কম খান ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।

সাধারণ ভাবে একজন পড়াশোনা না জানা অর্থবিত্তহীন লোকের কাছে যদি আপনি খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ চান, সে আপনাকে পেট পুরে খাবার পরামর্শ দিবে। কারণ জীবনে অধিকাংশ সময়ই পেট পুরে খেতে পারেনি। সে মনে করবে বেশী খেলে শরীর ভাল থাকবে এবং শরীরে শক্তি পাওয়া যাবে।

কিন্তু দুনিয়াবী পড়াশোনা না থাকা সত্ত্বেও এবং লাক্সারীতে বড় না হওয়া সত্ত্বেও রসূলুল্লাহ (স) আমাদের কম খাবার পরামর্শ দিয়ে গেলেন। তিন ভাগের এক ভাগের বেশী খেতে মানা করলেন, পেটে ক্ষুধা থাকতেই উঠে যেতে বললেন, এবং অধিক পরিমানে পেট পুরে খাওয়াকে কাফিরদের খাওয়া বলেও উল্লেখ করলেন।

ছোটকালে যখন এই খাওয়ার সুন্নাত যখন পড়তাম বা শুনতাম ,তখন অবাক হতাম। তখন ভাবতাম এত কম খেলে শরীরে পুষ্টির অভাব হবেনা ? ক্যালরির অভাব হবে না? মিলেনা তো?

আজকে ১০-১২ বছর পর এই হাদীসগুলো আমার কাছে জাজ্বল্যমান। রসূল(স) সত্যিই বলেছিলেন। আসলে পূর্ণবয়স্ক মানুষের এত খাওয়ার দরকার নেই। খুব অল্প পরিমাণ খাওয়াই যথেষ্ঠ। দিনে মাত্র ২০০০ ক্যালরী হলেই হয়। মাত্র এক কাপ ভাতে যেখানে মাত্র ২০০ ক্যালরী। এক চামচ চিনিতে ৫০ ক্যালরী। [ অতি অল্প পরিমান খাদ্যেই অনেক ক্যালরি সঞ্চিত থাকে]

ইনফ্যাক্ট , পার্টিতে গেলে তো আমরা এক বসাতেই ২০০০ এর বেশী ক্যালরী খেয়ে ফেলি। এজন্যই আমরা এত মোটা হই। পুরো দুনিয়াতে , স্পেশালি ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলোতে ওবেসিটি একটা বড় সমস্যা। আর আমেরিকায় সর্বাধিক যে কারণে মানুষ মারা যায় , তা হল হার্ট এটাক, যার উৎপত্তি বেশী ফ্যাট খাওয়া থেকে।

বাংলাদেশেও এখন শুরু হয়েছে। আজ অমুক, কাল তমুক হার্ট এটাকের স্বীকার হচ্ছেন। এবং ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষই এখন হয়তো মোটা। একটু অবস্থাপন্ন পরিবারে গেলেই দেখবেন, মানুষগুলো মোটা মোটা হয়ে গেছে। কারও হার্ট এ প্রবলেম, কারো কিডনীতে। মূল কারণই বেশী খাওয়া।

এখানে একটা ব্যাপার উল্লেখযোগ্য, জাতি যেটাকে স্বাভাবিক খাওয়া ভাবছেন, আমি কিন্তু সেটাকেই বেশী খাওয়া বলছি। কারণ আসলেও ওটা বেশী খাওয়া। ওরকম খেয়েই তো আপনি মোটা হচ্ছেন।

তাই সুন্নত তরীকায় খান, পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাওয়া , এক ভাগ পানি, আর এক ভাগ ফাকা রাখুন -- এভাবে খান। পেটে ক্ষুধা থাকতে থাকতেই উঠে যান। পেট ভরে খাওয়ার কোন দরকার নাই। মু'মিন এক পেটে খায়, আর কাফির সাত পেটে খায়, মনে রাখবেন।

মাংস বেশী খেলে ইউরিক এসিড বেড়ে যাবে শরীরে। তার থেকে শরীরের প্রতিটা জয়েন্টে বাতের ব্যাথা হবে। পুরো শরীর জুড়ে শুধু রোগ আর রোগ হবে। সারাদিন ডাক্তারের পিছনে দৌড়াতে হবে। তারপর ডাক্তার আপনাকে পরামর্শ দিবে, অমুক ডায়েট , তমুক ডায়েট ফলো করেন। ডায়েট ফলো করতে গিয়ে দেখবেন, আসলে ডাক্তার আপনাকে সুন্নাহ মোতাবেক খেতে বলেছেন, বুঝেছেন?

এই সব ডায়েট টায়েট ভেজাল, অনেক হিসাব করা লাগে। সব হিসাব বাদ দিন। রসূল(স) সহজ করে দিয়েছেন। তিন ভাগের এক ভাগ খাবেন, ব্যস , ঝামেল শেষ। গরু খাবেন ঠিক আছে, ৩-৪ টুকরা খেলেই তো হয়, এক কেজি একবারে খাওয়ার দরকার কি?
কম খান ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। সুন্নাহ্ মেনে চলুন...
একবার এক ভুড়িঅলাকে দেখে উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) বললেন, (ভুড়িকে উদ্দেশ্য করে) এটা কি?
ভুড়িঅলা বললো, এটা আল্লাহর রহমত।
উমার(রা) বললো, এটা আল্লাহর রহমত না, এটা আল্লাহর আযাব....

_
লেখা - M. Rezaul Karim Bhuyan
>> কালেক্টেড পোস্ট << - SALAT