আমরা কতই না অকৃতজ্ঞ!!

গতকাল যখন সবাই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ধুন্ধুমার খেলা দেখছিল ঠিক তখন আমি অন্যরকম একটি ঘটনার মুখোমুখি হলাম। নিজের অনেক না পাওয়া নিয়ে একটু হলেও যে আক্ষেপ ছিল তা মনেহয় কেটে গেল এই ঘটনা দেখে।

আমার একজন ক্লায়েন্ট যিনি ইউরোপ প্রবাসী সম্প্রতি দেশে এসেছেন। উনার কাজ করতে গিয়ে বেশ ঘনিষ্ঠতা হয়ে যায়। ভদ্রলোক বেশ নম্র স্বভাবের। উনাকে দেখি সবসময় শ্বাসের সমস্যায় থাকেন। গতকাল খবর পেলাম উনার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। দ্রুত গেলাম আর দেখলাম খুব বেশি সমস্যা না তাই বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে।

যাইহোক, বন্ধুত্বের খাতিরে উনার সঙ্গ দেয়াটা প্রয়োজন মনে করলাম আর প্রথমবারের মত উনার বাসায় গেলাম। বেশ ধনী লোক তাই অনেক বড় বাড়ি আর দেখার মত ডেকোরেশন। কিন্তু ঐ পর্যন্তই, উনার খাদ্য তালিকা হল পানি, মুড়ি আর কয়েকটি নোনতা বিস্কুট। ঘুমানোর সময় নাকে কি যেন একটা মেশিন লাগিয়ে রাখেন যাতে নিঃশ্বাস বন্ধ না হয়। অথচ উনার বয়স খুব বেশি না।

এক ছেলে এক মেয়ে, ছেলে এমন জায়গায় পড়তে চায় যেখানে বাবা দিতে রাজি নয়। বুঝা গেল এটা নিয়ে বিস্তর সমস্যা হয় বাপ বেটায়। উনি অসুস্থ কিন্তু উনার স্ত্রী কি এক কাজে ঘরের বাইরে যেখানে সাধারণ সর্দি জ্বর হলেও আমাদের ঘরের মানুষেরা সহজে পাশ থেকে নড়ে না। আমি থাকা অবস্থায় নিন্ম মাধ্যমিক শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ের শিক্ষক এল আর তার গেমস আসক্তি দূর করতে ট্যাব কেড়ে নিল। শিক্ষক যাওয়ার পর মেয়ের প্রচণ্ড রাগ, চিৎকার, গালাগালি একসময় উম্মাদের মত আচরণে রূপ নিল।

সর্বশেষ কথা হল, উনি এতকিছুর মাঝেও আফসুস করছেন ব্যাংক লোণ নিয়ে যা উনি বাড়ি, ব্যবসা এসব কারণে নিয়েছেন।

আমরা মানুষকে কতটুকু দেখি আর কি ধারণা করি। আল্লাহ এই লোকের রিযক কেড়ে নিয়েছেন, শান্তি কেড়ে নিয়েছেন, সন্তানের আনুগত্য কেড়ে নিয়েছেন উপরি হিসাবে ঋণের টেনশন চাপিয়ে দিয়েছেন।

চলে আসার সময় কেবল মনে হচ্ছিল, কত ধনী আল্লাহ আমাকে করেছেন। পারিবারিক প্রশান্তি দিয়েছেন, আত্মীয়দের ভালবাসা দিয়েছেন, অনেক দ্বীনী ভাই দিয়েছেন যাদের মাঝে সমবয়সী কিছু অসাধারণ বন্ধু আছে, দুনিয়াকে বুঝার মত সুস্থ মস্তিষ্ক দিয়েছেন, খাওয়ার রুচি দিয়েছেন, এখনও বেশ সুস্থ শরীর দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ!!!

আমরা কতই অকৃতজ্ঞ, আমরা তবু আরও কিছু চাই। অথচ অনেক কিছু থেকেও কিছু মানুষ কত গরীব, কত অসহায়!! আল্লাহ উনাকে সাহায্য করুন, আমাদেরকেও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা সঠিক রাস্তায় প্রকাশ করার তৌফিক দিন।

প্রতিটি মানুষ এর জোড়া আল্লাহ আগে থেকে বানিয়েছে …।আয়াতটা কি সত্যি ?

প্রশ্নঃ আমার একটিপ্রশ্ন আছে –ইসলাম এ তো প্রতিটি মানুষ এর জোড়া আল্লাহ আগে থেকে বানিয়েছে …।আয়াতটা কি সত্যি ???? তাহলে যে আজকাল অনেক ধার্মিক ছেলে মেয়ে ও প্রেম এর সম্পর্কে আছে ।। তাহলে কি আয়াতটা ভুল।??? আমি যদি আল্লাহ র কাছে আমার ভালবাসার মানুস এর জন্য দুয়া করি তাহলে।।??? আমি কি ভাবে আল্লাহ র কাছে দুয়া করব।।??? এই সম্পর্কে ইসলাম কি বলে।।??? প্রেম ভালবাসা কি খারাপ।।??? প্লিজ আমাকে জানাবেন।

উত্তরঃ
আসসালামুয়ালাইকুম

আপনার প্রশ্ন পড়ে মনে হচ্ছে ইসলাম নিয়ে আপনি খুবই ভয়ংকর ধারণা পোষণ করছেন। আপনার মন সন্দেহবাতিকগ্রস্থ। আমি আপনাকে স্পষ্ট করে কিছু কথা বললাম। আশা করি আপনি বুঝতে পারবেন। যদিও আপনার প্রশ্নটি নারী পুরুষ সম্পর্ক নিয়ে কিন্তু আমি আপনাকে সতর্ক করে দিতে চাই কারন আপনি কুরানের আয়াত নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন। একজন মুসলিম সে যদি মনে করে কুরানের কোন আয়াত ভুল কিংবা তার কোন যথার্থতা নেই তাহলে সে আর মুসলিম থাকতে পারেনা কেননা আল্লাহ নিজেই কুরানের সত্যতা দিয়েছেন…

“(এই) সেই মহাগ্রন্থ আল কুরান এতে কোন সন্দেহ নেই, যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে এই কিতাব তাদের জন্যই পথপ্রদর্শক’। [বাকারাঃ২]

আর তাই কেউ যদি কুরানের আয়াত কে অস্বীকার করে তাহলে সে আল্লাহকেই অস্বীকার করে, তার মানে সে কাফির! আল্লাহ আমাদেরকে এই ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা করুন… আমীন!

এবার আপনার মুল প্রশ্নে আসি। আপনার প্রশ্নটাকে কয়েকটা অংশে ভাগ করলাম

• প্রত্যেক মানুষের জোড়া কি নির্ধারিত?
• প্রেম করা মানে সহজ কথায় বিয়ের আগে নারী পুরুষ অবৈধ সম্পর্ক কি হারাম?
• প্রেম করা অবৈধ হলে অনেক ধার্মিক ছেলে মেয়ে প্রেম করে কেন?
• পছন্দের মানুষের জন্য দোয়া করা যাবে কি?

জোড়া বিষয়ে কুরানের স্পষ্ট আয়াত আছে।একটা না, কয়েকটা…

“আমি প্রতিটি জিনিসই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে করে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর”। [আয যারিয়াতঃ ৪৯]

“পবিত্র নিখুঁত সেই মহান স্রস্টা, যিনি জুড়ি সৃষ্টি করেছেন সবকিছুর__উদ্ভিদের, স্বয়ং তাদের (মানুষের) এবং এমন সব কিছুরও যাদের তারা জানেনা”। (ইয়াসিনঃ ৩৬]

“হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে”। [আল হুজুরাতঃ১৩]

“হে মানুষ! তোমরা সতর্ক হও তোমাদের সেই মহান প্রভুর ব্যাপারে, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একজন মাত্র ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে, আর তাদের থেকেই সৃষ্টি করেছেন বিপুল সংখ্যায় পুরুষ আর নারী” [সূরা নিসাঃ ১]

এসব আয়াত থেকে একথা দিবালোকের মত পরিষ্কার যে মহান আল্লাহ তায়ালা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি মানুষকে তার জোড়া বানিয়েই এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এমনকি উদ্ভিদও সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। সুতরাং এই বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই যে আল্লাহ আমাদের জোড়ায় জোড়ায় তৈরি করেছেন কিনা!

# ইসলামে নারী পুরুষের সম্পর্কের পবিত্র আর বৈধ পন্থা হল বিয়ে। এর বাইরে অর্থাৎ “বিয়ের আগে নারী পুরুষের সম্পর্ক, বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড, লিভ টুগেদার এসব সম্পূর্ণ হারাম।

এটা শুধু আপনি নয়, নামাজ রোজা করা মুসলিম ছেলেমেয়েদেরও মেনে নিতে কষ্ট হয়! তার কথা তো আপনিই বললেন যে আপনি অনেক ধার্মিক ছেলেমেয়েকেও রিলেশন থাকতে দেখেছেন। আমরা যারা ইসলামটাকে একটা পরিপূর্ণ জীবনব্যাবস্থা হিসেবে মেনে নিয়ে তা জীবনে প্রয়োগ করে দেখাতে পারিনা তার অন্যতম কারন আমরা ইসলামটাকে দেখি একটা হালাল হারামের লিস্ট হিসেবে। আমরা যখন আমাদের প্রবৃত্তির পূজা করতে যাই, যখন সেখানে ইসলামের বাধা আসে তখনই আগে পিছে চিন্তা না করে আমাদের মনে প্রশ্ন আসে why?? Why this is haraam in islam??
আপনি নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুনতো এই প্রেম করা নিয়ে কোন প্রশ্ন কি ছোটবেলা থেকে এসেছে? না! আসেনি! আমরা সবাই একটা নির্দিষ্ট বয়স পার করি, যে বয়সটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একই সাথে খুবই ভয়ংকর! যে বয়সটাতে আবেগ, ভালোলাগা, সবকিছু পজিটিভ ভাবা, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সীমাহীন আকর্ষণ সবকিছু আমাদের চারপাশে গিজগিজ করে! আর এই বয়সের সরলতা আর ভালোলাগার সুযোগ নেই শয়তান আর তা কাজে রুপান্তর করে দেখায় কাফির আর ইসলামের বিরুদ্ধ শক্তি যারা আল্লাহর নয় নিজেদের প্রবৃত্তির পূজা করে! আর তাই আজকে সমাজে স্কুলে প্রেম, কলেজে প্রেম, ভার্সিটিতে প্রেম, নাটক- সিনেমা- গল্প উপন্যাসে প্রেম! আর এসব দেখে শুধু আপনি নয় অনেকের মনে সেই একই প্রশ্ন why?? Why প্রেম is haraam in islam?? কারন আল্লাহ মহা পরিকল্পনাকারী! তিনি তার সৃষ্টির জন্য মঙ্গলজনক পন্থাই পরিকল্পনা করেছেন! তিনি মানুষের শরীর আর আত্মিক ক্ষতির আসংখা থেকে মানুষকে মুক্ত থাকার ব্যবস্থা করেছেন। অতি সসীম এই মস্তিস্ক নিয়ে আমরা কখনও অসীম মহান আল্লাহর পরিকল্পনা বুঝতে পারবনা! কিন্তু আমরা এই দুনিয়াতেই তার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আর আদেশ অমান্যকারিদের পরিণতি দেখেছি, দেখছি, দেখব ইনশাআল্লাহ!

আমরা একটা হারামকে শুধু হারাম হিসেবে দেখি কিন্তু একটা হারাম শুধু হারাম নয় এটা অনেকগুলো পথ যে পথে মানুষের অপকার আছে সেই পথগুলোও বন্ধ করে দেয়! ইসলামে মদ হারাম। কিন্তু মদ তো মানুষ ভাল লাগে বলেই খায়!! তাহলে হারাম হবে কেন?? এটা বোঝা আমার আপনার কাছে দুরহ তো বটেই হজরত ওমর (রাঃ) ও বুঝতে পারেননি! তার প্রার্থনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তিনবার আয়াত নাযিল করার পর হজরত ওমর (রাঃ) বুঝতে পারেন কেন মদ হারাম হল! আর আমরা এখন জানতে পেরেছি বর্তমানে বিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ…অ্যালকোহল! মদপান! যেটা আল্লাহ ১৪০০ বছর আগেই হারাম করেছেন! ইসলামে এরকম অনেকগুলো হারামের একটি হল বিয়ে বাদ দিয়ে কিংবা বিয়ের আগে নারী পুরুষ প্রেমের সম্পর্ক! আর বরাবরের মতই ইসলামকে অন্তরে ধারণ না করে পাশ্চাত্য আর কুফরি সিস্টেমর আধুনিকতা অন্তরে ধারণ করা আজকের তরুণ তরুণী সেই হারামের ধার দারে না! অনেকের কাছে এই হারামের জন্য ইসলাম হয়ে যায় সেকেলে! তার পরিণতিও হাতে নাতে!! পেতে অবৈধ বাচ্চা নিয়ে হাসপাতালে গর্ভপাত, রিকশা- সি এন জি তে মূল্যবোধ নৈতিকতা বিসর্জন, বয়ফ্রেন্ডের লালসার শিকার হয়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে গণধর্ষণ, বাজারে সেক্স ভিডিও, নিজের অসম্মান, পরিবারের অসম্মান আর সবশেষে এত এত অসম্মান সইতে না পারে গলায় ফাঁস!

না না না!! হ্যাঁ আমি জানি! শুধু আপনি না সবাই এমনকি যারা এই পরিণতিগুলো বরণ করেছে তারাও বলেছিল, “ না না আমরা তো সত্যই ভালোবাসি!! আমরা এসব করব না!”। সেজন্যই প্রথমে বলেছিলাম ইসলামে কোন একটা হারাম শুধু হারাম নয় এটা অনেকগুলো ক্ষতির পথও রুদ্ধ করে। যে পরিণতিগুলোর কথা বললাম নিজের প্রতি সৎ থেকে বলুনতো এই পথগুলো কে উন্মুক্ত করেছে?? সহজ উত্তর___ নারীপুরুষ অবৈধ সম্পর্ক যেটা ইসলাম হারাম করার পরও তারা মানতে চায়না! ইসলাম সেই জীবন ব্যবস্থা যা মানুষকে নৈতিকতা আর মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়! মানুষকে নিজের শরীর আর মনের নিরাপত্তা দান করে! আর তাই ইসলামে নিজের শরীর আর মনের নিরাপত্তা এসেছে পবিত্র বিয়ের মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন…
 
“আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের (মানব জাতির) মধ্য থেকেই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য (বিপরীত লিঙ্গের) জুড়ি, যাতে করে তোমরা বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো! এ উদ্দেশ্যে তিনি তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন হৃদ্যতা- বন্ধুতা আর দয়া- অনুগ্রহ অনুকম্পা। এতে রয়েছে বিপুল নিদর্শন চিন্তাশীল লোকদের জন্য”। [সূরা আর রুমঃ ২১]

সুবাহানাল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন বিবাহের মাধ্যমেই নারী পুরুষ পাবে প্রশান্তি, সৃষ্টি হবে হৃদ্যতা-বন্ধুতা, দয়া অনুগ্রহ অনুকম্পা! আর এটা চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ! কিন্তু আমরা কেউ চিন্তাশীল নই! আমরা মানুষের হারাম সম্পর্ক দেখে স্বপ্নের বীজ বুনি! হলিউড- বলিউড তারকাদের “রিলেশনশিপ উইথ অমুক” দেখে ভাবি হ্যাঁ “আমারও চাই”!! সেলিনা-বিবার, এঞ্জলিনা- ব্র্যাড পিট লিভ টুগেদার দেখে ভাবি, “আহা! তারা কতই না সুখে আছে! কেন যে ইসলামে এসব হারাম করল বুঝি না!!” এসব আধুনিকতার art of living এর রঙিন পর্দাটাই আমরা শুধু দেখি! পর্দার আড়ালের কঙ্কালসার, কুড়ে কুড়ে ধ্বংস হওয়া জীবনবোধের গল্প আমরা কেউ জানিনা! আসুন কয়েকটা গল্প শুনি……

শুধু আমেরিকাতেই একজন পুরুষ বিয়ের আগে গড়ে ৮ জন নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ায়! তাদের সবার সাথেই অবাধ যৌনসম্পর্ক থাকে। এরপর সে একটা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারে। এবং বিয়ের পরও দুই তিনটা অবৈধ যৌনসম্পর্ক থাকে একজন আমেরিকানের। ভারতের একটি পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে (৮-১০ বছর আগের, জাকির নায়িকের লেকচার থেকে) শুধু মুম্বাই শহরেই ৫০% মেয়ে স্কুল জীবন শেষ করার আগেই তাদের কুমারিত্ত হারায়! এখন ২০১৩!! সেই % টা কি এখন ১০০%?? কিংবা তার কাছাকাছি??? আর যেসব তারকার প্রেমের সম্পর্ক দেখে আমাদের আবেগ উদ্বেলিত হয়ে উঠে তাদের কিছু গল্পও শুনি……

বোন! হিসাবটা সোজা! মহান আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্ধারণ করেছেন সেখানেই কল্যাণ আর প্রশান্তি লুকায়িত আছে! আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা অমান্য করায় আছে এই দুনিয়ায় ক্ষতি, লাঞ্ছনা, অসম্মান আর আখিরাতেও কঠিন শাস্তি! এই অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক, মোবাইল ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা, একসাথে ঘুরতে যাওয়া, long drive ( মতান্তরে sex drive) অন্ধকার কফি শপ!! অতি সহজ ভালোলাগা থেকে শুরু করে দুইটা শরীর কাছাকাছি আসলে দুর্বল চিত্তের অতি স্বাভাবিক শরীরের চাহিদা চরিতার্থ করার প্রয়াস আসবেই। আপনি বা আমরা কেউই “innocent intention” এর দোহাই দিয়ে এই চাহিদাকে হালকা করতে পারবনা! একটি হারাম রিলেশন যেখানে আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ, প্রশান্তির চেয়ে বেশী থাকে সন্দেহ, শরীরকেন্দ্রিক ভোগবাদী চিন্তা, মানসিক উত্তেজনা আর ধীরে ধীরে আত্মিক অবক্ষয়! আমরা আমাদের চারপাশে এগুলোই দেখে এসেছি, এখনো দেখছি আর ভবিষ্যতেও দেখব! আর তাই ইসলাম দুইজন নারী পুরুষকে বিয়ের পবিত্র বন্ধনে বেঁধে তাদের শারীরিক, আত্মিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে! একজন স্ত্রী, একজন স্বামী একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, আস্থা, বিশ্বাসে যে সম্পর্ক তৈরি করে সেখানেই আছে যথার্থ tranquility!! একজন গার্লফ্রেন্ড তার বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে যতটা অনিশ্চিয়তা নিয়ে ভাবে, “ও কি সত্যিই আমাকে ভালবাসে??” একজন স্ত্রী তার স্বামীর হাত ধরে ততটাই আস্থা আর বিশ্বাসের সাথে ভাবতে পারে, “He is mine”!! একজন গার্লফ্রেন্ড যতটা অনিশ্চয়তা, ভয় আর আত্মসম্মানের হুমকি নিয়ে একজন বয়ফ্রেন্ডের সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের দিকে যায় , একজন স্ত্রী ঠিক ততটাই আস্থা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভাবতে পারে তার স্বামী তার পবিত্রতার সঙ্গী, তার স্বামী তার অনাগত সন্তানের বাবা!!

ইসলাম এভাবেই সুন্দর! এভাবেই পবিত্র! এভাবেই শরীর মনের ক্ষতি রোধ করে! এভাবেই দুইজন নারী পুরুষকে একেবারে আপন করে দেয়! তার জন্য কোন হারাম সম্পর্ক দরকার পড়েনা! মিথ্যার মায়ায় সান্ত্বনা খোঁজার দরকার পড়েনা!!

# আপনার এই প্রশ্নটা আমাদের সবার জন্যই লজ্জার! কিছু ইসলামের লেভেলধারী কুপ্রবৃত্তির পূজারির কার্যকলাপের কারণে প্রতিনিয়ত ইসলামকে অপমানিত হয়ে হয়! একটা কথা মনে রাখবেন, মানুষকে দিয়ে ইসলামকে বিচার করবেন না__ ইসলামকে দিয়ে মানুষকে বিচার করবেন! আমার এতক্ষণের আলোচনা থেকে নিশ্চয় আপনি এটা বুঝতে পেরেছেন যে আপনি যাদের দেখেছেন তারা নিষিদ্ধ কাজ করছে। ইসলাম নিয়ে জানার দরকার পড়েনা আমরা স্কুলে বিদায় হজ্জের ভাষণ পড়েছি! যেখানে রাসুল (সাঃ) বলে গিয়েছেন, “আমি তোমাদের কাছে দুইটা জিনিস রেখে যাচ্ছি, কুরান আর সুন্নাহ (রাসুল (সাঃ) এর হাদিস)”! সুতরাং ইসলামে কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক আমরা তা কুরান সুন্নাহ থেকে শিখব কোন মানুষকে দেখে নয় হোক তারা নিজেদের পরেহেজগার বলে জাহির করে!

# আপনার এই প্রশ্নটা খুবই interesting! আমরা কি পছন্দের মানুষের জন্য দোয়া করতে পারব?? অবশ্যই আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারবেন যেন আপনার জোড়ার সাথে বিয়ের পবিত্রতায় আবদ্ধ হতে পারেন! আপনার জন্য নির্ধারিত মানুষটি যেন সৎ, তাকওয়াবান হয়! সে যেন আপনার হৃদয়ে প্রশান্তির বার্তা নিয়ে আসে! But it doesn’t mean that আপনি একটার পর একটা সম্পর্কে জড়াবেন আর প্রত্যেকজনকে আপনার জোড়া ভাববেন!! নিজের নফসকে সংযত করে , নিজের প্রতি, আল্লাহর প্রতি সৎ থেকে আপনি অপেক্ষা করবেন! আপনি যদি নিজের সততা বজায় রাখতে পারেন তাহলে আশা করা যায় আপনার জোড়াও সংযম অবলম্বন করে আপনার অপেক্ষায় থাকবে। আপনি সেই পুরুষটির জন্য সততার ভিত্তিতে প্রস্তুতি নেন ইনশাআল্লাহ মানুষটিকে আল্লাহই আপনার কাছে পৌঁছে দেবেন!

Allah has already written the name of your spouse for you. What you need to work on is your relationship with ALLAH (swt). He will send him to you when you are ready. It is only matter of time.

আর যদি চান আপনার মানুষটি সৎ আর ভাল হবে তাহলে আপনাকেও তা অর্জন করতে হবে। কারন আল্লাহ স্পষ্ট করেই বলেছেন…

“(জেনে রেখো) নষ্ট নারীরা হচ্ছে নষ্ট পুরুষের জন্য, নষ্ট পুরুষরা হচ্ছে নষ্ট নারীদের জন্য, (আবার) ভাল নারীরা হচ্ছে ভাল পুরুষদের জন্য, ভাল পুরুষরা হচ্ছে ভাল নারীদের জন্য, (মোনাফেক) লোকেরা (এদের সম্পর্কে) যা কিছু বলে তারা তা থেকে পাক পবিত্র; (আখিরাতে) এদের জন্যই রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রেযেক”। [আন নুরঃ ২৬]

অনেক কথা বলে ফেলেছি। অনেক কথাই আপনি জানতে চাননি আমি নিজ থেকেই বলেছি একটা পরিপূর্ণ সমাধানমূলক উত্তর দেওয়ার জন্য। হয়তো আপনি আমার সব কথা বুঝতে পেরেছেন, হয়তো বুঝতে পারেননি, হয়তো একদিন বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ যেন আমাদেরকে ইসলামের সমাধান মেনে নেওয়ার আর এতে আস্থা রেখে হেফাজতে থাকার তৌফিক দিন। আমরা যেন সাময়িক সুখ আর আবেগের কাছে এই দুনিয়া আর আখিরাতের যথার্থ প্রশান্তি নষ্ট না করি!
 

স্বামীর সংসার ও শ্বশুরবাড়ি

ইসলামে নারীকে কখনই স্বামীর সংসারে তাঁর শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের সেবা করতে বাধ্য করা হয় নি। এটা তার ওপর ফরজ নয়। তাই স্ত্রীকে শ্বশুর শাশুড়ি বা ননদের সেবা করতেই হবে, এমন শর্তারোপ করা দ্বীনদারি নয়।
শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ হাফিযাহুল্লাহ বলেছেন এটা একজন নারীর জন্য মুস্তাহাব। এটা এক প্রকার মানবতা প্রদর্শন আর অন্যের চোখে নিজের সম্মান বাড়িয়ে তোলা। একই মত আরো অনেক 'উলামাই দিয়েছেন।
তাই স্বামীর উচিৎ হবে না স্ত্রীকে তার পিতা মাতার সেবা করতে বাধ্য করা। অন্যদিকে স্ত্রীর উচিৎ স্বামীর প্রতি ও তার পিতামাতার প্রতি ইনসানিয়াত প্রদর্শন করা। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা। অনেক ক্ষেত্রে সুপ্ত নারীবাদের আবেগে অনেকেই মনে করেন স্বামীর গৃহে সেবা না করাটাই হল ইসলামিক। অনেকেই ইদানিং বলে বেড়ান যে স্বামীগৃহের সেবা করা একটা দাসত্ব, বাঙালি নারীদের "ধর্মের নামে" এইসব করিয়ে অত্যাচার করা হচ্ছে, সঠিক ইসলাম হল এইসব না করা- এই ধরণের কথাবার্তা সন্দেহাতীতভাবে ফাঁকা বুলি।
একটি চমৎকার হাদীস রয়েছে বুখারীর 'ভরন পোষণ' বাব এর ৫৪৬৭ নাম্বার হাদীসে।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাতটি বা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) নয়টি মেয়ে রেখে আমার পিতা ইন্তিকাল করেন। তারপর আমি এক বিধবা মহিলাকে বিয়ে করি। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ জাবির! তুমি বিয়ে করেছ? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি তারপর জিজ্ঞেস করলেনঃ কুমারী বিয়ে করেছ না বিধবা? আমি বললামঃ বিধবা! তিনি বললেনঃ কুমারী করলে না কেন? তুমি তার সাথে খেলতে, সেও তোমার সাথে খেলত। তুমিও তাকে হাসাতে, সেও তোমাকে হাসাতো।
[জাবির (রাঃ) বলেনঃ] আমি তাঁকে বললাম, অনেকগুলো কন্যা সন্তান রেখে ‘আবদুল্লাহ্‌ (আমার পিতা) মারা গেছেন, তাই আমি ওদের-ই মত কুমারী মেয়ে বিয়ে করা পছন্দ করিনি। আমি এমন মেয়েকে বিয়ে করলাম, যে তাদের দেখাশোনা করতে পারে তাদের ভুলত্রুটি শুধরাতে পারে। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তোমাকে বরকত দিন অথবা বললেনঃ উত্তম (খাইর)!
========================================================
আল্লাহ আমাদের মধ্যমপন্থা অনুসরণের তাউফীক দিন!
collected