মুসলিমাহ নারীদের কাজ "বাচ্চা জন্ম দেওয়া" এবং "স্বামীকে খুশি করা"?

আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রজিম। বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম


মুসলিমাহ নারীদের কাজ "বাচ্চা জন্ম দেওয়া" এবং "স্বামীকে খুশি করা" বলতে শুনলেই আমাদের মুসলিমদের গায়ে যেন দাউদাউ করে আগুন জ্বলে যায়! কেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কি এটাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব করে দেন নি? আল্লাহর তা'আলার ইবাদতের জন্য আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সত্যি কথা। কিন্তু একজন নারীর প্রধান দায়িত্ব কি??

যেই চারজন নারী জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ আসনে থাকবেন, যারা দুনিয়া ও আখিরাতে সবচেয়ে সম্মানিত, যাদের মর্যাদা পুরো পৃথিবীর সব নারীর মধ্যে সবচাইতে বেশি; তাঁরা এই অবস্থানে কেন আছেন??

কি করেছিলেন তাঁরা? কীভাবে আল্লাহর ইবাদত করেছেন যে তাদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে এতোটা বেড়ে গেছে??

এই চারজনের প্রত্যেকেই তাদের মা এবং স্ত্রী হবার কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়েই এই মর্যাদার উপযোগী হয়েছেন।

মারইয়াম (রা) হলেন সেরাদের সেরা। তিনি সমগ্র বিশ্বের নারীদের মাঝে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। তাকে নিয়ে কুর'আনে বলা হয়েছে -

"হে মারইয়াম, আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন। আর তোমাকে বিশ্ব নারী সমাজের ঊর্ধ্বে মনোনীত করেছেন।" [সূরা আলে ইমরান: আয়াত ৪২]

এই মারইয়াম, আল্লাহর কাছে তাঁর সম্মান পেয়েছেন ঈসা (আ) এর মা হবার কারণে। একজন মা হওয়া অনেক বড়ো ব্যাপার। মা হবার কষ্ট, ধৈর্য্য, সন্তান লালন-পালন এবং সুসন্তান গড়ে তোলা বিশাল ব্যাপার, বিশাল! এই প্রতিটা কাজ আল্লাহর ইবাদতের অংশ। আর এভাবে ইবাদত করেই তিনি অর্জন করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ অবস্থান।

দ্বিতীয় খাদিজা (রা)। নবীজি (সা) এর জন্য তিনি কতো ত্যাগস্বীকার করেছেন, পড়তে পড়তে চোখ দিয়ে পানি আসে। সত্যি বলবো, আমি জানি, আমি কোনদিন এতোটা করতে পারবো না নিজের স্বামীর জন্য। বরং আমরা তো অতি তুচ্ছ ব্যাপারেও ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়ি।

তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে আছেন আসিয়া ও ফাতিমা (রা)। দুজনের একজন মা এবং একজন স্ত্রী হিসেবে নিজের দায়িত্ব অত্যন্ত সুষ্ঠুরূপে পালন করেছেন।

এই চারজন নারীর কেউ-ই বাইরে পড়াশোনা করতে যান নি। ঘরের বাইরে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য-চাকরিবাকরি করতে যান নি। হ্যাঁ, আপনি বলবেন - ওগুলো তো হাজার বছর আগের কথা ছিল। এখন সময় বদলেছে, এখন নারী-পুরুষ সব সমান। সবাই ঘরের বাইরে যাওয়াই এখন স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদেরকে বুঝতে হবে, দ্বীনের কিছু কন্সট্যান্ট বিষয় আছে। দ্বীনের এই ভিতগুলো যুগের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে যায় না। আল্লাহ তা'আলা ইসলামকে সব যুগের উপযোগী করেই প্রেরণ করেছেন। এতে হেরফের করার কোন প্রয়োজন নেই।

আমরা সঠিক ইসলামের অনুসারী হলে জেনে থাকবো, আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের চূড়ান্ত সাফল্য কখোনোই এইসব দুনিয়াবি পড়াশোনা কিংবা ক্যারিয়ারের ওপর নির্ভর করে না। রিকশাওয়ালার গরিব বউটা, যে বাচ্চা আর সংসার ছাড়া কিছুই জানে না, সেও জান্নাতে এই লন্ডনে পড়া আমার চাইতে উপরে অবস্থান করতে পারে, শুধুমাত্র তার ঈমান, আমল, ও ইবাদতের জোরে। আমাদের শুনতে খারাপ লাগতে পারে, কিন্তু সত্য শ্রুতিমধুর না হলেও বদলে যায় না।


বর্তমান সমাজে সম-অধিকারের জোয়ার এসেছে। মেয়েদেরকে পড়াশোনা করতে হবে। শুধু তাই নয়, আমাদেরকে ক্যারিয়ারিস্ট ও অ্যাম্বিশাস হতে হবে। এই ডিগ্রি নেওয়ার কারণই হলো যেন আমরা আমাদের ক্যারিয়ার নিশ্চিত করতে পারি। যেন দুনিয়াবি একটা পদমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। সমাজ বেধেই দিয়েছে মেয়েদের কাজগুলো কী কী। মেয়েদেরকে পুরুষের মত ঘর থেকে বের হয়ে অবশ্যই চাকরি-বাকরি করতে হবে। কোন নারী যদি নিজের ইচ্ছায় ঘরে বসে থাকে, যদি সে ভাবে "আমি এতো কষ্ট করে চাকরি করতে চাই না, শুধু সন্তানকে সময় দিতে চাই," তাহলে তাকে বাঁকা চোখে দেখা হবে। লোকের নজরে, সমাজের নজরে সে নিশ্চিতভাবেই নিচু বলে গণ্য হবে। আপনি এটাকে "অধিকার" বলেন? আমি বলবো, চাপিয়ে দেওয়া বোঝা। অত্যাচার। জুলুম। এভাবে নারীদেরকে এমন কিছু কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে যা তার স্বাভাবিক প্রকৃতির সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কিন্তু সমাজের বেধে দেওয়া স্ট্যান্ডার্ড বলে কথা! এবার পালাবি কোথায়? না চাইলেও এই বোঝা বয়ে বেড়াও। তা নাহলে "সম্মান" থাকবে না।


দুঃখজনক হলেও সত্যি, সম্মান আসলেই থাকে না। সম-অধিকারের কথা বলে ফেনা তোলা বুদ্ধিজীবিরা এমনভাবেই আমাদের জীবনের লক্ষ ও উদ্দেশ্যকে মেপে দিয়েছে। এই মাপের চুল পরিমাণ বাইরে গেলেই আমি গোঁড়া, অশিক্ষিত, গোয়ার, মূর্খ, সস্তা হাউজওয়াইফ। আমার চাইতে বাইরে সেজেগুজে কাজ করতে যাওয়া একজন নারীর সম্মান ও মর্যাদা সমাজের চোখে অনেক বেশি। কিন্তু আল্লাহর চোখেও কি তাই? ওয়াল্লাহি, আল্লাহর চোখে যদি তা হতো, তবে কখনোই ঐ চারজন নারী জান্নাতের সর্বোচ্চ আসনের অধিকারী হতেন না।


এবার একটু চিন্তা করে দেখি, কাদের থেকে এই বিকৃত চিন্তার সূচনা?? কারা আমাদেরকে এমন বিকৃত মানসিকতা উপহার(!) দিচ্ছে?

নিঃসন্দেহে ইসলামের বিপরীতে অবস্থিত কিছু মানুষের মগজ থেকে এসবের আগমন। যেই মগজে শয়তান দখল বসিয়ে ভিত্তিহীন কথা বের করে। আমি একবার এখানে এক feminist activist এর সাথে কথা বলেছিলাম। অমুসলিম এক মেয়ে। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা অধিকার চাও ঠিক আছে। কার সমান অধিকার চাও? পুরুষের সমান??

হাস্যকর, একজন নারী হয়ে, নারীত্বকে বিলীন করে দিয়ে "পুরুষ জাত"এর সমান হওয়াটাই নাকি আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত!

তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমাদের গন্তব্য কী? ওদের গন্তব্য শেষ পর্যন্ত feminist কাউকে সরকারের উঁচু পদে বসানো। আমি বললাম, তাহলে সেটা কি একজন পুরুষের জন্য unfair হয়ে যায় না? আমরা নিশ্চয়ই জানি, নারী ও পুরুষ এক ধাচে চিন্তাভাবনা বা কাজকর্ম করে না। শারীরিক, মানসিক সবখানেই আমাদের কিছু পার্থক্য স্বাভাবিক ভাবেই আছে। তাহলে একজন ফেমিনিস্ট যখন আইন তৈরি করবে, স্বভাবতই তা হবে নারীদের পক্ষে এবং পুরুষের প্রকৃতি ও স্বভাবের বিপক্ষে। কারণ একজন মানুষের পক্ষে বিপরীত লিঙ্গকে ঠিক বিপরীত লিঙ্গের মত করে বোঝা সম্ভব নয়। ঠিক একই কারণে পুরুষদের তৈরি আইনও নারীদের জন্য যথাযথ হয় না। মেয়েটা একমত হয়েছিল।

কিন্তু তার কাছে কোন সমাধান ছিল না। আল্লাহর পরিচয় নিয়ে গাফেল কারো কাছ থেকে আমি সমাধান পাবার আশাও করি না। কিন্তু সুবহান আল্লাহ! আল্লাহ আমাদেরকে ইসলাম দিয়েছেন। প্রতিটা সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। আমাদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট আইন তৈরি করে দিয়েছেন। নারীবাদ বা পুরুষতান্ত্রিক একপেশে আইন নয়, মহান রবের পক্ষ থেকে আগত আইন, যিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা এবং আমাদের সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত। এই মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে আমাদের দায়িত্ব শিখিয়ে দিয়েছেন। তাই আল্লাহপ্রদত্ত দায়িত্বগুলো কখনোই আমাদের ওপর জুলুম, অন্যায়, unfair নয়। হতে পারে না। আল্লাহ তা'আলা নারীকে মাতৃত্ব ও স্ত্রীত্বের দায়িত্ব দিয়ে অসম্মানিত বা জুলুম করেন নি, বরং এই সমাজের নিয়মগুলোই জুলুম। আপনি বুঝতে পারছেন না, আপনার কাছে ইসলামের সমাধানটা যুগের অনুপযোগী মনে হচ্ছে,  আপনার চিন্তার সীমাবদ্ধতার কারণে। খোলা মনে আলোচনায় বসুন, জ্ঞানী ব্যক্তিদের সাথে কথা বলুন, আপনার সংশয়-সন্দেহ দূর হবে ইনশাআল্লাহ।

আমরা আজকে ইসলামের আদর্শ থেকে হয়ত কয়েক আলোকবর্ষ দূরে পড়ে আছি। আমরা পড়াশুনা কমপ্লিট করার জন্য বিবাহের মত প্রয়োজনীয় ইবাদত পালন করতে দেরী করি, চাকরি করার জন্য জন্ম-নিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহার করি! সুবহান আল্লাহ! মা হবার মর্যাদাকে আমরা এতো সহজে উপেক্ষা করে ফেলছি। ক্যারিয়ার নিশ্চিত করতে আজ আমরা স্বামীকে সময় দেওয়ার ফুসরত পাই না। হায়! কোথায় মারইয়াম, খাদিজা, ফাতিমা, কোথায় আমরা! অথচ আমরাই "নারীদের পড়াশুনার বিপরীতে" কেউ কিছু বললে ধেয়ে যাই। তাকে পারলে সেখানেই ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলি। তাকে বুঝাতে যাই, খাদিজাও তো ব্যবসা করেছিল, হুম! অথচ আমরা ভুলে যাই, খাদিজা ব্যবসা করার জন্য্যে বাড়ির বাইরে পা রাখেন নি। আমরা মনে রাখতে চাই না, খাদিজা, মারইমায়, আসিয়া, ফাতিমাদের জীবনের অন্যান্য দিকগুলো! আমরা এভাবে ভাবি না যে, উনারা তো সেক্যুলার পড়াশুনাও করেন নি, তবে আমরা কেন ফিতনা মাথায় নিয়েও সেক্যুলার পড়াশোনা ও চাকরি-বাকরি করবো?


এবার একটু চিন্তা করে দেখুন, কেন আমরা "সেক্যুলার শিক্ষা"র বিপরীতে যুক্তি শুনলে এতো খেপা? কেন স্ত্রী হবার কথা, বাচ্চা নেবার কথা আসলেই আমাদের মুখ চুপসে যায়? কেন আল্লাহর দেওয়া নারীদের ঘরের ভেতরে থাকার নির্দেশটা আমাদের চোখে পড়ে না?

এর কারণ আমরা আসলে ইসলামকে দেখি কাফেরদের লেন্স থেকে। তারা যেভাবে দেখাতে চায়, সেভাবে। কাফের ভার্সনের একটা মডারেট ইসলাম তৈরি হয়েছে। সেখানে ইসলামের লেবাস জড়িয়ে জাহেলিয়াত পালন করা যায়। আমরা জেনে না জেনে সেটাই করি। কাফেররা আমাদেরকে ফেমিনিজম শেখাতে চেয়েছে, তারা সফল। আমাদেরকে ক্যারিয়ারিস্ট করতে চেয়েছে, সেখানেও আমরা ধোঁকা খেয়ে বসে আছি।

আজকে সমাজে সম-অধিকারের জয়জয়কার। নারীবাদের দাপটে টেকা দায়! তাই আমি অবশ্যই মনে করি, নারীদের ব্যাপারে ইসলামের সঠিক শিক্ষা, সাহাবীদের ঐতিহ্য ও জান্নাতী রমণীদের জীবন থেকে মানুষকে বোঝানো দরকার খুবই বেশি। এই দায়িত্ব শুধু আলেমদের নয়, এই দায়িত্ব আপনার-আমার-সবার। এই পুরো পোস্টটি লেখার কারণ একজন মাওলানার ভিডিও। যিনি উত্তম ভাষাশৈলী ব্যবহার না করলেও মূলত উপরের বক্তব্যই দিতে চেয়েছেন। এই আলেমকে আমি চিনি না, কোনদিন নামটাও শুনি নি, আর আমি তার অনুসারীও নই। কিন্তু আল্লাহর শপথ, আমি এই আলেমের চাইতে তাদেরকে অনেক বেশি ভয়াবহ ও ইসলামের শত্রু মনে করি, যারা ইসলামের সত্যিকার শিক্ষাকেই বদলে দিচ্ছে। যারা ক্রমাগত কাফেরদের চিন্তাচেতনায় প্রভাবিত হচ্ছে। যারা সমাজের বুদ্ধিজীবিদের এজেন্ডা পালনের জন্যই ইসলামকে ব্যবহার করে চলেছে, জেনে কিংবা না-জেনে।


কই আমরা তো তাদের দিকে তেড়ে যাচ্ছি না। আসলে তারা এতোটাই সূক্ষ্মভাবে আমাদের মন ও মগজকে কব্জা করে ফেলেছে যে, আমরা তাদের চালগুলো ধরতেই পারিনা। কিন্তু প্রভাবিত আমরা নিঃসন্দেহে হয়েছি। আর তাই তো, সেক্যুলার লেখাপড়া বাদ দেবার কথা শুনলে আমাদের মাথা গরম হয়ে যায়। কিন্তু ঘরে বসে স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার কথায় আমরা ইতস্তত করি। তখন আর একমত হতে পারি না যে ইসলাম নারীদের বাইরে যাওয়া অপছন্দ করে। তখন আমাদের চুলকানি শুরু হয়। বাচ্চা পেছানোর কথা উঠলে আমরা তো নির্বিকার। এগুলো যেন কোন সমস্যাই না! নিকাব পরে অনেকের মুখেই শুনি - তুমি কেন নিকাব পরো, এটা কি ফরয? অথচ সেক্যুলার পড়াশোনা একটা মুবাহ বা ঐচ্ছিক কাজ। সেটা নিয়ে কিন্তু আমাদের মনে এতো প্রশ্ন নেই। আমরা আসলে কোন বিষয়টাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি? আল্লাহর ইবাদত, নাকি সমাজের রীতিনীতি? শেষ পর্যন্ত, আমরা আসলে ঐ ইসলামের নামে দুই নৌকায় পা দিয়েই চলছি। জাহেলিয়াতের বীজ এখনো আমাদের মাথায় গেঁড়ে আছে বলেই ইসলামের শিক্ষা মেনে নিতে আমাদের গা কুটকুট করে।

আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত দিক! আমাদেরকে জাহেলিয়াত থেকে মুক্তি দিক, আমীন।

আমি নিজে সেক্যুলার এডুকেশন নিয়ে পড়ে আছি। আমি হয়ত স্বামীর মন জয় করতে পারছি না, কিন্তু তারপরেও আজ এই বড় বড় কথাগুলো বললাম। নিজের দুর্বলতার কারণে যেন সত্য প্রকাশে আমরা কুণ্ঠিত না হই। সবার কাছে দু'আ চাই যেন সমাজের বেড়াজাল থেকে নিজের চিন্তাচেতনাকে মুক্ত করতে পারি, যেন ইসলামের আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে পারি। আমি একজন বিবাহিত নারী। সুতরাং স্ত্রী এবং মা হিসেবে আমার সাফল্যেই আমার দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্য নিহিত। এই কথাটা আমরা সব মুসলিমাহ যত তাড়াতাড়ি বুঝবো, ততোই মঙ্গল।


সবাই আমার জন্য দু'আ করবেন যেন নেক স্ত্রী ও নেক সন্তানদের মা হতে পারি। জাযাকুমুল্লাহু খাইর।

Collected From
Sister
Anika Warda Tuba

একটি আত্ম-উপলব্ধি এবং মু’মিন ভাই-বোনদের প্রতি একটি নাসিহা ...

আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, হে আদম সন্তান! তোমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ যদি সৎ কাজে খরচ কর, তাহলে তোমাদের কল্যাণ হবে। আর যদি তা আটকে রাখ, তাহলে তোমাদের অমঙ্গল হবে। তবে তোমাদের প্রয়োজন পরিমাণ সম্পদ রেখে দিলে তুমি তিরস্কৃত হবে না। সর্বপ্রথম তোমরা প্রতিপাল্যদের থেকে খরচ করা শুরু করো।

[সহীহ মুসলিম ১০৩৬ , আত-তিরমিযী ২৩৪৩ ]

যেদিন প্রথম এই হাদিসটা আমি পড়লাম, একটু চমকে উঠলাম। দম বন্ধ করে কয়েকবার পড়লাম একই হাদিস। বোঝার চেষ্টা করলাম এখানে কি বলা হচ্ছে। সুবহানআল্লাহ! প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস রাখলে সেটা আখিরাতের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনবে আর আখিরাতে এর জন্য তিরস্কার করা হবে !!! কি ভয়ানক কথা! আমি ভয়ে ভয়ে আমার রুমের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। আমার আত্মা কেঁপে উঠল। একি! রুম ভর্তি দুনিয়ার অপ্রয়োজনীয় জিনিস! এই রুমের কয়টা জিনিস আমার দরকারে লাগছে? কত জামা-কাপড়, জুতা, বই-খাতা যেগুলোর অনেকগুলোই অযথাই পড়ে আছে, অনেকদিন পর পর ব্যবহার করা হয় অথবা ব্যবহারই হয়ত করা হয়না এরকম জিনিসের অভাব নেই।

পরিচিত এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। এক রুমের বাসা, একটা পর্দা দিয়ে ঐ রুমটাকেই ভাগ করা হয়েছে যেন বাইরের লোকজন আসলে ঘরের মেয়েরা পর্দার ওপাশে আড়ালে থাকতে পারে। সেদিন আমি অবাক হয়ে উপলব্ধি করেছিলাম, একটা মানুষের বেঁচে থাকতে খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই!

“প্রয়োজন” এর সংজ্ঞাটা ইসলাম কিভাবে দিয়েছে?

আবূ ‘আমর ‘উসমান ইবনু আফ্ফান (রা) থেকে বর্ণিত, নাবী (সা) বলেছেন: আদম সন্তানের তিনটি বস্তু ব্যতীত কোন বস্তুর অধিকার নেই। তা হলো: তার বসবাস করার জন্য একটি ঘর, শরীর ঢাকার জন্য কিছু কাপড় এবং কিছু রুটি ও পানি।
[ তিরমিযী ৪০৬ / ২৩৪১, মিশকাত ৫১৮৬ ]

এই যদি হয় আমাদের দুনিয়াবী “প্রয়োজন”, তাহলে এর পিছনে এত কেন ছোটা? আসলে আমরা কি শুধুই আমাদের প্রয়োজন পূরণ করতে চাই? নাকি আরও বেশি কিছু চাই? দ্বীনদার মেয়েদের মুখে আজকে শোনা যায়, ইসলাম “প্রয়োজনে” মেয়েদের ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করা সমর্থন করে। সুবহানআল্লাহ! কয়জন মেয়ে উপরের তিনটা জিনিস থাকার অভাবে বাইরে গিয়ে চাকরি করছে?

আয়িশাহ (রা) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সা) এর ইন্তিকালের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর পরিবার কোনদিন একটানা দু’দিন পেট ভরে যবের রুটিও খেতে পায়নি। [বুখারী ৫৪১৬ , মুসলিম ২৯৭০]

উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে দেখেছি, দিনভর তাঁর নাড়িভুঁড়ি পেঁচিয়ে থাকত, অথচ তাঁর পেটে দেয়ার মত নিকৃষ্ট খেজুরও জুটতো না। [মুসলিম ২৯৭৮]

রাসূলুল্লাহ (সা) এর কলিজার টুকরা কন্যা ফাতিমা (রা) এর হাতে ফোস্কা পড়ে গিয়েছিল যব পিষতে পিষতে, যিনি হলেন জান্নাতের নারীদের সর্দারনী। আমাদের অভাব কি এর চেয়েও বেশি? রাসূলুল্লাহ (সা) এত অভাব থাকার পরেও তো তাঁর স্ত্রী-কন্যাদের বাইরে গিয়ে কাজ করতে বলেননি!

সত্য কথা হচ্ছে, আমাদের চাওয়াটা শুধু থাকা-খাওয়া-পরার চাওয়া না। আমাদের চাওয়া আরও বেশি কিছু। এক রুমের বাসাতে আমাদের চলবে না। কয়েক রুম থাকা লাগবে। সাজানো সংসার লাগবে। সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য বাড়তি ইনকাম লাগবে। মাঝে মাঝে অবকাশ যাপনের জন্য ঘুরতে যাওয়া লাগবে – প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে বা কোন দর্শনীয় স্থান! সিলেট-কক্সবাজার-রাঙ্গামাটি-বান্দরবান-পারলে দেশের বাইরে!!! কয়েক পদের তরকারি ছাড়া আমাদের চলে না। মাছ-গোশত-সবজি-ডাল-ডিম-দুধ সব আমাদের প্রতিদিনের খাবারের লিস্টে থাকতে হবে। মাঝে মাঝে স্বামী-সন্তান নিয়ে বাইরে দামী রেস্টুরেন্টে, কেএফসি, পিৎজা-হাটে খেতে যাওয়া লাগবে। এন্ড্রয়েড না হলে আমাদের চলেই না। ঘরে ডেস্কটপ দিয়ে যাবতীয় কাজ হয়ে গেলেও ট্যাব-ল্যাপটপও থাকা চাই। আল্লাহর অশেষ করুণায় আমরা যারা দ্বীনের পথে এসেছি, তারা একটু নিজেদের কাপড়ের ড্রয়ারটা খুলে দেখি তো, কয়টা বোরকা আছে আমাদের? ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের, কালারের বোরকা! একেক অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য একেকটা বোরকা, স্কার্ফ, খিমার, কাফতান, ফ্রক আবায়া, গাউন আবায়া, বাটারফ্লাই আবায়া — সবই একসাথে থাকা চাই! আমাদের একেকজনের বিয়েতে আমরা কি এলাহী কান্ড করি একবার ভেবে দেখি তো! পাত্র পক্ষের কাছে কনে পক্ষের ডিমান্ডের কথা একবার ভাবুন। হাই স্যালারির জব, সাজানো ফ্ল্যাট, রুমের সাথে অ্যাটাচড বাথ, গাড়ি থাকা লাগবে। ২০-৩০ লাখ টাকা দেন-মোহর। বিয়ে ঠিক হলে চার-পাঁচদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান, শাড়ি-অলংকার থেকে শুরু করে গাড়ি সাজানো, বাসর ঘর সাজানো কিচ্ছু বাদ রাখি না! বিলাসিতার সাগরে ডুব দিয়ে আমরা এই আমাদেরকে দিয়েই আল্লাহর দ্বীন কায়েমের স্বপ্ন দেখি, শাহাদাতও লাভ করতে চাই, জান্নাতও পেতে চাই!!! নিজেদের সাথে কি নির্মম উপহাস!

আমার কথায় রাগ করছেন? ওয়াল্লাহি, এইসব আমার কথা না। কুরআন-হাদিসের কথা।

“ঐশ্বর্য, প্রাচুর্য ও অহংকার তোমাদের মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে, তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না কবরে পৌঁছে যাও” [সূরা আত-তাকাসুরঃ ১]

আমর ইবনু আওফ আনসারী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের জন্য দারিদ্রের ভয় করছি না, বরং এই ভয় করছি যে, দুনিয়ার প্রাচুর্য তোমাদের সামনে প্রসারিত করা হবে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য যেমন প্রসারিত করা হয়েছিল। তারপর তারা যেমন লালসা ও মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল, তোমরাও তেমন লালসাগ্রস্ত হয়ে পড়বে এবং এই দুনিয়াবী প্রাচুর্য তাদেরকে যেমন ধ্বংস করেছে, তেমনি তোমাদেরকেও ধ্বংস করবে। [বুখারী ৩১৫৮, মুসলিম ২৯৬১]

আবূ হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি, জেনে রাখো, দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছুই অভিশপ্ত। কিন্তু, আল্লাহ তায়ালার যিকির ও তিনি যা পছন্দ করেন এবং জ্ঞানী ও জ্ঞানার্জনকারী (অভিশপ্ত নয়)। [তিরমিযী ১৮৯১/২৩২২, মিশকাত ২১৭৬]

কা’ব ইবনু ইয়ায (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেন, প্রত্যেক জাতির জন্য একটা ফিতনা (পরীক্ষার বস্তু) আছে। আমার উম্মতের ফিতনা হল সম্পদ। [তিরমিযী ১৯০৫/২৩৩৬]

কা’ব ইবনু মালিক (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেন, সম্পদ ও আভিজাত্যের প্রতি মানুষের লোভ তার দ্বীনের যে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে, বকরীর পালে ছেড়ে দেয়া দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়েও বকরীর পালকে তত ক্ষতি করতে পারে না [তিরমিযী ১৯৩৫/২৩৭৬, মিশকাত ৫১৮২]

উসামাহ ইবনু যায়িদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা) বলেছেন, আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখেছি, এতে প্রবেশকারীদের বেশিরভাগই নিঃস্ব-দরিদ্র আর সম্পদশালীদেরকে আটকে রাখা হয়েছে (জান্নাতে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না)। [বুখারী ৫১৯৬, মুসলিম ২৭৩৬]

এখন দেখি তো আমাদের সালাফদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল?

আল্লাহর রাসূল (সা) ও তাঁর সাহাবা (রা) রা তাঁদের স্ত্রীদের দেন মোহর দিয়েছিলেন মাত্র চারশ দিরহাম, এর থেকে কমও ছিল। প্রিয় রাসূল (সা) তাঁর স্ত্রীদের এত ছোট ছোট ঘরে রাখতেন যে তিনি যখন তাঁর কোন একজন স্ত্রীর ঘরে সালাতে দাঁড়াতেন, সিজদাহ করার সময় তাঁর সেই স্ত্রীকে পা ভাঁজ করে রাখতে হত। সামান্য যবের বিনিময়ে রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর বর্মটি দিনের পর দিন বন্ধক রাখতেন। তাঁর পরিবারের জন্য সকাল-সন্ধ্যায় এক সা’ গমও জুটতো না। রাসূল (সা) চাটাইয়ের উপর শুয়ে ঘুমাতেন যার কারণে তাঁর শরীরে চাটাইয়ের দাগ পড়ে যেত।

সালমান ফারসী (রা) একজন কিন্দি মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। শ্বশুরালয়ে সাজানো বাসর ঘর তিনি পছন্দ করলেন না। তাঁর আদেশে সব সাজ-সজ্জা খুলে ফেলা হল। বাসর ঘরে বহু জিনিসপত্র দেখে তিনি বললেন, আমার বন্ধু মুহাম্মাদ (সা) আমাকে ওসিয়ত করেছিলেন, দুনিয়ায় তোমার জিনিসপত্র যেন একজন মুসাফিরের সাজ সরঞ্জামের মত হয়।

আবু দারদা (রা) এর কন্যা দারদাকে ইয়াজিদ ইবনে আবু মু'আবিয়া বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে আবু দারদা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে একজন অত্যন্ত দরিদ্র দ্বীনদার যুবকের সাথে কন্যার বিয়ে দেন। তিনি কেন এই কাজ করলেন জিজ্ঞাসিত হলে আবু দারদা (রা) উত্তর দেন, আমি আমার মেয়ের দ্বীনদারীর কথা চিন্তা করেছি। ইয়াজিদের সংসারে মাথার কাছে থাকবে গোলাম, চোখের সামনে থাকবে জৌলুস। সেই সময় আমার মেয়ের দ্বীনদারী কোথায় থাকবে?

আবু যার গিফারী (রা) এর বাড়িতে এক লোক এসে তার ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখল, ঘরে কোন আসবাবপত্র নেই। লোকটি জিজ্ঞেস করলো,“আবু যার, আপনার সামান পত্র কোথায়?” আবু যার (রা) উত্তর দিলেন, ‘আখিরাতে আমার একটি বাড়ী আছে। আমার সব উৎকৃষ্ট সামগ্রী সেখানেই পাঠিয়ে দিই’।

আমীরুল মুমিনীন হযরত আবু বকর (রাঃ) এর স্ত্রীর মিষ্টি খাওয়ার খুব ইচ্ছে হল। তিনি স্বামীকে মিষ্টি কিনে আনতে বললেন। সারা মুসলিম জাহানের আমীর আবু বকর (রা) জানালেন তার মিষ্টি কেনার সামর্থ নেই। আমীরুল মুমিনীনের স্ত্রী এরপর প্রত্যেক দিনের খরচ থেকে টাকা বাঁচিয়ে জমা করা শুরু করলেন। কিছু অর্থ জমা হওয়ার পর তা স্বামীকে দিয়ে বললেন মিষ্টি কিনে আনতে। আবু বকর (রা) জিজ্ঞেস করলেন, এই অর্থ কোথা থেকে এসেছে? স্ত্রী বললেন প্রতিদিনের খরচ থেকে বাঁচিয়ে তিনি এই অর্থ জমা করেছেন। আবু বকর (রাঃ) তখন বললেন, এটার তো তাহলে আমার আর দরকার নেই! এই পরিমাণ অর্থ তাহলে আমি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অতিরিক্ত নিচ্ছি। এরপর তিনি সেই অর্থ স্ত্রীর জন্য মিষ্টি কেনার বদলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে আসেন।

উমার (রাঃ) এর পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) পিতাকে একবার দাওয়াত দিলেন। উমার (রাঃ) খেতে বসে দেখলেন আইটেম আছে মাংস, রুটি আর ঘি। উমার (রাঃ) উঠে পড়লেন এবং বললেন, আমি খাব না। তিনি বললেন, মাংস থাকার পরও তুমি ঘি আনলে কেন? আব্দুল্লাহ ইবনে উমার বললেন, আমি আপনার জন্য যে টাকা নিয়ে মাংস কিনতে গিয়েছিলাম সেইটা খরচ করেছি। মাংস সস্তায় পেয়ে যাওয়ায় বাকি টাকা দিয়ে ঘি কিনে এনেছি। তখন উমার (রাঃ) বললেন, “ওয়াল্লাহি। আমি রাসূল (সঃ) কে কোনদিন এক তরকারীর বেশী দিয়ে খেতে দেখিনি।”
এই আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) আর্থিকভাবে বেশ স্বচ্ছল থাকার পরেও জীবনে কোনদিন পেট ভরে আহার করেননি রাসূল (সঃ) এবং তার পিতা উমার (রাঃ) এর ক্ষুধার কষ্টের কথা স্মরণ করে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাসূল (সঃ) কে এত কঠোরভাবে অনুসরণ করতেন যে মা আয়িশা (রাঃ) তার সম্পর্কে বলেছিলেন, ইবনে উমারের মত আর কেউ রাসুলুল্লাহর (সঃ) পদাঙ্ক অনুসরণ করে না।

আসহাবে সুফফার সাহাবা রা (রা) এত ক্ষুধার্ত থাকতেন যে সালাতে দাঁড়িয়ে তারা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে ঢলে পড়তেন। সালাত শেষে রাসূলুল্লাহ (সা) তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতেনঃ যদি তোমরা জানতে পারতে যে, তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট কি মর্যাদা ও সম্পদ সঞ্চিত আছে, তাহলে ক্ষুধা ও অভাব আরো বৃদ্ধি পাওয়াই তোমরা পছন্দ করতে। [তিরমিযী ১৯৩০/২৩৬৮]

সালাফদের দুনিয়াবিমুখ জীবন নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই কেউ কেউ ধনী সাহাবা (রা) দের কথা বলা শুরু করে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ধনী হওয়া কি পাপ তাহলে? উসমান বিন আফফান (রা), খাব্বাব বিন আরাত (রা),আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা) তো ধনী ছিলেন! এই কথা বলে যারা বিলাসিতাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেন, তাদের জন্য নিচের হাদিসগুলোঃ

আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা) এর সামনে ইফতারের সময় খাদ্য পরিবেশন করা হল। তিনি বললেনঃ মুস‘আব ইবনে উমাইর (রা) শহীদ হয়েছেন এবং তিনি আমার চাইতেও ভাল লোক ছিলেন। তাঁকে কাফন দেয়ার মত একটি চাদর ছাড়া কোন কাপড়ের ব্যবস্থাই ছিল না। তা দিয়ে তাঁর মাথা আবৃত হলে পা দু’টি অনাবৃত হয়ে যেত এবং পা আবৃত হলে তাঁর মাথা অনাবৃত হয়ে যেত। তারপর আমাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুনিয়ার সম্পদ দেয়া হল। ফলে আমরা আতংকিত হয়ে পড়লাম যে, আমাদের সৎ কাজের বিনিময় দুনিয়াতেই দেয়া হচ্ছে নাকি। তারপর তিনি কেঁদে ফেললেন, এমনকি খাদ্য ত্যাগ করলেন। [বুখারী ১২৭৫]

খাব্বাব বিন আরাত হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে হিজরত করেছি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। কাজেই এর সওয়াব আমরা আল্লাহর কাছেই পাব। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এর বিনিময় ভোগ না করেই মারা গেছেন। মুস’আব ইবনে উমাইর (রা) তার মধ্যে একজন। উহূদ যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তার সম্পদের মধ্যে রেখে যান মাত্র একটি রঙ্গিন পশমী চাদর। আমরা (কাফন দেয়ার জন্য চাদরটি দিয়ে) তাঁর মাথা ঢাকতে চাইলে পা অনাবৃত হয়ে যেত, আর পা ঢাকতে চাইলে তার মাথা অনাবৃত হয়ে যেত। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর মাথা ঢেকে দিতে এবং তাঁর পায়ে ‘ইযখির’ ঘাস রেখে দিতে আমাদেরকে আদেশ করেন। এখন আমাদের কারো কারো অবস্থা এমন যে, তার ফল পেকে আছে এবং তিনি তা কেতে ভোগ করছেন (অর্থাৎ ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের মধ্যে জীবনযাপন করছেন)। [বুখারী ১২৭৬, মুসলিম ৯৪০]

উম্মতের শ্রেষ্ঠ মানুষগুলো ধনী হওয়ার কারণে সবসময় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতেন এই ভেবে যে তাদের সমস্ত আমলের প্রতিদান দুনিয়াতেই দিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা। সেখানে আমরা উম্মতের তুচ্ছ কিছু মানুষ ধনবান হওয়ার ব্যাপারে কোন আতংক অনুভব করিনা। উল্টো ধনী সাহাবী (রা) দের কথা বলে আমাদের ভোগ-বিলাসিতাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করি। সুবহানআল্লাহ!

ধনবান হয়ে সেই ধন-মাল উপভোগ করতেন না আল্লাহর রাসূলের সাহাবীরা। সারাক্ষণ ধান্দায় থাকতেন কিভাবে আল্লাহর দেয়া সেই সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান-সাদাকাহ করে দেওয়া যায়।

আবূ হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা) বলেন, আমার নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও যদি থাকে এবং আমার ঋণ পরিশোধের সম-পরিমাণ ছাড়া তিনদিন অতিক্রম হতে না হতেই আমার নিকট এর কিছুই অবশিষ্ট না থাকে, তাহলে এতেই আমি সন্তুষ্ট হবো। [বুখারী ২৩৮৯, মুসলিম ৯৯১]

আসমা বিন আবু বকরের পুত্র আব্দুল্লাহ বলেন, “আমি আমার মা আসমা ও খালা আয়িশা থেকে অধিক দানশীলা কোন নারী দেখিনি। তবে তাঁদের দু’জনের দান প্রকৃতির মধ্যে প্রভেদ ছিল। আমার খালার স্বভাব ছিল, প্রথমতঃ তিনি বিভিন্ন জিনিস একত্র করতেন। যখন দেখতেন, যে যথেষ্ট পরিমাণ জমা হয়ে গেছে, তখন হঠাৎ করে একদিন তা সবই গরীব মিসকীনদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। কিন্তু আমার মা’র স্বভাব ছিল ভিন্নরূপ। তিনি আগামীকাল পর্যন্ত কোন জিনিস নিজের কাছে জমা করে রাখতেন না।”

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদিন নবী (সা) এর সাথে আমরা এক সফরে ছিলাম। তখন জনৈক ব্যক্তি তার বাহনে চড়ে এসে ডানে ও বামে তাকাতে লাগল। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, যার নিকট অতিরিক্ত বাহন আছে, সে যেন তা এমন ব্যক্তিকে দান করে যার বাহন নেই। যার নিকট অতিরিক্ত সরঞ্জাম আছে, সে যেন তা এমন ব্যক্তিকে দান করে, যার কাছে কোন সরঞ্জাম নেই। তিনি এভাবে বিভিন্ন প্রকার জিনিসের নাম উল্লেখ করলেন। আমাদের তাতে মনে হলো যে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন সম্পদ রাখার কারো অধিকার নেই। [মুসলিম ১৭২৮]

যুগে যুগে মুসলিমদের এই দুনিয়া বিমুখ জীবনের কারণেই তারা আল্লাহর দ্বীনকে এই জমিনে ছড়াতে পেরেছিলেন। আর রাসুল (সা) মু’মিনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে এই সরলতা আর সাদামাটা জীবনের কথাই বলেছেন।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, “মুমিনেরা অতি সাধারণ এবং অনুগত উটের মত সহজ, যখন তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তখন অনুসরণ করে, আর যখন শক্ত পাথরের ওপর বসানো হয় তখনও তা বসে পড়ে।” [তিরমিযি ৫০৮৬]

দ্বীনের পথে আসা আমার প্রিয় মুসলিম ভাই-বোনেরা! আমার নিজের এই আত্ম-উপলব্ধিটা আপনাদের সাথে শেয়ার করার কারণঃ আমি জানি, আপনারা অন্তর দিয়ে আল্লাহর দ্বীনকে কত ভালবাসেন, আপনারা আল্লাহর দ্বীনকে আল্লাহর যমীনে কায়েম করতে চান, খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার বিশাল দায়িত্ব পালনে নিজেকে কুরবানী করতে চান, মাশাআল্লাহ! আপনারা আল্লাহর সৈনিক হতে চান! সুবহানআল্লাহ! আল্লাহর সৈনিক!!! যেমন তেমন বিষয় না! অনেক বড় কিছু। আল্লাহর সৈনিকেরা তো আর দশটা সাধারণ মুসলিমের মত হতে পারে না। তাদের জীবন হবে অন্যরকম। হ্যাঁ, একদম অন্যরকম। আমরা ভোগ-বিলাসিতাকে দুই হাতে ঠেলে সরিয়ে দিব। বেঁচে থাকতে যতটুকু আসলেই “প্রয়োজন” এর বেশি কিছু আমরা কখনো পেতে চাইব না। না আমরা প্রাধান্য দিব আমাদের কোন শখ-আহ্লাদকে। হতে পারে আমাদের কারো ভাল ভাল খাওয়ার শখ,  কারো শখ ঘুমানোর, কারো সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের কাপড়-চোপড় আর গয়নাগাটির শখ, কারো শখ ঘর সাজানোর কিংবা কারো দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর শখ ইত্যাদি। কোনদিন শুনেছেন কোন সাহাবী (রা) তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার উদ্দেশ্যে দেশে/বিদেশে ঘুরতে গিয়েছেন? এটা বললাম এই কারনে আমার নিজের শখ হচ্ছে, ঘুরে বেড়ানো। আমরা আমাদের এইসব শখ-আহ্লাদকে পা দিয়ে মাড়িয়ে নিজেকে প্রস্তুত করব আল্লাহর সৈনিক হিসেবে। এভাবে, হ্যাঁ ঠিক এভাবেই দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা (আল-ওয়াহান) কে পায়ে মাড়ালেই ক্বিতালের প্রতি আমাদের অন্তরে তৃষ্ণা জেগে উঠবে। তখনই আমরা আল্লাহর যোগ্য বান্দার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারব - যাদের আল্লাহ কবুল করে নিয়েছেন আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদের ময়দানে।

শেষ করব আর একটা হাদিস দিয়েঃ

আবু উমামা ইয়াস ইবনে সালাবা আল-আনসারী আল-হারিসী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাহাবীগণ তাঁর কাছে দুনিয়া সম্পর্কে আলোচনা করলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ তোমরা কি শুনছো না, তোমরা কি শুনছো না? আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতা ত্যাগ করা ঈমানের লক্ষণ, আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতা ত্যাগ করা ঈমানের নিদর্শন (অর্থাৎ সাদাসিধা ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন)"। [আবু দাউদ ৪১৬১, ইবনে মাজাহ ৩৩২৪/৪১১৮]



Collected From
Sister
Fatimah Zahra

When will help and victory from Allah come? What are the means of attaining it?

Praise be to Allah.

Firstly:
Allah’s help to the Muslims against their disbelieving enemies who wage war on them is something real and true. Allah, may He be exalted, has promised that to the believers, and has told them that it is near, and that He only delays it for certain significant reasons. The one who has strong faith and true certainty will realise that it is indeed near as the Lord, may He be exalted, has told us.
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“Or think you that you will enter Paradise without such (trials) as came to those who passed away before you? They were afflicted with severe poverty and ailments and were so shaken that even the Messenger and those who believed along with him said, ‘When (will come) the Help of Allah?’ Yes! Certainly, the Help of Allah is near!”
[al-Baqarah 2:214].
Imam Ibn Jareer at-Tabari (may Allah have mercy on him) said:
What this means is: Or do you think that you, O believers in Allah and His Messenger, will enter Paradise without anything befalling you like that which befell those who came before you among the followers of the Prophets and Messengers, of hardship, trials and tests? You will be tested as they were tested, with “severe poverty”, which is severe hardship and want, and “ailments”, which is pain and sickness. But you have not yet been shaken as they were shaken, i.e., you have not yet suffered extreme fear and terror at the hands of your enemy, so that you think that the help of Allah is slow in coming and you say “When will Allah help us?” Then Allah told them that His help was near to them, and that He would cause them to prevail over the enemy and defeat them. Then He fulfilled what He had promised them, and made their word supreme, and extinguished the flames of war lit by those who disbelieved.
End quote from Tafseer at-Tabari (4/288)
Shaykh Muhammad ibn Saalih al-‘Uthaymeen (may Allah have mercy on him) mentioned some of the lessons that we learn from this verse. They include the following:
1.     The individual should not ask for help except from the One Who is able to give it, namely Allah, may He be glorified and exalted, because He says (interpretation of the meaning): “‘When (will come) the Help of Allah?’
2.     The methodology of those who believe in the Messengers is the same as the methodology of the Messengers, and they say what they say, because Allah, may He be exalted, says: “even the Messenger and those who believed along with him said, ‘When (will come) the Help of Allah?’” So they say the same thing, seeking to expedite divine help.
3.     The perfect nature of the power of Allah, may He be glorified and exalted, because He says: “Yes! Certainly, the Help of Allah is near!
4.     The wisdom of Allah, as He withholds help for a certain period of time, even though it is near.
5.     Patience at the time of calamity for the sake of Allah, may He be glorified and exalted, is one of the means of entering Paradise, because what the verse means is: Have patience so that you may enter Paradise.
6.     The believers are given the glad tidings of victory so as to strengthen their morale, so that they will continue in jihad, hoping for the divine help that they were told about.
End quote
Tafseer Soorat al-Baqarah (3/42)

Secondly:
The help of Allah that is near is not for everyone who claims to believe or claims to be a Muslim; rather it is only for those who truly believe in their hearts and carry out their duties as enjoined by Islam.
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“Allah has promised those among you who believe, and do righteous good deeds, that He will certainly grant them succession to (the present rulers) in the earth, as He granted it to those before them, and that He will grant them the authority to practise their religion, that which He has chosen for them (i.e. Islam). And He will surely give them in exchange a safe security after their fear (provided) they (believers) worship Me and do not associate anything (in worship) with Me. But whoever disbelieved after this, they are the Fasiqoon (rebellious, disobedient to Allah).
And perform As-Salat (Iqamat as-Salat), and give Zakat and obey the Messenger (Muhammad SAW) that you may receive mercy (from Allah)”
[an-Noor 24:55, 56].
Al-Haafiz Ibn Katheer (may Allah have mercy on him) said:
This is a promise from Allah to His Messenger (blessings and peace of Allah be upon him) that He will cause his ummah to gain authority in the land, i.e., become leaders of people and rulers over them, and by means of them the people’s affairs will be put right and the people will submit to their rule, and after having being afraid of the people, they will enjoy security and will rule over them. And He, may He be glorified and exalted, did indeed do that, may He be praised. The Messenger of Allah (blessings and peace of Allah be upon him) did not die until Allah enabled him to conquer Makkah, Khaybar, Bahrain, the entire Arabian Peninsula and all of the land of Yemen; he took the jizyah from the Magians of Hajar and from some of the border regions of greater Syria. Heraclius, the ruler of Byzantium, exchanged gifts with him, as did the ruler of Egypt and Alexandria, al-Muqawqis, the kings of Oman, and the Negus, the ruler of Abyssinia, who came to the throne after Ashamah, may Allah have mercy on him and honour him.
Then when the Messenger of Allah (blessings and peace of Allah be upon him) died, and Allah chose for him that which is with Him of honour, Abu Bakr as-Siddeeq became the ruler (caliph) of the Muslims. End quote.
Tafseer Ibn Katheer (6/77)
Shaykh ‘Abd ar-Rahmaan as-Sa‘di (may Allah have mercy on him) said:
This is one of the true promises of Allah, that was proven to be true and was fulfilled. He promised those among this ummah who adhered to faith and did righteous deeds that He would grant them succession to the present rulers in the earth, and they would have control of it and be in charge of its affairs, and that He would grant them the authority to practice their religion which He has chosen for them, namely the religion of Islam, which is superior to all other religions. He has chosen it for this ummah, because of its virtue and honour, by enabling this ummah to establish His religion and to adhere to all its teachings and instructions, both apparent and hidden, and to apply them to themselves and to others, because others – namely the followers of other religions and all disbelievers – are subjugated and defeated. And He has promised that He will give them in exchange a safe security after their fear, as one of them could not practice his religion openly and follow what he believed in except by exposing himself to the harm of the disbelievers. Moreover, the Muslims were very few in number compared to others, and the people of the earth had united against them and were plotting and scheming against them.
Allah made these promises to them at the time when this verse was revealed, at which time they had not had the experience of having power or gaining control of the land, or being able to establish the Islamic religion and enjoy complete security, so that they could worship Allah and not associate anything with Him, and not fear anybody except Allah. The first generation of this ummah attained that level of faith and righteous deeds in such a way that they became superior to others and as a result of that Allah enabled them to subjugate lands and peoples, and they were able to conquer vast lands in the east and in the west, and they enjoyed  complete security and control in the land. This is one of the dazzling and amazing signs of Allah. And this is still the case and will remain so until the Hour begins: every time the Muslims achieve a high level of faith and righteous deeds, the promise of Allah will inevitably be fulfilled; the disbelievers and hypocrites are only given power over the Muslims, and sometimes defeat them, because of the degree of shortcomings among the Muslims with regard to their level of faith and righteous deeds. End quote.
Tafseer as-Sa‘di (p. 573).
See also: Adwa’ al-Bayaan by ash-Shinqeeti (6/36); Fath al-Qadeer by ash-Shawkaani (4/69)

Thirdly:
If the people are sincere in their belief in their Lord and their establishing His laws, that is indicative of how they will be when Allah, may He be exalted, gives them power in the land. These are the ones to whom Allah, may He be exalted, has promised His help and support.
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“Those (Muslim rulers) who, if We give them power in the land, (they) order for Iqamat-as-Salat. (i.e. to perform the five compulsory congregational Salat (prayers) (the males in mosques)), to pay the Zakat and they enjoin Al-Maroof (i.e. Islamic Monotheism and all that Islam orders one to do), and forbid Al-Munkar (i.e. disbelief, polytheism and all that Islam has forbidden) (i.e. they make the Quran as the law of their country in all the spheres of life). And with Allah rests the end of (all) matters (of creatures)”
[al-Hajj 22:41].
Shaykh Muhammad al-Ameen ash-Shinqeeti (may Allah have mercy on him) said, after quoting verses which mention the help of Allah, may He be exalted, to the believers:
The words “Those (Muslim rulers) who, if We give them power in the land” [al-Hajj 22:41] indicate that there is no promise of help from Allah unless the believers establish prayer, give zakaah, enjoin what is right and forbid what is wrong. If Allah gives power in the land to some people, and grants them authority, yet despite that they do not establish prayer or give zakaah or enjoin what is right or forbid what is wrong, then they have no promise of help from Allah, because they are not counted as belonging to His party or as being among His close friends to whom He has promised His help. Rather they are the party and close friends of the Shaytaan. If they seek help from Allah based on the fact that He has promised it to them, then their likeness is that of a hired worker who refuses to do the work for which he was hired, then demands his wages. The one who is like that is not rational at all.
Allah, may He be exalted, says [in the preceding verse]: “Truly, Allah is Most Strong, All-Mighty” [al-Hajj 22:40]. The “Most Strong” is the one who overwhelms and is not overwhelmed by anything, as we have stated above several times.
These verses are indicative of the validity of the caliphate of the Rightly-Guided Caliphs: Allah helped them against their enemies because they supported His religion, and they established prayer, gave zakaah, enjoined what is right and forbade what is wrong. So Allah gave them power and caused them to succeed the former rulers in the land, as He says:
“Allah has promised those among you who believe, and do righteous good deeds, that He will certainly grant them succession to (the present rulers) in the earth”
[an-Noor 24:55].
The truth is that the verses mentioned above include the Companions of the Messenger of Allah (blessings and peace of Allah be upon him), as well as those who support the religion of Allah in the most perfect manner. And Allah knows best. End quote.
Adwa’ al-Bayaan (5/272)

Fourthly:
In addition to the above, it must be understood that there are means of attaining divine help; whoever wants divine help without taking these measures is acting in a manner contrary to Islamic teaching and common sense.
Shaykh Sa‘eed ibn ‘Ali ibn Wahb al-Qahtaani (may Allah preserve him) said:
It is known for certain that there are means of attaining divine help for the Muslims against our enemies, by Allah’s leave. These means include the following:
1.     Faith and righteous deeds
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“Allah has promised those among you who believe, and do righteous good deeds, that He will certainly grant them succession to (the present rulers) in the earth, as He granted it to those before them, and that He will grant them the authority to practise their religion, that which He has chosen for them (i.e. Islam). And He will surely give them in exchange a safe security after their fear (provided) they (believers) worship Me and do not associate anything (in worship) with Me. But whoever disbelieved after this, they are the Fasiqoon (rebellious, disobedient to Allah)”
[an-Noor 24:55].
2.     Supporting the religion of Allah, may He be exalted
One of the greatest means of attaining divine help is supporting the religion of Allah, may He be exalted, and adhering to it in word, belief and deed, and calling others to it.
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“O you who believe! If you help (in the cause of) Allah, He will help you, and make your foothold firm.
But those who disbelieve (in the Oneness of Allah Islamic Monotheism), for them is destruction, and (Allah) will make their deeds vain”
[Muhammad 47:7, 8].
3.     Putting one’s trust in Allah whilst taking appropriate measures
Putting one’s trust in Allah whilst making ready one’s resources is one of the greatest factors in victory.
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“Then when you have taken a decision, put your trust in Allah, certainly, Allah loves those who put their trust (in Him)”
[Aal ‘Imraan 3:159].
It is an essential part of putting one’s trust in Allah to take appropriate measures, because putting one’s trust in Him is based on two important foundations:
(i)                depending on Allah and trusting in His promise and help
(ii)              taking appropriate measures as prescribed in Islam. Hence Allah, may He be exalted, says interpretation of the meaning):
“And make ready against them all you can of power, including steeds of war (tanks, planes, missiles, artillery, etc.) to threaten the enemy of Allah and your enemy, and others besides whom, you may not know but whom Allah does know. And whatever you shall spend in the Cause of Allah shall be repaid unto you, and you shall not be treated unjustly”
[al-Anfaal 8:60].
4.     Mutual consultation among those in authority to mobilise and prepare the Muslim armies
The Messenger of Allah (blessings and peace of Allah be upon him) used to consult his companions, despite the fact that his reasoning was perfect and his opinion was sound, in obedience to the command of Allah, may He be exalted, and so as to make his companions feel included in the decision-making process. Allah, may He be glorified, says (interpretation of the meaning):
“and who (conduct) their affairs by mutual consultation”
[ash-Shoora 42:38].
5.     Standing firm when meeting the enemy in battle
One of the factors of divine help is standing firm when meeting the enemy in battle, and not fleeing.
It was narrated from ‘Abdullah ibn Abi Awfa (may Allah be pleased with him) that the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) said: “O people, do not wish to meet the enemy, and ask Allah to keep you safe and sound, but if you do meet them, then be patient and steadfast, and know that Paradise lies in the shade of the swords.”
6.     Courage, heroism and self-sacrifice
Among the greatest means of attaining divine help is acquiring the characteristics of courage and self-sacrifice, and believing that jihad neither brings forward nor puts back the time of death.
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“Wheresoever you may be, death will overtake you even if you are in fortresses built up strong and high”
[an-Nisa’ 4:78].
7.     Du ‘aa’ (supplication) and remembering Allah (dhikr) a great deal
Among the greatest and most powerful factors of victory is seeking the help of Allah and remembering Him a great deal, because He is the Most Strong Who is able to defeat His enemies and grant victory to His close friends.
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“And when My slaves ask you (O Muhammad SAW) concerning Me, then (answer them), I am indeed near (to them by My Knowledge). I respond to the invocations of the supplicant when he calls on Me (without any mediator or intercessor). So let them obey Me and believe in Me, so that they may be led aright”
[al-Baqarah 2:186].
8.     Obedience to Allah and His Messenger (blessings and peace of Allah be upon him)
Obedience to Allah and His Messenger (blessings and peace of Allah be upon him) is one of the greatest factors of victory.
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“And whosoever obeys Allah and His Messenger (SAW), fears Allah, and keeps his duty (to Him), such are the successful ones”
[an-Noor 24:52].
9.     Being united and not differing
The mujaahideen must fulfil the factors of attaining divine help and victory, especially relying on Allah and helping one another, and avoiding disputes and division.
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“And obey Allah and His Messenger, and do not dispute (with one another) lest you lose courage and your strength depart, and be patient. Surely, Allah is with those who are As-Saabirin (the patient ones, etc.)”
[al-Anfaal 8:46].
10.                         Patience and steadfastness
It is essential to be patient in all our affairs, and especially to be patient when fighting the enemies of Allah and His Messenger.
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“O you who believe! Endure and be more patient (than your enemy), and guard your territory by stationing army units permanently at the places from where the enemy can attack you, and fear Allah, so that you may be successful”
[Aal ‘Imraan 3:200].
11.                         Sincerity to Allah alone, may He be exalted
The fighter or warrior cannot be a mujaahid striving for the sake of Allah unless his intention is sincerely and purely for the sake of Allah alone.
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“And be not like those who come out of their homes boastfully and to be seen of men”
[al-Anfaal 8:47].
12.                         Longing for that which is with Allah, may He be glorified and exalted
One of the things that helps to bring victory against the enemies is longing for the bounty and grace of Allah and for happiness in this world and in the hereafter.
13.                         Appointing people of faith as leaders
Another of the means of attaining divine help and victory is giving positions of leadership in the army, military campaigns, regiments and battle fronts to those who are known for their complete faith and righteous deeds, then the next best, then the next best.
Allah, may He be exalted, says (interpretation of the meaning):
“Verily, the most honourable of you with Allah is that (believer) who has At-Taqwa (i.e. one of the Muttaqoon (pious)). Verily, Allah is All-Knowing, All-Aware”
[al-Hujuraat 49:13].
14.                         Seeking protection by adhering to guidelines that save us from doom, defeat and punishment
These guidelines may be summed up as follows:
Firstly:
Repenting and seeking forgiveness for all acts of disobedience and sin, both major and minor. Repentance cannot be accepted unless it fulfils the following conditions:
·        giving up and refraining from all sins
·        resolving not to go back to them
·        regretting what one has done.
If the sin has to do with the rights of another person, then there is a fourth condition, which is to seek forgiveness from the person who was affected.
Secondly:
Fearing Allah, may He be exalted. This means that a person makes his fear of Allah’s wrath, anger and punishment a barrier that will protect him from that.

Thirdly:
Doing all obligatory duties and following them up with naafil (supererogatory) actions.

Fourthly:
Enjoining what is good and forbidding what is evil.

Fifthly:
Following the example of the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) in all beliefs, words and deeds.
Sixthly:

Du‘aa’ (supplication) and beseeching Allah.
End quote from al-Jihad fi Sabeel-Allah: Fadluhu wa Maraatibuhu wa Asbaab an-Nasr ‘ala al-A‘da’, by Shaykh Sa‘eed ibn ‘Ali ibn Wahb al-Qahtaani (p. 21-30_

And Allah knows best http://islamqa.info/en/104119

Pointes to be noted

ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন এমন দশটি বিষয় রয়েছে যাতে কোন উপকার নেইঃ
১. সেই জ্ঞান যা কাজে পরিণত করা হয় না ।
২. সেই কাজ যাতে ইখলাস নেই এবং সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নয় ।
৩. সেই সম্পদ যা জমা করে রাখা হয় কিন্তু এর মালিক দুনিয়াতেও ভোগ করতে পারে না, আবার আখিরাতেও কোন পুরস্কার পায় না ।
৪. সেই অন্তর যাতে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা নেই, আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইচ্ছা নেই ।
৫. সেই শরীর যা আল্লাহকে মান্য করে না, আল্লাহর পথে চলে না ।
৬. আল্লাহর প্রতি সেই ভালোবাসা যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি চাওয়া হয় না ।
৭. সেই সময় যা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে পাপের কাফফারা আদায়ে অথবা হালাল, সাওয়াবপূর্ণ কাজ করার সুযোগ তালাশে ব্যায় হয় না ।
৮. সেই অন্তর যা এমন কিছু নিয়ে ভাবে যেগুলো কোন উপকারে আসে না ।
৯. তাদের পক্ষ নিয়ে কাজ করা যারা আল্লাহর পথে চলতে সহায়তা করে না, আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করে না কিংবা কোন উপকার সাধান করার কোন ক্ষমতা রাখে না ।
১০. এমন কাউকে ভয় করা যে কোন উপকার করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না, জীবন কিংবা মৃত্যু দিতে পারে না, যার কপাল (ভাগ্য) আল্লাহর ইখতিয়ারে ।

Why so serious? নাকি "Why aren't we serious??"



মুভি দেখার অভ্যাস আগেও ছিল না, এখন তো বটেই। কাজেই ব্যাটম্যান ছবিটাও দেখা হয় নি। তবে ব্যাটম্যানের ভিলেন জোকারের ডায়লগটা বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ খবর পৌঁছেছে। এতটাই যে মানুষের প্রোফাইলে ফেভারিট কোটেশনে লেখা দেখি "Why so serious?"

আমি জানিনা জোকার কোন প্রসঙ্গে কথাটা বলেছিল। কিন্তু আমাদের জীবনদর্শন আজ যেন এই একটা বাক্যে প্রকাশ পাচ্ছে। সিরিয়াস হতে হবে কেন?? আরে খাচ্ছ, ঘুমাচ্ছ, ফূর্তি করছ, এটাই তো লাইফ! এনজয় ইট!! একবার মরে গেলে তো আর লাইফটাকে ফেরত পাওয়া যাবে না। কাজেই উপভোগ কর, উপভোগ।

আল্লাহু আকবার। জীবনটা সিরিয়াসনেসের জিনিস রে ভাই, সিরিয়াসনেসের জিনিস। আজকে মৃত্যুকে ভুলে রাখতে কত আয়োজন চোখের সামনে। পারছে কেউ মৃত্যুকে ঠেকাতে?? পারছে না। যে মানুষগুলো কবরে শুয়ে আছে তাদের অনেকেই আজ হয়তো কেবল বলছে কেন মৃত্যু নিয়ে সিরিয়াস হইনি সময় থাকতে। কেন সময়কে হেলায় পার করেছি। অথচ কত মূল্য ছিল এই লাইফটাইমের!!

যারা বেঁচে আছি তাদের কানে সেই আর্তনাদ পৌঁছায় না। মৃত্যুকে ভুলে থাকাই শুধু না, মৃত্যু যেন উপভোগের জিনিস, তাকেও এনজয় করতে হয়! সাহিত্যে মৃত্যু এক ভাবের জিনিস, কাব্যের জিনিস। চান্নি পসর রাতে মরণের স্বপ্ন ব্যক্ত করেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক। আবার কেউ জোছনা রাতে ফুলের বিছানায় শুয়ে মরণের আশা করেন। কত মধুর হবে যেন এই মৃত্যু!! আহা!! কফিনে শুয়ে কবিতা লিখতে লিখতে মৃত্যু!! দিগন্তবিস্তৃত প্রকৃতির শোভা দেখে মরণ!! কত ভাষা, কত কাব্য!! মরণকে "আলিঙ্গন", 'মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া,' কত আবেগ, কত সাহিত্য!!

সুবহান আল্লাহ্‌। এই মৃত্যুর কথা স্মরণে আসলে আল্লাহ্‌র নবীর সাহাবারা কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে পড়তেন। কবর দেখলে উসমান (রা) কাঁদতে কাঁদতে দাড়ি ভিজিয়ে ফেলতেন। সালাতে দাঁড়ানোর আগে আলী (রা) মুখ ভয়ে সাদা হয়ে যেত। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে বলতেন-'আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আল্লাহ্‌র দরবারে আসামী হতে যাচ্ছি।'

এটাই ছিল তাদের সিরিয়াসনেস। আল্লাহ্‌ বলেছেন ইয়াওমুল কিয়ামাহ এ অপরাধীরা তাদের স্ত্রী-সন্তান সবাইকে জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ডে ছুড়ে ফেলে দিয়ে হলেও নিজে আজাব থেকে বাঁচতে চাইবে। আল্লাহু আকবার। ভাবতে পারেন?? যে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানকে প্রাণাধিক ভালোবাসা দেওয়া যায় মরণের আগে, সেইদিন তাদেরকে মুক্তিপণ দিয়ে হলেও বাঁচতে চাইব আমি-আপনি। সেইদিনের কথা স্মরণ করেও কেউ কি বলতে পারে, Why so serious??

আল্লাহ্‌ সূরা ক্বামারে বলেছেন বিচারদিবস সন্নিকটে। সূরা আম্বিয়ায় বলেছেন মানুষের হিসাবকিতাবের সময় নিকটবর্তী অথচ সে বেখবর হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। এই যে সিরিয়াস হতে চাই না আমরা, এটাই কি বেখবরের লক্ষণ নয়?? যে সালাফরা দুনিয়ায় থাকতে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন, তাঁদের ভীতি যদি এই পর্যায়ের হয়, তবে আমার-আপনার অবস্থানটা কোথায়?? কোন মোহে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি??

প্রশ্নটা হওয়া উচিত-"Why aren't we serious??"

Collected From
Brother
Jubaer Hossain

সিংহসম কিশোর প্রাণের অপেক্ষায়...

ক.
কিশোর বয়সটা অদ্ভুত। কোনরকম দায়িত্ব থাকেনা, পরীক্ষার রেজাল্ট কার্ডে ৭০-৮০ এর ঘরের নাম্বার ছাড়া আর কোন জাগতিক চাপও থাকেনা। মুক্ত, বাধাহীন, ছিমছাম একটা জীবন। বাবা-মা এর আদর, বড় ভাই বোনের স্নেহ সব মিলে গড়পড়তা বাদশাহী হালের চলাফেরা।
আর জীবনের সবচাইতে ভয়ঙ্কর সময়টাও হল এই স্তরটায়। কিশোর মনের আবেগ, অদূরদর্শী চিন্তাভাবনা আর নৈতিকতা জ্ঞানের স্বল্পতা মুহূর্তেই ফেলে দিতে পারে বিপদে। ভয়ানক বিপদে।
অথচ এই বয়সটা পার করে ঠিক ঠিক ৫-৬ বছর পর পালটে যায় গোটা জীবন। পৃথিবী নামক জায়গাটা কতটা পিচ্ছিল রাস্তার আর পঙ্কিল পথের সজ্জায় সজ্জিত, তা তখনই টের পাওয়া যায়। দায়িত্ব, কর্তব্য আর রূঢ় বাস্তবতার সম্মুখে যখন একজন যুবক এসে দাঁড়ায়, কৈশোরের হঠকারীতা আর নির্বুদ্ধিতায় নিজেই অবাক হয়ে পড়ে।
চারপাশে অনেক কিশোরদের দেখি, ভয়ানক বিপদে পতিত অবস্থায়। কখনো আবেগে, কখনো সঙ্গদোষে, কখনো বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য ও জাগতিক জীবনের কাঠিন্য সম্পর্কে ওয়াকিফহাল না থেকে, এইভাবেই নিজেদের জীবনকে গভীর থেকে গভীরতর চোরাবালিতে তলিয়ে ফেলছে।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এদের কাছে বসিয়ে কাঁধে হাত দিয়ে বোঝাই জীবনটা যেমন দেখছে, তেমন মোটেই নয়। সামনে আসছে অকল্পনীয় আর অসহনীয় বাস্তবতা। যার মোকাবেলা করতে খেতে হয় হিমশিম। ছোট্ট কাঁধে হঠাৎ যখন দায়িত্ব এসে পড়বে, তখন ফিকে হয়ে যাবে এই রঙ বেরঙের জীবনটা।
পারি না। হয়তো আমার কথা তারা পাত্তাও দেবেনা। ঐটুকুন বয়সেই বাপের পয়সা বাতাসে উড়িয়ে ফুর্তি করে বেড়ালে কিংবা খেলার সাথীর মত পিচ্চি পাচ্চা ছেলে-মেয়ে হঠাৎ-ই বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড হয়ে গেলে, কিংবা নেশা আর অহেতুক আড্ডাবাজি ছোট্ট ঐ জীবনটার নিয়ন্ত্রক হয়ে গেলে, এমন কথা পাত্তা না দেয়ারই কথা।
খ.
বদরের ময়দানে আব্দুর রাহমান ইবন আউফ (রা) এর পাশে দুজন কিশোর এসে দাঁড়ায় আর জিজ্ঞেস করে, “চাচা! আবু জাহিল কে? তাকে দেখিয়ে দিন”। তিনি জিজ্ঞেস করলেন তা জেনে তারা কি করবে। তারা বলল, “শুনেছি সে আমাদের নবী (সা) কে গালি দেয়। সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, আমরা তাকে দেখতে পেলে ততক্ষণ পর্যন্ত তার কাছে থেকে আলাদা হব না, যতক্ষন পর্যন্ত তার এবং আমাদের মৃত্যু যার আগে লেখা আছে, তার মৃত্যু না হয়।”
বলা বাহুল্য তাদের নগ্ন তরবারীতেই থেমে যায় আবু জাহিলের প্রাণস্পন্দন। যুদ্ধ শেষেও তরবারীদ্বয়ে রক্ত লেগে ছিল।
গ.
ছন্নছাড়া, বোহেমিয়ান আর বাউন্ডুলে কৈশোর ছেড়ে, বাস্তবতার সামনে পাহাড়সম অটল, দায়িত্বজ্ঞানে আর জীবনের উদ্দ্যেশ্য অনুধাবনে সিংহসম কিশোর প্রাণের অপেক্ষায়...

.Let's gain the trust

অভিজ্ঞতা বলে যে যখন আমরা মানুষের ব্যাপারে কৌতূহলী হওয়া ছেড়ে দেই, তখন মানুষ আমাদের বিশ্বাস করতে শেখে।
কৌতূহলী হওয়া মানে খুঁটিনাটি জানতে চাওয়া। "কেমন আছ?" অথবা "বাচ্চারা কেমন আছে" এধরণের প্রশ্ন তো খুব স্বাভাবিক। কিন্তু নিজে থেকে এগিয়ে এসে জানতে চাওয়া যে কারুর স্বামীর সাথে সম্পর্ক কেমন বা শ্বশুরবাড়ির সাথে, কার সন্তান কোন পথে চলে গেল, কার বেতন কত-- এসব ডিটেলস নিয়ে খুঁচানো কিন্তু অযথা কৌতূহল। কেউ যদি মন থেকে এই কৌতূহলী হওয়ার প্রবণতা পরিহার করে, সেটা তার আচরণে স্পষ্ট ফুটে উঠবেই উঠবে! সে আগ বাড়িয়ে সব জানতে চাইবে না, খুঁজে খুঁজে ভিতরের খবর বুঝতে চাইবে না। আর যখন মানুষ একজনের এই স্বভাব টের পাবে, তারা এও টের পাবে যে এই স্বভাবের কারণেরই এই মানুষটা অন্য দশজনের কাছ থেকেও তথ্য যোগাড়ে অনাগ্রহী হবে। আর একই ভাবে অন্য দশজনকে তথ্য দিয়ে বেড়াতেও অনাগ্রহী হবে কারণ বাকিরা এই নিয়ে জানতে চায় কিনা এই মানুষটা সেটা জানার ব্যাপারেও আগ্রহী না!!
ইসলাম কোনদিন এমন কিছু শেখাবে না আমাদের যা শেখার পর আমরা আগের চেয়ে খারাপ হয়ে যাবো অথবা অগ্রহণযোগ্য হয়ে যাবো! সত্যিই ঠিকমত ইসলামের আলোকে নিজেদের সংশোধন করে নিতে পারলে আমরাই হবো উত্তম আদর্শ!
আচ্ছা, এই কৌতূহলী না হওয়ার সাথে ইসলামকে টেনে আনলাম কেন?
ইমাম আন নববীর ৪০টি হাদিসের একটি হাদিস হলঃ
“এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কাজ বলুন যা করলে আল্লাহ্ আমাকে ভালবাসেন, লোকেরাও আমাকে ভালবাসে।
তখন তিনি বললেন: দুনিয়ার প্রতি অনুরাগী হবে না, তাহলে আল্লাহ্ তোমাকে ভালবাসবেন; আর মানুষের কাছে যা আছে তার ব্যাপারে আগ্রহী হবে না, তাহলে মানুষও তোমাকে ভালবাসবে।”[ইবনে মাজাহ্: ৪১০২]
এখন বলি, এই দুনিয়ার সমস্ত angle এ সফল একদল মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছিল, যারা একে অপরকে বিশ্বাস করেন না!! কারণ প্রত্যেকে আড়ালে প্রত্যেকের নামে কথা বলেন... একে অন্যের গোপন কথা বা দুর্বলতা তুলে ধরেন সবার সামনে, আবার এদিকে সামনা সামনি একে অন্যের প্রতি মমতা, কৌতূহল, সমবেদনার শেষ নেই।
আমরা অনেকেই এমন। কিন্তু আসল সাফল্য কোথায়???
"মানুষের কাছে যা আছে তার ব্যাপারে আগ্রহী হবে না, তাহলে মানুষও তোমাকে ভালবাসবে।"
ভালবাসা খুঁজতে হবে না, একজনের কাছে ভালো হওয়ার জন্য আরেকজনের বদনাম করতে হবে না, কেবল অযথা আগ্রহ পরিহার করতে হবে। ভালবাসার ব্যবস্থা ভালবাসার স্রষ্টাই করে দিবেন, ইনশাআল্লাহ!
সুবহানআল্লাহ!
লেখা - Nayla Nuzhat

এতগুলো "কেন"র একটাই উত্তর।

ইসলামের কথা আসলেই অনেকে কমন কিছু আক্রমণাত্মক প্রশ্ন তুলে আনেন। কতটা কষ্টদায়ক প্রশ্ন কেউ করতে পারে সে আমি জানি। আমি দুবছর একটি মিশনারি স্কুলে পড়েছি। যেসব প্রশ্ন মানুষের মুখে শুনেছি তা কোনদিন কাউকে বলার রুচি হয়নি। ছোট ছিলাম, তখন পরিবারের মানুষেরা কেবল ইসলাম বুঝতে শুরু করেছেন, আমি নিজে তেমন কিছুই বুঝি না। উত্তর হাতড়ে বেড়াতাম নিজের মনে। আর হীনমন্যতায় তো ভুগতামই।

বড় হতে হতে বুঝলাম, যারা প্রশ্নগুলো করছে, তারা উত্তর জানতে চায় না। তারা চায় আমাদের কাছে উত্তর না থাকুক। উত্তর কিন্তু প্রতিটা প্রশ্নের আছে। আমার কাছে না থাকলেও সুযোগ্য জ্ঞানী মানুষের কাছে আছে। সত্যিই যদি কেউ জানতে চায়, সে জানার জায়গা ঠিক খুঁজে নিবে! আজকাল জানতে চাইলে জেনে নেয়াটা কোনও ব্যাপারই না!

তবে একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই। বড় হতে হতে এও বুঝেছি-- একজন মুসলিম হওয়া মানে এই না যে প্রতিটা জিনিসের আড়ালের "wisdom" যাচাই বাছাই করে তবে আমি কোনোকিছু মানবো! It is the other way round! যদি মানি যে আল্লাহ আছেন, তিনি এক, অদ্বিতীয়, একমাত্র উপাসনার অধিকারী-- তাহলে তিনি যা যা করতে বলেছেন, তা চোখ বুজে মানবো! এর আড়ালের কারণ জানার ইচ্ছা কারুর থাকতেই পারে কিন্তু কারণ জানাটা তাঁর হুকুম মেনে নেয়ার কোনও শর্ত হতে পারে না! যখন তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছি, পুরোপুরিভাবেই করেছি। একথা মেনে নিয়েই করেছি যে তিনি যা জানেন, আমরা তা জানিনা! তিনি যা কিছু করতে বলছেন অথবা করতে নিষেধ করছেন, তার আড়ালে তাঁর অবশ্যই কোনও wisdom আছে যা আমাদের অতি সামান্য বুদ্ধিতে ধরা পড়ছে না!

তাই, যারা জেনে বুঝে মুসলিম হয়েছে, তাদেরকে এসব প্রশ্ন করে কোনঠাসা করে দেয়ার বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই। আপনার জন্য অনেকগুলো প্রশ্নের অনেকগুলো উত্তর প্রয়োজন-- এবং প্রতিটা উত্তর আছেও-- যদি সত্যিই জানতে চান। কিন্তু মুসলিমদের জন্য আপনার এতগুলো "কেন"র একটাই উত্তর আর সেটাই তাদের জন্য যথেষ্টঃ "আল্লাহ এভাবেই চান, তাই!!

শিশুর সদাচার ও পরিচ্ছন্ন শিষ্টাচার শিক্ষাঃ কুরআনের ভুমিকা

কিছুদিন আগে একটি পরিবারের সাথে পরিচিত হলাম, যেখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনই আগে ক্যাথলিক ছিল কিন্তু বর্তমানে মুসলিম। তাদের তিনটি সন্তানকে তারা এতো সুন্দর শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে আমি দেখে অভিভূত হয়ে গেলাম। কথায় কথায় একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস শিখলাম। তাদের বাসায় প্রতি সপ্তাহের কোন একটা দিন (mainly weekend) পারিবারিক সভা হয়। এখানে সবাই তাদের নিজেদের বিভিন্ন রকমের সমস্যা, দুঃখ, অভিযোগ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। এই সভায় সবাই পরিবারের যে কোন সদস্যের সম্পর্কে  মুক্ত সমালোচনা করতে পারবে। কিভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারবে সেটা নিয়েও আলোচনার সুযোগ থাকে। তবে এই সভায় একেবারেই যে আচরণগুলো করা নিষেধ সেগুলো হলোঃ  উত্তেজিত হওয়া, রাগ করা, খারাপ ভাষা (গালি-গালাজ) ব্যবহার করা এবং উচ্চস্বরে কথা বলা। এই পরিবারের বাবা-মা দুজনই একটিভ দা’ঈ এবং তিনটি বাচ্চাকেই সচেতনভাবেই দা’ঈ হিসাবে তৈরি করছেন।একটা প্রসঙ্গে মা তার মেয়েকে বলছিল, ‘বেহেশতে যাবার চারটি ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে শেষ দুটি হল মানুষকে হকের পথে ডাকা এবং সবরের পরামর্শ দেয়া [সুরা আসর দ্রষ্টব্য]। এই কাজ কি সহজ বলে তুমি মনে করো? কারো কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে তুমি যদি তোমার টেম্পার লুজ কর, তাহলে তো তুমি কথা শুরু করার আগেই হেরে যাবে। নিজেই যদি সবর রাখতে না পারো তাহলে অন্যকে হকের দাওয়াত এবং সবরের পরামর্শ কিভাবে দিবে?’ মজার ব্যপার হচ্ছে, এই বাচ্চারা এই শিষ্টাচারগুলোতে এতটাই অভ্যস্থ হয়েছে যে, তাদের বন্ধু-বান্ধবের (বেশিরভাগই অমুসলিম) ভেতরেও নাকি এই অভ্যাস চালু করেছে; তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ জোরে কথা বললেই তারা নাকি সমস্বরে বলে ওঠে, “সব আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে গাধার আওয়াজ”!

হাজার বছর আগে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন একজন বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী ব্যক্তি, লুকমান। তাঁর সম্পর্কে আল্লাহতালা কুরআনে বলেছেন, “আমি লুকমানকে দান করেছিলাম সূক্ষ্মজ্ঞান। যাতে সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়।”  অর্থাৎ উনার জ্ঞান ও অন্তরদৃষ্টি তাঁর নিজস্ব কোন অর্জন নয়, বরং সম্পূর্ণই আল্লাহ‌ প্রদত্ত। তাই আল্লাহ্‌ যে ব্যক্তিকে জ্ঞান দান করলো, সে যেন তা নিজস্ব অর্জন মনে করে অহংকার না করে, বরং আল্লাহর প্রতি বিনীত ও কৃতজ্ঞ হয়। সত্যিকারের জ্ঞানী ব্যাক্তির একটি চমৎকার চারিত্রিক গুণ এখানে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি (লুকমান) তাঁর ছেলেকে এমন কিছু কালজয়ী পরামর্শ দিয়েছিলেন যা  কুরআনের আয়াতরূপে সুরা লুকমানে বর্ণিত হয়েছে। পরামর্শ শুরুই হয়েছে তাওহীদের শিক্ষা দিয়ে [“হে বৎস, আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়”।]।
এবং ধীরে ধীরে বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের ব্যবহার, আদব-কায়দা, সুন্দর আচরণ, সামাজিক শিষ্টাচার --- সদাচার ও শিষ্টাচারের একটি সুবিশাল গাইডলাইন তিনি দিয়েছেন। আমার মতে, প্রত্যেক দায়িত্ববান বাবার সুরা লুকমানের ১৩-১৯ আয়াতসমুহ তাফসীরসহ বুঝে পড়া দরকার এবং কিছুদিন পর পর তাঁর ছেলেমেয়েদেরকে এই পরামর্শগুলো দেয়া একান্ত প্রয়োজন।


আমার মেয়ের একটি মরোক্কান ফ্রেন্ডের বাসায় গত ঈদের পরে বেড়াতে গিয়ে চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তারা এই দেশে তিন জেনারেশন ধরে বসবাস করছে। দাদা-দাদী, নানা-নানী নিয়ে বিশাল ফ্যামিলি। প্লেগ্রুপ থেকে এই ছেলেটি আমার মেয়ের সাথে পড়ে। টিন এজার এই ছেলেটিকে দেখলাম মা আর বড় বোনদের সাথে সালাদ কাটছে, প্লেট-গ্লাস ধুচ্ছে, দাদাকে খাইয়ে দিচ্ছে! আমরা বসেছিলাম তাদের বাবা-মায়ের বেডরুমে। বেডরুমের দরজা খোলা থাকা সত্ত্বেও ছেলেটি যতবার খাবার সারভ করতে বেডরুমে আসছে, ততবারই তার ছোটবোনকে দিয়ে দরজায় নক করিয়ে (তার নিজের হাতে খাবারের ট্রে থাকায়) ঘরে প্রবেশ করার অনুমুতি চাইছে! আমি এক সময় বলেই বসলাম, তুমি আসো, প্রতিবার তোমাকে পারমিশন নিতে হবে না। সে অতি বিনয়ের সাথে মাটির দিকে তাকিয়ে বলল,  “No madam, I shouldn't”! ওদের মা আমাকে বলল যে আসলে একদম ছোটবেলা থেকেই তাদেরকে তাদের বাবা-মা কুরআনে উল্লেখিত এই শিষ্টাচারটি শিখিয়েছে। কোন একটি বইয়ে পড়েছিলাম যে, ওমর বিন আল খাত্তাব তাঁর শাসনামলে সব মহিলাদেরকে সুরা নুর পড়ার পরামর্শ দিতেন। এই সুরার ৫৮ এবং ৫৯ আয়াতে বাচ্চাদের শেখানোর জন্য দুটি অসাধারণ শিষ্টাচার উল্লেখ করা হয়েছে। বাচ্চা যদি সাবালক নাও হয় তবুও কারো বেডরুমে প্রবেশের আগে তিনটি সময় (ফজরের নামাযের আগে, দুপুরে এবং এশার নামাযের পর) অনুমুতি নিতে হবে এবং সাবালক হলে তো কোন কথাই নাই, অর্থাৎ সবসময়ই অনুমুতি নিতে হবে এবং অনুমুতি ছাড়া অন্যের বেডরুমে প্রবেশ করা যাবে না। আমি সত্যিই অভিভূত হয়ে গেলাম। কারন, আমি খুব কম মুসলিম পরিবারেই এই অতি প্রয়োজনীয় আচরণটির প্রকট অভাব লক্ষ্য করেছি এবং যারপরনাই বিব্রত হয়েছি। এই পরিবারে ছোটবেলা থেকে বাচ্চাদেরকে এই ধর্মীয় অনুশাসনটি শেখানোর কারনেই ছেলেটি তার এতদিনের শেখা শিষ্টাচার বহির্ভূত কোন কাজ করতে পারেনি। সুবাহান’আল্লাহ!

সুরা বাকারাতে বর্ণনা করা হয়েছে ইব্রাহিম (আঃ) এবং ইয়াকুব (আঃ) এর ঠিক মৃত্যুর আগের কিছু কথা। কুরআনের ভাষায়, “এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, ‘হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না’। তোমরা কি উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের মৃত্যু নিকটবর্তী হয়? যখন সে সন্তানদের বললঃ ‘আমার পর তোমরা কার এবাদত করবে’? তারা বললো, ‘আমরা তোমার পিতৃ-পুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্যের এবাদত করব। তিনি একক উপাস্য’।[১৩২-১৩৩]

খেয়াল করে দেখুন, ইব্রাহিম (আঃ) এর দুই সন্তানই ছিলেন প্রফেট [ইসমাইল (আঃ) এবং ইসহাক (আঃ)]।এবং ইয়াকুব (আঃ) এর ক্ষেত্রেও একই অর্থাৎ উনারও সন্তান ছিলেন প্রফেট [ইউসুফ (আঃ)] আমাদের সাধারন বুদ্ধিতে কি বলে? ছেলে প্রফেট জানার পরও কি তাকে তাওহীদের শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজন আছে? অথচ, তাঁরা তাদের মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তেও ছেলেদেরকে তাওহীদের উপর অটল থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। কারন তাঁরা জানতেন, আখেরাতের জীবনই আসল জীবন এবং একমাত্র তাওহীদের পথই হচ্ছে সফলকামদের একমাত্র পথ। সন্তান যতই বড় হোক আর যতই ভালো হোক, খেয়াল রাখতে হবে সে যেন পথভ্রষ্ট না হয়। যদি সে পথভ্রষ্ট হয় তাহলে তাকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি মারা যান বা সে মারা যায়। যেমনটা হয়েছিল নুহ (আঃ) এর ক্ষেত্রে। ৯৫০ বছর বয়সেও তিনি নিজের ছেলেকে আসন্ন ধংসের মুখ থেকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন!


একটি মুসলিম পরিবারের মুল ভিত্তিই হচ্ছে তাওহীদ তাই শুধু মাত্র বাচ্চাদেরকে  শুদ্ধ তাজউইদ দিয়ে কুরআন মুখস্ত করালেই চলবে না; বরং কুরআনের অন্তর্নিহিত শিক্ষাকে হৃদয়ঙ্গম করে তা প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহার করতে হাতে কলমে শিক্ষা দিতে হবে। এবং বাচ্চাদের জন্য সবচেয়ে সফল শিক্ষা পদ্ধতি হচ্ছে বাবা-মাকে দেখে শেখা। বাবা-মায়ের দৃঢ় ঈমান ও সদাচারণ তাদের সন্তানদেরকে ঈমানদার ও আদর্শ মুসলিম হিসাবে সমাজে আত্মপ্রকাশ করতে সাহায্য করবে।  শুধুমাত্র বাবা-মায়ের অবহেলার কারনে আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি প্র্যাক্তিসিং অথবা অর্ধ প্র্যাক্তিসিং মুসলিম পরিবারে নাস্তিক সন্তান তৈরি হচ্ছে। প্রত্যেক মুসলমানই একেকজন দা’ঈ যার কাজ হল মানুষকে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের নির্দেশিত পথের দিকে আহ্বান করা। আর তাই প্রথমেই আল্লাহ্‌র নির্দেশিত পথের দিকে আহ্বান করতে হবে নিজের সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজনকে যারা সবচেয়ে কাছের মানুষ। পাশাপাশি তাদেরকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে হবে যাতে শিষ্টাচার বহির্ভূত কোন কাজ তাদেরকে দিয়ে না হয়। রাসূল সা: বলেছেন, “তোমরা তোমাদের সন্তানদের মহৎ করে গড়ে তোলো এবং তাদের উত্তম আদব তথা শিষ্টাচার শিক্ষা দাও” [মুসলিম]। অপর হাদিসে রাসূল সা: বলেন, “সন্তানকে আদব তথা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া সম্পদ দান করা অপেক্ষা উত্তম”। [বায়হাকি]। পরিবার, সমাজের বা রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রতম একক। ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম আর এই শিক্ষার প্রথম স্তর হলো পরিবার।  সমাজ বা রাষ্ট্রীয় জীবনে সঠিক ভূমিকা পালনের মৌলিক শিক্ষা লাভ করা হয় পারিবারিক পরিবেশে।  শৈশবেই শিশুকে আদব ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া আবশ্যক, যেন শিশু প্রশংসনীয় ও সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হয়ে গড়ে উঠতে পারে। মানুষ ও সমাজের জন্য সে হবে অনুকরণীয়, তার চারিত্রিক গুণাবলির মাধ্যমে সত্যের আলো ছড়াবে সমাজে ও মানুষের হৃদয়ে। একইসাথে অন্ধকার সমাজের দিকভ্রান্ত মানুষকে দেখাবে সত্যের পথ, মুক্তির পথ।

বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্যে দুআ করুন।

আজ সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার উদ্দেশে একটি অটোরিক্সায় উঠলাম। যেহেতু গাড়ীটি সম্পূর্ণ ভর্তি ছিলো তাই আমাকে ড্রাইভারের ডানপাশে বসতে হলো। ড্রাইভার হলেন দাড়িবিশিষ্ট একজন পৌঢ়। তিনি বললেন,

“আজ থেকে কয়েকবছর পূর্বে আমাদের দেশের মসজিদের ইমাম সাহেবরা নামাযের পর বলতেন, আফগানিস্তানের মুসলমানদের জন্যে দুআ করবেন! আমার মনে হয়, কয়েক বছরেরই মধ্যে আফগানিস্তানের মসজিদে মসজিদে বলা হবে বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্যে দুআ করুন !!!!”

কথাগুলো শুনে আমি তেমন বিচলিত হই নি। কারণ আস্তে আস্তে দেশ সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মার্কিন ফরেন পলিসির মধ্যে আফগানিস্তানকে আউট করা হয়েছে এবং বাংলাদেশকে ইন করা হয়েছে। তাই অটোচালকের ধারণা অমূলক মনে হয় নি।

যেদিন বাংলাদেশের সর্বস্তরের মুসলমানদের অন্তরে এই চালকের মতো অনুভূতি হবে সেদিন থেকেই ইনশা-আল্লাহ গাযওয়ায়ে হিন্দের সূচনা হবে আশা করা যায় … !!

Collected From
Brother
Haneen Eldarom