ছেলেটা
খুব ভালোমানুষ ছিল। উদারপ্রাণ, হাসিখুশি, চঞ্চল, বন্ধুদের জন্য সবসময়
একপায়ে খাঁড়া। সেন্ট মার্টিনসের পিকনিকটা যেবার প্রায় বাতিল হতে গিয়েছিল,
একা মারুফই সেটাকে আটকে ফেললো! নিজের পকেটের টাকা খরচ করে, এর-ওর কাছে
দৌড়ে, বন্ধু-বান্ধব-ক্লাসমেটদের ফোন করে অস্থির করে ফেলে--যেভাবে পেরেছে
ও-ই সবাইকে রাজি করালো। আর যা ফূর্তিটা হলো সেবার, আহ!
মারুফ, তুই আজ কোথায়? হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে ধুঁকছিস। এতো ভালো মানুষের সাথে এমন কেন হয়?
হ্যাঁ, আমরা এমনটাই বলি। কেন ভালো মানুষেরা বিপদে পড়ে? কেন একটা অকস্মাৎ দুর্ঘটনা কিংবা একটা অচেনা নিষ্ঠুর রোগ এসে ভালো মানুষগুলোকেই আঘাত করে? ওদের কি বাঁচার অধিকার অন্যদের চেয়ে বেশি ছিল না?
এইসব ন্যাকামি আবেগী কথা দেখলে ইদানিং বড়ো জ্বালা হয়। আরেহ, ভালো মানুষের তুই কি চিনিস? নবী-রাসূল, সাহাবী ওরা কি ভালো মানুষ ছিল না?
আমাদের চোখে ভালো মানুষের সংজ্ঞাটাও বড্ড সংকীর্ণ হয়ে গেছে।
এক সাহাবী এসে নবীজির (সা) গায়ে পরা চাদরটা চাইলো, সেই একটা মাত্র চাদরই উনার ছিল তখন, তবুও বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে সঙ্গে সঙ্গে গা থেকে খুলে চাদরটা দিয়ে দিলেন।
নবীজি (সা) যুদ্ধের জন্য টাকা চাইলেন, সাহাবী আবু বকর এসে তাঁর সমস্ত সম্পদই দিয়ে দিলেন! আমাদের মতো দু'-চারশ টাকার ডোনেশন না, পুরো সম্পদ, ঘরে কিছুই ফেলে এলেন না।
খলিফা উমার (রা) তাঁর রাতের আরামের ঘুমটা বাদ দিয়ে বেরোতেন শহরের মানুষদের হালচাল বুঝতে, এক মহিলা খাওয়ার কষ্টে ছিলেন দেখে নিজে গিয়ে কাঁধে চেপে খাবারের বস্তা নিয়ে এলেন, নিজের হাতে রান্না করলেন, মহিলা আর তার বাচ্চাদের খেতে দিলেন।
পারবো আমরা এতো উদার হতে, এতো ভালো হতে? পারবো এভাবে নিজেকে অন্যের জন্য বিলিয়ে দিতে? এমন কতশত কাহিনি আছে। সত্যি কাহিনি--নবীজি আর সাহাবীদের কাহিনি।
আমাদের কাছে এখন নবী-রাসূল-সাহাবীদের গল্প অবাস্তব লাগে। হুমায়ূন আহমেদের মেকি হিমুর গল্প পড়ে আমরা চোখের জল ফেলি। নবীদের কাহিনি পড়লে, সাহাবীদের কাহিনি জানলে বুঝতাম, ভালোমানুষ কাকে বলে।
অথচ এরপরও কিন্তু তাদের সাথে খারাপ হয়েছে। বিপদ এসে আছড়ে পড়েছে মাথার ওপর। নবী আইয়ুব (আ) থকথকে রোগ নিয়ে দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে থাকেন, একা-নিঃসঙ্গ জীবন। নবী ইউসুফকে (আ) তার আপন ভাইয়েরা ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় কুয়ার মধ্যে। নবীজি (সা) কে ডাকা হয় পাগল! নামাজের সময় তাঁর গায়ের ওপর পশুর নাড়িভুড়ি চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করে ফেলা হয়, আল্লাহর ইচ্ছায় এক এক করে মারা যায় তাঁর সব কয়টা ছেলে সন্তান...
সাহাবীদের ওপর তো অত্যাচার, নির্যাতন, এমনকি অন্যায়ভাবে তাদেরকে হত্যা করার ঘটনাও প্রচুর! দুনিয়ার সবচাইতে সেরা মানুষগুলো ছিলেন তাঁরা, তারপরও কেন তাদের ভাগ্যে এতো কষ্ট? কারণটা হলো--এই দুনিয়াটা পরীক্ষার জায়গা। যারা মনে করছে এই পৃথিবীতে তারা সারাজীবন থাকবে, তারা ভুল ভাবছে।
আল্লাহ বলেছেন, "অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।" [সূরা বাক্বারা: আয়াত ১৫৫]
আর হাদীসে আছে, "আল্লাহর রাসূলকে জিজ্ঞেস করা হলো,
- ইয়া আল্লাহর রাসূল, সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা এসে পড়বে কাদের ওপর?
তিনি উত্তর দিলেন, নবী-রাসূলকে, এরপর তাদের পরে যারা সেরা তাদের ওপর। বান্দা তার ঈমানের পরিমাণ অনুপাতে পরীক্ষিত হবে। যদি সে তার দ্বীনের ব্যাপারে মজবুত হয় তাহলে তার পরীক্ষাও কঠিন হবে, আর যদি সে দ্বীনের ব্যাপারে দুর্বল হয় তাহলে তার দ্বীনের পরিধি অনুযায়ী তাকে পরীক্ষা করা হবে, এভাবে বান্দার ওপর বিপদ-আপদ আসতেই থাকবে, আর এর মধ্য দিয়ে একটা সময় এমন হবে যে সে নিষ্পাপ হয়ে যাবে।" [তিরমিযির হাদিস আমি নিজের ভাষায় লিখলাম।]
বিপদ-আপদ দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে কী হয়?
এক. আল্লাহ আমাদেরকে পরীক্ষা করেন যে কে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে উন্নত। সুতরাং এটা হলো নিজের অবস্থান বোঝার একটা পদ্ধতি। ওপরের হাদীস থেকে বোঝাই যাচ্ছে, বেশি ঈমান থাকলে বিপদাপদের পরিমাণও বেশি হবে।
দুই. বিপদ-আপদের মধ্য দিয়ে অটোমেটিকালি আমাদের গুনাহ মাফ হতে থাকে।
তিন. যদি বিপদ-আপদের সময় আমরা ধৈর্য্য ধরি আর আল্লাহর পরীক্ষা নিয়ে হা-হুতাশ না করি, তাহলে আমাদের অনেক সওয়াব হয়।
চার. বিপদ-আপদ হলে আমরা আল্লাহর কাছাকাছি হওয়ার একটা সুযোগ পাই, আল্লাহকে বেশি করে ডাকি, আর এটাও বুঝতে পারি যে, এই দুনিয়াটা ক্ষণস্থায়ী, দুনিয়ার সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। পরকালের জান্নাত ছাড়া কোথাও চিরস্থায়ী সুখ, আনন্দ, সুসাস্থ্য বা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই।
আমরা যদি এই কথাগুলো জানি, তাহলে নেক্সট টাইম দুঃখ-কষ্ট হলেই গাধার মতো বলবো না- কেন আমার সাথেই এমন হলো? কেন ভালো মানুষটাকে আল্লাহ অকালে উঠায় নিয়ে গেলো? আমরা বুঝবো, এই পৃথিবীর জীবনটা অল্প সময়েরই, আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকেই বেশি পরীক্ষা করেন। সেই অর্থে বিপদ-আপদও একরকম ব্লেসিং! আমাদের গুনাহ মাফ হবে, আমরা সওয়াব পাবো! আল্লাহ জুলুম করেন না। আমাদের যতো বিপদ-আপদ-কষ্ট-বেদনা হচ্ছে, তার প্রত্যেকটার বিনিময় আখিরাতে মিটিয়ে দেওয়া হবে। শুধু দরকার ধৈর্য্যের সাথে অপেক্ষা করা, আর মনেপ্রাণে সত্যিই বিশ্বাস করা যে আল্লাহ আছেন, তিনি আমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দিবেন, ছোটো-বড়ো কোনো ভালো কাজকেই তিনি বাদ দিবেন না। আল্লাহ উত্তম দাতা, আল্লাহ সবচেয়ে ন্যায়বিচারক।
>> কালেক্টেড পোস্ট <<
মারুফ, তুই আজ কোথায়? হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে ধুঁকছিস। এতো ভালো মানুষের সাথে এমন কেন হয়?
হ্যাঁ, আমরা এমনটাই বলি। কেন ভালো মানুষেরা বিপদে পড়ে? কেন একটা অকস্মাৎ দুর্ঘটনা কিংবা একটা অচেনা নিষ্ঠুর রোগ এসে ভালো মানুষগুলোকেই আঘাত করে? ওদের কি বাঁচার অধিকার অন্যদের চেয়ে বেশি ছিল না?
এইসব ন্যাকামি আবেগী কথা দেখলে ইদানিং বড়ো জ্বালা হয়। আরেহ, ভালো মানুষের তুই কি চিনিস? নবী-রাসূল, সাহাবী ওরা কি ভালো মানুষ ছিল না?
আমাদের চোখে ভালো মানুষের সংজ্ঞাটাও বড্ড সংকীর্ণ হয়ে গেছে।
এক সাহাবী এসে নবীজির (সা) গায়ে পরা চাদরটা চাইলো, সেই একটা মাত্র চাদরই উনার ছিল তখন, তবুও বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে সঙ্গে সঙ্গে গা থেকে খুলে চাদরটা দিয়ে দিলেন।
নবীজি (সা) যুদ্ধের জন্য টাকা চাইলেন, সাহাবী আবু বকর এসে তাঁর সমস্ত সম্পদই দিয়ে দিলেন! আমাদের মতো দু'-চারশ টাকার ডোনেশন না, পুরো সম্পদ, ঘরে কিছুই ফেলে এলেন না।
খলিফা উমার (রা) তাঁর রাতের আরামের ঘুমটা বাদ দিয়ে বেরোতেন শহরের মানুষদের হালচাল বুঝতে, এক মহিলা খাওয়ার কষ্টে ছিলেন দেখে নিজে গিয়ে কাঁধে চেপে খাবারের বস্তা নিয়ে এলেন, নিজের হাতে রান্না করলেন, মহিলা আর তার বাচ্চাদের খেতে দিলেন।
পারবো আমরা এতো উদার হতে, এতো ভালো হতে? পারবো এভাবে নিজেকে অন্যের জন্য বিলিয়ে দিতে? এমন কতশত কাহিনি আছে। সত্যি কাহিনি--নবীজি আর সাহাবীদের কাহিনি।
আমাদের কাছে এখন নবী-রাসূল-সাহাবীদের গল্প অবাস্তব লাগে। হুমায়ূন আহমেদের মেকি হিমুর গল্প পড়ে আমরা চোখের জল ফেলি। নবীদের কাহিনি পড়লে, সাহাবীদের কাহিনি জানলে বুঝতাম, ভালোমানুষ কাকে বলে।
অথচ এরপরও কিন্তু তাদের সাথে খারাপ হয়েছে। বিপদ এসে আছড়ে পড়েছে মাথার ওপর। নবী আইয়ুব (আ) থকথকে রোগ নিয়ে দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে থাকেন, একা-নিঃসঙ্গ জীবন। নবী ইউসুফকে (আ) তার আপন ভাইয়েরা ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় কুয়ার মধ্যে। নবীজি (সা) কে ডাকা হয় পাগল! নামাজের সময় তাঁর গায়ের ওপর পশুর নাড়িভুড়ি চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করে ফেলা হয়, আল্লাহর ইচ্ছায় এক এক করে মারা যায় তাঁর সব কয়টা ছেলে সন্তান...
সাহাবীদের ওপর তো অত্যাচার, নির্যাতন, এমনকি অন্যায়ভাবে তাদেরকে হত্যা করার ঘটনাও প্রচুর! দুনিয়ার সবচাইতে সেরা মানুষগুলো ছিলেন তাঁরা, তারপরও কেন তাদের ভাগ্যে এতো কষ্ট? কারণটা হলো--এই দুনিয়াটা পরীক্ষার জায়গা। যারা মনে করছে এই পৃথিবীতে তারা সারাজীবন থাকবে, তারা ভুল ভাবছে।
আল্লাহ বলেছেন, "অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।" [সূরা বাক্বারা: আয়াত ১৫৫]
আর হাদীসে আছে, "আল্লাহর রাসূলকে জিজ্ঞেস করা হলো,
- ইয়া আল্লাহর রাসূল, সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা এসে পড়বে কাদের ওপর?
তিনি উত্তর দিলেন, নবী-রাসূলকে, এরপর তাদের পরে যারা সেরা তাদের ওপর। বান্দা তার ঈমানের পরিমাণ অনুপাতে পরীক্ষিত হবে। যদি সে তার দ্বীনের ব্যাপারে মজবুত হয় তাহলে তার পরীক্ষাও কঠিন হবে, আর যদি সে দ্বীনের ব্যাপারে দুর্বল হয় তাহলে তার দ্বীনের পরিধি অনুযায়ী তাকে পরীক্ষা করা হবে, এভাবে বান্দার ওপর বিপদ-আপদ আসতেই থাকবে, আর এর মধ্য দিয়ে একটা সময় এমন হবে যে সে নিষ্পাপ হয়ে যাবে।" [তিরমিযির হাদিস আমি নিজের ভাষায় লিখলাম।]
বিপদ-আপদ দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে কী হয়?
এক. আল্লাহ আমাদেরকে পরীক্ষা করেন যে কে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে উন্নত। সুতরাং এটা হলো নিজের অবস্থান বোঝার একটা পদ্ধতি। ওপরের হাদীস থেকে বোঝাই যাচ্ছে, বেশি ঈমান থাকলে বিপদাপদের পরিমাণও বেশি হবে।
দুই. বিপদ-আপদের মধ্য দিয়ে অটোমেটিকালি আমাদের গুনাহ মাফ হতে থাকে।
তিন. যদি বিপদ-আপদের সময় আমরা ধৈর্য্য ধরি আর আল্লাহর পরীক্ষা নিয়ে হা-হুতাশ না করি, তাহলে আমাদের অনেক সওয়াব হয়।
চার. বিপদ-আপদ হলে আমরা আল্লাহর কাছাকাছি হওয়ার একটা সুযোগ পাই, আল্লাহকে বেশি করে ডাকি, আর এটাও বুঝতে পারি যে, এই দুনিয়াটা ক্ষণস্থায়ী, দুনিয়ার সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। পরকালের জান্নাত ছাড়া কোথাও চিরস্থায়ী সুখ, আনন্দ, সুসাস্থ্য বা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই।
আমরা যদি এই কথাগুলো জানি, তাহলে নেক্সট টাইম দুঃখ-কষ্ট হলেই গাধার মতো বলবো না- কেন আমার সাথেই এমন হলো? কেন ভালো মানুষটাকে আল্লাহ অকালে উঠায় নিয়ে গেলো? আমরা বুঝবো, এই পৃথিবীর জীবনটা অল্প সময়েরই, আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকেই বেশি পরীক্ষা করেন। সেই অর্থে বিপদ-আপদও একরকম ব্লেসিং! আমাদের গুনাহ মাফ হবে, আমরা সওয়াব পাবো! আল্লাহ জুলুম করেন না। আমাদের যতো বিপদ-আপদ-কষ্ট-বেদনা হচ্ছে, তার প্রত্যেকটার বিনিময় আখিরাতে মিটিয়ে দেওয়া হবে। শুধু দরকার ধৈর্য্যের সাথে অপেক্ষা করা, আর মনেপ্রাণে সত্যিই বিশ্বাস করা যে আল্লাহ আছেন, তিনি আমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দিবেন, ছোটো-বড়ো কোনো ভালো কাজকেই তিনি বাদ দিবেন না। আল্লাহ উত্তম দাতা, আল্লাহ সবচেয়ে ন্যায়বিচারক।
>> কালেক্টেড পোস্ট <<