রাগ হলেও যথাসম্ভব ঠান্ডা থাকার চেষ্টা করা।বকা দেওয়ার সময় ভাষার ব্যবহারে সাবধান থাকা।একান্তই না পারলে স্রেফ বাচ্চার সামনে থেকে সরে যাওয়া।এভাবে বলে যে,তোমার কাজে আমার রাগ হচ্ছে।আমি এখন তোমার সামনে থেকে সরে যাচ্ছি।এটা নিয়ে পরে কথা বলব তোমার সাথে।
তারপর মাথা ঠান্ডা হলে বাচ্চার সাথে সে ব্যাপারে কথা বলা।বাচ্চাকেও ভাবতে বলা যে,সে যেই কাজটা করেছে,তা ঠিক হয়েছে কিনা।
 
৬.
বাচ্চাকে "এটা করো"," ওটা করো" না বলে,কেন কাজটা করতে হবে,এটা সহ বুঝিয়ে বললে,সেই কাজ বাচ্চারা মন থেকে করার চেষ্টা করে। 
 
 এটার জন্যেও আসলে বাচ্চাদের সাথে মন খুলে কথা বলার প্রয়োজন।
 
বাচ্চার সাথে সম্পর্কটা এমন রাখার চেষ্টা করতে হবে,যেকোনো পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে মানসিক এবং মোরাল সাপোর্ট দিতে হবে যেন যেকোনোকিছুতে বাচ্চা বন্ধুবান্ধব বা এমন কারো কাছে ছুটে না যেয়ে আপনার কাছেই ছুটে আসে!
 
 বাচ্চা অপরাধ করলে একগাদা বকা দিয়ে দিলে সে পরবর্তীতে তার অপরাধ আপনার থেকে লুকাবে।কিন্তু যদি বুঝিয়ে বলেন,কেন তার কাজটা ভুল হয়েছে এবং আপনি কষ্ট পেয়েছেন,তাহলে বরং সে আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য স্যরি ফিল করবে।
 
৭.
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ক্ষমা চাওয়া এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার প্রচলন করা। 
ভুল হলে স্যরি বলতে দ্বিধা না করা।বাচ্চার কাজে খুশি হলে জাযাকাল্লাহু খাইরান / ধন্যবাদ বলা,বাচ্চার প্রশংসা করা,বাচ্চার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা বা সন্তান হিসেবে তাকে পেয়ে আপনি গর্বিত, এটা প্রকাশ করা খুব জরুরি!
বাচ্চাকে একবার বকা দিলে, পাঁচবার আদর করে দিবেন।যেন সে বকাটা ভুলে যায়,ভালোবাসাটা মনে রাখে! 
 
৮.
একসাথে পারিবারিক সময় কাটানো এবং প্রতিটা বাচ্চার সাথে আলাদা করে সময় কাটানো। 
 
এটা খুব এফেক্ট করে বাচ্চাদের সাথে সম্পর্ক মজবুত করতে!
যেমন,একসাথে সবাই মিলে রাতের খাবার খাওয়া আর টুকটাক গল্প করা।
সবার দিন কেমন কাটলো,সেই খোঁজ নেওয়া।সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেড়াতে যাওয়া।অন্তত একটু রিকশায় করে ঘুরে আসা বাচ্চাকে নিয়ে আর পুরোটা সময় বাচ্চার সাথে কথা বলা,তার কথা শোনা।
বাবা একটা বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে গেলে মা আরেকটা বাচ্চার সাথে ঘরে একটা কিছু গেইম খেলল বা দুজন মিলে কিছু বানালো আর গল্প করল!
এভাবে অল্টারনেট করে বাবা, মা দুজনে প্রতিটা বাচ্চার সাথে আলাদা কোয়ালিটি টাইম কাটানো।
 
দুনিয়াটা খুব র্যাপিডলি চেঞ্জ হচ্ছে।এখন একটা বাচ্চার লালনপালনে আমরা যেসব অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছি,আমাদের বাবা মা বা আমাদের দাদা দাদীর সময় অবস্থা অন্যরকম ছিলো! এই জেনারেশনকে আল্লাহ এই সময়ের জন্য উপযুক্ত করেই তৈরি করেছেন! তাই প্যারেন্টিং এর বিষয়টাকে ছোট করে দেখলে চলবে না!
বাবা মা দুজনকেই এই কাজে অংশ নিতে হবে! 
আর আল্লাহর কাছে অনেক, অনেক দুয়া করে যেতে হবে প্রতিনিয়ত! সন্তানের জন্য করা বাবা মায়ের দুয়া আল্লাহ কখনোই ফিরিয়ে দেন না।
সেই ছোট ছেলেটার একটা কথা আমার খুব কানে বাজে! ও ওর মা কে বলেছিলো,এই পৃথিবীতে ৭০০মিলিয়ন মানুষ, কিন্তু তুমিই আমার জন্য পারফেক্ট মা! তাই তো স্রষ্টা তোমাকেই আমার মা বানিয়েছেন!
এই জীবনে আমার বাচ্চারা কোনোদিন আমাকে নিয়ে এমন ভাববে কিনা জানিনা! আমার চেষ্টা করে যেতে দোষ কি?! আল্লাহ আমাকে তাওফিক দিক,আল্লাহর এই বান্দাদের যথাযথ তারবিয়ত দেওয়ার।
-তাহমীনা আপু ( আল্লাহ ওনার সন্তানদের সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করুন এবং তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দিন।)

 Post link