আল্লাহ আমাদেরকে বিষয়টি বুঝার আর আমল করার তাওফিক দেন।

আল্লাহর উপর ইয়াকিনের সাথে পাহাড় দৃঢ় তাওয়াক্কুল ছোট বড় যেকোন পরিস্থিতিকে সফলভাবে পার করতে সাহায্য করে।
 তাওয়াক্কুলের আগে আমলকেন্দ্রিক আর অন্তরকেন্দ্রিক কিছু ব্যাপার সংশোধন করতে হয়, তা না হলে তাওয়াক্কুল অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

আমল বিষয়ক দিক গুলো হল ফরজ হওয়া সব আদেশ, যেমন- হালাল উপার্জন, ৫ ওয়াক্ত নামাজ, রোযা, যাকাত, হজ্জ, সুন্নাহর উপর অটল থাকা, দাঁড়ি, নিকাব ইত্যাদি। সর্বোপরি আল্লাহর দেয়া আদেশ নিষেধগুলো একাগ্রতার সাথে মেনে চলা।
 তবে এই আমল গুলো স্রেফ শারীরিক এবং আর্থিক পরিশ্রমে পরিণত হবে যদি না অন্তরের হালতের দিকে নজর না দেয়া হয়, প্রাণহীন আমল করে যাওয়া হয়।
.
অন্তরের স্থিরতা আসে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর মুখাপেক্ষিতায়। পুরোপুরি আল্লাহর মুখাপেক্ষি হয়ে যেতে হবে। ছোট থেকে ছোট জিনিসের জন্য আল্লাহর তায়ালার কাছে ফরিয়াদ জানাতে হবে। এক গ্লাস পানি ঢেলে খেতেও আল্লাহর সাহায্য চান। সাহাবীরা জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন। সাহাবীরা সামান্য দুনিয়াবি বিষয়েও ষোল আনা আল্লাহর মুখাপেক্ষী থাকতেন। আল্লাহ মুখাপেক্ষিতাকে তাঁদের অন্তরের গহীনে শক্ত করে গেঁথে নিয়েছিলেন। দৃঢ় বিশ্বাস করতেন বিশ্ব জাহানের মালিকই তাদের প্রয়োজন পূরণ করে দিবেন, অন্য কোথাও তাঁদেরকে ধরনা দিতে হবে না। আল্লাহ তায়ালার উপর বান্দা যেভাবে ধারণা করে, আল্লাহ বান্দার প্রতি সেভাবে সাড়া দেন। তাঁদের ধারণা যেমন মজবুত ছিল, তেমনি আল্লাহ তাঁদেরকে অমন সাহায্য করেছেন। আমাদের ধারণা যেমন হবে, আমাদের প্রতিও তেমন সাহায্য আসবে।
.
ছোট ছোট ব্যাপারে আল্লাহর মুখাপেক্ষিতার অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে আমল গত বিষয়ে স্থির থাকার মত সিরিয়াস ব্যাপার গুলোতে আমাদের আল্লাহর উপর কেমন ধারণা আর তাওয়াক্কুল রেখে চেষ্টা করে যেতে হবে? অন্তরের স্থিরতা, সবরের সাথে আল্লাহর ইবাদত করে যাওয়া, ইহসানের সাথে নামাজ আদায় করার মত বিষয় গুলো যদি আমরা আমাদের জীবনে সুন্দরভাবে সেট করতে পারি, তাহলে দ্বীন দুনিয়ার বাকি সব ব্যাপার গুলো আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।
.
"যেখানে আপনি আপনার রাতের ঘুমকে হারিয়েছেন, যেখানে আপনার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, সেখানেই ঘুরে ফিরে মৌন ভিক্ষার ঝুলি পেতে বসে আছেন। আল্লাহ আপনার ঈমানকে ঐ বিষয়ের সাথেই জুড়ে দিবেন, যতই আপনি মুখে বলা তাওয়াক্কুল রাখেন না কেন।আল্লাহকেন্দ্রিক সব আশা ভরসা রাখুন, দুনিয়াবি এসব বিপর্যয় আপনাকে অস্থির করার ক্ষমতাও রাখবে না।"
.
ইনভার্টেড কমার মধ্যে লেখাটি আসলে উপরের তাওয়াককুলের বিষয় গুলোর তুলনায় নিতান্তই সামান্য বিষয়। কিন্তু এই সামান্য বিষয়টি অনেকের কাছেই বেশ বড় ব্যাপার। কারণ, তাদের চিন্তা চেতনাগুলো এই বিষয় কেন্দ্রিকই হয়ে থাকে।
আমরা আপনাদেরকে বলছি, সমস্যা গুলোর একটা একটা করে সমাধানের দিকে নজর না দিয়ে, সমস্যা যেন না ফেইস করতে হয় নিজেদেরকে সেভাবে প্রস্তুত করে নিতে।
 আপনার যদি ঈমান, আমল, তাওয়াককুল, অন্তরের হালত ঠিক না থাকে, তাহলে বারবার এমন শত শত সমস্যা আসতেই থাকবে, আর আপনি একটার পর একটা সমাধান করতে যেয়ে সমস্যাকে কেন্দ্র করেই নিজের সংশোধনে সাময়িকের মনোনিবেশ করে করে এক সময় বিরক্ত হয়ে যাবেন। এমনও হতে পারে বারবার সংশোধন করতে যেয়ে আপনি আসল বিষয়টি উপলব্ধি করে আপনার প্রায়োরিটি ঐ ঈমান আর আমলে সেট করতে পারবেন, এমনটাই যেন হয়। তবে সমস্যা তৈরি হওয়ার পরিবেশই না রাখার দিকে নজর দিলে আপনার জন্যই সহজ হবে।
.
কাজেই দুঃসময়ে জন্য স্রেফ অন্তরের স্থিরতাকে আমরা টার্গেট করে আল্লাহর মুখাপেক্ষি হওয়ার চেষ্টা করবো না। এভাবে চেষ্টা করেও কাজ হবে, কিন্তু তার স্থায়িত্ব হবে সাময়িক।
 কাজেই আল্লাহর মুখাপেক্ষি হতে হবে আল্লাহর জন্যেই, আল্লাহ আযযা ওয়াজাল'কে ভয় করে, তাঁকে ভালোবেসে, একাগ্রতার সাথে তাঁর ইবাদত করতে।
এমন যেন না হয় যে আমাদের উপর বিপদ আসলে আমরা শুয়ে বসে আল্লাহকে ডাকছি, আর বিপদ চলে গেলে তার নাফরমানি এমনভাবে করছি যে আগে কখনো আমাদের উপর কোন বিপদই আসে নি। আল্লাহ আমাদেরকে বিষয়টি বুঝার আর আমল করার তাওফিক দেন।
.
#HujurHoye

উত্তম ঘরের চাবিকাঠি সিরিজ: ৩য় পর্ব


.
#ঘরে_ইসলামী_জ্ঞানচর্চা
.
৮। পরিবারে ইসলাম শিক্ষা:
ঘরের কর্তার উপর আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত আবশ্যিক দায়িত্বগুলোর মধ্যে যা পড়ে তা হলো- "হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেকে ও নিজের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর।" (৬৬:৬) পরিবার গড়া, শিক্ষাদীক্ষা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ব্যাপারে এই আয়াতে মূলনীতি বিদ্যমান। আয়াতটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুফাসসিরীন কেরাম বলেন, এই আয়াতের মূল কথা হলো, পরিবার, দাস ও আত্মীয়স্বজনকে আল্লাহ যা পালন করতে বলেছেন আর যা নিষেধ করেছেন তা শিক্ষা দেওয়া।
.
আত-তাবারী বলেন, "অবশ্যই আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিকে আল্লাহর দ্বীন ও উত্তম গুণাবলী, উত্তম ব্যাবহার শিক্ষা দেওয়া উচিত। আল্লাহর রাসুল দাসীদের ব্যাপারেই শিক্ষাদীক্ষার কথা বলেন (যারা ছিল দাস), তবে আমাদের স্ত্রী ও সন্তান (যারা মুক্ত) তাদের বেলায় তা কেমন হবে তো সহজেই অনুমেয়।"
.
অনেক সময় পুরুষ তার অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পরিবারের দ্বীনশিক্ষার কথা ভুলে যায়। এ থেকে বের হওয়ার একটা উপায় হতে পারে পরিবার ও এমনকি অন্যান্য আত্মীয়দের জন্য কিছু সময় বরাদ্ধ করা যাতে সবাই মিলে বাসায় একটা 'পাঠচক্র' গড়ে তোলা যায়। তিনি অন্যদেরকে সময়ের কথা স্মরণ করানো ও ইলমী পাঠচক্রে বসার ব্যাপারে উৎসাহ যোগাবেন। রাসুলুল্লাহর সময়ে এমন কিছুই হতো।
.
ইমাম বুখারী (রাহিঃ) তাঁর বইয়ের একটি অধ্যায়ের শিরোনাম করেন, "নারীদেরকে কি জ্ঞানার্জনের জন্য একান্তভাবে কোনো দিনকে সাব্যস্ত করা যায়?" নামে। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বর্ণনা করেন, "নারীরা নবীজিকে আরজ করলেন, পুরুষদের ভীড়ে আমরা আপনার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি না। তাই এমন একটা দিন আমাদের জন্যই নির্ধারণ করুন যাতে আমরা আপনার কাছে আসতে পারি।"
ইবন হাজার (রাহিঃ) বলেন একই ধরনের বর্ণনা আছে সাহল ইবন আবু সালিহ থেকে যিনি আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন, "তোমার দায়িত্ব অমুক ও অমুকের বাড়িতে। এবং তিনি তাদের ওখানে যান এবং কথা বলেন (শিক্ষা দেন)।"
.
আমরা এ থেকে শিখতে পাই যে নারীদের তাদের ঘরে শিক্ষা দেওয়া দরকার আর দেখি নারী সাহাবীরা জ্ঞানার্জনে কতটা আগ্রহী ছিলেন। নারীদের বাদ দিয়ে কেবলমাত্র পুরুষের দ্বীন শিক্ষা দা'ঈ এবং পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের জন্য অনেক বড় ঘাটতি।
.
অনেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ধরুন আমরা নারীদের নিয়ে বসলাম। কিন্তু আমরা এমন ক্ষেত্রে কী কী পড়াশোনা করবো?
.
কিছু সাজেশন নিচে দেওয়া হল:
- তাফসির-ঈ-ইবনুস সিদি [বাংলায় এর অনুবাদ আছে কিনা জানা নেই। তাই আমরা সহজবোধ্য যেকোন হক তাফসীরের কোনোটা সাজেস্ট করছি এ ক্ষেত্রে।]
- রিয়াদুস সালেহীন। সনদ ও ফুটনোটসহ আলোচনা করতে পারেন।
- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীর উপর একটি সীরাহগ্রন্থ
.
এছাড়াও মেয়েদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিকহী হুকুম জানানো জরুরী। যেমন: তাহারাত (পবিত্রতা), হায়েয-নিফাস, সালাত, যাকাত, সিয়াম ও হজ্জ (সে যদি সক্ষম হয়); খাদ্য ও পানীয়, পোশাক ও সাজসজ্জা, ফিতরাগত সুন্নত, মাহরাম-ননমাহরাম বিষয়ক বিধান, গান-বাদ্য, ফটোগ্রাফির বিধান ইত্যাদি। এগুলো জানার জন্য শাইখ সালেহ আল উসায়মিন কিংবা শাইখ আব্দুল আজিজ ইবন বাজ কিংবা অন্য কোনো আলেমের ফতোয়া সংকলন দেখতে পারেন। উপমহাদেশের জন্য বেহেশতী জেওর কিংবা আহসান ফেকাহ উল্লেখযোগ্য।
.
এছাড়াও মেয়েদের জন্য হক আলেমদের উন্মুক্ত ইসলামিক ওয়াজ বা লেকচারগুলোতে অংশগ্রহণও যাতে আপনাদের সিলেবাসে থাকে। তারা উপযুক্ত পর্দা মেনে ইসলামী বই দোকান বা লাইব্রেরীগুলোতেও যাতে যাতায়াত রাখতে পারে।
.
৯. পারিবারিক ইসলামী গ্রন্থাগার তৈরি করা:
পরিবারের মানুষদের জন্য দ্বীন শিক্ষা, দ্বীন বোঝা ও আঁকড়ে ধরার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে ঘরেই ইসলামী লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা। খুব বড় হতে হবে যে এমনটা না। তবে যা করতে হবে তা হল- ভালো বই বাছাই, পরিবারের সবার জন্য প্রবেশযোগ্য আর সবাইকে পড়তে উৎসাহিত করা।
.
আপনি ড্রয়িং রুমের একটি পরিষ্কার কোণে কিংবা বেডরুমের কোনো উপযুক্ত স্থানে কিংবা গেস্ট রুমেও বই রাখতে পারেন।
.
একটা যথোপযুক্ত লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে হলে- আর আল্লাহ কোনো কাজ যথোপযুক্ত হওয়াকে ভালোবাসেন- একটি রেফারেন্স সেকশন থাকা উচিত যেখানে পরিবারের সদস্যগণ গবেষণা করতে পারবেন আর বাচ্চারা তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে তা থেকে উপকৃত হতে পারবে। তাছাড়া শিশু ও বৃদ্ধ, পুরুষ ও নারীর সবার ব্যবহার করার মতো বই থাকা চাই। বাসায় আসা মেহমানদের উপহার দেওয়ার জন্য উপযুক্ত সুন্দর প্রেজেন্টেশন সম্বলিত বই থাকাও দরকার। বই নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞজনের পরামর্শ নিতে পারেন। সবার কাছে বই খুঁজে পাওয়া সহজ করতে বিষয় অনুযায়ী বইকে আলাদা আলাদা তাকে রাখতে পারেন। অথবা সাজানোটা বর্ণানুক্রমিকও হতে পারে। তাফসীর, হাদিস, আকীদা, ফিকহ, শিষ্টাচার ও আত্মশুদ্ধি, সীরাহ ও জীবনী প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে বই ছাড়াও প্যামফ্লেট, লিফলেট থাকতে পারে।
.
১০. হোম অডিও লাইব্রেরি:
একটি অডিও প্লেয়ার ভালো বা মন্দ দুই কারণেই ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমরা এটা কীভাবে ব্যবহার করতে পারি? একটা উপায় হতে পারে আলেম, ফুকাহা, লেকচারার, খতীব বা দা'ঈদের বিভিন্ন বক্তব্যের অডিও নিয়ে একটি হোম অডিও লাইব্রেরি বানানো।
.
তারাবীহের সালাতের কিছু কুরআন তিলাওয়াতের রেকর্ডিং দারুন তাদের কুর'আন বোঝা ও মুখস্তের আগ্রহ বাড়াতে পারে। শয়তানী গান-বাদ্যকে কুর'আন দিয়ে প্রতিস্থাপনের এটা হতে পারে একটা উপায়।
.
এছাড়াও ফতোয়ার অডিও/ভিডিও সংগ্রহ করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে কার কাছ থেকে তা সংগ্রহ করছেন তাও খেয়াল রাখবেন।
.
পাশাপাশি বিভিন্ন ইসলামিক লেকচারের অডিও সংগ্রহ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে যা খেয়াল রাখবেন তা হল:
- লেকচারার আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত কিনা এবং বিদ'আতমুক্ত কিনা
- জাল ও দায়ীফ পরিহার করে তিনি সহীহ হাদিসের উপর ভিত্তি করে কথা বলেন কিনা
- তিনি উম্মাহর বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন কিনা এবং বাস্তবতা বুঝে কথা বলেন কিনা
- তিনি সর্বদা মিথ্যা পরিহার করে কথা বলেন কিনা
.
১১. বাসায় ভালো, নেককার ও জ্ঞানানুরাগী মানুষকে দাওয়াত দেওয়া:
"হে আমার রাব্ব! আমাকে, আমার পিতামাতাকে, তাকে যে আমার ঘরে মু'মিন হিসেবে প্রবেশ করে এবং সকল মু'মিন ও মু'মিনাকে মাফ করে দিন..." (৭১:২৮)
.
আপনার বাড়িতে যদি নেককার মানুষের যাতায়াত থাকে তবে তা একে আলোকিত করবে। তার সাথে আপনার আলোচনা ও কথাবার্তা থেকে অনেক কিছু শেখা হয়ে যাবে। আতর ব্যবসায়ীর কাছে গেলে সে আপনাকে আতর দিয়ে দেবে কিংবা আপনি কিছু কিনবেন নয়তো দেখবেন তার কাছে মনোরম সুগন্ধ রয়েছে। একইভাবে ভালো মানুষের সাথে আপনার ও আপনার সন্তানদের বসা আর পর্দার আড়াল থেকে মেয়েদের আপনাদের উত্তম কথা শোনা হতে পারে শিক্ষনীয়।
.
১২. ঘর সংক্রান্ত ইসলামী বিধানগুলো জানা:
*ঘরে নামাজ আদায়-
পুরুষের ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, "উত্তম সালাত হলো একজন পুরুষের ঘরে নামাজ আদায় করা- ফরজ সালাত ব্যাতীত।" (বুখারী: ৭৩১)
ন্যায় ওজর ছাড়া জামাতে ফারদ (ফরজ) সালাত আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহর রাসুল ﷺ আরও বলেন, একজন পুরুষের নিজের ঘরে নফল ইবাদাত লোকদের সাথে নফল ইবাদাতের চেয়ে বেশি সাওয়াবের। অন্যদিকে তার লোকদের সাথে ফরজ সালাত আদায় করা ঘরে তা আদায় জরার চেয়ে অধিক সাওয়াবের হবে।" (সহীহ আল-জামি: ২৯৫৩)
.
মেয়েদের সালাতের জায়গা হিসেবে ঘরের গোপন কোণ সবচেয়ে ভালো। আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন, "একজন মেয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ সালাত তার ঘরের অন্তিম কোণে যদি আদায় করা হয় তা।" (তাবারানী, সহীহ আল-জামি: ৩৩১১)
.
ঘরের কর্তা ব্যক্তির তার নিজের ঘরে মুক্তাদি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। এমনকি তার কুর'আন তিলাওয়াত অন্যের তুলনায় যদি কম সুন্দর হয় তবুও। তিনি যেখানে বসেন সেখানে অন্যের ক্ষেত্রে অনুমতি ছাড়া বসাও শোভন না। তিরমিযীর ২৭৭২ নম্বর হাদিসে এই কথা রয়েছে।
.
*ঘরে প্রবেশে অনুমতি-
আল্লাহ বলেন, "হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। যদি তোমরা গৃহে কাউকেও না পাও, তাহলে তোমাদেরকে যতক্ষণ না অনুমতি দেওয়া হয়, ততক্ষণ ওতে প্রবেশ করবে না। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও’ তবে তোমরা ফিরে যাবে; এটিই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা কর, সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।"
(আন-নূর: ২৭-২৮)
.
আল্লাহ আরও বলেন, "... সুতরাং ঘরগুলোতে প্রবেশ করো সদর দরজা দিয়ে।" (বাকারাহ: ১৮৯)
.
কোনো ঘরে যদি প্রবেশের ক্ষেত্রে বৈধতা থাকে (যেমন, অতিথি হিসেবে) তবে এমন ফাঁকা ঘরে প্রবেশ করা যাবে।
আল্লাহ বলেন, "যে গৃহে কেউ বাস করে না, তাতে তোমাদের জন্য উপকার (বা আসবাব-পত্র) থাকলে সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোনও পাপ নেই এবং আল্লাহ জানেন, যা তোমরা প্রকাশ কর এবং যা তোমরা গোপন কর।" (আন-নূর: ২৯)
.
তবে নিজেদের আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের ঘর ও যে ঘরের চাবি কারও কাছে গচ্ছিত সেসব ঘরে প্রবেশ ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে লজ্জার কিছু নেই।
আল্লাহ বলেন, "অন্ধের জন্য, খঞ্জের জন্য, রুগ্‌ণের জন্য এবং তোমাদের নিজেদের জন্য তোমাদের নিজেদের গৃহে আহার করা দূষণীয় নয়। অথবা তোমাদের পিতৃগণের গৃহে, মাতৃগণের গৃহে, ভ্রাতৃগণের গৃহে, ভগিনীগণের গৃহে, পিতৃব্যদের গৃহে, ফুফুদের গৃহে, মাতুলদের গৃহে, খালাদের গৃহে অথবা সে সব গৃহে যার চাবি তোমাদের হাতে আছে অথবা তোমাদের বন্ধুদের গৃহে; তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথক পৃথকভাবে আহার কর, তাতে তোমাদের জন্য কোন অপরাধ নেই; তবে যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন। এভাবে তোমাদের জন্য নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করেন; যাতে তোমরা বুঝতে পার।" (সুরা নূর: ৬১)
.
ফজরের পূর্বে ও ইশার পর শিশু ও কাজের ছেলে-মেয়েদের বেডরুমে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে মানা করতে হবে। নইলে হয়তো তারা এমন কিছু দেখে ফেলতে পারে যা তাদের জন্য উপযুক্ত না।
আল্লাহ বলেন, "হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসিগণ এবং তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত হয়নি (নাবালক), তারা যেন তোমাদের কক্ষে প্রবেশ করতে তিনটি সময়ে অনুমতি গ্রহণ করে; ফজরের নামাযের পূর্বে, দ্বিপ্রহরে যখন তোমরা বিশ্রামের উদ্দেশ্যে বাহ্যাবরণ খুলে রাখ তখন এবং এশার নামাযের পর। এ তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তা অবলম্বনের সময়। তবে এ তিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে তোমাদের জন্য এবং তাদের জন্য কোন দোষ নেই। তোমাদের এককে অপরের নিকট তো সর্বদা যাতায়াত করতেই হয়। এভাবে আল্লাহ তোমাদের নিকট তাঁর নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।" (সুরা নূর: ৫৮)
.
অনুমতি ছাড়া কারও ঘরে উঁকি দেওয়া নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, "অনুমতি ছাড়া যে কারও ঘরে উঁকি দেবে তার চোখ তুলে ফেলো। এক্ষেত্রে কোনো রক্তমূল্য বা ক্ষতিপূরণ গ্রহণীয় হবে না।" (আল-মুসনাদ ২/৩৮৫)
.
যে নারীকে প্রথম ও দ্বিতীয় তালাক দেওয়া হয়ে গেছে তাকে ঘর ত্যাগ করানো যাবে না তার ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত আর তাকে এ সময় অর্থ সহায়তা দিতে থাকতে হবে।
আল্লাহ বলেন, "হে নবী! (তোমার উম্মতকে বল,) তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে ইচ্ছা কর তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে, ইদ্দতের হিসাব রেখো এবং তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করো; তোমরা তাদেরকে তাদের বাসগৃহ হতে বহিষ্কার করো না এবং তারা নিজেও যেন বের না হয়; যদি না তারা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। আর যে আল্লাহর সীমা লংঘন করে, সে নিজের উপরই অত্যাচার করে। তুমি জান না, হয়তো আল্লাহ এর পর কোন উপায় করে দেবেন।" (আত-তালাক : ১)
.
*ঘরে একা একা অবস্থান করা উচিত নয় আর না ঘুমানো উচিত সেই ছাদে যার রক্ষাকারী দেওয়াল নেই।
.
*পোষা বিড়াল কোনো খাবার বা পানীয়কে নাপাক বানায় না। (আহমদ, আল-মুসনাদ ৫/৩০৯)
.
(চলবে... ইনশাআল্লাহ)
.
সহায়ক গ্রন্থ: ঘরের জন্য ৪০ উপদেশ (শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ)
.
#UttomGhorerChabikathi
.
#HujurHoye

উত্তম ঘরের চাবিকাঠি সিরিজ: ২য় পর্ব


.
::ঘরকে উত্তম বানানোর উপায়::
.
নিচের এ পয়েন্টগুলো থেকে আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ দিক যাতে আমরা আমাদের ঘরগুলোকে প্রকৃত মুসলিমের ঘর তথা উত্তম ঘরে পরিণত করতে পারি।
.
#পরিবার_গঠন
.
১। উত্তম জীবনসঙ্গী বাছাই:
আল্লাহ বলেন, "তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।" (সুরা নূর:৩২)
.
উত্তম জীবনসঙ্গী বাছাইয়ের কীভাবে করবেন? আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন,
.
“চারটি জিনিস দেখে কোনো নারীকে বিয়ে করা যায়- সম্পদ, বংশ, রূপ বা দ্বীন। বাছাই করো যে দ্বীনদার কাউকে নইলে তোমার হাত ধুলি ধূসরিত হোক। (বুখারী ও মুসলিম)
.
“এই দুনিয়ার সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী সম্পদ। কিন্তু এ জীবনের সবচেয়ে আনন্দের হলো একজন নেককার স্ত্রী।” (মুসলিম: ১৪৬৮)
.
“তোমাদের সবার শোকরগোজার অন্তর, যিকিরকারী জিহ্বা ও বিশ্বাসী স্ত্রী থাকুক যে পরকালীন সফলতা অর্জনে সাহায্য করবে।” (আহমাদ: ৫/২৮২, তিরমিজী ও ইবন মাজাহ)
.
রাসুলুল্লাহ ﷺ আরও বলেন,
“কারও জন্য সর্বোত্তম সম্পদ হলো নেককার স্ত্রী যে দুনিয়া ও দ্বীনে তোমাকে সাহায্য করবে।” (বায়হাকী: সাহীহুল জামি,৪২৮৫)
.
"প্রেমময়ী ও অধিক সন্তান জন্মদানে সক্ষম নারীকে বিয়ে করো। কারণ, আমি কিয়ামতের দিন অন্য নবীদের সামনে তোমাদের সংখ্যার বিশালতা নিয়ে গর্ববোধ করবো।" (আহমাদ: সহীহুল ইরওয়া, ৬/১৯৫)
.
"আমি তোমাদের কুমারী নারীকে বিয়ে করার উপদেশ দিচ্ছি কেননা, তাদের গর্ভ নবীন, তাদের মুখ (কথা) মিষ্টি, আর তারা অল্পতে বেশি তুষ্ট" অন্য বর্ণনায় "...তারা ছলনাময়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম।" (ইবন মাজাহ, ৬২৩)
.
একজন নেককার নারী যেমন চারটে সুখকর ব্যাপারের একটি, একজন পাপাচারী নারী তেমন চারটে দুঃখবাহী ব্যাপারের একটি। রাসুলুল্লাহ ﷺ সহীহ হাদিসে বলেন, "সুখের অন্যতম (উপাদান) হলো একজন নেককার স্ত্রী। যখন তুমি তার দিকে তাকাও তোমার মন প্রশান্ত হয়ে যায়, আর যখন তুমি বাইরে যাবে তুমি তার ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে তার উপর আস্থা রাখতে পারো। আর দুঃখের অন্যতম (উপাদান) হলো পাপাচারী স্ত্রী যার দিকে তাকালে তোমার মন বিচলিত হয় আর সে তোমাকে মুখ দ্বারা আক্রমণ করে। আর যখন তুমি বাইরে যাও তাকে তার ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে আস্থাশীল পাও না।"
.
অন্যদিকে নারীদেরও বিয়ের প্রস্তাবদানকারী পুরুষটি সম্পর্কেও একইভাবে জানার ব্যাপার আছে তার প্রস্তাবে রাজি হওয়ার আগে।
.
আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন, "তোমাদের কাছে যদি এমন কেউ আসে যার দ্বীন ও চরিত্রের ব্যাপারে তোমরা সন্তুষ্ট তবে নিজের মেয়েকে (বা বোনকে ইত্যাদি) তার কাছে বিয়ে দিয়ে দাও। অন্যথায় দুনিয়ায় ফিতনা ও ব্যাপক দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়বে।"
.
ঘর যাতে না ভাঙে বা না ক্ষতির সম্মুখীন হয় সেজন্য সঠিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা, সত্য যাচাই, তথ্য সংগ্রহ ও এর উৎস তালাশ করে উপরের এগুলো অর্জন করা আশু দরকারী।
.
নেককার নারী ও নেককার পুরুষ মিলে ঘরটাকে পূণ্যময় করতে পারে কেননা, "...উৎকৃষ্ট ভূমি তার প্রতিপালকের নির্দেশে ফসল উৎপন্ন করে আর যা নিকৃষ্ট তাতে কঠোর পরিশ্রম ব্যাতীত কিছুই জন্মায় না..." (সুরা আল-আরাফ:৫৮)
.
২। স্ত্রী/স্বামীকে সঠিক পথে আনার প্রচেষ্টা:
কারও স্ত্রী/স্বামী যদি নেককার হন তবে তা অবশ্যই সৌভাগ্যের। তবে অন্যথাও হতে পারে যখন কেউ নিজেই প্রথমে নেককার ছিলেন না বা ছিলেন কিন্তু পরে ঠিক করে নেওয়ার লক্ষ্যে কিংবা বাবা-মা, আত্মীয়দের চাপে বিয়ে করেন। এমতাবস্থায় কারও জন্য তার স্পাউজকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করা একেবারে আবশ্যক। পুরুষের ক্ষেত্রে ঘরের কর্তা হিসেবে আবার তা তার আবশ্যিক দায়িত্বও। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে হেদায়েত আল্লাহর কাছ থেকেই আসে।
.
স্ত্রী/স্বামীকে সঠিক পথে আনার উদ্দেশ্যে যা করা যেতে পারে-
* স্ত্রী/স্বামীর আল্লাহর 'ইবাদাতের ক্ষেত্রে নির্ভুলতা নিশ্চিত করা
* তার ঈমান শক্তিশালী করতে আপনার প্রচেষ্টা যেমন-
- তাহাজ্জুদের নামাজে উৎসাহ প্রদান
- কুর'আন পড়তে উৎসাহ প্রদান
- যিকির-আজকার মুখস্ত ও সঠিক সময় তা পাঠে উৎসাহ প্রদান
- দান-সাদাকায় উৎসাহ প্রদান
- উপকারী ইসলামী বই পড়তে উৎসাহ প্রদান
- উপকারী ইসলামী অডিও শুনতে উৎসাহ প্রদান (যা তার জ্ঞান ও ইমানকে মজবুত করবে) ও তার সরবরাহ চালিয়ে যাওয়া
- তার জন্য উত্তম, দ্বীনদার বন্ধু বাছাই করে দেওয়া
- সকল খারাবীর প্রবেশদ্বার তার জন্য রুদ্ধ করে দেওয়া
- ঘরে আস্থাশীল ও বিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি করা
.
৩। ঘরকে আল্লাহর স্মরণের জন্য উপযুক্ত করে নেওয়া:
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, "যে ঘরে আল্লাহর স্মরণ হয় আর যে ঘরে আল্লাহর স্মরণ হয় না এদের উদাহরণ যথাক্রমে জীবিত আর মৃতের।"
.
আজকাল মুসলিমদের ঘরগুলো হয়ে গেছে গীবত-পরনিন্দা, শয়তানের গান-বাদ্যের কেন্দ্র কিংবা গায়র মাহরামদের সাথে অবাধে মেলামেশার সুযোগ। এমন ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসে না।
.
আমাদের ঘরগুলো কুর'আন পাঠ, ইসলামী আলোচনা আর বিভিন্ন ইসলামী বই পড়ার স্থান বানিয়ে নেওয়া আশু জরুরী।
.
৪। ঘরকে 'ইবাদাতের স্থান বানানো:
আল্লাহ তা'আলা মুসা (আলাইহিসসালাম) ও তাঁর ভাইকে বলেছিলেন তাদের আবাসস্থলে সালাত আদায় করার ও মুমিনদের সুসংবাদ দেওয়ার জন্য। আল্লাহ আমাদের জন্য বলেন, "হে মু'মিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।" (সুরা বাকারা: ১৫৩) রাসুলুল্লাহ ﷺ কোনো দুঃখ-কষ্টের বিপরীতে সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন। সাহাবারা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ফারদ(ফরজ) নামাজ ছাড়া বাকি নামাজ ঘরে পড়তেন। সুতরাং ঘরে নামাজ আদায় করা অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া সন্তানদের ছোট থেকে নামাজে আগ্রহ বাড়াতে ও অভ্যস্ত করে তুলতে সুন্নাহ ও নফল নামাজগুলো ঘরেই পড়া উত্তম।
.
৫। পরিবারের সবার জন্য আত্মিক প্রশিক্ষণ:
আ'ঈশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, "আল্লাহর রাসুল ﷺ ঘরে রাতের নামাজ (ক্বিয়ামুল লাইল) আদায় করতেন আর তাঁর বিতরের নামাজের সময় হলে বলতেন, "হে আ'ঈশা! উঠো। বিতর পড়ে নাও।" (মুসলিম: ৬/২৩)
.
রাসুলুল্লাহ ﷺ আরও বলেন, "আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুক যে রাতে জাগ্রত হয় আর নামাজ আদায় করে আর এরপর সে তার স্ত্রীকে জাগায় নামাজের জন্য। এরপর যদি সে উঠতে না চায় তবে তার মুখ পানির ছিটা দেয়।" (আহমাদ ও আবু দাঊদ)
.
নারীদের দান-সাদাকায় উৎসাহিত করাও ঘরে আত্মিক প্রশিক্ষণের একটা উপায়। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, "হে নারীগণ! তোমরা বেশি বেশি দান-সাদাকা করো। কেননা, জাহান্নামের বাসিন্দাদের মধ্যে নারীরাই বেশি বলে আমি দেখেছি।" (বুখারী: ১/৪০৫)
দান-সাদাকার জন্যে ঘরে একটা আলাদা বক্স রাখা যেতে পারে।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো রোজা রাখা- আইয়ামে বীজ (প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ), শাওয়ালের ছয় রোজা, আশুরা (মুহাররমের ৯ ও ১০ তারিখ), 'আরাফা, আর মুহাররম ও শাবানে বিভিন্ন সময় রোজা রাখা।
.
৬। সুন্নাহ অনুযায়ী ঘরের দু'আ ও যিকিরের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া:
*ঘরে প্রবেশের দু'আ-
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, যখন তোমাদের কেউ ঘরে প্রবেশ করে আর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে যখন সে প্রবেশ করে ও খায়, শয়তান বলে, 'তোমার এখানে থাকার বা খাওয়ার কোনকিছু নেই'। তবে যদি সে ঘরে ঢুকতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করে, শয়তান বলে, 'তোমার এখানে থাকার জায়গা হলো'। যখন সে খাওয়ার সময় আল্লাহর নাম না নেয়, শয়তান তখন বলে, 'তোমার এখানে থাকা-খাওয়ার জায়গা হলো।' " (আহমাদ ও মুসলিম)
.
ঘর থেকে বের হওয়ার দু'আ হলো- বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু 'আলাল্লাহ। লা হাওলা ওয়ালা ক্কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। (আবু দাঊদ ও তিরমিজি)
.
*সিওয়াক-
আ'ঈশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, "রাসুলুল্লাহ ﷺ ঘরে ঢুকে প্রথমেই যে কাজটি করতেন তা হলো মিসওয়াক করা।" (মুসলিম)
.
৭। শয়তানকে তাড়িয়ে দিতে ঘরে নিয়মিত সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা:
আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন, "তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে ফেলো না। যে ঘরে সুরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা হয় সে ঘরে শয়তান থাকে না।" (মুসলিম ১/৫৩৯)
.
(চলবে ইনশাআল্লাহ...)
.
সহায়ক গ্রন্থ: ঘরের জন্য ৪০ উপদেশ (শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ)
.
#UttomGhorerChabikathi
#HujurHoye

উত্তম ঘরের চাবিকাঠি সিরিজ: পর্ব ১


.
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর আল্লাহ ঘরকে করেছেন তোমাদের জন্য আবাসস্থল।“ (১৬: ৮০)
.
ইবন কাসির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা তার বান্দাহদের জন্য পরিপূর্ণ রহমতের কথা উল্লেখ করছেন- তিনি তাদের জন্য ঘরকে করেছেন প্রশান্তিময় আবাসস্থল যাকে তারা পরম সুখের স্থান ভাবেন, যা তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করে আর সর্ব প্রকারের সুবিধা প্রদান করে।
.
ঘরের কথা ভাবতে গেলেই কী আমাদের মনে এসে দোলা দেয়? এই সেই স্থান যেখানে আমরা খাই, ঘুমাই, বিশ্রাম নিই, স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ হই আর জীবনকে উপভোগ করি। এই স্থান সেটা নয় যেখানে আমরা একা থেকে আমাদের স্ত্রী-সন্তানের সাথে মিশতে পারবো।
.
ঘর কি তা নয় যা নারীদের আব্রু রক্ষা করে আর নিরাপত্তা দেয়? আল্লাহ বলেনঃ “আর তোমরা ঘরে থাকো এবুং জাহেলী যুগের মেয়েদের মতো নিজেকে প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না।“ (৩৩: ৩৩)
যদি গৃহহীন, রাস্তায় থাকা মানুষ কিংবা উদ্বাস্তুরা যারা অস্থায়ী ক্যাম্পের বাসিন্দা তাদের কথা মনে করেন, তবে একটি ঘরের মর্তবা বুঝতে পারবেন সহজে। আমরা আরও গভীর করে বুঝতে পারবো যদি কোন দুর্দশাগ্রস্ত গৃহহীন মানুষ এসে আমাদের সামনে আহাজারি করে আর তার কষ্টের কথা আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনি।
.
বনু নাযিরের ইহুদিদেরকে যখন আল্লাহ তা’আলা গৃহহীন করে শাস্তি দিয়েছিলেন তখন তিনি বলেন, “কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কাফির (বনু নাযির), তাদেরকে আক্রমণের প্রথম ধাপেই তাদের বাড়ী-ঘর থেকে বহিস্কার করেছেন। তোমরা ধারণাও করতে পারনি যে, তারা বের হবে এবং তারা মনে করেছিল যে, তাদের দূর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহর শাস্তি তাদের উপর এমনদিক থেকে আসল, যার কল্পনাও তারা করেনি। তিনি তাদের অন্তরে ত্রাস সঞ্চার করে দিলেন। তারা তাদের নিজেদের হাত দিয়েই নিজেদের বাড়ী-ঘর ধ্বংস করল এবং মুমিনদের হাতেও (ধ্বংস করছিল)। অতএব, হে দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষেরা! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” (৫৯: ২)
.
আমাদের ঘরগুলো যদি আদর্শ পরিবারের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠতো তবে কেমন হতো? ঘরগুলোকে নতুন করে সুশৃঙ্খল ও আদর্শ করাতে মু’মিনদের জন্য প্রেরণার উল্লেখ রয়েছে এই ক্ষেত্রগুলোতে:
.
১। নিজেকে আর নিজের পরিবারকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচানো। “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে। ” (৬৬: ৬)
.
২। কিয়ামতের দিন পরিবারের কর্তা সবচেয়ে বেশি দায় বয়ে বেড়াবে। আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন, “প্রত্যেক রাখালকে (দায়িত্ব অর্পনকৃত ব্যক্তি) আল্লাহ তার পাল (যার প্রতি দায়িত্ব) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন সে তার দেখাশোনা করেছে নাকি এড়িয়ে গেছে যতক্ষণ না তিনি একজন মানুষকে তার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন।“
.
৩। ঘর মানুষকে অন্যের খারাবী থেকে নিজেকে আর নিজের খারাবী থেকে অন্যকে বাঁচায়। ফিতনাহর সময় তাই ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। নবীয়ে পাক ﷺ বলেন, “ধন্য সেই যে নিজের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করে, যার ঘর তার জন্য যথেষ্ট আর যে নিজের ভুলে কাঁদে।“
তিনি ﷺ আরও বলেন, “ফিতনার সময় মানুষের নিরাপত্তা গৃহে অবস্থানে।“
.
একজন মুসলিম যখন বিদেশভূমে যায় তখন তার চারপাশে হারামরাজি তাকে এটা ভালো করেই মনে করিয়ে দেয়। ঘর (যেখানে তার স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি আছে) তাকে হারামের দিকে নজরের হেফাজত করে, তাকে খারাপ সঙ্গ থেকে বাঁচায়, বাঁচায় মন্দ কাজ থেকে।
.
৪। সুষ্ঠু মুসলিম সমাজ গড়ার জন্য ঘরের দিকে মনোযোগ দিতে হবে সর্বাগ্রে। প্রতিটা ঘর যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা হয়, তবে তা সমাজের খুঁটি যারা সমাজকে সঠিক রাস্তায় নেবে এমন উল্লেখযোগ্য দা’ঈ, জ্ঞানানুরাগী, আন্তরিক মুজাহিদ, পরহেজগার স্ত্রী, স্নেহময়ী মা, আর এমন সব ধরনের সংস্কারক একেকজন তৈরি করতে পারে।
.
(চলবে ইনশাআল্লাহ...)
.
সহায়ক গ্রন্থ: ঘরের জন্য ৪০ উপদেশ (শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ)

কালেক্তেড পোস্ট