আপনার সন্তান থেকে আপনি কী চান?

গাজিপুর থেকে ঢাকা ফিরছিলাম। বাসে উঠে বসলাম। কিছুক্ষন পর এক মুরব্বী উঠে আমার পাশেই বসলেন। আমি সালাম দিলাম। স্নিগ্ধ কোমল চেহারা। শ্বেত-শুভ্র লম্বা দাড়ি। দেখলেই শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছা করে। বয়সের ভারে বেশ ন্যুজ বোঝা যায়। যেন জোর করেই লুকোনোর চেষ্টা। কালো প্যান্ট সাদা শার্ট পরা। ইন করা। হাতে একটি এক্সিকিউটিভ ফাইল। কাগজ-পত্র ভরা।

কিছুক্ষন পর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, বাবা আপনার নাম? নাম বললাম। জিজ্ঞেস করলেন কী করেন? সংক্ষেপে বললাম। জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় থাকেন। বললাম। জানতে চাইলেন বাসায় কে কে আছে।

বললাম, আলহামদু লিল্লাহ সবাই আছে। বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে।

প্রশ্ন করলেন, ছেলে মেয়ে ক’টা? বললাম, আলহামদু লিল্লাহ আমার মোট ছয় ছেলে-মেয়ে। চারটা ছোট, আর দু’জন বড়।

মনে হয় তিনি পুরো কথাটা ধরতে পারেননি। বললেন, কী বলছেন?

বললাম, হ্যা চাচা, আমার নিজের চার ছেলে-মেয়ে। দুই মেয়ে, দুই ছেলে। আর বুড়ো দুই সন্তান হলেন আমার বাবা মা।

জিজ্ঞেস করলেন, বাবা মা কি আপনার সাথেই থাকেন?

বললাম, সব সময় থাকেন না। মানুষের ভীড়ে ঢাকা শহরে বাবার না কি দম বন্ধ হয়ে আসে। উনি গ্রামেই থাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। তাই বাবা মা গ্রামেই থাকেন। কিন্তু নাতীদের টানে আবার গ্রামেও তাদের মন টেকে না। তাই এখন এখানেই আছেন। সারাক্ষন নাতী-নাতনীদের নিয়ে থাকেন। দেখছি, এখানেই ওনারা বেশ আনন্দে আছেন আলহামদু লিল্লাহ। তাই আমিও ওনাদেরকে আর গ্রামে যেতে দিতে চাই না। মাঝে-মধ্যে গ্রামের বাড়িঘর, জায়গা-জমি দেখা শোনার জন্য গিয়ে কিছু দিন থেকে আবার চলে আসবেন।

বললাম, চাচা আপনি আমার বাবার চেয়েও বয়সে অনেক বড় হবেন মনে হয়। আমাকে তুমি করে বলেন। আপনার মুখে ‘আপনি’ করে শুনতে আমার আন-ইজি লাগছে।

বললেন, আচ্ছা আচ্ছা, থ্যাংক ইউ।

কথা বলতে বেশ ভালোই লাগছিলো ভদ্রলোকের সাথে। দেখলাম, উনি আর কিছু জিজ্ঞেস করছেন না। অগত্যা আমিই জানতে চাইলাম ওনার কথা। কী করেন, ছেলে-মেয়ে ক’টা, কী করে ইত্যাদি।

ছেলে-মেয়েদের কথা বললেন। বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, অ্যামেরিকাতে থাকে। মেঝ ছেলে এই দেশেরই একজন উপ-সচিব। এর পর তার আরেকটি মেয়েও আছে। সে যুক্তরাজ্যে স্বামীর সাথে থাকে; সেখানকার নাম করা একটি কলেজের শিক্ষক। তিনি নিজে একটি সি.এ ফার্মে অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে কাজ করেন।

এরপর কিছুক্ষন নিরবে কেটে গেলো। আমি মনে হয় অন্য কিছু চিন্তা করছিলাম, না যেন ফোনে কথা বলছিলাম।
হঠাৎ ফিরে দেখলাম ভদ্রলোক চোখ মুছছেন। পানি বেয়ে পড়ছে গণ্ড বেয়ে। আমি ভাবলাম, শরীরে কোনো আঘাত-টাঘাত পেয়েছেন হয়তো। বললাম, চাচা কী হয়েছে? বললেন, কিছু না বাবা।

আমি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। কী করবো, কী বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। বললাম, চাচা কিছু মনে না করলে আমাকে বলুন কী হয়েছে? কিছুক্ষণ হাতের রুমালে চোখ চেপে রেখে, কী হয়েছে সেটা না বলে তিনি বললেন, ‘তোমার বাবা-মা সত্যিই সৌভাগ্যবান’।

বললাম, আলহামদু লিল্লাহ। দোয়া করবেন, যেন আজীবন ওনাদের খিদমত করে যেতে পারি।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, চাচা আপনার এই বয়সে এভাবে বাসে দৌড়-ঝাপ করে চলাফেরা করতে কষ্ট হয় না? কেনই বা করেন? আপনার ছেলে-মেয়েরা তো সব সুপ্রতিষ্ঠিত, স্বচ্ছল!

বললেন, কষ্ট তো হয়ই বাবা, কিন্তু না করেও তো উপায় নেই!

বললাম, কেন, আপনার সন্তানরা...?

বললেন, তাদের সময় নেই খোজ খবর নেওয়ার। তারা তাদের নিজেদের জীবন-ক্যারিয়ার নিয়ে এতো ব্যাস্ত যে সময়ই পায় না। টাকা-পয়সাও পাঠায় না। আমার তো স্ত্রী আছে। আমার ও তার জীবনধারণের জন্য হলেও আমাকে এই বয়সে চাকুরি করতে হচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা বলে, আমি বসে থাকলে নাকি অসুস্থ অচল হয়ে পড়বো, ডায়াবেটিক প্রেসারে আক্রান্ত হবো। অতএব আমার খেটে খাওয়া উচিৎ।

আমি যেন বোবা হয়ে গেলাম। শান্তনা দেওয়ার কোনো ভাষা খুজে পাচ্ছিলাম না। শুধু তাকিয়ে রইলাম কতোক্ষণ। অসহায়ের মতো। ভাবছিলাম এই আধুনিক বস্তুবাদী সেক্যুলার সমাজব্যবস্থার কথা। এখান থেকে কী তৈরি হচ্ছে! এতো মানুষকে জন্তু জানোয়ার বানানোর কারখানা হয়ে দাড়িয়েছে! কোথায় যাচ্ছি আমরা! কিসের পেছনে ছুটে চলছি। কোথায় হারিয়ে গেলো আমাদের শান্তির সুখ পাখিটি? কোথায়? কে দায়ভার নেবে এই অসহায় বৃদ্ধার? কে তাকে শান্তনা দেবে? কে রুমালটা এগিয়ে দেবে অন্তত, তার চোখের জলটুকু মোছার?

বললাম, চাচা দোয়া করেন ছেলে-মেয়েদের জন্য, আল্লাহ ওদেরকে সঠিক বুঝ দান করবেন। চাচা বললেন, দোয়া তো করি, কিন্তু দোয়া তো কবুল হচ্ছে না...।. বললাম চাচা দোয়া করতে থাকেন। দোয়া আল্লাহ নিশ্চয়ই কবুল করেন; যদি তা সঠিকভাবে হয়। এই দেখুন, আমার বাবাকে আমি ছোট সময় থেকে দেখেছি, তিনি আল্লাহর কাছে কেবল একটিই দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার সন্তানকে খাটি মুসলিম বানাও, দ্বীনদার বানাও। আমি কতোটুকু দ্বীনদার খাটি মুসলিম হতে পেরেছি তা জানি না। ভুল-ত্রুটি, গুনাহ খাতা তো হর হামেশাই করে ফেলি। কিন্তু বাবা-মায়ের খেদমত করার চেষ্টা করি আপ্রান। এটা শুধু বাবা-মা’র সন্তুষ্টির জন্যই যে করি—তা নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করি মুলত। কারণ আমার দ্বীন, আমার ইসলাম আমাকে এটা শিখিয়েছে চাচা। আমার দ্বীনই আমাকে শিখিয়েছে যে, বাবা মা যে সন্তানের উপর সন্তুষ্ট নয় আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট নন।

দেখুন চাচা, আমার বাবা অনেক পয়সাওয়ালা মানুষ ছিলেন না। অনেক আবদারই অনেক সময় পুরণ করতে পারেন নি। তথাকথিত নামি-দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও লেখা-পড়া করাতে পারেননি হয়তো। সামর্থ্যে যতোটুকু ছিলো চেষ্টা করেছেন। আমি হয়তো অ্যামেরিকান কোনো ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হয়নি, অন্তত বাবা-মা’র চক্ষু-শীতলকারী সন্তান হতে পেরেছি, আলহামদু লিল্লাহ। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন আজীবন ওনাদের চক্ষু শীতলকারী হয়ে থাকতে পারি।

চাচা অপলক তাকিয়ে আছেন। বললাম, চাচা, আপনার দোয়াও নিশ্চয়ই কবুল হয়েছে। আপনি মনে করুন তো, আপনার সেই তরুণ বয়সের কথা। যখন আপনার সন্তানগুলো জন্মগ্রহণ করেছিলো। আপনি তাদের লেখা-পড়া, ভবিষ্যত নিয়ে কতো চিন্তিতো ছিলেন! কতো উদ্বিগ্ন! দোয়া কি করতেন না তখন? অবশ্যই করতেন। মনে করুন তো কী দোয়া করতেন?

চাচা বললেন, হ্যা বাবা! দোয়া করতাম তারা যেন বড় হয়, শিক্ষিত হয়। সমাজে আমার মুখ উজ্জ্বল করে। সম্মানজনক জীবন যাপন করতে পারে...।

বললাম, চাচা দেখেন, আপনার দোয়া কিন্তু কবুল হয়েছে! আপনি যা চেয়েছিলেন তা কিন্তু হয়েছে। তারা বড় শিক্ষিত হয়েছে, সমাজে আপনার মুখও উজ্জ্বল করেছে। ভালো করে মনে করে দেখেন চাচা, আপনার সন্তানদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে কিন্তু আপনি গুরুত্ব দেননি। তাদেরকে মহান স্রষ্টা আল্লাহর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়াকে গুরুত্ব দেননি। কখনো হাত তুলে এই বলে কান্নাকাটি করেননি যে, হে আল্লাহ! তুমি আমার সন্তানদেরকে ভালো দ্বীনদার বানাও, ভালো মুসলিম বানাও, ঈমানদার বানাও। কখনো বলেননি, রব্বানা, হাব লানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইউন, ওয়াজ ‘আলনা লিল মুত্তাকীনা ইমামা।

চাচা দেখুন, আমরা যারা পিতা-মাতা, আমরা কিন্তু দাতা নই, আয়োজক মাত্র। আমরা আমাদের সন্তানদেরকে খাদ্য-খাবার, পোষাক আশাক যা কিছুই দেই না কেন, আমরা কিন্তু নিছক ব্যবস্থাপক। মুল দাতা হলেন মহান দয়ালু ও রিজিকদাতা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা। আমরা যদি মুল মালিকের প্রতি তাদেরকে কৃতজ্ঞ হতে না শিখাই, তাহলে কিভাবে আশা করতে পারি যে, তারা আমাদের প্রতি শেষ পর্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকবে?

চাচা এই যে বৃদ্ধ বাবা-মা’র যত্ন না নেওয়া এটা কি মানবতার জন্য একটি বিপর্যয় নয়?

চাচা বললেন, এটা শুধু বিপর্যয় নয়, মহা বিপর্যয়। এটা মানুষত্যের মর্যাদা থেকে মানুষের পশুর পর্যায়ে নেমে যাওয়ার নামান্তর।

এই অসভ্যতা কোত্থেকে আমাদের মুসলিম সমাজে এসেছে জানেন চাচা? এসেছে বস্তুবাদীতা থেকে, পশ্চিমা অসভ্যতা থেকে। মুসলিম দেশে কখনো কোনো মানুষ পালার খোয়াড় ছিলো না। আজ আমরা তাদেরকে আমাদের চরম পরম আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছি। আমাদের দেশেও এখন এই খোয়াড় ব্যবস্থা এসেছে। গুড়োদের খোয়াড়, বুড়োদের খোয়াড়। বাংলায় বললে কেমন যেন অসভ্যতা নগ্ন হয়ে ধরা পড়ে যায়। তাই আদুরে নামে এরা ইংলিশে বলে ‘ডে কেয়ার’ বা ‘ওল্ড হোম’।. শিশুকালে আপনি সন্তানকে ডে কেয়ারে রাখবেন, বুড়ো হলে তারা আপনাদেরকে ওল্ড হোমে রেখে আসবে।

দ্বীনদার না হওয়া সত্ত্বেও অনেকে হয়তো মানবিক বোধ থেকে বাবা মা’র খোজ-খবর রাখতে পারেন, দেখা-শোনা করতে পারেন। কিন্তু একজন দ্বীনদার সন্তানের কাছ থেকে বাবা সত্যি কেমন আদর-যত্ন ও সম্মান শ্রদ্ধা পেতে পারেন তা কেবল সেই বাবা-মা’রাই জানেন, যাদের দ্বীনদার সন্তান আছে।

ঢাকায় আমি আমার স্টপেজের কাছে এসে চাচার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। বললাম, চাচা আপনি মুরব্বী মানুষ, অনেক কথা বলেছি, ভুলত্রুটি মাফ করে দিয়েন। চাচার চোখ আবার ছলছল করে উঠলো। ক্ষণিকের পরিচয়ে মনে হয় অনেক আপন হয়ে পড়েছিলাম। বাস থেকে নেমেও দেখলাম, চাচা তাকিয়ে আছেন জানালা দিয়ে। আবারো হাত নাড়লাম। দোয়া করলাম, হে আল্লাহ! তুমি ভালো রেখো চাচাকে।

এ সমস্যা শুধু বাসে দেখা হওয়া এই চাচারই নয়। তিনি এই সমাজের একটি দর্পনমাত্র। আমি এমন আরো অনেক দেখেছি। আপনিও দেখেছেন নিশ্চয়ই অনেক। আপনার একই বিল্ডিং এ, পাড়ায়, মহল্লায়, আত্মিয় ও বন্ধু বান্ধবের পরিবারে। মাতাল, হিরোইন, গাজা, ডাইল সহ নানা রকম মাদকসেবী সন্তানদের ঘটনা তো অহরহ দেখবেন আপনার চারপাশে। এদের কথা না হয় বাদই দিলাম।

আমার নানা বাড়ি এলাকায় এক উকিল সাহেব ছিলেন। নাম আতাহার আলী। ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন আমেরিকায় লেখাপড়া করতে। ছেলেকে টাকা পাঠাতে পাঠাতে তিনি একরকম নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন। ওদিকে ছেলে এক সাদা মেয়েকে বিয়ে করে মৌজ মাস্তিতে ব্যাস্ত। বাবা ছেলের দুঃখে কাদতে কাদতে মারা গেছেন। বাবাকে দেখতেও আসেনি সে। অনেক দিন পর তার অ্যামেরিকান বৌ নিয়ে বেড়াতে এসেছিলো মাকে দেখতে। ঘন্টা দুয়েক গ্রামের বাড়িতে থেকে তার সাদা বৌ ক্লান্ত। স্বামীকে ধমক দিয়ে বলেছিলো, ‘ইট ইজ ঠু লেইট, লেটস গো...’

আপনি আপনার সন্তানকে ডাক্তার বানান, ইঞ্জিনিয়ার বানান, প্রফেসর বানান, বিজ্ঞানী বানান—কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সবার আগে যদি ভালো মুসলিম না বানান তাহলে প্রস্তুত থাকুন সে দিনের জন্য যেদিনের কান্নার কোনো শেষ নেই। এ কান্না অনেকের এই চাচার মতো, এই উকিল সাহেবের মতো দুনিয়াতেই শুরু হয়ে যায়। কারো ভাগ্যক্রমে দুনিয়াতে শুরু নাও হতে পারে। কারণ দুনিয়া মুলত সাধারণভাবে শাস্তির জায়গা নয়। শাস্তির জায়গা হলো আখিরাত। দুনিয়াতে কাউকে কাউকে আল্লাহ শাস্তি দিয়ে দেখান, যাতে অন্যরা শিক্ষা গ্রহণ করে। আল্লাহ তা ‘আলা বলেন,

জলেস্থলে যতো বিপর্যয়/অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে তা মানুষেরই হাতের কামাই। এর উদ্দেশ্য হলো তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কিছু ফল ভোগ করানো, যাতে তারা ফিরে আসে। [সুরা আর রোম, আয়াত ৪১]

দুনিয়াতে বেচে গেলেও আপনার এই প্রানপ্রিয় সন্তানেরা কিন্তু আখিরাতে আপনারই বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে আল্লাহর দরবারে। কেন আপনি তাদেরকে দ্বীন শিখাননি!

আপনার সন্তান, আপনারই সিদ্ধান্ত। তাদেরকে কি আপনি আপনার দুনিয়ার শান্তি ও জান্নাতের উসিলা বানাবেন, নাকি দুনিয়ার লাঞ্ছনা আর আখিরাতের শাস্তির কারণ বানাবেন। সেটা একান্তই আপনার সিদ্ধান্ত! হ্যা একান্তই আপনার!!!


Collected From
Brother
Ahmed Rafique

কার্টেসীঃ সমকালীন ডটকম
মোবাইল শেয়ার লিংকঃ http://goo.gl/WbWkTa

ট্রাভেলার এবং ট্যুরিস্ট

দুনিয়াতে আমরা মুসাফিরের মত; এখানে লক্ষ্যনীয়, মুসাফির আর পর্যটক কিন্তু এক না। ট্রাভেলার এবং ট্যুরিস্ট এর মধ্যে পার্থ্যক্য আছে। আমাদের অধিকাংশ লোকেরাই দুনিয়ার প্রতি আচরণ একজন ট্যুরিস্ট এর মত, ট্রাভেলার এর মত নয়।

ট্যুরিস্ট তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে প্রতিটি জিনিসের স্বাদ আনন্দ উপভোগ করতে চায়, প্রতিটি দর্শনীয় স্থান দেখতে চায়, মজার সব খাবার চেখে দেখতে চায়, মজার সব খেলায় অংশ নিতে চায়। সে যদি একটি কিছু উপভোগ না করতে পারে, তাহলে নিজের অবস্থানকে বৃথা মনে করে, আফসোসে মরে যায়।

অপরদিকে মুসাফির বা ট্রাভেলার এগুলো নিয়ে মজে থাকে না, সামনের দিকে এগিয়ে যায়, গন্তব্যে না যাওয়া পর্যন্ত তার বিশ্রাম নেই।

দুনিয়াতে আমাদের মুসাফিরের মতই থাকা উচিত বলে উপদেশ দিয়েছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

চিরন্তন সত্য

'নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাথীদের ইসলাম গ্রহণের কারণে বয়কট করা হয়েছিল, এমনকি খাদ্যের অভাবে তারা শুকনো গাছের পাতা চিবিয়ে খেতে বাধ্য হয়েছিলেন। আজকের দিনেও যারা সেই নবী ও তাঁর সাথীদের মানবে তাদেরকেও বয়কট করা হবে, আর যদি বয়কট করা নাও হও- নিজের ঈমান বাঁচানোর জন্য যদি সাবধানতা অবলম্বন করেন, দেখবেন আপনি auto বয়কট হয়ে গেছেন!'

কত সত্য কথাগুলো! বলাই বাহুল্য বর্তমান যুগে একজন মুসলিম হিসবে বেঁচে থাকতে চাইলে আপনি সব জায়গায় যেতে পারবেন না, সবার সাথে উঠা বসা করতে পারবেন না, দাড়ি কিংবা হিজাবের কারণে আপনার পরিধি ছোট হয়ে আসবে, কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হবে, তবে হ্যাঁ, একটা জিনিস আপনি ঠিকই পাবেন যদি সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে পারেন --- প্রশান্তি।

বিপদ্গ্রস্থকে সাহায্য করা নৈতিক দায়িত্ব।

একবার এক ইঁদুর লক্ষ্য করল যে বাড়িতে ইঁদুর মারার ফাঁদ পাতা রয়েছে। সে খুবই ভয় পেল। ফাঁদটি অকেজো করার জন্য সে ওই বাড়িতে থাকা মুরগির সাহায্য চাইল। মুরগি ঘটনা শুনে জবাব দিল-
“ ফাঁদটি আমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। অতএব আমি এখানে কোন সাহায্য করতে পারবনা”।

মুরগির কাছ থেকে এই উত্তর শুনে ইঁদুর খুব দুঃখিত হল এবং ছাগলের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইল। ছাগল ফাঁদের কথা শুনে বলল-
“ওই ফাঁদ বড়দের জন্য নয়। আমি এখানে তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারবনা”।

ইঁদুর ছাগলের কাছ থেকে একই উত্তর শুনে দুঃখিত হয়ে গরুর কাছে এলো। সব কথা শুনে গরু বলল-
“ইদুরের ফাঁদ আমার মত বড় প্রাণীর কোন ক্ষতিই করতে পারবেনা। যা আমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা- তাতে আমি সাহায্য করতে পারবনা”।

ইঁদুর শেষ পর্যন্ত নিরাশ হয়ে তার ঘরে ফিরে এলো।

রাতের বেলা বাড়ির কর্ত্রী অন্ধকারের ভিতর বুঝতে পারলেন যে ফাঁদে কিছু একটা ধরা পরেছে। অন্ধকারে ফাঁদের কাছে হাত দিতেই উনি হাতে কামড় খেলেন এবং দেখলেন ফাঁদে ইঁদুরের বদলে সাপ ধরা পরেছে।

তার চিৎকারে কর্তার ঘুম ভাঙল। তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকা হল। চিকিৎসা শুরু হয়ে গেল। কিন্তু অবস্থা মোটেই ভালো না।

পথ্য হিসেবে ডাক্তার মুরগির সূপ খাওয়াতে বল্লেন। সুপের জন্য কর্তা মুরগিকে জবাই করে দিলেন।

অবস্থা আস্তে আস্তে আরও খারাপ হতে লাগলো। দূর দূরান্ত থেকে আরও অনেকে আত্মীয় স্বজন আসতে লাগলো। বাধ্য হয়ে কর্তা ছাগলকে জবাই করলেন তাদের আপ্যায়ন করার জন্য।

আরও ভালো চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার হতে লাগলো। অবশেষে বাড়ির কর্তা তাদের গরুটিকে কসাইখানায় বিক্রি করে দিল।

একসময় বাড়ির কর্ত্রী সুস্থ হয়ে উঠল। আর এই সমস্ত কিছু ইঁদুরটি তার ছোট্ট ঘর থেকে পর্যবেক্ষণ করল।

শিক্ষণীয় বিষয়ঃ কেউ বিপদে সাহায্য চাইলে তাকে সাহায্য করা উচিৎ, হোক সেই বিপদ আমাকে স্পর্শ করুক বা না করুক। বিপদ্গ্রস্থকে সাহায্য করা নৈতিক দায়িত্ব।

অলস মুহূর্ত, বিন্দু বিন্দু রক্ত!

প্রায় ছয় বছর আগের কথা। আমার নতুন ঝকঝকে বাসায় হঠাত একটি তেলাপোকা দেখতে পেলাম, পিচ্চি সাইজের। আমি এই জিনিসটা খুব ভয় পাই। আমার বাসায় ছিলও না। এলো কি করে তা ভাবতে লাগলাম। তখন মনে পড়লো, দুদিন আগে এক ভদ্রলোকের বাসা থেকে কিছু ইলেকট্রনিক্স এনেছিলাম, তিনি দেশে চলে যাচ্ছেন, বলেছিলেন ওগুলো নিয়ে যেতে। তখন মাত্র সৌদি আরবে এসে বাসা নিয়েছি, জিনিসগুলো আমারও প্রয়োজন ছিল। তাঁর বাসায় প্রচুর তেলাপোকা দেখেছিলাম। হয়তবা সেখান থেকেই চলে এসেছে! এসব বিষয়ে অনভিজ্ঞ আমি ব্যাপারটা মাথা থেকে সরিয়ে দিলাম। এসেছে, চলে যাবে! তার বেশ কিছুদিন পর একদিন রাতে ঘুম ভেঙে পানি খাওয়ার জন্য রান্নাঘরে গিয়ে হাত পা ভয়ে ঠাণ্ডা হয়ে গেল! শ'খানিক তেলাপোকা রান্নাঘরময় হেঁটে বেড়াচ্ছে!!! এরা কখন এলো, এতগুলো কিভাবে হল???! সেই একই ভয় আবারও পেয়েছিলাম এ বছরের শুরুতে, যখন একের পর এক ঘটনা ঘটে চলছিল! একজন নাস্তিকের মৃত্যু থেকে তার সূচনা। সেই একই প্রশ্ন মনে এসেছিল-- এই সব কখন হল, কিভাবেই বা?! উত্তরটাও হয়ত একই। আমার ঘটনা শুনে এক ভাবী যেটা বলেছিলেন। "এই জিনিস একটাকেও যদি ফেলে রাখা হয়, হাজারটা গজাবে!"

প্রতিটা অনাচার যখন আমরা অপ্রতিবাদে ফেলে রাখি, ভাবি যে ও আর এমন কি, তখন সেই সামান্য অনাচার একসময় বিশাল এক আগুন হয়ে ওঠে! ওতে পুড়তে থাকে আমাদের নিজেদেরই কেউ না কেউ! এই নাস্তিক, এদের অনুসারী, মানুষের মনের এত ভুল ধারণা, ইসলাম নিয়ে এত ভয় ভীতি-- একদিনে হয়নি! কিন্তু, যতদিনেই হোক, সেই দিনগুলোতে আমরা নিজেরা কি করেছি??? উত্তর আছে কি, আমাদের কাছে??!

ছোটবেলায় দোয়ার বই ঘাঁটলে প্রায়ই দেখতে পেতাম অলসতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে বলা হচ্ছে। ব্যাপারটা অস্বস্তিকর লাগত। আমি অলস। কিন্তু এতে তো কোথাও কোনও সমস্যা হচ্ছে না! কী এমন জিনিস এটা, যে অন্যান্য বিপদ আপদ, বার্ধক্য, ঋণ, এসবের থেকে আশ্রয় চাওয়ার সময় অলসতার কথাটাও যোগ করা হয়েছে? দুর্বল ঈমান নিয়ে এটুকু বুঝতে পারিনি যে, বলা যখন হয়েছে, এটা সেই পর্যায়ের সমস্যা!!! প্রথম ব্যাপারটা বুঝতে শুরু করলাম যখন আবিষ্কার করলাম আমি সংসারের কাজ সামলে উঠতে পারছি না! কারণ খুঁড়তে যেয়ে বের হল, প্রায়ই সময় থাকতে একটা কাজ করে ফেলি না। তাই পরে কাজ জমে যায়। আর তখন মনের ওপর সেটা চাপ সৃষ্টি করে! আমিও তখন দোয়া করা শুরু করলাম। কিন্তু আসলে যে অলসতা কি ভয়াবহ সমস্যা, সেটাও টের পেয়েছিলাম এ'বছর দেশে চলতে থাকা সেই গণ্ডগোলের সময়! কিভাবে?? বলছি, তার আগে একটি চিঠির কথা বলি!

মেয়েকে নিয়ে সিরিয়ার মুসলিমদের ওপর চলা অত্যাচারের ভিডিও দেখছিলাম দু বছর আগে। দেখছিলাম বলাটাও ভুল, শুনছিলাম। চোখে তো সবকিছু ঝাপসা দেখা যাচ্ছিলো-- চোখ তখনো কাঁদতে জানত, তাই! একজন অল্পবয়সী যুবক খুন হওয়ার আগে একটি চিঠি লিখেছিল, সেটাও দেখানো হয়েছে সেই ডকুমেন্ট্রিতে। সেখানে সে বলেছিল, তোমরা যারা বেঁচে আছ, "লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ" কে আঁকড়ে ধরে বাঁচো! আমার তখন নিজের জীবনটার দিকে তাকিয়ে বড় লজ্জা হয়েছিলো। আমাদের ভাইয়েরা মরতে জানে, সে নিয়ে আমরা কাঁদতে জানি। কিন্তু জীবনটা আমাদের এমন উদ্দেশ্যহীনভাবে পার হচ্ছে কেন?? প্রশ্নটা আবার মনে আসে যখন একে একে নাস্তিকদের নাম উঠে এলো তখন। মনে আসে যখন তাদের অনুসারীদের সংখ্যা দেখি তখন। মনে আসে যখন রাতের অন্ধকারে নিরস্ত্র মানুষের প্রাণনাশের কথা শুনা যায়, তখন! মনে আসে যখন কেউ সাহস করে বলে যে একজন মেয়ে নিকাব দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে না, তখন। আমরা কী করছি?? কোথায় চলেছি???

আর তখনই বুঝি, অলসতার থেকে কেন আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে! আমাদের প্রতি মুহূর্তের অলসতা, প্রতিটি মুহূর্তকে "গলা টিপে" মেরে ফেলা-- আড্ডায়, অযথা ঘোরাঘুরিতে, অযথা কাজে-- এসব আমরা ফ্রিতে পাচ্ছি না! পাচ্ছি কোথাও না কোথাও আমাদের কোনও না কোনও ভাইয়ের শরীরের প্রতিটি ফোঁটা রক্তবিন্দুর বিনিময়ে!! পাচ্ছি কোথাও না কোথাও আমাদের অসতর্কতার সুযোগ নেয়া কোনও নাস্তিকের খপ্পরে পড়ে ঈমান হারানো আমাদেরই কোনও ছেলের বিনিময়ে! পাচ্ছি কোথাও না কোথাও আমাদেরই কোন বোনের হিজাব খুলতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয় নামক জায়গাটাকে জীবন থেকে বাদ দেয়ার বিনিময়ে!!! বিনামূল্যে পাই না আমরা এই অলস মুহূর্তগুলো! না, পাইনা বিনামূল্যে!! 

অনেক, অনেক নির্ঘুম রাত কেটেছে অনেকের মত আমারও-- "কী করবো??" ভেবে। এত ময়লা চারিদিকে, কিভাবে পরিষ্কার করবো?? কোথা থেকে শুরু করবো??? চোখে ভেসে উঠলো আমার নিজেরই চেহারা। বাসে করে যখন উমরায় যেতাম, গজগজ করতাম প্রতিটা স্টপেজে! প্রত্যেকে যদি কেবল নিজে পরিষ্কার থাকতো, বাথরুম, অজুর জায়গা কোনদিন এত নোংরা হত না! এ তো নিজে নিজে নোংরা হয়নি, কেউ না কেউ নোংরা করে ফেলে রেখে যাচ্ছে বলেই এমন হচ্ছে!! হ্যাঁ, নিজে! নিজের গুনাহে লিপ্ত হওয়া থামাতে হবে! নিজেকে শুদ্ধ করতে হবে! সারারাত মুসলিম উম্মাহর কথা ভেবে ফজর মিস করা টাইপের ময়লা পরিষ্কারের কাজ করে কোনও লাভ নেই!

মদীনায় রমজান মাসের অনেকটুকু কেটেছিল এবার, আলহামদুলিল্লাহ। প্রায় ২০ পারার মত তিলাওয়াত শোনার তৌফিক হয়েছিলো। কই, শুনে তো মনে হয়নি আল্লাহ এমন এক জাতির ওপর বিশ্বাস রাখেন, যারা হেরে যেতে শিখেছে? এরা সমস্যার ব্যাপকতা দেখে হেরে যেতে শেখেনি, এরা শত্রুর সংখ্যা দেখে পিছিয়ে পড়তে শেখেনি! একজনকে অন্যায়ভাবে মেরে ফেললে আরও হাজারজন ঈমান এনেছে আল্লাহর ওপর! আমরা কি নিজেদের মুসলিম বলি না?? তাহলে কেন আমরা হেরে যাবো?? কেন কাটবে আমাদের প্রতিটা মুহূর্ত উদ্দেশ্যহীন? কেন আমরা প্রতিটা মুহূর্ত "কাটিয়ে" দিবো আর সবার মত-- কিন্তু আঁকড়ে ধরবো না, শিখতে, শেখাতে?! জানার জন্য ব্যয় করবো না কেন প্রতিটি বাড়তি মুহূর্ত? জানবো না কেন আমাদের ইতিহাস, আমাদের দায়িত্ব, আমাদের জীবনের লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য?

ঘুমিয়ে পড়ার জন্য, ঝিমিয়ে পড়ার জন্য মুসলিমদের জন্ম হয়নি! তাই আজ ঘুমিয়ে থেকে, ঘুম ভেঙে কোলাহল দেখে উদ্ভ্রান্তের মত ছুটলে চলবে না! যেহেতু আমরা বেঁচে আছি, আমাদের জন্য কিছু একটা করার সুযোগ এখনো আছে! আসুন আমরা অলসতায় সময়গুলোকে না কাটিয়ে এমন কিছু করি যা নিয়ে আমরা আল্লাহর সামনে আশার সাথে দাঁড়াতে পারি! আমরা কুরআন শিখতে পারি, তাফসীর জানতে পারি। নিজেদের আকিদা ঠিক করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে পারি! ঠিক করতে পারি নিজেদের ছোট ছোট বদঅভ্যাস! নিজেদের জীবনে নিয়ে আসতে পারি ছোট ছোট সেই ভালো কাজগুলো যা আল্লাহর রাসুল (সা) তাঁর ব্যস্ত জীবনের মাঝেও আঁকড়ে ধরে ছিলেন!

যখনই মন চাইবে অলসতায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে, অলস দিন কাটাতে, আমরা যেন মনে রাখি, এর বিনিময়ে গোটা মুসলিম উম্মাহর রক্তক্ষরণ হচ্ছে! ঘুমিয়ে দিন পার করতে এই পৃথিবীতে মুসলিমরা আসেনি! জীবনের লক্ষ্য জীবন পার করে দেয়া না! আমরাও জীবন পার করবো না এভাবে উদ্দেশ্যহীন ভাবে, কর্মহীন অলসতায়, অজ্ঞতায় আর অপারগতায়! ঘুমিয়ে থাকবো না! ইনশাআল্লাহ!

আরব শাসক এবং তাদের সমর্থক স্কলারদের নিয়ে Musa Cerantonio এর লেখা




আমার দেখা মুসলিম বিশ্বের বিড়ম্বনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে , কিছু মুসলমান আছে যারা অন্ধভাবে মুসলিম বিশ্বের রাজা এবং শাসকদের পূজা করে, যদিও তারা কখনোই তাদেরকে দেখা বা তাদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করার মত কোন বিষয়ের নিকটবর্তীও হয় নাই । আবার আমাদের মধ্য হতে এমনও আছে যারা এইসব রাজা এবং শাসকদের পরোয়া করে না, যদিও আমারা তাদের কাছাকাছি ছিলাম এবং তাদের প্রাসাদে আমাদের ব্যতিব্যাস্ত করে রাখা হয়েছিল ।

একটা সময় ছিলো যখন আমি উম্মাহর প্রতি তাদের শাসকদের গুরু প্রতারনা সম্পর্কে অনবহিত ছিলাম। মুসলিম হওয়ার পর আমার মনোযোগ ছিল দ্বীন শেখার দিকে, রাজনীতি নিয়ে ভাবার সময় কিংবা ইচ্ছা কোনটাই আমার ছিল না ।অবশ্য আমি এসব রাজপরিবারের কিছু ব্যাপারে গুজব শুনেছিলাম, কিন্তু তখন এসব ব্যাপারে জানার জন্য কোন আগ্রহ জন্মায়নি । আমি আমার শিক্ষা জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি সেই সব আলেমদের সাথে যারা এসব শাসকদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল, মাঝে কাঝে তাদের প্রশংসাও করেন ।এমনকি আমি তাদের মধ্যে অনেককে দেখেছি যারা এসব শাসকদের সমালোচনাকারীদের সাথে তুমুল তর্কে লিপ্ত হতেন । তারা এসব শাসকদের সমর্থনে প্রবল আবেগপূর্ণ বিতর্কে জড়িয়ে পরতেন এবং শাসক হিসেবে তাদের বৈধতা দানের উপর জোর দিতেন ।

আমি তাদের অনেকের সাথে সাক্ষাৎ করেছি । যেহেতু ইসলামের রাজনৈতিক এস্পেক্টে আমার কোন আগ্রহ ছিল না তাই আমি কখনোই তদের প্রসংশা বা তাদের আক্রমণ করিনি । সময়টা এভাবেই কাটছিলো । আমি বিভিন্ন কনফারেন্সে তাদের সাথে যোগ দিয়েছি।  আমাকে এ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে । আমাকে তাদের প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং আমি তাদের সাথে খেয়েছি । একবার শাসকদের মধ্যে একজনের সাথে আমার একটা ফটো তোলা হয়েছিল, যেটা পরদিন বিভিন্ন পত্রিকার প্রথম পাতায়  ছাপা হয়েছিলো । আমার সাথে যারা ছিল তারা আমাকে বললো আমার নাকি রোমাঞ্চিত হওয়া উচিৎ , কিন্তু সত্য বলতে আমার তেমন কিছু  মনে হয়নি ।

এক সময় আমি এসব শাসক এবং তদের অনুসারীদের বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করি ।  যেমনটা বলেছি আমি তাদের সম্পর্কে  কোন পূর্ব ধারণা নিয়ে সেখানে যাইনি, কিন্তু সেখানে তাদের সাথে থেকে আমি দেখেছি তারা আদর্শ নেতা হওয়া থেকে কত দূরে । আমি শুনেছি কিভাবে তারা অন্যদের কাছে সুদকে ন্যায্যতা দিচ্ছিলো যে এটা তাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । আমি তাদের সাথে বসেছি এবং দেখেছি ইসলামের মৌলিক হুকুম এর ব্যাপারে তারা কতটা অজ্ঞ । আমি দেখেছি কিভাবে তারা কবীরা গুনাকে সহজ ভাবে নিচ্ছে । আর আমি যখন এসকল ব্যাপারে তাদের ‘আলেম’দের প্রশ্ন করলাম তারা আমাকে উপদেশ দিল এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন না হতে এবং চুপচাপ থাকতে ।

আমি তাদের কিছু ইমামকে(পৃথিবী ব্যাপী সুপরিচিত)  আমাদের মুখের সামনে সুস্পষ্ট মিথ্যা দিয়ে অন্যদের বোকা বানাতে দেখেছি । আমি আশ্চর্য হচ্ছিলাম কিভাবে তারা এমন কাজ করতে পারে । আমি দেখেছি তারা ইসলাম থেকে কত দূরে আর সত্যিই তাদের এই অবস্থার জন্য কষ্ট পেয়েছিলাম ।

আমি আমার সফরে সেসব দেশের বিভিন্ন আলেমদের সাথে সাক্ষাৎ করা শুরু করলাম এবং একই সাথে অবহিত হলাম যে  এসব দেশে আসলে কি হচ্ছে । উদাহরণ সরূপ আমি রমজান মাসে কুয়েতের  এক জন অন্যতম ধনী লোক এবং কিছু স্কলারদের সাথে সাক্ষাৎ করছিলাম । আমরা যখন একত্রিত হলাম তখন ঠিক আমাদের উপর দিয়ে একটা ইউএস যুদ্ধবিমান উড়ে গেল, যেটার পাখার নিচে বোমা দেখা যাচ্ছিল । প্লেনটি ইরাকে বোমা মারার উদ্দেশে যাচ্ছিল যেটা তারা কয়েক বছর ধরে করে আসছে । যখন আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা শুরু করলাম তখন সাথে সাথে তারা সবাই চুপ হয়ে গেল এবং আমাকে বলা হল এসব ব্যাপারে উদ্বিগ্ন না হতে । সেই মাসে আমি দেখেছি কিভাবে তাদের প্রত্যেক ইমাম এবং স্কলার এসব আলোচনা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে এবং এমন ভাব দেখিয়েছে যেন এসবের কোন অস্তিত্ব নেই ।

সউদী আরবে, ফটোগ্রাফির পক্ষে বললে তারা আপনাকে আকীদা সংশোধনের কথা বলবে । কিন্তু আমি যখন সৌদি রাজার ২০ ফুট ফটো যেটা সেখানকার প্রায় সবখানে দেখা যায়, সেটা নিয়ে তদেরকে জিজ্ঞেস করি তখন তারা চুপ হয়ে যায় ।
আমি যখন পরে তাদের মধ্যে একজনকে তাদের দেশে অবস্থিত আমেরিকান ঘাটি নিয়ে প্রশ্ন করি সে এমন এক ভাব ধরার চেষ্টা করে যেন সে জানে না আমি কি নিয়ে কথা বলছি ।  আমার সাথে অন্য যারা  ছিল তারা সেই সুপরিচিত ঘাটির অবস্থান কনফার্ম করলো এবং শেষে সে নিজেও স্বীকার করলো সে বিষয়টা জানতো । আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম সেকি মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব’র সেই বইটার সাথে পরিচিত যেখানে ইসলাম থেকে বাতিল হোয়ার জন্য ১০টি কারন উল্লেখ করা হয়েছে । সে বলল সে এগুলো জানে । আমি তাকে বললাম বইটিতে উল্লেখিত ৮ম কারন মতে, মুসলমানদের সাথে যুদ্ধরত অমুসলিমদের সাহায্যকারী ধর্মত্যাগী ।  সে হঠাৎ চুপ হয়ে গেল এবং উত্তর দিতে অস্বীকার করলো । পরে বলল আসলে সে এ ব্যাপারে জানতো না আর বইটিতে উল্লেখিত কারণগুলোও তার জানা ছিল না । আমি বিস্মিত হয়েছিলাম ।

আমাকে যখন তারা ফটোগ্রাফি  ইস্যু নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আমি তাদেরকে ইউসুফ আল কারাদায়ি এর ফতোয়া ব্যাক্ষা করা শুরু করলাম । নাম শুনেই  তারা  উনার ফতোয়া শুনতে আপত্তি জানালো । এমনকি তাদের মধ্যে একজন পরে তাকে কুকুর বলে গালি দিল । এমনকি শুধুমাত্র তার নাম উল্লেখ করার কারনে তারা আমার সমালোচনা শুরু করলো । আমি বিস্মিত হলাম শুধুমাত্র উনার নাম উল্লেখ করার কারনে তারা কিভাবে আমার সাথে এমন করতে পারে ! পরদিন আমরা মুসা নামে তাদের একজন শিক্ষকের সাথে সাক্ষাৎ করলাম । তারা তাকে ফটোগ্রাফি ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করলো আর তিনি উত্তর দিতে গিয়ে সর্বপ্রথম যার নাম উল্লেখ করলেন তিনি হলেন ইউসুফ আল কারাদায়ি । আর সেই সকল লোকদের  প্রতিক্রিয়া কি ছিল যারা সেই একই নাম উল্লেখ করার কারনে আমার সমালোচনা করেছিলো ?......... কিছুই না । যখন পরবর্তীতে আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম কেন তারা ইউসুফ আল কারাদায়ি নাম মেনশন করার পরও তাদের শিক্ষককে কিছু বলল না , অথচ আমার সমালোচনা করেছিল ? তারা তাদের মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল । আমি তাদেরকে উপদেশ দিলাম তাদের এই অন্ধ অনুসরন বন্ধ করতে । পরবর্তীতে আমাকে তাদের নেতা রাবি আল মাদখালি এর সাথে সাক্ষাতের আমন্ত্রন করা হল, যা আমি শিষ্টতার সাথে প্রত্যাখান করেছিলাম ।

UAE তে recent একটা কনফারেন্সে যোগ দিব কি না ভাবছিলাম, কারন তখন UAE হতে একটা ট্রুপ আফগানিস্তানে মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে ইউএসএ কে সাহায্য করছিলো , যেটা পরিষ্কার কুফুরী । (এখনও করছে) । অবশেষে একজন বিশ্বস্ত শিক্ষকের পরামর্শে আমি সেখানে গেলাম, যদি কোন ভাল পরিবর্তন আনতে পারি এই আশায় । আমার সফরের সেই সময়গুলোতে দুবাইয়ের রাস্তাগুলোতে  এতবেশী অশ্লীলতা দেখেছি যে এটাকে আমি আর মুসলিম দেশ বলতে পারছিনা ।
যখন আমরা সেখানে থাকা পতিতাদের সরিয়ে দেবার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করলাম, আমাদেরকে বলা হল পুলিশের পক্ষ হতে তাদের জন্য কোন বিধিনিষেধ নাই আর আমরা যেন এটা পরিবর্তন করার চেষ্টায় সময় নষ্ট না করি ।

আমার জন্য আর একটা সারপ্রাইজ ছিল যখন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে ডিনারে যোগ দিয়েছিলাম । তাদের মধ্যে একজন গর্বের সাথে বলছিলেন কিভাবে সে শরীয়া আইন  নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করেছে্ন । যখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম UAE তে কোন ইউনিভার্সিটি ইসলামিক শরীয়াহ শেখায় । তিনি জবাব দিলেন আসলে শরীয়াহ নয় এটা ছিল তাদের national law আর এটা তো একই কথা কারন UAE ইসলামিক শরীয়াহ দ্বারা শাষিত । তার কথা শুনে আমাদের মধ্যে অনেকে হেসে উঠল, অনেকে লজ্জায় তাদের মুখ ঢাকল এবং এক ছোট ছেলে বলে ঊঠলো “ তার মানে আপনি কি বুঝাচ্ছেন আজকে এই দেশে সব এলকোহল ইসলামিক শরীয়ার কারনে ?”  মন্ত্রী মহোদয় এবার তার মুখ বন্ধ করলেন , একটা ছোট ছেলের মাধ্যমে মৌলিক ইসলামিক শরীয়াহ নিয়ে তার অজ্ঞতা প্রকাশ হওয়ার পর তিনি আর কোন কথাই বললেন না ।

কনফারেন্সের শেষের দিকে আমার সুযোগ হয়েছিল শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার । আমি খিলাফাহর সত্বর প্রত্যাবর্তন , শরীয়াহ দ্বারা শাসনের প্রয়োজনীয়তা এবং ইসলামের শ্ত্রুদের আসন্ন পরাজয় নিয়ে বললাম । সেখানে বড় বড় চোখে কিছু মন্ত্রী বসে ছিলেন আর ধাক্কা খাচ্ছিলেন আমি এসব কি বলছি ! আমি আর কখনো তাদের আমন্ত্রনের আশা করি না । কিন্তু যদি কখনো সুযোগ হয়, আমার আরও অনেক কিছু বলার আছে ।

আরও অনেক কিছু আছে যা আমি এখানে উল্লেখ করতে পারি কিন্তু আমি মনে করি এটুকু লেখাই যথেষ্ঠ হবে । উম্মাহর এই সব বিশ্বাসঘাতকদের বিরোধিতা করায় কেউ যদি মনে করেন আমার জানাশোনায় ঘাটতি আছে, তাহলে আপনাকে বলছি আমি তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, তাদের সাথে তাদের প্রাসাদে বসেছি যা আপনি করেননি । আমি তাদের মুখ হতে কুফর শুনেছি, আমি তাদের ইমামদের নিফাক দেখেছি । আমি উম্মাহর এসব শ্ত্রুদের বিশ্বাসঘাতকতা প্রত্যক্ষ করেছি এবং তদেরকেও দেখেছি যারা উম্মাহর এসব বিশ্বাসঘাতকদের অন্ধভাবে সমর্থন করছে । এরপরে আপনার যা খুশি তা আপনি বলতে পারেন । আমি আমার ফেইথ নিয়েই আমার প্রভুর কাছে ফিরে যাবো । আমি মুজাহিদিনদের সত্যপরায়নতায় কনভিন্সড , প্রাসাদ স্কলারদের মিথ্যা আমাকে বোকা বানাতে পারে নি ।

( তাদের সব স্কলার একই রকম নয় । এমন অনেক আলেম আছেন যারা সত্য বলতে গিয়ে রাজপরিবারের রোষানলে পরেছেন, তাদেরকে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে ।)

source

আফসোস , শুধুই আফসোস ...!!!!

আমার কিছু কথা বলি মজা করে যা আমাদের কথা নয় ...

১. ... এর ... ‘আব্দুল্লাহ’

২. তুই একটা ‘মফিজ’

৩. ‘মোল্লার’ দৌড় ‘মসজিদ’ পর্যন্ত

৪. এইটা হলে কি ‘মহাভারত’ অশুদ্ধ হয়ে যাবে ?

৫. তুই একটা ‘ছাগু’ (দাড়িওয়ালাদের জন্য)

৬. কস কি ‘মমিন’?

আচ্ছা ...
‘আব্দুল্লাহ’ কার নাম ?
‘মোল্লা’ কাদের বলা হয়?
‘মসজিদ’ কার ঘর ?
‘মহাভারত’ কি শুদ্ধ ?
‘দাড়ি’ কার বৈশিষ্ট্য ?
‘মমিন’ কে?

আমার কি চিন্তা করি না যে আমরা কি বলছি ?
আমাদের মুখে কোন কিছুই এখন আর আটকায় না ?
ইসলামকে নিয়ে হাসি তামাশা করে যে কথাগুলো বলা হয়েছে আমরা নিজেরাই তা আমদের উপর প্রয়োগ করছি ???

আফসোস হয় শুধুই আফসোস ...!!!!

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি উভয় চোয়ালের মধ্যভাগ (জিহ্বা) এবং দুই রানের মধ্যভাগ (লজ্জাস্থান) হেফাজতের দায়িত্বগ্রহণ করে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি।” [বুখারী, ৬৪৭৪]

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অন্যথায় চুপ থাকে।” [বুখারী ও মুসলিম]

“মু’মিন ব্যক্তি কখনো ঠাট্টা- বিদ্রুপকারী, অভিশাপকারী, অশ্লীলভাষী ও অসদচারী হতে পারে না।” [তিরমিযি]

দাড়ী পুরুষের সৌন্দর্য

http://www.quraneralo.com/beard/

দাড়ী আল্লাহর একটি মহান ও বড় নে’য়ামত। দাড়ী দ্বারা তিনি পুরুষকে অনুগৃহীত করেছেন এবং নারী জাতি থেকে তাকে বৈশিষ্ট মন্ডিত করেছেন।
দাড়ী শুধুমাত্র মুখমন্ডলের উপর কয়েকটি কেশগুচ্ছই নয়; বরং ইহা ইসলামের বাহ্যিক বড় একটি নিদর্শন। দাড়ী ছেড়ে রেখে এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। আল্লাহ্ বলেন,

ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ

“এই কারণে যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শন সমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, এটা তো তার হৃদয়ের তাকওয়ারই পরিচয়।” [ সূরা হাজ্জ- ৩২]
দাড়ী মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর অনুসৃত নীতির একটি অন্যতম পরিচয়। তিনি দাড়ী ছেড়ে দিতে ও লম্বা করতে আদেশ করেছেন।
কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, দাড়ীর প্রতি এত গুরুত্ব ও তার প্রতি সম্মানের নির্দেশ থাকা সত্বেও অধিকাংশ মুসলমান বিষয়টিকে অতি নগন্য ও তুচ্ছ মনে করে। যেন ঘৃণা ভরে প্রতিদিন তা ছেঁচে ফেলতে মহা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যারা মুন্ডন করে না তারা আরেক ষ্টাইলে তার সাথে খেলা-ধুলা করে। কেউ শুধুমাত্র থুতনীর উপর ছোট ছোট করে রাখে আবার কেউ খুবই হালকা করে কাল একটি রেখার মত করে রাখে। কেউ আবার দাড়িকে গোঁফের সাথে মিলিয়ে দিয়ে গোলাকৃতী করে রাখে।
এই চিত্রগুলো দেখলে একদিকে যেমন দুঃখ লাগে অন্য দিকে তা যেন হাস্যেরও পাত্র। যে মুসলমানকে দাড়ী ছেড়ে দিতে আদেশ করা হয়েছে, দাড়ীকে সম্মান করতে বলা হয়েছে সেই মুসলমান তো দূরের কথা কোন বিবেকবানের পক্ষেও এরকম আচরণ করা শোভনীয় নয়। বড়ই পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ্ তা’আলা যে আকৃতিতে দাড়ীকে সৃষ্টি করেছেন সে অবস্থাতেই তা নিজ মুখমন্ডলে অবশিষ্ট রেখে ইসলামী শিষ্টাচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী এরকম সভ্য মানুষের সংখ্যা আজ খুবই বিরল। (লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্)
মনীষীদের নিকট দাড়ীর মূল্য ও সম্মানঃ
আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সমস্ত নবী ও রাসূলের বৈশিষ্ট ছিল দাড়ী রাখা। অনুরূপভাবে ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন ও আইম্মায়ে মুজতাহেদীন সকলেই দাড়ী রেখেছেন। এমন কোন বর্ণনা বা ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, তাঁদের মধ্যে কেউ দাড়ী কেটেছেন বা মুন্ডন করেছেন; বরং কারো দাড়ী না গজালে তার জন্য তাঁরা আফসোস করেছেন। সাহাবী ক্বায়স বিন সা’দ (রাঃ) দাড়ী বিহীন লোক ছিলেন। তাঁর সম্প্রদায় আনসাররা বললেন, হায় দাড়ী যদি বাজারে কিনে পাওয়া যেত তবে আমরা তাঁর জন্য দাড়ী কিনে নিতাম।”
প্রখ্যাত তাবেঈ আহনাফ বিন কায়স একজন বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী লোক ছিলেন। তিনি সৃষ্টিগত দিক থেকে খোঁড়া ও এক চোখ অন্ধ ছিলেন। তাঁর দাড়ীও উঠে নি। অথচ তিনি ছিলেন নিজ গোত্রের নেতা। লোকরা বলল, “বিশ হাজার দীনার খরচ করেও যদি যদি দাড়ী কিনে পাওয়া যেত তবে আমরা তাঁর জন্য তা খরিদ করতাম।” কি আশ্চর্য! লোকেরা তাঁর পা বা চোখের ত্র“টিকে ত্র“টি মনে করল না। কিন্তু তারা দাড়ী না থাকাটাকে অপছন্দ করল। কেননা তাঁরা দাড়ীকে মনে করতেন পৌরুষত্বের পরিচয়, মুসলিমের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের পূর্ণতার প্রতিক। তাঁরা দাড়ী বাঁচাতে গিয়ে এবং তার সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে নিজের গর্দান দিয়ে দেয়াকে সহজ মনে করতেন।
কিন্তু আফসোস মুসলমানদের অবস্থা দেখে তারা দাড়ীর প্রতি এতই রুষ্ট যে, অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে হলেও তার বিরুদ্ধে যেন অঘোষিত লড়াইয়ে নেমে পড়েছে। হাজার টাকা খরচ করেও যদি এমন হত যে আর কখনো মুখে দাড়ী গজাবে না, তারা সে পথেই অগ্রসর হতো। (নাঊযুবিল্লাহ্)
দাড়ী মুন্ডন হারাম হওয়ার দলীলঃ
আল্লাহ্ বলেন,

وَلَآَمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ

“(শয়তান বলে) আমি অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, তারা তখন আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দিবে।” [ সূরা নিসাঃ ১১৯]
দাড়ী মুন্ডন করা বা কর্তন করা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার শামিল।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
"দশটি জিনিস স্বভাবজাত। তম্মধ্যে তিনি উল্লেখ করেছেনঃ গোফ কর্তন করা ও দাড়ী ছেড়ে দেয়া।" [ মুসলিম]
অতএব গোঁফ লম্বা করা আর দাড়ী কেটে ফেলা সুস্থ স্বভাব বিরোধী কাজ।
ইবনে ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ

“তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ী ছেড়ে দাও এবং গোঁফ ছোট কর।” [বুখারী ও মুসলিম]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوسَ

“গোঁফ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ী লম্বা কর আর এর মাধ্যমে অগ্নী পুজকদের বিরোধীতা কর।” [ মুসলিম]
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যাবতীয় বিষয়ে মুশরিক-হিন্দু, ইহূদী-খৃষ্টান ও অগ্নী পুজকদের বিরোধীতা করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ওয়াজিব।
এ জন্যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“যারা কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত হবে।” [ আবু দাউদ, আহমাদ হাদীছ সহীহ ]
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,

مَنْ لَمْ يَأْخُذْ مِنْ شَارِبِهِ فَلَيْسَ مِنَّا

“যে ব্যক্তি গোঁফ কাটে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়।” [ তিরমিযী, নাসাঈ, হাদীছ সহীহ ]
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশ ওয়াজিব বা আবশ্যকতার দাবী রাখে।
অন্য দিকে দাড়ী মুন্ডন করার মাধ্যমে নিজেকে নারীদের কাতারে শামিল করা হয়। কেননা নারীরা দাড়ী বিহীন। কোন নারী যদি পুরুষের আকৃতি ধারণ করে এবং কোন পুরুষ যদি নারীর আকৃতি ধারণ করে তবে তারা লা’নতপ্রাপ্ত।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীর সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষকে এবং পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারীনী নারীকে অভিশাপ করেছেন।” [ছহীহ আবু দাউদ, তিরমিযী]
দাড়ী রাখা ওয়াজিব না সুন্নাত?
এ নিয়ে মানুষ মতোবিরোধ করলেও দাড়ী রাখা যে ওয়াজিব সেটাই প্রনিধাণযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য কথা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়ী রেখেছেন বলেই ইহা নবীজীর সুন্নাত বলে তার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা নবীজী দাড়ী নিজে রেখেছেন এবং তা রাখার জন্যে নির্দেশও দিয়েছেন। আর আল্লাহ্ তা’আলা যেমন ফরয করেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও তেমনি ফরয বা ওয়াজিব করেন। তার কারণ হচ্ছে নবীজী কখনো নিজের কল্পনা প্রসূত কোন কথা বলতেন না। আল্লাহ্ তাঁর নিকট যা ওহী করতেন তিনি তাই বলতেন। (সূরা নজমঃ ৩,৪) তাছাড়া নবীজী দাড়ীর বিষয়ে যে সকল আদেশ সূচক শব্দ ব্যবহার করেছেন তার বিপরীতে এমন কোন হাদীছ খুঁজে পাওয়া যাবে না যা দ্বারা দাড়ীকে সুন্নাত বা মুস্তাহাব সাব্যস্ত যাবে।
তিরমিযীতে একটি হাদীছে বলা হয়েছেঃ

كان يأخذ من لحيته من عرضها وطولها

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দৈর্ঘ ও প্রস্ত দিক থেকে তাঁর দাড়ী কাটতেন।” এ হাদীছটি মওযু বা জাল যার কোন ভিত্তি নেই। ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করার পর নিজেই একথার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। [ দ্রঃ ছহীহ তিরমিযীঃ হা/২৭৬২]
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, দাড়ী মুন্ডন করা হারাম। ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেন, দাড়ী মুন্ডান, উঠানো বা কর্তন করা কোনটাই জায়েয নয়। শায়খ বিন বায (রঃ) বলেন, দাড়ীকে সংরক্ষণ করা, পরিপূর্ণ রাখা ও তা ছেড়ে দেয়া ফরয। এই ফরযের প্রতি অবহেলা করা জায়েয নয়। শাইখ ইবনে উসাইমীন (রঃ) বলেন, দাড়ী রাখা ওয়াজিব, উহা মুন্ডন করা হারাম বা কাবীরা গুনাহ।
প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ফিকাহবিদগণও দাড়ী ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব ও কেটে ফেলাকে হারাম বলে মত প্রকাশ করেছেন।
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ র্দুরে মুখতারে (২য় খন্ড/৪৫৯ পৃঃ) বলা হয়েছেঃ পুরুষের জন্য দাড়ী কর্তন করা হারাম। নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, দাড়ী এক মুষ্টির বেশী হলে তা কেটে ফেলা ওয়াজিব। কিন্তু এর চাইতে বেশী কর্তন করা যেমনটি পশ্চিমা দেশের লোকেরা এবং খোঁজা পুরুষেরা করে তা কেউ বৈধ বলেননি। আর দাড়ী সম্পূর্ণটাই কেটে চেঁছে ফেলা হিন্দুস্থানের ইহূদী ও কাফের-মুশরেকদের কাজ।”
মালেকী মাযহাব মতে দাড়ী কাটা হারাম। (আল আদাভী আলা শারহে কিফায়াতুত্ তালেব রাব্বানী ৮ম খন্ড ৮৯ পৃঃ)
ইমাম শাফেঈ (রহঃ) তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘আল উম্ম’ উল্লেখ করেছেন যে, দাড়ী কর্তন করা হারাম।
শাফেঈ মাযহাবের আলেম আযরাঈ বলেনঃ সঠিক কথা হচ্ছে কোন কারণ ছাড়া সম্পূর্ণ দাড়ী মুন্ডন করা হারাম। (হাওয়াশী শারওয়ানী ৯ম খন্ড ৩৭৬ পৃঃ)
হাম্বলী মাযহাবের বিদ্বানগণও দাড়ী মুন্ডনকে হারাম বলেছেন। (ইনসাফ, শরহে মুন্তাহা)
অতএব দাড়ী মুন্ডন করা বড় পাপ। এ থেকে তওবা করা আবশ্যক। অবশ্য দাড়ী মুন্ডন করা ও কেটে ছোট করার পাপ এক সমান নয়। যদিও উভয়টিই পাপের কাজ।
অনেক মানুষ দাড়ী মুন্ডন করাটাকে খুবই ছোট ও তুচ্ছ ব্যাপার মনে করে। কিন্তু ইহা মুন্ডন করা কোন সময় সবচেয়ে বড় গুনাহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। কেননা এটা প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম। আর প্রকাশ্যে এভাবে অন্যায়ে লিপ্ত হয়ে তওবা না করলে হতে পারে দাড়ী মুন্ডনকারী আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে না। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلا الْمُجَاهِرِينَ

“আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হয় তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না।” [ বুখারী ও মুসলিম ]
তাছাড়া কোন মানুষ যদি দাড়ীকে অপছন্দ করে বা তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে অথবা দাড়ীওয়ালা মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, তবে সম্ভাবনা আছে একারণে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কুফরীতে লিপ্ত হবে এবং মুরতাদ হয়ে যাবে। কেননা নবী (ছাঃ) যা নিয়ে এসেছেন তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা বা ব্যঙ্গ করা বা তা ঘৃণা ও অপছন্দ করা ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। আল্লাহ্ বলেন,

ذَلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ

“এই কারণে যে, তারা এমন বস্তুর অনুসরণ করেছে যার প্রতি আল্লাহ্ রাগাম্বিত। আর তারা তাঁর সন্তুষ্টিকে অপছন্দ করেছে। ফলে তিনি তাদের আমলগুলো বরবাদ করে দিয়েছেন।” [ সূরা মুহাম্মাদঃ ২৮]
সাবধান মুসলমান! নিজের আমল বরবাদ করবেন না বা অজ্ঞতা বশতঃ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেন না।
প্রিয় ভাই! সালাত সিয়াম ও অন্যান্য ওয়াজিব বিষয়ে আপনি যেমন আপনার পালনকর্তার আনুগত্য করেছেন। কেন এই বিষয়টিতে তাঁর নাফরমানী করছেন? উভয় বিষয়ের আদেশকারী রব কি একজনই নয়? কোথায় আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন? কোথায় ঈমানের বলিষ্ঠতা ও সত্যতা? শরীয়তের বিধান নিয়ে কেন এই ছিনিমিনি খেলা?
পুরুষের সৌন্দর্য দাড়ী মুন্ডানোতে নয়। আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে নারী জাতী থেকে আলাদা ও বৈশিষ্ট মন্ডিত করেছেন। পৌরুষত্বের পরিচয় দাড়ী প্রদান করে তার সৌন্দর্য্যকে প্রস্ফুটিত করেছেন। কিভাবে মানুষ তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে তাকে পরিবর্তন করে নিজেকে নারী জাতীর সাথে সাদৃশ্য করতে চায়? ইসলামের শত্র“দের সাথে নিজেকে মিলিত করতে চায়? আর ধারণা করে যে, এতেই রয়েছে অতিরিক্ত সৌন্দর্য্য ও ব্যক্তিত্ব!? দাড়ী মুন্ডন না করলে বা না কাটলে যেন পুরুষের সৌন্দর্যই ফুটে উঠে না। পুরুষকে দাড়ী দিয়ে যেন আল্লাহ ভুল করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্) তাই সেই ভুল শোধরাতে তারা যেন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
আল্লাহ্ বলেনঃ

أأنْتُم أعْلَمُ أمِ اللهُ

“তোমরাই কি বেশী জ্ঞান রাখ না আল্লাহ্ অধিক জ্ঞান রাখেন?” [ সূরা বাকারাঃ ১৪০]
দাড়ী বিহীন পুরুষ যদি অধিক সুন্দর হত তবে তা করতে আল্লাহ্ অপারগ ছিলেন না। কিন্তু তিনি এর মাধ্যমে পুরুষকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করতে চেয়েছেন। পার্থক্য করেছেন নারীদের থেকে।
সম্মানিত ভাই! আপনার এই কাজে কি দুনিয়াবী কোন উপকার আছে কি? পাবেন কি আখেরাতে কোন ছওয়াব-নেকী? কেন আপনি নিজেকে আল্লাহর ক্রোধের সম্মুখিন করছেন? কেন আপনি প্রতিদিন একটি অযথা পরিশ্রমে নিজেকে ক্লান্ত করছেন? কেন সময় ও অর্থের অপচয় করছেন?
হে আল্লাহ্ তুমি আমাদের সবাইকে তোমার সন্তুষ্টি মূলক কাজ করার তাওফীক দাও এবং যে কাজে তোমার অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ রয়েছে তা থেকে আমাদেরকে বিরত রাখ। আমীন॥

Lets get prepared for holy month of Raamadan

বুদ্ধিমান সে ব্যক্তি যে রমজানকে আত্মসমালোচনার সুযোগ হিসেবে নেয়। নিজের বক্রতাকে সোজা করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। মৃত্যু তাকে অতর্কিতে হামলা করার পূর্বেই নিজের নফসকে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি বাধ্য করে। আর মৃত্যু যদি চলে আসে তবে সৎকাজ ব্যতীত অন্য কিছু কোনো কাজে আসবার নয়। অতঃপর এ মাসে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকারবদ্ধ হোন। তাওবা করুন, লজ্জিত হোন, পাপ-গুনাহ থেকে ফিরে আসুন। নিজের জন্য, আত্মীয়স্বজনদের জন্য ও গোটা মুসলিম উম্মার জন্য দুআ মুনাজাতে খুবই পরিশ্রমী হোন।
আরও কিছু লিঙ্ক 


ঈমান ও আমাল পরস্পর পরিপূরক




কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান অর্জন, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, গবেষণা, অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। তার থেকেও প্রয়োজনীয় ব্যাপার হল অর্জিত জ্ঞানকে আমালে রুপান্তরিত করা।
 সমস্ত
জীবন জ্ঞান অর্জন করে  সেই অনুযায়ী আমাল না করলে পরকালিন মুক্তির পথ কঠিন হবে কোন সন্দেহ নাই।

 আল্লাহ পাক আমাদের জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে আমাল করার

তৌফিক দান করেন এবং আমাদের আমালের পরিবেশে   বেশী সময় থাকার তৌফিক দান করেন। আমীন।

উত্তম আখলাক অর্জন


কেউ সুগন্ধি ব্যবহার করলে  তা বুঝার জন্য যেমন বলার অপেক্ষা রাখে না, গন্ধ আপনি আশপাশ আমদিত করে তোলে। সদাচরণ/ উত্তম চরিত্র ঠিক তেমনি তার উজ্জলতা দিয়ে চারপাশের অন্ধকার দূর করবেই। আমাদের স্বভাবে যখন  নবী [সা] এর আখলাক এসে যাবে , তখন তার প্রভাবে আপনিই  চারিদিকে ঈমান ও ইসলামের প্রসার ঘটতে থাকব । এই আখলাকের এমনই  শক্তি যে, বড় থেকে বড় , প্রভাবশালী বাক্তিদের কেও নতজানু করে দেয়। বড় বড় শক্তিকে ধরাশায়ী করে ফেলে। প্রবল  প্রচণ্ড কুফরি শক্তিও তার সামনে নিস্তেজ নির্জীব হয়ে যায়।  কাজেই আমাদের নবীর [সা] সেই উত্তম আখলাক অর্জন করতেই হবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন।

“Struggle Towards Light.”


Guest writer Mabrouka shares her appropriately titled piece,


It was the year 2002, I was fourteen years old. After nearly eleven years in Europe, my family and I returned to our Muslim country – alhamdulilah.

ME!
I wore t-shirts, tight jeans, hair hanging loose. I was athletic and played many sports. On the outside, I was a teenager; however, on the outside, I was merely a child.

BOYS
I studied in a mixed school, with Muslim boys and girls. I was the popular girl. Everyone knew me. To them, I was “cool.” Boys wanted me to be their girlfriend. They wanted to hang around with me. They thought I was cool because I was westernized. However, what they didn’t know was that I was opposite to what they thought. I wasn’t the girl who hung around with guys! I dreaded them. Rather, I was a Muslimah. A follower of Islam. I was an extremely shy person, who tries to be conscious of Allah, who knows her religion, and who especially hated to mix with the opposite gender. I realized that how I showed myself on the outside did not reflect who I truly was on the inside.

HIJAB
When I wore the hijab, I didn’t tell my friends. My parents said it was nice. I remember wearing a long denim jacket and headscarf, and going to school – heart throbbing.
I will never  forget this situation: One of my three friends saw me in the hijab and laughed. She told me that when I came to school, I should take it off, and when I leave school I could just put it back on so nobody would notice. Then a boy heard her say this and told me not to listen to her because “she’s a devil.” That day, I went home with a crushed heart. Sitting on the computer, I cried and cried and cried.
Once, I was crying and my mum asked me what was wrong. I told her boys said things about my hijab. “What did they tell you?” she asked. “They told me I was like an angel,” I said. My mum smiled and I got more upset. Back when I was fourteen, I thought they were making fun of me:)

AFTER HIJAB
I got used to wearing the hijab. It slowly made me a better person. I thought people would judge me, but they only respected me more. I thought I would look ugly, but it only gave me modesty and nour, and this is the best type of beauty. Hijab is beautiful and Almighty Allah asked us to wear it so we would be protected.

MY (so called) FRIENDS
The girls in my class all spoke their own language which I didn’t understand, except for three girls who, in addition to English, spoke Arabic. Therefore, these were the only girls I could befriend.
The three girls I hung around with also didn’t wear the hijab; their clothes were tighter than mine, hair blow-dried nearly daily. They would talk about music, boys, and bad things I didn’t know about before. They usually ignored me. I dreaded being with them, but they were the only ones I could communicate with.

SELF-ESTEEM

Being with these girls made my self esteem drop. Inside, I hated myself. If you could rate self-esteem, mine was about zero. I thought of myself as a loser. I would try to fit in by wearing cool clothes and make-up. These so-called friends of mine encouraged me to have a boyfriend. They did so much to me. But I was patient.

SCHOOL’S OUT
After school was over, I wanted to become a better Muslimah. I left the fake make-up. My hijab became better. And I focused my attention on doing what was right, increasing my knowledge about Islam. Slowly, slowly I was spiritually climbing towards Allah – alhamdulilah.

UNIVERSITY
My “friends” dropped out. I kept studying and now I want to do my MA. My four years in university, I didn’t put make-up on. My hijab was always aimed at wearing the most modest clothes, not colorful, not attractive, and in a manner that would please Allah ta’ala. The friends I choose feared Allah; they were good Muslims who uplifted and encouraged me to do good, alhamdulilah.

TO MY SISTERS
Wallahi, to all my sisters in Islam, hijab is nour (light). Don’t let men gaze at your beauty. You are too precious. Your beauty is like a rare diamond, protect it by covering yourself. Wear the hijab for Allah, so that Allah will be proud of you. Our Creator doesn’t tell us to do something unless it benefits us. And as I am a proud Muslim hijabi, I can be first to tell you there are so many benefits.
Some females who don’t wear the hijab worry about what people will say. I ask you, are you not worried about what Allah would say?
When you choose to not wear the hijab, you choose to follow the devil. You choose to make the devil smile because you disobeyed Allah. Who is deserving of your worship? Doesn’t Allah deserve it, when all Allah wants paradise for us.

DUA
May Almighty Allah guide everyone towards the righteous path. And may Allah give every girl what He gifted me, the strength to wear hijab. May Almighty Allah fill all Muslim girls’ hearts with nour and love for the hijab, and keep those who wear it firm in their obedience.

জর্জের ঈদ উদযাপন !!!


জর্জ নামে একজন লোক – ফর্সা,লম্বা এক সুপুরুষ। পরিবার নিয়ে গ্রামে থাকে – তার স্ত্রী ও তিন সন্তান (দুই মেয়ে ও এক ছেলে)। জর্জ অস্ট্রেলিয়ায়  তার শহুরে ব্যস্ত জীবন ফেলে শান্তিতে থাকার জন্য পাহাড়ের ধারে এক গ্রামে থাকে। ২৯ শে জিলকদ্ব, জর্জ ও তার পরিবার ব্যস্ত আগামীকাল কি পহেলা যিলহাজ্জ নাকি তা নিয়ে। সে একটি ইসলামিক চ্যানেলে এ ব্যাপার নিয়ে শুনতে চেষ্টা করছিল কিন্তু সে পরিষ্কারভাবে তা শুনতে পারছিলনা। পিছনে তার স্ত্রী চিৎকার করে বলছিল “ইসস!!! আমাদের যদি কোন মুসলিম অ্যাম্বেসির ফোন নাম্বার থাকত। ”তার ছেলে (বয়স ১৮) এসে বলল “বাবা আমি ইন্টারনেটে খুঁজে দেখি” – তার ছেলে খুঁজার পর তাকে জানালো যে আগামীকাল পহেলা যিলহাজ্জ। জর্জ খুব খুশী হয়ে গেল – শনিবার হল ৯ই যিলহাজ্জ এবং রবিবার হল ঈদ।

দেখতে দেখতে শনিবার চলে আসল। সে খুব খুশী মনে একটি ছাগল কিনতে গেল – একটি স্বাস্থ্যবান ছাগল যা কিনা সে কোরবানি দিবে। বাজারে গিয়ে তার মন মত একটি ছাগল সে পেল কিন্তু দরদাম করে দেখল তার পর্যাপ্ত টাকা নেই, তাই সে কাছের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে ছাগলটা কিনল। সে ছাগলটি গাড়ির পেছনে তুলে নিলো। জর্জ গাড়ি চালাচ্ছিল আর তার ৫ বছরের মেয়েটি পিছন থেকে চিৎকার করে বলতে লাগল “বাবা,বাবা, তুমি যে হিজাব টা এনেছ আমার জন্য, ওটা কি আমি কালকে পরতে পারব ? ” জর্জ বলল “হ্যাঁ মা, তুমি কাল পড়বে”। মেয়ে আবার বলতে লাগল “বাবা বাবা, আমি কি মুখও ঢেকে ফালতে পারব ?” সে বলল “না মা তা করার দরকার নেই শুধু হিজাব পড়লেই হবে”। মেয়ে আবার বলে উঠল “বাবা বাবা, ভাইয়া কি ওই পাঞ্জাবি আর সাদা টুপিটা পড়বে?”সে বলল “হ্যাঁ মা”। এরকমই পুরো পরিবার খুবই আনন্দিত ও উত্তেজিত ছিল। জর্জের স্ত্রী তাকে বলল “ আমরা কি ছাগলের মাংসগুলো  তিন ভাগে ভাগ করব ? ” সে বলল “হ্যাঁ আমরা তাই করব”। সে গাড়ির রিয়ার গ্লাস দিয়ে ছাগলটা দেখে ভাবতে লাগল যে সে কি শরীয়া মোতাবেক কোরবানির পশু কিনল নাকি (কানা হতে পারবে না, অসুস্থ হতে পারবে না, রোগা হতে পারবেনা) ?? সে ছাগলটার দিকে দেখে খুবই খুশী হয়ে গেল – নাহ ঠিক আছে।  ঘরে ফিরে তার স্ত্রী জর্জকে মনে করিয়ে দিল, "শুন, তিন ভাগের এক ভাগ আমরা দিব আমাদের প্রতিবেশী জেনেট, রুথ ও কার্লিকে; আর এক ভাগ দিব গরিবদের; আর বাকিটা আমাদের, আমরা Bar B Q করব।"  জর্জ বলল, "আমার মনে থাকবে।"

রবিবার জর্জ খুব ভোঁরে ঘুম থেকে উঠল, খুবই আনন্দিত ও উৎফুল্ল। সে সুন্নাহ অনুযায়ী নিজ হাতে জবেহ করতে চায়। জবেহ করার সময় সে কিবলার দিকে মুখ ঘুরাতে চেষ্টা করল কিন্তু সে জানে না কোন দিকে কিবলা। তার স্ত্রী তাকে বলল তুমি সৌদি আরবের দিকে ঘুরে দাঁড়াও, তার ছেলে বলে উঠল, বাবা আমি ইন্টারনেটে দেখেছিলাম কিবলা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমে। জর্জ সেই দিকে ঘুরে জবেহ করল। এরপর সে তার স্ত্রীকে নিয়ে মাংস তিন ভাগে ভাগ করল।

এরপর সে গোসল করল এবং বের হয়ে বলল,“দ্রুত কর, না হয় আমরা চার্চে যেতে দেরি করে ফেলব । ভুলে যেও না আজকে রবিবার।......... জর্জ একজন Christian। কি অবাক হচ্ছেন......কিন্তু কেন ?? আমরা ত অবাক হয়ে যাই না যখন মুহাম্মদ কিংবা ফাতেমা নামধারী মুসলিম রা Christmas day বা পূজার মন্ডবে গিয়ে ওদের সাথে শরীক হয়।     

গত ১৩-১৪ অক্টোবর ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান-১ এ অবস্থিত হোটেল Washington  -এ এক মেলা হল “ ঈদ পূজা ফিউশান মেলা”। এই হল “আল ওয়ালা ওয়াল বারা” ভুলে থাকা আমাদের মুসলিম ভাইদের অবস্থা। (আল্লাহ না করুক ) কোন দিন যদি ঈদ পূজা একই দিনে পড়ে তাহলে হয়ত আমাদের ভাইরা এক পাঞ্জাবিতেই ঈদের সালাত আদায় করে ঐ পাঞ্জাবি পড়েই রাতে মন্ডপে যাবে।

আমাদের মুসলিম ভাইরা আজ ভুলতে শুরু করেছে ইসলাম একটা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আমদের সব সময় একজন মুসলিম হিসাবে থাকতে হবে। একজন মুসলিমের কেবল জুম্মার দিনে ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত “মুসলিম” (!!) আর অন্য সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নামে “সেকুলার” কিংবা কিছু সময় আবার তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

ইবনুল কায়্যিম (রহমাতুল্লাহ) তার আহকাম আহ্ল আল-দিম্মা গ্রন্থে বলেন কাফিরদের তাদের উৎসবে সম্ভাষণ জানানো মুসলিম ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ। এই বলে সাধুবাদ জানানো “‘A happy festival to you’ কিংবা  ‘May you enjoy your festival,’  কিংবা এই জাতিও কিছু বলা হারাম।এটা কাউকে মদ খাওয়া বা খুন করা বা ব্যভিচার করায় সাধুবাদ জানানোর মত। যাদের নিজের দ্বীনের প্রতি কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই তারা এ ধরণের ভুল করতে পারে।

ইবনুল কায়্যিম (রহমাতুল্লাহ) এর মতে এই সাধুবাদ জানানো হারাম হচ্ছে কারণ এটার মাধ্যমে কাফিরদের এই ধর্মীয় রীতিকে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়ার নামান্তর।

আল্লাহ বলেন –

“যদি তোমরা অস্বীকার কর, তবে আল্লাহ তোমাদের থেকে বেপরোয়া। তিনি তাঁর বান্দাদের কাফের হয়ে পড়া পছন্দ করেন না। পক্ষান্তরে যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে তিনি তোমাদের জন্যে তা পছন্দ করেন। একের পাপ ভার অন্যে বহন করবে না। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ফিরে যাবে। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন। নিশ্চয় তিনি অন্তরের বিষয় সম্পর্কেও অবগত।” (সূরা আল-যুমার, ৩৯:৭)


“ .........আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম......” (সূরা আল মায়েদাহ, ৫:৩)


তাই তাদেরকে এই সব ক্ষেত্রে সাধুবাদ জানানো হারাম। যদিওবা তারা আমাদের এমন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয় আমরা তা বর্জন করব। কোন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নামে আমরা তা গ্রহণ করতে পারি না কারণ তাদের এই অনুষ্ঠান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

 আমাদের ভুলে গেলে চলবে না এই আয়াত –
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।” (সূরা আল ইমরান, ৩:৮৫)

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না এই হাদিস –
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “ যে তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করেছে সে তাদেরই একজন।”

ইবন তাইমিয়া তার বই “ ইক্তিদা আল-সিরাত আল-মুস্তাকিম মুখালিফাত আসহাব” এ বলেছেন – “ তাদের ধর্মীয়  অনুষ্ঠানে সাধুবাদ জানানো মানে তাদের মিথ্যা বিশ্বাস ও কর্মের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন এবং তাদের এই ভ্রান্ত পথকে প্রচারে আশা জাগান।”

কেউ যদি উপরোক্ত এমন কিছু করে ,তাহলে সে গোনহগার; হতে পারে তার বন্ধুত্বের খাতিরে নিশ্চুপ অবস্থান কিংবা তার লজ্জা, সংকোচ-বোধ, সে যে কারণেই করে থাকুক না কেন, কারণ এটা ইসলামে মুনাফিকি হিসেবে সাব্যস্ত হবে, আর এটা কাফিরদেরকে তাদের ধর্মের ব্যাপারে  গর্বিত করে তুলে।

আর মুসলিমদের উৎসব হল দুই ঈদ আর ইসলাম অনুমোদিত অনুষ্ঠান হল বিয়ের ওয়ালিমা ও শিশুদের আকিকা। এছাড়া মুসলিম কখনো জীবনের অতীতের বা বর্তমানের কিছু সময়কে “বিশেষ” জ্ঞান করে সেলিব্রেট করতে পারে না – মুসলিমের জন্য সময়ই জীবন,আর জীবনটা হল একটা পরীক্ষা।  পরীক্ষার হলে বসে কেউ যদি মোবাইলে গেমস খেলে বা ফেইসবুক নিয়ে সময় কাটায় এবং প্রতিটি ঘণ্টা অতিবাহিত হবার সংকেতে যদি সে আনন্দ/উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, তাকে যেমন লোকে উন্মাদ বা অপ্রকৃতিস্থ ভাবার কথা, জীবনে যারা “অতীতের সময়ের স্মরণে” কিংবা “একটি বছর জীবন থেকে বিদায়” বলে আনন্দিত বোধ করেন, ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে তাদেরও তেমনি উন্মাদ বলে গণ্য করার কথা। অন্য সব বাদ দিলেও, কেবল এই যুক্তিতেই মুসলিম কখনো নববর্ষ, জন্মদিন বা বিবাহ-বার্ষিকী নিয়ে আনন্দ/উচ্ছ্বাস-এ নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে পারে না।

Collected From
Brother

Moazzem Nabil






Foul language in a Muslim’s life??

by Asma bint Shameem [ILoveAllaah.com Exclusive Writer]



"What the *******!"
"Hey you, ******, how are you?" "Where in the *******have you been?"
If you listen to the conversation of the average Muslim youth talking to each other, unfortunately this is what you will hear.......expletives, bad words and cusses. In fact, foul language is often heard as part of their everyday life at school, universities and work place.
What's worse is that they use these words without thinking..... without remorse and without even realizing that these words are obscene, filthy or repulsive.... using 'four letter words' in every sentence and in every conversation.
Using the words 'hell' and calling each other 'dog' and 'gay' like it's nothing.
And these are some of the more 'decent' words.
There are other, much worse words that are totally unmentionable. May Allaah protect us.
These people, like their non-Muslim peers, seem to be completely desensitized to the use of foul and offensive words, including many that make others cringe with shame and embarrassment.
Yet, when you reprimand them for using such language, what do they say?
"O come on! This is how everyone talks!" or "This is how I 'express' myself. or "We don't mean it in a bad way, we're just joking around with each other!"
Subhaan Allaah! Calling each other bad names and using foul language!
Since when did that become a 'joke'? Since when did cussing become part of a Muslim's vocabulary?
And those who have some sense of morality will use short forms and abbreviations of these bad words and expressions completely 'guilt-free', thinking it's ok to use them since they are only 'short forms' and not the actual phrase or cuss word.
But whether you say 'wtf' or 'lmao', or you actually say the whole evil phrase, IT'S ALL THE SAME.
That's because actions depend on the niyyah and Allaah knows very well the niyyah behind those words.
And, sad to say, not only the youth, but even some who are older, are guilty of the same.
And, then there are some, who may speak very decently under 'normal' circumstances, but when they are provoked or angry or when things don't go quite the way they wanted, nothing comes out of their mouths except cusses, bad words and filth.
What a stark contrast between this and what the Prophet (Sal Allaahu Alaiyhi wa Sallam) used to do.

The behavior of the Prophet (sal Allaahu Alaiyhi wa Sallam)

Anas bin Malik (RadiyAllaahu 'Anhu) said: "The Prophet (Sal Allaahu Alaiyhi wa Sallam) was not one who would abuse (others) or say obscene words, or curse (others)..." (Bukhaari)
And Abdullah bin 'Amr (RadiyAllaahu 'Anhu) said: "The Prophet (Sal Allaahu Alaiyhi wa Sallam) never used bad language neither a 'Faahish nor a Mutafaahish. He used to say 'The best amongst you are those who have the best manners and character.' (Bukhaari)
And he (Sal Allaahu Alaiyhi wa Sallam) said: “The believer is not a slanderer, one who curses a great deal, one who indulges in obscenity or who in engages in foul talk.” (Tirmidhi-- saheeh by al-Albaani)
Very clear words, indeed.
Allaah calls the one who cusses, a ZAALIM (a wrongdoer, sinner)
".....nor defame one another, nor insult one another by nicknames. How bad is it, to insult one's brother after having Faith [i.e. to call your Muslim brother evil names as: "O sinner", or "O wicked", etc.]. And whosoever does not repent, then such are indeed Zaalimoon (wrong-doers). (Surah Hujaraat:11)

Cussing is a characteristic of the people of HELLFIRE

Realize, dear brother/sister, that using foul language and cussing is A SIN, even in joke and this is a characteristic of the people of Hellfire.
The Prophet (Sal Allaahu Alaiyhi wa Sallam) said:
"The inmates of Hell are of five types...." And among them he mentioned "...the miser, the liar and those who are in the habit of abusing people and using obscene and foul language." (Muslim)
And while advising Mu'aadh, (RadiyAllaahu 'Anhu), the Prophet (Sal Allaahu Alaiyhi wa Sallam) said:“Restrain this,” i.e., your tongue. I (Mu'aadh) said: O Messenger of Allaah, will we be called to account for what we say? He said: “May your mother be bereft of you, O Mu’aadh! Will people be thrown in Hell on their faces or their noses for anything other than the harvest of their tongues?” (al-Tirmidhi-- Saheeh by al-Albaani)

The one who cusses is one of the worst people on the Day of Judgment

Know that people who use bad words and have dirty mouths will be one of the worst people on the Day of Judgment.
The Prophet (Sal Allaahu Alaiyhi wa Sallam) said: "O 'Aaishah! Have you ever seen me speaking a bad and dirty language? (Remember that) the worst people in Allah's sight on the Day of Resurrection will be those whom the people desert or leave in order to save themselves from their dirty language or from their transgression." (Bukhaari)
Just imagine! One of the worst people in the sight of Allaah??!!
How can one then even think of these evil words, let alone use them!
Even Angels RUN AWAY from cussing and foul language

Cussing and swearing is so bad that even the angels cannot tolerate it.

Ibn 'Abbas (RadiyAllaahu 'Anhu) said, "Two men defamed one another in the time of the Messenger of Allah, may Allah bless him and grant him peace. One of them reviled the other who remained silent. The Prophet, may Allah bless him and grant him peace, remained seated. Then the other man answered him back and the Prophet, may Allah bless him and grant him peace, got up. He was asked, "You got up?" He said, "The angels left, so I left with them. While this man was silent, the angels were answering the one who cursed him. When he answered, the angels left." (Adab al-Mufrad)

Cussing and foul language deserves punishment in the dunya as well

Someone asked Imaam an-Nawawi...
"What should be done with a person who calls a Muslim a dog, pig, or other offensive word? Is it a sin?" Imaam an-Nawawi said: "It is a sin and he should be punished (ta’zeer – punishment to be specified by the qaadi/Muslim judge). He also has to repent." (Fataawa al-Imaam al-Nawawi)
Subhaan Allaah! Being punished for calling your Muslim brother 'dog'! And yet, how many times have we said that?!
How many times have we used foul language?!
And how many times do our youth call each other 'dog' and 'pimp' and 'nigga' and MUCH WORSE, in every sentence, while they think nothing, absolutely nothing of it!
What would Imaam an-Nawawi say if he heard some of the Muslims talking today?
What would the Prophet (Sal Allaahu Alaiyhi wa Sallam) say??!!
WHAT DOES ALLAAH SAY???!!!
What to do?
1. Keep in mind that every word and every letter you utter from your mouth is RECORDED and will be presented to Allaah on the Day of Judgment.Allaah says:
"Not a word does he (or she) utter but there is a watcher by him ready (to record it)"(Surah Qaaf:18)
So be CAREFUL what you say.
2. The Prophet (Sal Allaahu Alaiyhi wa Sallam) said: "Whoever believes in Allaah and the Last Day must speak good or keep silent." (Bukhaari)
Remember these beautiful words of the Prophet (Sal Allaahu Alaiyhi wa Sallam). Keep them close to your heart and either speak good or keep quiet.
3. Stay away from foul language, cussing and evil words, because YOU are a Mu'min and a Mu'min does NOT utter filthy words or cuss at anyone.
4. Realize the evil consequences of using filthy language, such as....Allaah's Wrath! Being one of the worst people on the Day of Judgment! Hellfire!! A'oodhu billaah.
What more could there be, before a person stays away??!!
5. Equally important is to STAY AWAY from people who speak such bad language, or places where these bad words are used carelessly, or situations where you would hear such filth such as television, movies and songs (of course, music and songs are haraam anyway).
You see, the more you hear filthy language, the more you will use it. That's because you slowly become desensitized to it and its evil, until a time comes when its not bad anymore.
In the end:
Bad words show disrespect to those being spoken to and a total lack of self-respect.
The one who stays away from filthy language is not being a prude or old-fashioned; rather he/she is a Mu'min and a follower of the one with the best manners ever...that is, the Prophet (Sal Allaahu Alaiyhi wa Sallam).
Use of evil words and foul language is bad-mannered, impertinent and impolite, plain and simple. It is a very serious SIN and is not something light or to be tolerated nor is it an acceptable behavior in Islaam.
"Truly a man utters words to which he attaches no importance, and by them he falls into the Fire of Jahannam, and truly a man utters words to which he attaches no importance, and by them Allah raises him into the Garden." (Bukhaari)


একজন মুসলিম বোনের প্রশ্ন এবং তার উত্তর!! আমার মুসলিম ভাই বোনদের ভেবে দেখার অনুরোধ রইল ।





হঠাৎ করে কয়েকটা পেজের এডমিন হয়ে গেছি। কইদিন আগে মেসেজে এক মেয়ে একটা প্রশ্ন করেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে এই প্রশ্নগুলো আমাদের অনেকের মনেই আছে যারা ইসলাম নিয়ে খুব একটা জানেনা! তাই আমি প্রশ্নটার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব হয়েছে!!

প্রশ্নঃ আমার একটি প্রশ্ন আছে --ইসলাম এ তো প্রতিটি মানুষ এর জোড়া আল্লাহ আগে থেকে বানিয়েছে ...।আয়াতটা কি সত্যি ???? তাহলে যে আজকাল অনেক ধার্মিক ছেলে মেয়ে ও প্রেম এর সম্পর্কে আছে ।। তাহলে কি আয়াতটা ভুল।??? আমি যদি আল্লাহ র কাছে আমার ভালবাসার মানুস এর জন্য দুয়া করি তাহলে।।??? আমি কি ভাবে আল্লাহ র কাছে দুয়া করব।।??? এই সম্পর্কে ইসলাম কি বলে।।??? প্রেম ভালবাসা কি খারাপ।।??? প্লিজ আমাকে জানাবেন।


উত্তরঃ

আসসালামু আলাইকুম

আপনার প্রশ্ন পড়ে মনে হচ্ছে ইসলাম নিয়ে আপনি খুবই ভয়ংকর ধারণা পোষণ করছেন। আপনার মন সন্দেহবাতিকগ্রস্থ। আমি আপনাকে স্পষ্ট করে কিছু কথা বললাম। আশা করি আপনি বুঝতে পারবেন। যদিও আপনার প্রশ্নটি নারী পুরুষ সম্পর্ক নিয়ে কিন্তু আমি আপনাকে সতর্ক করে দিতে চাই কারন আপনি কুরানের আয়াত নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন। একজন মুসলিম সে যদি মনে করে কুরানের কোন আয়াত ভুল কিংবা তার কোন যথার্থতা নেই তাহলে সে আর মুসলিম থাকতে পারেনা কেননা আল্লাহ নিজেই কুরানের সত্যতা দিয়েছেন...

“(এই) সেই মহাগ্রন্থ আল কুরান এতে কোন সন্দেহ নেই, যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে এই কিতাব তাদের জন্যই পথপ্রদর্শক’। [বাকারাঃ২]

আর তাই কেউ যদি কুরানের আয়াত কে অস্বীকার করে তাহলে সে আল্লাহকেই অস্বীকার করে, তার মানে সে কাফির! আল্লাহ আমাদেরকে এই ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা করুন... আমীন!
এবার আপনার মুল প্রশ্নে আসি। আপনার প্রশ্নটাকে কয়েকটা অংশে ভাগ করলাম

• প্রত্যেক মানুষের জোড়া কি নির্ধারিত?
• প্রেম করা মানে সহজ কথায় বিয়ের আগে নারী পুরুষ অবৈধ সম্পর্ক কি হারাম?
• প্রেম করা অবৈধ হলে অনেক ধার্মিক ছেলে মেয়ে প্রেম করে কেন?
• পছন্দের মানুষের জন্য দোয়া করা যাবে কি?

জোড়া বিষয়ে কুরানের স্পষ্ট আয়াত আছে।একটা না, কয়েকটা...

“আমি প্রতিটি জিনিসই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে করে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর”। [আয যারিয়াতঃ ৪৯]

“পবিত্র নিখুঁত সেই মহান স্রস্টা, যিনি জুড়ি সৃষ্টি করেছেন সবকিছুর__উদ্ভিদের, স্বয়ং তাদের (মানুষের) এবং এমন সব কিছুরও যাদের তারা জানেনা”। (ইয়াসিনঃ ৩৬]

“হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে”। [আল হুজুরাতঃ১৩]
“হে মানুষ! তোমরা সতর্ক হও তোমাদের সেই মহান প্রভুর ব্যাপারে, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একজন মাত্র ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে, আর তাদের থেকেই সৃষ্টি করেছেন বিপুল সংখ্যায় পুরুষ আর নারী” [সূরা নিসাঃ ১]


এসব আয়াত থেকে একথা দিবালোকের মত পরিষ্কার যে মহান আল্লাহ তায়ালা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি মানুষকে তার জোড়া বানিয়েই এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এমনকি উদ্ভিদও সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। সুতরাং এই বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই যে আল্লাহ আমাদের জোড়ায় জোড়ায় তৈরি করেছেন কিনা!

# ইসলামে নারী পুরুষের সম্পর্কের পবিত্র আর বৈধ পন্থা হল বিয়ে। এর বাইরে অর্থাৎ “বিয়ের আগে নারী পুরুষের সম্পর্ক, বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড, লিভ টুগেদার এসব সম্পূর্ণ হারাম।

এটা শুধু আপনি নয়, নামাজ রোজা করা মুসলিম ছেলেমেয়েদেরও মেনে নিতে কষ্ট হয়! তার কথা তো আপনিই বললেন যে আপনি অনেক ধার্মিক ছেলেমেয়েকেও রিলেশন থাকতে দেখেছেন। আমরা যারা ইসলামটাকে একটা পরিপূর্ণ জীবনব্যাবস্থা হিসেবে মেনে নিয়ে তা জীবনে প্রয়োগ করে দেখাতে পারিনা তার অন্যতম কারন আমরা ইসলামটাকে দেখি একটা হালাল হারামের লিস্ট হিসেবে। আমরা যখন আমাদের প্রবৃত্তির পূজা করতে যাই, যখন সেখানে ইসলামের বাধা আসে তখনই আগে পিছে চিন্তা না করে আমাদের মনে প্রশ্ন আসে why?? Why this is haraam in islam?? আপনি নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুনতো এই প্রেম করা নিয়ে কোন প্রশ্ন কি ছোটবেলা থেকে এসেছে? না! আসেনি! আমরা সবাই একটা নির্দিষ্ট বয়স পার করি, যে বয়সটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একই সাথে খুবই ভয়ংকর! যে বয়সটাতে আবেগ, ভালোলাগা, সবকিছু পজিটিভ ভাবা, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সীমাহীন আকর্ষণ সবকিছু আমাদের চারপাশে গিজগিজ করে! আর এই বয়সের সরলতা আর ভালোলাগার সুযোগ নেই শয়তান আর তা কাজে রুপান্তর করে দেখায় কাফির আর ইসলামের বিরুদ্ধ শক্তি যারা আল্লাহর নয় নিজেদের প্রবৃত্তির পূজা করে! আর তাই আজকে সমাজে স্কুলে প্রেম, কলেজে প্রেম, ভার্সিটিতে প্রেম, নাটক- সিনেমা- গল্প উপন্যাসে প্রেম! আর এসব দেখে শুধু আপনি নয় অনেকের মনে সেই একই প্রশ্ন why?? Why প্রেম is haraam in islam?? কারন আল্লাহ মহা পরিকল্পনাকারী! তিনি তার সৃষ্টির জন্য মঙ্গলজনক পন্থাই পরিকল্পনা করেছেন! তিনি মানুষের শরীর আর আত্মিক ক্ষতির আসংখা থেকে মানুষকে মুক্ত থাকার ব্যবস্থা করেছেন। অতি সসীম এই মস্তিস্ক নিয়ে আমরা কখনও অসীম মহান আল্লাহর পরিকল্পনা বুঝতে পারবনা! কিন্তু আমরা এই দুনিয়াতেই তার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আর আদেশ অমান্যকারিদের পরিণতি দেখেছি, দেখছি, দেখব ইনশাআল্লাহ! আমরা একটা হারামকে শুধু হারাম হিসেবে দেখি কিন্তু একটা হারাম শুধু হারাম নয় এটা অনেকগুলো পথ যে পথে মানুষের অপকার আছে সেই পথগুলোও বন্ধ করে দেয়! ইসলামে মদ হারাম। কিন্তু মদ তো মানুষ ভাল লাগে বলেই খায়!! তাহলে হারাম হবে কেন?? এটা বোঝা আমার আপনার কাছে দুরহ তো বটেই হজরত ওমর (রাঃ) ও বুঝতে পারেননি! তার প্রার্থনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তিনবার আয়াত নাযিল করার পর হজরত ওমর (রাঃ) বুঝতে পারেন কেন মদ হারাম হল! আর আমরা এখন জানতে পেরেছি বর্তমানে বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ...অ্যালকোহল! মদপান! যেটা আল্লাহ ১৪০০ বছর আগেই হারাম করেছেন! ইসলামে এরকম অনেকগুলো হারামের একটি হল বিয়ে বাদ দিয়ে কিংবা বিয়ের আগে নারী পুরুষ প্রেমের সম্পর্ক! আর বরাবরের মতই ইসলামকে অন্তরে ধারণ না করে পাশ্চাত্য আর কুফরি সিস্টেমর আধুনিকতা অন্তরে ধারণ করা আজকের তরুণ তরুণী সেই হারামের ধার দারে না! অনেকের কাছে এই হারামের জন্য ইসলাম হয়ে যায় সেকেলে! তার পরিণতিও হাতে নাতে!! পেতে অবৈধ বাচ্চা নিয়ে হাসপাতালে গর্ভপাত, রিকশা- সি এন জি তে মূল্যবোধ নৈতিকতা বিসর্জন, বয়ফ্রেন্ডের লালসার শিকার হয়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে গণধর্ষণ, বাজারে সেক্স ভিডিও, নিজের অসম্মান, পরিবারের অসম্মান আর সবশেষে এত এত অসম্মান সইতে না পারে গলায় ফাঁস!

না না না!! হ্যাঁ আমি জানি! শুধু আপনি না সবাই এমনকি যারা এই পরিণতিগুলো বরণ করেছে তারাও বলেছিল, “ না না আমরা তো সত্যই ভালোবাসি!! আমরা এসব করব না!”। সেজন্যই প্রথমে বলেছিলাম ইসলামে কোন একটা হারাম শুধু হারাম নয় এটা অনেকগুলো ক্ষতির পথও রুদ্ধ করে। যে পরিণতিগুলোর কথা বললাম নিজের প্রতি সৎ থেকে বলুনতো এই পথগুলো কে উন্মুক্ত করেছে?? সহজ উত্তর___ নারীপুরুষ অবৈধ সম্পর্ক যেটা ইসলাম হারাম করার পরও তারা মানতে চায়না! ইসলাম সেই জীবন ব্যবস্থা যা মানুষকে নৈতিকতা আর মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়! মানুষকে নিজের শরীর আর মনের নিরাপত্তা দান করে! আর তাই ইসলামে নিজের শরীর আর মনের নিরাপত্তা এসেছে পবিত্র বিয়ের মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন...

“আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের (মানব জাতির) মধ্য থেকেই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য (বিপরীত লিঙ্গের) জুড়ি, যাতে করে তোমরা বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো! এ উদ্দেশ্যে তিনি তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন হৃদ্যতা- বন্ধুতা আর দয়া- অনুগ্রহ অনুকম্পা। এতে রয়েছে বিপুল নিদর্শন চিন্তাশীল লোকদের জন্য”। [সূরা আর রুমঃ ২১]

সুবাহানাল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন বিবাহের মাধ্যমেই নারী পুরুষ পাবে প্রশান্তি, সৃষ্টি হবে হৃদ্যতা-বন্ধুতা, দয়া অনুগ্রহ অনুকম্পা! আর এটা চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ! কিন্তু আমরা কেউ চিন্তাশীল নই! আমরা মানুষের হারাম সম্পর্ক দেখে স্বপ্নের বীজ বুনি! হলিউড- বলিউড তারকাদের “রিলেশনশিপ উইথ অমুক” দেখে ভাবি হ্যাঁ “আমারও চাই”!! সেলিনা-বিবার, এঞ্জলিনা- ব্র্যাড পিট লিভ টুগেদার দেখে ভাবি, “আহা! তারা কতই না সুখে আছে! কেন যে ইসলামে এসব হারাম করল বুঝি না!!” এসব আধুনিকতার art of living এর রঙিন পর্দাটাই আমরা শুধু দেখি! পর্দার আড়ালের কঙ্কালসার, কুড়ে কুড়ে ধ্বংস হওয়া জীবনবোধের গল্প আমরা কেউ জানিনা! আসুন কয়েকটা গল্প শুনি......

শুধু আমেরিকাতেই একজন পুরুষ বিয়ের আগে গড়ে ৮ জন নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ায়! তাদের সবার সাথেই অবাধ যৌনসম্পর্ক থাকে। এরপর সে একটা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারে। এবং বিয়ের পরও দুই তিনটা অবৈধ যৌনসম্পর্ক থাকে একজন আমেরিকানের। ভারতের একটি পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে (৮-১০ বছর আগের, জাকির নায়িকের লেকচার থেকে) শুধু মুম্বাই শহরেই ৫০% মেয়ে স্কুল জীবন শেষ করার আগেই তাদের কুমারিত্ত হারায়! এখন ২০১৩!! সেই % টা কি এখন ১০০%?? কিংবা তার কাছাকাছি??? আর যেসব তারকার প্রেমের সম্পর্ক দেখে আমাদের আবেগ উদ্বেলিত হয়ে উঠে তাদের কিছু গল্পও শুনি......

বছর কয়েক আগে প্রেম করে বিয়ে করেন তিন্নি- হিল্লোল, নওশিন, প্রমিকের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন ন্যান্সি, জনপ্রিয় তারকা জুটি হিসেবে পরিচিত ছিলেন শওকত আলি ইমন- বিজরি, প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন আরেফিন রুমি, একবছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেন কঙ্গনা সেন শর্মা- রনবির, সেলিনা গমেজ- বিবার কে দেখে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন অনেক টিনেজার, “ গভীর ভালোবাসার” বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে সেক্স টেপ বানিয়েছিলেন প্রভা সেটা ছড়িয়ে পরে তার ক্যারিয়ারটাই শেষ, জনপ্রিয় আরজে নিরব একের পর এক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে তাদের সাথে প্রতারণা করেন_ এক লাইভ অনুষ্ঠানে যা এক মেয়ে এক কথায় প্রকাশ করেছেন এভাবে, “আর কইটা মেয়ের জীবন তুই নষ্ট করবি??” এরকম আরও অনেক......অনেক......অনেক.........
এগুলো তো প্রেমের গল্প! তারা অনেকেই বিয়েও করেছেন এই নিষিদ্ধ প্রেমকে পুঁজি করে। তার ফলাফলটা দেখবেন না?? আসুন দেখি......

তিন্নি- হিল্লোল, নওসিন-তার স্বামী ছাড়াছাড়ি! এখন প্রেমের ট্রায়ালে আছেন হিল্লোল- নওসিন!! ন্যান্সির ছাড়াছাড়ি! বিজরির সাথে ছাড়াছাড়ির পর অনেক মেয়ের সাথে প্রনয়ে জড়িয়েছেন ইমন! তার একজন তার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন! আরেফিন রুমির বিয়ে প্রথম স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে বলে সবাই জানলেও সেটা ছিল তার নিষিদ্ধ পরকীয়ার ফল! বিয়ের পর প্রথম স্ত্রীর হাতে পায়ে ধরে সে তাকে রাজি করায়! (সুত্রঃ প্রথম স্ত্রীর রেডিও সাক্ষাৎকার)!! আর হলিউড, বলিউডের কথা বলার কোন দরকার মনে করছিনা!!

বোন! হিসাবটা সোজা! মহান আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্ধারণ করেছেন সেখানেই কল্যাণ আর প্রশান্তি লুকায়িত আছে! আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা অমান্য করায় আছে এই দুনিয়ায় ক্ষতি, লাঞ্ছনা, অসম্মান আর আখিরাতেও কঠিন শাস্তি! এই অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক, মোবাইল ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা, একসাথে ঘুরতে যাওয়া, long drive ( মতান্তরে sex drive) অন্ধকার কফি শপ!! অতি সহজ ভালোলাগা থেকে শুরু করে দুইটা শরীর কাছাকাছি আসলে দুর্বল চিত্তের অতি স্বাভাবিক শরীরের চাহিদা চরিতার্থ করার প্রয়াস আসবেই। আপনি বা আমরা কেউই “innocent intention” এর দোহাই দিয়ে এই চাহিদাকে হালকা করতে পারবনা! একটি হারাম রিলেশন যেখানে আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ, প্রশান্তির চেয়ে বেশী থাকে সন্দেহ, শরীরকেন্দ্রিক ভোগবাদী চিন্তা, মানসিক উত্তেজনা আর ধীরে ধীরে আত্মিক অবক্ষয়! আমরা আমাদের চারপাশে এগুলোই দেখে এসেছি, এখনো দেখছি আর ভবিষ্যতেও দেখব! আর তাই ইসলাম দুইজন নারী পুরুষকে বিয়ের পবিত্র বন্ধনে বেঁধে তাদের শারীরিক, আত্মিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে! একজন স্ত্রী, একজন স্বামী একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, আস্থা, বিশ্বাসে যে সম্পর্ক তৈরি করে সেখানেই আছে যথার্থ tranquility!! একজন গার্লফ্রেন্ড তার বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে যতটা অনিশ্চিয়তা নিয়ে ভাবে, “ও কি সত্যিই আমাকে ভালবাসে??” একজন স্ত্রী তার স্বামীর হাত ধরে ততটাই আস্থা আর বিশ্বাসের সাথে ভাবতে পারে, “He is mine”!! একজন গার্লফ্রেন্ড যতটা অনিশ্চয়তা, ভয় আর আত্মসম্মানের হুমকি নিয়ে একজন বয়ফ্রেন্ডের সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের দিকে যায় , একজন স্ত্রী ঠিক ততটাই আস্থা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভাবতে পারে তার স্বামী তার পবিত্রতার সঙ্গী, তার স্বামী তার অনাগত সন্তানের বাবা!!

ইসলাম এভাবেই সুন্দর! এভাবেই পবিত্র! এভাবেই শরীর মনের ক্ষতি রোধ করে! এভাবেই দুইজন নারী পুরুষকে একেবারে আপন করে দেয়! তার জন্য কোন হারাম সম্পর্ক দরকার পড়েনা! মিথ্যার মায়ায় সান্ত্বনা খোঁজার দরকার পড়েনা!!

# আপনার এই প্রশ্নটা আমাদের সবার জন্যই লজ্জার! কিছু ইসলামের লেভেলধারী কুপ্রবৃত্তির পূজারির কার্যকলাপের কারণে প্রতিনিয়ত ইসলামকে অপমানিত হয়ে হয়! একটা কথা মনে রাখবেন, মানুষকে দিয়ে ইসলামকে বিচার করবেন না__ ইসলামকে দিয়ে মানুষকে বিচার করবেন! আমার এতক্ষণের আলোচনা থেকে নিশ্চয় আপনি এটা বুঝতে পেরেছেন যে আপনি যাদের দেখেছেন তারা নিষিদ্ধ কাজ করছে। ইসলাম নিয়ে জানার দরকার পড়েনা আমরা স্কুলে বিদায় হজ্জের ভাষণ পড়েছি! যেখানে রাসুল (সাঃ) বলে গিয়েছেন, “আমি তোমাদের কাছে দুইটা জিনিস রেখে যাচ্ছি, কুরান আর সুন্নাহ (রাসুল (সাঃ) এর হাদিস)”! সুতরাং ইসলামে কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক আমরা তা কুরান সুন্নাহ থেকে শিখব কোন মানুষকে দেখে নয় হোক তারা নিজেদের পরেহেজগার বলে জাহির করে!

# আপনার এই প্রশ্নটা খুবই interesting! আমরা কি পছন্দের মানুষের জন্য দোয়া করতে পারব?? অবশ্যই আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারবেন যেন আপনার জোড়ার সাথে বিয়ের পবিত্রতায় আবদ্ধ হতে পারেন! আপনার জন্য নির্ধারিত মানুষটি যেন সৎ, তাকওয়াবান হয়! সে যেন আপনার হৃদয়ে প্রশান্তির বার্তা নিয়ে আসে! But it doesn’t mean that আপনি একটার পর একটা সম্পর্কে জড়াবেন আর প্রত্যেকজনকে আপনার জোড়া ভাববেন!! নিজের নফসকে সংযত করে , নিজের প্রতি, আল্লাহর প্রতি সৎ থেকে আপনি অপেক্ষা করবেন! আপনি যদি নিজের সততা বজায় রাখতে পারেন তাহলে আশা করা যায় আপনার জোড়াও সংযম অবলম্বন করে আপনার অপেক্ষায় থাকবে। আপনি সেই পুরুষটির জন্য সততার ভিত্তিতে প্রস্তুতি নেন ইনশাআল্লাহ মানুষটিকে আল্লাহই আপনার কাছে পৌঁছে দেবেন!

Allah has already written the name of your spouse for you. What you need to work on is your relationship with ALLAH (swt). He will send him to you when you are ready. It is only matter of time.

আর যদি চান আপনার মানুষটি সৎ আর ভাল হবে তাহলে আপনাকেও তা অর্জন করতে হবে। কারন আল্লাহ স্পষ্ট করেই বলেছেন...

“(জেনে রেখো) নষ্ট নারীরা হচ্ছে নষ্ট পুরুষের জন্য, নষ্ট পুরুষরা হচ্ছে নষ্ট নারীদের জন্য, (আবার) ভাল নারীরা হচ্ছে ভাল পুরুষদের জন্য, ভাল পুরুষরা হচ্ছে ভাল নারীদের জন্য, (মোনাফেক) লোকেরা (এদের সম্পর্কে) যা কিছু বলে তারা তা থেকে পাক পবিত্র; (আখিরাতে) এদের জন্যই রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রেযেক”। [আন নুরঃ ২৬]

অনেক কথা বলে ফেলেছি। অনেক কথাই আপনি জানতে চাননি আমি নিজ থেকেই বলেছি একটা পরিপূর্ণ সমাধানমূলক উত্তর দেওয়ার জন্য। হয়তো আপনি আমার সব কথা বুঝতে পেরেছেন, হয়তো বুঝতে পারেননি, হয়তো একদিন বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ যেন আমাদেরকে ইসলামের সমাধান মেনে নেওয়ার আর এতে আস্থা রেখে হেফাজতে থাকার তৌফিক দিন। আমরা যেন সাময়িক সুখ আর আবেগের কাছে এই দুনিয়া আর আখিরাতের যথার্থ প্রশান্তি নষ্ট না করি!


বিনীত
একজন মুসলিম যুবক!!

Collected From
Brother
Bujtesina Bishoyta