যে অন্তরে রবের ইবাদাত বোঝাস্বরূপ সেই অভিশপ্ত অন্তর থেকে আল্লাহ যেন আমাদেরকে হেফাজত করেন।

একসময় নিয়মিত উত্তরার দিকে যাওয়া হতো। ঢাকা শহরের জ্যামের যে অবস্থা, সে হিসেবে আমার ভার্সিটি থেকে যেতে বেশ দূরের পথ। মাঝে মাঝে তো তিন চার ঘন্টাও লেগে যেতো। কিন্তু নিয়মিত যেতাম বলেই হয়তো এই দীর্ঘ পথটাও একসময় আমার কাছে ছোট মনে হতো। লোকাল বাস, গরম, জ্যাম, দীর্ঘ পথ এসবকিছু একেবারেই সহজ স্বাভাবিক মনে হতো। প্রায় দেড়-দুবছর ধরে আর ঐদিকে যাওয়া হয় না। এখন যদি কোন কারণে উত্তরার দিকে যেতে হয় রীতিমত মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অনুভূতি তৈরি হয়। উত্তরা, এতদূউউউর...
.
কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্কটাও অনেকটা এরকম। 
যদি নিয়মিত কুরআন পড়েন দেখবেন গড়গড় করে পড়তে পারছেন। কিন্তু অনেক দিন মাচাঙের উপর তুলে রেখে হঠাৎ একদিন পড়া শুরু করলে দেখবেন আটকে যাচ্ছেন, আমতা আমতা করছেন। কুরআন খুব অভিমানী, যদি আপনি তাকে দূরে সরিয়ে দেন, সেও আপনাকে দূরে সরিয়ে দেবে। সেই দূরত্ব এমন যে, কুরআন পড়াটা আপনার কাছে পাহাড় সমান বোঝার মত মনে হবে।
.
সালাতে দাঁড়িয়ে চার পাচ মিনিটের কিরাতটাও রীতিমত বুকের উপর বিশাল বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার মত মনে হবে কখনো কখনো, অস্থির হয়ে উঠবেন কখন ইমাম সাহেব রুকুতে যাবে, কখন সালাম ফেরাবে। মসজিদ থেকে বের হতে পারলেই যেন বাঁচি, এই অবস্থা। মহান রবের ইবাদত যে অন্তরে বিশাল বোঝাস্বরূপ চিন্তা করতে পারেন সে অন্তরের কি হালত! কত দুরত্ব সেই অন্তরের সাথে তার রবের, কুরআনের, দ্বীনের!
.
আর এই দুরত্ব তৈরি হওয়া, রবের ইবাদতকে বোঝা মনে হওয়ার আরেকটি মূল কারণ গুনাহে লিপ্ত হওয়া। এই গুনাহের সবচেয়ে দুরত্বটা তৈরি হয় ফজরের সালাতের সাথে। পাপাচারী ফজরের সালাতে উপস্থিত হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়, রাতে কিয়ামে দাঁড়ানো থেকে বঞ্চিত হয়।
.
তাই রবের সাথে, দ্বীনের সাথে, কুরআনের সাথে দুরুত্ব কমানো ছাড়া আমাদের কোন মুক্তি নেই। ইবাদতকে ইহসান পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোন নিরাপত্তা নেই। আর সেটা হবে ইবাদাতের ধারাবাহিকতার মাধ্যমে। রাসূল সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো যার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়" ।
.
আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরগুলোকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে না দেন। পাপাচার আর জুলুমে ভরপুর এই অন্তরগুলোকে মহান রব যেন নাফসে মুতমাইন্নায় উত্তীর্ণ করে দেন। সালাতের কিরাত, রুকু, সিজদা প্রতিটি ইবাদাত যেন আমাদের কাছে মধুর চেয়েও মিষ্টি মনে হয়, আমাদের হৃদয় যেন মসজিদগুলোর সাথে লেগে থাকে।


 যে অন্তরে রবের ইবাদাত বোঝাস্বরূপ সেই অভিশপ্ত অন্তর থেকে আল্লাহ যেন আমাদেরকে হেফাজত করেন। আমীন।

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

মানুষ না বুঝে প্রতিদিন মন্ত্রের মত পড়তে থাকে

আমাদের সমাজে কিছু আমল এর প্রচলন আছে।
 এই পড়লে এতো নেকি, এটা এতবার পড়লে এত সওয়াব।
 এই দোয়া ও আয়াত এই সময়ে পড়তে হবে। ইত্যাদি

এগুলো মানুষ না বুঝে প্রতিদিন মন্ত্রের মত পড়তে থাকে।
 আমার প্রশ্ন হলো সাহাবীরা কি না বুঝে এগুলো এভাবে পড়তেন? তারা যদি না বুঝেই পড়তেন তাহলে আল কুর আনের প্রতি তাদের এতো ভালোবাসা থাকতো না।
 আর সাহাবীদের শত্রুরাও যদি সাহাবীদের ওই সব পড়া না বুঝতেন তাহলে তারা শত্রুতা করতো না।

এইসব না বুঝে নিয়ম করে করা আমল বুঝে কুরআন পড়ার ক্ষেত্রে কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।
 প্রতিদিন নিয়ম করে বিভিন্ন আয়াত পড়া যেখানে জরুরী ছিলো সেখানে মানুষ না বুঝে প্রতিদিন একই আরবী তেলাওয়াত করে আল কুরআনের উপর আমল করছি মনে করে সন্তুষ্ট থাকছে।
 কারন ওই মানুষ হয়তো কুর আন পড়ার জন্য অতটুকুই সময় বরাদ্দ রাখে আর তা ওই সওয়াব কামাইয়ের লক্ষ্যেই শেষ হয়ে যায় বা নিজের কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই করা হয়।
 অন্যের কল্যানেও যে আল কুরআনের বড় ও ইফেকটিভ ব্যবহার আছে তা তাদের অজানা থেকে যায়
 এবং
জানা থাকলেও তা করা হয় না।

>> কালেক্টেড পোস্ট <<