[পর্ব ৩: http://goo.gl/97Wbe2]
গত পর্বে আমরা আলোচনা করেছি রিবার প্রথম প্রকার - রিবা আন নাসিআ নিয়ে। এ পর্বে আমরা আলোচনা করবো রিবার দ্বিতীয় প্রকার - রিবা আল ফাদল নিয়ে।
রিবা আল-ফাদল [ ربا الفضل]
রিবার সবচাইতে ব্যপক প্রকার হল রিবা আল-ফাদল। রিবা আন-নাসি’আতু যেমন সহজবোধ্য আর পরিষ্কার, রিবা আল-ফাদল সে তুলনায় কিছুটা জটিল। এই প্রকারের রিবা যেহেতু হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত, তাই একে অনেক ফকীহ রিবা আল হাদীসও বলেছেন।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, বিশেষ কোন পণ্য, সমজাত পণ্যের সাথে বিনিময় করার সময় যা অতিরিক্ত নেয়া হয়।
রিবা আল ফাদল মূলত যেই হাদীসের উপর ভিত্তি করে হারাম করা হয়েছে, তা নিম্নরূপ।
এই হাদীসে ছয়টি বিশেষ পণ্যের কথা এসেছে, যেসব পণ্যের বিনিময়ের সময় একই জাতের হয়ে থাকলে একদম সমান সমান হতে হবে। অর্থাৎ ১০ গ্রাম সোনার বিনিময়ে ১১ গ্রাম সোনা দেয়া যাবে না। ১০ গ্রামই দিতে হবে। তেমনি ১০ গ্রাম রূপার বিনিময়ে ১১ গ্রাম রূপা দেয়া যাবে না। ১০ গ্রামই দিতে হবে। তেমনি খেজুর, গম, লবণ ও যবের স্বজাতি বিনিময়ের একই হুকুম। যেমন ১ কেজি খেজুরের বিনিময় ১ কেজি খেজুরের সাথেই হতে হবে। ১ কেজি ১ গ্রাম এর সাথেও হতে পারবে না।
অন্যদিকে, যদি সোনার সাথে রূপার কিংবা খেজুরের সাথে লবণের বিনিময় হয়ে থাকে, অর্থাৎ একই জাতের মধ্যে বিনিময় না হয়ে ভিন্ন জাতের মধ্যে বিনিময় হয়ে থাকে, তবে কম বেশি করা যাবে, তবে অবশ্যই তা নগদে হতে হবে। অর্থাৎ হাতে হাতে হতে হবে। বাকিতে করা যাবে না।
ইসলামি বেচা-কেনা পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল মাজলিস। এর চলতি ভাষায় সহজ অর্থ করা যায় সেশান। অর্থাৎ একটি বেচাকেনা যেই সেশানের মধ্যে সম্পন্ন হয়, তাকে বলা হয় মাজলিস। মাজলিসের ওপর বেচাবিক্রির অনেক হুকুমই নির্ভর করে। এখানে রিবা আল ফাদল এর ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে মাজলিসের হুকুম হল, যদি উক্ত ৬ জাতের পণ্য পরস্পর বিনিময় করা হয়, অর্থাৎ, একই প্রকারের পণ্য পরস্পর বিনিময় করা হোক (যেমন, সোনার বিনিময়ে সোনা, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর) আর ভিন্ন প্রকারের পণ্য বিনিময় করা হোক (যেমন, সোনার বিনিময়ে গম, রূপার বিনিময়ে খেজুর, সোনার বিনিময়ে রূপা) তাহলে তা একই মাজলিসে সম্পন্ন হতে হবে। অর্থাৎ বাকি রাখা যাবে না।
আমওয়ালুর রিবায়াত
ফিকহের পরিভাষায় হাদীসে উল্লিখিত ৬ ধরণের পণ্যকে, সোনা, রূপা, খেজুর, গম, লবণ, যব - আমওয়ালুর রিবায়াত বা সুদী পণ্য বা রিবাউই পণ্য বলা হয়। কেননা এইসব পণ্যের পরস্পর বিনিময়ের ফলেই সুদ তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকে।
তবে হাদীসে এটার উল্লেখ নেই, যে শুধুমাত্র এই ৬ পণ্যই কি তাহলে রিবাউই পণ্য বলে বিবেচ্য হবে?
এটি অনেক জটিল একটি প্রশ্ন, যার উত্তরে উলামা কিরাম মতপার্থক্য করেছেন। প্রাথমিক যুগের অনেক ফকীহ এর মত ছিল রিবাউই পণ্য শুধুমাত্র এই ৬টি পণ্যেই সীমাবদ্ধ। এর মাঝে আছেন কাতাদা (রহ) ও তাউস (রহ)। তবে অন্যান্য ফকীহগণ এর সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। পরবর্তী ফকীহদের কথা হল, আমাদের দেখা উচিৎ, এই ৬টি পণ্যের মাঝে আসলে মূল মিল কোন জায়গায়, অর্থাৎ এদের মূল বৈশিষ্ট্য কী। যদি কোন পণ্যের মাঝে ঐ মৌলিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, তাহলে সেটিও রিবাউই পণ্য হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে সালাফ উস সালেহীনগণ কয়েকটি মত দিয়েছেন।
কাজেই আমরা দুইরকম পণ্য পেলাম।
প্রথমটি হল, যেসব পণ্য বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
দ্বিতীয়টি হল, খাদ্যজাতীয় পণ্য যা ওজন আর পরিমাপ করে বিক্রি করা যায়।
তাই যেসব পণ্য বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং যেসব খাদ্যজাতীয় পণ্য ওজন ও পরিমাপ করে বিক্রি করা যায়, সেইসব পণ্যকেই রিবাউই পণ্য বিবেচনা করে তার উপর রিবা সংক্রান্ত হুকুম বিবেচনা করতে হবে।
[এই পর্বে রিবা আল ফাদল নিয়ে প্রথম ধাপের আলোচনা করা হল। পরবর্তী পর্বে এর দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ]
ওয়াল্লাহু তা'আলা আ'লাম
গত পর্বে আমরা আলোচনা করেছি রিবার প্রথম প্রকার - রিবা আন নাসিআ নিয়ে। এ পর্বে আমরা আলোচনা করবো রিবার দ্বিতীয় প্রকার - রিবা আল ফাদল নিয়ে।
রিবা আল-ফাদল [ ربا الفضل]
রিবার সবচাইতে ব্যপক প্রকার হল রিবা আল-ফাদল। রিবা আন-নাসি’আতু যেমন সহজবোধ্য আর পরিষ্কার, রিবা আল-ফাদল সে তুলনায় কিছুটা জটিল। এই প্রকারের রিবা যেহেতু হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত, তাই একে অনেক ফকীহ রিবা আল হাদীসও বলেছেন।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, বিশেষ কোন পণ্য, সমজাত পণ্যের সাথে বিনিময় করার সময় যা অতিরিক্ত নেয়া হয়।
রিবা আল ফাদল মূলত যেই হাদীসের উপর ভিত্তি করে হারাম করা হয়েছে, তা নিম্নরূপ।
“সোনার বিনিময়ে সোনা সমান সমান বিক্রয় কর।
রূপার বিনিময়ে রূপা সমান সমান বিক্রয় কর।
খেজুরের বিনিময়ে খেজুর সমান সমান বিক্রয় কর।
গমের বিনিময়ে গম সমান সমান বিক্রয় কর।
লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান বিক্রয় কর।
যবের বিনিময়ে যব সমান সমান বিক্রয় কর।
যে বেশি আদানপ্রদান করলো সে রিবা আদান প্রদান করলো। আর রূপার বিনিময়ে স্বর্ণ যেভাবে ইচ্ছা, সে ভাবেই বিক্রয় করতে পারো। তবে শর্ত হল হাতে হাতে হতে হবে এবং খেজুরের বিনিময়ে যব যেভাবে ইচ্ছা বিক্রয় করতে পারো, শর্ত হল হাতে হাতে হতে হবে।” [তিরমীদির বর্ণনা]
এই হাদীসে ছয়টি বিশেষ পণ্যের কথা এসেছে, যেসব পণ্যের বিনিময়ের সময় একই জাতের হয়ে থাকলে একদম সমান সমান হতে হবে। অর্থাৎ ১০ গ্রাম সোনার বিনিময়ে ১১ গ্রাম সোনা দেয়া যাবে না। ১০ গ্রামই দিতে হবে। তেমনি ১০ গ্রাম রূপার বিনিময়ে ১১ গ্রাম রূপা দেয়া যাবে না। ১০ গ্রামই দিতে হবে। তেমনি খেজুর, গম, লবণ ও যবের স্বজাতি বিনিময়ের একই হুকুম। যেমন ১ কেজি খেজুরের বিনিময় ১ কেজি খেজুরের সাথেই হতে হবে। ১ কেজি ১ গ্রাম এর সাথেও হতে পারবে না।
অন্যদিকে, যদি সোনার সাথে রূপার কিংবা খেজুরের সাথে লবণের বিনিময় হয়ে থাকে, অর্থাৎ একই জাতের মধ্যে বিনিময় না হয়ে ভিন্ন জাতের মধ্যে বিনিময় হয়ে থাকে, তবে কম বেশি করা যাবে, তবে অবশ্যই তা নগদে হতে হবে। অর্থাৎ হাতে হাতে হতে হবে। বাকিতে করা যাবে না।
ইসলামি বেচা-কেনা পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল মাজলিস। এর চলতি ভাষায় সহজ অর্থ করা যায় সেশান। অর্থাৎ একটি বেচাকেনা যেই সেশানের মধ্যে সম্পন্ন হয়, তাকে বলা হয় মাজলিস। মাজলিসের ওপর বেচাবিক্রির অনেক হুকুমই নির্ভর করে। এখানে রিবা আল ফাদল এর ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে মাজলিসের হুকুম হল, যদি উক্ত ৬ জাতের পণ্য পরস্পর বিনিময় করা হয়, অর্থাৎ, একই প্রকারের পণ্য পরস্পর বিনিময় করা হোক (যেমন, সোনার বিনিময়ে সোনা, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর) আর ভিন্ন প্রকারের পণ্য বিনিময় করা হোক (যেমন, সোনার বিনিময়ে গম, রূপার বিনিময়ে খেজুর, সোনার বিনিময়ে রূপা) তাহলে তা একই মাজলিসে সম্পন্ন হতে হবে। অর্থাৎ বাকি রাখা যাবে না।
আমওয়ালুর রিবায়াত
ফিকহের পরিভাষায় হাদীসে উল্লিখিত ৬ ধরণের পণ্যকে, সোনা, রূপা, খেজুর, গম, লবণ, যব - আমওয়ালুর রিবায়াত বা সুদী পণ্য বা রিবাউই পণ্য বলা হয়। কেননা এইসব পণ্যের পরস্পর বিনিময়ের ফলেই সুদ তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকে।
তবে হাদীসে এটার উল্লেখ নেই, যে শুধুমাত্র এই ৬ পণ্যই কি তাহলে রিবাউই পণ্য বলে বিবেচ্য হবে?
এটি অনেক জটিল একটি প্রশ্ন, যার উত্তরে উলামা কিরাম মতপার্থক্য করেছেন। প্রাথমিক যুগের অনেক ফকীহ এর মত ছিল রিবাউই পণ্য শুধুমাত্র এই ৬টি পণ্যেই সীমাবদ্ধ। এর মাঝে আছেন কাতাদা (রহ) ও তাউস (রহ)। তবে অন্যান্য ফকীহগণ এর সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। পরবর্তী ফকীহদের কথা হল, আমাদের দেখা উচিৎ, এই ৬টি পণ্যের মাঝে আসলে মূল মিল কোন জায়গায়, অর্থাৎ এদের মূল বৈশিষ্ট্য কী। যদি কোন পণ্যের মাঝে ঐ মৌলিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, তাহলে সেটিও রিবাউই পণ্য হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে সালাফ উস সালেহীনগণ কয়েকটি মত দিয়েছেন।
- ইমাম আবু হানিফা (রহ) বলেন, এই ৬ পণ্যের মূল বৈশিষ্ট্য হল পরিমাপ ও ওজন। অর্থাৎ এই ৬ টি পণ্যকে পাত্র দারা পরিমাপ করা যায় ও ওজন করে বিক্রি করা যায়। তাই অন্য যে কোন পণ্য যদি পাত্র দ্বারা পরিমাপ করা যায় আর ওজন করে বিক্রি করা যায়, তাহলে সেটাও রিবাউই পণ্য হবে।
- ইমাম মালিক (রহ) বলে, এই ৬ পণ্যের মূল বৈশিষ্ট্য হল খাদ্য জাতীয় হওয়া এবং গুদামজাত করা উপযুক্ত হওয়া। তাই যে কোন পণ্য যা খাওয়া যায় কিংবা গুদামজাত করা যায়, সেটাই রিবাউই পণ্য।
- ইমাম শাফিঈ (রহ) বলেন, এই ৬ পণ্যের মূল বৈশিষ্ট্য হল খাদ্যবস্তু হওয়া ও মূদ্রা জাতীয় হওয়া। সোনা-রূপাকে মূদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা যায় ও বাকি ৪ টি খাদ্য হিসেবে খাওয়া যায়। তাই যে কোন বস্তু যা মূদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিংবা খাবার হিসেবে খাওয়া যায়, সেটিই রিবাউই পণ্য হবে।
- ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বাল (রহ) এর কাছ থেকে তিনটি মত পাওয়া যায়। যার একটি ইমাম আবু হানিফার (রহ) অনুরূপ, একটি ইমাম শাফিঈ (রহ) এর অনুরূপ এবং তৃতীয়টি তার নিজস্ব মত যা হল, সোনা-রূপা ছাড়া অন্য যে কোন পণ্যের মধ্যে যদি খাদ্য জাতীয় হওয়া, পরিমাপ করে ও ওজন করে বিক্রি করা – এই তিনটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, তাহলে তা রিবাউই পণ্য হিসেবে গণ্য হবে।
কাজেই আমরা দুইরকম পণ্য পেলাম।
প্রথমটি হল, যেসব পণ্য বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
দ্বিতীয়টি হল, খাদ্যজাতীয় পণ্য যা ওজন আর পরিমাপ করে বিক্রি করা যায়।
তাই যেসব পণ্য বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং যেসব খাদ্যজাতীয় পণ্য ওজন ও পরিমাপ করে বিক্রি করা যায়, সেইসব পণ্যকেই রিবাউই পণ্য বিবেচনা করে তার উপর রিবা সংক্রান্ত হুকুম বিবেচনা করতে হবে।
[এই পর্বে রিবা আল ফাদল নিয়ে প্রথম ধাপের আলোচনা করা হল। পরবর্তী পর্বে এর দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ]
ওয়াল্লাহু তা'আলা আ'লাম
No comments:
Post a Comment
Plz spread this word to your friends