তাওবা!
নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আবিদের। আজ এক বছর ধরে এভাবেই চলছে। এক মাস নিজের ঈমান যদি পাহাড়ের চূড়ায় থাকে, পরবর্তী মাসে তা পাহাড়ের তলদেশে নেমে যায়।
কতবারই না শপথ করেছে আর টিভি দেখবে না। চ্যানেলের পর চ্যানেল ঘুরাবে না। চিরদিনের জন্যেই ছেড়ে দেবে সমস্ত গুনাহ। কিন্তু সে কিছুতেই নিজেকে বাগে আনতে পারছে না।
এই পর্যন্ত দশ-বারো বার তাওবা করেছে। প্রতিবারই তার এই তাওবা সর্বোচ্চ এক মাস স্থায়ী হয়েছে। মাস খানিক নামাজ ছাড়ে না, মসজিদে গিয়ে পড়ারও চেষ্টা করে, ক্বিমিয়ায়ে সাআদত থেকে শেখা ' আল্লাহু হাজিরী, আল্লাহু নাজিরী, আল্লাহু মায়ী' - এই ধ্যানের সাথে থাকার চেষ্টা করে। আল্লাহ তায়ালা আমার সামনে উপস্থিত, তিনি আমাকে দেখছেন, তিনি আমার সাথে আছেন' - এই ধ্যান জারি থাকে পথ চলার সময়, গাড়িতে, এমনকি ক্লাসে লেকচারের ফাঁকেও।
ঐ সময়গুলোতে অন্তরের অবস্থা থাকে অন্যরকম। সকালে তরজমার সাথে তিলাওয়াতের সময় চোখ দিয়ে পানিও ঝড়ে।
আশ্চর্য!
সেই মানুষটাই কিভাবে যেন আবার সব ছেড়ে দেয়। পুরো মাস টিভি না দেখা ছেলেটা হঠাৎ করে কোন ক্রিকেট-ম্যাচ দেখতে গিয়ে আবার নিজেকে হারিয়ে ফেলে। একা একা খেলা দেখার সময় খেলার বিরতিতে চ্যানেল ঘুরাতে গিয়ে মশগুল হয়ে যায় এমন কিছুতে, যা তার অভিপ্রেত নয়।
হঠাৎ এই পদস্খলন তাকে চূড়া থেকে তলানিতে ফেলে দেয়। কিভাবে যেন আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। নামাজ কাজা হওয়া প্রতিদিনের ব্যাপারে পরিণত হয়। দিলের ভেতরে গুনাহর কালিমা সে স্পষ্ট টের পায়।
এভাবে চলতে চলতে মাস দু'মাস পর আবার তার বোধোদয় হয়। শো-কেস থেকে দিল স্পর্শ করে এমন একটা কিতাব বের করে নেয়। রুমের দরজা বন্ধ করে একান্তে সালাতুত তাওবার জন্যে দাঁড়ায়। দু'হাত তুলে নিজের সমস্ত অপরাধের ফিরিস্তি আল্লাহ তায়ালার সামনে তুলে ধরতে থাকে। শুকনো চোখ দিয়ে অনুতাপের অশ্রু ঝরাতে চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু শক্ত দিলটা যে পাথর হয়ে আছে।
এক ধরনের অপরাধবোধে অন্তরটা ছেয়ে থাকে। নিজেকে দোষী মনে হয়। কয়েকবার এভাবে একান্তে তাওবার জন্যে দাঁড়ায়।জাহান্নাম ও কবরের আযাবের কথা নিজেকে বার বার শুনাতে থাকে। অবশেষে তার পরম আরাধ্য অনুতাপের কান্না অশ্রু হয়ে নামতে থাকে। তার মনে হতে থাকে, অন্তরের সব ময়লাগুলো ধুয়ে ধুয়ে পড়ছে। যখন মুনাজাত শেষ করে দু'হাত মুখে বুলিয়ে নেয়, মনে হয় গুনাহগুলো ধুয়ে গেছে। একরাশ প্রশান্তি সে অন্তরে টের পায়। গতকালের পাপী মানুষটা হঠাৎ বদলে যায়।
আবার মাসখানিক নামাজের পাবন্দী, তিলাওয়াতে অশ্রু ঝরানো, 'আল্লাহু হাজিরী' ধ্যানে পথচলা। চব্বিশঘন্টা মাওলার ধ্যানে কাটানোর চেষ্টা। মাসখানিক পর আবার পদস্খলন।
সে যেন ঐ বানর, যে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠছে আবার পিছলে নেমে যাচ্ছে। দু'হাত উঠে, আবার তিনহাত নেমে আসে।
কিন্তু একটা আমল সে জারি রেখেছে। সম্বিৎ ফিরে পাওয়া মাত্র তাওবা। একদম পরিপূর্ণ তাওবা।
কোন কিতাব পড়ে কিংবা কোন রেকর্ডকৃত বয়ান শুনে দিল নরমের চেষ্টা, এরপর সালাতুত তাওবা, নিজের গুনাহর ফিরিস্তি আল্লাহকে শুনানো, করজোরে মাফ চাওয়া, আর না করার অঙ্গীকার, নিজের বার বার ওয়াদাভঙ্গের জন্য অনুতাপ, সামনে তাওবার উপর অটল থাকার জন্যে সাহায্য প্রার্থনা। এভাবে উত্থান আর পতনেই চললো বছর দুয়েক। হঠাৎ মাওলা তার উপর কৃপা করলেন। যেন হিদায়াতের বৃষ্টি নামলো তার উপরে। বন্ধুরা একদিন ধরে তাকে তিনদিনে নিয়ে গেলো। এই তিনদিন তাকে একদম বদলে দিলো। এমনকি বদলে দিলো তার চেহারা, তার পোষাক-আশাক।
আশ্চর্য!
গুনাহর উপর সে অনুতপ্ত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু দাঁড়ি রাখবে, সুন্নতি লিবাস ধরবে - এ কখনও কল্পনাই করেনি।
আলহামদুলিল্লাহ, আজ পাঁচ বছর হতে চললো আবিদ টিভি দেখে না। ক্রিকেট-ম্যাচ দেখার সে আসক্তি কবেই গেছে। প্রথম প্রথম পেপারে ম্যাচের স্কোর জেনে নিতো। এখন তারও প্রয়োজন পড়ে না।
বিশ্বকাপ ফুটবল গেছে, বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও এশিয়া কাপ গেছে। তার টিভিতে ম্যাচ দেখার ইচ্ছেটুকুও জাগে নি।
আবিদ বুঝতে পারে, এ কেবলই তার বারংবার তাওবার ফল। যে তাওবাগুলো সে বার বার ভেঙ্গেছে, কিন্তু আশাহত হয় নি। মাস দু'মাসের গাফলতির পর আবার তাওবা করেছে, নামাজ ধরেছে, দিলটা নরম করার চেষ্টা করেছে।
হয়তো এক তাওবায় তার পরিপূর্ণ ওয়াশ হয় নি। কিন্তু তার বারংবারের হাহুতাশ ও অনুতাপ রব ঠিকই ভালোবেসেছেন। তাই অবশেষে তাকে কাছে টেনে নিয়েছেন।
বন্ধু! তুমি গুনাহ ছাড়তে পারছো না?
কিন্তু সাবধান, বারংবার তাওবার কথা ভুলে যেও না!
আত্ তায়িবু মিনায যামবি কামান লা যাম্বালাহু।
সুত্র
নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আবিদের। আজ এক বছর ধরে এভাবেই চলছে। এক মাস নিজের ঈমান যদি পাহাড়ের চূড়ায় থাকে, পরবর্তী মাসে তা পাহাড়ের তলদেশে নেমে যায়।
কতবারই না শপথ করেছে আর টিভি দেখবে না। চ্যানেলের পর চ্যানেল ঘুরাবে না। চিরদিনের জন্যেই ছেড়ে দেবে সমস্ত গুনাহ। কিন্তু সে কিছুতেই নিজেকে বাগে আনতে পারছে না।
এই পর্যন্ত দশ-বারো বার তাওবা করেছে। প্রতিবারই তার এই তাওবা সর্বোচ্চ এক মাস স্থায়ী হয়েছে। মাস খানিক নামাজ ছাড়ে না, মসজিদে গিয়ে পড়ারও চেষ্টা করে, ক্বিমিয়ায়ে সাআদত থেকে শেখা ' আল্লাহু হাজিরী, আল্লাহু নাজিরী, আল্লাহু মায়ী' - এই ধ্যানের সাথে থাকার চেষ্টা করে। আল্লাহ তায়ালা আমার সামনে উপস্থিত, তিনি আমাকে দেখছেন, তিনি আমার সাথে আছেন' - এই ধ্যান জারি থাকে পথ চলার সময়, গাড়িতে, এমনকি ক্লাসে লেকচারের ফাঁকেও।
ঐ সময়গুলোতে অন্তরের অবস্থা থাকে অন্যরকম। সকালে তরজমার সাথে তিলাওয়াতের সময় চোখ দিয়ে পানিও ঝড়ে।
আশ্চর্য!
সেই মানুষটাই কিভাবে যেন আবার সব ছেড়ে দেয়। পুরো মাস টিভি না দেখা ছেলেটা হঠাৎ করে কোন ক্রিকেট-ম্যাচ দেখতে গিয়ে আবার নিজেকে হারিয়ে ফেলে। একা একা খেলা দেখার সময় খেলার বিরতিতে চ্যানেল ঘুরাতে গিয়ে মশগুল হয়ে যায় এমন কিছুতে, যা তার অভিপ্রেত নয়।
হঠাৎ এই পদস্খলন তাকে চূড়া থেকে তলানিতে ফেলে দেয়। কিভাবে যেন আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। নামাজ কাজা হওয়া প্রতিদিনের ব্যাপারে পরিণত হয়। দিলের ভেতরে গুনাহর কালিমা সে স্পষ্ট টের পায়।
এভাবে চলতে চলতে মাস দু'মাস পর আবার তার বোধোদয় হয়। শো-কেস থেকে দিল স্পর্শ করে এমন একটা কিতাব বের করে নেয়। রুমের দরজা বন্ধ করে একান্তে সালাতুত তাওবার জন্যে দাঁড়ায়। দু'হাত তুলে নিজের সমস্ত অপরাধের ফিরিস্তি আল্লাহ তায়ালার সামনে তুলে ধরতে থাকে। শুকনো চোখ দিয়ে অনুতাপের অশ্রু ঝরাতে চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু শক্ত দিলটা যে পাথর হয়ে আছে।
এক ধরনের অপরাধবোধে অন্তরটা ছেয়ে থাকে। নিজেকে দোষী মনে হয়। কয়েকবার এভাবে একান্তে তাওবার জন্যে দাঁড়ায়।জাহান্নাম ও কবরের আযাবের কথা নিজেকে বার বার শুনাতে থাকে। অবশেষে তার পরম আরাধ্য অনুতাপের কান্না অশ্রু হয়ে নামতে থাকে। তার মনে হতে থাকে, অন্তরের সব ময়লাগুলো ধুয়ে ধুয়ে পড়ছে। যখন মুনাজাত শেষ করে দু'হাত মুখে বুলিয়ে নেয়, মনে হয় গুনাহগুলো ধুয়ে গেছে। একরাশ প্রশান্তি সে অন্তরে টের পায়। গতকালের পাপী মানুষটা হঠাৎ বদলে যায়।
আবার মাসখানিক নামাজের পাবন্দী, তিলাওয়াতে অশ্রু ঝরানো, 'আল্লাহু হাজিরী' ধ্যানে পথচলা। চব্বিশঘন্টা মাওলার ধ্যানে কাটানোর চেষ্টা। মাসখানিক পর আবার পদস্খলন।
সে যেন ঐ বানর, যে তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠছে আবার পিছলে নেমে যাচ্ছে। দু'হাত উঠে, আবার তিনহাত নেমে আসে।
কিন্তু একটা আমল সে জারি রেখেছে। সম্বিৎ ফিরে পাওয়া মাত্র তাওবা। একদম পরিপূর্ণ তাওবা।
কোন কিতাব পড়ে কিংবা কোন রেকর্ডকৃত বয়ান শুনে দিল নরমের চেষ্টা, এরপর সালাতুত তাওবা, নিজের গুনাহর ফিরিস্তি আল্লাহকে শুনানো, করজোরে মাফ চাওয়া, আর না করার অঙ্গীকার, নিজের বার বার ওয়াদাভঙ্গের জন্য অনুতাপ, সামনে তাওবার উপর অটল থাকার জন্যে সাহায্য প্রার্থনা। এভাবে উত্থান আর পতনেই চললো বছর দুয়েক। হঠাৎ মাওলা তার উপর কৃপা করলেন। যেন হিদায়াতের বৃষ্টি নামলো তার উপরে। বন্ধুরা একদিন ধরে তাকে তিনদিনে নিয়ে গেলো। এই তিনদিন তাকে একদম বদলে দিলো। এমনকি বদলে দিলো তার চেহারা, তার পোষাক-আশাক।
আশ্চর্য!
গুনাহর উপর সে অনুতপ্ত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু দাঁড়ি রাখবে, সুন্নতি লিবাস ধরবে - এ কখনও কল্পনাই করেনি।
আলহামদুলিল্লাহ, আজ পাঁচ বছর হতে চললো আবিদ টিভি দেখে না। ক্রিকেট-ম্যাচ দেখার সে আসক্তি কবেই গেছে। প্রথম প্রথম পেপারে ম্যাচের স্কোর জেনে নিতো। এখন তারও প্রয়োজন পড়ে না।
বিশ্বকাপ ফুটবল গেছে, বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও এশিয়া কাপ গেছে। তার টিভিতে ম্যাচ দেখার ইচ্ছেটুকুও জাগে নি।
আবিদ বুঝতে পারে, এ কেবলই তার বারংবার তাওবার ফল। যে তাওবাগুলো সে বার বার ভেঙ্গেছে, কিন্তু আশাহত হয় নি। মাস দু'মাসের গাফলতির পর আবার তাওবা করেছে, নামাজ ধরেছে, দিলটা নরম করার চেষ্টা করেছে।
হয়তো এক তাওবায় তার পরিপূর্ণ ওয়াশ হয় নি। কিন্তু তার বারংবারের হাহুতাশ ও অনুতাপ রব ঠিকই ভালোবেসেছেন। তাই অবশেষে তাকে কাছে টেনে নিয়েছেন।
বন্ধু! তুমি গুনাহ ছাড়তে পারছো না?
কিন্তু সাবধান, বারংবার তাওবার কথা ভুলে যেও না!
আত্ তায়িবু মিনায যামবি কামান লা যাম্বালাহু।
সুত্র