আমি একজন মুসলিম। কেবল নামে এবং উত্তরাধিকার সুত্রে :(

আমার এক বন্ধু সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র সেদিন বলছিল তাদের প্রতিটি প্রশ্নেই কিছু লাইন পর  পরই “we live in the society” লাইনটি থাকে। স্কুলে সমাজবিজ্ঞান বইতে আমরা সবাই পড়েছি “মানুষ সামাজিক জিব”। সমাজবিজ্ঞানের এই থিওরির সাথে ইসলামের কোন সংঘর্ষ নেই।
 সমাজবিজ্ঞানের “আদিম মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে” আর ইসলামের "আল্লাহর ইচ্ছায়” মানুষ সমাজবদ্ধ হয়েছে। সমাজবদ্ধ হয়ে সামাজিক জীব হিসেবে বেঁচে থাকার তাগিদে সৃষ্টি হয়েছে রীতি, নীতি, সংস্কৃতি, চিন্তাধারা। সৃষ্টি হয়েছে সমাজের সিস্টেম। যুগ যুগ ধরে মানুষের প্রয়োজনে সৃষ্ট এই সিস্টেমই মানুষকে শাসন করেছে,মানুষকে নিয়িন্ত্রন করেছে।
একজন মুসলিম  হিসেবে আমি  জানি আর  বিশ্বাস করি সমাজ তখনই সঠিক পথে থাকে এবং থাকবে যেখানে আল্লহর প্রদত্ত সিস্টেম মানুষকে পরিচালিত করবে।
এবং ইতিহাস থেকে আমরা তার প্রমাণও পাই।কালের বিবর্তনে, বড় মগজের মানুষের মনুষ্যত্বের পদস্খলনে ইসলামের সেই সোনালি অতীত থেকে আমরা শত শত বছর পরের বর্তমানে। ১৪০০ বছর আগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিষ্ঠিত ন্যায়, সত্য আর  মানবতার একমাত্র সমাধান সমাজ আর সিস্টেম থেকে অনেক দূরের আজকের এক যুবক এই সময়ের মনুষ্যত্বহীন নষ্ট এক সমাজের কথা লিখছি!

আমি একজন মুসলিম। নামে এবং উত্তরাধিকার সুত্রে। জীবনের অনেক বড় একটা অংশ পার করে এসে আমাকে বুঝতে হয়েছে ইসলাম আসলে কি জিনিশ। তাও একেবারে  initial stage থেকে।কারন কালের  বিবর্তনে আমাদের এই সমাজে ছেলে মেয়েদের ইসলাম শেখানোর বদলে রকমারি কুফরি আর দুনিয়াবি জ্ঞানে জ্ঞানী করা হয়েছে।“আল্লাহর জন্য আমাদের সবকিছু” এর বদলে শিখানো হয়েছে “দুনিয়ায় এই এই করতে হবে” “অমুক তমুক হতে হবে” “সবাই মিলে হ্যাপি ফ্যামেলি হয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে হবে”। কে শিখিয়েছে?? সমাজ শিখিয়েছে, সিস্টেম শিখিয়েছে!

ছোট বেলা থেকে তিন গোয়েন্দা, হুমায়ূন, জাফর ইকবাল দিয়ে মাথা ভরিয়েছি ইসলাম শেখার সুযোগ কই?? আজকে আমরা অর্থনীতি পড়ছি! ইসলামের নয়,অ্যাডাম স্মিথ এর! আজকে আমরা সাহিত্য পড়ছি! ইসলামের নয়, রবীন্দ্রনাথের! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় রবীন্দ্রনাথ আজ আমাদের গুরু! সকল আদর্শের  উৎস!আমরা সমাজের সিস্টেমের কথা জানছি! ইসলামের নয়, কার্ল মার্ক্সের! আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন এই সত্যকে পাশ কাটিয়ে ছোট বেলা থেকেই কচি মগজ ভারি করা হয়েছে ডারউইনবাদের গাঁজাখুরি তত্ত্ব দিয়ে! আমরা এগুলোই  শিখেছি, আমাদের ছোট  ছোট  বাচ্চাদের এখনো এগুলোই  শেখানো হচ্ছে!কে শেখাচ্ছে?? সমাজ শেখাচ্ছে, সিস্টেম শেখাচ্ছে! ইসলাম  বিবর্জিত হতে  হতে  আমাদের সিস্টেম এখন আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক তত্বে এনে ঠেকিয়েছে! আমরা আশরাফুল মাখলুখাত কেউ অসহায়, কেউ রামছাগল, কেউ হেকমতি বড়ির জোরে আর কেউ এই সিস্টেম এর অধিপতি হয়ে এই সিস্টেমেরই পূজা করছি! আমাদের মেনে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে!  আমাদের চেতন আর অবচেতন মনে মেনে নেওয়ার মানসিকতা অনেক আগের!

আমাদের সমাজের, এই  সিস্টেমের চেইন  কি?? মূল্যবোধ, নৈতিকতা, সত্যের জীবনবোধ! ভয়ঙ্কর দিকটা হল আমাদের সমাজ এসবের অবনতির extreme stage  এ  অবস্থান করছে! সমাজের আজ কোন চেইন নেই!রস্তার বিশাল বিশাল বিলবোর্ডে শরীর প্রদর্শনীর প্রতিযোগিতায় কাপড় ছোট হতে হতে এখন গাছের পাতা দিয়ে শরীর ঢাকার আদিম রীতির অনুসরনের সিস্টেম শুরু হয়েছে! এর পরের সংস্করণে কি আসবে আল্লাহ ভাল জানেন!এক ভাইয়ের লেখায় পড়েছিলাম তিনি বউ বাচ্চা নিয়ে রেস্টুরেন্ট এ খেতে গিয়ে দেখেন স্কুল ড্রেস পরা ছেলেমেয়েরা প্রকাশ্যে চুমু খাচ্ছে! তিনি জেনে হয়তো খুবই ব্যতীত হবেন সেই গ্রুপ চুমু এখন গ্রুপ সেক্স পর্যায়কেও ছাপিয়ে গেছে!

ভালোবাসার মত অতি পবিত্র বিষয়টাকে পুঁজি করে সমাজের চালিকাশক্তি এই তরুন তরুনিগুলোকেই  সবার আগে মূল্যবোধ আর নৈতিকতা বিবর্জিত করা হয়েছে! অনেক আগে আমরা দেখতাম রিকশায় কোন আপু আর ভাইয়া থাকলে আপুরা মুখে কাপড় দিয়ে রাখত কেউ দেখে ফেলার ভয়ে!সমাজ আমাদের আপু ভাইয়াদের এখন অনেক সাহসী করে তুলেছে!মুখ ঢাকার সতর্কতা এখন পথচারীর চোখ নামিয়ে নেওয়া বা বিনোদনের খোরাকে এসে ঠেকেছে! একসময় বাইকের পেছনে কোন আপু থাকলে কেমন আড়ষ্ট হয়ে থাকতো! এখন সিস্টেম পাল্টেছে ! সময়ের কাঁটা ঘোরার সাথে সাথে আপুদের কোমরও ঘোরেছে!! আপুরা এখন বাইকে ছেলেদের কায়দায় বসে! একটু আঁধার নামলে ঝোপে ঝাড়ে আড়ালে যে জায়গাগুলোতে হয়তো লাখ টাকা দিয়েও একা একা বসানো যেত না একজন সঙ্গি আর একটু গা গরমের ফ্যান্টাসির লোভে সেই জায়গাগুলোই মুখরিত হয়ে উঠে! সিস্টেম যেন পথে পথে উন্মুক্ত পতিতালয় সৃষ্টি করছে!এই কপোত কপোতীরা কাউকে কেয়ার করছে না, কাউকেই না!কাউকে কেয়ার না করা  নৈতিকটা বিবর্জিত এক প্রজন্ম আমাদের চোখের সামনেই গড়ে উঠছে! যারা এদের কেয়ার করার কথা তারাও এদের কেয়ার করছে না!তারা যে এই  ভয়ঙ্কর  corrupted সিস্টেমেরই অধিপতি!

ইসলাম বিবর্জিত সমাজের মানুষেরাও ইসলাম বিবর্জিত হবে এটাই স্বাভাবিক! রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইসলাম ছেড়ে আজ আমরা ভিন্ন এক ইসলাম বা মোডারেট ইসলামের ভিত্তি রচনা করেছি!আর তাই আজ ইসলাম শিখা  শুরু করে ভ্যাবাচ্যাকা  খেতে হয় কার ইসলাম সঠিক আর কারটা ভুল!! কার কাছে ইসলাম শিখবো? এই সিস্টেমে একজন নামাজ পড়বে সাথে টুপি রেখে ‘জীবনমুখী বাস্তবতার গান’ কিংবা ‘সামাজিক ছবি’ দেখতে বসবে! না হলে যে লোকে ক্ষ্যাত বলবে!লোকের কাছে cool হতে হবে! কে বলেছে?? সমাজ বলেছে, সিস্টেম বলেছে!

আমাদের সমাজ, আ্মাদের সিস্টেম সব ন্যায় অন্যায়, ভাল মন্দের ব্যাকরণ পাল্টে দিয়েছে!এই সমাযে সব দোষ পরিমলদের! হ্যাঁ  পরিমল তার দিক থেকে ১০০% অপরাধী, এতে কোন আপত্তি নেই! কিন্তু হে সমাজ! কেন তুই মেয়েটাকে নিষ্পাপ বানিয়ে রাখবি? কেন তুই তাকে বাস্তবতার discipline শেখাবি না? কেন তুই তাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবিনা যে সে বড় হয়েছে তার এখন হিজাব পরা উচিত! আজকের চতুর্দশী সব বোঝে, প্রেম বোঝে, boyfriend বোঝে, রিকশাতে মাখামাখি বোঝে আর কমবয়সী এক স্যারের বাসায় একা পড়তে বলার পেছনের ইঙ্গিতটা কেন বোঝবেনা? আর জগন্য সিস্টেমের পলিটিক্সটা হল এখানে পরিমলকে অপরাধী কিংবা মেয়েটাকে নিষ্পাপ বানানোয় ন্যায় অন্যায়ের কোন তোয়াক্কা নেই! আছে সিস্টেমের গ্রহণযোগ্যতা! কালকে আরেকটা একই ঘটনায় যদি পরিমলকে নিষ্পাপ আর মেয়েটাকে অপরাধী বানানো সিস্টেমে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে নোংরা সিস্টেম তাই করবে! এটাই  সিস্টেম! এই সিস্টেম হঠাৎ আকাশ থেকে নেমে আসেনি! আমরাই এই সিস্টেম তৈরি করেছি! আমরা কেউ এর দায় এড়াতে পারিনা!

আমাদের সিস্টেমটা প্রভাদের!এখানে প্রভাদের সুন্দর বিয়ে হয়! আমাদের প্রভারা স্বামীর হাত ধরে  ইউরোপে মধুচন্দ্রিমায় যায়! আর আমার মুমিন ভাইগুলা একটা বিয়া করার জন্য আহাজারি করে গভীর রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়! জগন্য একটা অতীত নিয়েও প্রভারা  দিব্যি  ঘুরে বেড়ায়! "আমি ফিরতে চাই"  পত্রিকার শিরোনামের পর ছাগলের বাচ্চা পয়দা হওয়ার মত নাটক  পয়দা করে আর ফেসবুকে সীসা  টানার এবং তার তিন পুরুষের বর্তমান পুরুষ বলদ স্বামীটার সাথে চুম্মাচুম্মির ছবি আপলোড করে! আর আদ্ভুত সিস্টেমের  চিরায়ত আবাল বাঙালি মুসলিম  "ওমা! প্রভা এতদিন পর??" চিৎকার দিয়ে  হা করে তার নাটক দেখতে বসে! আবার এই প্রভাদের  নিয়েই  জৈনক আকাইম্মা সুশীলকে বলতে দেখা যায় "একটা ছেলে আর একটা মেয়ে শারীরিক সম্পর্ক করবে এটা সমস্যা নয়, সমস্যা হয় যখন  বিশ্বাসটা ভাঙ্গে!" জেনা, ব্যবিচার এই  বিশয়গুলো খারাপ এটা শুধু বইয়ের পাতায় বাস্তবে দিন দিন আমাদের সিস্টেমে এগুলু স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে! সিস্টেম প্রভাদের সব অপরাধ ক্ষমা করে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে  শেখায়! আজকে পাড়ার হিজাবি মেয়েতা একটু  রাত  করে  বাসায়  ফিরলে "খাইছেরে! মাইয়াটারে তো ভালা মনে করছিলাম! এই তাইলে অবস্থা! ভিডিও লাগে না আবেগের ভুলে পা দিয়ে ভণ্ড কোন খাটাশের মোবাইল থেকে একটা ছবি বেরোলেই হিজাবি মেয়েটাকে নষ্টা মেয়ের ট্যাগ নিয়ে ফাঁস দিতে  হয়! সাদা কাগজে কালির একটা  ফোঁটাও স্পষ্ট দেখা যায়  কিন্তু যে কাগজ কুচকুচে কালো সেখানে কালি লাগলেই কি না লাগলেই কি!!

নৈতিকতা, মানবতা আর মনুষ্যত্ব বিবর্জিত এই সিস্টেমে ন্যায় অন্যায় কোন ফ্যাক্টর নয়! এখানে সব ন্যায় ক্ষমতাসীনদের আর সব  অন্যায় বিরোধীদের! এই বিষয়ে অন্য কোনদিন বলব!

যুগ যুগ ধরে আমাদের সিস্টেমের মুসলিমদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে মাথায় ঢুকানো হয়েছে ইউরোপ অ্যামেরিকা! সারাদিন ইসলামের কথা বলে মুসলিম যুবকদের তাই দেখা যায় আমেরিকার গ্রীন কার্ডের স্বপ্নে বিভোর! এ যেন স্বর্গের দরোজা!

ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে না পারলে জীবনটাই বৃথা! কয়েক হালি প্রেম করতে না পারলে কিসের স্মার্টনেস! বিয়ার পরও শান্তি নাই! হিন্দি সিরিয়াল থেকে প্রাপ্ত দিনে দুই বেলা ট্রেনিং নিয়ে পরকিয়ার প্র্যাকটিস সিস্টেমের পাবলিক ভালই  শিখেছে! গ্রামীণ ফোনের ২৫ পয়সা  মিনিটের বিজ্ঞাপন আর অফার তো আছেই সাহস যোগাতে! এই নৈতিকত কতোটা চরম অবনতির  মুখে তার সিম্পল  প্রেজেন্টেশন যেন প্রথম আলোর নকশায় আরেক আকাইম্মা সুশীলের সুবন্ধুসমিপেশু! যেখানে সুশীলের কাছে পরকীয়া, ব্যবিচার, নষ্টামিতে সফল ব্যর্থরা তাদের সফলতা ব্যর্থতার গল্প শোনায়! আমাদের আকাইম্মা সুশীল সফলদের বাহবা আর ব্যর্থদের সাহস দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চায় "সমাজে এইসব নোংরামির বৈধতা চাই"। কে জানে দুইদিন পর এ সুশীলদের কারো মুখে হয়তো সমকামীর বৈধতার আর্তি আসবে! এতোমধ্যেই ঘেঁটুপুত্রের কল্যাণে সিস্টেম যারা জানতো না তারাও জেনে গেছে সমকামিতা কি জিনিস!  নতুন প্রজন্ম নাকি প্রচুর গিলেছে এই ছবি! এখন এই সমাজে দুইটা ছেলে একটু অন্তরঙ্গ হলেই হয়তো সন্দেহ জাগবে! হায় সিস্টেম কোথায় এনে দাড় করালি আমাদের?? আল্লাহ আমাদের তরুণ প্রজম্নকে এই অমানুষিকতা থেকে রক্ষা কর... আমীন!

অনেক বকবক করলাম! আমার মনে হচ্ছে আমি আসল কিছুই লিখিনি! কয়েকটা পৃষ্ঠায় এই সিস্টেমের কথা বলা যায়না! আমি বলতেও চাইনি! আমি শুধু কয়েকটা প্রসঙ্গ এনে বোঝাতে চেয়েছি সিস্টেমটা ভরংকর রকম  corrupted হচ্ছে! তাহলে এর সমাধান কি? সমাধান একটাই! সিস্টেমটা পাল্টাতে হবে! তবে তা প্রগতি, আধুনিকতার নষ্টামি, ধর্মীয় নিরপেক্ষতার  আলোকে কোলকাতার ছবি "চলো পাল্টাই" কায়দায় নয়! আমি সেই সিস্টেমের কথাই বলছি যেখানে মূল্যবোধ, নৈতিকতা, শৃঙ্খলা আর ন্যায়  অন্যায়ের  ফারাক থাকবে! সত্য আর  মিথ্যার  স্পষ্ট মূল্যায়ন থাকবে! সেটা ইসলাম... ইসলাম... আল্লাহর শপথ সেটা ইসলামের সিস্টেম খিলাফা!ইসলামের সেই গৌরবোজ্জ্বল সময়টা ফিরিয়ে  আনতে হবে!

বেঁচে থাকার তাগিদে আমাদের সৃষ্ট সিস্টেম  আমাদেরই ধ্বংস করার আগে! কিন্তু তার আগে খিলাফার কিছু গরম গরম বক্তব্য ছেড়ে  কিংবা সদ্য পার্লার থেকে হাজার হাজার টাকার মেকাপ মেখে আসা নেত্রীকে সামনে চেয়ারে বসিয়ে নারায়ে তাকবীর রব তোলে যে এই সিস্টেম পাল্টানোর নয় সেই পলিটিক্সটা আমার মুসলিম ভাইদের বুঝতে হবে! আমেরিকা  কিংবা পাশ্চাত্য শক্তি আমাদের মতো দেশগুলোতে কুফরির শিকড় গেঁড়ে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে আছে তা এই সোনার বাংলার মানুষের প্রায় পুরো অংশেরই ধারনার বাইরে! আর তাই হিলারি যখন " বাংলাদেশ আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ " জাতীয় কথার  মধু ঢালে তখন সবকিছু দেখে  লাফ মারা আবাল বাঙ্গালী  মুসলিম  অন্তরে ঢুকিয়ে দেওয়া কাফেরদেরই জাতিয়তাবাদের অহমে কপালে আশ্চর্যবোধক চিন্তার ভাঁজ ফেলে বুলি ছাড়ে " দেখেছিস! আমেরিকা আমাদের ক্যামনে দাম দেয়??"


এই সিস্টেম পাল্টানোর জন্য জাতয়তাবাদের টুকরো টুকরো সীমানা ডিঙিয়ে এক মুসলিম উম্মাহ হয়ে একযোগে  আমাদের কাজ করতে হবে! সারাদিন খিলাফা খিলাফা বলে লাফিয়ে শুধু খিলাফার দাওয়া নয় সমাজে আগে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষের কাছে আল্লাহর একত্ববাদের ইসলাম পৌঁছাতে হবে। রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়ায (রাঃ) কে ইয়েমেনে  পাঠানোর সময়  অসিয়ত করেছিলেন এবং দাওয়াতের পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে বলেছিলেন

" সর্বপ্রথম তুমি তাদেরকে দাওয়াত দিবে  তারা যেন তাওহীদকে স্বীকার করে নেয়।" (সহিহ মুসলিম ৩১(১৯) তাওহীদ প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স,সহিহ বুখারিঃ ৭৩৭২) ।

গনতন্ত্রের পূজা করে কাটা দিয়ে কাটা তোলার মোটা মাথার হেকমত নয় চাই রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহর অনুসরণ।
 আমরা সিস্টেম পাল্টাতে চাই, কোন দলের ক্ষমতা নয়।
আমরা ইসলাম চাই, ন্যায় চাই, এক আল্লাহর শাসন চাই। মুক্তি চাই এই ভয়ঙ্কর corrupted  সিস্টেম থেকে! আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন... আমীন!

Article link  HERE

মুসলিম ভাইবোনদের বিষয়ে উত্তম ধারণা রাখা

মাগরিবের জাম'আতে ফরজ ৩ রাক'আত নামায শেষ করে বের হয়ে যাওয়া ভাইটির দিকে তাকিয়ে আপনি ভাবলেন
– "২ রাকআত সুন্নাত না পড়েই চলে গেলো এই ভাই?
সুন্নাতের বিষয়ে মানুষ বড়ই উদাসীন আজকাল।"
.
অথচ আপনি জানেন না – ভাইটি "মুসাফির"!

.
.
ইশার জাম'আতে ফরজ ৪ রাক'আত নামায শেষ করে বের হয়ে যাওয়া আরেক ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আপনি ভাবলেন – 

"সুন্নাত আর বিতর না পড়েই চলে গেলো এই ভাই?
 এই উম্মাহ কিভাবে উন্নতি করবে?"
.
অথচ আপনি জানেন না – সেই ভাই সুন্নাত নামায বাসায় পড়েন। আর বিতর পড়েন শেষ রাতে, তাহাজ্জুদের পর। আর নিশ্চয়ই সেটি উত্তম।
______
.
মুসলিম ভাইবোনদের বিষয়ে উত্তম ধারণা রাখার চেষ্টা করবো আমরা ইন-শা-আল্লাহ।


এক মুসলিম ভাই এর লেখা হতে নেয়া

যদি আপনি নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করেন, তাহলে সবার আগে নিজে সঠিক ইসলামকে জানুন।

ভুমিকা ঃ দ্বীনি বাবা-মা তথা দ্বীনি পরিবার আল্লাহ তায়ালার অন্যতম বিশেষ নেয়ামত গুলোর একটি।পরিবার ইসলাম সচেতন না অথচ আল্লাহর রহমতে কোন সন্তান যদি দ্বীনের পথে চলে আসে তবে সেই সন্তান হারে হারে টের পায় এই ঘাটতির ফল।
ছোটবেলায় আমি যখন অমুসলিম ছিলাম, প্রথম প্রথম মুসলিমদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা ছিল না। তাদের সম্পর্কে জানা প্রথম তথ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল যে তারা শুকরের মাংস খায় না। এটা খাওয়া নাকি “হারাম”। হারাম শব্দটাও এই শুকর দিয়েই শেখা।
তখন আমি খুব ছোট। বাসার কাজে সাহায্যকারী মেয়েটি ছিল আমাদের দুই বোনের খেলার সাথী। ওর কাছেই প্রথম শুনেছিলাম হিন্দুরা যেমন গরু খায় না, মুসলিমরা শুকরের মাংস খায় না। পরবর্তীতে স্কুলের মুসলিম সহপাঠী থেকে শুরু করে চেনাজানা অন্যান্য মুসলিমদের কাছে জেনেছিলাম যে শুকর নামের প্রানীটা এতটাই “হারাম”, যে এর নাম পর্যন্ত মুখে নেয়া যায় না! অথবা এর নাম শুনলে বা ছবি দেখলেও নাকি ঘেন্না লাগে। এমন কি, আমাদের অমুসলিম কারো বাসায় এই জিনিস রান্না করলে তার একটা কোড নেইম ব্যবহার হতো।
বড় হয়ে যখন আল্লাহ আমাকে মুসলিম বানিয়ে দিলেন, জানলাম হারাম শুধু শুকরের মাংস না - হারাম হচ্ছে মদ খাওয়া, জুয়া খেলা, সুদ-ঘুষের আদান-প্রদান, গান-বাজনা, অমুসলিমদের উৎসবে যোগদান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, বেপর্দা থাকা, ফরয ইবাদাত না করা ইত্যাদি ইত্যাদি...।
অদ্ভুত লেগেছিল ব্যাপারটা!
চারপাশের মুসলিমরা সব নিষিদ্ধ কাজই দেদারসে করে বেড়াচ্ছে, অথচ শুকরের মাংস খাওয়ার ব্যাপারে তারা মহা কট্টর। হাজারটা হারামে ডুবে থাকা ব্যক্তি যত যাই করুক, শুকর ছোঁবে না কিছুতেই।
কেন এমন হলো?
শিশুবেলায় পরিবার আর চারপাশের পরিবেশ আমাদের একমাত্র শিক্ষাক্ষেত্র। এখানে আমরা তাই শিখি যা আমরা দেখতে দেখতে, শুনতে শুনতে বড় হই। আমরা কী ধরনের মুসলিম হব তা নির্ভর করে পরিবার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার উপর। শুকরের ব্যাপারটাও তাই। আমাদের ইসলামের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শেখানো হোক আর না হোক - এই ব্যাপারটা বেশ গুরুত্বের সাথে শেখানো হয়। আর তাই আমরা গুরুত্বের সাথেই তা মেনে চলি।
কেমন করে?
বাচ্চাদের ছোট থেকেই জানানো হয় যে এই বিশেষ প্রানীর মাংস হিন্দু-খ্রিস্টানরা খায়, আমরা খাই না। মদ, ঘুষ, সুদ ইত্যাদি হারাম বিষয় বড়রা নিজেরাই করে বেড়াচ্ছে, কাজেই এসব নিষেধাজ্ঞা শেখানোর প্রয়োজন বোধ করে না। তাই হারাম বলতে ওরা শুধু ওই একটা জিনিসই বোঝে।
এটা ঠিক যে শুকর আল্লাহ হারাম করেছেন। সেই সাথে অন্য অনেক কিছু হারাম করেছেন যেগুলো আমাদের জানানো হয় না বা জেনেও মানতে চাই না। আমাদের কাছে ইসলাম বলতে শুকর না খাওয়া, দলীলবিহীন কিছু প্রথা মানা আর কিছু অহেতুক আবেগ প্রকাশের মাঝে সীমাবদ্ধ।
আমাদের অধিকাংশ মুসলিম পরিবারে ইসলামের মৌলিক বিধিনিষেধগুলো মানি আর না মানি, কিছু কিছু বিষয়ে আমরা কিন্তু সেইরকম প্র‍্যাক্টিসিং! আমাদের মেয়েরা সারাজীবন খোলামেলা থেকেও শুধু আযানের সময় বা ইফতারের সময় মাথা ঢাকতে ভুলে না। আমাদের কুরআনের মুসহাফটা কাপড়ে জড়িয়ে উঁচু স্থানে তুলে রাখা হয়, ধুলিমলিন কিতাবটা শুধু রমাদানেই “খতম” দেয়ার উদ্দেশ্যে হাতে নেয়া হয়। আমরা নিয়মিত সলাত আদায় করলেও সলাতে কী বলছি না বলছি কিছুই বুঝি না। উচ্চারণেও থাকে শত ভুল। আমরা এখন পর্দা করা বলতে বুঝি মাথায় বাধাকপির ন্যায় পট্টি বেঁধে মুখে রং মেখে সং সাজা। সোশাল মিডিয়ায় আমরা অদ্ভুত অদ্ভুত “ইসলামিক” তথ্য শেয়ার দিতে থাকি, কোথাও আমীন না বলে যাই না।
মানবশিশুর মস্তিষ্কে শিশুকালেই যে তথ্যগুলো দৃঢ়ভাবে গেঁথে দেয়া হয়, সাধারণত সারাজীবন তা মেনে চলে সে। মনপ্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করতে থাকে তা।
একটা মেয়ে যখন এটা দেখতে দেখতে বড় হয় যে টিভিতে মহা আগ্রহে সবাই অভিনেত্রী, গায়িকা আর মডেলদের দেখছে; তাদের রূপের প্রশংসা করছে; তাদের জীবন নিয়ে আলোচনা করছে - স্বাভাবিকভাবেই সে ওই দিকে আকৃষ্ট হয়। নিজেকে ওই অবস্থানে কল্পনা করে। ওই সস্তা মেয়েগুলোকে তখন ওর সবচাইতে দামী বলে মনে হতে থাকে। মাথা, ঘাড়, ঠোঁট বেঁকিয়ে অপ্রকৃতস্থের মতো পোজ দিয়ে সেল্ফি তুলে আপলোড করে সে। কিছু সস্তা লাইকে আবেগে আপ্লুত হয়। ইসলাম থেকে সরে যায় যোজন যোজন দূরে।
একটা ছেলে তার ক্লিন শেইভড বাবা, ধূমপায়ী চাচা, সুদি ব্যাংকে চাকুরীরত মামা অথবা প্রেমিক বড় ভাইকে দেখে কখনোই শিখবে না ইসলামে এসবের বিধান কী।
আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, নিয়মিত কুরআন পড়েন, হজ্জটাও সেড়ে ফেলেছেন। অথচ বাসায় হুজুর রেখে ভেবে নিয়েছেন সন্তানদের ইসলাম শেখানোর দায়িত্ব পালন করে ফেলেছেন।
আসলে তা নয় বোন। ইসলাম মানে শুধু সলাত সিয়াম নয়। ইসলাম মানে আল্লাহ প্রদত্ত প্রত্যেকটা বিধিনিষেধ মেনে চলা, শিশুকাল থেকেই তাদের মনে সঠিক ইসলামকে গেঁথে দেয়া। তাকে তার রবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আপনার। এই দায়িত্বে অবহেলা করলে প্রতিফল একদিন আপনাকেই পেতে হবে।
ভাই, আপনি যদি এখনই মেয়েকে পর্দা করতে না শেখান, ভবিষ্যতে “দায়্যুস” হিসেবে গণ্য হবেন। দায়্যুসের জন্য জান্নাত হারাম। শুধু আদেশ না দিয়ে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলুন। রবকে ভালোবাসতে শেখান, তাহলে রবের দেয়া বিধান আপনাতেই মেনে নেবে সে।
যদি আপনি নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করেন, তাহলে সবার আগে নিজে সঠিক ইসলামকে জানুন। কুরআনের অর্থের অনুবাদ পড়ুন। আজকাল ইসলাম শেখার জন্য রিসোর্সের অভাব নেই। আপনি শিখুন, নিজের জীবনে মেনে চলুন। সন্তানের জন্য নিজেকে রোল মডেল হিসেবে তৈরি করুন। ইনশাআল্লাহ্‌ তারা শুধু শুকর হারাম ছাড়াও আরো অনেক কিছুই শিখে ফেলবে।

যে আসমানে সম্মানিত হয়, আল্লাহ নিজেই তাকে জমিনে সম্মানিত করে দেন।

ফেসবুক কেন্দ্রিক আমাদের জীবনগুলোতে যারা টুকটাক লেখে তাদের চারপাশে একটা সমর্থক গোষ্ঠী তৈরী হয়ে যায়।
 তাদের চোখেমুখে থাকে মুগ্ধতা। হাঁটতে বসতে, চলতে ফিরতে সবকিছুইতেই তারা সেই ব্যক্তিকে ফেসবুক স্ট্যাটাস মনে করে। 
আদতে এই গুণ্মুগ্ধ শ্রেণীই সেই ব্যক্তির সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করে। তারা তার ইখলাস মেরে ফেলে, আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়, তাদের কাজের বরকত কমিয়ে দেয়। শুধু একটা ভয়ানক বিষ তারা ব্যবহার করে আর সেটা হলো_ প্রশংসা। 
সেটা যে মুখের কথায় হতে হবে এমন না, তাদের চোখে মুখে মুগ্ধতার ছোঁয়া,  অমুক তমুককে সেই ব্যক্তির অপরিসীম প্রতিভার ফিরিস্তি এই সবকিছুই আলোচ্য ব্যক্তিকে একটু একটু করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

 আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) যদি কোন এলাকায় খুব বেশী পরিচিতি পেয়ে যেতেন তিনি সেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতেন। আমরা ওয়াইস আল করণীর কথা জানি। স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার কথা সাহাবীদের বলে গিয়েছিলেন। অথচ তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতেন।
.
ভাইদের প্রতি আমার নসীহত হলো, আপনার গুণমুগ্ধ সমর্থক গোষ্ঠীর সোহবত এড়িয়ে চলবেন। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করবেন।
 যে আসমানে সম্মানিত হয়, আল্লাহ নিজেই তাকে জমিনে সম্মানিত করে দেন।
 আল্লাহ আমাদেরকে সমস্ত ফিতনাহ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

আর নয় এপ্রিল ফুল; সময় এসেছে সচেতন হওয়ার

ইউরোপে মুসলমানরা প্রবেশ করেছিলেন স্পেনের দরজা দিয়ে। ঐতিহাসিক রবার্ট ব্রিফল্ট দি ম্যাকিং অব হিউম্যানিটি গ্রন্থে মুসলমানদের এ প্রবেশকে অন্ধকার কক্ষের দরজা দিয়ে সূর্যের আলোর প্রবেশ বলে অভিহিত করেছেন। কেন এই তুলনা? রবার্ট ব্রিফল্টের জবাব হলো—‘যেহেতু স্পেনে মুসলমানদের আগমনের ফলে শুধু স্পেন নয়, বরং গোটা ইউরোপ মুক্তির পথ পেয়েছিল এজ অব ডার্কনেস তথা হাজার বছরের অন্ধকার থেকে। এজ অব ডার্কনেস সম্পর্কে রবার্ট ব্রিফল্টের মন্তব্য হলো—‘সেই সময় জীবন্ত অবস্থায় মানুষ অমানুষিকতার অধীন ছিল, মৃত্যুর পর অনন্ত নরকবাসের জন্য নির্ধারিত ছিল।’

স্পেন জয়ের ঘটনাটি ঘটে ৭১১ খ্রিস্টাব্দে। মুসলিম সেনাপতি তারেক বিন জিয়াদ ভূমধ্যসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা পাড়ি দিয়ে ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে রাজা রডরিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। রাজা রডারকের শাসনামল ছিল স্পেনের জন্যে এক দুঃস্বপ্নের কাল। জনগণ ছিল রডারিক ও গথ সম্প্রদায়ের উত্পীড়নের অসহায় শিকার। মরণের আগে স্বাধীনতা ভোগের কোনো আশা তাদের ছিল না। তারেকের অভিযানের ফলে মুক্তির পথ বেরুবে, এই ছিল সাধারণ মানুষের ভাবনা। তারা তারেক বিন জিয়াদকে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করল ৩০ এপ্রিল, ৭১১ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার।
 রডারক পলায়নের সময় নিমজ্জিত হয়ে মারা যায় গুয়াডেল কুইভারের পানিতে। এরপর জনগণের সহযোগিতায় মুসলমানরা একে একে অধিকার করলেন মালাগা, গ্রানাডা, কর্ডোভা। অল্পদিনেই অধিকৃত হলো থিয়োডমির শাসিত সমগ্র আলজিরিয়াস। এদিকে আরেক সেনাপতি মুসা বিন নুসাইর পূর্বদিকের সমুদ্র পথ ধরে ৭১২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে আবিষ্কার করেন সেভিল ও মেরিজ। তিনিও স্পেনের বিভিন্ন শহর অধিকার করে টলেডোতে গিয়ে মিলিত হলেন তারিকের সঙ্গে। তারপর তারা এগিয়ে যান আরাগনের দিকে। জয় করেন সারাগোসা, টারাগোনা, বার্সিলোনা এবং পিরেনিজ পর্বতমালা পর্যন্ত গোটা স্পেন।

তারপর মুসা বিন নুসাইর পিরিনিজ পর্বতে দাঁড়িয়ে সমগ্র ইউরোপ জয়ের স্বপ্ন আঁকছিলেন আর স্পেন থেকে বিতাড়িত গথ সম্প্রদায়ের নেতারা পিরিনিজের ওপারে স্পেন পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা আঁটছিলেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন ইউরোপের খ্রিস্টান নেতারা। মুসলমানরা পিরেনিজ অতিক্রম করে ফ্রান্সের অনেক এলাকা জয় করেন। কিন্তু অ্যাকুইটেনের রাজধানী টুলুর যুদ্ধে ভয়াবহতার সম্মুখীন হয়ে তারা বুঝতে পারলেন যে, অসির পরিবর্তে মসির যুদ্ধের মাধ্যমেই ইউরোপ জয় করা সহজতর। এরপর মুসলমানদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও বিস্তারে।
 তারা সেই যুদ্ধে সফল হন এবং প্রণিধানযোগ্য ইতিহাস তাদের বিজয়কে স্বীকৃতি দিয়েছে। অপরদিকে খ্রিস্টীয় শক্তি পুরনো পথ ধরেই হাঁটতে থাকে। ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে মাসারার যুদ্ধের পর থেকে স্পেনের ওপর তাদের নানামুখী আগ্রাসন ও সন্ত্রাস চলতে থাকে। ফলে স্পেনের নিরাপত্তা হয়ে পড়ে হুমকির সম্মুখীন। 
কিন্তু স্পেনের ভেতরে পচন ধরার প্রাথমিক সূত্রগুলো তৈরি হচ্ছিল ধীরে ধীরে। সমাজের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক বোধ ও সচেতনতা ধীরে ধীরে হারাতে শুরু করছিল। রাজনৈতিক নেতৃবর্গ রাষ্ট্রের শত্রু-মিত্র বিভাজনের কাণ্ডজ্ঞান থেকে সরে আসছিল দূরে। এদিকে ইউরোপের আকাশে ক্রুসেডের গর্জন শোনা যাচ্ছে। স্পেনের বিরুদ্ধে যে আক্রোশ কাজ করছিল সেটাই তিনশ’ বছরে পরিপুষ্ট হয়ে ১০৯৭ সালে গোটা ইসলামী দুনিয়ার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে ভয়াবহ তুফানের মতো। ১০৯৮-এর জুনে এন্টিয়ক দখলের সাফল্যজনক কিন্তু নৃশংস ঘটনার মধ্য দিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠা এ তুফান ১২৫০ সালে অষ্টম ক্রুসেডের পরিসমাপ্তির পর স্পেনের দিকে মোড় ঘোরায়। স্পেনে তখন সামাজিক সংহতি ভঙ্গুর। খ্রিস্টান গোয়েন্দারা ইসলাম ধর্ম শিখে আলেম লেবাসে বিভিন্ন মসজিদে ইমামতিও করছে। তাদের কাজ ছিলো স্পেনের সমাজ জীবনকে অস্থিতিশীল ও শতচ্ছিন্ন করে তোলা।

১৪৬৯ সালে ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা স্পেনে মুসলিম সভ্যতার অস্তিত্বকে গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য পরস্পর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৪৮৩ সালে ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী পাঠান মালাগা প্রদেশে। যাদের প্রতি হুকুম ছিল শস্যক্ষেত্র জ্বালিয়ে দেয়া, জলপাই ও দ্রাক্ষা গাছ কেটে ফেলা, সমৃদ্ধিশালী গ্রাম ধ্বংস করা, গবাদিপশু তুলে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। সেই সময় মৃত্যু ঘটে স্পেনের শাসক আবুল হাসান আলীর। শাসক হন আজজাগাল। এক পর্যায়ে প্রাণরক্ষা ও নিরাপত্তার অঙ্গীকারের ওপর নগরীর লোকেরা আত্মসমর্পণ করলেও নগরী জয় করেই ফার্ডিনান্ড চালান গণহত্যা। দাস বানিয়ে ফেলেন জীবিত অধিবাসীদের। এরপর ফার্ডিনান্ড নতুন কোনো এলাকা বিজিত হলে বোয়াবদিলকে এর শাসক বানাবে বলে অঙ্গীকার করে। ৪ ডিসেম্বর ১৪৮৯। আক্রান্ত হয় বেজার নগরী। আজজাগাল দৃঢ়ভাবে শত্রুদের প্রতিহত করলেন। কিন্তু ফার্ডিনান্ডের কৌশলে খাদ্যাভাব ঘটে শহরে। ফলে শহরের অধিবাসী নিরাপত্তা ও প্রাণরক্ষার শর্তে আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু তাদের ওপর চলে নৃশংস নির্মমতা। আজজাগাল রুখে দাঁড়ালে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং পরে করা হয় আফ্রিকায় নির্বাসিত।

ডিসেম্বর ১৪৯১-এ গ্রানাডার আত্মসমর্পণের শর্ত নির্ধারিত হলো। বলা হলো : ‘ছোট-বড় সব মুসলমানের জীবনের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া হবে। তাদের মুক্তভাবে ধর্ম-কর্ম করতে দেয়া হবে। তাদের মসজিদ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অক্ষত থাকবে। তাদের আদবকায়দা, আচার-ব্যবহার, রাজনীতি, ভাষা ও পোশাক-পরিচ্ছদ অব্যাহত থাকবে। তাদের নিজেদের আইনকানুন অনুযায়ী তাদের প্রশাসকরা তাদের শাসন করবেন …।’ আত্মসমর্পণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেন মুসা বিন আকিল। তিনি বললেন, গ্রানাডাবাসী! এটা একটা প্রতারণা। আমাদের অঙ্গারে পরিণত করার জ্বালানি কাঠ হচ্ছে এ অঙ্গীকার। সুতরাং প্রতিরোধ! প্রতিরোধ!! কিন্তু গ্রানাডার দিন শেষ হয়ে আসছিল। ১৪৯২ সালে গ্রানাডাবাসী আত্মসমর্পণ করল।

রানী ইসাবেলা ও ফার্ডিনান্ডের মধ্যে শুরু হলো চুক্তি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা। চারদিকে চলছিল ভয়াবহ নির্যাতন। পাইকারি হারে হত্যা বর্বরতার নির্মম শিকার হতে থাকলেন অসংখ্য মুসলমান। স্পেনের গ্রাম ও উপত্যকাগুলো পরিণত হয় মানুষের কসাইখানায়। যেসব মানুষ পর্বতগুহায় আশ্রয় নিয়েছিল, তাদেরও মেরে ফেলা হলো আগুনের ধোঁয়া দিয়ে। পহেলা এপ্রিল, ১৪৯২। ফার্ডিনান্ড ঘোষণা করলেন, যেসব মুসলমান গ্রানাডার মসজিদগুলোতে আশ্রয় নেবে, তারা নিরাপদ। লাখ লাখ মুসলমান আশ্রয় নিলেন মসজিদগুলোতে। ফার্ডিনান্ডের লোকেরা সবগুলো মসজিদে আগুন লাগিয়ে দিল। তিনদিন পর্যন্ত চললো হত্যার উত্সব। ফার্ডিনান্ড লাশপোড়া গন্ধে অভিভূত হয়ে হাসলেন। বললেন, হায় মুসলমান! তোমরা হলে এপ্রিলের বোকা (এপ্রিল ফুল)।

এই গণহত্যার পরও যেসব মুসলমান আন্দালুসিয়ায় রয়ে গিয়েছিলেন, তাদের ফার্ডিনান্ডের ছেলে তৃতীয় ফিলিপ সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় সমুদ্রপথে নির্বাসিত করেন। তাদের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখেরও বেশি। ইতিহাস বলে, তাদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক লোকই জীবিত ছিলেন। বিপুলসংখ্যক মানুষ সমুদ্রের গহিন অতলে হারিয়ে যান চিরদিনের জন্য। এভাবেই মুসলিম আন্দালুসিয়া আধুনিক স্পেনের জন্ম দিয়ে ইতিহাসের দুঃখ হয়ে বেঁচে আছে। সেই বেঁচে থাকা বোয়াবদিলদের বিরুদ্ধে ধিক্কাররূপে ফার্ডিনান্ডের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদরূপে।

দুনিয়ার ইতিহাস কী আর কোনো আন্দালুসিয়ার নির্মম ট্রাজেডির সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল? সম্ভবত হয়নি এবং হতে চায় না কখনও। স্পেন হয়ে আছে মুসলিম উম্মাহর শোকের স্মারক। পহেলা এপ্রিল আসে সেই শোকের মাতম বুকে নিয়ে। শোকের এই হৃদয়ভাঙা প্রেক্ষাপটে মুসলিম জাহানের জনপদে জনপদে আন্দালুসিয়ার নির্মমতার কালো মেঘ আবারও ছায়া ফেলছে। এশিয়া-আফ্রিকাসহ সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে মুসলিম নামধারী একশ্রেণীর বিশ্বাসঘাতক বোয়াবদিল এবং ক্রুসেডীয় উন্মত্ততার প্রতিভূ ফার্ডিনান্ডদের যোগসাজশ। আন্দালুসিয়ার মুসলমানদের করুণ পরিণতি যেন ধেয়ে আসতে চায় এই মানচিত্রের আকাশেও। এ জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সমাজ-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিপর্যয়ের প্রলয়বাদ্য চলছে।

[তথ্যসূত্র : সৈয়দ আমীর আলী : দ্য স্পিরিট অব ইসলাম অ্যান্ড সারাসিল, সম্পাদনা-মাসউদ হাসয়ান, স্পেনে মুসলিম কীর্তি—এমদাদ আলী, ইউরোপে ইসলাম—তালিবুল হাশেমী, অনুবাদ—আমীনুর রশীদ।]

LikeShow more react