কেউ নামাজ পড়লেই যে তার চিন্তা দ্বীনি হবে, এমন না। কেউ তার ফেইসবুক বায়োতে
কুরআনের আয়াত ঝুলায়ে রাখলেই যে সে মুসলিম হয়ে যাবে এমন না, প্রতি শুক্রবার
Inspire to be Islamic অথবা প্রতি দিন Proud to be Islamic পেইজের পোস্ট
শেয়ার দিলেই কেউ মুসলিম হয়ে যায় না।
মূল বিষয় হচ্ছে তার প্যারাডাইম, সে কোন
লেন্সে দেখছে দুনিয়াকে।
এই প্যারাডাইম জিনিসটা আসলেই মারাত্মক, প্রচন্ড রকমের ক্রুশাল। মানুষ কোনো
কিছুই র্যান্ডমলি করে না, চেতনে অথবা অবচেতনে সবকিছুই তার প্যারাডাইম
থেকেই আসে। আর এটার ভিত্তিতেই মানুষের সমগ্র জীবন পরিচালিত হয়।
প্যারাডাইম হচ্ছে কোনো কিছুকে দেখার এবং বিচার করার জন্য কারো চিন্তা,
দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানদন্ডের সমষ্টি।
আমার নিজের এবং মানুষের দৈনন্দিন চলা-বলায় এই জিনিসটা প্রায়ই খেয়াল করি,
এবং অবাক হই। কাছাকাছি মানুষ, অথচ তাদের চিন্তার কত ফারাক।
মানুষের উপ-মত
এবং উপ-চিন্তায় ভিন্নতা থাকবে, সেটা সমস্যা না। কিন্তু মৌলিক চিন্তা এক হতে
হবে, কোনো সমস্যার সমাধান এক জায়গা থেকে আসতে হবে।
কিন্তু সমাধান এক জায়গা থেকে আসে না। একেক মানুষ একেক গ্রাউন্ড থেকে
সমাধানের প্রস্তাব দেয়। আর এই জিনিসটাই মানুষের মৌলিক পার্থক্য নির্ধারণ
করে দেয়।
আপাতদৃষ্টে একই ধর্মের হতে পারে, বাহ্যিক কিছু প্র্যাক্টিসেও সাদৃশ্য
থাকতে পারে। কিন্তু সমাধানের উৎসটা যদি এক না হয়, তাহলে একই ধর্মের এবং
এমনকি কাছাকাছি থাকা স্বত্বেও এই দুজনের মধ্যে ফারাক হয়ে যায় আসমান আর
যমীনের, এ মেরু আর ও মেরু।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পশকিডটা প্রায়ই নামাজ পড়ে, ফেইসবুকে মাঝে মাঝে কুরআন
হাদীসের ভার্সও শেয়ার করে সে, রাসূলুল্লাহর দয়াদ্রতা আর মানবিকতার কথাও
মুখে চর্চা করে, ইসলাম যে মানবতা আর শান্তির ধর্ম সেটা নিয়ে বিস্তর কথা
বলে। কিন্তু যখন কোনো সমস্যা সামনে আসে, তখন সমাধান হিসেবে হাজির করে
গণতন্ত্র অথবা অন্য কোনো তন্ত্র। তার পলিসিগুলো আসে পশ্চিমা একাডেমিয়ার
মাধ্যমে প্রাপ্ত ফ্রেইমওয়ার্ক থেকে।
এই কারণে ব্যাংকে চাকরি করা হারাম শুনলে এদের চোখ কপালে উঠে যায়, ধর্ষণ
অথবা যিনার শাস্তি পাথর মারা অথবা দোররা মারা, চোরের হাত কাটা, সমকামীদেরকে
আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেয়া ইত্যাদীকে এদের কাছে বর্বরতা মনে হয়। বৈশাখ অথবা
হিন্দুদের পূজায় অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করাকে বাড়াবাড়ি মনে হয়।
সম্প্রতি আত্মহত্যার কেইস দিয়ে উদাহরণ দিলে বুঝবেন আশা করি। আত্মহত্যা একটা
সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানে কেউ হাজির করছে ইসলামকে, মানুষের সাথে তাদের
রবের সম্পর্ককে। অন্য কেউ হাজির করছে কনসার্টকে, ছেলেমেয়ের একসাথে বিনোদনের
ব্যবস্থা করে দেয়াকে, কেউ হাজির করছে সাইকিয়াট্রিস্টকে।
আবার কারো কারো থেকে কোনো সমস্যার সমাধান আসবে তাদের সামাজিকতা থেকে।
আবার কারো সামনে যখন বাঙ্গালীত্ব আর ইসলামের প্রশ্ন তুলবেন, সে দ্বিধায় পড়ে
যাবে যে সে বাঙ্গালীত্বকে আগে রাখবে নাকি মুসলমানিত্বকে।
এটা আমি
আপাতদৃষ্টে মুসলিম প্র্যাক্টিসগুলা যারা করে, তাদের কথা বলছি।
এদের বাস্তুগত অথবা শারিরিক অবস্থান কাছাকাছি হতে পারে, কিন্তু তাদের
আদর্শিক অবস্থান যোজন যোজন দূরে। ইসলাম এই কারণেই রক্তের সম্পর্কের চাইতে
দ্বীনি বা বিশ্বাসগত সম্পর্ককে প্রাধান্য দিয়েছে।
যাইহোক, এইভাবে যদি আপনি দেখেন যে কোনো একজন ব্যক্তি কোনো সমস্যার সমাধান
কোথা থেকে দিচ্ছে, তাহলে অনেক অনেক সহজ হয়ে যাবে জীবন। যদি সেটা ইসলাম না
হয়ে অন্য কিছু হয়, তাহলে উপরে যতই ইসলামী লেবাস থাকুক না কেন, কোনো লাভ
নাই।
লেখাঃ আবদুল্লাহ মাদান