এই পৃথিবী স্রেফ একটা স্বপ্ন। অতি ছোট্ট স্বপ্ন।

বিছানায় পড়ে আছি। পাশে বসে আছে আমার ছেলেমেয়েরা, ভাইবোনেরা সবাই। অদূরে দাঁড়িয়ে আমার কাছের বন্ধুরা। হঠাৎ লম্বা লম্বা দম নিতে শুরু করলাম। সূরা ইয়াসীন পড়তে শুরু করেছে কেউ একজন। তার সাথে পড়া শুরু করল অন্যান্যরা। দম ফুরিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। চোখ খুলে দেখি: শিয়রে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর দূত। অনন্তের পথে যাত্রা শুরু হতে অল্প কিছু ক্ষণের অপেক্ষা। আমার মুখ খুলে গেছে, কেউ একজন "যাম যাম"-এর পানি ঢেলে দিচ্ছে। এই ক্ষণের জন্যই রেখে দিয়েছিলাম পানিটা। "লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ্"। চোখের দৃষ্টি হারিয়ে গেছে। কথা বলার শক্তিও নেই আর। অনুভূতিগুলোও নিস্তেজ হয়ে গেছে। কানে আসছে শুধু চারপাশের কান্নার আওয়াজ।
আমি মৃতপ্রায়। প্রবল ঝাঁকুনির সাথে মৃত্যুদূত আমার আত্মা বের করে আনল। এই দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিয়েছি আমি।....
.
আমার গাড়ি, বাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স, সম্পর্ক কোনোকিছুর আর বিন্দুমাত্র মূল্য নেই এখন। কবর আমার বাসস্থান; আমার পরিচয়: আমি 'মৃত'। আত্মীয়স্বজনেরা আমাকে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। কেউ কেউ বলছে, আমাকে এতক্ষণ ঘরে রাখাটা ঠিক হচ্ছে না। যে বাড়ি আমি নিজে বানালাম, যে ঘরে আমি নিজে ঘুমালাম, সেই ঘরে আজ আমার ঠাঁই নেই। দামি দামি যেসব বাথরুম ফিটিংস দিয়ে আমার বাথরুম সাজালাম, সেই বাথরুমে আমার শেষ গোসল হলো না। আমাকে গোসল হয়েছে মাইয়্যেতের গোসলখানায়। সাদা কাফনে পেঁচিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কবরের দিকে। আমার দামি গাড়িটাও আজ আর আমার নয়। কেন?
কেন এত অর্থহীন সম্পদ জমা করেছিলাম! কেন এই সম্পদ অর্জনের জন্য মিথ্যে বলেছিলাম? দুর্নীতি করেছিলাম? সারাদিন খেটে মরেছিলাম! এই সম্পদ? এর কানাকড়িও সঙ্গী হলো না আজ। পুরো জীবনটা বেগার নষ্ট করেছি আমি। ধ্বিক্ আমার প্রতি! ভুলে গিয়েছিলাম মৃত্যু আসবেই। তাই এত পাপে জড়িয়ে ছিলাম। আফসোস!
.
কল্পনা বন্ধ করুন। আপনার আর আমার সাথে একদিন এমনটাই হবে। কাজেই তৈরি থাকুন। ভালো কাজগুলোই আপনার পরকালের যাত্রাকে সুন্দর ও শান্তিময় করবে। তাই মৃত্যুকে স্মরণ করুন। এটা আসবেই। আজ অথবা কাল। এই পৃথিবী স্রেফ একটা স্বপ্ন। অতি ছোট্ট স্বপ্ন।
.
Collected From
Shaykh Zahir Mahmood

আল্লাহ্ তা‘আলা পাক-পবিত্র, তাই তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবূল করে থাকেন।

'ক' সাহেব ছোট্টকালে ক্বুর'আনটা একবার খতম দিয়ে কয়েকটা চুমু দিয়ে একটা থাক তার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এরপর স্কুল কলেজের পড়ার চাপে আর তার সাথে তার দেখা হয়নি। তিনি কোন শুক্রবার নামাজ আদায় করতে ভুল করেননা। রাত জেগে পড়তে পড়তে বোরড হয়ে গেলে কখনো মনে হয়, যাক, ফজরটা পড়ে আসি। কালকের পরীক্ষাটা তবে ভাল হবে।
.
'খ' সাহেব কোন শবে কদর বা বরাত মিস করেন না। নতুন কোন কিছু করলে তিনি মিলাদ দেন। না, আল্লাহর বরকত না হলে সংসারে শান্তি আসবো কী করে? ব্যবসায় আয়-উন্নতি হবে কী করে?
.
'গ' সাহেব চাকরীর জন্য মরিয়া। ম্যাথটা ভাল জানতেন আর ইংলিশটাও। অনায়াসেই একটা সুদীব্যাংকে চাকরী হয়ে গেল। ভাবলেন ভালোই তো। অথবা চিন্তা করলেন, আপাতত করি। এরপর হালাল কোন চাকরী পেলেই ছেড়ে দিবো। দেখলেন মাস শেষে এত্তগুলো টাকা! ভাবলেন, 'এই বেশ ভাল আছি।' নতুন চাকরীর কী দরকার? তার ব্যাংকের নিচতলায় অনেক বড় মসজিদ। সেখানে ইমাম সাহেবের তিলাওয়াতটা মা শা আল্লাহ! বেশ সুখেই আছেন।
.
'ঘ' সাহেবের ছেলে বা মেয়েটাকে উচ্চ শিক্ষিত করার দরকার। সে একটা জব জুটালেই তার শান্তি দেখে কে? ডাচ-বাংলা কিংবা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড থেকে শিক্ষা ঋণটা নিলেই তিনি নিশ্চিন্ত।
.
'ঙ' সাহেব ভাবছেন ভাড়া বাড়িতে আর কতো? নিজের একটা ফ্ল্যাট নাহলে কী আর আছে এ জীবনে? ব্যাংক এখন হোমলোন দেয়।
.
প্রতিসন্ধ্যায় 'চ' সাহেবের বাসায় বাংলা আর হিন্দি সিরিয়াল আড্ডা জমায়। রাত জেগে তারা বার্সা আর রিয়ালের যুদ্ধ দেখেন।
.
'ছ' সাহেব 'অনেক ভাল'। ইসলাম মানার চেষ্টা করেন। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়েন। রামাদানের সিয়াম পালন করেন। তার স্ত্রীও খুব ধার্মিক। হিজাব ছাড়া বের হননা। তবে সুদটাও খেতে ভুলেন না। হালাল-হারামের কথা উঠলে সেখান থেকে তার উঠে যাওয়া দেখে মনে হয় পেট খারাপ হয়েছে।
.
'জ' সাহেব ঘুষ খান না। তবে কেউ 'স্পীড মানি' বা 'উপহার' দিলে বারণ করতে পারেন না। ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথাও তো ভাবতে হবে, নাকি?
.
'ক', 'খ', 'গ', 'ঘ', 'ঙ', 'চ', 'ছ' ও 'জ' প্রমুখ সাহেবগণ ভদ্রলোক ও 'ধার্মিক' খুব। শুক্রবারে মসজিদে অনেক টাকা দান করেন। কারও কারও মাজারও মিস হয় না।
.
তাদের ছেলে-মেয়েগুলো বড় হয়। তারা কথা শোনেনা। বন্ধুদের সাথে রাত-বিরাতে 'গ্রুপ-স্টাডি' করে। কিছু বললেই তেড়ে আসে। কখনো কখনো শোকেইস-আলমিরার সাথে হকি খেলে। কিংবা তাদের ছেলে-মেয়ে খুব ভাল স্টুডেন্টস। তবে তাদের একজনও নামাজের ধারে কাছেও নেই। শুক্রবারেও ঘুমে নাক ডাকে। পর্দা? 'জাগো গো ভগিনী' নামক ডাকে সে দিয়েছে সাড়া।
.
আমাদের আদি পিতা-মাতা আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:) জান্নাতে বাসরত ছিলেন। তাঁদের জন্য আল্লাহ তা'আলা কেবল একটা জিনিস হারাম করলেন। বললেন, 'এ গাছের কাছেও যেওনা।' পূর্বের দৃঢ়সংকল্পধারী শয়ত্বান তাঁদের এখানেই ধোকা দিল। তাঁরা হারাম খেল। জান্নাতি পোশাক তাঁদের থেকে ঝরে গেল।
.
হারামে ডুবলে লজ্জা হারিয়ে যায়। 'ক' থেকে 'জ' রা যখন তাদের ইমান ও আমল নিয়ে সন্তুষ্ট, তখন তাদের জানা দরকার, সেকালের মুনাফিকরাও এর চেয়ে উপরে উপরে 'ভাল' ছিল। তারা নামাজ পড়তো, রোজা রাখতো, হজ্জ-যাকাত মিস করতো না, এমনকি জিহাদও করতো।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
-
আল্লাহ্ তা‘আলা পাক-পবিত্র, তাই তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবূল করে থাকেন। আল্লাহ্ তা‘আলা মুমিনদের ঐ কাজই করার হুকুম দিয়েছেন যা করার হুকুম তিনি রাসূলদেরকে দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন: (হে রাসূলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং নেক আমল করুন।) আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেছেন: (হে মুমিনগণ! আমরা তোমাদের যে পবিত্র জীবিকা দান করেছি তা থেকে আহার কর।)
-
তারপর তিনি (রাসূলুল্লাহ্) এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে বের হয় এবং তার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে ও কাপড় ধুলোবালিতে ময়লা হয়ে আছে। অতঃপর সে নিজের দুই হাত আকাশের দিকে তুলে ধরে ও বলে: হে রব! হে রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম, সে হারামভাবে লালিত-পালিত হয়েছে; এ অবস্থায় কেমন করে তার দো‘আ কবূল হতে পারে?' [মুসলিম: ১০১৫]

>> কালেক্টেড পোস্ট <<