বন্ধু! তুমি গুনাহ ছাড়তে পারছো না?

তাওবা!

নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আবিদের। আজ এক বছর ধরে এভাবেই চলছে। এক মাস নিজের ঈমান যদি পাহাড়ের চূড়ায় থাকে, পরবর্তী মাসে তা পাহাড়ের তলদেশে নেমে যায়।

কতবারই না শপথ করেছে আর টিভি দেখবে না। চ্যানেলের পর চ্যানেল ঘুরাবে না। চিরদিনের জন্যেই ছেড়ে দেবে সমস্ত গুনাহ। কিন্তু সে কিছুতেই নিজেকে বাগে আনতে পারছে না।

এই পর্যন্ত দশ-বারো বার তাওবা করেছে। প্রতিবারই তার এই তাওবা সর্বোচ্চ এক মাস স্থায়ী হয়েছে। মাস খানিক নামাজ ছাড়ে না, মসজিদে গিয়ে পড়ারও চেষ্টা করে, ক্বিমিয়ায়ে সাআদত থেকে শেখা ' আল্লাহু হাজিরী, আল্লাহু নাজিরী, আল্লাহু মায়ী' - এই ধ্যানের সাথে থাকার চেষ্টা করে। আল্লাহ তায়ালা আমার সামনে উপস্থিত, তিনি আমাকে দেখছেন, তিনি আমার সাথে আছেন' - এই ধ্যান জারি থাকে পথ চলার সময়, গাড়িতে, এমনকি ক্লাসে লেকচারের ফাঁকেও।
ঐ সময়গুলোতে অন্তরের অবস্থা থাকে অন্যরকম। সকালে তরজমার সাথে তিলাওয়াতের সময় চোখ দিয়ে পানিও ঝড়ে।

আশ্চর্য!

সেই মানুষটাই কিভাবে যেন আবার সব ছেড়ে দেয়। পুরো মাস টিভি না দেখা ছেলেটা হঠাৎ করে কোন ক্রিকেট-ম্যাচ দেখতে গিয়ে আবার নিজেকে হারিয়ে ফেলে। একা একা খেলা দেখার সময় খেলার বিরতিতে চ্যানেল ঘুরাতে গিয়ে মশগুল হয়ে যায় এমন কিছুতে, যা তার অভিপ্রেত নয়।

হঠাৎ এই পদস্খলন তাকে চূড়া থেকে তলানিতে ফেলে দেয়। কিভাবে যেন আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। নামাজ কাজা হওয়া প্রতিদিনের ব্যাপারে পরিণত হয়। দিলের ভেতরে গুনাহর কালিমা সে স্পষ্ট টের পায়।

এভাবে চলতে চলতে মাস দু'মাস পর আবার তার বোধোদয় হয়। শো-কেস থেকে দিল স্পর্শ করে এমন একটা কিতাব বের করে নেয়। রুমের দরজা বন্ধ করে একান্তে সালাতুত তাওবার জন্যে দাঁড়ায়। দু'হাত তুলে নিজের সমস্ত অপরাধের ফিরিস্তি আল্লাহ তায়ালার সামনে তুলে ধরতে থাকে। শুকনো চোখ দিয়ে অনুতাপের অশ্রু ঝরাতে চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু শক্ত দিলটা যে পাথর হয়ে আছে।

এক ধরনের অপরাধবোধে অন্তরটা ছেয়ে থাকে। নিজেকে দোষী মনে হয়। কয়েকবার এভাবে একান্তে তাওবার জন্যে দাঁড়ায়।জাহান্নাম ও কবরের আযাবের কথা নিজেকে বার বার শুনাতে থাকে। অবশেষে তার পরম আরাধ্য অনুতাপের কান্না অশ্রু হয়ে নামতে থাকে। তার মনে হতে থাকে, অন্তরের সব ময়লাগুলো ধুয়ে ধুয়ে পড়ছে। যখন মুনাজাত শেষ করে দু'হাত মুখে বুলিয়ে নেয়, মনে হয় গুনাহগুলো ধুয়ে গেছে। একরাশ প্রশান্তি সে অন্তরে টের পায়। গতকালের পাপী মানুষটা হঠাৎ বদলে যায়।

আবার মাসখানিক নামাজের পাবন্দী, তিলাওয়াতে অশ্রু ঝরানো, 'আল্লাহু হাজিরী' ধ্যানে পথচলা। চব্বিশঘন্টা মাওলার ধ্যানে কাটানোর চেষ্টা। মাসখানিক পর আবার পদস্খলন।

সে যেন ঐ বানর, যে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠছে আবার পিছলে নেমে যাচ্ছে। দু'হাত উঠে, আবার তিনহাত নেমে আসে।
কিন্তু একটা আমল সে জারি রেখেছে। সম্বিৎ ফিরে পাওয়া মাত্র তাওবা। একদম পরিপূর্ণ তাওবা।

কোন কিতাব পড়ে কিংবা কোন রেকর্ডকৃত বয়ান শুনে দিল নরমের চেষ্টা, এরপর সালাতুত তাওবা, নিজের গুনাহর ফিরিস্তি আল্লাহকে শুনানো, করজোরে মাফ চাওয়া, আর না করার অঙ্গীকার, নিজের বার বার ওয়াদাভঙ্গের জন্য অনুতাপ, সামনে তাওবার উপর অটল থাকার জন্যে সাহায্য প্রার্থনা। এভাবে উত্থান আর পতনেই চললো বছর দুয়েক। হঠাৎ মাওলা তার উপর কৃপা করলেন। যেন হিদায়াতের বৃষ্টি নামলো তার উপরে। বন্ধুরা একদিন ধরে তাকে তিনদিনে নিয়ে গেলো। এই তিনদিন তাকে একদম বদলে দিলো। এমনকি বদলে দিলো তার চেহারা, তার পোষাক-আশাক।

আশ্চর্য!

 গুনাহর উপর সে অনুতপ্ত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু দাঁড়ি রাখবে, সুন্নতি লিবাস ধরবে - এ কখনও কল্পনাই করেনি।
আলহামদুলিল্লাহ, আজ পাঁচ বছর হতে চললো আবিদ টিভি দেখে না। ক্রিকেট-ম্যাচ দেখার সে আসক্তি কবেই গেছে। প্রথম প্রথম পেপারে ম্যাচের স্কোর জেনে নিতো। এখন তারও প্রয়োজন পড়ে না।
বিশ্বকাপ ফুটবল গেছে, বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও এশিয়া কাপ গেছে। তার টিভিতে ম্যাচ দেখার ইচ্ছেটুকুও জাগে নি।
আবিদ বুঝতে পারে, এ কেবলই তার বারংবার তাওবার ফল। যে তাওবাগুলো সে বার বার ভেঙ্গেছে, কিন্তু আশাহত হয় নি। মাস দু'মাসের গাফলতির পর আবার তাওবা করেছে, নামাজ ধরেছে, দিলটা নরম করার চেষ্টা করেছে।
হয়তো এক তাওবায় তার পরিপূর্ণ ওয়াশ হয় নি। কিন্তু তার বারংবারের হাহুতাশ ও অনুতাপ রব ঠিকই ভালোবেসেছেন। তাই অবশেষে তাকে কাছে টেনে নিয়েছেন।

বন্ধু! তুমি গুনাহ ছাড়তে পারছো না?
কিন্তু সাবধান, বারংবার তাওবার কথা ভুলে যেও না!
আত্ তায়িবু মিনায যামবি কামান লা যাম্বালাহু।

সুত্র 

ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভক্তির এই সময়ে ব্যক্তিগত অনুভূতি মাত্র

মসজিদ ও এখন কালো টাকা সাদা করারর জায়গা হয়ে যাচ্ছে।।।

একজন ইমাম সাহেব কেও পাইলাম না যিনি খুতবার পরে মসজিদে দান করার কথা বলার সময় বলেন.... "আপ্নারা আপনাদের হালাল আয় থেকে মসজিদে দান করুন"....
সবাই খালি চায় মসজিদে দান করা হউক।।

 আর পাপীরা ভাবে এই চান্সে আমার গুনাহ কম্বে, যাই পাপের কামাইয়ের কিছু অংশ দান করি...
তাই যেই এলাকায় দুর্নীতি বেশি সেই এলাকার মানুষ দান করে বেশি আর সেই দানে মাস্আল্লাহ সকল উপাসনালয় ফাইভ স্টার অট্টালিকায় পরিনত...

ঢাকার এইসব ফাইভ স্টার মসজিদগুলোতে বসলে কবর হাশরের উপলব্ধি তেমন একটা আসেনা।
 মোনাজাতে চোখে জলও আসে না, চকচকে টাইলসে রিফ্লেক্ট হয়ে ঝাড়বাতির লালনীল আলোটাই আসে....

(ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভক্তির এই সময়ে ব্যক্তিগত অনুভূতি মাত্র,
একই পর্যবেক্ষণ অন্যান্য উপসানালয় এর ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য এবং যা দুঃখজনক হইলেও সত্য)

কালেক্টেড 

বাবা-মার একটু সময় হবে কি প্লিজ!

 নোমান আলী খানের একটি আলোচনা:  আপনার বাচ্চার জন্য অনেক বড় উপকার হতে পারে।

*********************বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম*************************

টিনেজারদের বাবা-মারা প্রায় সময়ই আমার কাছে আসেন। "জানেন, আমার ছেলেটা না, আমার কথা শোনেই না আজকাল। আপনি ওর সাথে একটু কথা বলবেন?" যেন আমি কোনো মহৌষধ সাথে নিয়ে ঘুরি! যেন সেই ছেলেটা আমার কাছে আসলে আমি ওর গায়ে ফু দিয়ে দেব এভাবে। .. আর সাথে সাথেই সে দারুন লক্ষী ছেলে হয়ে যাবে! "একটু যদি কথা বলতেন। ..." না, বরং আপনি আপনার ছেলের সাথে কথা বলছেন না কেন? কোথায় ছিলেন আপনি যখন তার সাথে কথা বলার প্রকৃত সময় ছিল?

আজকে আমি আপনাদের সাথে বাবা-মাদের নিয়ে একটু কথা বলব, তারপর বলব স্বামী-স্ত্রীদের নিয়ে। আজকে এই দু'টো জিনিস নিয়ে বলারই সময় আছে। দু'টো খুবই মৌলিক সম্পর্ক: একটা আপনার সন্তানদের সাথে, আরেকটা আপনার জীবনসঙ্গীর সাথে। এই দু'টো সম্পর্কের ব্যপারেই আমরা খুব বেসিক কিছু ব্যপার নিয়ে আলোচনা করব।
আপনার সন্তান যখন ছোট, খুবই ছোট, ধরুন যখন তাদের বয়স পাঁচ, ছয়, সাত, দুই, তিন, চার, তখন তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন জিনিসটা বলুন তো? আমার নিজের পাঁচটা বাচ্চা আছে, তাই আমি খুব ভালো বলতে পারব এ ব্যপারে। তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার সমর্থন। তারা আপনাকে গর্বিত করতে চায়। তারা যা যা করেছে সব আপনাকে দেখাতে চায়। ধরুন, আমি জরুরী কোনো কাজের আলাপ করছি ফোনে, জরুরী একটা ফোন, আর এ সময় আমার দুই বছরের ছেলে এসে বলবে, "আব্বা আব্বা আব্বা আব্বা আব্বা।" ..."ভাই, একটু লাইনে থাকেন" ... "কি হয়েছে?" ... "হে হে হে" ব্যস! আমি আবার ফোনালাপে ফিরে গেলাম, সে আবার আমাকে ডাকা শুরু করল। আমি বললাম, "আচ্ছা ঠিক আছে, কি হয়েছে বলো" ... "আমি তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো" ... "কি দেখাতে চাও বাবা?" ... ব্যস এটাই! কিন্তু আমার এ ক্ষেত্রে কি করা উচিত বলুন তো? "আল্লাহ! দারুন তো! আবার করো দেখি" ... "আমি আপনাকে পরে ফোন দিচ্ছি" ... আপনার সন্তানরা যা করে আপনার উচিত তার কদর করা। এটা তাদের পরম আরাধ্য। অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে বেশি তারা এটাই চায় আপনার কাছে।

আমার তিনটি মেয়ে আছে। আর ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য কি জানেন তো? ছেলেরা এক জায়গায় বসে থাকতে পারেনা, আর মেয়েরা কথা বলা থামাতে পারে না। তো আমি আমার মেয়েদের স্কুল থেকে যখন নিয়ে আসি - একজন ক্লাস ওয়ানে আরেক জন ক্লাস থ্রিতে পড়ে - আমি ওদের স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে আসি ২৫ মিনিট গাড়ি চালিয়ে। আর এই পুরোটা সময় তারা কি করে জানেন? "জানো আজকে ক্লাসে কি হয়েছে? আমরা একটা ডাইনোসর রং করেছি, এটা করেছি, ওটা করেছি, প্রথমে আমি বেগুনী রং করলাম, তারপর ভাবলাম একটু সবুজ রং-ও দেই" - এভাবে বলতে থাকলো তো বলতেই থাকলো। থামার কোনো নামই নেই। থামা সম্ভবই না ওদের পক্ষে। আর আমাকেও মনযোগ দিয়ে সেটা শুনতে হবে। শুনতে হবে আমাকে। আমি বললাম, "ও তাই? নীল রং দাও নি?" .."না অল্প একটু নীল দিয়েছি"। আমাকে মনোযোগ দিতে হবে। আর আমি এগুলো কেন বলছি জানেন? আচ্ছা দাঁড়ান, আগে অন্য একটা গল্প বলে নেই। তাতে আপনাদের ঘুমটাও একটু কাটবে।

এই গল্পটা আমি প্রায়ই বলি। আমার বড় মেয়েটা, হুসনা, যখন ছোট ছিল তখন আঙ্গুল দিয়ে ছবি আঁকতে খুব পছন্দ করত। সে তার আঙ্গুলগুলো রঙের মধ্যে চুবিয়ে তারপর সেগুলো দিয়ে হাবিজাবি আঁকত। তো একদিন এক বিশাল কার্ডবোর্ড নিয়ে সে আমার কাছে হাজির! সেখানে নীল রং দিয়ে বিশাল কি যেন আঁকা, আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। সে বলল, "আব্বা, দেখো আমি কি এঁকেছি?" আর আমি বললাম, "বাহ, দারুন! একটা পাহাড়!" আর সে বলল, "না, এটা তো আম্মু!" আমি বললাম, "খাইছে!" "আম্মুকে এই কথা বোলো না কিন্তু"
তবে যে কথাটা আমি বলতে চাচ্ছি তা হলো ওরা আপনার সমর্থন পাওয়ার জন্য ব্যাকুল। ব্যাকুল তারা এর জন্য। কিন্তু আপনাদের মধ্যে যাদের সন্তানরা টিনেজার, তাদের যখন স্কুল থেকে আনতে যান, এমন কি হয় যে তারা গাড়িতে উঠে কথা বলা থামাতে পারছে না? হয় এমন? "জানো আজকে স্কুলে কি হয়েছে? টিচার এটা বলেছে, ওটা করেছে, পরীক্ষায় 'এ' পেয়েছি"। না! তারা একদম চুপ! বরং আপনিই বলার চেষ্টা করবেন, "কেমন গেল দিন?" .."মোটামুটি".."কি করলে সারাদিন?" .. "কিছু একটা".. "আজকে কোথায় যাবে?" .. "যাব কোথাও"। কথা বলেই না তারা! তাদের কথা বলানো অনেকটা পুলিশের আসামীকে জেরা করার মত ব্যপার। আপনাকে তারা কিছুই বলে না। আর যখন আপনি তাকে প্রশ্ন করছেন, তখন হয়ত সে তার বন্ধুকে এস,এম,এস পাঠাচ্ছে, "আব্বা আজকে বেশি প্রশ্ন করছে! ঘটনা কি? তুমি ওনাকে কিছু বলেছ নাকি?" ... যা আমি বলতে চাচ্ছি, তা খুবই সহজ। ছোট বয়সে আপনার বাচ্চারা আপনার মনোযোগ পাওয়ার জন্য পাগল থাকে। আর যখন তারা বড় হবে, আপনি তাদের মনোযোগ পাওয়ার জন্য পাগল হবেন।

কিন্তু তারা যখন ছোট থাকে তখন যদি আপনি তাদের মনোযোগ না দেন - তারা খেলনা নিয়ে আপনার কাছে আসলে যদি বলেন, "ঘরে যাও! আমি সংবাদ দেখছি", "খেলা চলছে। এই, তুমি ওকে একটু সরাও তো!", "সারাদিন অনেক কাজ করেছি, এখন ওকে সামলাতে পারব না", "বাসায় আমার বন্ধুরা এসেছে, কি বলবে ওরা? যাও ঘুমাতে যাও। যাও এখান থেকে" - আপনি যখন ওদের সাথে এমন আচরণ করবেন, যেন তারা আপনার জন্য প্রতিবন্ধকতা, আপনার কাজ হচ্ছে চাকরি করা, আর বাসায় এসেছেন শুধু বিশ্রাম নিতে। না রে ভাই! আপনার কাজ শুরু হয়েছে তখনই যখন আপনি ঘরে ফিরেছেন। সেটাই আপনার আসল কাজ। চাকরিতে যে কাজ করেছেন সেটা শুধুমাত্র এজন্য যেন ঘরের আসল কাজটা ঠিকমত করতে পারেন।

একজন প্রকৃত বাবা হন। উপস্থিত পুরুষদেরকে বলছি। একজন প্রকৃত বাবা হন। আপনার সন্তানদের সাথে সময় কাটান। তারা শুধু এ জন্য নেই যে আপনি তাদের স্কুলে ছেড়ে আসবেন, আর বাসায় ফিরে শুধু ঘুমাতে যাবেন, কোনো ঝামেলায় যাবেন না, তাদের সাথে কথা বলবেন না। এবং তাদের সাথে কথা না বলার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে তাদের একটা আইপড টাচ অথবা আইফোন ধরিয়ে দিন, তাদের নিজস্ব রুমে একটা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ দিয়ে দিন হাই-স্পিড ইন্টারনেট সহ। তাহলে আপনাকে তাদের চেহারাও দেখা লাগবে না। তারা সারাদিন তাদের ঘরে থেকেই ফেসবুকিং করতে থাকবে, অনলাইনেই নিজেদের জন্য নতুন বাবা-মা খুঁজে নিবে না হয়।
সিরিয়াস্লি বলছি। প্রকৃত বাবা হন। প্রকৃত মা হন। আপনার মাতৃত্ব বা পিতৃত্বের বদলি হিসেবে এইসব জিনিসকে আসতে দিয়েন না। কারণ যদি তা দেন, তাহলে ওরা যখন স্বাবলম্বী হয়ে যাবে তখন বেশির ভাগ বাবা-মার কি হয় জানেন? আপনাদের বেশিরভাগের ছেলেমেয়েরা আপনাদেরকে দেখে কতগুলো টাকার মেশিন হিসেবে। শুধুমাত্র কখন তারা আপনাদের কাছে আসে? - "বাবা, আমাকে ৫ ডলার দাও তো" জানি আজকাল কেউ আর ৫ ডলার চায় না, কমপক্ষে ২০ ডলার। কিচ্ছু বাচ্চাদের চিনি যারা এত কম টাকা দেখেইনি, ৫ ডলারের নোট্ চিনেই না তারা। "আমাকে ২০ ডলার দাও তো", "শপিং মলে যেতে চাই, আমাকে একটু পৌঁছিয়ে দাও তো", "বন্ধুদের বাসায় যাই?" "এটা করতে পারি?" "ওটা কিনতে পারি?" যখন তাদের কোনো কিছুর দরকার তখন তারা আপনার কাছে আসে। এর বাইরে আপনি তাদের খুঁজে পাবেন না। আর যখন তারা বড় হবে, নিজেরাই একটু আধটু কামাই করতে পারবে, তখন কি হবে? তাদের দেখাই পাবেন না আর। কারণ আপনার টাকার মেশিনও এখন আর দরকার নেই। এর প্রয়োজন শেষ। আপনি যদি এই ধরনের সম্পর্ক তৈরী করেন, তাহলে নিশ্চিত বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছেন। আপনাকে এখনই পরিবর্তন আনতে হবে।
আর পরিবর্তনের উপায় হলোঃ জানি এটা অনেকের জন্যই করাটা কঠিন হবে, কিন্তু আমাদেরকে আমাদের সন্তানদের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। আমাদেরকে তাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হতে হবে। আমাদের সাথে সময় কাটানোটা তাদের কাছে উপভোগ্য হতে হবে।

--- :: --- :: ---
উস্তাদ নুমান আলী খানের লেকচার অবলম্বনে অনুবাদ করেছেনঃ আহমেদুল কবির

ব্যালেন্স

সত্যি কথা বলতে কি দুনিয়াবি সব কিছু সবসময় ঠিকঠাক রেখে পালন করার মত ধর্ম ইসলাম না। ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতে গেলে আপনি দেখবেন জীবনের পদে পদে সংঘর্ষ হচ্ছে। তখন আপনাকে কিছু ছাড় দিতেই হবে- হয়ত আপনার দ্বীনে বা দুনিয়াদারীতে। তবে এক সময় কিন্তু আল্লাহর রহমতে আল্লাহ খুব সহজ করে দেন।

আল্লাহ একেক মানুষকে একেক ভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। কাউকে সম্পদ দ্বারা, কাউকে পরিবার দ্বারা, কাউকে তার চাকরি দ্বারা।

যেমন আমি অনেক বোন ভাইকে দেখেছি যারা ইসলাম মানার শুরুতেই প্রবল পারিবারিক বাধার সম্মুখীন হয়েছে। হয়ত খুব বেসিক ব্যাপারে যেমন দাঁড়ি রাখা নিয়ে বা হিজাব পড়া বা তাখনুর উপর প্যান্ট পড়া নিয়ে। আমি অনেক বোনের ব্যাপারে জানি যাদের পড়ালেখা পর্যন্ত ছেড়ে দিতে হয়েছে, জাস্ট বাবা মায়ের ইগোর কারণে, যে তারা তাদের মেয়েকে বোরখা পড়ে ঘর থেকে বেরুতে দেবেনা।

আবার অনেক ভাইকে দেখেছি সুদের চাকরি ছাড়বে কিনা এই নিয়ে দোদুল্যমান অবস্থায় পড়ে যেতে। আর কাউকে দেখেছি দ্বীনের দাওয়াত পেয়েই অনেক বড় বড় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।

আলহামদুলিল্লাহ যেসকল ভাই বোনেরাই তাদের বিশ্বাসের প্রতি অটল ছিল তাদের কাউকেই আমি অন্তত দুনিয়ার দৃষ্টিতেও বঞ্চিত হতে দেখিনি আর আখিরাতের পুরস্কার আল্লাহর হাতে।

যেমন এক ভাই ইসলামে এসে তাঁর অনেক দিনের গার্লফ্রেন্ডকে ইসলাম বোঝাতে চেয়েছিল এবং বলে দিয়েছিল যেহেতু ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রাখা যাবেনা, তাই তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কিন্তু সেই মেয়ে তখন এসব পাত্তা না দিয়ে তাকে পরিত্যাগ করে। প্রায় ১০ বছর আগের কথা। এখন সেই ভাইয়ের খুব ভাল জায়গায় বিয়ে হয়েছে অনেক সন্তান সন্ততি নিয়ে ভালই আছে।

অনেক জনকে চিনি যারা ব্যাংক বা হারামযুক্ত পেশা ছেড়ে দিয়ে সাময়িকভাবে সমস্যায় জর্জরিত হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহর কসম আমি দেখেছি তাদের প্রত্যেকই এখন অনেক ভাল আছে, এমনকি তাদের কলিগদের তুলনাতেও।
এক বোনের কথা জানি যে পড়া কন্টিনিউ করতে পারেনি হিজাবের কারণে। এখন জানি তিনি মাল্যশিয়াতে স্বামীর সাথে মাস্টার্স করতে গিয়েছেন।

আর যেসকল ভাইবোনেরা শুরুতেই ছাড় দিয়ে দিয়েছেন তাদের দুনিয়াবি পরীক্ষাতে, তারা কিন্তু আর সেভাবে দ্বীনের পথে চলতে পারেনি। তারা ভেবেছিলেন আস্তে আস্তে ঠিক করে নেবেন।

অন্তত আমার অভিজ্ঞতাতে আমি এমন দেখিনি যে দ্বীনও বাঁচবে আবার দুনিয়াও ঠিক থাকবে এমন ব্যালেন্স কেউ করতে পেরেছেন।

আল্লাহর কারণে যদি আপনি ত্যাগ স্বীকার করে থাকেন ইনশাল্লাহ নিশ্চিত থাকুন আখিরাতে তো অবশ্যই দুনিয়াতেই আল্লাহ আপনাকে তাঁর রহমতে ভরে দেবেন এবং এমন ভাবে দেবেন আপনি আশ্চর্য হয়ে যাবেন।

কালেক্টেড