আল্লাহ আমাদেরকে বিষয়টি বুঝার আর আমল করার তাওফিক দেন।

আল্লাহর উপর ইয়াকিনের সাথে পাহাড় দৃঢ় তাওয়াক্কুল ছোট বড় যেকোন পরিস্থিতিকে সফলভাবে পার করতে সাহায্য করে।
 তাওয়াক্কুলের আগে আমলকেন্দ্রিক আর অন্তরকেন্দ্রিক কিছু ব্যাপার সংশোধন করতে হয়, তা না হলে তাওয়াক্কুল অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

আমল বিষয়ক দিক গুলো হল ফরজ হওয়া সব আদেশ, যেমন- হালাল উপার্জন, ৫ ওয়াক্ত নামাজ, রোযা, যাকাত, হজ্জ, সুন্নাহর উপর অটল থাকা, দাঁড়ি, নিকাব ইত্যাদি। সর্বোপরি আল্লাহর দেয়া আদেশ নিষেধগুলো একাগ্রতার সাথে মেনে চলা।
 তবে এই আমল গুলো স্রেফ শারীরিক এবং আর্থিক পরিশ্রমে পরিণত হবে যদি না অন্তরের হালতের দিকে নজর না দেয়া হয়, প্রাণহীন আমল করে যাওয়া হয়।
.
অন্তরের স্থিরতা আসে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর মুখাপেক্ষিতায়। পুরোপুরি আল্লাহর মুখাপেক্ষি হয়ে যেতে হবে। ছোট থেকে ছোট জিনিসের জন্য আল্লাহর তায়ালার কাছে ফরিয়াদ জানাতে হবে। এক গ্লাস পানি ঢেলে খেতেও আল্লাহর সাহায্য চান। সাহাবীরা জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন। সাহাবীরা সামান্য দুনিয়াবি বিষয়েও ষোল আনা আল্লাহর মুখাপেক্ষী থাকতেন। আল্লাহ মুখাপেক্ষিতাকে তাঁদের অন্তরের গহীনে শক্ত করে গেঁথে নিয়েছিলেন। দৃঢ় বিশ্বাস করতেন বিশ্ব জাহানের মালিকই তাদের প্রয়োজন পূরণ করে দিবেন, অন্য কোথাও তাঁদেরকে ধরনা দিতে হবে না। আল্লাহ তায়ালার উপর বান্দা যেভাবে ধারণা করে, আল্লাহ বান্দার প্রতি সেভাবে সাড়া দেন। তাঁদের ধারণা যেমন মজবুত ছিল, তেমনি আল্লাহ তাঁদেরকে অমন সাহায্য করেছেন। আমাদের ধারণা যেমন হবে, আমাদের প্রতিও তেমন সাহায্য আসবে।
.
ছোট ছোট ব্যাপারে আল্লাহর মুখাপেক্ষিতার অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে আমল গত বিষয়ে স্থির থাকার মত সিরিয়াস ব্যাপার গুলোতে আমাদের আল্লাহর উপর কেমন ধারণা আর তাওয়াক্কুল রেখে চেষ্টা করে যেতে হবে? অন্তরের স্থিরতা, সবরের সাথে আল্লাহর ইবাদত করে যাওয়া, ইহসানের সাথে নামাজ আদায় করার মত বিষয় গুলো যদি আমরা আমাদের জীবনে সুন্দরভাবে সেট করতে পারি, তাহলে দ্বীন দুনিয়ার বাকি সব ব্যাপার গুলো আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।
.
"যেখানে আপনি আপনার রাতের ঘুমকে হারিয়েছেন, যেখানে আপনার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, সেখানেই ঘুরে ফিরে মৌন ভিক্ষার ঝুলি পেতে বসে আছেন। আল্লাহ আপনার ঈমানকে ঐ বিষয়ের সাথেই জুড়ে দিবেন, যতই আপনি মুখে বলা তাওয়াক্কুল রাখেন না কেন।আল্লাহকেন্দ্রিক সব আশা ভরসা রাখুন, দুনিয়াবি এসব বিপর্যয় আপনাকে অস্থির করার ক্ষমতাও রাখবে না।"
.
ইনভার্টেড কমার মধ্যে লেখাটি আসলে উপরের তাওয়াককুলের বিষয় গুলোর তুলনায় নিতান্তই সামান্য বিষয়। কিন্তু এই সামান্য বিষয়টি অনেকের কাছেই বেশ বড় ব্যাপার। কারণ, তাদের চিন্তা চেতনাগুলো এই বিষয় কেন্দ্রিকই হয়ে থাকে।
আমরা আপনাদেরকে বলছি, সমস্যা গুলোর একটা একটা করে সমাধানের দিকে নজর না দিয়ে, সমস্যা যেন না ফেইস করতে হয় নিজেদেরকে সেভাবে প্রস্তুত করে নিতে।
 আপনার যদি ঈমান, আমল, তাওয়াককুল, অন্তরের হালত ঠিক না থাকে, তাহলে বারবার এমন শত শত সমস্যা আসতেই থাকবে, আর আপনি একটার পর একটা সমাধান করতে যেয়ে সমস্যাকে কেন্দ্র করেই নিজের সংশোধনে সাময়িকের মনোনিবেশ করে করে এক সময় বিরক্ত হয়ে যাবেন। এমনও হতে পারে বারবার সংশোধন করতে যেয়ে আপনি আসল বিষয়টি উপলব্ধি করে আপনার প্রায়োরিটি ঐ ঈমান আর আমলে সেট করতে পারবেন, এমনটাই যেন হয়। তবে সমস্যা তৈরি হওয়ার পরিবেশই না রাখার দিকে নজর দিলে আপনার জন্যই সহজ হবে।
.
কাজেই দুঃসময়ে জন্য স্রেফ অন্তরের স্থিরতাকে আমরা টার্গেট করে আল্লাহর মুখাপেক্ষি হওয়ার চেষ্টা করবো না। এভাবে চেষ্টা করেও কাজ হবে, কিন্তু তার স্থায়িত্ব হবে সাময়িক।
 কাজেই আল্লাহর মুখাপেক্ষি হতে হবে আল্লাহর জন্যেই, আল্লাহ আযযা ওয়াজাল'কে ভয় করে, তাঁকে ভালোবেসে, একাগ্রতার সাথে তাঁর ইবাদত করতে।
এমন যেন না হয় যে আমাদের উপর বিপদ আসলে আমরা শুয়ে বসে আল্লাহকে ডাকছি, আর বিপদ চলে গেলে তার নাফরমানি এমনভাবে করছি যে আগে কখনো আমাদের উপর কোন বিপদই আসে নি। আল্লাহ আমাদেরকে বিষয়টি বুঝার আর আমল করার তাওফিক দেন।
.
#HujurHoye

উত্তম ঘরের চাবিকাঠি সিরিজ: ৩য় পর্ব


.
#ঘরে_ইসলামী_জ্ঞানচর্চা
.
৮। পরিবারে ইসলাম শিক্ষা:
ঘরের কর্তার উপর আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত আবশ্যিক দায়িত্বগুলোর মধ্যে যা পড়ে তা হলো- "হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেকে ও নিজের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর।" (৬৬:৬) পরিবার গড়া, শিক্ষাদীক্ষা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ব্যাপারে এই আয়াতে মূলনীতি বিদ্যমান। আয়াতটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুফাসসিরীন কেরাম বলেন, এই আয়াতের মূল কথা হলো, পরিবার, দাস ও আত্মীয়স্বজনকে আল্লাহ যা পালন করতে বলেছেন আর যা নিষেধ করেছেন তা শিক্ষা দেওয়া।
.
আত-তাবারী বলেন, "অবশ্যই আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিকে আল্লাহর দ্বীন ও উত্তম গুণাবলী, উত্তম ব্যাবহার শিক্ষা দেওয়া উচিত। আল্লাহর রাসুল দাসীদের ব্যাপারেই শিক্ষাদীক্ষার কথা বলেন (যারা ছিল দাস), তবে আমাদের স্ত্রী ও সন্তান (যারা মুক্ত) তাদের বেলায় তা কেমন হবে তো সহজেই অনুমেয়।"
.
অনেক সময় পুরুষ তার অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পরিবারের দ্বীনশিক্ষার কথা ভুলে যায়। এ থেকে বের হওয়ার একটা উপায় হতে পারে পরিবার ও এমনকি অন্যান্য আত্মীয়দের জন্য কিছু সময় বরাদ্ধ করা যাতে সবাই মিলে বাসায় একটা 'পাঠচক্র' গড়ে তোলা যায়। তিনি অন্যদেরকে সময়ের কথা স্মরণ করানো ও ইলমী পাঠচক্রে বসার ব্যাপারে উৎসাহ যোগাবেন। রাসুলুল্লাহর সময়ে এমন কিছুই হতো।
.
ইমাম বুখারী (রাহিঃ) তাঁর বইয়ের একটি অধ্যায়ের শিরোনাম করেন, "নারীদেরকে কি জ্ঞানার্জনের জন্য একান্তভাবে কোনো দিনকে সাব্যস্ত করা যায়?" নামে। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বর্ণনা করেন, "নারীরা নবীজিকে আরজ করলেন, পুরুষদের ভীড়ে আমরা আপনার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি না। তাই এমন একটা দিন আমাদের জন্যই নির্ধারণ করুন যাতে আমরা আপনার কাছে আসতে পারি।"
ইবন হাজার (রাহিঃ) বলেন একই ধরনের বর্ণনা আছে সাহল ইবন আবু সালিহ থেকে যিনি আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন, "তোমার দায়িত্ব অমুক ও অমুকের বাড়িতে। এবং তিনি তাদের ওখানে যান এবং কথা বলেন (শিক্ষা দেন)।"
.
আমরা এ থেকে শিখতে পাই যে নারীদের তাদের ঘরে শিক্ষা দেওয়া দরকার আর দেখি নারী সাহাবীরা জ্ঞানার্জনে কতটা আগ্রহী ছিলেন। নারীদের বাদ দিয়ে কেবলমাত্র পুরুষের দ্বীন শিক্ষা দা'ঈ এবং পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের জন্য অনেক বড় ঘাটতি।
.
অনেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ধরুন আমরা নারীদের নিয়ে বসলাম। কিন্তু আমরা এমন ক্ষেত্রে কী কী পড়াশোনা করবো?
.
কিছু সাজেশন নিচে দেওয়া হল:
- তাফসির-ঈ-ইবনুস সিদি [বাংলায় এর অনুবাদ আছে কিনা জানা নেই। তাই আমরা সহজবোধ্য যেকোন হক তাফসীরের কোনোটা সাজেস্ট করছি এ ক্ষেত্রে।]
- রিয়াদুস সালেহীন। সনদ ও ফুটনোটসহ আলোচনা করতে পারেন।
- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীর উপর একটি সীরাহগ্রন্থ
.
এছাড়াও মেয়েদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিকহী হুকুম জানানো জরুরী। যেমন: তাহারাত (পবিত্রতা), হায়েয-নিফাস, সালাত, যাকাত, সিয়াম ও হজ্জ (সে যদি সক্ষম হয়); খাদ্য ও পানীয়, পোশাক ও সাজসজ্জা, ফিতরাগত সুন্নত, মাহরাম-ননমাহরাম বিষয়ক বিধান, গান-বাদ্য, ফটোগ্রাফির বিধান ইত্যাদি। এগুলো জানার জন্য শাইখ সালেহ আল উসায়মিন কিংবা শাইখ আব্দুল আজিজ ইবন বাজ কিংবা অন্য কোনো আলেমের ফতোয়া সংকলন দেখতে পারেন। উপমহাদেশের জন্য বেহেশতী জেওর কিংবা আহসান ফেকাহ উল্লেখযোগ্য।
.
এছাড়াও মেয়েদের জন্য হক আলেমদের উন্মুক্ত ইসলামিক ওয়াজ বা লেকচারগুলোতে অংশগ্রহণও যাতে আপনাদের সিলেবাসে থাকে। তারা উপযুক্ত পর্দা মেনে ইসলামী বই দোকান বা লাইব্রেরীগুলোতেও যাতে যাতায়াত রাখতে পারে।
.
৯. পারিবারিক ইসলামী গ্রন্থাগার তৈরি করা:
পরিবারের মানুষদের জন্য দ্বীন শিক্ষা, দ্বীন বোঝা ও আঁকড়ে ধরার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে ঘরেই ইসলামী লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা। খুব বড় হতে হবে যে এমনটা না। তবে যা করতে হবে তা হল- ভালো বই বাছাই, পরিবারের সবার জন্য প্রবেশযোগ্য আর সবাইকে পড়তে উৎসাহিত করা।
.
আপনি ড্রয়িং রুমের একটি পরিষ্কার কোণে কিংবা বেডরুমের কোনো উপযুক্ত স্থানে কিংবা গেস্ট রুমেও বই রাখতে পারেন।
.
একটা যথোপযুক্ত লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে হলে- আর আল্লাহ কোনো কাজ যথোপযুক্ত হওয়াকে ভালোবাসেন- একটি রেফারেন্স সেকশন থাকা উচিত যেখানে পরিবারের সদস্যগণ গবেষণা করতে পারবেন আর বাচ্চারা তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে তা থেকে উপকৃত হতে পারবে। তাছাড়া শিশু ও বৃদ্ধ, পুরুষ ও নারীর সবার ব্যবহার করার মতো বই থাকা চাই। বাসায় আসা মেহমানদের উপহার দেওয়ার জন্য উপযুক্ত সুন্দর প্রেজেন্টেশন সম্বলিত বই থাকাও দরকার। বই নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞজনের পরামর্শ নিতে পারেন। সবার কাছে বই খুঁজে পাওয়া সহজ করতে বিষয় অনুযায়ী বইকে আলাদা আলাদা তাকে রাখতে পারেন। অথবা সাজানোটা বর্ণানুক্রমিকও হতে পারে। তাফসীর, হাদিস, আকীদা, ফিকহ, শিষ্টাচার ও আত্মশুদ্ধি, সীরাহ ও জীবনী প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে বই ছাড়াও প্যামফ্লেট, লিফলেট থাকতে পারে।
.
১০. হোম অডিও লাইব্রেরি:
একটি অডিও প্লেয়ার ভালো বা মন্দ দুই কারণেই ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমরা এটা কীভাবে ব্যবহার করতে পারি? একটা উপায় হতে পারে আলেম, ফুকাহা, লেকচারার, খতীব বা দা'ঈদের বিভিন্ন বক্তব্যের অডিও নিয়ে একটি হোম অডিও লাইব্রেরি বানানো।
.
তারাবীহের সালাতের কিছু কুরআন তিলাওয়াতের রেকর্ডিং দারুন তাদের কুর'আন বোঝা ও মুখস্তের আগ্রহ বাড়াতে পারে। শয়তানী গান-বাদ্যকে কুর'আন দিয়ে প্রতিস্থাপনের এটা হতে পারে একটা উপায়।
.
এছাড়াও ফতোয়ার অডিও/ভিডিও সংগ্রহ করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে কার কাছ থেকে তা সংগ্রহ করছেন তাও খেয়াল রাখবেন।
.
পাশাপাশি বিভিন্ন ইসলামিক লেকচারের অডিও সংগ্রহ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে যা খেয়াল রাখবেন তা হল:
- লেকচারার আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত কিনা এবং বিদ'আতমুক্ত কিনা
- জাল ও দায়ীফ পরিহার করে তিনি সহীহ হাদিসের উপর ভিত্তি করে কথা বলেন কিনা
- তিনি উম্মাহর বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন কিনা এবং বাস্তবতা বুঝে কথা বলেন কিনা
- তিনি সর্বদা মিথ্যা পরিহার করে কথা বলেন কিনা
.
১১. বাসায় ভালো, নেককার ও জ্ঞানানুরাগী মানুষকে দাওয়াত দেওয়া:
"হে আমার রাব্ব! আমাকে, আমার পিতামাতাকে, তাকে যে আমার ঘরে মু'মিন হিসেবে প্রবেশ করে এবং সকল মু'মিন ও মু'মিনাকে মাফ করে দিন..." (৭১:২৮)
.
আপনার বাড়িতে যদি নেককার মানুষের যাতায়াত থাকে তবে তা একে আলোকিত করবে। তার সাথে আপনার আলোচনা ও কথাবার্তা থেকে অনেক কিছু শেখা হয়ে যাবে। আতর ব্যবসায়ীর কাছে গেলে সে আপনাকে আতর দিয়ে দেবে কিংবা আপনি কিছু কিনবেন নয়তো দেখবেন তার কাছে মনোরম সুগন্ধ রয়েছে। একইভাবে ভালো মানুষের সাথে আপনার ও আপনার সন্তানদের বসা আর পর্দার আড়াল থেকে মেয়েদের আপনাদের উত্তম কথা শোনা হতে পারে শিক্ষনীয়।
.
১২. ঘর সংক্রান্ত ইসলামী বিধানগুলো জানা:
*ঘরে নামাজ আদায়-
পুরুষের ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, "উত্তম সালাত হলো একজন পুরুষের ঘরে নামাজ আদায় করা- ফরজ সালাত ব্যাতীত।" (বুখারী: ৭৩১)
ন্যায় ওজর ছাড়া জামাতে ফারদ (ফরজ) সালাত আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহর রাসুল ﷺ আরও বলেন, একজন পুরুষের নিজের ঘরে নফল ইবাদাত লোকদের সাথে নফল ইবাদাতের চেয়ে বেশি সাওয়াবের। অন্যদিকে তার লোকদের সাথে ফরজ সালাত আদায় করা ঘরে তা আদায় জরার চেয়ে অধিক সাওয়াবের হবে।" (সহীহ আল-জামি: ২৯৫৩)
.
মেয়েদের সালাতের জায়গা হিসেবে ঘরের গোপন কোণ সবচেয়ে ভালো। আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন, "একজন মেয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ সালাত তার ঘরের অন্তিম কোণে যদি আদায় করা হয় তা।" (তাবারানী, সহীহ আল-জামি: ৩৩১১)
.
ঘরের কর্তা ব্যক্তির তার নিজের ঘরে মুক্তাদি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। এমনকি তার কুর'আন তিলাওয়াত অন্যের তুলনায় যদি কম সুন্দর হয় তবুও। তিনি যেখানে বসেন সেখানে অন্যের ক্ষেত্রে অনুমতি ছাড়া বসাও শোভন না। তিরমিযীর ২৭৭২ নম্বর হাদিসে এই কথা রয়েছে।
.
*ঘরে প্রবেশে অনুমতি-
আল্লাহ বলেন, "হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। যদি তোমরা গৃহে কাউকেও না পাও, তাহলে তোমাদেরকে যতক্ষণ না অনুমতি দেওয়া হয়, ততক্ষণ ওতে প্রবেশ করবে না। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও’ তবে তোমরা ফিরে যাবে; এটিই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা কর, সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।"
(আন-নূর: ২৭-২৮)
.
আল্লাহ আরও বলেন, "... সুতরাং ঘরগুলোতে প্রবেশ করো সদর দরজা দিয়ে।" (বাকারাহ: ১৮৯)
.
কোনো ঘরে যদি প্রবেশের ক্ষেত্রে বৈধতা থাকে (যেমন, অতিথি হিসেবে) তবে এমন ফাঁকা ঘরে প্রবেশ করা যাবে।
আল্লাহ বলেন, "যে গৃহে কেউ বাস করে না, তাতে তোমাদের জন্য উপকার (বা আসবাব-পত্র) থাকলে সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোনও পাপ নেই এবং আল্লাহ জানেন, যা তোমরা প্রকাশ কর এবং যা তোমরা গোপন কর।" (আন-নূর: ২৯)
.
তবে নিজেদের আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের ঘর ও যে ঘরের চাবি কারও কাছে গচ্ছিত সেসব ঘরে প্রবেশ ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে লজ্জার কিছু নেই।
আল্লাহ বলেন, "অন্ধের জন্য, খঞ্জের জন্য, রুগ্‌ণের জন্য এবং তোমাদের নিজেদের জন্য তোমাদের নিজেদের গৃহে আহার করা দূষণীয় নয়। অথবা তোমাদের পিতৃগণের গৃহে, মাতৃগণের গৃহে, ভ্রাতৃগণের গৃহে, ভগিনীগণের গৃহে, পিতৃব্যদের গৃহে, ফুফুদের গৃহে, মাতুলদের গৃহে, খালাদের গৃহে অথবা সে সব গৃহে যার চাবি তোমাদের হাতে আছে অথবা তোমাদের বন্ধুদের গৃহে; তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথক পৃথকভাবে আহার কর, তাতে তোমাদের জন্য কোন অপরাধ নেই; তবে যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন। এভাবে তোমাদের জন্য নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করেন; যাতে তোমরা বুঝতে পার।" (সুরা নূর: ৬১)
.
ফজরের পূর্বে ও ইশার পর শিশু ও কাজের ছেলে-মেয়েদের বেডরুমে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে মানা করতে হবে। নইলে হয়তো তারা এমন কিছু দেখে ফেলতে পারে যা তাদের জন্য উপযুক্ত না।
আল্লাহ বলেন, "হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসিগণ এবং তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত হয়নি (নাবালক), তারা যেন তোমাদের কক্ষে প্রবেশ করতে তিনটি সময়ে অনুমতি গ্রহণ করে; ফজরের নামাযের পূর্বে, দ্বিপ্রহরে যখন তোমরা বিশ্রামের উদ্দেশ্যে বাহ্যাবরণ খুলে রাখ তখন এবং এশার নামাযের পর। এ তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তা অবলম্বনের সময়। তবে এ তিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে তোমাদের জন্য এবং তাদের জন্য কোন দোষ নেই। তোমাদের এককে অপরের নিকট তো সর্বদা যাতায়াত করতেই হয়। এভাবে আল্লাহ তোমাদের নিকট তাঁর নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।" (সুরা নূর: ৫৮)
.
অনুমতি ছাড়া কারও ঘরে উঁকি দেওয়া নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, "অনুমতি ছাড়া যে কারও ঘরে উঁকি দেবে তার চোখ তুলে ফেলো। এক্ষেত্রে কোনো রক্তমূল্য বা ক্ষতিপূরণ গ্রহণীয় হবে না।" (আল-মুসনাদ ২/৩৮৫)
.
যে নারীকে প্রথম ও দ্বিতীয় তালাক দেওয়া হয়ে গেছে তাকে ঘর ত্যাগ করানো যাবে না তার ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত আর তাকে এ সময় অর্থ সহায়তা দিতে থাকতে হবে।
আল্লাহ বলেন, "হে নবী! (তোমার উম্মতকে বল,) তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে ইচ্ছা কর তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে, ইদ্দতের হিসাব রেখো এবং তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করো; তোমরা তাদেরকে তাদের বাসগৃহ হতে বহিষ্কার করো না এবং তারা নিজেও যেন বের না হয়; যদি না তারা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। আর যে আল্লাহর সীমা লংঘন করে, সে নিজের উপরই অত্যাচার করে। তুমি জান না, হয়তো আল্লাহ এর পর কোন উপায় করে দেবেন।" (আত-তালাক : ১)
.
*ঘরে একা একা অবস্থান করা উচিত নয় আর না ঘুমানো উচিত সেই ছাদে যার রক্ষাকারী দেওয়াল নেই।
.
*পোষা বিড়াল কোনো খাবার বা পানীয়কে নাপাক বানায় না। (আহমদ, আল-মুসনাদ ৫/৩০৯)
.
(চলবে... ইনশাআল্লাহ)
.
সহায়ক গ্রন্থ: ঘরের জন্য ৪০ উপদেশ (শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ)
.
#UttomGhorerChabikathi
.
#HujurHoye

উত্তম ঘরের চাবিকাঠি সিরিজ: ২য় পর্ব


.
::ঘরকে উত্তম বানানোর উপায়::
.
নিচের এ পয়েন্টগুলো থেকে আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ দিক যাতে আমরা আমাদের ঘরগুলোকে প্রকৃত মুসলিমের ঘর তথা উত্তম ঘরে পরিণত করতে পারি।
.
#পরিবার_গঠন
.
১। উত্তম জীবনসঙ্গী বাছাই:
আল্লাহ বলেন, "তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।" (সুরা নূর:৩২)
.
উত্তম জীবনসঙ্গী বাছাইয়ের কীভাবে করবেন? আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন,
.
“চারটি জিনিস দেখে কোনো নারীকে বিয়ে করা যায়- সম্পদ, বংশ, রূপ বা দ্বীন। বাছাই করো যে দ্বীনদার কাউকে নইলে তোমার হাত ধুলি ধূসরিত হোক। (বুখারী ও মুসলিম)
.
“এই দুনিয়ার সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী সম্পদ। কিন্তু এ জীবনের সবচেয়ে আনন্দের হলো একজন নেককার স্ত্রী।” (মুসলিম: ১৪৬৮)
.
“তোমাদের সবার শোকরগোজার অন্তর, যিকিরকারী জিহ্বা ও বিশ্বাসী স্ত্রী থাকুক যে পরকালীন সফলতা অর্জনে সাহায্য করবে।” (আহমাদ: ৫/২৮২, তিরমিজী ও ইবন মাজাহ)
.
রাসুলুল্লাহ ﷺ আরও বলেন,
“কারও জন্য সর্বোত্তম সম্পদ হলো নেককার স্ত্রী যে দুনিয়া ও দ্বীনে তোমাকে সাহায্য করবে।” (বায়হাকী: সাহীহুল জামি,৪২৮৫)
.
"প্রেমময়ী ও অধিক সন্তান জন্মদানে সক্ষম নারীকে বিয়ে করো। কারণ, আমি কিয়ামতের দিন অন্য নবীদের সামনে তোমাদের সংখ্যার বিশালতা নিয়ে গর্ববোধ করবো।" (আহমাদ: সহীহুল ইরওয়া, ৬/১৯৫)
.
"আমি তোমাদের কুমারী নারীকে বিয়ে করার উপদেশ দিচ্ছি কেননা, তাদের গর্ভ নবীন, তাদের মুখ (কথা) মিষ্টি, আর তারা অল্পতে বেশি তুষ্ট" অন্য বর্ণনায় "...তারা ছলনাময়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম।" (ইবন মাজাহ, ৬২৩)
.
একজন নেককার নারী যেমন চারটে সুখকর ব্যাপারের একটি, একজন পাপাচারী নারী তেমন চারটে দুঃখবাহী ব্যাপারের একটি। রাসুলুল্লাহ ﷺ সহীহ হাদিসে বলেন, "সুখের অন্যতম (উপাদান) হলো একজন নেককার স্ত্রী। যখন তুমি তার দিকে তাকাও তোমার মন প্রশান্ত হয়ে যায়, আর যখন তুমি বাইরে যাবে তুমি তার ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে তার উপর আস্থা রাখতে পারো। আর দুঃখের অন্যতম (উপাদান) হলো পাপাচারী স্ত্রী যার দিকে তাকালে তোমার মন বিচলিত হয় আর সে তোমাকে মুখ দ্বারা আক্রমণ করে। আর যখন তুমি বাইরে যাও তাকে তার ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে আস্থাশীল পাও না।"
.
অন্যদিকে নারীদেরও বিয়ের প্রস্তাবদানকারী পুরুষটি সম্পর্কেও একইভাবে জানার ব্যাপার আছে তার প্রস্তাবে রাজি হওয়ার আগে।
.
আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন, "তোমাদের কাছে যদি এমন কেউ আসে যার দ্বীন ও চরিত্রের ব্যাপারে তোমরা সন্তুষ্ট তবে নিজের মেয়েকে (বা বোনকে ইত্যাদি) তার কাছে বিয়ে দিয়ে দাও। অন্যথায় দুনিয়ায় ফিতনা ও ব্যাপক দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়বে।"
.
ঘর যাতে না ভাঙে বা না ক্ষতির সম্মুখীন হয় সেজন্য সঠিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা, সত্য যাচাই, তথ্য সংগ্রহ ও এর উৎস তালাশ করে উপরের এগুলো অর্জন করা আশু দরকারী।
.
নেককার নারী ও নেককার পুরুষ মিলে ঘরটাকে পূণ্যময় করতে পারে কেননা, "...উৎকৃষ্ট ভূমি তার প্রতিপালকের নির্দেশে ফসল উৎপন্ন করে আর যা নিকৃষ্ট তাতে কঠোর পরিশ্রম ব্যাতীত কিছুই জন্মায় না..." (সুরা আল-আরাফ:৫৮)
.
২। স্ত্রী/স্বামীকে সঠিক পথে আনার প্রচেষ্টা:
কারও স্ত্রী/স্বামী যদি নেককার হন তবে তা অবশ্যই সৌভাগ্যের। তবে অন্যথাও হতে পারে যখন কেউ নিজেই প্রথমে নেককার ছিলেন না বা ছিলেন কিন্তু পরে ঠিক করে নেওয়ার লক্ষ্যে কিংবা বাবা-মা, আত্মীয়দের চাপে বিয়ে করেন। এমতাবস্থায় কারও জন্য তার স্পাউজকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করা একেবারে আবশ্যক। পুরুষের ক্ষেত্রে ঘরের কর্তা হিসেবে আবার তা তার আবশ্যিক দায়িত্বও। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে হেদায়েত আল্লাহর কাছ থেকেই আসে।
.
স্ত্রী/স্বামীকে সঠিক পথে আনার উদ্দেশ্যে যা করা যেতে পারে-
* স্ত্রী/স্বামীর আল্লাহর 'ইবাদাতের ক্ষেত্রে নির্ভুলতা নিশ্চিত করা
* তার ঈমান শক্তিশালী করতে আপনার প্রচেষ্টা যেমন-
- তাহাজ্জুদের নামাজে উৎসাহ প্রদান
- কুর'আন পড়তে উৎসাহ প্রদান
- যিকির-আজকার মুখস্ত ও সঠিক সময় তা পাঠে উৎসাহ প্রদান
- দান-সাদাকায় উৎসাহ প্রদান
- উপকারী ইসলামী বই পড়তে উৎসাহ প্রদান
- উপকারী ইসলামী অডিও শুনতে উৎসাহ প্রদান (যা তার জ্ঞান ও ইমানকে মজবুত করবে) ও তার সরবরাহ চালিয়ে যাওয়া
- তার জন্য উত্তম, দ্বীনদার বন্ধু বাছাই করে দেওয়া
- সকল খারাবীর প্রবেশদ্বার তার জন্য রুদ্ধ করে দেওয়া
- ঘরে আস্থাশীল ও বিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি করা
.
৩। ঘরকে আল্লাহর স্মরণের জন্য উপযুক্ত করে নেওয়া:
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, "যে ঘরে আল্লাহর স্মরণ হয় আর যে ঘরে আল্লাহর স্মরণ হয় না এদের উদাহরণ যথাক্রমে জীবিত আর মৃতের।"
.
আজকাল মুসলিমদের ঘরগুলো হয়ে গেছে গীবত-পরনিন্দা, শয়তানের গান-বাদ্যের কেন্দ্র কিংবা গায়র মাহরামদের সাথে অবাধে মেলামেশার সুযোগ। এমন ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসে না।
.
আমাদের ঘরগুলো কুর'আন পাঠ, ইসলামী আলোচনা আর বিভিন্ন ইসলামী বই পড়ার স্থান বানিয়ে নেওয়া আশু জরুরী।
.
৪। ঘরকে 'ইবাদাতের স্থান বানানো:
আল্লাহ তা'আলা মুসা (আলাইহিসসালাম) ও তাঁর ভাইকে বলেছিলেন তাদের আবাসস্থলে সালাত আদায় করার ও মুমিনদের সুসংবাদ দেওয়ার জন্য। আল্লাহ আমাদের জন্য বলেন, "হে মু'মিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।" (সুরা বাকারা: ১৫৩) রাসুলুল্লাহ ﷺ কোনো দুঃখ-কষ্টের বিপরীতে সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন। সাহাবারা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ফারদ(ফরজ) নামাজ ছাড়া বাকি নামাজ ঘরে পড়তেন। সুতরাং ঘরে নামাজ আদায় করা অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া সন্তানদের ছোট থেকে নামাজে আগ্রহ বাড়াতে ও অভ্যস্ত করে তুলতে সুন্নাহ ও নফল নামাজগুলো ঘরেই পড়া উত্তম।
.
৫। পরিবারের সবার জন্য আত্মিক প্রশিক্ষণ:
আ'ঈশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, "আল্লাহর রাসুল ﷺ ঘরে রাতের নামাজ (ক্বিয়ামুল লাইল) আদায় করতেন আর তাঁর বিতরের নামাজের সময় হলে বলতেন, "হে আ'ঈশা! উঠো। বিতর পড়ে নাও।" (মুসলিম: ৬/২৩)
.
রাসুলুল্লাহ ﷺ আরও বলেন, "আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুক যে রাতে জাগ্রত হয় আর নামাজ আদায় করে আর এরপর সে তার স্ত্রীকে জাগায় নামাজের জন্য। এরপর যদি সে উঠতে না চায় তবে তার মুখ পানির ছিটা দেয়।" (আহমাদ ও আবু দাঊদ)
.
নারীদের দান-সাদাকায় উৎসাহিত করাও ঘরে আত্মিক প্রশিক্ষণের একটা উপায়। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, "হে নারীগণ! তোমরা বেশি বেশি দান-সাদাকা করো। কেননা, জাহান্নামের বাসিন্দাদের মধ্যে নারীরাই বেশি বলে আমি দেখেছি।" (বুখারী: ১/৪০৫)
দান-সাদাকার জন্যে ঘরে একটা আলাদা বক্স রাখা যেতে পারে।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো রোজা রাখা- আইয়ামে বীজ (প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ), শাওয়ালের ছয় রোজা, আশুরা (মুহাররমের ৯ ও ১০ তারিখ), 'আরাফা, আর মুহাররম ও শাবানে বিভিন্ন সময় রোজা রাখা।
.
৬। সুন্নাহ অনুযায়ী ঘরের দু'আ ও যিকিরের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া:
*ঘরে প্রবেশের দু'আ-
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, যখন তোমাদের কেউ ঘরে প্রবেশ করে আর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে যখন সে প্রবেশ করে ও খায়, শয়তান বলে, 'তোমার এখানে থাকার বা খাওয়ার কোনকিছু নেই'। তবে যদি সে ঘরে ঢুকতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করে, শয়তান বলে, 'তোমার এখানে থাকার জায়গা হলো'। যখন সে খাওয়ার সময় আল্লাহর নাম না নেয়, শয়তান তখন বলে, 'তোমার এখানে থাকা-খাওয়ার জায়গা হলো।' " (আহমাদ ও মুসলিম)
.
ঘর থেকে বের হওয়ার দু'আ হলো- বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু 'আলাল্লাহ। লা হাওলা ওয়ালা ক্কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। (আবু দাঊদ ও তিরমিজি)
.
*সিওয়াক-
আ'ঈশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, "রাসুলুল্লাহ ﷺ ঘরে ঢুকে প্রথমেই যে কাজটি করতেন তা হলো মিসওয়াক করা।" (মুসলিম)
.
৭। শয়তানকে তাড়িয়ে দিতে ঘরে নিয়মিত সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা:
আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন, "তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে ফেলো না। যে ঘরে সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা হয় সে ঘরে শয়তান থাকে না।" (মুসলিম ১/৫৩৯)
.
(চলবে ইনশাআল্লাহ...)
.
সহায়ক গ্রন্থ: ঘরের জন্য ৪০ উপদেশ (শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ)
.
#UttomGhorerChabikathi
#HujurHoye

উত্তম ঘরের চাবিকাঠি সিরিজ: পর্ব ১


.
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর আল্লাহ ঘরকে করেছেন তোমাদের জন্য আবাসস্থল।“ (১৬: ৮০)
.
ইবন কাসির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা তার বান্দাহদের জন্য পরিপূর্ণ রহমতের কথা উল্লেখ করছেন- তিনি তাদের জন্য ঘরকে করেছেন প্রশান্তিময় আবাসস্থল যাকে তারা পরম সুখের স্থান ভাবেন, যা তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করে আর সর্ব প্রকারের সুবিধা প্রদান করে।
.
ঘরের কথা ভাবতে গেলেই কী আমাদের মনে এসে দোলা দেয়? এই সেই স্থান যেখানে আমরা খাই, ঘুমাই, বিশ্রাম নিই, স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ হই আর জীবনকে উপভোগ করি। এই স্থান সেটা নয় যেখানে আমরা একা থেকে আমাদের স্ত্রী-সন্তানের সাথে মিশতে পারবো।
.
ঘর কি তা নয় যা নারীদের আব্রু রক্ষা করে আর নিরাপত্তা দেয়? আল্লাহ বলেনঃ “আর তোমরা ঘরে থাকো এবুং জাহেলী যুগের মেয়েদের মতো নিজেকে প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না।“ (৩৩: ৩৩)
যদি গৃহহীন, রাস্তায় থাকা মানুষ কিংবা উদ্বাস্তুরা যারা অস্থায়ী ক্যাম্পের বাসিন্দা তাদের কথা মনে করেন, তবে একটি ঘরের মর্তবা বুঝতে পারবেন সহজে। আমরা আরও গভীর করে বুঝতে পারবো যদি কোন দুর্দশাগ্রস্ত গৃহহীন মানুষ এসে আমাদের সামনে আহাজারি করে আর তার কষ্টের কথা আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনি।
.
বনু নাযিরের ইহুদিদেরকে যখন আল্লাহ তা’আলা গৃহহীন করে শাস্তি দিয়েছিলেন তখন তিনি বলেন, “কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কাফির (বনু নাযির), তাদেরকে আক্রমণের প্রথম ধাপেই তাদের বাড়ী-ঘর থেকে বহিস্কার করেছেন। তোমরা ধারণাও করতে পারনি যে, তারা বের হবে এবং তারা মনে করেছিল যে, তাদের দূর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহর শাস্তি তাদের উপর এমনদিক থেকে আসল, যার কল্পনাও তারা করেনি। তিনি তাদের অন্তরে ত্রাস সঞ্চার করে দিলেন। তারা তাদের নিজেদের হাত দিয়েই নিজেদের বাড়ী-ঘর ধ্বংস করল এবং মুমিনদের হাতেও (ধ্বংস করছিল)। অতএব, হে দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষেরা! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” (৫৯: ২)
.
আমাদের ঘরগুলো যদি আদর্শ পরিবারের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠতো তবে কেমন হতো? ঘরগুলোকে নতুন করে সুশৃঙ্খল ও আদর্শ করাতে মু’মিনদের জন্য প্রেরণার উল্লেখ রয়েছে এই ক্ষেত্রগুলোতে:
.
১। নিজেকে আর নিজের পরিবারকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচানো। “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে। ” (৬৬: ৬)
.
২। কিয়ামতের দিন পরিবারের কর্তা সবচেয়ে বেশি দায় বয়ে বেড়াবে। আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন, “প্রত্যেক রাখালকে (দায়িত্ব অর্পনকৃত ব্যক্তি) আল্লাহ তার পাল (যার প্রতি দায়িত্ব) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন সে তার দেখাশোনা করেছে নাকি এড়িয়ে গেছে যতক্ষণ না তিনি একজন মানুষকে তার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন।“
.
৩। ঘর মানুষকে অন্যের খারাবী থেকে নিজেকে আর নিজের খারাবী থেকে অন্যকে বাঁচায়। ফিতনাহর সময় তাই ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। নবীয়ে পাক ﷺ বলেন, “ধন্য সেই যে নিজের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করে, যার ঘর তার জন্য যথেষ্ট আর যে নিজের ভুলে কাঁদে।“
তিনি ﷺ আরও বলেন, “ফিতনার সময় মানুষের নিরাপত্তা গৃহে অবস্থানে।“
.
একজন মুসলিম যখন বিদেশভূমে যায় তখন তার চারপাশে হারামরাজি তাকে এটা ভালো করেই মনে করিয়ে দেয়। ঘর (যেখানে তার স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি আছে) তাকে হারামের দিকে নজরের হেফাজত করে, তাকে খারাপ সঙ্গ থেকে বাঁচায়, বাঁচায় মন্দ কাজ থেকে।
.
৪। সুষ্ঠু মুসলিম সমাজ গড়ার জন্য ঘরের দিকে মনোযোগ দিতে হবে সর্বাগ্রে। প্রতিটা ঘর যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা হয়, তবে তা সমাজের খুঁটি যারা সমাজকে সঠিক রাস্তায় নেবে এমন উল্লেখযোগ্য দা’ঈ, জ্ঞানানুরাগী, আন্তরিক মুজাহিদ, পরহেজগার স্ত্রী, স্নেহময়ী মা, আর এমন সব ধরনের সংস্কারক একেকজন তৈরি করতে পারে।
.
(চলবে ইনশাআল্লাহ...)
.
সহায়ক গ্রন্থ: ঘরের জন্য ৪০ উপদেশ (শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ)

কালেক্তেড পোস্ট
চারদিন আগে আমার কাছে এক মহিলা এসেছিলেন।

সাথে তার কিশোরী কন্যা। মহিলা হিজাব পড়া থাকলেও মেয়েটির পড়নে ছিল জিন্স প্যান্ট ও হাফহাতা টি শার্ট। মেয়েটির ডান হাতের কিছুটা অংশ পুড়ে গেছে। কিভাবে পুড়েছে জিজ্ঞেস করাতে মহিলা কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন---
-- আমি বিছানায় কাপড় ইস্ত্রি করছিলাম। হঠাৎ একটা জরুরী কাজে ইস্ত্রি বিছানাতে রেখেই রান্না ঘরে যাই। পাশেই মেয়েটা ঘুমিয়ে ছিল। ঘুমের মধ্যেই ও কখন যেন পাশ ফিরে। সাথে সাথে গরম ইস্ত্রি তার হাতে লেগে হাত পুড়ে যায়। আমার ভুলের জন্যই আজ মেয়ে এত কষ্ট পাচ্ছে।

: আপনি টেনশন করবেন না। পোড়া একটু বড় হলেও সিরিয়াস কিছু না। আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি, সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ্‌। আর ওষুধ খেয়ে চারদিন পর দেখা করবেন।

-- আল্লাহ্‌ যেন তাই করেন। খুব খারাপ লাগছে ডাক্তার সাহেব।
: খারাপ তো লাগবেই মেয়ের কষ্টে। কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতাম...
-- জী, বলেন।
: আপনি আপনার মেয়ের হাতের এই পোড়াতে অনেক কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু আপনি যে আপনার মেয়ের সারা শরীর পোড়ানোর ব্যবস্থা করছেন তার কি হবে?
-- ঠিক বুঝলাম না আপনার কথা।
: খুব সহজ কথা। আপনি নিজে পর্দা করেন। কারণ পর্দা করা ফরয, না করলে জাহান্নামে যেতে হতে পারে। কিন্তু আপনি মেয়ের পর্দার বিষয়ে উদাসীন।
-- আসলে আর একটু বড় হলে ও পর্দা করবে।
: আপনি কি বলতে চান তার পর্দার বয়স হয়নি? আপনি কি দেখেন না এই বয়সী ছেলেমেয়েদের প্রেম করে বেড়াতে। গ্রামে এই বয়সে বিয়ে করে ঘর-সংসার করে, এমনকি সন্তানের মাও হয়। যে সারা বছর পড়ালেখা করে না, সে হঠাৎ করেই পড়ুয়া হয়ে যায় না। পর্দা, রোজা, নামাজ সবই প্র্যাকটিসের বিষয়। হঠাৎ করেই কেউ এসব বিষয় সুচারুরূপে করতে পারেনা।
-- আসলে এভাবে চিন্তা করেনি।
: চিন্তা করেনি, কিন্তু চিন্তা করা উচিৎ ছিল। এখন আপনার মেয়ের হাতের পোড়া নাহয় আমি ওষুধ দিয়ে সাড়িয়ে দিলাম, কিন্তু জাহান্নামে তার পোড়ার কোন চিকিৎসাই নেই। তাই সময় থাকতেই সাবধান হয়ে যান।

আজ মহিলা মেয়েকে সাথে নিয়ে ফলোআপের জন্য এসেছিলেন। মেয়েটি আজ লম্বা হাতার সালোয়ার-কামিজ পড়ে মাথায় স্কার্ফ দিয়ে এসেছে। মহিলা ও মেয়েকে এর জন্য ধন্যবাদ দিলাম।

আমি অনেক ধার্মিক পরিবার দেখেছি যারা তাদের সন্তানের ছোটবেলায় ইসলামের অনুশাসন মানার বিষয়ে অনেকটাই উদাসীন থাকেন। গতানুগতিক বাবামায়ের মতো তারাও সন্তানের ক্যারিয়ার নিয়েই বিজি থাকেন। কিন্তু সন্তান যখন বড় হয়ে যায়, তখন আর তারা তাদের ধর্মের পথে ফিরিয়ে আনতে পারেন না। তখন তাদের আফসোসের সীমা থাকে না। আমার এক আত্মীয়ের মেয়ের অবস্থা এমন হয়েছে।

আল্লাহ্‌ বলেছেন "হে ঈমানদারগন, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।"
আপনার সন্তান দুনিয়ায় অনেক সফল হলো, কিন্তু আপনার গাফিলতির জন্য সে যদি আখিরাতে অকৃতকার্য হয়, তাহলে কিন্তু সে তার দায় আপনার উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজে ভারমুক্ত হবার চেষ্টা করবে। সেদিন কে বাবা, কে মা, কে সন্তান কোন হুঁশই থাকবে না। তাই সময় থাতেই নিজে ভারমুক্ত হোন, নিজের সন্তানকে ভারমুক্ত হতে সহায়তা করুন।

লেখক
Ahsan Sabbir.

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

যে অন্তরে রবের ইবাদাত বোঝাস্বরূপ সেই অভিশপ্ত অন্তর থেকে আল্লাহ যেন আমাদেরকে হেফাজত করেন।

একসময় নিয়মিত উত্তরার দিকে যাওয়া হতো। ঢাকা শহরের জ্যামের যে অবস্থা, সে হিসেবে আমার ভার্সিটি থেকে যেতে বেশ দূরের পথ। মাঝে মাঝে তো তিন চার ঘন্টাও লেগে যেতো। কিন্তু নিয়মিত যেতাম বলেই হয়তো এই দীর্ঘ পথটাও একসময় আমার কাছে ছোট মনে হতো। লোকাল বাস, গরম, জ্যাম, দীর্ঘ পথ এসবকিছু একেবারেই সহজ স্বাভাবিক মনে হতো। প্রায় দেড়-দুবছর ধরে আর ঐদিকে যাওয়া হয় না। এখন যদি কোন কারণে উত্তরার দিকে যেতে হয় রীতিমত মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অনুভূতি তৈরি হয়। উত্তরা, এতদূউউউর...
.
কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্কটাও অনেকটা এরকম। 
যদি নিয়মিত কুরআন পড়েন দেখবেন গড়গড় করে পড়তে পারছেন। কিন্তু অনেক দিন মাচাঙের উপর তুলে রেখে হঠাৎ একদিন পড়া শুরু করলে দেখবেন আটকে যাচ্ছেন, আমতা আমতা করছেন। কুরআন খুব অভিমানী, যদি আপনি তাকে দূরে সরিয়ে দেন, সেও আপনাকে দূরে সরিয়ে দেবে। সেই দূরত্ব এমন যে, কুরআন পড়াটা আপনার কাছে পাহাড় সমান বোঝার মত মনে হবে।
.
সালাতে দাঁড়িয়ে চার পাচ মিনিটের কিরাতটাও রীতিমত বুকের উপর বিশাল বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার মত মনে হবে কখনো কখনো, অস্থির হয়ে উঠবেন কখন ইমাম সাহেব রুকুতে যাবে, কখন সালাম ফেরাবে। মসজিদ থেকে বের হতে পারলেই যেন বাঁচি, এই অবস্থা। মহান রবের ইবাদত যে অন্তরে বিশাল বোঝাস্বরূপ চিন্তা করতে পারেন সে অন্তরের কি হালত! কত দুরত্ব সেই অন্তরের সাথে তার রবের, কুরআনের, দ্বীনের!
.
আর এই দুরত্ব তৈরি হওয়া, রবের ইবাদতকে বোঝা মনে হওয়ার আরেকটি মূল কারণ গুনাহে লিপ্ত হওয়া। এই গুনাহের সবচেয়ে দুরত্বটা তৈরি হয় ফজরের সালাতের সাথে। পাপাচারী ফজরের সালাতে উপস্থিত হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়, রাতে কিয়ামে দাঁড়ানো থেকে বঞ্চিত হয়।
.
তাই রবের সাথে, দ্বীনের সাথে, কুরআনের সাথে দুরুত্ব কমানো ছাড়া আমাদের কোন মুক্তি নেই। ইবাদতকে ইহসান পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোন নিরাপত্তা নেই। আর সেটা হবে ইবাদাতের ধারাবাহিকতার মাধ্যমে। রাসূল সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো যার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়" ।
.
আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরগুলোকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে না দেন। পাপাচার আর জুলুমে ভরপুর এই অন্তরগুলোকে মহান রব যেন নাফসে মুতমাইন্নায় উত্তীর্ণ করে দেন। সালাতের কিরাত, রুকু, সিজদা প্রতিটি ইবাদাত যেন আমাদের কাছে মধুর চেয়েও মিষ্টি মনে হয়, আমাদের হৃদয় যেন মসজিদগুলোর সাথে লেগে থাকে।


 যে অন্তরে রবের ইবাদাত বোঝাস্বরূপ সেই অভিশপ্ত অন্তর থেকে আল্লাহ যেন আমাদেরকে হেফাজত করেন। আমীন।

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

মানুষ না বুঝে প্রতিদিন মন্ত্রের মত পড়তে থাকে

আমাদের সমাজে কিছু আমল এর প্রচলন আছে।
 এই পড়লে এতো নেকি, এটা এতবার পড়লে এত সওয়াব।
 এই দোয়া ও আয়াত এই সময়ে পড়তে হবে। ইত্যাদি

এগুলো মানুষ না বুঝে প্রতিদিন মন্ত্রের মত পড়তে থাকে।
 আমার প্রশ্ন হলো সাহাবীরা কি না বুঝে এগুলো এভাবে পড়তেন? তারা যদি না বুঝেই পড়তেন তাহলে আল কুর আনের প্রতি তাদের এতো ভালোবাসা থাকতো না।
 আর সাহাবীদের শত্রুরাও যদি সাহাবীদের ওই সব পড়া না বুঝতেন তাহলে তারা শত্রুতা করতো না।

এইসব না বুঝে নিয়ম করে করা আমল বুঝে কুরআন পড়ার ক্ষেত্রে কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।
 প্রতিদিন নিয়ম করে বিভিন্ন আয়াত পড়া যেখানে জরুরী ছিলো সেখানে মানুষ না বুঝে প্রতিদিন একই আরবী তেলাওয়াত করে আল কুরআনের উপর আমল করছি মনে করে সন্তুষ্ট থাকছে।
 কারন ওই মানুষ হয়তো কুর আন পড়ার জন্য অতটুকুই সময় বরাদ্দ রাখে আর তা ওই সওয়াব কামাইয়ের লক্ষ্যেই শেষ হয়ে যায় বা নিজের কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই করা হয়।
 অন্যের কল্যানেও যে আল কুরআনের বড় ও ইফেকটিভ ব্যবহার আছে তা তাদের অজানা থেকে যায়
 এবং
জানা থাকলেও তা করা হয় না।

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

এইভাবেই শ্রেণীবিভাগ চলতে থাকে

#ঘটনা_একঃ

- ভাই আপনি কি মুসলমান?
- হ, মুসলমান।
- সুবানাল্লাহ, আমিও মুসলমান। আপনে শিয়া নাকি সুন্নি?
- সুন্নি।
- আলহামদুল্লিহ! আমিও সুন্নি। কোন মাজহাবে আছেন?
- হানাফি
- মাশাল্লাহ, আমিও হানাফি। আপনি সৌদি নাকি উপমহাদেশীয় হানাফি?
- উপমহাদেশীয়
- মারহাবা, আমিও উপমহাদেশীয়। আপনে শরিয়তি নাকি মারফতি?
- শরিয়তি
- জাযাকাল্লাহু খায়রান। আমিও শরিয়তি। আপেনে চরমোনাই নাকি আটরশি?
- চরমনাই
[এইভাবেই শ্রেণীবিভাগ চলতে থাকে]

#ঘটনা_দুইঃ

- ভাই আপনে কি হিন্দু?
- হ, ভাই সনাতনী হিন্দু।
- আমিও হিন্দু। আপনি বৈষ্ণব, নাকি শাক্ত?
- বৈষ্ণব।
- হরে কৃষ্ণ আমিও বৈষ্ণব। আপনি গৌড়ীয়, নাকি চৈতন্য বৈষ্ণব?
- চৈতন্য বৈষ্ণব।
- হরে কৃষ্ণ। আমিও চৈতন্য বৈষ্ণব।
- তো আপনি কি ইস্কনে নাকি সাধারণে?
- ইস্কনে
- হরে কৃষ্ণ, দেশের ইস্কন করেন নাকি বিদেশি ইস্কন করেন?
- দেশি।
- হরে কৃষ্ণ আমিও দেশি
[এইভাবেই শ্রেণীবিভাগ চলতে থাকে]

#ঘটনা_তিনঃ

- ভাই আপনি কি বৌদ্ধ?
- হ, ভাই বৌদ্ধ
- কোন যানে আছেন, হীনযান নাকি মহাযান?
- হীনযান বৌদ্ধ নিকায়
- সাধু, সাধু। আমিও হীনযানি। আপনে শ্রীলঙ্কান নাকি বঙ্গীয়?
- বঙ্গীয়
- মেত্তা করুণা মুদিতা উপেক্ষা, আমিও বঙ্গীয়। আপনি বড়ুয়া নাকি মারমাগ্রী?
- বড়ুয়া।
- সব্বে সত্তা সুখীতা ভবন্তু। আমিও বড়ুয়া। আপনি সংঘরাজ নাকি সঙ্ঘনায়ক?
- সংঘরাজ।
- বল বুদ্ধ বল। আমিও সংঘরাজ দলে।
- তো আপনে কি বনভান্তেবাদী, নাকি উছালা মার্মা?
- বনভান্তেবাদী
- সাধু সাধু। আমিও...
[এইভাবেই শ্রেণীবিভাগ চলতে থাকে]

#ঘটনা_চারঃ

- ভাই আপনে কি নাস্তিক
-হ নাস্তিক।
-কোন ধরণের নাস্তিক? যুক্তিবাদী নাস্তিক, পাতি নাস্তিক, বিখ্যাত নাস্তিক, অখ্যাত নাস্তিক, নেতা নাস্তিক, কর্মী নাস্তিক, পীরের চেলা নাস্তিক, বিপ্লবী নাস্তিক, খাঁটি নাস্তিক, খচ্চর নাস্তিক, খোছাইন্না নাস্তিক, আধ্যাত্মিক নাস্তিক, কট্টর নাস্তিক, ল্যাদাইন্না নাস্তিক, চুপা নাস্তিক, লাইক পাগল নাস্তিক, চোরা নাস্তিক, ভীতু নাস্তিক, আধা-পাগল নাস্তিক, গুণ্ডা নাস্তিক, ছবির হাটের নাস্তিক, ফেসবুকার নাস্তিক, ব্লগার নাস্তিক, রোজাদার নাস্তিক, রিভার্স নাস্তিক, ঘাড় টেরা নাস্তিক, ল্যাংটা নাস্তিক, আবাল নাস্তিক, লুল নাস্তিক, স্বঘোষিত অর্ধ নাস্তিক, ভন্ড নাস্তিক, ফাজিল নাস্তিক, মিষ্টিকথার নাস্তিক, নবী নাস্তিক, আল্লামা নাস্তিক , কপি পেষ্ট নাস্তিক, রেফারেন্স নাস্তিক, বামপন্থি নাস্তিক, জামাতি নাস্তিক, জঙ্গি নাস্তিক, আসিফবাদী নাস্তিক, সাম্প্রদায়িক নাস্তিক ট্যাগানো নাস্তিক, স্ক্রীনশট নাস্তিক, মুক্তমনা, মুক্তগাধা, মুক্তবাল, লোক দেখাইনা নাস্তিক, ছাগু নাস্তিক, এসাইলম সিকার নাস্তিক, নাকি হুদাই নাস্তিক? আপনে কোনটা বলেন?
-ভাই এতো টাইপ শুইনা নিজে কোন টাইপের নাস্তিক ভুইলা গেছি
( এভাবে শ্রেনী বিভাগ চলতে থাকে)

#ঘটনা_পাঁচঃ

প্রকৃতির সব থেকে বুদ্ধিমান প্রাণীর নাম মানুষ। তবে মনে হয় এই মানুষ ছাড়া আরও দু চারটা প্রাণী বুদ্ধিমান হওয়া উচিত ছিল। তখন আলোচনাটা হতে পারতো,
- ভাই, আপনে কোন প্রাণী?
- মানুষ।
- কি বলেন!!! আমিও মানুষ।
- আহা, অনেকদিন পর আরেকজন মানুষ দেখে ভালো লাগলো।
- আশে পাশে দেখি প্রচুর ভেড়া। শুধু আপনি আর আমি দুর্ভাগা মানুষ। কি দুর্ভিক্ষ এলো দুনিয়ায়, চারপাশে শুধু বুদ্ধিমান ভেড়াই ভেড়া। মানুষের বড় অভাব....
[সংগৃহীত]

জ্ঞানবিমুখ ছিন্নভিন্ন মুসলিম জাতি

১১৮বছরে মাত্র ১২জন মুসলিম নোবেল পুরষ্কার পেয়েছে।
৫৭টি মুসলিমপ্রধান দেশের মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা বেশি।
 মুসলিমপ্রধান দেশ সমুহের জাতীয় আয় আসে প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে। অর্থাৎ উপরওয়ালা প্রদত্ত রিজিক থেকে। কারন মুসলিমপ্রধান দেশগুলো আল্লাহর উপর ভরসা করে বাজেটের অর্থেক টাকা স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের নামে দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে তুলে দেয় কিন্তু অমুসলিম দেশসমুহ জাতীয় আয়ের সিংহভাগ এবংকি কোম্পানীগুলোকেও বাধ্যতামূলকভাবে লাভের একটা অংশ বৈজ্ঞানিক গবেষনায় খরচ করতে হয়। তাই ইসরায়েলের মত ছোট্ট দেশেও ৯০হাজারের অধিক পিএইচডি ধারী বসবাস করে। মাত্র দেড় কোটি মানুষ, অথচ এই পর্যন্ত নোবেল পেয়েছে ১৭৯জন ইহুদি।
.
আমরা দাম দিয়েছি ক্রিকেটকে আর রাজনীতিকে। তাই মুসলমানদের আইকন এখন নারীলিপ্সু ক্রিকেটার এবং অসৎ রাজনীতিবিদরা। আমেরিকার প্রেসিডেন্টও স্বপ্ন দেখে হার্বার্ড এর শিক্ষক হবার, আর আমাদের তরুনরা স্বপ্ন দেখে বারাক ওবামা আর রোনালদো হবার।
.
মুসলিমরা আজ শিয়া-সুন্নি, হানাফী-ওয়াহাবীতে বিভক্ত। অথচ ইহুদীদের ৫০ এর অধিক গ্রুপ একত্রিত হয়ে ইসরায়েল নামক জারজ রাষ্ট্রকে অর্থ আর ক্ষমতা দিয়ে টিকিয়া রেখেছে। কিন্তু ৫৭টি মুসলিম দেশ কখনোই একত্রিত হয় না। তাই কাশ্মির, ফিলিস্তিন, চেচনিয়াও স্বাধীন হয় না। যখন ইহুদীরা CNN, ESPN, Fox News, Sky News, Times এর মত মিডিয়া গড়তে ব্যস্ত। আমরা তখন আল জাজিরা, আমার দেশ, দিগন্ত টিভি বন্ধ করতে ব্যস্ত। ইহুদীরা যখন কাল মার্ক্সস, আইনস্টাইন, বব ডিলান কিংবা রুপার্ট মারডকের মত জায়নবাদীদের বিশ্বব্যাপী আইকন বানাচ্ছে। আমরা আব্দুল কাদির, জাকির নায়েক কিংবা ইউসুফ কারজাভীর মত মেধাবীকে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী বলে প্রচার চালাই।
.
মুসলমানরা আজ জ্ঞানের রাজ্য এবং গবেষনার রাজ্য থেকে অনেকদুরে। তারা আজ রফে ইয়াদাইন এর মত ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বহুভাগে বিভক্ত।
.
তাই জ্ঞানবিমুখ ছিন্নভিন্ন মুসলিম জাতি আজ সংখ্যায় ২০০কোটি হয়েও; উচ্চশিক্ষিত এবং ঐক্যবদ্ধ দেড় কোটি ইহুদির কাছে পরাজিত। লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে নিজ ভুমি থেকে বিতাড়িত করে ইহুদীরা ইসরায়েল নামক রাষ্ট্র বানায়। কোটি কোটি টাকা খরচ করে গবেষনা আর মেধাবীদের মূল্যায়নে। আর আমরা নিজেরা নিজেরা কামড়াকামড়ি করে ফিলিস্তিনিদের অসহায় কান্না দেখি।

>> কালেক্টেড পোস্ট <<<

আপনি প্রস্তুত তো???

"ফজরের নামাজে একদম উঠতে পারিনা, কী যে করি! আল্লাহ নিশ্চয়ই মাফ করবেন, তিনি তো ক্ষমাশীল।

আপনি যদি এমনটি ভেবে থাকেন, তবে একটু কষ্ট করে প্রশ্নগুলো মিলিয়ে দেখুন: আপনার অফিস যদি সকাল ছ'টা/ সাতটায় হয়, এ পর্যন্ত কয়দিন ঘুমের কারণে অফিসে যেতে দেরি করেছেন? আপনি যদি স্কুল, কলেজ কিংবা ভার্সিটির স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন; তবে সকালবেলায় হয়েছে, এমন কয়টি পরীক্ষা জীবনে ঘুমের কারণে মিস করেছেন? আপনি যদি বাস/ট্রেন/প্লেনে সফর করে থাকেন দূরপথে, জীবনে কতবার টিকেট কেটেও ঘুমের কারণে সকালের বাস/ট্রেন/ফ্লাইট মিস করেছেন?

আপনার যদি এমন কোন অসুখ হয়ে থাকে, যার জন্য ডাক্তার দেখাতে কিংবা টেস্ট করাতে ভোরবেলা লাইন দিতে হয়েছে, ঘুমের কারণে মিস করেছেন, এমন কতবার হয়েছে? .. .. .. প্রশ্নগুলোর কোনটির উত্তর যদি এমন হয়, যে আপনি অনেকবার করেছেন, তাহলে আপনার দাবি সত্য। যদি বিপরীত হয়ে থাকে, তবে আপনি ফজরের নামাজে ওঠার জন্য চেষ্টা করেও পারেননা, এই দাবি মিথ্যে, চূড়ান্ত মিথ্যে। এবার আরেকটি প্রশ্ন মিলিয়ে নিশ্চিত হউন: একটা পরীক্ষা, অফিস, ফ্লাইট, মিস করার জন্য আপনার মন কতখানি খারাপ হয়েছে? সারাদিন কতবার মনে পড়েছে ঘটিনাটি? কতবার আফসোস করেছেন? কতখানি সতর্কতা অবলম্বন করেছেন, যে জীবনে আর এমন ভুল দ্বিতীয়বার করবেন না? পরের বার কতজনকে বলে রেখেছেন ডেকে দেয়ার জন্য? মোবাইলে কয়টি এলার্ম দিয়েছেন সতর্কতা হিসেবে? .. .. ..
এবার ভেবে দেখুন, এক ওয়াক্ত ফজরের নামাজ মিস গেলে আপনার কতটুকু খারাপ লেগেছে? দিনে কতবার মনে পড়েছে? কতবার আফসোস করেছেন? পরের দিনের জন্য কতখানি সতর্কতা অবলম্বন করেছেন? কয়টি এলার্ম দিয়েছেন? কয়জন নামাজীকে বলে রেখেছেন ডেকে দেয়ার জন্য?? .. .. ..
 দুই গ্রুপের উত্তরে যদি আকাশ পাতাল ফারাক হয়, তবে তার মানে এটাই দাঁড়ায় যে: "আপনি ফজরের নামাজকে এখনো আপনার অফিস, পরীক্ষা, ফ্লাইট, কিংবা চিকিৎসার সমান গুরুত্ব দিতে পারেননি(অথচ হাদীসে এসেছে, ফজরের শুধু দুই রাকাত সুন্নাত নামাজের মূল্যই গোটা দুনিয়া আর এর মধ্যে যা কিছু আছে সমস্ত কিছুর চেয়ে বেশি, সেখানে ফরযের মূল্য কতখানি?) ; আপনি অফিসের বস, শিক্ষক, যতখানি ভয় পান কিংবা ভালোবাসেন, আপনার সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, জীবনদাতা, মৃত্যুদাতা, মহান আল্লাহ রাব্বুল 'আলামীনকে ততখানি ভয় পেতে কিংবা ভালোবাসতে এখনো পারেননি।
 তাহলে প্রস্তুত থাকুন, ওয়াল্লাহি, আপনাকে আল্লাহর সম্মুখে অবশ্যই দণ্ডায়মান হতে হবে, আপনার প্রতিটি মিথ্যে অজুহাতের চুলচেরা বিশ্লেষন রাজাধিরাজের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আপনাকেই করতে হবে। আপনি যদি দুনিয়াবি একটা এক্স্যামের জন্য দিনের পর দিন মাঝরাত্রি পর্যন্ত জেগে পড়েন আর ফজরের সময় ঘুমিয়ে থাকেন, অফিসের বসের ভয়ে ঠিক ঠিক অফিসে পৌঁছেন, কেবল নামাজের খাতায়ই এবসেন্ট মার্ক পড়তে থাকে, তবে কেবল শ্বাসটুকু বন্ধ হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকুন, কাঠগড়ায় আপনাকে দাড়াতেই হবে। .. .. ..
আপনি প্রস্তুত তো??? আল্লাহ আমাকে সহ সকলকে বুঝার তওফিক দান করুন,আমিন।

আপনিই বোকা।

আল্লহ তায়ালা মানুষ কে খুব সুন্দর বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন,যা আর কাউকে দেয়া হয়নি,এজন্যই আমরা "আশরাফুল মাখলুকাত"।
এই শ্রেষ্ঠত্ব দোজাহানের মালিক আমাদের দিয়েছেন,তিনি নিজেই দিয়েছেন এই সম্মান আমাদের।কিন্তু আমরা কি তার মর্যাদা বুঝি??
আল্লাহর বেলায় তা আমাদের বুঝার দরকার নেই কিন্তু নিজের বেলা আমরা ষোল আনাই চাই,নাহয় সব দোষ আল্লাহর,কিন্তু আল্লাহ কি আপনার দোষ দেয় কোন দিন?
যেখানে যেতে আল্লাহ আপনাকে মানা করেছে,যা আপনার জন্য হারাম করেছে,সেখান থেকে আপনার কোন ক্ষতি হলে আল্লাহ কি আপনার দোষ দেয় নাকি যে আমি যেতে মানা করলাম গেলে কেন?এখন বুঝ মজা কেমন!ব্যাপার টা কিন্তু এই হওয়া উচিত ছিল,টিট ফর ট্যাট।কারন আপনার জীবনে কিছু হলেই আপনি তার উপর ব্লেইম করেন যেন আপনাকে সৃষ্টি করে বড় দোষ করেছে,এখন আপনি তার কথা শুনেন না শুনেন, কিছু হলে তার দোষ।কেন ভাই? এত সেলফিশ কেন আপনি?আপনার সন্তান অবাধ্য হলে বুক ফেটে যায়,আপনি যে আপনার স্রষ্টার অবাধ্য,তার কেমন লাগে?

দুনিয়ায় কত চাহিদা আপনার।অমুক কে হেলপ করেছেন,সে আপনার ক্ষতি করছে,আপনার নামে গীবত করছে,তখন আপনি রেগে আগুন হয়ে বলেন যে,উপকারই করা উচিত না,উপকার করলেই কষ্ট পেতে হয়।কেমন লাগে তখন??আপনি যার উপকার করলেন তার উপর কিন্তু আপনার অধিকার নাই কোন,তাকে আপনার বাধ্য হতে হবে এমন কোন কথা নেই,আপনার ইচ্ছা হইছে উপকার করেছেন,এখন তার ইচ্ছা সে স্বীকার করবেনা।এর জন্য আপনি তাকে শাস্তি ও দিতে পারবেন না।

এবার নিজের দিকে তাকান ভাল করে,আপনি কি আল্লাহর বাধ্য???সে তো আপনাকে সবই দিয়েছেন,কি দেয়নি তাকিয়ে দেখুন।
গ্লাসের কতটুকু খালি তা না দেখে কতটুকু ভরা সেটা দেখুন ভাই।
আপনি সব মেগা প্যাকেজে পেয়ে দুনিয়ায় খাচ্ছেন দাচ্ছেন আরাম করছেন,আবার আযান দিলেও আপনার বিকার নাই,স্বামীর অবাধ্য স্ত্রী আপনি,রোযা রেখেও ঘুষ ছাড়েন না আপনি,বেপর্দা হয়ে নেচে বেড়াচ্ছেন দুনিয়া জুড়ে।
এর জন্য কি শাস্তি আপনি পেয়ে থাকেন ডেইলি বেসিসে?
 কিচ্ছু পান না,তারপর ও সামান্য বিপদ এলেই আপনার হতাশা এসে মনে জড় হয় আর বলতে থাকেন যে,আমার জীবনে কেন এমন হয়?কি দোষ আমার?
দোষ নাই আপনার কিন্তু যে কাজের জন্য আপনাকে আল্লাহ পাঠাল সে খোজ নাই আপনার।ভাবুন,ভাল করেই ভাবুন,উত্তর নিজের কাছেই পাবেন,অন্যকে অকৃতজ্ঞ বলে পার পাবেন না,নিজের স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা আপনার ঝুলিতে কত খানি জমা আছে হাতড়ে দেখুন একবার,তখন আর কষ্ট পাবেন না এই ভেবে যে আমি কত্ত বোকা,খালি মানুষের জন্য করি,কেউ আমার জন্য করেনা কিছু।একথা বললে আপনার আল্লাহ কেই পৃথিবীর বড় বোকা ভেবে বসে আছেন আপনি,অথচ আপনিই বোকা।


>> কালেক্টেড পোস্ট <<

এই পৃথিবী স্রেফ একটা স্বপ্ন। অতি ছোট্ট স্বপ্ন।

বিছানায় পড়ে আছি। পাশে বসে আছে আমার ছেলেমেয়েরা, ভাইবোনেরা সবাই। অদূরে দাঁড়িয়ে আমার কাছের বন্ধুরা। হঠাৎ লম্বা লম্বা দম নিতে শুরু করলাম। সূরা ইয়াসীন পড়তে শুরু করেছে কেউ একজন। তার সাথে পড়া শুরু করল অন্যান্যরা। দম ফুরিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। চোখ খুলে দেখি: শিয়রে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর দূত। অনন্তের পথে যাত্রা শুরু হতে অল্প কিছু ক্ষণের অপেক্ষা। আমার মুখ খুলে গেছে, কেউ একজন "যাম যাম"-এর পানি ঢেলে দিচ্ছে। এই ক্ষণের জন্যই রেখে দিয়েছিলাম পানিটা। "লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ্"। চোখের দৃষ্টি হারিয়ে গেছে। কথা বলার শক্তিও নেই আর। অনুভূতিগুলোও নিস্তেজ হয়ে গেছে। কানে আসছে শুধু চারপাশের কান্নার আওয়াজ।
আমি মৃতপ্রায়। প্রবল ঝাঁকুনির সাথে মৃত্যুদূত আমার আত্মা বের করে আনল। এই দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিয়েছি আমি।....
.
আমার গাড়ি, বাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স, সম্পর্ক কোনোকিছুর আর বিন্দুমাত্র মূল্য নেই এখন। কবর আমার বাসস্থান; আমার পরিচয়: আমি 'মৃত'। আত্মীয়স্বজনেরা আমাকে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। কেউ কেউ বলছে, আমাকে এতক্ষণ ঘরে রাখাটা ঠিক হচ্ছে না। যে বাড়ি আমি নিজে বানালাম, যে ঘরে আমি নিজে ঘুমালাম, সেই ঘরে আজ আমার ঠাঁই নেই। দামি দামি যেসব বাথরুম ফিটিংস দিয়ে আমার বাথরুম সাজালাম, সেই বাথরুমে আমার শেষ গোসল হলো না। আমাকে গোসল হয়েছে মাইয়্যেতের গোসলখানায়। সাদা কাফনে পেঁচিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কবরের দিকে। আমার দামি গাড়িটাও আজ আর আমার নয়। কেন?
কেন এত অর্থহীন সম্পদ জমা করেছিলাম! কেন এই সম্পদ অর্জনের জন্য মিথ্যে বলেছিলাম? দুর্নীতি করেছিলাম? সারাদিন খেটে মরেছিলাম! এই সম্পদ? এর কানাকড়িও সঙ্গী হলো না আজ। পুরো জীবনটা বেগার নষ্ট করেছি আমি। ধ্বিক্ আমার প্রতি! ভুলে গিয়েছিলাম মৃত্যু আসবেই। তাই এত পাপে জড়িয়ে ছিলাম। আফসোস!
.
কল্পনা বন্ধ করুন। আপনার আর আমার সাথে একদিন এমনটাই হবে। কাজেই তৈরি থাকুন। ভালো কাজগুলোই আপনার পরকালের যাত্রাকে সুন্দর ও শান্তিময় করবে। তাই মৃত্যুকে স্মরণ করুন। এটা আসবেই। আজ অথবা কাল। এই পৃথিবী স্রেফ একটা স্বপ্ন। অতি ছোট্ট স্বপ্ন।
.
Collected From
Shaykh Zahir Mahmood

আল্লাহ্ তা‘আলা পাক-পবিত্র, তাই তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবূল করে থাকেন।

'ক' সাহেব ছোট্টকালে ক্বুর'আনটা একবার খতম দিয়ে কয়েকটা চুমু দিয়ে একটা থাক তার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এরপর স্কুল কলেজের পড়ার চাপে আর তার সাথে তার দেখা হয়নি। তিনি কোন শুক্রবার নামাজ আদায় করতে ভুল করেননা। রাত জেগে পড়তে পড়তে বোরড হয়ে গেলে কখনো মনে হয়, যাক, ফজরটা পড়ে আসি। কালকের পরীক্ষাটা তবে ভাল হবে।
.
'খ' সাহেব কোন শবে কদর বা বরাত মিস করেন না। নতুন কোন কিছু করলে তিনি মিলাদ দেন। না, আল্লাহর বরকত না হলে সংসারে শান্তি আসবো কী করে? ব্যবসায় আয়-উন্নতি হবে কী করে?
.
'গ' সাহেব চাকরীর জন্য মরিয়া। ম্যাথটা ভাল জানতেন আর ইংলিশটাও। অনায়াসেই একটা সুদীব্যাংকে চাকরী হয়ে গেল। ভাবলেন ভালোই তো। অথবা চিন্তা করলেন, আপাতত করি। এরপর হালাল কোন চাকরী পেলেই ছেড়ে দিবো। দেখলেন মাস শেষে এত্তগুলো টাকা! ভাবলেন, 'এই বেশ ভাল আছি।' নতুন চাকরীর কী দরকার? তার ব্যাংকের নিচতলায় অনেক বড় মসজিদ। সেখানে ইমাম সাহেবের তিলাওয়াতটা মা শা আল্লাহ! বেশ সুখেই আছেন।
.
'ঘ' সাহেবের ছেলে বা মেয়েটাকে উচ্চ শিক্ষিত করার দরকার। সে একটা জব জুটালেই তার শান্তি দেখে কে? ডাচ-বাংলা কিংবা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড থেকে শিক্ষা ঋণটা নিলেই তিনি নিশ্চিন্ত।
.
'ঙ' সাহেব ভাবছেন ভাড়া বাড়িতে আর কতো? নিজের একটা ফ্ল্যাট নাহলে কী আর আছে এ জীবনে? ব্যাংক এখন হোমলোন দেয়।
.
প্রতিসন্ধ্যায় 'চ' সাহেবের বাসায় বাংলা আর হিন্দি সিরিয়াল আড্ডা জমায়। রাত জেগে তারা বার্সা আর রিয়ালের যুদ্ধ দেখেন।
.
'ছ' সাহেব 'অনেক ভাল'। ইসলাম মানার চেষ্টা করেন। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়েন। রামাদানের সিয়াম পালন করেন। তার স্ত্রীও খুব ধার্মিক। হিজাব ছাড়া বের হননা। তবে সুদটাও খেতে ভুলেন না। হালাল-হারামের কথা উঠলে সেখান থেকে তার উঠে যাওয়া দেখে মনে হয় পেট খারাপ হয়েছে।
.
'জ' সাহেব ঘুষ খান না। তবে কেউ 'স্পীড মানি' বা 'উপহার' দিলে বারণ করতে পারেন না। ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথাও তো ভাবতে হবে, নাকি?
.
'ক', 'খ', 'গ', 'ঘ', 'ঙ', 'চ', 'ছ' ও 'জ' প্রমুখ সাহেবগণ ভদ্রলোক ও 'ধার্মিক' খুব। শুক্রবারে মসজিদে অনেক টাকা দান করেন। কারও কারও মাজারও মিস হয় না।
.
তাদের ছেলে-মেয়েগুলো বড় হয়। তারা কথা শোনেনা। বন্ধুদের সাথে রাত-বিরাতে 'গ্রুপ-স্টাডি' করে। কিছু বললেই তেড়ে আসে। কখনো কখনো শোকেইস-আলমিরার সাথে হকি খেলে। কিংবা তাদের ছেলে-মেয়ে খুব ভাল স্টুডেন্টস। তবে তাদের একজনও নামাজের ধারে কাছেও নেই। শুক্রবারেও ঘুমে নাক ডাকে। পর্দা? 'জাগো গো ভগিনী' নামক ডাকে সে দিয়েছে সাড়া।
.
আমাদের আদি পিতা-মাতা আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:) জান্নাতে বাসরত ছিলেন। তাঁদের জন্য আল্লাহ তা'আলা কেবল একটা জিনিস হারাম করলেন। বললেন, 'এ গাছের কাছেও যেওনা।' পূর্বের দৃঢ়সংকল্পধারী শয়ত্বান তাঁদের এখানেই ধোকা দিল। তাঁরা হারাম খেল। জান্নাতি পোশাক তাঁদের থেকে ঝরে গেল।
.
হারামে ডুবলে লজ্জা হারিয়ে যায়। 'ক' থেকে 'জ' রা যখন তাদের ইমান ও আমল নিয়ে সন্তুষ্ট, তখন তাদের জানা দরকার, সেকালের মুনাফিকরাও এর চেয়ে উপরে উপরে 'ভাল' ছিল। তারা নামাজ পড়তো, রোজা রাখতো, হজ্জ-যাকাত মিস করতো না, এমনকি জিহাদও করতো।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
-
আল্লাহ্ তা‘আলা পাক-পবিত্র, তাই তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবূল করে থাকেন। আল্লাহ্ তা‘আলা মুমিনদের ঐ কাজই করার হুকুম দিয়েছেন যা করার হুকুম তিনি রাসূলদেরকে দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন: (হে রাসূলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং নেক আমল করুন।) আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেছেন: (হে মুমিনগণ! আমরা তোমাদের যে পবিত্র জীবিকা দান করেছি তা থেকে আহার কর।)
-
তারপর তিনি (রাসূলুল্লাহ্) এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে বের হয় এবং তার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে ও কাপড় ধুলোবালিতে ময়লা হয়ে আছে। অতঃপর সে নিজের দুই হাত আকাশের দিকে তুলে ধরে ও বলে: হে রব! হে রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম, সে হারামভাবে লালিত-পালিত হয়েছে; এ অবস্থায় কেমন করে তার দো‘আ কবূল হতে পারে?' [মুসলিম: ১০১৫]

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

আল্লাহর জন্য কিছু জিনিস ছেড়ে দিতে হয়- হাতের নাগালে থাকা সত্ত্বেও। কারণ, একটাই। আল্লাহ তা পছন্দ করেন না।

হারাম কাজগুলো হল সফট ড্রিংকস এর মত। কাঠ, মাঠ আর বুক ফাটা রোদ থেকে বাসায় ফিরে আসলে অনেকেই কোকাকোলা, পেপসি আর সেভেন আপ পান করে। তৃষ্ণা মেটাতে।
 কিন্তু, একটু লক্ষ করলে দেখবেন কিছু সময় পরে, ত্রিশ বা চল্লিশ মিনিট পরে আবার সেই আগের তৃষ্ণা ফিরে আসে।
কিন্তু, আল্লাহ যে পানি দিয়েছেন, তা ঠান্ডা হওয়া লাগে না কোল্ড ড্রিংকস এর মত, যা আছে তাতেই তৃষ্ণা মিটে যায়। পানি হল আল্লাহর সরাসরি দান। আর এইসব কোল্ড ড্রিংকস মানুষের ম্যানুফ্যাকচারড।
.
যারা হারামের ভিতর আছেন, হারামকে খুব সহজ করে ফেলেছেন, তারা যেই আনন্দটা পায়, তা সাময়িক।
যখন এই বেহায়াপনার ভিতরে থাকে, তখন তাদের "হু কেয়ার্স" টাইপের শার্টের কলার উঁচু করা আর এলোকেশী চুলের ভাবগুলো দেখার মতই হয়। তারা এইটা মাথাতেই রাখে না- তাদের উপরেও প্ল্যানার আরেকজন আছেন। তিনি কেবল দেখছেন, কত নিচে তারা নামতে পারে। এরপর আল্লাহর সময় আসে, আল্লাহ যখন চাল দেন, সেইটা দেওয়ার মতই দেন। এবং সব মাটিতে মিশিয়েই দেন। কোকাকোলার মত সাময়িক আনন্দ নিয়ে বাকি জীবন আফসোসে কাটায়।
_________
.
আল্লাহর কাছে কেউ এইটা বলে পার পাবে না যে, তার কাছে ইসলামের বার্তা আসে নি। আল্লাহ তার কাছে কি চায়? কেন চায়? কিভাবেই বা চায়, তার প্রতিটা ইন্সট্রাকশন তিনি দিয়েছেন।
.
আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। "সৃষ্টি" শব্দটা কিন্তু অনেক পাওয়ারফুল। আমরা, আমজনতা যারা আছি, কখনও কিছু "সৃষ্টি" করতে পারি না। আমরা কেবল রূপান্তর করি, মাটির নিচে থাকা সম্পদগুলো ছাঁচে ঢেলে নিজের ব্যবহারের মত করে রাখি। কিন্তু, আল্লাহ আসলেই "সৃষ্টি" করেন। এবং তাঁর বানানো প্রতিটা প্রাণীই মাস্টারপিস। আমরা বুঝি না বলে! একটা প্রাণীর সাথে আরেকটা প্রাণীর অনেক পার্থক্য। এমনকি দুই জমজ ভাইবোনেও অল্প কিছু পার্থক্য থাকেই।
.
সেই তিনিই যখন আমাদের একটা কাজে যেতে নিষেধ করেন, আমাদের ভালোর জন্যেই করেন। যুগে যুগে "কোন প্রশ্ন ছাড়াই মেনে নেওয়া" একদল লোক যেমন জন্মায় তেমনিভাবে "নিজের মনের চামচা" হয়েও কিছু মানুষ জন্মায়। "আমার জীবন, আমি যা খুশি করবো" মেন্টালিটি নিয়েই থাকে। এই "ভাব" ছুটে যেতে অল্প কয়টা মাস বা বছরই লাগে।
.
.
মজার ব্যাপার হল, মানুষের মন কিন্তু কখনই খালি থাকে না। দুই প্রকার চিন্তা থাকে। একটু খেয়াল করে দেখবেন, হয় আল্লাহর চিন্তা নয় দুনিয়ার চিন্তা (টাকা, চাকুরী, অন্য মানুষ ইত্যাদি)। যে আল্লাহর চিন্তা করে, সে তার দুনিয়াকেই পরকালের জন্য একটা ব্রিজ বানিয়ে ফেলতে পারে। যখনই কোন কাজে যাবে, তা আল্লাহকে ভালবেসেই করবে। আল্লাহর অখুশিতে কিছু করবে না।
.
আর এই শক্তি হঠাৎ করে চলে আসে না। আল্লাহর জন্য কিছু জিনিস ছেড়ে দিতে হয়- হাতের নাগালে থাকা সত্ত্বেও। কারণ, একটাই। আল্লাহ তা পছন্দ করেন না। এখন এরপরেও নানা যুক্তি দিয়ে মানুষ গান, সিগারেট, ফ্যাশন শো, ফ্রি মিক্সিং সহ যাবতীয় কাজ হালাল বানিয়ে ফেলছেন। তাদের বোঝাপড়া আল্লাহর সাথে। আল্লাহ সত্যিই হিসাব নেওয়া শুরু করলে, আসলেই কেউ নিস্তার পাবে না।
════════════════════
.
লেখাঃ Misbah Mahin

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

বন্ধুর চেয়ে বেশি প্রভাববিস্তারকারী আর কেউ হতে পারে না।

একজন মানুষকে গুনাহের পথে নেয়ার জন্য একজন বদদ্বীনি বন্ধুর চেয়ে বেশি প্রভাববিস্তারকারী আর কেউ হতে পারে না।
সেই ক্লাস ফোর ফাইভ থেকেই একটা ছেলে বা মেয়ে গুনাহের পথগুলো জানে তার বন্ধুদের কাছ থেকেই এবং একসময় সময়ের সাথে সাথে সে নিজেই সেসব গুনাহতে জড়িয়ে পড়ে। আজ এমন একটি সমাজ গড়ে উঠছে যেখানে নেই কোন নৈতিকতা, নেই কোন লজ্জা, নেই কোন বিবেচনাবোধ। থাকবেই বা কি করে, যেখানে ছোটবেলা থেকেই দ্বীন ইসলামের সামনে আত্মসমর্পণের শিক্ষা পাওয়ার কথা ছিল তার সেখানে সে বন্ধুদের কাছ থেকে শিখছে গুনাহের উপকরণগুলো।
তাই সন্তানকে দ্বীনদারি শিক্ষা দেয়ার সাথে সাথে তাকে বন্ধু নির্বাচনের ব্যাপারে কী কী ব্যাপার লক্ষ্য রাখতে হবে তা ছোটবেলা থেকেই তাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিলে আশা করা যায় জীবনের কোন ক্ষেত্রেই সে অসৎ বন্ধুর ফাঁদে পা দিবে না ইনশা আল্লাহ। বদদ্বীনি বন্ধুর পক্ষ থেকে আসা গুনাহের দাওয়াতকে সে স্রেফ পদদলিত করতে পারবে বিইযনিল্লাহ।
.

আমরা যারা দ্বীনের পথে চলতে আগ্রহী কিন্তু চলতে পারছি না, তারা একটু আল্লাহর ওয়াস্তে নিজেদের ফ্রেন্ড সার্কেল বা কাদের সাথে বেশি সময় চলি তা ভেবে দেখি।
 যদি তারা দ্বীন বিমুখ হয় তবে নিজেকে তাদের সংশ্রব থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করি। কেননা তাদের সংস্পর্শে গেলে গীবত, নারী আলাপ, আজে বাজে কথা ছাড়া ভাল কিছুই পাওয়া যাবে না। এগুলো না দ্বীনের ফায়দা না দুনিয়ার ফায়দা। অবশ্যই তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে, কিন্তু দ্বীনের দাওয়াতের উসিলায় তাদের জাহিলিয়াতের মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখলে, তাদের মাঝে বেশি সময় অবস্থান করলে দাওয়াত তো দূরের কথা, উল্টো তাদের জাহিলিয়াতের সাগরে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
 এজন্যই আল্লাহ আযযা ওয়া জাল ও রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বন্ধু নির্বাচনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
.

"জালেম সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম।হায় আমার দূর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।"
(সূরা ফুরকানঃ২৭-২৮)
.
"যেদিন কোন বন্ধুই কোন বন্ধুর উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।" (অ্যাড দুখানঃ৪১)
.
"বন্ধুবর্গ সেদিন একে অপরের শত্রু হবে, তবে খোদাভীরুরা নয়।" (আয যুখরুফঃ৬৭)
.
"তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ-যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র। আর যারা আল্লাহ তাঁর রসূল এবং বিশ্বাসীদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই আল্লাহর দল এবং তারাই বিজয়ী।" (আল মায়িদাঃ৫৫-৫৬)
.
আর কাফির মুশরিকদের বন্ধু বানানো তো আরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার। তারা আমাদের ক্লাসমেইট হতে পারে, প্রতিবেশি হতে পারে, অফিসের কলিগ হতে পারে কিন্তু বন্ধু হতে পারবে না, তাদের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রাখা যাবে না।
.
"হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফিরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে?" (আন নিসাঃ১৪৪)
.
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "মানুষ তার বন্ধুর স্বভাব-আচরণে প্রভাবিত হয়, সুতরাং যাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে তার ব্যাপারে আগে ভেবে নাও। " [আবু দাউদ, তিরমিযী ]
.
.
লিখেছেনঃ- Sabet Bin Mukter

>> কালেক্টেড পোস্ট <<