এক মৃত ভাইয়ের কথা আজ বারবার মনে পড়ছে।

ইউএসএ যেতে ইচ্ছুক এক মৃত ভাইয়ের কথা আজ বারবার মনে পড়ছে।
মুখে সুন্নাতি দাঁড়ি, সবসময় টাখনুর উপর পাজামা, ফর্সা, লম্বা মানুষটিকে দেখতে একেবারে নিস্পাপ মনে হত। আগে যখন বুয়েট কোয়ার্টারে থাকতাম, প্রায়ই দেখা হত তাঁর সাথে। আর দেখা হলেই সুন্দর করে একটি হাসি দিতেন। কুশল বিনিময় করতেন।
.
ফজর নামাযের সময় সেখানকার রাস্তার দু'ধারে রিকশা রেখে অনেক রিকশাওয়ালারা ঘুমান। টং দোকানও রয়েছে কিছু। প্রায় ফজরেই দেখতাম এ সমস্ত রাস্তায় ঘুমানো মানুষদের পিঠে হাত বুলিয়ে নামাজের জন্য উঠাচ্ছেন। কেউ হয়তো ধমকও দিয়ে দিত, উনি কিছুই বলতেন না। এত সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষ হয়েও এভাবে রিকশাওয়ালাদের পিঠে হাত বুলাতে তাঁর বিন্দুমাত্র সংকোচ হত না।
.
মানুষটির সাথে আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে শেষ দেখা হয়েছিলো।
প্রথমে চিনতে পারি নি, পরিচয় দেয়ার পর চিনলাম। অনেক পরিবর্তন। দাঁড়ি সেভ করে ফেলেছেন। আগে সবসময় পাঞ্জাবি-পাজামা পড়তেন। আজ ছিলেন প্যান্ট শার্ট পরিহিত। প্যান্টখানা আবার টাখনুর নিচ গড়িয়ে রাস্তার ধুলো বালি পরিষ্কারে ব্যস্ত।
বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে বেশ কিছুক্ষন পর জিজ্ঞেস করলাম, এ পরিবর্তন কেন?
কাঁচুমাচু হয়ে উত্তর দিলেন,
- আসলে আমেরিকা যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। পাসপোর্টে দাঁড়িসহ ছবি থাকলে নাকি ভিসা পেতে কষ্ট হয়। তাই ভাবলাম আপাতত কেটে ফেলি, ভিসার ব্যপারটি নিশ্চিত হলে আবার রেখে দিব।
- তো ভিসা পেয়েছেন?
- একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে... নাহ পাইনি। অনেক চেষ্টা করেছি, হল না। এখন আপাতত দেশেই কিছু করার চেষ্টা করছি।
- ভিসা না পেলে তো দাঁড়ি আবার রাখবেন বললেন, রাখলেন না যে?
- আবার সেই কাঁচুমাচু উত্তর, রাখবো রাখবো করে রাখা হচ্ছে না, ভাই !
মাগরিবের আযান হচ্ছিল। নামাযের দাওয়াত দিলাম।
- আপনি পড়ে আসেন। আমার কাপড় পরিস্কার নাই।


--------------------------


প্রায় দুবছর হতে চললো। প্রায়ই মনে পড়ে তাঁর কথাগুলো। আর প্রতিবারই নিজের কাছে একেবারে অসম্ভব মনে হয়, এরকম মজবুত একজন মানুষ, যাকে দেখে একসময় নিজে ইন্সপায়ার্ড হতাম, যাকে উদাহরন হিসেবে অন্যদের সামনে পেশ করতাম, তাঁর এত পরিবর্তন... কি করে সম্ভব ?
.
মৃত্যর অাগে ভেতরে আবার পরিবর্তন এসেছিল কিনা জানি না, কিন্তু বাইরের আচার আচরণ চলা ফেরা পূর্বের মতই ছিল। আল্লাহ তাআলা তাঁকে ক্ষমা করে দিন।
.
এসব মনে পড়লে নিজেকে খুব ঘৃণিত মনে হয়। নিজেদের আমল ও আখলাক নিয়ে আমরা কত সময় কত অহঙ্কার করি। আমাদের ভাবখানা এমন, এ গুলো যেন আমাদের নিজেদের কামাই। আমরা ভুলে যাই, আল্লাহ তাআলার তৌফিক ছাড়া একটি সিজদা দেয়ার ক্ষমতাও আমার নাই। তিনি চাইলে, আমলের শিখর থেকে গোনাহের সমুদ্রে মুহূর্তেই আমাকে ডুবিয়ে দিতে পারেন।'


কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত নিচের দোয়া দুটি যদি কেউ বুঝে পড়ে, যে কারো চোখ ভিজে যেতে বাধ্য।
.
رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
.
হে আমাদের পালনকর্তা! হেদায়েত দান করার পর আমাদের অন্তরকে পুনরায় বক্র করে দিবেন না। আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর দাতা। -সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৮।


اللهم يا مقلب القلوب ثبت قلوبنا على دينك


হে আল্লাহ ! হে অন্তরসমুহকে ওলটপালটকারী। আমাদের অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন। - সুনানে তিরমিযি।
.
Collected From
Brother
Rizwanul Kabir

জীবনে অর্থহীন অসাড় কাজগুলো বাদ দিয়ে ভালো কাজ করি, ভালো অভ্যেস গড়ে তুলি, আল্লাহর খুশিমত চলার চেষ্টা করি, আমাদের জন্য এই জীবন আর পরকালের জীবন--দুই জীবনেই সাফল্য আসবে ইনশাআল্লাহ।

জন্মদিন পালন করা আমার কাছে খুবই অযথা একটা ব্যাপার মনে হয়।
আমরা বাঙালিরা তো মাথা খাটাতে পছন্দ করি না। বিশেষ করে বাঙালি নারী হলে তো কথাই নেই! ষোলো কলা পূর্ণ! একটা মেয়ে মুখে শশা ঘষতে যেই পরিমাণ সময় ব্যয় করে, তার দশ ভাগের এক ভাগ সময়ও একটা বই পড়ার পেছনে লাগায় না। শশা লাগানোই স্বাভাবিক। আমরা জাতি হিসেবেই ফর্সা পাত্রীর পাগল। তাই খালি নারীদেরকে দোষ দিলেও ভুল হয়। বাংলাদেশের যত আছে রূপ চর্চার ঢল, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। অন্তত হাফ ব্লেইম পুরুষদেরও প্রাপ্য, যারা সাদা মেয়ে হলে গরুগাধা বিয়ে করতেও রাজি...

যে জাতি বই পড়তে পছন্দ করে না, সে জাতির বুদ্ধিমত্তার লেভেল কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই আবজাব যত "ডে" আছে, সব গাধার মত পালন করব আমরা এটাই প্রত্যাশিত। কোন দিন কেন আবিষ্কৃত হয়েছিল, কোন দিনের পেছনে কী ব্যবসা চলে--এইসব ইন্টেলেকচুয়াল ডিসকাশন আমাদের কাছে ভাত পাবে না।
 তাই আমি যদি বলি, এই জন্মদিন পালন ইহুদি-খ্রিস্টানদের থেকে এসেছে। আমি যদি বলি, কার্ড আর চকোলেটের ব্যবসা রমরমা করার জন্যই এসব দিবসকে পপুলার করে তোলা হয়, তাহলে কারোই শুনতে ভালো লাগবে না।

আর আমাদের মত ধর্মীয় অনুভূতি সম্পন্ন মুসলিমদেরকে বার্থডে পালনের ব্যাপারে কিছু বলার আমি কে? হুজুর হয়ে মাথা কিনে নিয়েছি নাকি, হ্যাঁ? একটা কেইক কাটলে কী এমন দোষ হয়? আমরা তো আর পার্টি করছি না!!! ছোট্ট শিশুর আবদার পূরণ করেছি মাত্র। বিশ-তিরিশ বছর বয়সেও এরা কীভাবে যেন নিজেকে ডাইপার পরা গ্যাদা বাচ্চা ভাবতে পছন্দ করে..।

যা বলছিলাম, বার্থডে পালন করা আমার কাছে খুবই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। প্রতি বছর বছর বুড়া হচ্ছি, কোথায় জীবনের গুরুতর বিষয়গুলো নিয়ে ভাববো, তা না। মানুষ ডেকে ডেকে বুড়োপনা উদযাপন করছি! এমনকি মৃত মানুষরাও আমাদের পাগলামো থেকে রক্ষা পায় না। একটা মানুষ কবরে গিয়ে কোথায় শান্তিতে থাকবে, তার জন্য আমরা দু-একটা দু'আ চাইলেও তার লাভ।
 অথচ আমাদের মত হুজুগে জাতি মরা মানুষেরও জন্মদিন পালন করে হুলুস্থূল করে। জীবিত ব্যক্তি হলে তো কথাই নেই। ছোটবেলা থেকেই আমরা বাচ্চাদের বোঝাতে সক্ষম যে, জন্মদিন পালন করলে অনেক লাভ। বাপ-মা কষ্টের টাকায় পার্টি করবে। আর গেস্টরা গণ্ডা গণ্ডা গিফট দিয়ে খেয়ে যাবে। মাঝখানে লাভ কার? বাচ্চার! এভাবে আমাদের বাচ্চারা ছোট থেকেই লোভী হতে শুরু করে.. তাদের মধ্যে লোভের বীজ আমরাই ঢুকাই।

এত গিফট না দিয়ে যদি বছরে দুই-এক দিন তাদেরকে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু কিনে দিতাম, সেই সাথে গরিব বাচ্চাদের কথা শোনাতাম, তাহলে হয়ত তারা কিছুটা মানবিকতা শিখত। এখন আমাদের বাচ্চারা মানবিকতা শিখতে পারে না। তারা শেখে স্বার্থপরতা। এক সমাজে একদিকে মানুষ না খেয়ে মরে, আরেকদিকে আমরা হুদাই একটা দিবস বানায়ে সেলিব্রেইট করি।

কারো কাছে টাকা থাক, না থাক, তাকেও একটা উপহার হাতে করেই পার্টিতে যেতে হবে। এরপর শুধু উপস্থিত হলেই হবে না। পরের মাসে নিজের সন্তানের জন্মদিনে আবার সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াতে হবে। হালাল ভাবে ইনকাম করলে তো এত উপরি টাকা হাতে থাকার কথাও না। বাট আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধবের সামনে মান-ইজ্জত রক্ষা করতে একটা ফাটাফাটি পার্টি দেওয়াই লাগে। হোক তার জন্য ধার-দেনা কিংবা ঘুষ নেওয়া..। কী একটা চক্রের মধ্যে ফেঁসে গেছিরে বাবা! আমার এসব চক্র ভালো লাগে না। দুষ্ট চক্র। এই চক্র থেকে বিরত না হলে আমাদের নৈতিক অধঃপতন ক্রমেই বাড়বে, কমবে না।

আরও অনেক কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু ঐ যে বললাম, বাঙালি জাতি আমরা পড়তে পছন্দ করি না। তাই আর বেশি লিখলাম না। আমাদের জন্য জন্মদিন পালন না করতে একটা কথাই যথেষ্ট থাকা উচিত ছিল। কাজটা আল্লাহ তা'আলার অপছন্দনীয়। তাই এসব সস্তা দিবস পালন থেকে দূরে থাকা উচিত। না, একটিবার উইশ করারও প্রয়োজন নেই। দুয়া চাওয়া, সুন্দর জীবনের শুভকামনা জানানো-- কাজগুলি করার জন্য তো বছরের বাকি ৩৬৪ দিন আছেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য এই একটা বিশেষ দিন ধরে উইশ করা, উপহার দেওয়া, উদযাপন করা বাদ দিই। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এক সময় ঠিক হয়ে যাবে।

জীবনে অর্থহীন অসাড় কাজগুলো বাদ দিয়ে ভালো কাজ করি, ভালো অভ্যেস গড়ে তুলি, আল্লাহর খুশিমত চলার চেষ্টা করি, আমাদের জন্য এই জীবন আর পরকালের জীবন--দুই জীবনেই সাফল্য আসবে ইনশাআল্লাহ।

>> কালেক্টেড পোস্ট <<