আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুন

আজ এক ভাইয়ের কাছে একটা ঘটনা শুনলাম।

 একবার তিনি তার বাসায় তার এক দ্বীনি ভাইয়ের সাথে খাচ্ছিলেন। আইটেম ছিল গরুর মাংস। সেই দ্বীনি ভাই খুব আরাম করে খাচ্ছিলেন, খাওয়া শেষে হঠাৎ তিনি কান্না করে দিলেন। হাড় ছাড়া সেই মাংসের দাম শুনে সেই ভাই বললেন, ভাই! একসময় আমার কাছে হাড় ছাড়া গরুর মাংস কেনাটা স্বর্ণ কেনার মত মনে হতো, আল্লাহ আপনাকে হাড় ছাড়া গরুর মাংস কেনার তৌফিক দিয়েছেন। মাদ্রাসায় পড়ার সময় তিনি কোনদিন গরুর মাংস খেতে পাননি। বছরে শুধু একদিন তিনি গরুর মাংস খাওয়ার সুযোগ পেতেন, সেটা কুরবানির দিন। সেদিন তারা মাদ্রাসার কিছু ছাত্র মিলে এলাকায় সবার বাড়ী বাড়ী যেতেন, যে মাংসগুলো সংগ্রহ হতো সেগুলো সবাই মিলে রান্না করতেন। এরপর চাকরী জীবনেও তিনি কোনদিন গরুর মাংস কিনে খাওয়ার সাহস করেননি, কারণ উনার অতি নগণ্য বেতনে গরুর মাংস কিনে খাওয়াটা বিলাসিতার মত ছিল। তারপর সেই ভাই বললেন, এখন দুই তিন মাসে একবার হলেও মাংস কেনার চেষ্টা করি, আমার মেয়েটার জন্য, আমি চাইনা আমার মেয়েটাও আমার মত গরুর মাংস খেতে না পেয়ে আফসোস করুক।
.
গরুর মাংস আমারও খুব প্রিয়। আমার বাসায়ও সেটা জানে। তাই আমি বাড়ি গেলে আমার মা খুব যত্ন করে মাংস রান্না করে। আমার পেটে প্রায়ই হজমের সমস্যা হয়। একবার ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার বললেন, মাংস জাতীয় খাবার না খেতে। এরপর থেকে মাংস খাওয়া কমিয়ে দিলাম। বছরের যে দিন মাংস খুব বেশী খাওয়া হয়, সেই কুরবানির দিনই আমি গ্রাম থেকে শহরে চলে আসি, বাড়িতে থাকলে লোভে পড়ে মাংস খেতে হবে এই ভয়ে।
.
খাওয়ার পরে আমরা একটি দোয়া করি যার অর্থ , "সকল প্রসংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে এই আহার করালেন এবং এ রিযিক দিলেন যাতে ছিল না আমার পক্ষ থেকে কোন উপায়, ছিল না কোন শক্তি সামর্থ্য। " এই দোয়ায় আল্লাহ আহার করালেন , রিযিক দিলেন দুইটা তো একই কথা তাহলে একটা বললেই তো হতো, দুইটার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করার কারণ কি। মুফতি মুহাম্মাদ শফি (রাহিমাহুল্লাহ) এই দোয়ার বিষয়ে বলেছেন, আল্লাহ কাউকে রিযিক দিলেই সে আহার করতে পারে না। অনেক মানুষ আছে আল্লাহ যাদেরকে তাদের পছন্দের খাবার কেনার সামর্থ্য দান করেছেন, কিন্তু তারা আহার করতে পারে না, হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস না রোগে সে আক্রান্ত। তাই আপনি কোন খাবার খেতে পেরেছেন সুতরাং এতে আপনার উপর দুইটা নিয়ামত। আল্লাহ আপনাকে রিযিক দিয়েছেন এবং সেই রিযিক আহার করার মত ক্ষমতা দিয়েছেন। তাই খাবার শেষের দোয়াতে এই দুই নিয়ামতের জন্য শুকরিয়া আদায় করা হয়। সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবর!
.
সিরিয়ার একটা বাচ্চার ইন্টারভিউ দেখেছিলাম। সে বলছিল, মরে গেলে সে জান্নাতে যেতে চায়, কারণ জান্নাতে গেলে রুটি পাওয়া যাবে। জান্নাতে গেলে আমরা কে কি করব তার জন্য কত বিলাসী বিলাসী সব প্ল্যান, আর এই অবুঝ শিশুটা জান্নাতে যেতে চায় রুটি খাওয়ার জন্য, কারণ এই দুনিয়ায় একটু রুটিও সে খেতে পায় না।
.
আমি বলছিনা সবাই এখন খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে, উপোস থেকে উম্মাহর সাথে একাত্বতা দেখাতে হবে! আমি বলছি আপনাকে আপনার নিজের অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে। যে নিয়ামত আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করতে। এতে আপনি আল্লাহর প্রতি বিনয়ী হবেন আর না পাওয়ার আফসোস থেকে রেহাই পাবেন। দুনিয়ার পেছনে ছোটা এই যান্ত্রিক জীবনের ফিতনা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন।
.
আর আল্লাহর কাছে যখন কোন নিয়ামত চাইবেন সাথে আরো দু’টো জিনিস চেয়ে নিবেন।
এক, আপনি যেন সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারেন আর
দুই, আপনি যেন সেই নিয়ামতের ফিতনা থেকে বেরোতে পারেন।
সেই নিয়ামত হতে পারে ধন সম্পদ, সেই নিয়ামত হতে পারে বিয়ে, স্ত্রী, সন্তান।
 সেই নিয়ামত হতে পারে ইলম কিংবা হতে পারে ক্ষমতা অথবা যেকোন কিছু।
আল্লাহ এই দুনিয়াতে অসংখ্য মানুষকে নিয়ামতে ভরিয়ে দিয়েছেন।
তাদের কেউ কেউ সেই নিয়ামতের যথাযথ শুকরিয়া আদায় করতে পারেনি।
আবার কেউ শুকরিয়া আদায় করতে পারলেও সেই নিয়ামতের ফিতনা থেকে বেরোতে পারেনি।
 আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুন। আমীন।
.
Brother ইউসুফ আহমেদ

No comments:

Post a Comment

Plz spread this word to your friends