বাবা, তার ক্লাস নাইন পড়ুয়া ছেলেকে বললেন, ‘যাও তো বাবা, ফ্রিজে যে মাখনের
খন্ডটা আছে ওখান থেকে অল্প মাখন কেটে নিয়ে এসো’।
মা শুনতে পেয়ে হা হা করে তেড়ে এলেন, ‘বল কি? তুমি কোন সাহসে ওকে মাখন কাটতে পাঠাচ্ছ? ও হাত কেটে ফেলবে!’
বাসায় মেহমান এসেছে, মা শুয়ে আছেন দেখে বাবা সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েটিকে বললেন, ‘চাচার জন্য এক কাপ চা আর ক’টা বিস্কিট নিয়ে এসো’। মেয়ে গিয়ে বুয়াকে ধাক্কা দিয়ে শোয়া থেকে তুলে দিল, ‘বুয়া, চা বানাও, আক্কাস চাচা এসেছেন, তাঁকে নাস্তা দাও’। বুয়া তখন মাত্র সারাদিনের কাজ সেরে শুয়েছেন। ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে তুলে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে তিনি আক্কাস সাহেবের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলেন।
ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে, কলেজ পড়ুয়া ছেলে নিজের রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসে গান শুনছে। দরজায় কলিং বেলের শব্দ পেয়ে মেয়ে আওয়াজ দিল, ‘আম্মু, দরজায় কে এসেছে দেখ’! আম্মু রান্নাঘরে ঘর্মাক্ত ব্যতিব্যস্ত, শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে ছুটলেন দরজায় কে দেখতে। ওদিকে সারতে না সারতেই ফোন বাজতে শুরু করল, ছেলে রুম থেকে হাঁক দিয়ে বলল, ‘আম্মু, ফোন ধর, ফোন বাজছে’! আম্মু আঁচল দিয়ে গলা বেয়ে গড়িয়ে পড়া ঘাম মুছতে মুছতে ছেলের রুমের সামনে রাখা ফোনটা ধরতে দৌড় দিলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হোল, ‘কিয়ামত কবে হবে?’ তিনি বললেন, ‘এ বিষয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ব্যাতীত আর কেউ জানেনা’। তখন তাঁকে অনুরোধ করা হোল কিয়ামত সমাগত হবার কিছু লক্ষণ বলে দেয়ার জন্য যেন আমরা সাবধান হতে পারি। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লক্ষণ সম্পর্কে বলেছেন, তার একটি হোল, ‘যখন দাসীরা তাদের মনিবদের জন্ম দেবে’, অর্থাৎ যখন সন্তানরা তাদের মায়েদের সাথে দাসীসদৃশ ব্যাবহার করবে। এই ঘটনা কি এখন অহরহ ঘটছেনা?
আমরা কেউ মুসয়াব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর চেয়ে বেশী আদর বা বিলাসিতায় বড় হয়েছি বলে দাবী করতে পারিনা, অথচ ‘আমি কিছু পারিনা’ বলে আনন্দ পাই।
আমরা কেউ আমাদের পিতামাতা উকবার মত ইসলামবিদ্বেষী বলে দাবী করতে পারিনা অথচ ইসলামের অনুসরণ করতে অলসতা করি।
আমরা কেউ মদীনার ঐ ক্ষুদ্র কিশোরদের পরিমাণ বুদ্ধিবৃত্তিক পরিপক্কতা ধারণ করিনা অথচ নিজের মত প্রতিষ্ঠা করার জন্য গালাগাল, হাতাহাতি, মারামারি থেকে হত্যা পর্যন্ত করে ফেলতে প্রস্তুত!
তাহলে আমরা কিভাবে নিজেদের প্রস্তুত করব একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে? মা যদি আদর করে বলে, ‘ও এই কাজটা পারবেনা’, আমরা কেন হেসে তাঁকে আশ্বস্ত করিনা, ‘কেন পারবনা মা, একবার করতে দিয়েই দেখনা!’ বাবা বলার আগেই কেন লক্ষ্য করার চেষ্টা করিনা পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি আমার পরিবারের জন্য কি করতে পারি? কেন ভাবিনা যে মানুষটা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমার পরিবারের জন্য কাজ করে তাকে একদিন চা বানিয়ে খাওয়াই? কেন আমাদের মাথায় আসেনা আমরা মাকে সেবা করে তাঁর পায়ের নীচে বেহেস্তের চাবিটা হস্তগত করি? কেন আমাদের জ্ঞান অর্জন এবং চর্চার প্রতি এত অনীহা?
আজ আমাদের যে শক্তি, উদ্যম, উদ্দীপনা তা কিন্তু চিরস্থায়ী নয়। আমার দাদা একসময় জোয়ান সুপুরুষ ছিলেন, আমার দাদী একসময় সুন্দরী ষোড়শী তন্বি তরুণী ছিলেন। আজ তাদের দেখে কি আমরা তা কল্পনাও করতে পারি? আমাদের এই রঙ্গীন দিনগুলোও কিন্তু চিরকাল রইবেনা। সুতরাং আমাদের আজই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে আগামী দিনের জন্য।
আমরা যারা আজকে কিশোর কিশোরী তারাই কিন্তু কাল মুসয়াব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মত যুবক, উম্মু কুলসুম বিন্ত উকবা রাদ্বিয়াল্লাহুর মত যুবতী হব।
সুতরাং, আজই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা সিনেমা-টেলিভিশন, ফেসবুক-টুইটার, মোবাইল-চ্যাটিং, প্রেম-ফ্রেম জাতীয় ফলাফলশূন্য কাজে আজকের দিনটা ব্যায় করে কাল হায় হায় করব;
নাকি লেখাপড়া, সৎকাজের অনুশীলন, চরিত্র গঠন, সামাজিক সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীলতার চর্চার মাধ্যমে আমার আজকে আমার আগামীর উত্তরণের জন্য সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করব?
★লেখিকা rehenuma binte anis আপুর একটি লেখার কিছু অংশ★
মা শুনতে পেয়ে হা হা করে তেড়ে এলেন, ‘বল কি? তুমি কোন সাহসে ওকে মাখন কাটতে পাঠাচ্ছ? ও হাত কেটে ফেলবে!’
বাসায় মেহমান এসেছে, মা শুয়ে আছেন দেখে বাবা সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়েটিকে বললেন, ‘চাচার জন্য এক কাপ চা আর ক’টা বিস্কিট নিয়ে এসো’। মেয়ে গিয়ে বুয়াকে ধাক্কা দিয়ে শোয়া থেকে তুলে দিল, ‘বুয়া, চা বানাও, আক্কাস চাচা এসেছেন, তাঁকে নাস্তা দাও’। বুয়া তখন মাত্র সারাদিনের কাজ সেরে শুয়েছেন। ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে তুলে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে তিনি আক্কাস সাহেবের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলেন।
ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে, কলেজ পড়ুয়া ছেলে নিজের রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসে গান শুনছে। দরজায় কলিং বেলের শব্দ পেয়ে মেয়ে আওয়াজ দিল, ‘আম্মু, দরজায় কে এসেছে দেখ’! আম্মু রান্নাঘরে ঘর্মাক্ত ব্যতিব্যস্ত, শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে ছুটলেন দরজায় কে দেখতে। ওদিকে সারতে না সারতেই ফোন বাজতে শুরু করল, ছেলে রুম থেকে হাঁক দিয়ে বলল, ‘আম্মু, ফোন ধর, ফোন বাজছে’! আম্মু আঁচল দিয়ে গলা বেয়ে গড়িয়ে পড়া ঘাম মুছতে মুছতে ছেলের রুমের সামনে রাখা ফোনটা ধরতে দৌড় দিলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হোল, ‘কিয়ামত কবে হবে?’ তিনি বললেন, ‘এ বিষয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ব্যাতীত আর কেউ জানেনা’। তখন তাঁকে অনুরোধ করা হোল কিয়ামত সমাগত হবার কিছু লক্ষণ বলে দেয়ার জন্য যেন আমরা সাবধান হতে পারি। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লক্ষণ সম্পর্কে বলেছেন, তার একটি হোল, ‘যখন দাসীরা তাদের মনিবদের জন্ম দেবে’, অর্থাৎ যখন সন্তানরা তাদের মায়েদের সাথে দাসীসদৃশ ব্যাবহার করবে। এই ঘটনা কি এখন অহরহ ঘটছেনা?
আমরা কেউ মুসয়াব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর চেয়ে বেশী আদর বা বিলাসিতায় বড় হয়েছি বলে দাবী করতে পারিনা, অথচ ‘আমি কিছু পারিনা’ বলে আনন্দ পাই।
আমরা কেউ আমাদের পিতামাতা উকবার মত ইসলামবিদ্বেষী বলে দাবী করতে পারিনা অথচ ইসলামের অনুসরণ করতে অলসতা করি।
আমরা কেউ মদীনার ঐ ক্ষুদ্র কিশোরদের পরিমাণ বুদ্ধিবৃত্তিক পরিপক্কতা ধারণ করিনা অথচ নিজের মত প্রতিষ্ঠা করার জন্য গালাগাল, হাতাহাতি, মারামারি থেকে হত্যা পর্যন্ত করে ফেলতে প্রস্তুত!
তাহলে আমরা কিভাবে নিজেদের প্রস্তুত করব একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে? মা যদি আদর করে বলে, ‘ও এই কাজটা পারবেনা’, আমরা কেন হেসে তাঁকে আশ্বস্ত করিনা, ‘কেন পারবনা মা, একবার করতে দিয়েই দেখনা!’ বাবা বলার আগেই কেন লক্ষ্য করার চেষ্টা করিনা পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি আমার পরিবারের জন্য কি করতে পারি? কেন ভাবিনা যে মানুষটা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমার পরিবারের জন্য কাজ করে তাকে একদিন চা বানিয়ে খাওয়াই? কেন আমাদের মাথায় আসেনা আমরা মাকে সেবা করে তাঁর পায়ের নীচে বেহেস্তের চাবিটা হস্তগত করি? কেন আমাদের জ্ঞান অর্জন এবং চর্চার প্রতি এত অনীহা?
আজ আমাদের যে শক্তি, উদ্যম, উদ্দীপনা তা কিন্তু চিরস্থায়ী নয়। আমার দাদা একসময় জোয়ান সুপুরুষ ছিলেন, আমার দাদী একসময় সুন্দরী ষোড়শী তন্বি তরুণী ছিলেন। আজ তাদের দেখে কি আমরা তা কল্পনাও করতে পারি? আমাদের এই রঙ্গীন দিনগুলোও কিন্তু চিরকাল রইবেনা। সুতরাং আমাদের আজই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে আগামী দিনের জন্য।
আমরা যারা আজকে কিশোর কিশোরী তারাই কিন্তু কাল মুসয়াব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মত যুবক, উম্মু কুলসুম বিন্ত উকবা রাদ্বিয়াল্লাহুর মত যুবতী হব।
সুতরাং, আজই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা সিনেমা-টেলিভিশন, ফেসবুক-টুইটার, মোবাইল-চ্যাটিং, প্রেম-ফ্রেম জাতীয় ফলাফলশূন্য কাজে আজকের দিনটা ব্যায় করে কাল হায় হায় করব;
নাকি লেখাপড়া, সৎকাজের অনুশীলন, চরিত্র গঠন, সামাজিক সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীলতার চর্চার মাধ্যমে আমার আজকে আমার আগামীর উত্তরণের জন্য সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করব?
★লেখিকা rehenuma binte anis আপুর একটি লেখার কিছু অংশ★
No comments:
Post a Comment
Plz spread this word to your friends