জর্জের ঈদ উদযাপন !!!


জর্জ নামে একজন লোক – ফর্সা,লম্বা এক সুপুরুষ। পরিবার নিয়ে গ্রামে থাকে – তার স্ত্রী ও তিন সন্তান (দুই মেয়ে ও এক ছেলে)। জর্জ অস্ট্রেলিয়ায়  তার শহুরে ব্যস্ত জীবন ফেলে শান্তিতে থাকার জন্য পাহাড়ের ধারে এক গ্রামে থাকে। ২৯ শে জিলকদ্ব, জর্জ ও তার পরিবার ব্যস্ত আগামীকাল কি পহেলা যিলহাজ্জ নাকি তা নিয়ে। সে একটি ইসলামিক চ্যানেলে এ ব্যাপার নিয়ে শুনতে চেষ্টা করছিল কিন্তু সে পরিষ্কারভাবে তা শুনতে পারছিলনা। পিছনে তার স্ত্রী চিৎকার করে বলছিল “ইসস!!! আমাদের যদি কোন মুসলিম অ্যাম্বেসির ফোন নাম্বার থাকত। ”তার ছেলে (বয়স ১৮) এসে বলল “বাবা আমি ইন্টারনেটে খুঁজে দেখি” – তার ছেলে খুঁজার পর তাকে জানালো যে আগামীকাল পহেলা যিলহাজ্জ। জর্জ খুব খুশী হয়ে গেল – শনিবার হল ৯ই যিলহাজ্জ এবং রবিবার হল ঈদ।

দেখতে দেখতে শনিবার চলে আসল। সে খুব খুশী মনে একটি ছাগল কিনতে গেল – একটি স্বাস্থ্যবান ছাগল যা কিনা সে কোরবানি দিবে। বাজারে গিয়ে তার মন মত একটি ছাগল সে পেল কিন্তু দরদাম করে দেখল তার পর্যাপ্ত টাকা নেই, তাই সে কাছের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে ছাগলটা কিনল। সে ছাগলটি গাড়ির পেছনে তুলে নিলো। জর্জ গাড়ি চালাচ্ছিল আর তার ৫ বছরের মেয়েটি পিছন থেকে চিৎকার করে বলতে লাগল “বাবা,বাবা, তুমি যে হিজাব টা এনেছ আমার জন্য, ওটা কি আমি কালকে পরতে পারব ? ” জর্জ বলল “হ্যাঁ মা, তুমি কাল পড়বে”। মেয়ে আবার বলতে লাগল “বাবা বাবা, আমি কি মুখও ঢেকে ফালতে পারব ?” সে বলল “না মা তা করার দরকার নেই শুধু হিজাব পড়লেই হবে”। মেয়ে আবার বলে উঠল “বাবা বাবা, ভাইয়া কি ওই পাঞ্জাবি আর সাদা টুপিটা পড়বে?”সে বলল “হ্যাঁ মা”। এরকমই পুরো পরিবার খুবই আনন্দিত ও উত্তেজিত ছিল। জর্জের স্ত্রী তাকে বলল “ আমরা কি ছাগলের মাংসগুলো  তিন ভাগে ভাগ করব ? ” সে বলল “হ্যাঁ আমরা তাই করব”। সে গাড়ির রিয়ার গ্লাস দিয়ে ছাগলটা দেখে ভাবতে লাগল যে সে কি শরীয়া মোতাবেক কোরবানির পশু কিনল নাকি (কানা হতে পারবে না, অসুস্থ হতে পারবে না, রোগা হতে পারবেনা) ?? সে ছাগলটার দিকে দেখে খুবই খুশী হয়ে গেল – নাহ ঠিক আছে।  ঘরে ফিরে তার স্ত্রী জর্জকে মনে করিয়ে দিল, "শুন, তিন ভাগের এক ভাগ আমরা দিব আমাদের প্রতিবেশী জেনেট, রুথ ও কার্লিকে; আর এক ভাগ দিব গরিবদের; আর বাকিটা আমাদের, আমরা Bar B Q করব।"  জর্জ বলল, "আমার মনে থাকবে।"

রবিবার জর্জ খুব ভোঁরে ঘুম থেকে উঠল, খুবই আনন্দিত ও উৎফুল্ল। সে সুন্নাহ অনুযায়ী নিজ হাতে জবেহ করতে চায়। জবেহ করার সময় সে কিবলার দিকে মুখ ঘুরাতে চেষ্টা করল কিন্তু সে জানে না কোন দিকে কিবলা। তার স্ত্রী তাকে বলল তুমি সৌদি আরবের দিকে ঘুরে দাঁড়াও, তার ছেলে বলে উঠল, বাবা আমি ইন্টারনেটে দেখেছিলাম কিবলা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমে। জর্জ সেই দিকে ঘুরে জবেহ করল। এরপর সে তার স্ত্রীকে নিয়ে মাংস তিন ভাগে ভাগ করল।

এরপর সে গোসল করল এবং বের হয়ে বলল,“দ্রুত কর, না হয় আমরা চার্চে যেতে দেরি করে ফেলব । ভুলে যেও না আজকে রবিবার।......... জর্জ একজন Christian। কি অবাক হচ্ছেন......কিন্তু কেন ?? আমরা ত অবাক হয়ে যাই না যখন মুহাম্মদ কিংবা ফাতেমা নামধারী মুসলিম রা Christmas day বা পূজার মন্ডবে গিয়ে ওদের সাথে শরীক হয়।     

গত ১৩-১৪ অক্টোবর ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান-১ এ অবস্থিত হোটেল Washington  -এ এক মেলা হল “ ঈদ পূজা ফিউশান মেলা”। এই হল “আল ওয়ালা ওয়াল বারা” ভুলে থাকা আমাদের মুসলিম ভাইদের অবস্থা। (আল্লাহ না করুক ) কোন দিন যদি ঈদ পূজা একই দিনে পড়ে তাহলে হয়ত আমাদের ভাইরা এক পাঞ্জাবিতেই ঈদের সালাত আদায় করে ঐ পাঞ্জাবি পড়েই রাতে মন্ডপে যাবে।

আমাদের মুসলিম ভাইরা আজ ভুলতে শুরু করেছে ইসলাম একটা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আমদের সব সময় একজন মুসলিম হিসাবে থাকতে হবে। একজন মুসলিমের কেবল জুম্মার দিনে ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত “মুসলিম” (!!) আর অন্য সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নামে “সেকুলার” কিংবা কিছু সময় আবার তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

ইবনুল কায়্যিম (রহমাতুল্লাহ) তার আহকাম আহ্ল আল-দিম্মা গ্রন্থে বলেন কাফিরদের তাদের উৎসবে সম্ভাষণ জানানো মুসলিম ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ। এই বলে সাধুবাদ জানানো “‘A happy festival to you’ কিংবা  ‘May you enjoy your festival,’  কিংবা এই জাতিও কিছু বলা হারাম।এটা কাউকে মদ খাওয়া বা খুন করা বা ব্যভিচার করায় সাধুবাদ জানানোর মত। যাদের নিজের দ্বীনের প্রতি কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই তারা এ ধরণের ভুল করতে পারে।

ইবনুল কায়্যিম (রহমাতুল্লাহ) এর মতে এই সাধুবাদ জানানো হারাম হচ্ছে কারণ এটার মাধ্যমে কাফিরদের এই ধর্মীয় রীতিকে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়ার নামান্তর।

আল্লাহ বলেন –

“যদি তোমরা অস্বীকার কর, তবে আল্লাহ তোমাদের থেকে বেপরোয়া। তিনি তাঁর বান্দাদের কাফের হয়ে পড়া পছন্দ করেন না। পক্ষান্তরে যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে তিনি তোমাদের জন্যে তা পছন্দ করেন। একের পাপ ভার অন্যে বহন করবে না। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ফিরে যাবে। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন। নিশ্চয় তিনি অন্তরের বিষয় সম্পর্কেও অবগত।” (সূরা আল-যুমার, ৩৯:৭)


“ .........আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম......” (সূরা আল মায়েদাহ, ৫:৩)


তাই তাদেরকে এই সব ক্ষেত্রে সাধুবাদ জানানো হারাম। যদিওবা তারা আমাদের এমন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয় আমরা তা বর্জন করব। কোন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নামে আমরা তা গ্রহণ করতে পারি না কারণ তাদের এই অনুষ্ঠান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

 আমাদের ভুলে গেলে চলবে না এই আয়াত –
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।” (সূরা আল ইমরান, ৩:৮৫)

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না এই হাদিস –
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “ যে তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করেছে সে তাদেরই একজন।”

ইবন তাইমিয়া তার বই “ ইক্তিদা আল-সিরাত আল-মুস্তাকিম মুখালিফাত আসহাব” এ বলেছেন – “ তাদের ধর্মীয়  অনুষ্ঠানে সাধুবাদ জানানো মানে তাদের মিথ্যা বিশ্বাস ও কর্মের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন এবং তাদের এই ভ্রান্ত পথকে প্রচারে আশা জাগান।”

কেউ যদি উপরোক্ত এমন কিছু করে ,তাহলে সে গোনহগার; হতে পারে তার বন্ধুত্বের খাতিরে নিশ্চুপ অবস্থান কিংবা তার লজ্জা, সংকোচ-বোধ, সে যে কারণেই করে থাকুক না কেন, কারণ এটা ইসলামে মুনাফিকি হিসেবে সাব্যস্ত হবে, আর এটা কাফিরদেরকে তাদের ধর্মের ব্যাপারে  গর্বিত করে তুলে।

আর মুসলিমদের উৎসব হল দুই ঈদ আর ইসলাম অনুমোদিত অনুষ্ঠান হল বিয়ের ওয়ালিমা ও শিশুদের আকিকা। এছাড়া মুসলিম কখনো জীবনের অতীতের বা বর্তমানের কিছু সময়কে “বিশেষ” জ্ঞান করে সেলিব্রেট করতে পারে না – মুসলিমের জন্য সময়ই জীবন,আর জীবনটা হল একটা পরীক্ষা।  পরীক্ষার হলে বসে কেউ যদি মোবাইলে গেমস খেলে বা ফেইসবুক নিয়ে সময় কাটায় এবং প্রতিটি ঘণ্টা অতিবাহিত হবার সংকেতে যদি সে আনন্দ/উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, তাকে যেমন লোকে উন্মাদ বা অপ্রকৃতিস্থ ভাবার কথা, জীবনে যারা “অতীতের সময়ের স্মরণে” কিংবা “একটি বছর জীবন থেকে বিদায়” বলে আনন্দিত বোধ করেন, ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে তাদেরও তেমনি উন্মাদ বলে গণ্য করার কথা। অন্য সব বাদ দিলেও, কেবল এই যুক্তিতেই মুসলিম কখনো নববর্ষ, জন্মদিন বা বিবাহ-বার্ষিকী নিয়ে আনন্দ/উচ্ছ্বাস-এ নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে পারে না।

Collected From
Brother

Moazzem Nabil