অনৈক্য প্রবণতা: মুসলিম উম্মাহর প্রধান সংকট

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

লেখক : মুহাম্মদ রাবে আল-হাসানী আন-নববী
অনুবাদক : জহীর উদ্দীন বাবর
সম্পাদক : ইকবাল হোছাইন মাছুম


মুসলিম জাতির অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। পারস্পরিক ঐক্য  এর অন্যতম। এটি শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের ভিত্তিতেই হয়। হাদীসে উল্লেখ আছে “এক মুসলমান অন্য মুসলমানের জন্য এক শরীর সদৃশ। যদি এর একটি অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয় তবে এর প্রভাবে সারা শরীর ব্যথিত ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়” অদৃশ্য এই শক্তিই মুসলমানদের অবিস্মরণীয় বিজয়ের গোপন রহস্য। সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ূবী রহ. বায়তুল মুকাদ্দাস পুনর্উদ্ধারের জন্য ঐ সময় চূড়ান্ত বিজয়ের প্রস্তুতি নেন, যখন মুসলমানদের পারস্পরিক বন্ধন সুদৃঢ় হয় এবং শামের নেতৃস্থানীয়রা একই প্লাটফর্মে জড়ো হন। ইতিহাসের ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে একথা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, মুসলমানরা কোনো একটি যুদ্ধেও সফলকাম হতে পারেনি; যতক্ষণ না তাদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির সুদৃঢ় বন্ধন স্থাপিত হয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতাবোধ জেগেছে। মতবিরোধ ও ভেদাভেদ থেকে নিস্কৃতি পেয়েছে। কিন্তু যখন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজস্ব মত-পথ ও চিন্তাধারায় খেয়ালী বিচরণ করবে; নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট মত পার্থক্য শত্রতার রূপ নেবে; তখন সফলতার আর কোনো প্রচেষ্টাই কাজে আসবে না। সর্ব ক্ষেত্রে মুসলমানরা হবে অপদস্থ। তাদের জন্য থাকবে পরাজয়ের গ্লানি।

বর্তমান মুসলিম উম্মাহ অনৈক্য ও অসংহতির মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত। দুনিয়াতে আজ মুসলামানদের রয়েছে বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী। পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ তাদের। তবুও দুনিয়ার অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। লাঞ্ছিত ও নিস্পেষিত হচ্ছে দেশে দেশে। তাদের দেখে বিদ্রুপের হাসি হাসছে বাতিল শক্তি। কিন্তু মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? এর একমাত্র কারণ, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে পড়েছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শতধা বিভক্ত। তাদের খন্ড খন্ড শক্তি নির্জীব হয়ে আছে। প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব মতের পূঁজায় লিপ্ত। নিজের গোত্র বা দলনেতার কথাই তিল-তাবিজ; অন্যের কোনো গুরুত্ব নেই। উম্মতের এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা ।

কর্মপরিকল্পনা ও কার্যপ্রণালীর আছে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি। পরিবেশ পারিপার্শি¦কতাও সর্বত্র এক নয় । তাছাড়া ইসলামী কার্য সম্পাদনকারীদের মত ও চিন্তার ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকাও স্বাভাবিক। সে হিসেবে কৌশলগত ও চিন্তাগত আংশিক মতবিরোধ তেমন দোষের কিছু নয়। কিন্তু এই মত পার্থক্য যখন ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব, দলীয় বিবেদ ও শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের রূপ নেয়, তখন তা জন্ম দেয় ভয়াবহ পরিস্থিতির। গঠনমূলক কাজের পরিবর্তে চর্চা হয় বিনষ্টের। ইসলামী ভাবধারার আবরণে চরিতার্থ হয় ব্যক্তিস্বার্থ। তাই সকল সফলতা পর্যবসিত হয় ব্যর্থতায়। অবশেষে আত্মঘাতি এই কর্মকান্ড ইসলামের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। গণ্য হয় ইসলাম নিশ্চি‎েহ্নর কারণ হিসেবে। ইসলামী সমাজ যখন বিভক্ত হয় দলে-উপদলে। প্রত্যেকে বিভোর হয় অনিষ্টের চিন্তায়। তখন উম্মতের অস্তিত্ব আর টিকিযে রাখা যায় না। নিজেরাই কারণ হয় নিজেদের পতনের।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এই ধ্বংসাত্মক কাজকে অনেকেই সামাজিক সংশোধন ও ইসলামী বিপ্লবের কাজ হিসেবে জ্ঞান করে। অথচ এটি মারাত্মক একটি ভুল। পারস্পরিক অনৈক্য ও সংঘাত কোনোদিনও ইসলামী সমাজ বিপ্লবের জন্য সহায়ক হতে পারে না। বর্তমান মুসলমানদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে তারা আজ বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত। গঠনমূলক কাজের পরিবর্তে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত। গড়ার চেয়ে ভাঙ্গার ক্ষেত্রে বেশি উদ্যোগী। মুসলিম দেশের শাসক কিংবা ইসলামী দলের পরিচালক; প্রত্যেকেই আত্ম-পূঁজারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ। প্রত্যেকে ছুটছে নিজেদের দুষ্ট প্রবৃত্তির পেছনে। “আমার মত ও চিন্তাই বিশুদ্ধ; এটিই একমাত্র পথ ও পদ্ধতি” এই আত্ম-তুষ্টিতে ভুগছে সবাই। অন্যদের গুরুত্ব দিতে রাজি নয় কেউই। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পরমত সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা ও সহযোগিতাবোধ নেই বললেই চলে।

আকীদাগত, চিন্তাগত, রাজনৈতিক, সামাজিক প্রতিটি ক্ষেতেই আমাদের পথ নির্দেশকরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে। পরস্পরে কাঁদা ছুড়াছুড়ি করছে; লেগে আছে একে-অন্যের পেছনে। মন্তব্য করছে ঢালাওভাবে। প্রকৃত অবস্থা জানার আগেই গোমরাহ, ভন্ড, দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করছে। এদের মধ্যে কেউ নবী প্রেমিক (!) বনে বিরোধীদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বেয়াদবীর অপবাদ দিচ্ছে। কেউ নিজেদেরকে হাদীসের প্রকৃত আমলকারী মনে করে ইমামের অনুসরণকারীদেরকে গোমরাহ, বিদাতি ও কুফর-শিরকের পর্যায়ে ফেলে দিচ্ছে। আবার কেউ ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্বে, দলীয় মোহে অন্য ইসলামি দলের বিরুদ্ধে অনবরত কুৎসা রটাচ্ছে। এভাবে তাদের পরস্পরে সৃষ্টি হচ্ছে বৈরী সম্পর্ক। বাড়ছে হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্র“তা। দূর হচ্ছে তাকওয়া, ইখলাস ও দীনের প্রকৃত চেতনা। ইসলামের বৃহৎ স্বার্থে আল্লাহ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামের ওপর একত্রে বসতে তারা সম্মত নয়। মুসলমানদের পরস্পরে বিভক্তির মহড়া চলছে এভাবেই।

আজকের মুলমানরা তদের সমস্যা নিরূপনে যেমন ব্যর্থ, তেমনি উত্তরণ ভাবনায় শতত বিচ্ছিন্ন। একক চিন্তা-ধারার কোনো অস্তিত্ব নেই। তাদের অনৈক্য ও সংঘাত আরো বিরূপ আকার ধারণ করে যখন তা অনৈসলামিক দেশে হয়। ইসলামী ব্যক্তিত্বদের এই আচরণ দেখে অমুসলিমদের মনে ইসলাম সম্পর্কে এই ধারণা বদ্ধমূল হয় যে, ইসলাম পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, সংঘাত, বিভেদ ও বিদ্বেষমূলক ধর্ম। ঐক্য, সংহতি ও সহাবস্থান ইসলামে নেই। কেননা তারা দেখে যে, চিন্তা ও ইজতেহাদগত বিষয়েও মুসলমানদের বিভিন্ন দল-উপদল পরস্পরের বিরুদ্ধে শত্র“ ভাবাপন্ন। সামান্য বিষয়ের জের ধরে পরস্পরেকে ইসলামের গন্ডি থেকে বের করে দিচ্ছে। যাচাই-বাছাই ছাড়াই ফতোয়া ছুড়ে মারছে। ঘরোয়া বিষয় ফলাও করে প্রচার করছে বাইরে। তখন স্বভাবতই ইসলামের প্রতি অমুসলিমদের মনে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হবে।

অত্যন্ত আফসোস ও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আমরা ভাঙ্গা ও নষ্টের দিকে এগুচ্ছি; অথচ স্থাপন ও গড়ার অলিক স্বপ্ন দেখছি। যখন শত্ররা সবাই ঐক্যবদ্ধ; চালাচ্ছে ইসলাম নির্মূলের সম্মিলিত প্রয়াস; বাতিলচক্র নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে এগুচ্ছে দৃঢ়গতিতে। তখন মুসলমানরা আত্মকলহে লিপ্ত। হালকা এবং সাধারণ জিনিসকে কেন্দ্র করে চলছে অঘোষিত লড়াই। আত্ম-প্রতিষ্ঠার জন্য সবাই মরিয়া। শুধু মুসলিম ব্যক্তিত্বদের মাঝেই নয়; মুসলিম রাষ্ট্র সমূহেও চলছে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের খেলা। খুব বড় বিষয় নিয়ে নয়; মামুলি বিষয় নিয়ে। এগুলো সমাধানের জন্য তেমন কোন উদ্যোগেরও প্রয়োজন হয় না। আলোচনা-পর্যালোচনা দ্বারাই সম্ভব। 

মুসলমান পরস্পরে ভাই ভাই। সে হিসেবে পারস্পরিক সম্পর্ক হওয়া উচিত ভ্রাতৃত্বের, সম্প্রীতি ও মাধুর্যের। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়। যিনি কাজ করেছেন তার দিকে নয়, চেয়ে দেখা উচিত কী কাজ করেছেন। ভাল কাজ হলে তার স্বীকৃতি দেয়া। ব্যক্তি যে কেউই হোক। ইসলাম ও গঠণমূলক সামাজিক কাজের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা বাঞ্ছণীয়। কিন্তু যখন কাজের চেয়ে কর্তা বেশি গুরুত্ব পায়; প্রত্যেক কাজকে নিজের অবদান মনে করা হয় এবং খ্যাতির আশা থাকে, তখনই ঘটে বিপত্তি।

বর্তমানে ইসলামী কর্মীদের অভ্যাস এই দাঁড়িয়েছে যে, তাঁরা শুধু অন্যের দোষ-ত্র“টিই দেখে। অন্যের ভুলগুলো প্রকাশ করেই শান্তি পায়। নিজের ভুল কিছুই ধরা পড়েনা তাদের রঙ্গীন চশমায়। নিজের মধ্যে হাজার দোষ থাকার পরও অন্যের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে মজা পায়। নিজেরটি একমাত্র কাজ; অপরেরটি কিছুইনা; এই ধারণা তাদের ভেতর। তাদের ভাব দেখে মনে হবে ইসলামের রক্ষক একমাত্র তারাই। তাদের অস্তিত্ব ও পতনের মাঝে ইসলামের উত্থান-পতন নিহিত!

বর্তমানে আমাদের মধ্যে ইসলামের আদর্শ তেমন নেই। আমাদের কাজগুলোও পূর্ণ সুন্নাত ও ইসলাম মোতাবিক হচ্ছে না। তবুও মিথ্যা অভিনয় করার কি দরকার আছে ? ইসলামের কৃত্রিম কান্ডারী বনে ইসলামী ঐতিহ্যকে বদনাম করার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য কখনো খ্যাতি ও নেতৃত্ব, কখনো নিজের দল ও মতের শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রাধান্য, আবার কখনো নিজের জ্ঞান বা বুদ্ধির বিকাশ। অথচ আমরা নিজেদের ভাবছি পূত-পবিত্র! আর অন্যদেরকে মনে করছি ভ্রষ্ট ও অচ্ছুত! এটি সরাসরি ইসলামের সাথে প্রতারণা। নিছক ব্যক্তি স্বার্থে ইসলামের অপব্যবহার।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন “মুসলমান তাঁর ভাইয়ের সম্মান করবে। প্রত্যেকের প্রাপ্য অধিকার আদায় করবে। পরস্পরে হিতকামী হবে।
সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে। হিংসা-বিদ্বেষ, সংকীর্ণ মানসিকতা রাখবেনা।” আল্লাহ তায়ালাও নির্দেশ করেছেন মুসলমানদের সাথে সদাচরণ করতে।

এমনকি কাফিরদের সাথেও ভাল ব্যবহার করতে বলেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে
যারা পবিত্র মসজিদ থেকে তোমাদের বাধা প্রদান করেছিল, সেই সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে। সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।” (সূরা মায়েদা : ২)

এই আসমানী বার্তা প্রমাণ করে ইসলাম একটি উদার, সহনশীল ও সার্বজনীন সম্প্রীতির ধর্ম। বিবেদ ও সংঘাতের এখানে কোনো স্থান নেই।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা ইঙ্গিত করে মুসলমানদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনের। আর এর জন্য প্রয়োজন সবার আন্তরিকতা। এই প্রবণতা দূর করতে হলে ব্যক্তি স্বার্থ থেকে ইসলামের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। অপরের বিরুদ্ধে ঢালাও ভাবে মন্তব্য করা চলবে না। নিজে গঠনমূলক কাজ করবে। অন্যের বিচ্যুতির পেছনে লেগে অহেতুক সময় নষ্ট করবে না। যে সকল জিনিস বিবেদ বা সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে তা থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে। সব সময় সহযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ করবে। কেননা ‘আল্লাহ— বান্দাকে সাহায্য করেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইকে সাহায্য করে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।


লেখাটি এই সাইট থেকে সংকলিত

http://feelislam.com


In the Name of God, The Most Merciful, The Most Gracious!
All the articles in this website are the English rendering of articles by Abdul Wadud (P M A Gafur) in Malayalam. P M A is an Islamic orator and a profound writer from South India and has delivered many speeches and has written numerous articles on Islam.
This place is a fruit of collective efforts by a team, with the author’s permission and support. This aims at spreading the ‘beauty’ of Islam.
It was quite a difficult task for us to translate these articles into English without losing the rich literal style of the author in Malayalam and with our limited knowledge. Feel free to point out possible mistakes and provide us creative suggestions to make this site and the articles better. You maycontact us here.
This site will be updated with a new article every week Insha Allah. Please visit us often, share the articles with your friends/colleagues/relatives and subscribe to the posts.
—-
Disclaimer:  All mistakes in the posts are most likely occurred during translation, we would really appreciate if you could notify us. You are free to copy, share and promote the articles in the original form, in order to spread the message and the enchanting beauty of Islam. However, you are not permitted to create derivatives without author’s permission. We would demand you to give credits towww.feelislam.com in case you copy any articles into your blogs, web-space etc. You should not use the articles or its derivatives for any commercial activities.
visit
http://www.facebook.com/feelislam.page
http://twitter.com/#!/feel_islam
http://feeds.feedburner.com/Feelislam