goal of life


 

আশা করি এই লেখাটি তোমার চোখ খুলে দিবে। সবকিছু নতুন করে ভাবতে সহায়তা করবে। লেখাটি খুব মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ার আন্তরিক অনুরোধ রইল। জাযাকাল্লাহ খাইরান।

              বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম                       

তোমাকে প্রথমেই একটা কথা বলে রাখি, আমি খুব বিষণ্ণ মন নিয়ে এই লেখাটা লিখতে বসেছি। তবে এই বিষণ্ণতা তথাকথিত গার্লফ্রেন্ড চলে যাওয়ার বিষন্নতা নয় বা এই পৃথিবীতে কোনোকিছু হারানোর বিষণ্ণতা নয়। এই বিষণ্ণতা তোমাকে এই কথাগুলো আগে বলতে না পারার অযোগ্যতার বিষণ্ণতা, আমাদের চারিপাশে যা কিছু হচ্ছে তা সইতে না পারার বিষণ্ণতা। সবাই যখন পরীক্ষার পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত আমি তখন তোমাকে লিখতে বসেছি কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে আমার এই পরীক্ষার চেয়ে তোমাকে এই কথাগুলো বলা বেশী প্রয়োজন, বেশী গুরুত্বপূর্ণ। হয়ত আমার এই কথাগুলো তোমার ভালো নাও লাগতে পারে তারপরেও লিখলাম শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে।

প্রারম্ভিক কিছু কথাঃ-

কি সুন্দর এই পৃথিবী! চোখ জুড়ানো বিস্তীর্ণ শ্যামল শস্য ক্ষেত। গাছের ডালে ডালে রঙ-বেরঙের ফুল ও ফল, তারই মাঝে রঙ-বেরঙের পাখ-পাখালি  ও প্রজাপতির মনভুলানো খেলা। মন জুড়িয়ে যায়। মন জুড়িয়ে যায় বিরাট খোলা আকাশটার দিকে তাকিয়ে। মেঘের কোলে ভেসে বেড়াচ্ছে স্বাধীন ডানা মেলা পাখিরা, রোদ হাসছে ঝিকমিক। কি সুন্দর! কি সুন্দর এই সৃষ্টি! কি বিরাট বিস্ময়কর এই সৃষ্টি! সৃষ্টির এই সৌন্দর্য উপভোগ করে শেষ করা যায় না। এর সীমা-সংখ্যা গুনে শেষ করা যায় না। বিশ্বের প্রতিটি অনু পরমাণু মেনে চলেছে আল্লাহর আইন। এই শৃংখলার কোন ব্যতিক্রম নেই। আর এ জন্যেই এই বিশ্বজগত এতো সুন্দর। বিরাট এ বিশ্বজগতে বিরাজ করছে অনাবিল শান্তি, ঐক্য আর শৃংখলা। কে না চায় এই এতো সুন্দর বিশ্বজগতে বেঁচে থাকতে!!

মানুষ এই দুনিয়ার সুন্দরতম সৃষ্টি। আশরাফুল মাখলুকাত বলা হয় তাকে। অন্যান্য সৃষ্টি থেকে আলাদা তার মর্যাদা। বিশেষ তার স্থান। মানুষ এই দুনিয়ায় আল্লাহর খলীফা বা প্রতিনিধি, আল্লাহ্‌ মানুষকে দিয়েছেন জ্ঞান-বিবেক, দিয়েছেন ভালো মন্দ বুঝার ক্ষমতা। সে যেমন এই জ্ঞানের আলোকে ভালো কাজ করতে পারে তেমনি রয়েছে খারাপ কাজ করার তার ক্ষমতা ও স্বাধীনতা। কিন্তু কেন আল্লাহ্‌ তায়ালা মানুষকে এই বিশেষ মর্যাদা দিলেন? কেন দিলেন এমন স্বাধীনতা? এর পিছনে রয়েছে আল্লাহর এক মহান উদ্দেশ্য। তা হলো, বিশ্ব প্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টি যেমন আল্লাহর নিয়ম মেনে তৈরি করেছে অনাবিল শান্তির জগত তেমনি মানুষ তার স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও যেন আল্লাহ্‌র পথকে বেঁচে নিতে পারে। খারাপ কাজ করার ক্ষমতা ও স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও যাতে করে সে নিজের ইচ্ছায় আল্লাহর আইনের গোলামীকে বরন করে নিতে পারে। আর তারই ফলে তাদের জীবনে নেমে আসবে অনাবিল শান্তি। পৃথিবীতে গড়ে উঠবে এক সুন্দর শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা। আর আখেরাতের অশেষ পুরষ্কার তো রয়েই গেছে। এবার আসি মূল কথায়ঃ-

১) তোমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি?

পড়াশুনা করেছি কিন্তু স্কুল জীবনে “Aim in life বা জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য” নিয়ে রচনা লিখিনি বা পড়িনি এমন একজনও খুজে পাওয়া যাবেনা। আমরা প্রত্যকেই মুখস্ত কিছু কথা লিখেছি যে, আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। ডাক্তার হয়ে বিনামূল্যে মানুষের চিকিৎসা করে মানুষের সেবা করতে চাই। কেউবা আবার লিখেছি শিক্ষক হয়ে সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে চাই। আবার কেউবা লিখেছি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। কিন্তু একবার চিন্তা করে দেখতো যে ছেলেটা ডাক্তার হতে চেয়েছিল সে আজ হয়ত পড়ছে ইতিহাস বা বাংলা বা ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে। যে ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিল সে হয়ত আজ পড়ছে প্রানীবিজ্ঞান বা উদ্ভিদবিজ্ঞান নিয়ে বা অন্য যেকোনো বিষয়ে। আর যে ছেলেটা শিক্ষক হতে চেয়েছিল তার হয়তোবা স্কুলের গণ্ডি পেরোনই হয় নাই। আসলে বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। একজনকে যদি দান করে শতজনকে করে বঞ্চিত। আজ তোমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন। এখন আর ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা বা শিক্ষক হয়ে সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা তোমার জীবনের উদ্দেশ্য নয়। তোমার দরকার কাড়ি কাড়ি টাকা-পয়সা, অর্থ-বিত্ত-প্রাচুর্য ও প্রভাব-প্রতিপত্তি। তোমার দরকার সমাজের বাহবা। সমাজ তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে, তোমাকে দেখে চেয়ারটা ছেড়ে দিবে, সমাজ তোমাকে স্বীকৃতি দিবে তুমি জীবনে সফল(?), সমাজ বলবে তুমি তোমার বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করেছো, এগুলোই হচ্ছে এখন তোমার একমাত্র চাওয়া। আর একটা সুন্দরী রমণীর সাথে প্রেম করা বা বিয়ে করার বাসনা সেটা তো তোমার মনের ভিতরে সবসময়ই কাজ করে। তোমার দরকার বড় বড় সার্টিফিকেট, পি এইচ ডি ডিগ্রী যাতে বিয়ের বাজারে তোমার কদর একটু বেশীই থাকে। তুমি স্বীকার না করলেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এগুলোই যে তোমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তা তুমি অস্বীকার করতে পারবেনা। হয়ত বলবে এগুলো কে না চায়? হ্যা আমিও জানি এগুলো প্রায় সবাই চায়। তাই তুমিও চাও, মনেপ্রাণে চাও, যেকোনো মূল্যে চাও। আর তুমি তোমার এই চাওয়াগুলোকে পূরন করার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা সাধনা করে চলেছ। যে তুমি তোমার আরামের ঘুমটুকু ভেঙ্গে ফজরের নামাজটুকু পড়তে পারোনা সেই তুমি পরীক্ষার টেনশনে সারারাত ঘুমাতে পারোনা। কখন কিভাবে ভোর হয়ে যায় তুমি বলতেই পারোনা কিন্তু তোমার পড়া শেষ হয় না আর ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ পড়ারও সময়তো এমনেই হয়নাবই নিয়ে, গ্রুপস্টাডি নিয়ে বন্ধুদের সাথে এতোটাই ব্যস্ত থাক যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিরিশ মিনিট সময় তোমার হয়না। কারণ তুমি জান যে এবং তোমাকে জানানো হয়েছে যে এই পরীক্ষায় তুমি ভালো করতেই হবে, না করতে পারলে তোমার স্বপ্নগুলো পূরন হবে না। এই পরীক্ষায় ভালো না করতে পারলে তোমার একটা আরাম আয়েশি জীবন, একটা সুন্দর বাড়ি, একটা সুন্দরী নারী এবং একটা সুন্দর গাড়ী পাওয়া হবে নাআর এগুলো না ফেলে তোমার জীবন একেবারে ব্যর্থ। সমাজ তোমাকে ব্যর্থদের কাতারে ফেলে দিবে, সমাজ তোমার কুৎসা করবে, সমাজ বলবে তুমি শেষ, তুমি কোন কাজের না, তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তাই তুমি পাগলের মত ছুটে চলেছ এসবের পেছনে। কিন্তু তুমি একবার ভাবনি তুমি কিসের পেছনে ছুটছো, কিসের জন্যে ছুটছো অবশ্য তা ভাবার মত তোমার সময় কোথায়?

ক) মনে করো তুমি পরীক্ষা দিয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছ এবং দুই দিন পরে ডিপার্টমেন্টের টিচার হবে কিন্তু কিছু দিন পরেই তুমি মারা গেলে। এখন বল কি হবে তোমার ওইসব ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট সার্টিফিকেট দিয়ে। কেজির দরে বিক্রি করা ছাড়া আর কোন কাজে আসবেনা। আর কেজির দরে বিক্রি করলেও তো দুই টাকার বেশী হবে না। এখন চিন্তা করো তোমার সারা জীবনের অর্জন তোমার মৃত্যুর সাথে সাথেই দুই টাকা হয়ে গেল বা তারও কম।

খ) মনে করো গুলশানে তোমার একটা বিশাল বাড়ী হল এবং বাড়ীটিতে উঠার একদিন পরেই তুমি মারা গেলে কি হবে তোমার এই বাড়িটার? মনে করো তোমার একটা লাখ টাকা বেতনের একটা চাকরি হল এবং একটা গাড়ী হল এবং তুমি ওই গাড়ীতে করে প্রথম দিন অফিসে যাওয়ার পথেই দুর্ঘটনায় মারা গেলে তখন কি হবে তোমার ওই লাখ টাকার চাকরি আর বিলাসবহুল গাড়ীর? আচ্ছা মনে করো খুব সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে হল এবং বাসর রাতের পরের দিনই তুমি মারা গেলে তখন কি হবে তোমার ওই সুন্দরী স্ত্রীর? এগুলো কি তোমার সাথে কবরে নিয়ে যাবে নাকি? নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা তুমি মারা যাওয়ার পর তোমার ওই ভালোবসার মানুষটিই ভয়ে তোমার সাথে একরাত থাকতেও চাইবেনা। তোমার যে স্ত্রী কখনো তোমাকে ছাড়া একরাত থাকতে পারতোনা তোমার সেই স্ত্রীই বলবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাকে যেন দাফন করা হয়। এটাই চরম বাস্তবতা এবং এটাই চরম সত্য। একবার ভেবে দেখ তোমার মৃত্যুর সাথে সাথেই তোমার সব বৈষয়িক অর্জন, প্রভাব-প্রতিপত্তি সব কিছু এক মুহূর্তের মধ্যে শূন্য হয়ে যাবে। তোমার অতি কাছের মানুষগুলো চিরদিনের জন্যে তোমার পর হয়ে যাবে। যাদের জন্যে তুমি পৃথিবীতে এতো কিছু করেছো কেউ তোমার সামান্য উপকারে আসবেনা। কেউ তোমাকে বিন্দু পরিমাণ সাহায্য করতে পারবেনা এমনকি তোমার গর্ভধারিণী মাও পর্যন্ত তোমার জন্যে কিছু করতে পারবেনা এক দোয়া করা ছাড়া। আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ-

“আর ভয় করো সেই দিনকে যেদিন কেউ কারো সামান্যতম উপকারে আসবেনা, কারো পক্ষ থেকে কোন সুপারিশ গৃহীত হবেনা এবং বিনিময় নিয়েও সেদিন কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবেনা”-সুরা আল বাকারাঃ ৪৮

তাহলে এখন ভাবো কি নিয়ে যাবে তোমার সাথে যেটা তোমাকে সেদিন সাহায্য করবে যেদিন কেউ তোমাকে সাহায্য করতে পারবেনা। শুধুমাত্র একটা জিনিসই তোমাকে সাহায্য করতে পারবে সেটা হচ্ছে তোমার আমল অর্থাৎ তোমার কৃতকর্ম। আর সেটাকে গুরুত্ব না দিয়েইতো তুমি এসবের পিছনে পাগলের মত ছুটে চলেছ। তাহলে তখন্ তোমার কি অবস্থা হবে একবার ভাব। অবশ্য তোমাকে ভাবতে হবে না কারণ সেটা আল্লাহ্‌ তায়ালাই তোমাকে সতর্ক করার জন্যে পবিত্র কোরআনে বার বার বলে দিয়েছেন। কিন্তু তুমি এতোটাই দুর্ভাগা যে সেই সতর্ক বানীগুলো তোমার কানে পৌঁছায়না বা নিজে জানারও প্রয়োজনবোধটুকু করোনা। আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেনঃ-

আর যার আমলনামা তার বা হাতে দেয়া হবে  সে বলবেঃ হায়! আমার আমলনামা যদি আমাকে আদৌ দেয়া না হতো এবং আমার হিসেব যদি আমি আদৌ না জানতাম তাহলে কতই না ভাল হত হায়! আমার  মৃত্যুই যদি আমার শেষ হতো। আজ আমার অর্থ-সম্পদও কোন কাজে আসলো না আমার সকল ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বরবাদ হয়ে গেল।–সুরা আল হাক্কাহঃ ২৫-২৯

এখন ভাবো কি হওয়া উচিত তোমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আবারো ভাবো!!!। এই দুনিয়ার প্রতিপত্তি নাকি আখিরাতে মুক্তি।

২) আচ্ছা বলতো কেন তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে?

তুমিতো এই পৃথিবীর সামান্য কিছু বৈষয়িক সুখের জন্যে হাজার হাজার পৃষ্টা পড়ে চিন্তা করতে পারো, লিখতে পারো, বলতে পারো কিন্তু কখনো কি একবার ভেবে দেখেছো যে কেন তোমাকে তোমার প্রভু সৃষ্টি করেছেন?। শুধুমাত্র কি এই জন্যে যে তুমি তুমি জন্ম নিয়ে ছোট থেকে বড় হবে, পড়াশুনা করবে, তারপর একটা ভালো চাকরি করবে, তারপর বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করবে, তারপর বৃদ্ধ হবে এবং তারপর একদিন এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে? অনেকটা পশু পাখির মতই। তাহলে তুমি যে আশরাফুল মাখলুখাত এই কথার সত্যতা থাকল কোথায়? আচ্ছা একবার গভীরভাবে চিন্তা করতো যিনি এই বিশ্বজগতের স্রষ্টা, অসীম জ্ঞানী, যার সৃষ্টিতে কোন ভুল বা ত্রুটি নেই সেই তিনি কীভাবে তোমাকে এতো বুদ্ধি, বিবেক, প্রজ্ঞা দিয়ে সুন্দরতর আকৃতিতে সৃষ্টি করে কোন কারণ বা উদ্দেশ্য ছাড়াই এই পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিয়েছেন? তুমি হয়ত জানো না বা জানবার প্রয়োজনীয়তাটুকুও বোধ করোনা কেন আল্লাহ্‌ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু সেটা আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ-

“আমি জিন ও মানুষকে আমার ইবাদত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য সৃষ্টি করিনি।”-সুরা আয যারিয়াতঃ ৫৬

উপরের আয়াতটা বার বার পড় এবং দেখতো বুঝতে কোন অসুবিধা হয় কিনা, কি কারণে আল্লাহ্‌ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি জানি একটা ছোট শিশুরও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না।

অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তায়ালা তোমাকে এতো বুদ্ধি, বিবেক, প্রজ্ঞা দিয়ে সুন্দরতর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদতের জন্যে। এখন তোমার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমি কি তাহলে  এই পৃথিবীর কিছুই পাবো না বা কিছুই ভোগ করতে পারবোনা বা অন্য কোনকিছুই করতে পারবোনা? অবশ্যই পারবে, সব কিছুই করতে পারবে। তবে সেটা আল্লাহ্‌ ও তার রাসুলের দেখানো পথে হতে হবে। আল্লাহ্‌ ও তার রাসুলের দেখানো পথে তুমি যা করবে বা আল্লাহ্‌ ও তার রাসুলের নিষেধে যা পরিত্যাগ করবে তার সবটাই ইবাদত। যদি তুমি আল্লাহ্‌ ও তার রাসুলের নির্দেশমত রাস্তা দিয়ে হাট এবং আল্লাহ্‌ তার রাসুলের আদেশমত রাস্তা দিয়ে হাটার সময় নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বিরত থাক তাহলে রাস্তা দিয়ে হাঁটাটাও তোমার জন্যে ইবাদত বলে গন্য হবে যেমনিভাবে আল্লাহ্‌ ও তার রাসুলের দেখানো পদ্ধতিতে নামাজ পড়া, রোজা রাখা, যাকাত আদায় করা, হজ্জ করা ইবাদত হিসেবে গন্য হয়। তুমি যদি সৎ পথে তোমার পরিবারের জন্যে জীবিকা নির্বাহ করো তাহলে সেটাও তোমার জন্যে ইবাদত হিসেবে গন্য বা কবুল হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রী বা স্বামীর সাথে যে সময়টুকু কাটাবে সেটাও ইবাদত বলে গন্য হবে যদি সেটা আল্লাহ্‌ ও তার রাসুলের দেখানো পথ অনুসারে হয়। এমনকি তোমার ঘুমটাও ইবাদত হবে যদি সেটা আল্লাহ্‌ ও তার রাসুলের নির্দেশিত পন্থায় হয়রাসুল(সাঃ) বলেনঃ-

“যে ব্যক্তি ইশার নামাজ জামাতের সাথে পড়ল যে যেন অর্ধরাত অবধি নামাজ আদায় করল। আর এর পর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করল সে যেন সারা রাত নামাজ আদায় করল। অর্থাৎ মাঝখানে তার ঘুমটাও নামজের মত ইবাদত হিসেবে গন্য হবে। ”- সহীহ মুসলিম

৩) কেন তুমি আশরাফুল মাখলুখাত?

তুমি ইসলাম সম্পর্কে খুব ভালো না জানলেও অন্তত এইতুকু জানো যে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা তোমাকে আশরাফুল মাখলুখাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু কখনি কি একবার ভেবে দেখেছো কেন তুমি সৃষ্টির সেরা। নাকি তুমি এমনি এমনিই তুমি সৃষ্টির সেরা!!এইটা বলা কি চরম নিরবুদ্ধিতা না বল? তুমি নিজেও কি অন্য কাউকে শুধু শুধু সেরা বলে বলে মেনে নিবে? তুমি জানো যে তোমার বাবা তোমার পরিবারের শ্রেষ্ঠ কারণ তোমার বাবা তোমার পরিবাবের সকল দায়িত্ব বহন করেন। তেমনিভাবে তোমাকে কিছু দায়িত্ব দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে যেটা অন্য কোন প্রানীকে দেয়া হয় নাই আর সে জন্যেই তুমি আঁশরাফুল মাখলুখাত  বা সৃষ্টির সেরা। আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেনঃ

“ তোমরা হলে উত্তম জাতি। তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যান সাধনের জন্যে। তোমাদের কাজ হল, তোমরা মানুষকে সত্যের পথে চলার আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে।”-সুরা আল ইমরানঃ ১১০

দেখ আল্লাহ্‌ কত স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন কেন তোমাকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এখন বল এই দায়িত্ব পালন না করলে কি তুমি আর শ্রেষ্ঠ থাকবে বা থাকতে পারবে? থাকতে পারবেনা। তাহলে কি হবে তোমার অবস্থান? সেটাও কিন্তু আল্লাহ্‌ তায়ালা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেনঃ

“আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম আকৃতিতে। অতঃপর থাকে নামিয়ে দিয়েছি নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতর অবস্থানে।”- সুরা আত ত্বীনঃ ৪-৫

অর্থাৎ তুমি যদি তোমার এই দায়িত্ব মানে “সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ” পালন না করো বা পালনে অবহেলা করো তাহলে তোমাকে এক নিকৃষ্ট স্তরে নামিয়ে দেয়া হবে। অর্থাৎ পশু পাখিরও নীচের স্তরে। এখন একটু চিন্তা করতো তোমাকে যে দায়িত্ব দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা সম্পর্কে কতটুকুই বা জানো কতটুকুই বা পালন করছো। যদি না করে থাক তাহলে তোমার অবস্থানটা কি পশুর চেয়েও নীচে নেমে গেলনা?

৪) আচ্ছা বলতো কেন আমরা বেঁচে আছি?

আচ্ছা ভাইয়া বা আপু কখনো কি একবার চিন্তা করেছো কেন আমরা বেঁচে আছি? কিসের জন্যে বেঁচে আছি? খাবো-দাবো, সেক্স করবো, আমোদ-ফুর্তি করবো শুধু কি এই জন্যেই বেঁচে আছি? যদি শুধুমাত্র খাওয়া-দাওয়া, সেক্স, আমোদ-ফুর্তি বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য হয় তাহলে তো আমাদের আর পশু পাখির মধ্যে কোন পার্থক্যই থাকলোনা। বরং তখন পশু পাখির জীবনটা আমাদের চেয়ে অনেক সুন্দর হবে কারণ ওদের খাওয়া-দাওয়া, সেক্সের জন্যে অতটা পরিশ্রম করতে হয় না যতটা করতে হয় মানুষের। যদি বল খাওয়া- দাওয়া, সেক্স, আমোদ- ফুর্তিই বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য না তাহলে কেন আমরা বেঁচে আছি সেই কারণটা অবশ্যই তোমাকে বের করতে হবে। আর এই জন্যে তোমাকে ফিরে যেতে হবে আল কোরআনের ছায়াতলে। না হলে হাজার হাজার পৃষ্টা পড়েও অন্ধকারে হাতড়িয়ে মরবে কিন্তু বেঁচে থাকার সঠিক উদ্দেশ্যটাই আবিষ্কার করতে পারবেনা। আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেনঃ

“এই সেই রমজান মাস, যে মাসে কোরআন নাযিল করা হয়েছে; যা মানুষের জন্যে হেদায়াত স্বরূপ, যা এমন স্পষ্ট উপদেশে পরিপূর্ণ যে, তা সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য পরিস্কারভাবে তুলে ধরে।”- সুরা আল বাকারাঃ ১৮৫

৫) এই দুনিয়ার সাফল্যই কি প্রকৃত সাফল্য?


আচ্ছা এই দুনিয়ার সাফল্যই কি প্রকৃত সাফল্য? এই দুনিয়াতে অঢেল টাকা-পয়সা, গাড়ী-বাড়ী, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং সুন্দরী রমণী পাওয়াটাই কি প্রকৃত সাফল্যের মূল নিদর্শন? দেখা যাক এই দুনিয়ার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা এই দুনিয়ার তথাকথিত সাফল্য নিয়ে কি বলেনঃ

তারা তাদের এই দুনিয়ার জীবনে যা কিছু ব্যয় করছে তার উপমা হচ্ছে এমন বাতাস যার মধ্যে আছে তূষার কণা ৷ যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে তাদের শস্যক্ষেতের ওপর দিয়ে এই বাতাস প্রবাহিত হয় এবং তাকে ধ্বংস করে দেয় আল্লাহ তাদের ওপর জুলুম করেননি৷ বরং প্রকৃতপক্ষে এরা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছে৷পার্থিব জীবন ছলনাময় সম্পদ ছাড়া কিছুই নয়।”- সুরা আল ইমরানঃ ১১৭

পার্থিব জীবন ছলনাময় সম্পদ ছাড়া কিছুই নয়।”-সূরা আলে ইমরানঃ ১৮৫

পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক ব্যতীত কিছু নয়, যারা সংযত হয় তাদের জন্য পরকালের আবাসই শ্রেষ্ঠতর। তোমরা কি তা বোঝ না?”-সূরা আল-আন'আমঃ ৩২

এই পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরলৌকিক জীবনই তো প্রকৃত জীবন।”-সূরা আল-আনকাবূতঃ ৬৪

এই পার্থিব জীবন তো অস্থায়ী উপভোগের বস্তু এবং পরকাল হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস।”-সূরা আল-মু'মিনঃ ৩৯

তোমরা জেনে রেখো, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক গর্ববোধ ও ধন-জনে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছু নয়”-সূরা আল-হাদীদঃ ২০

উপরের আয়াতগুলো বার বার পড় আর চিন্তা করো কিসের পেছনে পাগলের মত ছুটছু।

৬) আখিরাতের সাফল্যই প্রকৃত সাফল্য।

এই দুনিয়ার সাফল্য সে প্রকৃত সাফল্য নয় এই কথাতি বুঝতে বা উপলব্ধি করতে কোন বিবেকবান মানুষেরই অসুবিধা হওয়ার কথা না। কেননা এই দুনিয়ার সাফল্য নশ্বর, অস্থায়ী। এই দুনিয়ার সাফল্য আজ আছে তো কাল নেই। যেকোনো মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে আখিরাতের সাফল্যই যে প্রকৃত সাফল্য যে কেউ সামান্য একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে। কেননা আখিরাতের সাফল্য অবিনশ্বর, চিরন্তন। তা কখনো হারিয়ে যাবার নয় বা ধ্বংস হবার নয়। আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেনঃ

অবশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে মরতে হবে এবং তোমরা সবাই কিয়ামতের দিন নিজেদের পূর্ণ প্রতিদান লাভ করবেএকমাত্র সেই ব্যক্তিই সফলকাম হবে, যে সেখানে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে ৷ আর এ দুনিয়াটা তো নিছক একটা বাহ্যিক প্রতারণার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়”- সুরা আল ইমরানঃ ১৮৫

সে সময় যাকে তার আমলনামা ডান হতে দেয়া হবে,  সে বলবেঃ নাও, তোমরাও আমার আমলনামা পড়ে দেখো, আমি জানতাম, আমাকে হিসেবের সম্মুখীন হতে হবে তাই সে মনের মত আরাম আয়েশের মধ্যে থাকবে সুচ্চ মর্যাদার জান্নাতে যার ফলের গুচ্ছসমূহ নাগালের সীমায় অবনমিত হয়ে থাকবে এসব লোকদের কে বলা হবেঃ অতীত দিনগুলোতে তোমরা যা করে এসেছো তার বিনিময়ে তোমরা তৃপ্তির সাথে খাও এবং পান করো”- সুরা আল হাক্কাহঃ ১৯-২৪

৭) এবার তোমাকে কিছু অপ্রিয় সত্য কথা বলি।

এবার তোমাকে কিছু অপ্রিয় সত্য কথা বলি। হয়ত তোমার কাছে কথাগুলো কটু মনে হতে পারে। তাতে কি? আমি যদি তোমাকে এতো ভালোবাসতে পারি, তোমার জন্যে লিখতে পারি তাহলে কি তোমার বৃহত্তর কল্যাণের জন্যে তোমাকে কয়েকটা কটু কথা বলার অধিকার রাখিনা বল? আর একটা প্রবাদই তো আছে যে, “শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে”।

ক) একটু চিন্তা করে দেখতো তোমাকে অনার্স পাস করতে হলে ছোটবেলা থেকে অনার্স পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩৫ টি বই পরতে হয়(প্রতি বিষয়ের জন্যে কমপক্ষে একটি করে বই ধরে কিন্তু অনেক সময় আমদেরকে একটা বিষয়ের জন্যে তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত বই পরতে হয়)। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে এই কমপক্ষে ১৩৫ তার মধ্যেও তোমার জীবনের জন্যে সবচেয়ে অত্যাবশ্যকীয় একটা বই(আল কোরআন) থাকেনা। তোমার এই পৄথিবীতে একটা চাকরীর জন্যে শত শত আজেবাজে বই পড়ার সময় হয় কিন্তু আল কোরআন পড়ার সময় হয়না। তার পরেও তুমি নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দাও!!,আল্লাহর কাছে মুক্তির আশা করো!!। আমার মনে হয় আমাদের নিজেদের একটু লজ্জিত হওয়া উচিত।

খ) একবার চিন্তা করতো সাময়িক কিছু বিনোদনের জন্যে তুমি হাজার হাজার টাকা খরচ করে হুমায়ূন আহমেদের বই, জাফর ইকবালের বই, বিভিন্ন মুভি ডিস্ক এবং আরও কত কি কিনতে পারো কিন্তু মাত্র হাজার বারোশ টাকা খরচ করে ইসলাম বুঝার জন্যে একটা কোরআনের তাফসীর বা কয়েকটা ইসলামিক বই কিনতে পারোনা। তা পারবে কেন? তুমি তো আধুনিক ছেলে বা মেয়ে!!তোমার কি কোরআনের তাফসীর আর ইসলামিক বই পড়ার সময় আছে? তোমার সময় আছে একরাতে দুই তিনটা মুভি দেখে শেষ করার!!তোমার সময় আছে টিএসসিতে বন্ধু বান্ধবীদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেয়ার!!তোমার সময় আছে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে পার্কে বসে নিভৃতে আড্ডা দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করার!! তোমার সময় আছে গার্লফ্রেন্ডের সাথে সারারাত জেগে ফোনালাপ করার!!। তোমার কি ইসলাম নিয়ে, কোরআন- হাদিস নিয়ে আলোচনা করার সময় আছে? তা থাকবে কেন ? তোমার সময়গুলো হচ্ছে এক্তা টাইগার, ডার্টি পিকচার আর বলিউডের কোন মুভিটা কত হিট হয়েছে তা নিয়ে বন্ধুদের সাথে আলোচনায় হারিয়ে যাওয়ার। কোন মুভি প্রথম দিনেই কত মিলিয়ন ডলার আয় করছে তা একেবারে তোমার নখদর্পণে। স্প্যানিশ লীগে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে কে কয়টা গোল করছে সব তোমার মুখস্ত। আগামী বছর কে ব্যালন ডি জিতবে তাও বলে দিতে পারবে। পৃথিবীর সব বিষয়ের জ্ঞান তুমি রাখো। তুমি সবই বলে দিতে পারবে। বলতে পারবেনা শুধু পবিত্র কোরআনে কয়টা সূরা আছে, সিহাহ সিত্তাহ মানে কি। সত্যি তোমার জন্যে আমার করুনা হয়, তোমার জন্যে আমার লজ্জা হয়, তোমার জন্যে আমি বিব্রত!!!তারপরেও তোমাকে আমি অনেক অনেক ভালোবাসি, অনেক অনেক পছন্দ করি আর তাই তোমাকে এই কথাগুলো বললাম যেন তোমার চেতনা ফিরে আসে, যেন তোমার ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা সত্যিকারের মানুষটা জেগে ওঠে।

গ) হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে, সস্তা প্রেমের সিনেমা দেখে, সস্তা প্রেমের উপন্যাস পড়ে তোমার চোখে জল এসে যায় কিন্তু নিজের শত শত ভুল আর পাপের জন্যে আল্লাহর সামনে দাড়িয়ে একফোঁটা চোখের জল ফেলার সময় তোমার হয়না। আর দাঁড়ালেও সে সময় চোখের সমস্ত জল যেন কর্পূরের মত বাষ্প হয়ে উড়ে যায়!! এভাবে আর কতদিন বল? এখনি কি তোমার চেতনা হবে না নাকি আল কোরআনের ওই আয়াতের মত হবে তোমার অবস্থাঃ

“ দুনিয়ায় বেশী বেশী এবং একে অপরের থেকে বেশী পাওয়ার মোহ তোমাদেরকে গাফলতির  মধ্যে ফেলে দিয়েছেএমনকি তোমরা (এই চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে ) কবর পর্যন্ত পৌঁছে যাও”- সুরা আত তাকাসুরঃ ১-২

 বল, আর কবে তোমার রবের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে? শেষ বয়সে? কিন্তু তুমি যে আর এক মুহূর্ত পরে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে এই নিশ্চায়তা তোমাকে কে দিল?

৮) শুরু হোক নতুন জীবন, নতুন অধ্যায়

অতীতের ভুল ভ্রান্তির জন্যে পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে তওবা করে,ক্ষমা চেয়ে আজ থেকে শুরু হোক নতুন জীবন। শুরু হোক নতুন করে চলার পথ, যে পথ শুধুই আলোয় ভরা, যে পথ শুধুই সাফল্যের, যে পথে ব্যর্থতার কোন হিসেব নেই, আল কোরআনই হবে যে পথের একমাত্র আলোকবর্তিকা। আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেনঃ

হে ঈমানদারগণ তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তওবা করো, তাহলেই তোমরা কল্যান লাভ করতে পারবে।”- সুরা আন নূরঃ ৩১

হে ঈমানদগন তোমারা আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তওবা করো।”- সুরা আত তাহরীমঃ ৮

রাসুল(সাঃ) বলেনঃ

আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশি হন যার খাবার ও পানীয় সামগ্রী নিয়ে সাওয়ারী উটটি হঠাৎ গভীর মরুভূমিতে হারিয়ে গেল। অনেক খোঁজাখুজির পর হতাশ হয়ে লোকটি একটি গাছের ছায়ায় শুয়ে পড়ল। এরূপ অবস্থায় হঠাৎ সে উটটিকে নিজের কাছে দাঁড়ানো দেখতে পেল। সে উটের লাগাম ধরে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলতে লাগলঃ হে আল্লাহ্‌ তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রভু!! সে অতিশয় আনন্দেই এই ভুল করে বসল।”- সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিম

“আবু হুরাইরা(রাঃ) বর্ণনা করেন আমি রাসুল(সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর কসম! আমি একদিনে সত্তর বারের চেয়েও বেশি তওবা করি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।” -সহীহ আল বুখারী।

৯) শেষ কথাঃ

এই সুন্দর পৃথিবীতে কে একটু সুন্দরভাবে বাঁচতে না চায়। আমরা সবাই চাই কারো কাছে হাত না পেতে একটু স্বাবলম্বী হয়ে বাঁচতে। আমরা সবাই চাই পৃথিবীতে আমাদের ধন-সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, মান-সম্মান থাকুক। তবে মনে রাখতে হবে তা যেন আখিরাতের সাফল্যের চেয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে, আখিরাতকে বিনষ্ট করে নয়। আর প্রাণপণ চেষ্টা করলেই কি অঢেল ধন-সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, মান-সম্মান অর্জন করা যায়? আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেনঃ

বলোঃ হে আল্লাহ! তুমিই বিশ্বজাহানের মালিক! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দান করো এবং  যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা ছিনিয়ে নাও ৷ যাকে ইচ্ছা মর্যাদা ও ইজ্জত দান করো এবং যাকে ইচ্ছা লাঞ্জিত ও অপমানিত করো সমস্ত কল্যাণ তোমরা হাতেই নিহিত ৷ নিসন্দেহে তুমি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান।”- সুরা আল ইমরানঃ ২৬

আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে ইসলাম, কোরআন-হাদিস বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন।

 https://www.facebook.com/notes/463727426982436/

সাদকায়ে জারিয়া :মরণের পরেও বন্ধু হয়ে রয়।

নিজেকে দয়া করুন, নিজের প্রতি রহমদীল হোন। কোন কিছু নিয়ে এতো চিন্তা করে কী হবে? প্রতিটা মানুষের জীবনের স্রোত আলাদা, একের সাথে আরেকটা মিশে না। অন্যের সাথে তুলনা করতে যাবেন না। এমনকি নিজের অতীতের সাথেও না। শুধু জেনে নিন, আপনার জীবনে সামনে যা আসে, তা আল্লাহর পাঠানো। কিছুতেই তা এড়িয়ে যেতে পারতেন না। গ্রহণ করে নিন জীবনে যা কিছু আসে, আসবে। হাসিমুখ থাকুন, চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে দুশ্চিন্তা ও আশংকা করে নিজেকে নষ্ট করবেন না। আমাদের উপরে যা কিছু আসে তা আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত নয়, এ আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষণা। আস্থা রাখুন নিজের উপরে। দুর্যোগ মানেই জীবন ধ্বংস নয়, হোক তা প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট। দুর্যোগ কেটে যায়। ধ্বংসস্তূপ সারিয়ে তুলতে হয় সেই আপনাকেই। তাই, অপেক্ষা করুন নতুন করে গড়ে নেয়ার। এটাই জীবন। অতিকাব্যিক কিছু নেই পৃথিবীর জীবনে। আসল সফলতা আল্লাহর কাছে। দুনিয়ায় কাজ হলো সুন্দর করে মূহুর্তগুলোতে আপনার দায়িত্ব পালন কvBulletinরে যাওয়া। ফলাফল আল্লাহর হাতে। সবই আল্লাহর হাতে। সহজভাবে গ্রহণ করুন জীবন। হাসিমুখ থাকুন, হাসিমুখ তৈরি করুন। কাজ করুন। মন দিয়ে কাজ করুন। কাজের মাঝে বেঁচে থাকুন যেন এগুলো সাদকায়ে জারিয়া হয়ে মরণের পরেও বন্ধু হয়ে রয়।

collected

আলহামদুলিল্লাহ্‌

......আমি বর্তমানে যে ফোনটা ব্যবহার করি সেটার নাম হচ্ছে-Asus Zenfone5.। অসাধারণ একটা ফোন। আমার কাছে মনে হয় দাম ও Performance এর দিক দিয়ে বাজারের সেরা ফোন। 2GB র‍্যাম, 16GB রম, Intel Processor, Full HD Display, 8 Megapixel Camera with Sony Sensor,So Many Customizations। তাছাড়া আসুসের Software Service অসাধারণ, Regular Software Update দেয়। ৭ মাস ধরে ব্যবহার করছি এখন পর্যন্ত কোন সমস্যাই হয়নি আলহামদুলিল্লাহ্‌। কয়েকদিন আগে Kitkat থেকে Lollipop Update দিলাম। ফলে ফোনের Look এবং Performance সবকিছুই মনে হচ্ছে আগের চেয়েও দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌। সবচেয়ে বড় কথা ফোনটা নিয়ে আমি অসম্ভব রকম খুশি! আলহামদুলিল্লাহ্‌…আলহামদুলিল্লাহ্‌।
.
......অনেকের হয়তো মনে হচ্ছে আমি Asus এর Branding করতে নেমেছি বা User Review দিচ্ছি। আসলে তা না। মূল রহস্য সামনে....
.
…..কয়েকদিন আগে আমার এক কাছের বন্ধুর শ্বশুর-শাশুড়ি হজ্ব করতে গিয়ে তার জন্যে একটা Samsung Galaxy S6 ফোন নিয়ে আসে!! তো ওর সাথে দেখা হইলেই ওর ফোনটা হাতে নিই, বিভিন্ন Settings এবং Customization ঠিক করে দেই। ঠিক ঐ মুহূর্তে আমার ফোনটাকে আমার কাছেই কেমন জানি মিসকিন মিসকিন লাগে!!। তখন মনে হয় ইশ! আমার ফোনটাও যদি Samsung Galaxy S6 হইতো!!!
.
.....তাহলে একবার চিন্তা করুন, যে ফোনটাকে নিয়ে আমি এতো খুশি সেই ফোনটাকেই এখন আমার কাছে মিসকিন মিসকিন মনে হচ্ছে!! কারণটা কি?? ফোনটায় কি কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে??
.
-না, আমার ফোনে কোন সমস্যা দেখা দেয় নি। সমস্যা আমার মাঝে দেখা দিয়েছে, মনে মনে আমি ওর ফোনটার সাথে আমার ফোনটার তুলনা করতে গিয়েছি।
.
……হুম। এটাই হচ্ছে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা বা বাস্তব জীবনে অসুখী হওয়ার প্রধান কারণ। অনেক কিছু থাকার পরেও আমরা নিজেদেরকে সুখি মনে করিনা, আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলতে পারিনা কারণ আমরা নিজেদেরকে অন্যের কি আছে সেটার সাথে তুলনা করতে যাই। তুলনা করতে যাওয়াটা সমস্যা হইতো না যদি আমরা আমাদের চেয়ে যাদের কম আছে তাদের সাথে তুলনা করতে যাইতাম। কিন্তু না, আমরা তা করিনা। আমরা নিজেদেরকে তুলনা করি আমাদের চেয়ে যাদের বেশী আছে তাদের সাথে।
.
…….হয়তো আপনার একটা X Corolla গাড়ি আছে, কিন্তু গাড়িটা নিয়ে আপনার মনে পরিপূর্ণ সুখ নাই কারণ আপনার বন্ধুর গাড়িটা হচ্ছে Mercedes বা Prado। এবার উল্টোটা চিন্তা করেন যে, আপনার তো একটা গাড়ি আছে কিন্তু অনেকের কাছে হয়তো রিকশা দিয়ে যাতায়াত করার ভাড়াটাও নেই!!। দুঃখের বিষয় আমরা খুব কমই উল্টোটা চিন্তা করে থাকি।
.
-ফলাফলঃ-আল্লাহ্‌ যথেষ্ট ভালো রাখা সত্ত্বেও আমরা নিজেদের দোষে দূষিত হয়ে সেই সুখটা বা ভালোটা উপলব্ধি করতে পারিনা!!
.
.....সুতরাং সুখে থাকার মূলমন্ত্র হচ্ছে- নিজের যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা কারণ এর চেয়েও তো খারাপ হইতে পারতো। কেননা রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“যখনি তোমার উপরের শ্রেণীর লোকদের (অন্যের প্রাচুর্য) দেখে মন খারাপ হবে তখনি তোমার নিচের শ্রেণীর লোকদের দিকে তাকাও তাহলেই দেখবে ঐ প্রাচুর্যের জন্য তোমার আর খারাপ লাগছেনা।”(ভাবানুবাদ)-সহীহ মুসলিম, জামে আত তিরমিজি।
-সুবাহানাল্লাহ। কি অসাধারণ কথা!!
.
……সো সুখি হইতে চাইলে, নিজের কি নাই সেটা চিন্তা না করে, নিজের কি আছে সেটা নিয়ে চিন্তা করেন, তার জন্য আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলেন। ব্যাস!! সুখি হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট!!

collected

ইসলামী দেশ !!!

আসলে কষ্ট লাগে এদেশের এই অবস্থা দেখে তাই না ? আচ্ছা এ দেশ নাকি ইসলামী দেশ !!!
আচ্ছা আসুন দেখি এদেশের মুসলিমদের অবস্থা কেমন...
ইসলামিক ফাউডেশনের জরীপ অনুযায়ী এ দেশে মাত্র ২% মানুষ নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত স্বলাত আদায় করে ! অথচ
রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
‘‘কোন মুমিন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত ত্যাগ করা।’’ (সহীহ মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:
‘‘তাদের পর আসলো (অপদার্থ) বংশধর। তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসার বশবর্তী হল, সুতরাং তারা অচিরেই কু-কর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু তারা নয় যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।’’ (মারইয়াম ৫৯-৬০)
আমাদের দেশে ৯৯% নারী পর্দা করেনা আর যদিও করে তা ফ্যাশন প্রকৃত পর্দা হয় না । অথচ মহান আল্লাহ্‌ বলেন
"হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, আপনার কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ নিজেদের (মুখের) উপর নামিয়ে দেয়।" [সূরা আহযাব-৫৯]
'জিলবাব' অর্থ বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমন্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়। [আলজামি লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ১৪/২৪৩]
শত শত বছর যাবৎ মুসলিমজাহানের সর্বত্র যে দ্বীনদার নারীগণ নেকাব ও বোরকা পরিধান করে আসছেন তাঁরা এই জিলবাব ধারণের বিধানই পালন করছেন।
এদেশে মানুষ দাড়ি রাখে আর টাখনুর উপর প্যান্ট পরে ১%, কুরআন তিলাওয়াত জানে আর পরিপুর্ন ইসলাম কি তা জানে কয়জন তা আল্লাহ্‌ ই ভালো জানেন ।
তাই দেশের অবস্থা দেখার আগে নিজের অবস্থা দেখুন কতটা ইসলাম আপনি জানেন ও মানেন ।
আল্লাহ্‌ যেন আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে ইসলামকে জানার এবং মানার তাওফিক দান করেন আমিন ।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথ দেখাও.......আমিন।
Posted by The Muslim Show Bangla on Thursday, October 8, 2015

বোধদয়

আজ এক ভাইয়ার স্ট্যাটাস পড়ে একটা জিনিস উপলব্ধি করলাম। আমাদের মেয়েদের দুনিয়া আমাদের হাসবেন্ড, বাচ্চা আর সংসারের মানুষদের ঘিরে। আমাদের বেশিরভাগ চিন্তা ভাবনা সংসারের খুটিনাটি নিয়েই। কিন্তু একজন পুরুষকে টাকা উপার্জন করতে হয়, সংসারের অভাব, কার কি লাগবে, বাচ্চাদের পড়ালেখার খরচ বাবা মা স্ত্রী এর চাহিদা মেটানো, ইত্যাদি খেয়াল রাখতে হয়। সাথে রয়েছে মা আর বউ এর মাঝের সমঝোতা করার দ্বায়িত্ব। দোষ যারই হোক এক জনের পক্ষ নিলে আরেকজন কষ্ট পায়। সারাদিন অফিস করে বাসে ঝুলতে ঝুলতে ঘামে ভিজে বাসায় এসেও আরাম করার উপায় নাই, বাচ্চাটা সারাদিন অপেক্ষা করে আছে বাবা কখন আসবে, আসলেই বাবার সাথে খেলতে হবে। বউ অপেক্ষা করে আছে কখন তার হাসবেন্ড আসবে, একটু গল্প করবে,বাবা মা হয়তো অপেক্ষা করে আছে কখন তার ছেলেটা আসবে, সংসারের কোনো ডিসিশনের ব্যাপারে আলাপ করতে হবে। বেশিরভাগ ছেলেই বাচ্চা, মা বাবা বউ এর মুখে হাসি দেখে ক্লান্তি ভুলে সময় দেয় পরিবারকে। কিন্তু কোনোদিন হয়তো বউ অপেক্ষা করে আছে আর হাসবেন্ড খুব বেশি ক্লান্ত থাকায় একটু ঘুমাতে বা রেস্ট নিতে চাইলো, ওমনি বউ এর অভিমান আর কমপ্লেইন শুরু হয়ে যায়!
আল্লাহ স্বামী স্ত্রীকে একজন আরেকজনের পোশাক স্বরুপ বলেছেন। মেয়েদের আল্লাহ একটা সংসার সুন্দর করে সাজানোর ক্ষমতা দিয়েছেন। আমি যেমন আশা করি সারাদিন কাজ করতে করতে ক্লান্ত আমাকে আমার হাসবেন্ড একটু সাহায্য করবে, একটু সময় দিবে, হাসি ঠাট্টা দিয়ে তেমন হাসবেন্ড ও আশা করে যেদিন তার অনেক কষ্ট হয় তা আমি বুঝবো এবং মন খারাপ না করে তাকে ঠিকমতো খেয়ে ঘুমাতে, রেস্ট নিতে সুযোগ করে দিবো,বাচ্চাদের বা পরিবারের অন্যদের সাথে মনোমালিন্যের কথা তুলে মন মেজাজ আরো খারাপ করে দিবোনা। সুযোগ দিতে না পারলেও অন্তত একটু সহানুভূতি,একটু হাসি পারে বাইরের সকল কষ্ট ভুলিয়ে দিতে। আমাদের কোনো কিছু খারাপ লাগতে তা যে বাসায় আসার সাথে সাথেই কমপ্লেইন করা লাগবে তা তো না। সারাজীবন একসাথে থাকতেই তো আমরা বিয়ে করেছি। কমপ্লেইন করার কতো সময় পাওয়া যাবে!
collected

বদমাশ উচ্চ শিক্ষিতদের জায়গায় অল্প বিজ্ঞান জানা মাদ্রাসার ভদ্র ছাত্র হলেও ভালো

শিক্ষকদের উপর ছাত্রদের হামলা করতে দেখে একটি পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। বর্তমান পেশায় আসার আগে আমি কিছুদিন একটি মাদ্রাসায় অনারারী ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে পড়াতাম। ঐ মাদ্রাসা ছিল মূলত নও মুসলিমদের সন্তানদের জন্য। এদের মাঝে অনেক উপজাতি ছিল। ওইখানে অল্প সময়ে কিছু অভিজ্ঞতা হল যা না বলে পারছি না।
দুপুরে খাওয়ার বিরতির সময় আমরা শিক্ষকরা মেঝেতে মাদুর পেতে খেতাম আর আমাদের জুতা বাইরে থাকত। ঘরে ঢুকার সময় জুতা যখন খুলতাম তা ঘরের দিকে মুখ করা থাকত। কিন্তু যখন বের হতাম দেখতাম জুতা বাইরের দিকে মুখ করে রাখা আছে। এইভাবে কয়েকদিন দেখার পর জানতে চাইলাম ঘটনা কি? কে এই কাজ করে? জেনে অবাক হলাম ছাত্ররাই অইদিক দিয়ে যাওয়ার সময় জুতাগুলো এভাবে সাজিয়ে দেয় যাতে শিক্ষকরা জুতা পড়তে সামান্য উল্টা ঘুরার কষ্টটাও না করেন। সুবহান'আল্লাহ!!!!!!!!!
ঐ মাদ্রাসা চট্টগ্রামের একটি পাহাড়ি এলাকায় ছিল। পানির ভাল ব্যবস্থা ছিল না। অজু করতে একটু নিচে নলকূপের কাছে যেতে হত। কিন্তু ওজুর সময় হতেই দেখি উপরে পাথরের পাশে বালতি আর বদনা পানিতে পূর্ণ করে সাজিয়ে রেখেছে ছাত্ররা। একদিন একটু আগে অজু করতে গিয়ে দেখি পানি নাই। দূর থেকে এক ছাত্র দেখেই দৌড় দিল। পানি এনে তো দিলই উল্টা কেন পানি ছিল না এজন্য মাফ চাইতেছিল। পুরা কান্নাকাটি করার অবস্থা। অথচ এর জন্য ওকে শাস্তি পেতে হবে তা কিন্তু নয়। খুব জীর্ণ, শীর্ণ ছিল ঐ মাদ্রাসা। কারণ টাকা দেয়ার কেউ ছিল না। কিন্তু ঐ অসাধারণ মার্জিত আর উন্নত চরিত্রের বাচ্চাদের মাঝে আমার মনে হত এর চেয়ে সমৃদ্ধ জায়গা আর কোথাও নাই। পড়াশোনাতেও এই বাচ্চারা খুব ভাল ছিল। পর্যাপ্ত সুবিধা পেলে অনেক ভাল করতে পারত।
আজকে বিপুল আর্থিক সুবিধাসহ দেশের সবচেয়ে ভাল বিদ্যাপীঠের স্বীকৃতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্ররা শিক্ষক পেটায়। কি এর কারণ?
কারণ তো একটাই যে এই পুঁজিবাদী সিস্টেম তাদের কেবল অর্থের হিসাব আর বেয়াদবি শিখায়। প্রতিবছর আমাদের মত কিছু আদব কায়দা না শিখা শিক্ষিত দেশের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে (আমরাও ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে পড়ে আসা লোক)।

সংগৃহীত

সুত্র 

psychological enslavement

মুসলিম জাতিকে কুরআনে শ্রেষ্ট জাতি এবং কাফিরদেরকে loser হিসেবে বারবার অভিহিত করা সত্ত্বেও মুসলিমরা অনেকাংশই কাফিরদেরকে আদর্শ হিসেবে মনে করে এবং বিপজ্জনকভাবে তাদেরকে অনুসরণকেই শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এটাই হল মুসলিমদের psychological enslavement বা মনস্তাত্ত্বিক দাসত্ব।
যে হাতিকে জন্ম নেওয়ার পর থেকে একটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার অভ্যাস করে বড় করা হয়, বড় হওয়ার পরেও তাকে সেই চিকন দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা যায়। তার শক্তিশালী শরীর চাইলেই ঝটকা দিয়ে দড়িটাকে নিমিষে ছিঁড়ে ফেলতে পারে, কিন্তু তা সে করে না। কারণ সে তার দড়ি-বাঁধা অবস্থাকে মেনে নিয়েছে এবং সে জানেও না তার দড়ি ছেঁড়ার ক্ষমতা আছে।
মুসলিমদের অবস্থা এখন হয়েছে এমন। কাফির সভ্যতার চাকচিক্যে আচ্ছন্ন হয়ে তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব, গৌরবময় ইতিহাস ও সম্ভাবনার কথা তাদের মন থেকে বিস্মৃত হয়ে গেছে।

পরিবারের ভাঙন


২০০৮ সালের কথা। বান্দরবানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। এক রিকশাওয়ালার সাথে কথা প্রসঙ্গে সে জানাল সে বিয়ে করেনি, কিন্তু বিয়ে করলে যা মজা পাওয়া যায় সে পেয়েছে।

১৯৬০ সালের দিকে ২০ বছর বয়সী ৬৮ শতাংশ অ্যামেরিকান বিবাহিত ছিল। সমবিবাহ না, আসল বিয়ে। ২০০৮ সালে এই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ২৬ শতাংশ। এখন কত কে জানে।

উপাত্তটা জরুরী। রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমরা ইহুদি খ্রিষ্টানদের অনুসরণ করব প্রতিপদে। সমাজের উপরের দিকে লোকেরা যে বেলেল্লাপনা অনেক আগে করত সেটা সমাজের সাধারণ মানুষেরাও ধরে ফেলেছে। কলগার্ল না হলেও হস্তমৈথুন তো খুব সাধারণ অভ্যাস।

এতে বিয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কীভাবে? বিয়ে দিল্লিকা লাড্ডুর মতো। মজাও আছে, প্যাড়াও আছে। আরেকটা মানুষের সাথে ২৪/৭ মিলিয়ে চলার প্যাড়া। যদি প্যাড়া ছাড়াই মজাগুলোর ব্যবস্থা হয়ে যায় কোন পাগলে বিয়ে করবে?

শুধু মুসলিমরা। কারণ মুসলিমদের কাছে বিয়ে একটা ইবাদাত। নিজেকে পবিত্র রাখার। ভবিষ্যতে আরো মুসলিম পৃথিবীতে এনে পৃথিবী আবাদ করার। মুসলিমরা তাই কুত্তার বাচ্চা পালে না। ক্যারিয়ারকে ঠিক রেখে তার ফাঁক-ফোকরে সন্তান নেয় না। পরিবার ঠিক রাখে-সন্তান জন্ম দেওয়া, ভরণ-পোষণ, লালন-পালন ঠিক রাখে। তার বিশ্বাস ক্যারিয়ার তথা রিযক আল্লাহর কাছ থেকে আসে।

ইসলামের প্রতেকটা জিনিসের মতো বিয়েতেও আল্লাহর সন্তুষ্টির পাশাপাশি দুনিয়াতে ভালাই আছে। ব্যাচেলর বাঁচে শুয়োরের মতো, মরে কুকুরের মতো। তরুণ বয়সের বন্ধুরা মধ্যবয়সে হারিয়ে যায়। যে বুড়ো বা বুড়ি সারাজীবন টাকা কামাই করেছে তার টাকার লোভে কেউ তাকে সংগ দেবে না। লোভী মানুষেরা দরকার হলে মেরে টাকাটা নিয়ে নেবে।

বয়সকালে সংগ আসলে দেয় পরিবার। স্ত্রী বা স্বামী। সন্তান। তস্য সন্তান। অবশ্যই সবকিছুতে ইসলাম শর্ত। নয়ত গন্তব্য বৃদ্ধাশ্রম।

ওপেন সেক্সের এ যুগে দেহের ক্ষুধা মেটানো খুবই সহজ। এ যুগে পরিবারের ভাঙন খুব সহজ। আমার ভালো লাগল না--ধরলাম নিজের পথ। মানিয়ে চলা হারিয়ে গেছে। নুহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার স্ত্রীকে ৯৫০ বছর দাওয়াত দিয়েছিলেন, তালাক দেননি। ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া আল্লাহর কাছে বলেছিলেন জান্নাতে একটা ঘর বানিয়ে দেওয়ার জন্য। শয়তানসম স্বামীকে তিনি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেননি।

আপনার স্বামী কী ফিরাউনের চেয়েও জালিম? আপনার স্ত্রী কী নুহের স্ত্রীর চেয়েও খারাপ? শয়তান এত সহজে আপনার পরিবার ভাঙে কী করে? আপনার সংগীর যদি না পোষায় তাকে আপনি চলে যেতে বললেন, আপনার বুড়ো বয়সের কথা ভাবলেন না? হারাম থেকে কীভাবে বাঁচবেন ভাবলেন না? আপনাকে আপনার বাবা-মা পৃথিবীতে এনেছেন, বড় করেছেন। আপনারও উচিত পৃথিবীতে অন্তত একজনকে রেখে যাওয়া। ঘর ভাঙলে সন্তান আসবে কীভাবে? থাকবে কোথায়?

আপনার স্ত্রী বা স্বামীর ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করুন। সমাজকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করুন। মুত্তাকী হওয়াটা খুব জরুরী। যে আল্লাহকে ভয় করে না আল্লাহ তার ইবাদাত কবুল করেন না। নিকাব বা দাঁড়ি, ইসলামি ফেসবুকিং--কোনো কিছু দিয়েই কিন্তু জাহান্নামের আগুন থেকে পার পাবেন না।

সাধু সাবধান।


collected

আলহামদুলিল্লাহ্

একটা বিড়ালের বাচ্চা অত্যন্ত তুচ্ছ কোন বস্তু নিয়েও ঘন্টার পর ঘন্টা মহা আনন্দে খেলতে পারে৷ কখনো একটু দলা পাকানো কাগজ, কখনো বা ঝুলে থাকা দড়ি, কখনো নিজের লেজটা নিয়ে হুটোপুটি করে খেলে সে, কীভাবে পারে, আল্লাহ্ই ভালো জানেন৷
সামান্য খাবার, একটু ঘুমানোর জায়গা আর গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে এরা খুশি৷ তাও যেমন তেমন খুশি না, মহা খুশি৷
এদের কৃতজ্ঞতার অকৃত্রিম বহি:প্রকাশ মনে করিয়ে দেয় ঐ কথাটা-

আদম সন্তানকে যদি একটা পাহাড় সমান স্বর্ণ দেয়া হয়, তাহলে সে আরেকটা চাইবে৷ একমাত্র কবরের মাটিই পারবে তার ক্ষুধা নিবৃত করতে৷

ও আমার রব, আমার চাহিদার আগুনকে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতার অশ্রু দিয়ে নিবৃত করার মত হৃষ্ট হৃদয় আমাকে দান করুন যেন যৎসামান্য প্রাপ্তিতেও অন্তর চিরে বেরিয়ে আসে 'আলহামদুলিল্লাহ্!'

সংগৃহীত 

দোষ খুজে বেড়ানো > সামাজিক ব্যাধি


অন্যদের যেসব বিষয় লোকচক্ষুর অন্তরালে আছে তা খোঁজাখুঁজি করা এবং কার কি দোষ-ত্রুটি আছে ও কার কি কি দুর্বলতা গোপন আছে পর্দার অন্তরালে উঁকি দিয়ে তা জানার চেষ্টা করা কোন মু’মিনের কাজ নয়। মানুষের ব্যক্তিগত চিঠিপত্র পড়া, দু’জনের কথোপকথন কান পেতে শোনা, প্রতিবেশীর ঘরে উঁকি দেয়া এবং বিভিন্ন পন্থায় অন্যদের পারিবারিক জীবন কিংবা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়াদি খোঁজ করে বেড়ানো একটি বড় অনৈতিক কাজ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোষ অন্বেষণকারীদের সম্পর্কে বলেছেনঃ

“হে সেই সব লোকজন, যারা মুখে ঈমান এনেছো কিন্তু এখনো ঈমান তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলমানদের গোপনীয় বিষয় খুঁজে বেড়িও না। যে ব্যক্তি মুসলমানদের দোষ-ত্রুটি তালাশ করে বেড়াবে আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটির অন্বেষণে লেগে যাবেন। আর আল্লাহর যার ত্রুটি তালাশ করেন তাকে তার ঘরের মধ্যে লাঞ্ছিত করে ছাড়েন।” [আবু দাউদ]

মুয়াবিয়া (রা.) বলেন, আমি নিজে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ

“তুমি যদি মানুষের গোপনীয় বিষয় জানার জন্য পেছনে লাগো। তাদের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে কিংবা অন্তত বিপর্যয়ের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে দেবে।” [আবু দাউদ]

এই প্রসঙ্গে উমর (রা) এর একটি ঘটনা খুবই শিক্ষনীয়। একবার রাতের বেলা তিনি এক ব্যক্তির কণ্ঠ শুনতে পেলেন। সে গান গাচ্ছিল। তাঁর সন্দেহ হলো। তিনি প্রাচীরে উঠে দেখলেন সেখানে মদ প্রস্তুত, তার সাথে এক নারীও। তিনি চিৎকার করে বললেনঃ ওরে আল্লাহর দুশমন, তুই কি মনে করেছিস যে, তুই আল্লাহর নাফরমানী করবি আর তিনি তোর গোপনীয় বিষয় প্রকাশ করবেন না? জবাবে সেই ব্যক্তি বললোঃ আমীরুল মু’মেনীন, তাড়াহুড়ো করবেন না। আমি যদি একটি গোনাহ করে থাকি তবে আপনি তিনটি গোনাহ করেছেন। আল্লাহ দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়াতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু আপনি দোষ-ত্রুটি খুঁজেছেন। আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন, দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করো। কিন্তু আপনি প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছেন। আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, নিজের ঘর ছাড়া অনুমতি না নিয়ে অন্যের ঘরে প্রবেশ করো না। কিন্তু আমার অনুমতি ছাড়াই আপনি আমার ঘরে পদার্পণ করেছেন।” এ জবাব শুনে হযরত উমর (রা.) নিজের ভুল স্বীকার করলেন এবং তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করলেন না। তবে তিনি তার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিলেন যে, সে কল্যাণ ও সৎপথ অনুসরণ করবে। [মাকারিমুল আখলাক]
 

বোধদয়

তার সাথে তখন প্রায় চার বছর পরিচয়।
ভাল ছেলে।
পাচ বেলা নামাজ পড়ে।
......
তখন ও আমি ব্যাপারটা জানতাম না।
....
দীর্ঘ চার বছর পর অন্য আরেক জনের কাছে জানলাম, " সে হাফেজ। কোরানে হাফেজ"
...
আমরা বিস্মিত হলাম। এতদিন ধরে পরিচয় কখনো ঘূর্নাক্ষরে জানতে ও পারলাম না!!!!
......
তাকে বললাম, " কিরে ভাই, এতদিনের সম্পর্ক। কই কখনো তো শুনলাম না তোমার মুখে.....
.........
তার জবাব ছিল আমার জন্য একটা ধাক্কা, বিস্ময় এবং রিয়ালাইজেশন।
.......
....
সে জবাব দিল- ভাই কথা সত্য। আমি হাফেজ। কিন্তু একজন হাফেজের যেভাবে জীবন যাপন করা উচিত আমি সেভাবে পুরোপুরি পারি না। কাজেই আমি হাফেজ পরিচয় দিলে, মানুষের হাফেজ সম্পর্কে ভুল ধারনা হবে।
.....
....
এই বোধদয় এখন আস্তিক, নাস্তিক, শিক্ষিত,অশিক্ষিত...... অনলাইনে, অফলাইনে দরকার। ভীষণ দরকার।

 এখান হতে সংগৃহীত

কিছু কি বোঝা যায়?

নারী সংক্রান্ত যেকোন আলোচনায় অবধারিতভাবে যে কথাটি উঠে আসবে তা হল-“অমুক অমুক বিধান মেনেও তো মেয়েরা তমুক তমুক সমস্যায় পড়ে”। এটা হল শয়তানের শয়তানি, চালবাজের চালবাজি আর ইসলামকে ফিশিং গেম জ্ঞান করে চুজ এন্ড পিকের ফল।
আগেও বলেছি, ইসলামের বিধানগুলো একটা অন্যটার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটাকে বাদ দিয়ে আরেকটা মানলে সমস্যা থেকেই যাবে। মাহরাম ছাড়া নারীরা সফর করবে না এটাই আদেশ, তাই বলে মাহরামকে নিয়ে যেখানে খুশি যাব আর সমস্যায় পড়ব না, তা না। কোনখানে যাওয়া যাবে আর কোনখানে যাওয়া যাবে না সেই ব্যাপারেও ইসলামের কিছু বলার আছে। টিএসসিতে নিগৃহীত হওয়া নারীর সাথে তার স্বামী ছিল, এই তথ্য মাহরাম থাকার প্রয়োজনীয়তা কমায় না। যে মাহরাম আপনাকে নিয়ে বখাটেদের ভিড়ে গমন করায়, সে আবার কীসের প্রটেক্টর? ফ্রি মিক্সিং এর স্বর্গরাজ্যে স্বেচ্ছায় নিজেকে ভাসিয়ে দিলে শুধু স্বামী কেন, বাকি তেরজন মাহরাম সাথে থাকলেও বিপদ এড়ানো যাবে না।
প্রথমত এবং প্রধানত, মেয়েরা ঘরের ভেতর থাকবে এটাই আল্লাহ্‌র হুকুম। শরীয়তসম্মত জরুরতে যখন বেরোবে তখন আপাদপমস্তক আবৃত থাকবে, নো সাজসজ্জা, নো পারফিউম; আর দূরত্ব বেশি হলে মাহরাম সাথে থাকা মাস্ট। এই অবধি বলার পর শয়তান আরেক যুক্তি এনে হাজির করবে-“অথচ মেয়েরা নিজের ঘরেও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, তবে ঘরে থেকে লাভটা কী?”
আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে অন্তরের ধুলো সরান। মেয়েরা ঘরেও হ্যারসড হয় বটে। কাদের দ্বারা হয়? খালাতো-মামাতো-চাচাতো ভাই, দুঃসম্পর্কের চাচা-মামা ইত্যাদি দ্বারা। ইসলাম কিন্তু এও বলে দিয়েছে মেয়ের ঘরে এরা অ্যালাউড না, এরা গায়েরে মাহরাম, এদের সামনে দেখা দেওয়া যাবে না। অথচ কী অবলিলায় একঘরে তাদের রেখে বাপ-ভাই রা বেরিয়ে যায় বাসা থেকে, আর দুর্ঘটনা ঘটলে দোষ নাকি মোল্লাদের। এদের মস্তিষ্কে কী পরিমাণ আচ্ছাদন পড়েছে!
একটার পর একটা বিপদের আলামত দেখেও ইসলামের মধ্যে সমাধান না খুঁজে আল্লাহ্‌র একটার পর হুকুমকে তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। বর্ষবরণের নামে শির্কের মচ্ছব পয়লা বৈশাখে নারী নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদে একই জায়গায় আবার গাদাগাদি করে মেয়ে-পুরুষ জমা হল। যেন আল্লাহ্‌কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দেওয়া-দেখো! তোমার ক্রোধের পরোয়া করি না, আমরা আবার তোমার অবাধ্য হব। এই দেশেই আল্লাহ্‌র রাসূলকে গালি দেওয়া কীটদের পক্ষে ব্যানার ধরতে বেরিয়ে যায় স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। এই দেশেই মঙ্গল খোঁজা হয় হুতুম পেঁচার মধ্যে, দাবিদাওয়ার মাধ্যম হল অগ্নিপূজা, আর কথায় কথায় মোল্লাদের গালি দেওয়া। এক রাতে পাখির মত গুলি করে হুজুর মেরেও সাধ মেটেনি, ভবনধ্বস থেকে ব্যাঙ্ক ডাকাতি পর্যন্ত সব কিছুতেই হুজুরের বাম হাত খুঁজে পেতে হবে, দেশ নাকি জঙ্গিতে গিজগিজ করছে।
আর এই মুহূর্তে যখন আলেমদের দিকনির্দেশনা দেবার কথা, তখন তাঁরা বলেন অপেক্ষাকৃত কম খারাপ প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে, ভোট না দিয়ে বসে থাকা নাকি নাজায়েয।
বারবার ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। কিছু কি বোঝা যায়?
Collected From
Brother
Jubaer Hossain

নিয়ামত

"অবশ্যই তারা ভীষন অপরাধ করেছে যারা দুনিয়ায় ঈমানদারদের সাথে বিদ্রুপ করত" [সুরা আল মুতাফফিফিন:২৯]
"সেখানে সে কোনো বাজে কথা শুনবে না" [সুরা আল গাশিয়া:১১]
সুবহানআল্লাহ, মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনের বিভিন্ন স্হানে জান্নাতের রক্ষিত বিভিন্ন পুরস্কারের বর্ণনা করেছেন।
সুরা গশিয়ায় -প্রবাহমান ঝরণা, উচু উচু আসন, পানপাত্র, সারিসারি গালিচা রেশমের বালিশ, উৎকৃষ্ট কার্পেটের বিছানা উল্লেখ করেছন।
তবে এসব কিছুর আগে যে বিষয়ের কথা বলা হয়েছে তা হল সেখানে কোন বাজে কথা আমরা শুনবনা।
অর্থাৎ খোটা কথা, গালাগালি, টিটকারিমূলক কথা, যা দ্বীনের পথে চলা শুরু করার পর হয়তো কম বেশি প্রায়ই আমাদের শুনতে হয় বা হয়েছে। যা আমাদের মানসিক কষ্টের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট।
এমন কষ্টকর মুহুর্তে কুরআনের আয়াতগুলো আমাদের স্মরণে আনতে হবে ইনশাআল্লাহ। বুঝাতে হবে যে আমার আল্লাহ জানে আমার মানসিক কষ্টের কথা, এমন কষ্টে আমি একা পরিনি। এমন কষ্ট অনুভব করেছিলেন সাহাবারাও, আলেমরাও, আবেদরাও। যারাই দুনিয়ার উপর আল্লাহকে ভালবেসেছে, দুনিয়া প্রেমীরা তাদেরই নানান অসার কথা, কটু বাক্যের দ্বারা তীরের মত বিদ্ধ করেছে। তাই তো জান্নাতের অশেষ নিয়ামতের মাঝে যেই কিছু সংখ্যক নিয়ামতের বর্ণনা আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন এটা তার মাঝে অন্যতম একটি নিয়ামত।
আল্লাহ আমাদেরকে তার অশেষ নিয়ামত উপলব্ধি করার তাউফিক দিক, ধৈর্য্য দিক এবং আমাদের অন্তরকে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারি অন্তর হিসেবে কবুল করে নিন। আমিন।
Collected From
A Sister

মহানবি <সা> এর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসার নিদর্শন



মহানবি <সা> এর জীবনধারা সকল মানুষের জন্য উজ্জ্বলতম আদর্শ। তাঁর অনুসরনই আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভ করার একমাত্র মাধ্যম এবং ইহকালিন কল্যাণ ও পরকালিন নাজাত লাভের একমাত্র উপায়।

নবি <সা> এর প্রতি কতটুকু ভালবাসা থাকা দরকার সেই বিষয়ে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে বলেছেন,

আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহ্‌কে মহব্বত করতে চাও, তাহলে আমাকে ( নবি <সা:> এর) অনুসরন কর। আল্লাহ তোমাদের কে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সুরা আল ইমরান - ৩১
রাসুল <সা> বলেছেন,

যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে অন্যমনস্ক হল বা আমার সুন্নতকে অপছন্দ করল, তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। (বুখারি- মুসলিম)
এ থেকে বোঝা যায় যে, রাসুল <সা> এর প্রতি ভালোবাসার প্রকৃত নিদর্শন ,তাঁর সুন্নতের অনুসরনের মধ্যে নিহিত। কোন ব্যক্তি নবি <সা> এর মহব্বতের দাবিদার, কিন্তু সুন্নতের অনুসরনে ঘাটতি, তবে সে তার দাবিতে সত্যনিষ্ঠ নয়।

মহা নবি <সা> এর উচ্চ মর্যাদা এবং তাঁর অবমাননায় আমাদের করনীয় :
আল্লাহ পাক বলেন,

আমি আপনার আলোচনাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছি। সুরা ইনশিরাহ- ০২
অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ পাক নবি <সা> কে সুউচ্চ মর্যাদা দান করেছেন।

এবং যারা নবি <সা> এর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে, তাদের প্রতি আজাবের কথা  জানিয়ে পবিত্র কোরআনে বলেছেন,

তোমাদের মধ্যে যারা ইমানদার, তাদের জন্য রাসুল <সা> রহমত স্বরূপ, আর যারা আল্লাহর রাসুলের প্রতি কুৎসা রটনা করে, তাদের জন্য রয়েছে বেদনা দায়ক আজাব। সুরা তউবা - ৬১

লক্ষণীয় :
বর্তমানে বিশ্বব্যাপি নব্য ক্রুসেড  শুরু হয়েছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে মুসলমানদের বিশ্বাসে আঘাত করা।  এর ধারাবাহিকতায় অবিশ্বাসীরা নানা ভাবে নবি <সা> এর নামে কুৎসা ছড়াচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক

ভাবে মুসলমানদের মধ্যেও কিছু লোক শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে তাদের সাথে যুক্ত হয়ছে।

 আল্লাহ পাক বলেছেন,
আপনি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদী ও মুশরেকদেরকে পাবেন। সুরা মায়িদা- ৮২

এজন্য তাদের উস্কানিতে উত্তেজিত না হয়ে, সর্বোচ্চ সংযম, উপযুক্ত ও কল্যাণমুখি  কর্মকৌশল দ্বারা তাদের চক্রান্তের মোকাবেলা করতে হবে।
নবি <সা> এর  সুন্নতের অনুসরন দ্বারা আমাদের জীবন সাজাতে হবে।  আল্লাহ  পাক আমাদের তৌফিক দান করেন। আমিন।

আমরা কতই না অকৃতজ্ঞ!!

গতকাল যখন সবাই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ধুন্ধুমার খেলা দেখছিল ঠিক তখন আমি অন্যরকম একটি ঘটনার মুখোমুখি হলাম। নিজের অনেক না পাওয়া নিয়ে একটু হলেও যে আক্ষেপ ছিল তা মনেহয় কেটে গেল এই ঘটনা দেখে।

আমার একজন ক্লায়েন্ট যিনি ইউরোপ প্রবাসী সম্প্রতি দেশে এসেছেন। উনার কাজ করতে গিয়ে বেশ ঘনিষ্ঠতা হয়ে যায়। ভদ্রলোক বেশ নম্র স্বভাবের। উনাকে দেখি সবসময় শ্বাসের সমস্যায় থাকেন। গতকাল খবর পেলাম উনার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। দ্রুত গেলাম আর দেখলাম খুব বেশি সমস্যা না তাই বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে।

যাইহোক, বন্ধুত্বের খাতিরে উনার সঙ্গ দেয়াটা প্রয়োজন মনে করলাম আর প্রথমবারের মত উনার বাসায় গেলাম। বেশ ধনী লোক তাই অনেক বড় বাড়ি আর দেখার মত ডেকোরেশন। কিন্তু ঐ পর্যন্তই, উনার খাদ্য তালিকা হল পানি, মুড়ি আর কয়েকটি নোনতা বিস্কুট। ঘুমানোর সময় নাকে কি যেন একটা মেশিন লাগিয়ে রাখেন যাতে নিঃশ্বাস বন্ধ না হয়। অথচ উনার বয়স খুব বেশি না।

এক ছেলে এক মেয়ে, ছেলে এমন জায়গায় পড়তে চায় যেখানে বাবা দিতে রাজি নয়। বুঝা গেল এটা নিয়ে বিস্তর সমস্যা হয় বাপ বেটায়। উনি অসুস্থ কিন্তু উনার স্ত্রী কি এক কাজে ঘরের বাইরে যেখানে সাধারণ সর্দি জ্বর হলেও আমাদের ঘরের মানুষেরা সহজে পাশ থেকে নড়ে না। আমি থাকা অবস্থায় নিন্ম মাধ্যমিক শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ের শিক্ষক এল আর তার গেমস আসক্তি দূর করতে ট্যাব কেড়ে নিল। শিক্ষক যাওয়ার পর মেয়ের প্রচণ্ড রাগ, চিৎকার, গালাগালি একসময় উম্মাদের মত আচরণে রূপ নিল।

সর্বশেষ কথা হল, উনি এতকিছুর মাঝেও আফসুস করছেন ব্যাংক লোণ নিয়ে যা উনি বাড়ি, ব্যবসা এসব কারণে নিয়েছেন।

আমরা মানুষকে কতটুকু দেখি আর কি ধারণা করি। আল্লাহ এই লোকের রিযক কেড়ে নিয়েছেন, শান্তি কেড়ে নিয়েছেন, সন্তানের আনুগত্য কেড়ে নিয়েছেন উপরি হিসাবে ঋণের টেনশন চাপিয়ে দিয়েছেন।

চলে আসার সময় কেবল মনে হচ্ছিল, কত ধনী আল্লাহ আমাকে করেছেন। পারিবারিক প্রশান্তি দিয়েছেন, আত্মীয়দের ভালবাসা দিয়েছেন, অনেক দ্বীনী ভাই দিয়েছেন যাদের মাঝে সমবয়সী কিছু অসাধারণ বন্ধু আছে, দুনিয়াকে বুঝার মত সুস্থ মস্তিষ্ক দিয়েছেন, খাওয়ার রুচি দিয়েছেন, এখনও বেশ সুস্থ শরীর দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ!!!

আমরা কতই অকৃতজ্ঞ, আমরা তবু আরও কিছু চাই। অথচ অনেক কিছু থেকেও কিছু মানুষ কত গরীব, কত অসহায়!! আল্লাহ উনাকে সাহায্য করুন, আমাদেরকেও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা সঠিক রাস্তায় প্রকাশ করার তৌফিক দিন।

প্রতিটি মানুষ এর জোড়া আল্লাহ আগে থেকে বানিয়েছে …।আয়াতটা কি সত্যি ?

প্রশ্নঃ আমার একটিপ্রশ্ন আছে –ইসলাম এ তো প্রতিটি মানুষ এর জোড়া আল্লাহ আগে থেকে বানিয়েছে …।আয়াতটা কি সত্যি ???? তাহলে যে আজকাল অনেক ধার্মিক ছেলে মেয়ে ও প্রেম এর সম্পর্কে আছে ।। তাহলে কি আয়াতটা ভুল।??? আমি যদি আল্লাহ র কাছে আমার ভালবাসার মানুস এর জন্য দুয়া করি তাহলে।।??? আমি কি ভাবে আল্লাহ র কাছে দুয়া করব।।??? এই সম্পর্কে ইসলাম কি বলে।।??? প্রেম ভালবাসা কি খারাপ।।??? প্লিজ আমাকে জানাবেন।

উত্তরঃ
আসসালামুয়ালাইকুম

আপনার প্রশ্ন পড়ে মনে হচ্ছে ইসলাম নিয়ে আপনি খুবই ভয়ংকর ধারণা পোষণ করছেন। আপনার মন সন্দেহবাতিকগ্রস্থ। আমি আপনাকে স্পষ্ট করে কিছু কথা বললাম। আশা করি আপনি বুঝতে পারবেন। যদিও আপনার প্রশ্নটি নারী পুরুষ সম্পর্ক নিয়ে কিন্তু আমি আপনাকে সতর্ক করে দিতে চাই কারন আপনি কুরানের আয়াত নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন। একজন মুসলিম সে যদি মনে করে কুরানের কোন আয়াত ভুল কিংবা তার কোন যথার্থতা নেই তাহলে সে আর মুসলিম থাকতে পারেনা কেননা আল্লাহ নিজেই কুরানের সত্যতা দিয়েছেন…

“(এই) সেই মহাগ্রন্থ আল কুরান এতে কোন সন্দেহ নেই, যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে এই কিতাব তাদের জন্যই পথপ্রদর্শক’। [বাকারাঃ২]

আর তাই কেউ যদি কুরানের আয়াত কে অস্বীকার করে তাহলে সে আল্লাহকেই অস্বীকার করে, তার মানে সে কাফির! আল্লাহ আমাদেরকে এই ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা করুন… আমীন!

এবার আপনার মুল প্রশ্নে আসি। আপনার প্রশ্নটাকে কয়েকটা অংশে ভাগ করলাম

• প্রত্যেক মানুষের জোড়া কি নির্ধারিত?
• প্রেম করা মানে সহজ কথায় বিয়ের আগে নারী পুরুষ অবৈধ সম্পর্ক কি হারাম?
• প্রেম করা অবৈধ হলে অনেক ধার্মিক ছেলে মেয়ে প্রেম করে কেন?
• পছন্দের মানুষের জন্য দোয়া করা যাবে কি?

জোড়া বিষয়ে কুরানের স্পষ্ট আয়াত আছে।একটা না, কয়েকটা…

“আমি প্রতিটি জিনিসই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে করে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর”। [আয যারিয়াতঃ ৪৯]

“পবিত্র নিখুঁত সেই মহান স্রস্টা, যিনি জুড়ি সৃষ্টি করেছেন সবকিছুর__উদ্ভিদের, স্বয়ং তাদের (মানুষের) এবং এমন সব কিছুরও যাদের তারা জানেনা”। (ইয়াসিনঃ ৩৬]

“হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে”। [আল হুজুরাতঃ১৩]

“হে মানুষ! তোমরা সতর্ক হও তোমাদের সেই মহান প্রভুর ব্যাপারে, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একজন মাত্র ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে, আর তাদের থেকেই সৃষ্টি করেছেন বিপুল সংখ্যায় পুরুষ আর নারী” [সূরা নিসাঃ ১]

এসব আয়াত থেকে একথা দিবালোকের মত পরিষ্কার যে মহান আল্লাহ তায়ালা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি মানুষকে তার জোড়া বানিয়েই এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এমনকি উদ্ভিদও সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। সুতরাং এই বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই যে আল্লাহ আমাদের জোড়ায় জোড়ায় তৈরি করেছেন কিনা!

# ইসলামে নারী পুরুষের সম্পর্কের পবিত্র আর বৈধ পন্থা হল বিয়ে। এর বাইরে অর্থাৎ “বিয়ের আগে নারী পুরুষের সম্পর্ক, বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড, লিভ টুগেদার এসব সম্পূর্ণ হারাম।

এটা শুধু আপনি নয়, নামাজ রোজা করা মুসলিম ছেলেমেয়েদেরও মেনে নিতে কষ্ট হয়! তার কথা তো আপনিই বললেন যে আপনি অনেক ধার্মিক ছেলেমেয়েকেও রিলেশন থাকতে দেখেছেন। আমরা যারা ইসলামটাকে একটা পরিপূর্ণ জীবনব্যাবস্থা হিসেবে মেনে নিয়ে তা জীবনে প্রয়োগ করে দেখাতে পারিনা তার অন্যতম কারন আমরা ইসলামটাকে দেখি একটা হালাল হারামের লিস্ট হিসেবে। আমরা যখন আমাদের প্রবৃত্তির পূজা করতে যাই, যখন সেখানে ইসলামের বাধা আসে তখনই আগে পিছে চিন্তা না করে আমাদের মনে প্রশ্ন আসে why?? Why this is haraam in islam??
আপনি নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুনতো এই প্রেম করা নিয়ে কোন প্রশ্ন কি ছোটবেলা থেকে এসেছে? না! আসেনি! আমরা সবাই একটা নির্দিষ্ট বয়স পার করি, যে বয়সটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একই সাথে খুবই ভয়ংকর! যে বয়সটাতে আবেগ, ভালোলাগা, সবকিছু পজিটিভ ভাবা, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সীমাহীন আকর্ষণ সবকিছু আমাদের চারপাশে গিজগিজ করে! আর এই বয়সের সরলতা আর ভালোলাগার সুযোগ নেই শয়তান আর তা কাজে রুপান্তর করে দেখায় কাফির আর ইসলামের বিরুদ্ধ শক্তি যারা আল্লাহর নয় নিজেদের প্রবৃত্তির পূজা করে! আর তাই আজকে সমাজে স্কুলে প্রেম, কলেজে প্রেম, ভার্সিটিতে প্রেম, নাটক- সিনেমা- গল্প উপন্যাসে প্রেম! আর এসব দেখে শুধু আপনি নয় অনেকের মনে সেই একই প্রশ্ন why?? Why প্রেম is haraam in islam?? কারন আল্লাহ মহা পরিকল্পনাকারী! তিনি তার সৃষ্টির জন্য মঙ্গলজনক পন্থাই পরিকল্পনা করেছেন! তিনি মানুষের শরীর আর আত্মিক ক্ষতির আসংখা থেকে মানুষকে মুক্ত থাকার ব্যবস্থা করেছেন। অতি সসীম এই মস্তিস্ক নিয়ে আমরা কখনও অসীম মহান আল্লাহর পরিকল্পনা বুঝতে পারবনা! কিন্তু আমরা এই দুনিয়াতেই তার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আর আদেশ অমান্যকারিদের পরিণতি দেখেছি, দেখছি, দেখব ইনশাআল্লাহ!

আমরা একটা হারামকে শুধু হারাম হিসেবে দেখি কিন্তু একটা হারাম শুধু হারাম নয় এটা অনেকগুলো পথ যে পথে মানুষের অপকার আছে সেই পথগুলোও বন্ধ করে দেয়! ইসলামে মদ হারাম। কিন্তু মদ তো মানুষ ভাল লাগে বলেই খায়!! তাহলে হারাম হবে কেন?? এটা বোঝা আমার আপনার কাছে দুরহ তো বটেই হজরত ওমর (রাঃ) ও বুঝতে পারেননি! তার প্রার্থনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তিনবার আয়াত নাযিল করার পর হজরত ওমর (রাঃ) বুঝতে পারেন কেন মদ হারাম হল! আর আমরা এখন জানতে পেরেছি বর্তমানে বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ…অ্যালকোহল! মদপান! যেটা আল্লাহ ১৪০০ বছর আগেই হারাম করেছেন! ইসলামে এরকম অনেকগুলো হারামের একটি হল বিয়ে বাদ দিয়ে কিংবা বিয়ের আগে নারী পুরুষ প্রেমের সম্পর্ক! আর বরাবরের মতই ইসলামকে অন্তরে ধারণ না করে পাশ্চাত্য আর কুফরি সিস্টেমর আধুনিকতা অন্তরে ধারণ করা আজকের তরুণ তরুণী সেই হারামের ধার দারে না! অনেকের কাছে এই হারামের জন্য ইসলাম হয়ে যায় সেকেলে! তার পরিণতিও হাতে নাতে!! পেতে অবৈধ বাচ্চা নিয়ে হাসপাতালে গর্ভপাত, রিকশা- সি এন জি তে মূল্যবোধ নৈতিকতা বিসর্জন, বয়ফ্রেন্ডের লালসার শিকার হয়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে গণধর্ষণ, বাজারে সেক্স ভিডিও, নিজের অসম্মান, পরিবারের অসম্মান আর সবশেষে এত এত অসম্মান সইতে না পারে গলায় ফাঁস!

না না না!! হ্যাঁ আমি জানি! শুধু আপনি না সবাই এমনকি যারা এই পরিণতিগুলো বরণ করেছে তারাও বলেছিল, “ না না আমরা তো সত্যই ভালোবাসি!! আমরা এসব করব না!”। সেজন্যই প্রথমে বলেছিলাম ইসলামে কোন একটা হারাম শুধু হারাম নয় এটা অনেকগুলো ক্ষতির পথও রুদ্ধ করে। যে পরিণতিগুলোর কথা বললাম নিজের প্রতি সৎ থেকে বলুনতো এই পথগুলো কে উন্মুক্ত করেছে?? সহজ উত্তর___ নারীপুরুষ অবৈধ সম্পর্ক যেটা ইসলাম হারাম করার পরও তারা মানতে চায়না! ইসলাম সেই জীবন ব্যবস্থা যা মানুষকে নৈতিকতা আর মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়! মানুষকে নিজের শরীর আর মনের নিরাপত্তা দান করে! আর তাই ইসলামে নিজের শরীর আর মনের নিরাপত্তা এসেছে পবিত্র বিয়ের মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন…
 
“আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের (মানব জাতির) মধ্য থেকেই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য (বিপরীত লিঙ্গের) জুড়ি, যাতে করে তোমরা বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো! এ উদ্দেশ্যে তিনি তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন হৃদ্যতা- বন্ধুতা আর দয়া- অনুগ্রহ অনুকম্পা। এতে রয়েছে বিপুল নিদর্শন চিন্তাশীল লোকদের জন্য”। [সূরা আর রুমঃ ২১]

সুবাহানাল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন বিবাহের মাধ্যমেই নারী পুরুষ পাবে প্রশান্তি, সৃষ্টি হবে হৃদ্যতা-বন্ধুতা, দয়া অনুগ্রহ অনুকম্পা! আর এটা চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ! কিন্তু আমরা কেউ চিন্তাশীল নই! আমরা মানুষের হারাম সম্পর্ক দেখে স্বপ্নের বীজ বুনি! হলিউড- বলিউড তারকাদের “রিলেশনশিপ উইথ অমুক” দেখে ভাবি হ্যাঁ “আমারও চাই”!! সেলিনা-বিবার, এঞ্জলিনা- ব্র্যাড পিট লিভ টুগেদার দেখে ভাবি, “আহা! তারা কতই না সুখে আছে! কেন যে ইসলামে এসব হারাম করল বুঝি না!!” এসব আধুনিকতার art of living এর রঙিন পর্দাটাই আমরা শুধু দেখি! পর্দার আড়ালের কঙ্কালসার, কুড়ে কুড়ে ধ্বংস হওয়া জীবনবোধের গল্প আমরা কেউ জানিনা! আসুন কয়েকটা গল্প শুনি……

শুধু আমেরিকাতেই একজন পুরুষ বিয়ের আগে গড়ে ৮ জন নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ায়! তাদের সবার সাথেই অবাধ যৌনসম্পর্ক থাকে। এরপর সে একটা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারে। এবং বিয়ের পরও দুই তিনটা অবৈধ যৌনসম্পর্ক থাকে একজন আমেরিকানের। ভারতের একটি পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে (৮-১০ বছর আগের, জাকির নায়িকের লেকচার থেকে) শুধু মুম্বাই শহরেই ৫০% মেয়ে স্কুল জীবন শেষ করার আগেই তাদের কুমারিত্ত হারায়! এখন ২০১৩!! সেই % টা কি এখন ১০০%?? কিংবা তার কাছাকাছি??? আর যেসব তারকার প্রেমের সম্পর্ক দেখে আমাদের আবেগ উদ্বেলিত হয়ে উঠে তাদের কিছু গল্পও শুনি……

বোন! হিসাবটা সোজা! মহান আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্ধারণ করেছেন সেখানেই কল্যাণ আর প্রশান্তি লুকায়িত আছে! আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা অমান্য করায় আছে এই দুনিয়ায় ক্ষতি, লাঞ্ছনা, অসম্মান আর আখিরাতেও কঠিন শাস্তি! এই অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক, মোবাইল ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা, একসাথে ঘুরতে যাওয়া, long drive ( মতান্তরে sex drive) অন্ধকার কফি শপ!! অতি সহজ ভালোলাগা থেকে শুরু করে দুইটা শরীর কাছাকাছি আসলে দুর্বল চিত্তের অতি স্বাভাবিক শরীরের চাহিদা চরিতার্থ করার প্রয়াস আসবেই। আপনি বা আমরা কেউই “innocent intention” এর দোহাই দিয়ে এই চাহিদাকে হালকা করতে পারবনা! একটি হারাম রিলেশন যেখানে আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ, প্রশান্তির চেয়ে বেশী থাকে সন্দেহ, শরীরকেন্দ্রিক ভোগবাদী চিন্তা, মানসিক উত্তেজনা আর ধীরে ধীরে আত্মিক অবক্ষয়! আমরা আমাদের চারপাশে এগুলোই দেখে এসেছি, এখনো দেখছি আর ভবিষ্যতেও দেখব! আর তাই ইসলাম দুইজন নারী পুরুষকে বিয়ের পবিত্র বন্ধনে বেঁধে তাদের শারীরিক, আত্মিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে! একজন স্ত্রী, একজন স্বামী একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, আস্থা, বিশ্বাসে যে সম্পর্ক তৈরি করে সেখানেই আছে যথার্থ tranquility!! একজন গার্লফ্রেন্ড তার বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে যতটা অনিশ্চিয়তা নিয়ে ভাবে, “ও কি সত্যিই আমাকে ভালবাসে??” একজন স্ত্রী তার স্বামীর হাত ধরে ততটাই আস্থা আর বিশ্বাসের সাথে ভাবতে পারে, “He is mine”!! একজন গার্লফ্রেন্ড যতটা অনিশ্চয়তা, ভয় আর আত্মসম্মানের হুমকি নিয়ে একজন বয়ফ্রেন্ডের সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের দিকে যায় , একজন স্ত্রী ঠিক ততটাই আস্থা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভাবতে পারে তার স্বামী তার পবিত্রতার সঙ্গী, তার স্বামী তার অনাগত সন্তানের বাবা!!

ইসলাম এভাবেই সুন্দর! এভাবেই পবিত্র! এভাবেই শরীর মনের ক্ষতি রোধ করে! এভাবেই দুইজন নারী পুরুষকে একেবারে আপন করে দেয়! তার জন্য কোন হারাম সম্পর্ক দরকার পড়েনা! মিথ্যার মায়ায় সান্ত্বনা খোঁজার দরকার পড়েনা!!

# আপনার এই প্রশ্নটা আমাদের সবার জন্যই লজ্জার! কিছু ইসলামের লেভেলধারী কুপ্রবৃত্তির পূজারির কার্যকলাপের কারণে প্রতিনিয়ত ইসলামকে অপমানিত হয়ে হয়! একটা কথা মনে রাখবেন, মানুষকে দিয়ে ইসলামকে বিচার করবেন না__ ইসলামকে দিয়ে মানুষকে বিচার করবেন! আমার এতক্ষণের আলোচনা থেকে নিশ্চয় আপনি এটা বুঝতে পেরেছেন যে আপনি যাদের দেখেছেন তারা নিষিদ্ধ কাজ করছে। ইসলাম নিয়ে জানার দরকার পড়েনা আমরা স্কুলে বিদায় হজ্জের ভাষণ পড়েছি! যেখানে রাসুল (সাঃ) বলে গিয়েছেন, “আমি তোমাদের কাছে দুইটা জিনিস রেখে যাচ্ছি, কুরান আর সুন্নাহ (রাসুল (সাঃ) এর হাদিস)”! সুতরাং ইসলামে কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক আমরা তা কুরান সুন্নাহ থেকে শিখব কোন মানুষকে দেখে নয় হোক তারা নিজেদের পরেহেজগার বলে জাহির করে!

# আপনার এই প্রশ্নটা খুবই interesting! আমরা কি পছন্দের মানুষের জন্য দোয়া করতে পারব?? অবশ্যই আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারবেন যেন আপনার জোড়ার সাথে বিয়ের পবিত্রতায় আবদ্ধ হতে পারেন! আপনার জন্য নির্ধারিত মানুষটি যেন সৎ, তাকওয়াবান হয়! সে যেন আপনার হৃদয়ে প্রশান্তির বার্তা নিয়ে আসে! But it doesn’t mean that আপনি একটার পর একটা সম্পর্কে জড়াবেন আর প্রত্যেকজনকে আপনার জোড়া ভাববেন!! নিজের নফসকে সংযত করে , নিজের প্রতি, আল্লাহর প্রতি সৎ থেকে আপনি অপেক্ষা করবেন! আপনি যদি নিজের সততা বজায় রাখতে পারেন তাহলে আশা করা যায় আপনার জোড়াও সংযম অবলম্বন করে আপনার অপেক্ষায় থাকবে। আপনি সেই পুরুষটির জন্য সততার ভিত্তিতে প্রস্তুতি নেন ইনশাআল্লাহ মানুষটিকে আল্লাহই আপনার কাছে পৌঁছে দেবেন!

Allah has already written the name of your spouse for you. What you need to work on is your relationship with ALLAH (swt). He will send him to you when you are ready. It is only matter of time.

আর যদি চান আপনার মানুষটি সৎ আর ভাল হবে তাহলে আপনাকেও তা অর্জন করতে হবে। কারন আল্লাহ স্পষ্ট করেই বলেছেন…

“(জেনে রেখো) নষ্ট নারীরা হচ্ছে নষ্ট পুরুষের জন্য, নষ্ট পুরুষরা হচ্ছে নষ্ট নারীদের জন্য, (আবার) ভাল নারীরা হচ্ছে ভাল পুরুষদের জন্য, ভাল পুরুষরা হচ্ছে ভাল নারীদের জন্য, (মোনাফেক) লোকেরা (এদের সম্পর্কে) যা কিছু বলে তারা তা থেকে পাক পবিত্র; (আখিরাতে) এদের জন্যই রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রেযেক”। [আন নুরঃ ২৬]

অনেক কথা বলে ফেলেছি। অনেক কথাই আপনি জানতে চাননি আমি নিজ থেকেই বলেছি একটা পরিপূর্ণ সমাধানমূলক উত্তর দেওয়ার জন্য। হয়তো আপনি আমার সব কথা বুঝতে পেরেছেন, হয়তো বুঝতে পারেননি, হয়তো একদিন বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ যেন আমাদেরকে ইসলামের সমাধান মেনে নেওয়ার আর এতে আস্থা রেখে হেফাজতে থাকার তৌফিক দিন। আমরা যেন সাময়িক সুখ আর আবেগের কাছে এই দুনিয়া আর আখিরাতের যথার্থ প্রশান্তি নষ্ট না করি!
 

স্বামীর সংসার ও শ্বশুরবাড়ি

ইসলামে নারীকে কখনই স্বামীর সংসারে তাঁর শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের সেবা করতে বাধ্য করা হয় নি। এটা তার ওপর ফরজ নয়। তাই স্ত্রীকে শ্বশুর শাশুড়ি বা ননদের সেবা করতেই হবে, এমন শর্তারোপ করা দ্বীনদারি নয়।
শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ হাফিযাহুল্লাহ বলেছেন এটা একজন নারীর জন্য মুস্তাহাব। এটা এক প্রকার মানবতা প্রদর্শন আর অন্যের চোখে নিজের সম্মান বাড়িয়ে তোলা। একই মত আরো অনেক 'উলামাই দিয়েছেন।
তাই স্বামীর উচিৎ হবে না স্ত্রীকে তার পিতা মাতার সেবা করতে বাধ্য করা। অন্যদিকে স্ত্রীর উচিৎ স্বামীর প্রতি ও তার পিতামাতার প্রতি ইনসানিয়াত প্রদর্শন করা। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা। অনেক ক্ষেত্রে সুপ্ত নারীবাদের আবেগে অনেকেই মনে করেন স্বামীর গৃহে সেবা না করাটাই হল ইসলামিক। অনেকেই ইদানিং বলে বেড়ান যে স্বামীগৃহের সেবা করা একটা দাসত্ব, বাঙালি নারীদের "ধর্মের নামে" এইসব করিয়ে অত্যাচার করা হচ্ছে, সঠিক ইসলাম হল এইসব না করা- এই ধরণের কথাবার্তা সন্দেহাতীতভাবে ফাঁকা বুলি।
একটি চমৎকার হাদীস রয়েছে বুখারীর 'ভরন পোষণ' বাব এর ৫৪৬৭ নাম্বার হাদীসে।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাতটি বা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) নয়টি মেয়ে রেখে আমার পিতা ইন্তিকাল করেন। তারপর আমি এক বিধবা মহিলাকে বিয়ে করি। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ জাবির! তুমি বিয়ে করেছ? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি তারপর জিজ্ঞেস করলেনঃ কুমারী বিয়ে করেছ না বিধবা? আমি বললামঃ বিধবা! তিনি বললেনঃ কুমারী করলে না কেন? তুমি তার সাথে খেলতে, সেও তোমার সাথে খেলত। তুমিও তাকে হাসাতে, সেও তোমাকে হাসাতো।
[জাবির (রাঃ) বলেনঃ] আমি তাঁকে বললাম, অনেকগুলো কন্যা সন্তান রেখে ‘আবদুল্লাহ্‌ (আমার পিতা) মারা গেছেন, তাই আমি ওদের-ই মত কুমারী মেয়ে বিয়ে করা পছন্দ করিনি। আমি এমন মেয়েকে বিয়ে করলাম, যে তাদের দেখাশোনা করতে পারে তাদের ভুলত্রুটি শুধরাতে পারে। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তোমাকে বরকত দিন অথবা বললেনঃ উত্তম (খাইর)!
========================================================
আল্লাহ আমাদের মধ্যমপন্থা অনুসরণের তাউফীক দিন!
collected

নিজে হাতে আল্লাহর রহমত থেকে নিজেকে বঞ্চিত করছেন না তো??

বর্তমান সময়ের অন্যতম একটি বড় ফিতনার নাম হচ্ছে Wedding Photography. এটা যে কত বড় ফিতনা এটা যে প্রত্যক্ষ করে নাই সে কখনো চিন্তাও করতে পারবেনা। এক কথায় বলতে গেলে- লাক্স চ্যানেল আই মডেলদের নিয়ে ফটোগ্রাফাররা যেভাবে খেলে ঠিক সেইভাবে চার পাঁচ জন ফটোগ্রাফার নববধূকে নিয়ে খেলে। কখনো এতো কাছ থেকে ফোকাস করে যে.....................কিছু কিছু বিয়েতে নাকি এমনও হয় ফটোগ্রাফার নববধূর গায়ে হাত দিয়ে কাপড় ঠিক করে দেয়, দাঁড়ানোর ভঙ্গি ঠিক করে দেয়। নায়ুজুবিল্লাহ।
যে মেয়েটার ইসলামের বিষয়ে তেমন জ্ঞান নেই কিন্তু সাধারণত পর্দা করার চেষ্টা করে তাঁকেও তার বিয়ের দিন চার পাঁচটা বেগানা ফটোগ্রাফারের সামনে মডেল হিসেবে ঠেলে দেওয়া হয়। কাজটা কখনো তার ইচ্ছায় হয় আবার কখনো অনিচ্ছায়।
বিয়ের মতো একটি পবিত্র বন্ধন এবং ইবাদতে অশ্লীলতার এই জঘন্য পর্যায় কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই এখনই আমাদেরকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে, করতে হবে, নিজের পরিবার থেকেই এই সচেতনতা শুরু করতে হবে।
আর আপুদেরকে বলি, আপনি কি চান বিয়ের পর আপনার সংসার জীবন সুখী হোক?? জানি বলবেন, কে না চায়??
যদি চান তাহলে এটা কিভাবে আশা করেন, যে বন্ধনের, ইবাদতের শুরুই হচ্ছে অশ্লীলতা দিয়ে, আল্লাহর চরম অবাধ্যতা দিয়ে সেখানে আল্লাহর রহমত থাকবে, দয়া থাকবে। আর আল্লাহর রহমত ছাড়া, দয়া ছাড়া সংসার জীবনে সুখী হওয়ার এই অবাস্তব স্বপ্ন কিভাবে দেখেন???
তাই বিয়ের দিন নিজেকে মডেল হিসেবে এইসব বেগানা ফটোগ্রাফারদের সামনে নিজেকে সপে দেওয়ার আগে একটি বার চিন্তা করুন, নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারতেছেন না তো??, নিজে হাতে আল্লাহর রহমত থেকে নিজেকে বঞ্চিত করছেন না তো??

আমরা অমুসলিমদেরকে নবীজির দেখানো পন্থায় ইসলামের দিকে আহবান করবো

সুবহান আল্লাহ! আজকে নাকি "হিজাব দিবস"
অনেক মুসলিম বলে, "এভাবে ইসলাম নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে ক্ষতি কি? অমুসলিমেরা হিজাব সম্পর্কে জানবে, আগ্রহী হবে। একদিন যদি তারা হিজাব করে, তাহলে মন্দ কী?"
ওয়াল্লাহি, যদি এই "হিজাব ডে" আমাদের দ্বীনের প্রচার-প্রসারের জন্য "উত্তম" কিছু হতো, তাহলে অবশ্যই নবীজি ﷺ সেটার ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু নবীজি কি তা করেছিলেন? আবু বকর আর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুম হিজাব দিবস করেছেন? সাহাবীরা কখনও হিজাব দিবস, ইসলাম দিবস করেছেন?
সাহাবীরা ছিলেন হাতে-গোণা কজন মুসলিম। সারা বিশ্বে অমুসলিমদের ছড়াছড়ি। কোথায় তারা তো ইসলাম শেখানোর জন্য হিজাব-ডের মতো কোন দিবস আবিষ্কার করে বসেন নি।
ইসলামের শ্রেষ্ঠ জেনারেশন হলো সাহাবীদের জেনারেশন। তাদের ঈমান ছিল সবচাইতে বেশি, তাদের জ্ঞান ছিল সবচাইতে গভীর এবং তাদের ইসলামের বুঝ ছিল সবচাইতে সঠিক। কিন্তু তারা কেউ "ইসলামের ভালোর" জন্য হিজাব দিবস করেন নাই। আজকের মুসলিমদের ইজ্জত এতো কমে গেছে, যে দ্বীন ইসলামের বিধানকে তারা অমুসলিমদের হাসি-তামাশার বস্তু হতে দেখেও খুশি হয়ে পড়ছে!
ওয়াল্লাহি, ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য আল্লাহর বিধানকে মানুষের ইচ্ছার অধীন করে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। যারা মুসলিম, তাদের ওপর অটোমেটিকালি হিজাব ফরয। তারা কেন একদিনের জন্য হিজাব পরবে? আর যারা কাফের, তাদেরকে একদিন হিজাব পরে পরদিন খুলে ফেলবে - এই কাজ আমরা কীভাবে সহ্য করতে পারি? ক'দিন পর কাফেররা বলবে, "আমরা এক দিনের জন্য মুসলিম হবো", সেটাতেও কি আমরা মুসলিমরা সন্তুষ্ট হয়ে পড়ব? - "একদিনের জন্য মুসলিম হলে ক্ষতি কি?"
আল্লাহ আমাদের মাফ করুক। দ্বীন ইসলামের প্রচার-প্রসার হবে ইজ্জতের সাথে। সাহাবীরা যেভাবে করেছেন ঠিক সেভাবে। তারা দেশের পর দেশ বিজিত করেছেন। এরপরে জনসমক্ষে ইসলামের কথা বলেছেন। আর তখন স্থানীয় বাসিন্দারা সহজাতভাবেই বিজয়ী দলের দিকে আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছে। যারা ইসলাম গ্রহণ করে নি, তারাও আল্লাহর আইনকে সর্বোচ্চ মেনে নিয়ে জিযিয়া প্রদান করেছেন।
আল্লাহর দ্বীন কোন দিবসের কাছে ঠেকা নয়। আমরা মুসলিমরা অমুসলিমদেরকে দাওয়া দিয়ে ইসলামের দিকে আহবান করি, করবো। আমরা অমুসলিমদেরকে নবীজির দেখানো পন্থায় ইসলামের দিকে আহবান করবো। হিজাব সম্পর্কে জানার জন্য সকল অমুসলিমকে আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু পশ্চিমাদের "দিবস কনসেপ্ট" ধার করে ইসলাম জানাতে হবে এই মশকরা থেকে দূরে থাকতে চাই।
Collected From
Sister
Anika Warda Tuba

তোরা আমার বন্ধু হবি নাকি শত্রু হবি? যেদিন, "বন্ধুবর্গ একে অপরের শত্রু হবে, তবে খোদাভীরুরা নয়”...


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।


আমরা যারা জাহিল জীবন থেকে উঠে এসেছি আমাদের জন্য বন্ধু, বন্ধুত্ব ব্যাপারগুলো অনেক আবেগের। বন্ধু, বন্ধুত্বের ব্যাপারগুলো ভাবলেই স্বভাবতই আমাদেরকে স্মৃতিকাতরতায় পেয়ে বসে। কিছু বিষয় থাকে যাকে সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করলে কেমন জানি ব্যাকরণিক ব্যাপার স্যাপার মনে হয়, বন্ধুত্ব তেমনই একটি। কোন মনিষী বা দার্শনিক কতসুন্দর করে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দিয়েছেন সেটা তাই খুব একটা আমলে নেওয়ার মত নয়,যেখানে বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো হয় মানুষের অনুভূতির সংমিশ্রণে। সেই অনুভূতি ব্যক্তি বিশেষে এতটাই ডিফার করে যে, এটাকে কিছু কথার ফ্রেমে আটকে রাখা যায় না।


আজকের জাহিলিয়াতে পরিপূর্ণ একটা যুগে আমাদের “বন্ধু-আড্ডা-গান” ছেলেমেয়েদের কাছে বন্ধুত্ব মানেই গল্প-গান-কবিতা-উপন্যাস আর সেলুলয়েডের রঙিন পর্দায় দেখানোকিছু মুখস্ত পাঠ। বন্ধুত্ব মানেই তাদের চোখে ভাসে একদল ছেলেমেয়ে গল্প করছে, কাঁধেহাত রেখে হাঁটছে, খেলছে, ঝগড়া করছে, একজন হঠাৎ রাগ করে দলছুট হয়ে যাচ্ছে, তার মানভাঙাতে চেষ্টা করছে কেউ। বন্ধুত্ব মানেই তাদের মনে ভাসে দলবেঁধে পুকুরে দাপাদাপি,বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ফুটবল খেলা, আড্ডায় ভারত-পাকিস্তান, রিয়াল-বার্সা তর্ক, গানমুভির লেটেস্ট আপডেট, কনসার্টে একসাথে গায়ের গেঞ্জি খুলে লাফালাফি! তাদের কাছেবন্ধুত্ব মানেই “দোস্ত তোর গার্লফ্রেন্ডটা তো দারুণ, পটালি কেমনে?”, বন্ধুত্বমানেই খাওয়ার পর বিল একজন আরেক জনের উপর চাপিয়ে দেওয়া, সিগারেটের দুই তিনটা টানমারতে বন্ধুর দিকে বাড়িয়ে দেওয়া, bluetooth অন করে “দোস্ত জিনিসটা পাঠা, কুইক”, তাদের কাছে বন্ধুত্ব মানেই....
একদিন রাতে ছাত্রলীগ আমাকে হল থেকে বের করে দিল। রাত তখন সাড়ে বারোটা-একটারমত। আমি কোথায় যাব সেই চিন্তা করছি। আমি চাইলেই লুকিয়ে হলেই থাকতে পারতাম কিংবা আমার রুমম্যাট বন্ধুরা চাইলেই আমাকে রুমে রাখতে পারত। আমি রুমে গিয়ে দেখলাম আমার একবন্ধু আমার তোষক-কাঁথা-বালিশ উঠিয়ে তার থাকার জায়গা করছে। আরাম করে ঘুমানোর জন্য আমার কাঁথা তার বেডশিটের উপর দিয়ে বিছানাকে আরো আরামদায়ক করছে। এই ছেলেগুলোর সাথে আমি কয়েকবছর ধরে একই রুমে আছি, একসাথে খাই, ঘুমায়, কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেনি এতরাতে আমি কোথায় যাব। মুচকি হেসে ভাবছিলাম এতদিন এত কাছাকাছি থেকেও আমাদের হৃদয়গুলোর মাঝে কত দূরত্ব, আমরা কেউই কারো বন্ধু হতে পারিনি, একজন আরেকজনকেভালোবাসতে পারিনি।
এত রাতে এক দ্বীনি বড় ভাইকে ফোন করে তার কাছে থাকতে গেলাম। আমি গিয়েছি বলেতিনি এত রাতে তোষকে ছারপোকার ঔষধ দিলেন, বিছানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করলেন। সকালেঘুম থেকে উঠার পর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা তুমি রাতে একবার উঠে বসেছিলে, ছারপোকায় কামড়েছিল নাকি?” সময়ের এক্সিসে হয়ত প্রশ্নটা করতে দুই তিন সেকেন্ড লেগেছে কিন্তু আন্তরিকতা আর ভ্রাতৃত্বের এক্সিসে এর পরিমাপ করা হয়ত সম্ভব না।
আজো আমি যখন ভার্সিটি, হলের জাহিল পরিবেশে হাঁপিয়ে উঠে কোন দ্বীনি সার্কেলে যাই সেটা যেন আমার জন্য বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার মত। যাদের অনেকের সাথেই হয়ত পরিচয় খুব অল্প দিনের কিন্তু আমি অনভুব করি আমাদের হৃদয়গুলো যেন এক শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ। মানুষ যখন শুধু আল্লাহর জন্য একে অপরের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হয় মহান আল্লাহর রহমত সেখানে বর্ষিত হয় তার সত্যতা আমি অনেকবার দেখেছি। আমার জাহিল বন্ধুরা যখন মোজমাস্তি, বন্ধু আড্ডা গানে সময় না কাটানোর জন্য উপহাস করে, আমার একঘরে স্বভাবের জন্য টিটকারি মারে আমি মাঝে মাঝে তাদের মুচকি হেসে জবাব দিই, “তোদের মত সারি সারি বন্ধু একদিন আমারও ছিল, তোদের এই উচ্ছল জীবনের স্বপ্নও একদিন আমি লালন করতাম। আল্লাহর দ্বীনের জন্য আমি সবকিছু ত্যাগ করেছি। তোদের মত অনেক বন্ধুকেই হয়ত আমি হারিয়েছি বিনিময়ে অনেকগুলো ভাই পেয়েছি, যাদের সাথে মিশলে আমি অনুভব করি, হায়! কোনকালেই যদি তোদের মত কোন বন্ধু আমার না থাকত!”
ইসলামে বন্ধুত্বের চেয়ে ভ্রাতৃত্বের বিষয়টিই বেশী আলোচিত হয়েছে। যারা সিরাত পড়েছেন তার নিশ্চয় মক্কার মুসলিমরা যখনমদিনায় হিজরত করল এর পরের ঘটনাগুলো জানেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামমক্কার মুজাহিরদের সাথে মদিনার আনসারদের ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছিলেন। আরকেমন ছিল সেই ভ্রাতৃত্ব তা আমরা সবাই জানি। সেই ভাতৃত্ব ছিল এমন যে, কেউ তার ভাইয়ের জন্য নিজের প্রাণ দিতেও পিছপা ছিল না। এছাড়াও হাদিসে একটা ঘটনা বর্নিত হয়েছে, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবীদের সাথে ছিলেন, হঠাৎ তিনি কেঁদে উঠলেন। সাহাবীরা কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দিলেন, আমি আমার ভাইদের কথা মনে করে কাঁদছি। সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা কি আপনার ভাই নই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, তোমরা তো আমারসাথী, আমার ভাই হল তারা যারা  আমার পরে আসবে আর আমাকে না দেখেই তারা আমার উপর ঈমান আনবে।
আমার অনেক ছেলেকে দেখার সুযোগ হয়েছে যারা দ্বীনি পরিবেশ কিংবা পরিবার থেকেএসেও ভার্সিটি লাইফে এসে এখন পুরোপুরি জাহিল জীবন যাপন করছে। তেমনিভাবে অনেক ছেলেকে এমনও দেখেছি যারা সবকিছু বুঝে, জাহিলিয়াতের ভয়াবহতা আর আল্লাহর অবাধ্যতারবিষয়ে তারা বেশ ভালোই অবগত এবং এসব নিয়ে চিন্তিতও। অনেকেই চায় জাহিল জীবন ছেড়ে দ্বীনের পথে আসতে, অনেকেই এধরনের তাড়না অনুভব করে। যখনই আমি তাদের এই অবস্থা থেকে বের হতেনা পারার কিংবা দ্বীনি জীবন ছেড়ে জাহিল জীবনে প্রবেশ করার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়েছি প্রতিবারই আমি এটাই দেখেছি যে, তাদের এই অবস্থার মূল কারণ তাদের জাহিল বন্ধুদের সঙ্গ। সেদিন শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদের কাছে এক ছেলে প্রশ্ন করেছে, সে অনেকপাপ করেছে এখন সে তাওবা করতে চায়। শাইখ তাকে অনেক উপদেশ দিলেন। সেই উপদেশে তিনিগুরুত্ব দিয়ে একটা পয়েন্ট আলোচনা করেছেন, সে যেন কোনভাবেই জাহিল বন্ধুদের সাথে না মিশে এবং এমন জায়গায় না যায় যেখানে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আবু মুসা আশআরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘সৎ ও অসৎ বন্ধুর উদাহরণ আতর বিক্রেতা ও কামারের ন্যায়। আতর বিক্রেতা হয়তো তোমাকে একটু আতর লাগিয়ে দেবে, অথবা তুমি তার কাছ থেকে আতর ক্রয় করবে, অথবা তুমি তার কাছে আতরের ঘ্রাণ পাবে। আর কামার হয়তো তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে নয়তো তার কাছ থেকে খারাপ গন্ধ পাবে।’(বোখারি ও মুসলিম)
আমার জাহিল যুগের বন্ধুদের আমি দেখেছি। আর এখন ভার্সিটি আর হলে থাকার সুবাধে জাহিল বন্ধুদের লাইফ স্টাইল, তাদের আলোচনার বিষয় বস্তু, তাদের জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য এসব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়।  এই ছেলেগুলোর আলোচনার মূল কেন্দ্রই থাকে নারী, অশ্লীলতা, অর্থহীন জাহিলিয়াত আর শয়তানের পথের দিকে নিয়ে যায় এমন আলোচনা। তাই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমরা কাদের সাথে বন্ধুত্ব করছি। আমাদের একে অপরের ভালোবাসার মানদণ্ড কি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি? মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন যে সাত প্রকার ব্যক্তিকে তার আরশের ছায়া দিবেন তার এক প্রকার হল তারা, যারা অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবেসে ছিল এবং আল্লাহর জন্যই কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। এই দুনিয়ায় আপনার বন্ধু নির্বাচন আখিরাতের জন্যও কত গুরুত্বপূর্ণ তা এখান থেকে হয়ত বুঝা যাবে,
হাসান আল বাসরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, তোমরা পৃথিবীতে ভাল মানুষদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে তৎপর হও, কারন এই সম্পর্কের কারণে হয়ত তোমরা আখিরাতে উপকৃত হতে পারবে।
তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো কিভাবে?
তিনি বললেন যখন জান্নাতিরা জান্নাতে অধিষ্ঠিত হয়ে যাবে তখন তারা পৃথিবীর ঘটনা স্মরণ করবে এবং তাদের পৃথিবীর বন্ধুদের কথা মনে পড়ে যাবে। তারা বলবে, আমি তো আমার সেই বন্ধুকে জান্নাতে দেখছিনা, কি করেছিল সে?
তখন বলা হবে, সেতো জাহান্নামে।
তখন সেই মু'মিন ব্যাক্তি আল্লাহর কাছে বলবেন, হে আল্লাহ, আমার বন্ধুকে ছাড়া আমার কাছে জান্নাতের আনন্দ পরিপূর্ণ হচ্ছেনা।
অতঃপর আল্লাহ সুবহানু ওয়া তাআলা আদেশ করবেন অমুক ব্যাক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাতে।
তার বন্ধু জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেল এই কারনে নয় যে সে তাহাজ্জুদ পড়ত, বা কুরআন পড়ত বা সাদাকাহ করত বা রোজা রাখত, বরং সে মুক্তি পেল কেবলই এই কারণে যে তার বন্ধু তার কথা স্মরণ করেছে। তার জান্নাতী বন্ধুর সম্মানের খাতিরে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হল।
জাহান্নামিরা তখন অত্যন্ত অবাক হয়ে জানতে চাইবে কি কারনে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হল, তার বাবা কি শহিদ? তার ভাই কি শহিদ? তার জন্য কি কোন ফেরেশতা বা নবী শাফায়াৎ করেছেন?
বলা হবে না, বরং তার বন্ধু জান্নাতে তার জন্য আল্লাহর কাছে অনুরোধ করেছে।
এই কথা শুনে জাহান্নামিরা আফসোস করে বলবে হায় আজ আমাদের জন্য কোন শাফায়াৎকারি নেই এবং আমাদের কোন সত্যিকারের বন্ধু নেই, যার উল্লেখ আছে এই আয়াতগুলোতেঃ

"অতএব আমাদের কোন সুপারিশকারী নেই।এবং কোন সহৃদয় বন্ধু ও নেই।" (২৬: ১০০-১০১)

শেষকথা: গতবছর সেন্টমার্টিনে গিয়েছিলাম। বিশ পঁচিশ জনের গ্যাং, এর মধ্যে আমরা কয়জন দ্বীনি ভাই ছিলাম। যে কয়দিন ছিলাম আমরা সে কয়জন একসাথে থাকতাম, একসাথেঘুরতাম, স্বলাত পড়তাম। ফজরের স্বলাত পড়ে আমরা বিচে একটা ভ্রাম্যমান দোকানে বসেআড্ডা দিতাম, দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম। কথা প্রসঙ্গেই ঐ দোকানের ছেলেটার সাথে কথা হচ্ছিল। সে একজন হাফিজ। টেকনাফের একটা মাদ্রাসায় পড়ছে আর পর্যটনমৌসুমে এখানে টুকটাক জিনিসপত্র বিক্রি করে। এরপরেও আরো বেশ কয়েকবার তার সাথে দেখাহয়েছিল।
আমি এমনিতেই আবেগী মানুষ, সমুদ্র জিনিসটা আরো আবেগি করে দেয়। যেদিন চলে আসছিলাম খুব মায়া লাগছিল এত সুন্দর জায়গাটার জন্য। সবাই যখন জিনিসপত্র গোছগাছ করতে ব্যস্ত তখন আমি কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে শেষবারের মত সমুদ্র দেখতে গিয়েছিলাম। বিচে গিয়ে একা একা দাঁড়িয়ে আছি দেখি ঐ ছেলেটা দৌড়ে আমার দিকে আসছে। আমি মনে করার চেষ্টা করলাম তার দোকানে আমার কোন বাকি আছে কিনা, না তা তো নেই! সে আমার কাছে এসে এক বুক আন্তরিকতা নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল আর বলল , “ভাই চলে যাচ্ছেন? ভালো মন্দ মাফ করে দিয়েন ভাই”। শেষ সময়ে মাত্র মিনিট খানিকের একটা কথোপকথন কিন্তু এতদিন হয়ে গেল সেই মুহুর্তটা আমার এখনো মনে আছে । এরপরেও কোনোদিন সেখানে গেলে আমার বিশ্বাস আমি তাকে ঠিক চিনতে পারবো। মাত্র অল্প কিছু সময়ের পরিচয়ের এই ছেলেটাকে তখন টুপ করে আমার লিস্টে এড করে নিলাম...
হ্যাঁ আমার লিস্ট। প্রতিনিয়তই  আমি লিস্টে নাম ঠুকতে থাকি। যাদেরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি সেই লিস্ট আর যাদেরকে আল্লাহর জন্য অপছন্দ করি সেই লিস্ট। আমার এখনো মনে আছে স্কুল জীবনে আমার বেস্টফ্রেন্ড, দ্বীনে আসার পর সেই আমাকে নিয়ে প্রথম ব্যঙ্গ করেছিল। কলেজের ফ্রেন্ডরারাস্তায় আমাকে দেখলে কেউ চিনতে পারে না। অনেকেই দেখে অনেক্ষণ হায় হায় একি তোর অবস্থা বলে করুণার চোখে তাকায়, হুজুর বেশভূষা নিয়ে কথা শোনায়। আমি চুপিচুপি লিস্টেনাম ঠুকতে থাকি। যেদিন আমি আমার রবের সামনে দাঁড়াবো, যেদিন আমার রব হাশরের মাঠেরকঠিন সময়ে তার বান্দারের ডেকে বলবেন, কে আছো আমার জন্য একে অপরকে ভালোবেসেছিলে, আমার জন্যই একে অন্যের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিলে, আসো আজ আমি তোমাদেরকে আমার আরশের ছায়া দিব। সেদিন আমি মহান রবের কাছে আমার এই লিস্ট দুইটা জমা দিব আর আরশেরছায়া চেয়ে নিব ইনশাআল্লাহ।
একজন আলিম আল্লাহর রহমতের কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই বলেছিলেন ঈমানের কথা, এরপরই তিনি বলেছিলেন ইসলামী ভ্রাতৃত্বের কথা। তাই কাউকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসতে পারা, আল্লাহর জন্য এক হতে পারাটা আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের একটি। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না। বন্ধু আড্ডা গান, মোজ মাস্তিতে কাটানো ছেলেটার সময় যেমন কাটে, হুজুরদের সময়য়ও তেমনই কেটে যায়, থেমে থাকেনা কিছুই। মাঝখান দিয়ে আমরা সবাই আরো একটু মৃত্যুর কাছাকাছি হই। আসল সফলতা তো সেদিন, আসল বন্ধুত্ব তো সেদিন, আসল ভ্রাতৃত্ব তো সেদিন, যেদিন আল্লাহ বলছেন,
“তারা কেবল কেয়ামতেরই অপেক্ষা করছে যে,আকস্মিকভাবে তাদের কাছে এসে যাবে এবংতারা খবর ও রাখবে না। বন্ধুবর্গ সেদিন একে অপরের শত্রু হবে, তবে খোদাভীরুরা নয়”। [সূরা আয যুখরুফ: ৬৬-৬৭]

যেদিনঅনিন্দ্য সুন্দর জান্নাতের বাজারে আল্লাহর মনোনীত বান্দারা এক হবে, যেদিন শীতলপানির ঝর্না পাড়ে কিংবা নয়ানাবিরাম বাগানে আল্লাহর মুত্তাকিরা এক হবে আমি তোদেরসাথে সেদিনের সঙ্গী হতে চাই।
তাই হিসেবটাএই দুনিয়াতেই চুকিয়ে নিই চল। চল হিসেব কষা শুরু হয়ে যাক আল্লাহর সামনে সেদিন কিআমরা একে অন্যের শত্রু হতে যাচ্ছি নাকি বন্ধু। তোদের কথা আমি কখনোই ভুলি না। আমার আন্তরিক দু’আতে আমি সবসময় তোদের স্মরণ করি। একদিন হয়ত তোরাও বদলে যাবি। কোন একদিন রাস্তায় হঠাৎ তোদের কেউ একজন আমাকে বুকে ঝাপটে ধরবি আর আমি অবাক হয়ে দেখব তোর গায়েও আমার মতই পাঞ্জাবি, টুপি, লম্বা দাঁড়ি আর আতরের সুবাস। আমি কখনোই আশা হারাইনা। আমি অনেক ভালো আছি, তোরাও ভালো থাকিস...

Collected From
http://obujhbalok.blogspot.com/2015/01/friendship.html