ফিলহাল-হালচাল-সমকাল:৭২
রাষ্ট্রধর্ম!
-
বাঙলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকা না থাকার মধ্যে আদতে কোনও পার্থক্য নেই। যেহেতু এই সংবিধান কুরআনী সংবিধান নয়। কুরআনী সংবিধানের প্রধান বক্তব্যই হলো ‘হুদুদ’। বলতে গেলে তার কিছুই বাঙলাদেশী সংবিধানে নেই। ড. কামাল হোসেনরা তাদের কমিউনিস্ট ভাবধারার আলোকেই এই সংবিধান রচনা করেছেন।
-
রাষ্ট্রধর্ম হিশেবে ইসলাম থাকার কারণে, সরকার ইসলামবিরোধী কোনও আইন করতে লজ্জা পাচ্ছে, এমন নয়। তারা যখন যা ইচ্ছে আইন পাশ করেই নিচ্ছে। তাহলে তুলে দিতে চাচ্ছে কেন?
= তারা তো জানে, এমনটা করতে গেলে, তাদের ভোট কমে যাওয়ার আশংকা আছে, ইসলামবিরোধী দল হিশেবে স্থায়ী ট্যাগ লেগে যাবে! তারপরও কেন এ-ব্যাপারে উৎসাহ?
(এক) খেয়াল করলে দেখা যাবে, রাষ্ট্রধর্মের বিরুদ্ধে আবেদনকারী ১১ জনের সবাই হিন্দু। এবং প্রায় সবাই ভারতের একনিষ্ঠ এজেন্ট। এবং এরা বা এদের গুরুরাই বর্তমানে বাঙলাদেশের নীতি নির্ধারক। তারা চায় ভারতের মতো এদেশও সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হোক। নামকাওয়াস্তে হলেও।
.
(দুই) বাঙলাদেশের প্রতিটি সেক্টরকে ‘হিন্দুয়ায়ন’ করার কাজ প্রায় সম্পন্ন। রাষ্ট্রপ্রধান-প্রধানমন্ত্রী-স্পীকার ছাড়া প্রায় সবখানেই হিন্দুদের পদায়ন সম্পন্ন। ভবিষ্যতে যাতে অবশিষ্ট পদেও নির্বিঘ্নে কাজ সারা যায়, আগাম ব্যবস্থা করে রাখা হচ্ছে।
.
(তিন) সরকারের ঝুঁকি নেয়ার কারণ হলো, বাঙলাদেশের অমুসলিম ভোটগুলোকে একশ ভাগ নিজেদের জন্যে পাকাপোক্ত করে ফেলা। ভারতের সাথে সম্পর্কটা আরও নিবিড় করা। আর নিজ দলের মুসলিম ভোটারদের নিয়ে ভাবনা কিসের! নিরপেক্ষ ভোটারদেরকে ভোলাতে বেশি কিছু লাগে?
.
(চার) ইসলামের বিধানে টুপি পরা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু বাহ্যিকভাবে প্রতীক হিশেবে টুপিটা নামাযের চেয়েও শক্তিশালী। অন্তত সাময়িকভাবে হলেও। নামায তো সব সময় দেখানো যায় না। টুপি-দাড়ি-হিজাব হলো সাইনবোর্ড। সংবিধানে কী আছে না আছে, সেটা আপাতত বিবেচ্য নয়, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলো টুপির মতো। প্রথমেই এটা চোখে পড়বে। টুপি খুললে যেমন মাথার টাক দেখা যায়, ইসলামকে উঠিয়ে দিলেই সংবিধানের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ দেখানো সহজ হয়ে যাবে। সেজন্যই এত তোড়জোড়।
.
(পাঁচ) এখন আর ব্যাপারটা রাষ্ট্রধর্ম থাকা না থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়িয়েছে কুরআন আর বেদ-ত্রিপিটক-বাইবেলের লড়াই। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আর মুসলমানদের মর্যাদার প্রতীকি লড়াই।
.
(ছয়) আরও একটা ভয়ংকর বিষয়ও থাকতে পারে: মুসলমানরা এখন রাষ্ট্রধর্মের জন্যে লড়াই করছে। তার মানে মুসলমানরা এই সংবিধানকে মেনে নিচ্ছে বা সন্তুষ্ট থাকছে। অর্থাৎ মুসলমানদের জন্যে এমন সংবিধান থাকতে পারে। চলতে পারে। একটা মানবরচিত বিধান মুসলমানদের সংবিধান হতে পারে। শুধু রাষ্ট্রধর্মের মোড়কে ইসলামের টুপিটা পরিয়ে রাখলেই হলো।
.
(সাত) এটা ঠিক, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বহাল রাখার সংগ্রাম করার অর্থ এই নয়, সংবিধানকে মুসলমানদের জন্যে উপযোগী হিশেবে মেনে নেয়া হয়ে যাবে। কিন্তু এটুকু তো হবে, রাষ্ট্রধর্ম বহাল থাকলে মানুষ খুশিমনে চুপ হয়ে যাবে। প্রকারান্তরে ওটাও তাদের একটা সফলতা।
.
(আট) ধরা যাক, রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করা হলো। তখন? হুযুররা আন্দোলনে নামবে! আন্দোলনটা কিসের জন্যে হবে? নামকাওয়াস্তে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা নিয়ে!
তারমানে যাদের মেহনত করার কথা ছিল পুরো সংবিধানটাকেই বদলে সেখানে কুরআনকে বসানোর ব্যাপারে, আজ তাদেরকে নামাতে নামাতে একটা ‘খোসা’ পর্যন্ত নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
.
(নয়) এই যে পুরো দাবি থেকে ছাড়িয়ে শুধু ‘নামকাওয়াস্তে’ পর্যন্ত এনেছে, এটা করতে সময় লেগেছে দুই প্রজন্ম। আগামী এক প্রজন্ম পর কেমন হবে? তখন হুযুররা নামকাওয়াস্তের জন্যেও লড়বে না। এখানেই তাদের সফলতা।
.
(দশ) তাহলে কি আমরা চুপ থাকবো? কিছুই বলবো না?
= উঁহু সেটা বলছি না। আমরা আপাতত খোলসটুকুর জন্যেই লড়বো। পাশাপাশি আমরা আজ কোথায় নেমে এসেছি বা আমাদেরকে কোথায় নামিয়ে আনা হয়েছে, সেটার দিকেও সচেতন মনোযোগ রাখবো। আমরা শুধু নামকাওয়াস্তে রাষ্ট্রধর্ম নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে যাবো না।
.
(এগার) নামকাওয়াস্তে হলেও, এর মূল্যও কম নয়। এই সামান্য খোলসটুকুও কুফর-হুনুদের গায়ে জ্বালা ধরায়। কুরআন কারীম তো বলেছেই (লিয়াগীযাল কুফফার) কাফিরদেরকে যা ক্রুদ্ধ করে, সেটা করতে। শুধু এটুকু মনে রাখতে হবে, আমাদের এখানেই থেমে গেলে চলবে না। সারাক্ষণ মনে প্রশ্ন রাখতে হবে:
= আমরা কি এই সংবিধান চেয়েছিলাম? আল্লাহ এই সংবিধান চান?
.
(বারো) টুপির যথার্থ স্থান কোনটা? অবশ্যই মাথা। টুপিটাকে যদি একটা গাছের আগায় বা অন্য কোনও প্রাণীর মাথায় রাখি? সেটা হবে টুপির চরম অবমাননা। আমাদেরকে ভাবতে হবে, একটা ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের মাথায় ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ব্যাপারটা ‘অন্যকিছুর’ মাথায় টুপি পরিয়ে রাখার মতো হয়ে যাচ্ছে না তো!
.
(তেরো) রাষ্ট্রধর্মের জন্যে জান লড়িয়ে মেহনত করবো। কিন্তু মূল সংবিধানকে ভুলে গেলে চলবে না:
= আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণ করো না। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী শাসন করে না, তারাই কাফের (মায়েদা: ৪৪)।
= আমরা পুরো সংবিধান (কুরআন) ছেড়ে শুধু নামকাওয়াস্তে রাষ্ট্রধর্মের জন্যে লড়ে, অল্পমূল্য গ্রহণ করে ফেলছি না তো!
= আর দ্বিতীয় অংশ? তারা কি আল্লাহর নাযিল করার বিধান দিয়ে শাসন করছে? যদি না করে, তাহলে তারা কী? আয়াতের অর্থ বুঝতে কি কোনও সমস্যা হয়?
.
(চৌদ্দ) আরেকটা আয়াতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেই শেষ করে দিচ্ছি:
= আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে, আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে। তারা তাগুতের কাছে বিচার (ফায়সালা) চাইতে যায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন তাকে (তাগুতকে) না মানে! (নিসা: ৬০)।
= একটা বিষয় পরিষ্কার করতে হবে: আমরা যাদের কাছে বিচারের দাবী নিয়ে যাচ্ছি, তারা তাগুত নাকি হক! কোনটা? মাঝামাঝি কোনও কিছু নেই।
.
= তারা যদি হকপক্ষীয় না হয়, তাহলে নিজেদের আকীদার দিকে চৌকান্না থাকতে হবে। আমরা রাষ্ট্রধর্মের দাবী যে করছি, সেটা তাদের কাছে আবেদন বা বিচার চাওয়ার ভঙ্গিতে নয়, তাগুতের বিরুদ্ধে লড়ছি, এই আকীদার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে করতে হবে। না হলে কিন্তু ঈমান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে!
.
= আমরা যাই করবো, বিচার চাওয়া বা ফয়সালা চাওয়ার ভঙ্গিতে নয়, তাগুতকে বাধ্য করার ভঙ্গিতে করবো। আকীদা-নিয়তে থাকবে:
-আমরা তাগুতবিরোধী অবস্থান শুরু করেছি।
-এখানেই আমরা থেমে যাবো না।
-আমরা আপাতত দুর্বল বলেই শুরুটা নিরীহ হয়েছে হয়তো! কিন্তু ......।
-আমরা টুপির জন্যে লড়লেও, মনে রাখতে হবে, টুপির নিচে কিন্তু মুমিনের মাথা নেই, আছে তাগুতের ‘মগজ’।
-টুপি দিয়ে শুরু হয়েছে, কিন্তু মগয ঠিক না করে থেমে যাওয়া চলবে না।
.
(পনের) আবারও বলছি:
= তাগুত (গণতন্ত্র)-এর কাছে বিচার চাওয়া একপ্রকার কুফুরি।
= বিচার চাওয়ার ভঙ্গিতে নয়, ফায়সালা চাওয়ার আকীদায় নয়। তাহলে ঈমান চলে যাওয়ার সমূহ আশংকা। আমরা চূড়ান্ত লড়াই শুরু করেছি। বিচার চাওয়া নয়, আমরা জোর করে আমাদের অধিকার আদায় করছি, এই আকীদা সবসময় হাযির রাখতে হবে।
= আর টুপিটা চূড়ান্ত ‘অধিকার’ নয়। শুরু মাত্র।
= আর যে পদ্ধতিতে অধিকার আদায়ে নেমেছি, সে পদ্ধতিটা একমাত্র ও অব্যর্থ নয়। রাজপথ বা ফেসবুকও নয়। এসব সাময়িক হিশেবে চলতে পারে। কার্যকর কৌশল এটা নয়: আওর কুচ!
রাষ্ট্রধর্ম!
-
বাঙলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকা না থাকার মধ্যে আদতে কোনও পার্থক্য নেই। যেহেতু এই সংবিধান কুরআনী সংবিধান নয়। কুরআনী সংবিধানের প্রধান বক্তব্যই হলো ‘হুদুদ’। বলতে গেলে তার কিছুই বাঙলাদেশী সংবিধানে নেই। ড. কামাল হোসেনরা তাদের কমিউনিস্ট ভাবধারার আলোকেই এই সংবিধান রচনা করেছেন।
-
রাষ্ট্রধর্ম হিশেবে ইসলাম থাকার কারণে, সরকার ইসলামবিরোধী কোনও আইন করতে লজ্জা পাচ্ছে, এমন নয়। তারা যখন যা ইচ্ছে আইন পাশ করেই নিচ্ছে। তাহলে তুলে দিতে চাচ্ছে কেন?
= তারা তো জানে, এমনটা করতে গেলে, তাদের ভোট কমে যাওয়ার আশংকা আছে, ইসলামবিরোধী দল হিশেবে স্থায়ী ট্যাগ লেগে যাবে! তারপরও কেন এ-ব্যাপারে উৎসাহ?
(এক) খেয়াল করলে দেখা যাবে, রাষ্ট্রধর্মের বিরুদ্ধে আবেদনকারী ১১ জনের সবাই হিন্দু। এবং প্রায় সবাই ভারতের একনিষ্ঠ এজেন্ট। এবং এরা বা এদের গুরুরাই বর্তমানে বাঙলাদেশের নীতি নির্ধারক। তারা চায় ভারতের মতো এদেশও সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হোক। নামকাওয়াস্তে হলেও।
.
(দুই) বাঙলাদেশের প্রতিটি সেক্টরকে ‘হিন্দুয়ায়ন’ করার কাজ প্রায় সম্পন্ন। রাষ্ট্রপ্রধান-প্রধানমন্ত্রী-স্পীকার ছাড়া প্রায় সবখানেই হিন্দুদের পদায়ন সম্পন্ন। ভবিষ্যতে যাতে অবশিষ্ট পদেও নির্বিঘ্নে কাজ সারা যায়, আগাম ব্যবস্থা করে রাখা হচ্ছে।
.
(তিন) সরকারের ঝুঁকি নেয়ার কারণ হলো, বাঙলাদেশের অমুসলিম ভোটগুলোকে একশ ভাগ নিজেদের জন্যে পাকাপোক্ত করে ফেলা। ভারতের সাথে সম্পর্কটা আরও নিবিড় করা। আর নিজ দলের মুসলিম ভোটারদের নিয়ে ভাবনা কিসের! নিরপেক্ষ ভোটারদেরকে ভোলাতে বেশি কিছু লাগে?
.
(চার) ইসলামের বিধানে টুপি পরা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু বাহ্যিকভাবে প্রতীক হিশেবে টুপিটা নামাযের চেয়েও শক্তিশালী। অন্তত সাময়িকভাবে হলেও। নামায তো সব সময় দেখানো যায় না। টুপি-দাড়ি-হিজাব হলো সাইনবোর্ড। সংবিধানে কী আছে না আছে, সেটা আপাতত বিবেচ্য নয়, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলো টুপির মতো। প্রথমেই এটা চোখে পড়বে। টুপি খুললে যেমন মাথার টাক দেখা যায়, ইসলামকে উঠিয়ে দিলেই সংবিধানের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ দেখানো সহজ হয়ে যাবে। সেজন্যই এত তোড়জোড়।
.
(পাঁচ) এখন আর ব্যাপারটা রাষ্ট্রধর্ম থাকা না থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়িয়েছে কুরআন আর বেদ-ত্রিপিটক-বাইবেলের লড়াই। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আর মুসলমানদের মর্যাদার প্রতীকি লড়াই।
.
(ছয়) আরও একটা ভয়ংকর বিষয়ও থাকতে পারে: মুসলমানরা এখন রাষ্ট্রধর্মের জন্যে লড়াই করছে। তার মানে মুসলমানরা এই সংবিধানকে মেনে নিচ্ছে বা সন্তুষ্ট থাকছে। অর্থাৎ মুসলমানদের জন্যে এমন সংবিধান থাকতে পারে। চলতে পারে। একটা মানবরচিত বিধান মুসলমানদের সংবিধান হতে পারে। শুধু রাষ্ট্রধর্মের মোড়কে ইসলামের টুপিটা পরিয়ে রাখলেই হলো।
.
(সাত) এটা ঠিক, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বহাল রাখার সংগ্রাম করার অর্থ এই নয়, সংবিধানকে মুসলমানদের জন্যে উপযোগী হিশেবে মেনে নেয়া হয়ে যাবে। কিন্তু এটুকু তো হবে, রাষ্ট্রধর্ম বহাল থাকলে মানুষ খুশিমনে চুপ হয়ে যাবে। প্রকারান্তরে ওটাও তাদের একটা সফলতা।
.
(আট) ধরা যাক, রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করা হলো। তখন? হুযুররা আন্দোলনে নামবে! আন্দোলনটা কিসের জন্যে হবে? নামকাওয়াস্তে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা নিয়ে!
তারমানে যাদের মেহনত করার কথা ছিল পুরো সংবিধানটাকেই বদলে সেখানে কুরআনকে বসানোর ব্যাপারে, আজ তাদেরকে নামাতে নামাতে একটা ‘খোসা’ পর্যন্ত নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
.
(নয়) এই যে পুরো দাবি থেকে ছাড়িয়ে শুধু ‘নামকাওয়াস্তে’ পর্যন্ত এনেছে, এটা করতে সময় লেগেছে দুই প্রজন্ম। আগামী এক প্রজন্ম পর কেমন হবে? তখন হুযুররা নামকাওয়াস্তের জন্যেও লড়বে না। এখানেই তাদের সফলতা।
.
(দশ) তাহলে কি আমরা চুপ থাকবো? কিছুই বলবো না?
= উঁহু সেটা বলছি না। আমরা আপাতত খোলসটুকুর জন্যেই লড়বো। পাশাপাশি আমরা আজ কোথায় নেমে এসেছি বা আমাদেরকে কোথায় নামিয়ে আনা হয়েছে, সেটার দিকেও সচেতন মনোযোগ রাখবো। আমরা শুধু নামকাওয়াস্তে রাষ্ট্রধর্ম নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে যাবো না।
.
(এগার) নামকাওয়াস্তে হলেও, এর মূল্যও কম নয়। এই সামান্য খোলসটুকুও কুফর-হুনুদের গায়ে জ্বালা ধরায়। কুরআন কারীম তো বলেছেই (লিয়াগীযাল কুফফার) কাফিরদেরকে যা ক্রুদ্ধ করে, সেটা করতে। শুধু এটুকু মনে রাখতে হবে, আমাদের এখানেই থেমে গেলে চলবে না। সারাক্ষণ মনে প্রশ্ন রাখতে হবে:
= আমরা কি এই সংবিধান চেয়েছিলাম? আল্লাহ এই সংবিধান চান?
.
(বারো) টুপির যথার্থ স্থান কোনটা? অবশ্যই মাথা। টুপিটাকে যদি একটা গাছের আগায় বা অন্য কোনও প্রাণীর মাথায় রাখি? সেটা হবে টুপির চরম অবমাননা। আমাদেরকে ভাবতে হবে, একটা ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের মাথায় ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ব্যাপারটা ‘অন্যকিছুর’ মাথায় টুপি পরিয়ে রাখার মতো হয়ে যাচ্ছে না তো!
.
(তেরো) রাষ্ট্রধর্মের জন্যে জান লড়িয়ে মেহনত করবো। কিন্তু মূল সংবিধানকে ভুলে গেলে চলবে না:
= আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণ করো না। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী শাসন করে না, তারাই কাফের (মায়েদা: ৪৪)।
= আমরা পুরো সংবিধান (কুরআন) ছেড়ে শুধু নামকাওয়াস্তে রাষ্ট্রধর্মের জন্যে লড়ে, অল্পমূল্য গ্রহণ করে ফেলছি না তো!
= আর দ্বিতীয় অংশ? তারা কি আল্লাহর নাযিল করার বিধান দিয়ে শাসন করছে? যদি না করে, তাহলে তারা কী? আয়াতের অর্থ বুঝতে কি কোনও সমস্যা হয়?
.
(চৌদ্দ) আরেকটা আয়াতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেই শেষ করে দিচ্ছি:
= আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে, আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে। তারা তাগুতের কাছে বিচার (ফায়সালা) চাইতে যায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন তাকে (তাগুতকে) না মানে! (নিসা: ৬০)।
= একটা বিষয় পরিষ্কার করতে হবে: আমরা যাদের কাছে বিচারের দাবী নিয়ে যাচ্ছি, তারা তাগুত নাকি হক! কোনটা? মাঝামাঝি কোনও কিছু নেই।
.
= তারা যদি হকপক্ষীয় না হয়, তাহলে নিজেদের আকীদার দিকে চৌকান্না থাকতে হবে। আমরা রাষ্ট্রধর্মের দাবী যে করছি, সেটা তাদের কাছে আবেদন বা বিচার চাওয়ার ভঙ্গিতে নয়, তাগুতের বিরুদ্ধে লড়ছি, এই আকীদার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে করতে হবে। না হলে কিন্তু ঈমান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে!
.
= আমরা যাই করবো, বিচার চাওয়া বা ফয়সালা চাওয়ার ভঙ্গিতে নয়, তাগুতকে বাধ্য করার ভঙ্গিতে করবো। আকীদা-নিয়তে থাকবে:
-আমরা তাগুতবিরোধী অবস্থান শুরু করেছি।
-এখানেই আমরা থেমে যাবো না।
-আমরা আপাতত দুর্বল বলেই শুরুটা নিরীহ হয়েছে হয়তো! কিন্তু ......।
-আমরা টুপির জন্যে লড়লেও, মনে রাখতে হবে, টুপির নিচে কিন্তু মুমিনের মাথা নেই, আছে তাগুতের ‘মগজ’।
-টুপি দিয়ে শুরু হয়েছে, কিন্তু মগয ঠিক না করে থেমে যাওয়া চলবে না।
.
(পনের) আবারও বলছি:
= তাগুত (গণতন্ত্র)-এর কাছে বিচার চাওয়া একপ্রকার কুফুরি।
= বিচার চাওয়ার ভঙ্গিতে নয়, ফায়সালা চাওয়ার আকীদায় নয়। তাহলে ঈমান চলে যাওয়ার সমূহ আশংকা। আমরা চূড়ান্ত লড়াই শুরু করেছি। বিচার চাওয়া নয়, আমরা জোর করে আমাদের অধিকার আদায় করছি, এই আকীদা সবসময় হাযির রাখতে হবে।
= আর টুপিটা চূড়ান্ত ‘অধিকার’ নয়। শুরু মাত্র।
= আর যে পদ্ধতিতে অধিকার আদায়ে নেমেছি, সে পদ্ধতিটা একমাত্র ও অব্যর্থ নয়। রাজপথ বা ফেসবুকও নয়। এসব সাময়িক হিশেবে চলতে পারে। কার্যকর কৌশল এটা নয়: আওর কুচ!