[পর্ব ৪: http://goo.gl/O7kDU1]
গত পর্বে আমরা রিবা আল ফাদল নিয়ে প্রথম ধাপের আলোচনা করেছি। এই পর্বে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা করা হল।
আমরা এখন জানলাম রিবাউই পণ্য হাদীসে উল্লিখিত ৬ টি পণ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং যেসকল পণ্যের মাঝে রিবাউই পণ্যের মূল বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে, সেসকল পণ্যই রিবাউই পণ্য হিসেবে গণ্য হবে। এখন আমরা রিবাউই পণ্যের পারস্পরিক বিনিময়ের কিছু হুকুম আরেকটু বিশ্লেষিত আকারে দেখব, যা পূর্বে অল্প আলোচনা করা হয়েছে।
রিবাউই পণ্যের পারস্পরিক লেনদেনের মূলনীতিগুলো ইমাম নববী বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে এনেছেন। তা নিম্নরূপ:
ইমাম নববীর মূলনীতির দ্বিতীয় যে নীতি, অর্থাৎ সমজাতীয় পণ্যের পারস্পরিক লেনদেনের বিষয়টি আরেকটু বিশ্লেষণ করা যায়। এই ধরণের বিনিময়ে মূলত চারটি বিষয় বিবেচনাধীন থাকে। আর সেসব হল:
[এই পর্বের মাধ্যমে রিবা নিয়ে মৌলিক আলোচনা শেষ হল। আগামী পর্বগুলোতে বর্তমান ইকোনমিতে রিবার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।]
ওয়াল্লাহু তা'আলা আ'লাম
গত পর্বে আমরা রিবা আল ফাদল নিয়ে প্রথম ধাপের আলোচনা করেছি। এই পর্বে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা করা হল।
আমরা এখন জানলাম রিবাউই পণ্য হাদীসে উল্লিখিত ৬ টি পণ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং যেসকল পণ্যের মাঝে রিবাউই পণ্যের মূল বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে, সেসকল পণ্যই রিবাউই পণ্য হিসেবে গণ্য হবে। এখন আমরা রিবাউই পণ্যের পারস্পরিক বিনিময়ের কিছু হুকুম আরেকটু বিশ্লেষিত আকারে দেখব, যা পূর্বে অল্প আলোচনা করা হয়েছে।
রিবাউই পণ্যের পারস্পরিক লেনদেনের মূলনীতিগুলো ইমাম নববী বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে এনেছেন। তা নিম্নরূপ:
- যদি দুটো পণ্যের মূল বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হয়, তাহলে পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বেশ/কম ও বাকি রাখা উভয়ই জায়েয। যেমন, টাকার বিনিময়ে চাল ক্রয় করা। এক্ষেত্রে চালের পরিমাণ আর টাকার পরিমাণ এক হতে হবে কথা নেই এবং আপনি চাইলে বাকিতেও চাল কিনতে পারেন।
- যদি দুটো পণ্য একইরকম হয়, তাহলে পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বেশ/কম ও বাকি রাখা উভয়ই নাজায়েয। যেমন, বাংলাদেশি টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশি টাকা ক্রয় করা। পুরানো টাকা দিয়ে নতুন টাকা কেনা আমরা প্রায়ই দেখি। সাধারণত নতুন ১০০ টাকার নোট কিনতে পুরোনো ১১০ টাকা দিতে হয়। কিন্তু এটা রিবা। হালাল লেনদেন হতে হলে এক্ষেত্রে পুরোনো আর নতুন উভয় টাকার মূল্য সমান হতে হবে। অর্থাৎ ১০০ টাকার নতুন নোট কিনতে হলে বিনিময়ে পুরোনো নোট ১০০ টাকাই দিতে হবে। বেশি বা কম দেয়া যাবে না। এছাড়া এই লেনদেন বাকিতে করা যাবে না। আপনি বলতে পারেন না, “আমাকে নতুন ১০০ টাকার নোট দাও, আমি তোমাকে এখন ৫০ টাকার পুরনো নোটটা দিলাম, বাকি ৫০ টাকা আগামীকাল দেব।”
- যদি দুটো পণ্য ভিন্ন রকম হয় কিন্তু মূল বৈশিষ্ট্য একই হয়, তাহলে বেশ/কম জায়েয, কিন্তু বাকি রাখা নাজায়েয। যেমন, বাংলাদেশি টাকা দিয়ে ইউএস ডলার কেনা। আপনি বাংলাদেশি ৮০ টাকা দিয়ে ইউএসএ এর ১ ডলার কিনতে পারেন, অর্থাৎ বেশ/কম করতে পারেন, তবে তা একই মাজলিস বা সেশানে হতে হবে। বাকি রাখা যাবে না। আপনি আজকে বাংলাদেশি ৮০ টাকা দিলেন, ইউএস ১ ডলার আগামীকাল নেবেন, এটা হতে পারবে না।
ইমাম নববীর মূলনীতির দ্বিতীয় যে নীতি, অর্থাৎ সমজাতীয় পণ্যের পারস্পরিক লেনদেনের বিষয়টি আরেকটু বিশ্লেষণ করা যায়। এই ধরণের বিনিময়ে মূলত চারটি বিষয় বিবেচনাধীন থাকে। আর সেসব হল:
- সমজাতীয় পণ্য পরস্পর বিনিময় করার ক্ষেত্রে উন্নত-অনুন্নত ভেদাভেদ করা যাবে না। অর্থাৎ, নতুন স্বর্ণের সাথে পুরাতন স্বর্ণের বিনিময়ের ক্ষেত্রে কম-বেশ করা যাবেনা। সমান সমান হতে হবে। তেমনি উন্নত মানের চালের বিনিময়ে নিম্ন মানের চাল নেয়ার ক্ষেত্রেও কম-বেশ করা যাবে না। সমান সমান হতেই হবে। এক্ষেত্রে ‘বাজার মূল্য’ মাথায় রাখা চলবে না। একটু আগে যে নতুন টাকা ও পুরোনো টাকার উদাহরণ দিয়েছি, সেটাও এই হুকুমের অধীন।
- সমজাতীয় পণ্য যদি একইরূপ হয়, তাহলে লেনদেনে কোনরূপ বেশ/কম করা যাবে না। ধরা যাক, আপনার কাছে কিছু স্বর্ণ আছে আর আপনি সেই স্বর্ণের বিনিময়ে একটি শো-পীস এর দোকান থেকে সম্পূর্ণ স্বর্ণের তৈরি একটি শো-পীস কিনতে চান। এই ক্ষেত্রে আপনাকে সেই স্বর্ণের শো-পীস কিনতে সমপরিমাণ স্বর্ণ দিয়েই কিনতে হবে। যদি শো-পীসটি ১ ভরি ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি হয়, তাহলে তা আপনাকে ১ ভরি স্বর্ণের বিনিময়েই কিনতে হবে। অথবা আপনার স্বর্ণকে আগে বিক্রি করে টাকায় রূপান্তর করে তারপর শো-পীসটি কিনতে হবে।
- সমজাতীয় পণ্য যদি বৈশিষ্ট্যগত ভাবে কোনরকমের ভিন্ন বস্তুতে পরিণত হয়, অর্থাৎ দুটি সমজাতীয় পণ্যের মাঝে স্পষ্ট ভিন্নতা দেখা যায়, তাহলে বেশ/কম করা জায়েয। অর্থাৎ, যদি একটি পণ্য কাঁচামাল হয়, আর অপর পণ্যটি সেই কাঁচামাল দ্বারা প্রস্তুত কোন বস্তু হয়, এক্ষেত্রে বেশ/কম করা যাবে। যেমন, ইঞ্জিন তৈরি হয় লোহা লক্কড় দিয়ে। এখন লোহার বিনিময়ে কেউ যদি কোন একটি ইঞ্জিন নিতে চায়, তাহলে সেক্ষেত্রে বেশ/কম করা যাবে, যেহেতু শিল্পায়নের ফলে লোহার মৌলিক অবস্থার পরিবর্তন হয়ে গেছে। ঠিক একই ভাবে তুলার সাথে সুতা কিংবা সুতার সাথে কাপড়ের লেনদেনের ক্ষেত্রেও এই হুকুম প্রযোজ্য।
- সমজাতীয় পণ্য যদি সোনা, রূপা বা মূদ্রা জাতীয় বস্তু হয়, অর্থাৎ বিনিময় মাধ্যম হয়, তাহলে পারস্পরিক লেনদেনের সময় নগদ তো হতে হবেই, সাথে উভয় পক্ষ নিজ নিজ পণ্যের উপর দখল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একে বলা হয় কাব্দ (বাংলায় কবজা বলা চলে)। অর্থাৎ স্পষ্টভাবেই তা দখলে চলে আসতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যায়েদ তার ৫০ ভরি রূপা যদি উমারের ৭ ভরি স্বর্ণের সাথে বিনিময় করতে চায়, তাহলে উভয়কেই নগদ বিনিময় করে স্পষ্টভাবেই সোনা ও রূপার দখল নিতে হবে। অর্থাৎ, যায়েদ ৭ ভরি স্বর্ণ তার কব্জায় নিয়ে নেবে আর উমার ৫০ ভরি রূপা তার কব্জায় নিয়ে নেবে। মূল বিষয় হল যায়েদ বা উমার উভয়েই নগদ বিনিময় করলেও, তা যদি নিজেদের কব্জায় নিয়ে না আসে, তাহলে লেনদেন শুদ্ধ হবে না। কিন্তু অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে এই কড়াকড়ি প্রযোজ্য নয়। যেমন, ফয়সাল যদি এক কেজি লবন যুবাইর এর আধা কেজি চিনির সাথে বিনিময় করে, তাহলে উভয়েই যদি নিজেদের পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণের দিকে নির্দেশ করে বলে, “আমরা বিনিময় করলাম” আর যদি ফয়সাল চিনির আর যুবাইর লবণের স্পষ্ট দখল না নিয়ে বলে “কিছুক্ষণ পর নিচ্ছি”, তাহলে এই বিনিময় শুদ্ধ। কিন্তু মূদ্রা জাতীয় পণ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। এক্ষেত্রে স্পষ্টভাবেই দখলে নিয়ে নেয়া জরুরী।
[এই পর্বের মাধ্যমে রিবা নিয়ে মৌলিক আলোচনা শেষ হল। আগামী পর্বগুলোতে বর্তমান ইকোনমিতে রিবার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।]
ওয়াল্লাহু তা'আলা আ'লাম
This is very nice post. Thanks for sharing with us.
ReplyDelete💔
Online Study Care 24
ENGLISH FOR TODAY | Class Eight
ENGLISH FOR TODAY | Classes Nine-Ten
ENGLISH FOR TODAY | Classes Eleven-Twelve