বিপদ্গ্রস্থকে সাহায্য করা নৈতিক দায়িত্ব।

একবার এক ইঁদুর লক্ষ্য করল যে বাড়িতে ইঁদুর মারার ফাঁদ পাতা রয়েছে। সে খুবই ভয় পেল। ফাঁদটি অকেজো করার জন্য সে ওই বাড়িতে থাকা মুরগির সাহায্য চাইল। মুরগি ঘটনা শুনে জবাব দিল-
“ ফাঁদটি আমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। অতএব আমি এখানে কোন সাহায্য করতে পারবনা”।

মুরগির কাছ থেকে এই উত্তর শুনে ইঁদুর খুব দুঃখিত হল এবং ছাগলের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইল। ছাগল ফাঁদের কথা শুনে বলল-
“ওই ফাঁদ বড়দের জন্য নয়। আমি এখানে তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারবনা”।

ইঁদুর ছাগলের কাছ থেকে একই উত্তর শুনে দুঃখিত হয়ে গরুর কাছে এলো। সব কথা শুনে গরু বলল-
“ইদুরের ফাঁদ আমার মত বড় প্রাণীর কোন ক্ষতিই করতে পারবেনা। যা আমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা- তাতে আমি সাহায্য করতে পারবনা”।

ইঁদুর শেষ পর্যন্ত নিরাশ হয়ে তার ঘরে ফিরে এলো।

রাতের বেলা বাড়ির কর্ত্রী অন্ধকারের ভিতর বুঝতে পারলেন যে ফাঁদে কিছু একটা ধরা পরেছে। অন্ধকারে ফাঁদের কাছে হাত দিতেই উনি হাতে কামড় খেলেন এবং দেখলেন ফাঁদে ইঁদুরের বদলে সাপ ধরা পরেছে।

তার চিৎকারে কর্তার ঘুম ভাঙল। তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকা হল। চিকিৎসা শুরু হয়ে গেল। কিন্তু অবস্থা মোটেই ভালো না।

পথ্য হিসেবে ডাক্তার মুরগির সূপ খাওয়াতে বল্লেন। সুপের জন্য কর্তা মুরগিকে জবাই করে দিলেন।

অবস্থা আস্তে আস্তে আরও খারাপ হতে লাগলো। দূর দূরান্ত থেকে আরও অনেকে আত্মীয় স্বজন আসতে লাগলো। বাধ্য হয়ে কর্তা ছাগলকে জবাই করলেন তাদের আপ্যায়ন করার জন্য।

আরও ভালো চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার হতে লাগলো। অবশেষে বাড়ির কর্তা তাদের গরুটিকে কসাইখানায় বিক্রি করে দিল।

একসময় বাড়ির কর্ত্রী সুস্থ হয়ে উঠল। আর এই সমস্ত কিছু ইঁদুরটি তার ছোট্ট ঘর থেকে পর্যবেক্ষণ করল।

শিক্ষণীয় বিষয়ঃ কেউ বিপদে সাহায্য চাইলে তাকে সাহায্য করা উচিৎ, হোক সেই বিপদ আমাকে স্পর্শ করুক বা না করুক। বিপদ্গ্রস্থকে সাহায্য করা নৈতিক দায়িত্ব।

অলস মুহূর্ত, বিন্দু বিন্দু রক্ত!

প্রায় ছয় বছর আগের কথা। আমার নতুন ঝকঝকে বাসায় হঠাত একটি তেলাপোকা দেখতে পেলাম, পিচ্চি সাইজের। আমি এই জিনিসটা খুব ভয় পাই। আমার বাসায় ছিলও না। এলো কি করে তা ভাবতে লাগলাম। তখন মনে পড়লো, দুদিন আগে এক ভদ্রলোকের বাসা থেকে কিছু ইলেকট্রনিক্স এনেছিলাম, তিনি দেশে চলে যাচ্ছেন, বলেছিলেন ওগুলো নিয়ে যেতে। তখন মাত্র সৌদি আরবে এসে বাসা নিয়েছি, জিনিসগুলো আমারও প্রয়োজন ছিল। তাঁর বাসায় প্রচুর তেলাপোকা দেখেছিলাম। হয়তবা সেখান থেকেই চলে এসেছে! এসব বিষয়ে অনভিজ্ঞ আমি ব্যাপারটা মাথা থেকে সরিয়ে দিলাম। এসেছে, চলে যাবে! তার বেশ কিছুদিন পর একদিন রাতে ঘুম ভেঙে পানি খাওয়ার জন্য রান্নাঘরে গিয়ে হাত পা ভয়ে ঠাণ্ডা হয়ে গেল! শ'খানিক তেলাপোকা রান্নাঘরময় হেঁটে বেড়াচ্ছে!!! এরা কখন এলো, এতগুলো কিভাবে হল???! সেই একই ভয় আবারও পেয়েছিলাম এ বছরের শুরুতে, যখন একের পর এক ঘটনা ঘটে চলছিল! একজন নাস্তিকের মৃত্যু থেকে তার সূচনা। সেই একই প্রশ্ন মনে এসেছিল-- এই সব কখন হল, কিভাবেই বা?! উত্তরটাও হয়ত একই। আমার ঘটনা শুনে এক ভাবী যেটা বলেছিলেন। "এই জিনিস একটাকেও যদি ফেলে রাখা হয়, হাজারটা গজাবে!"

প্রতিটা অনাচার যখন আমরা অপ্রতিবাদে ফেলে রাখি, ভাবি যে ও আর এমন কি, তখন সেই সামান্য অনাচার একসময় বিশাল এক আগুন হয়ে ওঠে! ওতে পুড়তে থাকে আমাদের নিজেদেরই কেউ না কেউ! এই নাস্তিক, এদের অনুসারী, মানুষের মনের এত ভুল ধারণা, ইসলাম নিয়ে এত ভয় ভীতি-- একদিনে হয়নি! কিন্তু, যতদিনেই হোক, সেই দিনগুলোতে আমরা নিজেরা কি করেছি??? উত্তর আছে কি, আমাদের কাছে??!

ছোটবেলায় দোয়ার বই ঘাঁটলে প্রায়ই দেখতে পেতাম অলসতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে বলা হচ্ছে। ব্যাপারটা অস্বস্তিকর লাগত। আমি অলস। কিন্তু এতে তো কোথাও কোনও সমস্যা হচ্ছে না! কী এমন জিনিস এটা, যে অন্যান্য বিপদ আপদ, বার্ধক্য, ঋণ, এসবের থেকে আশ্রয় চাওয়ার সময় অলসতার কথাটাও যোগ করা হয়েছে? দুর্বল ঈমান নিয়ে এটুকু বুঝতে পারিনি যে, বলা যখন হয়েছে, এটা সেই পর্যায়ের সমস্যা!!! প্রথম ব্যাপারটা বুঝতে শুরু করলাম যখন আবিষ্কার করলাম আমি সংসারের কাজ সামলে উঠতে পারছি না! কারণ খুঁড়তে যেয়ে বের হল, প্রায়ই সময় থাকতে একটা কাজ করে ফেলি না। তাই পরে কাজ জমে যায়। আর তখন মনের ওপর সেটা চাপ সৃষ্টি করে! আমিও তখন দোয়া করা শুরু করলাম। কিন্তু আসলে যে অলসতা কি ভয়াবহ সমস্যা, সেটাও টের পেয়েছিলাম এ'বছর দেশে চলতে থাকা সেই গণ্ডগোলের সময়! কিভাবে?? বলছি, তার আগে একটি চিঠির কথা বলি!

মেয়েকে নিয়ে সিরিয়ার মুসলিমদের ওপর চলা অত্যাচারের ভিডিও দেখছিলাম দু বছর আগে। দেখছিলাম বলাটাও ভুল, শুনছিলাম। চোখে তো সবকিছু ঝাপসা দেখা যাচ্ছিলো-- চোখ তখনো কাঁদতে জানত, তাই! একজন অল্পবয়সী যুবক খুন হওয়ার আগে একটি চিঠি লিখেছিল, সেটাও দেখানো হয়েছে সেই ডকুমেন্ট্রিতে। সেখানে সে বলেছিল, তোমরা যারা বেঁচে আছ, "লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ" কে আঁকড়ে ধরে বাঁচো! আমার তখন নিজের জীবনটার দিকে তাকিয়ে বড় লজ্জা হয়েছিলো। আমাদের ভাইয়েরা মরতে জানে, সে নিয়ে আমরা কাঁদতে জানি। কিন্তু জীবনটা আমাদের এমন উদ্দেশ্যহীনভাবে পার হচ্ছে কেন?? প্রশ্নটা আবার মনে আসে যখন একে একে নাস্তিকদের নাম উঠে এলো তখন। মনে আসে যখন তাদের অনুসারীদের সংখ্যা দেখি তখন। মনে আসে যখন রাতের অন্ধকারে নিরস্ত্র মানুষের প্রাণনাশের কথা শুনা যায়, তখন! মনে আসে যখন কেউ সাহস করে বলে যে একজন মেয়ে নিকাব দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে না, তখন। আমরা কী করছি?? কোথায় চলেছি???

আর তখনই বুঝি, অলসতার থেকে কেন আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে! আমাদের প্রতি মুহূর্তের অলসতা, প্রতিটি মুহূর্তকে "গলা টিপে" মেরে ফেলা-- আড্ডায়, অযথা ঘোরাঘুরিতে, অযথা কাজে-- এসব আমরা ফ্রিতে পাচ্ছি না! পাচ্ছি কোথাও না কোথাও আমাদের কোনও না কোনও ভাইয়ের শরীরের প্রতিটি ফোঁটা রক্তবিন্দুর বিনিময়ে!! পাচ্ছি কোথাও না কোথাও আমাদের অসতর্কতার সুযোগ নেয়া কোনও নাস্তিকের খপ্পরে পড়ে ঈমান হারানো আমাদেরই কোনও ছেলের বিনিময়ে! পাচ্ছি কোথাও না কোথাও আমাদেরই কোন বোনের হিজাব খুলতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয় নামক জায়গাটাকে জীবন থেকে বাদ দেয়ার বিনিময়ে!!! বিনামূল্যে পাই না আমরা এই অলস মুহূর্তগুলো! না, পাইনা বিনামূল্যে!! 

অনেক, অনেক নির্ঘুম রাত কেটেছে অনেকের মত আমারও-- "কী করবো??" ভেবে। এত ময়লা চারিদিকে, কিভাবে পরিষ্কার করবো?? কোথা থেকে শুরু করবো??? চোখে ভেসে উঠলো আমার নিজেরই চেহারা। বাসে করে যখন উমরায় যেতাম, গজগজ করতাম প্রতিটা স্টপেজে! প্রত্যেকে যদি কেবল নিজে পরিষ্কার থাকতো, বাথরুম, অজুর জায়গা কোনদিন এত নোংরা হত না! এ তো নিজে নিজে নোংরা হয়নি, কেউ না কেউ নোংরা করে ফেলে রেখে যাচ্ছে বলেই এমন হচ্ছে!! হ্যাঁ, নিজে! নিজের গুনাহে লিপ্ত হওয়া থামাতে হবে! নিজেকে শুদ্ধ করতে হবে! সারারাত মুসলিম উম্মাহর কথা ভেবে ফজর মিস করা টাইপের ময়লা পরিষ্কারের কাজ করে কোনও লাভ নেই!

মদীনায় রমজান মাসের অনেকটুকু কেটেছিল এবার, আলহামদুলিল্লাহ। প্রায় ২০ পারার মত তিলাওয়াত শোনার তৌফিক হয়েছিলো। কই, শুনে তো মনে হয়নি আল্লাহ এমন এক জাতির ওপর বিশ্বাস রাখেন, যারা হেরে যেতে শিখেছে? এরা সমস্যার ব্যাপকতা দেখে হেরে যেতে শেখেনি, এরা শত্রুর সংখ্যা দেখে পিছিয়ে পড়তে শেখেনি! একজনকে অন্যায়ভাবে মেরে ফেললে আরও হাজারজন ঈমান এনেছে আল্লাহর ওপর! আমরা কি নিজেদের মুসলিম বলি না?? তাহলে কেন আমরা হেরে যাবো?? কেন কাটবে আমাদের প্রতিটা মুহূর্ত উদ্দেশ্যহীন? কেন আমরা প্রতিটা মুহূর্ত "কাটিয়ে" দিবো আর সবার মত-- কিন্তু আঁকড়ে ধরবো না, শিখতে, শেখাতে?! জানার জন্য ব্যয় করবো না কেন প্রতিটি বাড়তি মুহূর্ত? জানবো না কেন আমাদের ইতিহাস, আমাদের দায়িত্ব, আমাদের জীবনের লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য?

ঘুমিয়ে পড়ার জন্য, ঝিমিয়ে পড়ার জন্য মুসলিমদের জন্ম হয়নি! তাই আজ ঘুমিয়ে থেকে, ঘুম ভেঙে কোলাহল দেখে উদ্ভ্রান্তের মত ছুটলে চলবে না! যেহেতু আমরা বেঁচে আছি, আমাদের জন্য কিছু একটা করার সুযোগ এখনো আছে! আসুন আমরা অলসতায় সময়গুলোকে না কাটিয়ে এমন কিছু করি যা নিয়ে আমরা আল্লাহর সামনে আশার সাথে দাঁড়াতে পারি! আমরা কুরআন শিখতে পারি, তাফসীর জানতে পারি। নিজেদের আকিদা ঠিক করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে পারি! ঠিক করতে পারি নিজেদের ছোট ছোট বদঅভ্যাস! নিজেদের জীবনে নিয়ে আসতে পারি ছোট ছোট সেই ভালো কাজগুলো যা আল্লাহর রাসুল (সা) তাঁর ব্যস্ত জীবনের মাঝেও আঁকড়ে ধরে ছিলেন!

যখনই মন চাইবে অলসতায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে, অলস দিন কাটাতে, আমরা যেন মনে রাখি, এর বিনিময়ে গোটা মুসলিম উম্মাহর রক্তক্ষরণ হচ্ছে! ঘুমিয়ে দিন পার করতে এই পৃথিবীতে মুসলিমরা আসেনি! জীবনের লক্ষ্য জীবন পার করে দেয়া না! আমরাও জীবন পার করবো না এভাবে উদ্দেশ্যহীন ভাবে, কর্মহীন অলসতায়, অজ্ঞতায় আর অপারগতায়! ঘুমিয়ে থাকবো না! ইনশাআল্লাহ!

আরব শাসক এবং তাদের সমর্থক স্কলারদের নিয়ে Musa Cerantonio এর লেখা




আমার দেখা মুসলিম বিশ্বের বিড়ম্বনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে , কিছু মুসলমান আছে যারা অন্ধভাবে মুসলিম বিশ্বের রাজা এবং শাসকদের পূজা করে, যদিও তারা কখনোই তাদেরকে দেখা বা তাদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করার মত কোন বিষয়ের নিকটবর্তীও হয় নাই । আবার আমাদের মধ্য হতে এমনও আছে যারা এইসব রাজা এবং শাসকদের পরোয়া করে না, যদিও আমারা তাদের কাছাকাছি ছিলাম এবং তাদের প্রাসাদে আমাদের ব্যতিব্যাস্ত করে রাখা হয়েছিল ।

একটা সময় ছিলো যখন আমি উম্মাহর প্রতি তাদের শাসকদের গুরু প্রতারনা সম্পর্কে অনবহিত ছিলাম। মুসলিম হওয়ার পর আমার মনোযোগ ছিল দ্বীন শেখার দিকে, রাজনীতি নিয়ে ভাবার সময় কিংবা ইচ্ছা কোনটাই আমার ছিল না ।অবশ্য আমি এসব রাজপরিবারের কিছু ব্যাপারে গুজব শুনেছিলাম, কিন্তু তখন এসব ব্যাপারে জানার জন্য কোন আগ্রহ জন্মায়নি । আমি আমার শিক্ষা জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি সেই সব আলেমদের সাথে যারা এসব শাসকদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল, মাঝে কাঝে তাদের প্রশংসাও করেন ।এমনকি আমি তাদের মধ্যে অনেককে দেখেছি যারা এসব শাসকদের সমালোচনাকারীদের সাথে তুমুল তর্কে লিপ্ত হতেন । তারা এসব শাসকদের সমর্থনে প্রবল আবেগপূর্ণ বিতর্কে জড়িয়ে পরতেন এবং শাসক হিসেবে তাদের বৈধতা দানের উপর জোর দিতেন ।

আমি তাদের অনেকের সাথে সাক্ষাৎ করেছি । যেহেতু ইসলামের রাজনৈতিক এস্পেক্টে আমার কোন আগ্রহ ছিল না তাই আমি কখনোই তদের প্রসংশা বা তাদের আক্রমণ করিনি । সময়টা এভাবেই কাটছিলো । আমি বিভিন্ন কনফারেন্সে তাদের সাথে যোগ দিয়েছি।  আমাকে এ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে । আমাকে তাদের প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং আমি তাদের সাথে খেয়েছি । একবার শাসকদের মধ্যে একজনের সাথে আমার একটা ফটো তোলা হয়েছিল, যেটা পরদিন বিভিন্ন পত্রিকার প্রথম পাতায়  ছাপা হয়েছিলো । আমার সাথে যারা ছিল তারা আমাকে বললো আমার নাকি রোমাঞ্চিত হওয়া উচিৎ , কিন্তু সত্য বলতে আমার তেমন কিছু  মনে হয়নি ।

এক সময় আমি এসব শাসক এবং তদের অনুসারীদের বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করি ।  যেমনটা বলেছি আমি তাদের সম্পর্কে  কোন পূর্ব ধারণা নিয়ে সেখানে যাইনি, কিন্তু সেখানে তাদের সাথে থেকে আমি দেখেছি তারা আদর্শ নেতা হওয়া থেকে কত দূরে । আমি শুনেছি কিভাবে তারা অন্যদের কাছে সুদকে ন্যায্যতা দিচ্ছিলো যে এটা তাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । আমি তাদের সাথে বসেছি এবং দেখেছি ইসলামের মৌলিক হুকুম এর ব্যাপারে তারা কতটা অজ্ঞ । আমি দেখেছি কিভাবে তারা কবীরা গুনাকে সহজ ভাবে নিচ্ছে । আর আমি যখন এসকল ব্যাপারে তাদের ‘আলেম’দের প্রশ্ন করলাম তারা আমাকে উপদেশ দিল এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন না হতে এবং চুপচাপ থাকতে ।

আমি তাদের কিছু ইমামকে(পৃথিবী ব্যাপী সুপরিচিত)  আমাদের মুখের সামনে সুস্পষ্ট মিথ্যা দিয়ে অন্যদের বোকা বানাতে দেখেছি । আমি আশ্চর্য হচ্ছিলাম কিভাবে তারা এমন কাজ করতে পারে । আমি দেখেছি তারা ইসলাম থেকে কত দূরে আর সত্যিই তাদের এই অবস্থার জন্য কষ্ট পেয়েছিলাম ।

আমি আমার সফরে সেসব দেশের বিভিন্ন আলেমদের সাথে সাক্ষাৎ করা শুরু করলাম এবং একই সাথে অবহিত হলাম যে  এসব দেশে আসলে কি হচ্ছে । উদাহরণ সরূপ আমি রমজান মাসে কুয়েতের  এক জন অন্যতম ধনী লোক এবং কিছু স্কলারদের সাথে সাক্ষাৎ করছিলাম । আমরা যখন একত্রিত হলাম তখন ঠিক আমাদের উপর দিয়ে একটা ইউএস যুদ্ধবিমান উড়ে গেল, যেটার পাখার নিচে বোমা দেখা যাচ্ছিল । প্লেনটি ইরাকে বোমা মারার উদ্দেশে যাচ্ছিল যেটা তারা কয়েক বছর ধরে করে আসছে । যখন আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা শুরু করলাম তখন সাথে সাথে তারা সবাই চুপ হয়ে গেল এবং আমাকে বলা হল এসব ব্যাপারে উদ্বিগ্ন না হতে । সেই মাসে আমি দেখেছি কিভাবে তাদের প্রত্যেক ইমাম এবং স্কলার এসব আলোচনা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে এবং এমন ভাব দেখিয়েছে যেন এসবের কোন অস্তিত্ব নেই ।

সউদী আরবে, ফটোগ্রাফির পক্ষে বললে তারা আপনাকে আকীদা সংশোধনের কথা বলবে । কিন্তু আমি যখন সৌদি রাজার ২০ ফুট ফটো যেটা সেখানকার প্রায় সবখানে দেখা যায়, সেটা নিয়ে তদেরকে জিজ্ঞেস করি তখন তারা চুপ হয়ে যায় ।
আমি যখন পরে তাদের মধ্যে একজনকে তাদের দেশে অবস্থিত আমেরিকান ঘাটি নিয়ে প্রশ্ন করি সে এমন এক ভাব ধরার চেষ্টা করে যেন সে জানে না আমি কি নিয়ে কথা বলছি ।  আমার সাথে অন্য যারা  ছিল তারা সেই সুপরিচিত ঘাটির অবস্থান কনফার্ম করলো এবং শেষে সে নিজেও স্বীকার করলো সে বিষয়টা জানতো । আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম সেকি মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব’র সেই বইটার সাথে পরিচিত যেখানে ইসলাম থেকে বাতিল হোয়ার জন্য ১০টি কারন উল্লেখ করা হয়েছে । সে বলল সে এগুলো জানে । আমি তাকে বললাম বইটিতে উল্লেখিত ৮ম কারন মতে, মুসলমানদের সাথে যুদ্ধরত অমুসলিমদের সাহায্যকারী ধর্মত্যাগী ।  সে হঠাৎ চুপ হয়ে গেল এবং উত্তর দিতে অস্বীকার করলো । পরে বলল আসলে সে এ ব্যাপারে জানতো না আর বইটিতে উল্লেখিত কারণগুলোও তার জানা ছিল না । আমি বিস্মিত হয়েছিলাম ।

আমাকে যখন তারা ফটোগ্রাফি  ইস্যু নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আমি তাদেরকে ইউসুফ আল কারাদায়ি এর ফতোয়া ব্যাক্ষা করা শুরু করলাম । নাম শুনেই  তারা  উনার ফতোয়া শুনতে আপত্তি জানালো । এমনকি তাদের মধ্যে একজন পরে তাকে কুকুর বলে গালি দিল । এমনকি শুধুমাত্র তার নাম উল্লেখ করার কারনে তারা আমার সমালোচনা শুরু করলো । আমি বিস্মিত হলাম শুধুমাত্র উনার নাম উল্লেখ করার কারনে তারা কিভাবে আমার সাথে এমন করতে পারে ! পরদিন আমরা মুসা নামে তাদের একজন শিক্ষকের সাথে সাক্ষাৎ করলাম । তারা তাকে ফটোগ্রাফি ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করলো আর তিনি উত্তর দিতে গিয়ে সর্বপ্রথম যার নাম উল্লেখ করলেন তিনি হলেন ইউসুফ আল কারাদায়ি । আর সেই সকল লোকদের  প্রতিক্রিয়া কি ছিল যারা সেই একই নাম উল্লেখ করার কারনে আমার সমালোচনা করেছিলো ?......... কিছুই না । যখন পরবর্তীতে আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম কেন তারা ইউসুফ আল কারাদায়ি নাম মেনশন করার পরও তাদের শিক্ষককে কিছু বলল না , অথচ আমার সমালোচনা করেছিল ? তারা তাদের মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল । আমি তাদেরকে উপদেশ দিলাম তাদের এই অন্ধ অনুসরন বন্ধ করতে । পরবর্তীতে আমাকে তাদের নেতা রাবি আল মাদখালি এর সাথে সাক্ষাতের আমন্ত্রন করা হল, যা আমি শিষ্টতার সাথে প্রত্যাখান করেছিলাম ।

UAE তে recent একটা কনফারেন্সে যোগ দিব কি না ভাবছিলাম, কারন তখন UAE হতে একটা ট্রুপ আফগানিস্তানে মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে ইউএসএ কে সাহায্য করছিলো , যেটা পরিষ্কার কুফুরী । (এখনও করছে) । অবশেষে একজন বিশ্বস্ত শিক্ষকের পরামর্শে আমি সেখানে গেলাম, যদি কোন ভাল পরিবর্তন আনতে পারি এই আশায় । আমার সফরের সেই সময়গুলোতে দুবাইয়ের রাস্তাগুলোতে  এতবেশী অশ্লীলতা দেখেছি যে এটাকে আমি আর মুসলিম দেশ বলতে পারছিনা ।
যখন আমরা সেখানে থাকা পতিতাদের সরিয়ে দেবার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করলাম, আমাদেরকে বলা হল পুলিশের পক্ষ হতে তাদের জন্য কোন বিধিনিষেধ নাই আর আমরা যেন এটা পরিবর্তন করার চেষ্টায় সময় নষ্ট না করি ।

আমার জন্য আর একটা সারপ্রাইজ ছিল যখন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে ডিনারে যোগ দিয়েছিলাম । তাদের মধ্যে একজন গর্বের সাথে বলছিলেন কিভাবে সে শরীয়া আইন  নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করেছে্ন । যখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম UAE তে কোন ইউনিভার্সিটি ইসলামিক শরীয়াহ শেখায় । তিনি জবাব দিলেন আসলে শরীয়াহ নয় এটা ছিল তাদের national law আর এটা তো একই কথা কারন UAE ইসলামিক শরীয়াহ দ্বারা শাষিত । তার কথা শুনে আমাদের মধ্যে অনেকে হেসে উঠল, অনেকে লজ্জায় তাদের মুখ ঢাকল এবং এক ছোট ছেলে বলে ঊঠলো “ তার মানে আপনি কি বুঝাচ্ছেন আজকে এই দেশে সব এলকোহল ইসলামিক শরীয়ার কারনে ?”  মন্ত্রী মহোদয় এবার তার মুখ বন্ধ করলেন , একটা ছোট ছেলের মাধ্যমে মৌলিক ইসলামিক শরীয়াহ নিয়ে তার অজ্ঞতা প্রকাশ হওয়ার পর তিনি আর কোন কথাই বললেন না ।

কনফারেন্সের শেষের দিকে আমার সুযোগ হয়েছিল শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার । আমি খিলাফাহর সত্বর প্রত্যাবর্তন , শরীয়াহ দ্বারা শাসনের প্রয়োজনীয়তা এবং ইসলামের শ্ত্রুদের আসন্ন পরাজয় নিয়ে বললাম । সেখানে বড় বড় চোখে কিছু মন্ত্রী বসে ছিলেন আর ধাক্কা খাচ্ছিলেন আমি এসব কি বলছি ! আমি আর কখনো তাদের আমন্ত্রনের আশা করি না । কিন্তু যদি কখনো সুযোগ হয়, আমার আরও অনেক কিছু বলার আছে ।

আরও অনেক কিছু আছে যা আমি এখানে উল্লেখ করতে পারি কিন্তু আমি মনে করি এটুকু লেখাই যথেষ্ঠ হবে । উম্মাহর এই সব বিশ্বাসঘাতকদের বিরোধিতা করায় কেউ যদি মনে করেন আমার জানাশোনায় ঘাটতি আছে, তাহলে আপনাকে বলছি আমি তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, তাদের সাথে তাদের প্রাসাদে বসেছি যা আপনি করেননি । আমি তাদের মুখ হতে কুফর শুনেছি, আমি তাদের ইমামদের নিফাক দেখেছি । আমি উম্মাহর এসব শ্ত্রুদের বিশ্বাসঘাতকতা প্রত্যক্ষ করেছি এবং তদেরকেও দেখেছি যারা উম্মাহর এসব বিশ্বাসঘাতকদের অন্ধভাবে সমর্থন করছে । এরপরে আপনার যা খুশি তা আপনি বলতে পারেন । আমি আমার ফেইথ নিয়েই আমার প্রভুর কাছে ফিরে যাবো । আমি মুজাহিদিনদের সত্যপরায়নতায় কনভিন্সড , প্রাসাদ স্কলারদের মিথ্যা আমাকে বোকা বানাতে পারে নি ।

( তাদের সব স্কলার একই রকম নয় । এমন অনেক আলেম আছেন যারা সত্য বলতে গিয়ে রাজপরিবারের রোষানলে পরেছেন, তাদেরকে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে ।)

source

আফসোস , শুধুই আফসোস ...!!!!

আমার কিছু কথা বলি মজা করে যা আমাদের কথা নয় ...

১. ... এর ... ‘আব্দুল্লাহ’

২. তুই একটা ‘মফিজ’

৩. ‘মোল্লার’ দৌড় ‘মসজিদ’ পর্যন্ত

৪. এইটা হলে কি ‘মহাভারত’ অশুদ্ধ হয়ে যাবে ?

৫. তুই একটা ‘ছাগু’ (দাড়িওয়ালাদের জন্য)

৬. কস কি ‘মমিন’?

আচ্ছা ...
‘আব্দুল্লাহ’ কার নাম ?
‘মোল্লা’ কাদের বলা হয়?
‘মসজিদ’ কার ঘর ?
‘মহাভারত’ কি শুদ্ধ ?
‘দাড়ি’ কার বৈশিষ্ট্য ?
‘মমিন’ কে?

আমার কি চিন্তা করি না যে আমরা কি বলছি ?
আমাদের মুখে কোন কিছুই এখন আর আটকায় না ?
ইসলামকে নিয়ে হাসি তামাশা করে যে কথাগুলো বলা হয়েছে আমরা নিজেরাই তা আমদের উপর প্রয়োগ করছি ???

আফসোস হয় শুধুই আফসোস ...!!!!

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি উভয় চোয়ালের মধ্যভাগ (জিহ্বা) এবং দুই রানের মধ্যভাগ (লজ্জাস্থান) হেফাজতের দায়িত্বগ্রহণ করে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি।” [বুখারী, ৬৪৭৪]

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অন্যথায় চুপ থাকে।” [বুখারী ও মুসলিম]

“মু’মিন ব্যক্তি কখনো ঠাট্টা- বিদ্রুপকারী, অভিশাপকারী, অশ্লীলভাষী ও অসদচারী হতে পারে না।” [তিরমিযি]