চারদিন আগে আমার কাছে এক মহিলা এসেছিলেন।

সাথে তার কিশোরী কন্যা। মহিলা হিজাব পড়া থাকলেও মেয়েটির পড়নে ছিল জিন্স প্যান্ট ও হাফহাতা টি শার্ট। মেয়েটির ডান হাতের কিছুটা অংশ পুড়ে গেছে। কিভাবে পুড়েছে জিজ্ঞেস করাতে মহিলা কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন---
-- আমি বিছানায় কাপড় ইস্ত্রি করছিলাম। হঠাৎ একটা জরুরী কাজে ইস্ত্রি বিছানাতে রেখেই রান্না ঘরে যাই। পাশেই মেয়েটা ঘুমিয়ে ছিল। ঘুমের মধ্যেই ও কখন যেন পাশ ফিরে। সাথে সাথে গরম ইস্ত্রি তার হাতে লেগে হাত পুড়ে যায়। আমার ভুলের জন্যই আজ মেয়ে এত কষ্ট পাচ্ছে।

: আপনি টেনশন করবেন না। পোড়া একটু বড় হলেও সিরিয়াস কিছু না। আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি, সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ্‌। আর ওষুধ খেয়ে চারদিন পর দেখা করবেন।

-- আল্লাহ্‌ যেন তাই করেন। খুব খারাপ লাগছে ডাক্তার সাহেব।
: খারাপ তো লাগবেই মেয়ের কষ্টে। কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতাম...
-- জী, বলেন।
: আপনি আপনার মেয়ের হাতের এই পোড়াতে অনেক কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু আপনি যে আপনার মেয়ের সারা শরীর পোড়ানোর ব্যবস্থা করছেন তার কি হবে?
-- ঠিক বুঝলাম না আপনার কথা।
: খুব সহজ কথা। আপনি নিজে পর্দা করেন। কারণ পর্দা করা ফরয, না করলে জাহান্নামে যেতে হতে পারে। কিন্তু আপনি মেয়ের পর্দার বিষয়ে উদাসীন।
-- আসলে আর একটু বড় হলে ও পর্দা করবে।
: আপনি কি বলতে চান তার পর্দার বয়স হয়নি? আপনি কি দেখেন না এই বয়সী ছেলেমেয়েদের প্রেম করে বেড়াতে। গ্রামে এই বয়সে বিয়ে করে ঘর-সংসার করে, এমনকি সন্তানের মাও হয়। যে সারা বছর পড়ালেখা করে না, সে হঠাৎ করেই পড়ুয়া হয়ে যায় না। পর্দা, রোজা, নামাজ সবই প্র্যাকটিসের বিষয়। হঠাৎ করেই কেউ এসব বিষয় সুচারুরূপে করতে পারেনা।
-- আসলে এভাবে চিন্তা করেনি।
: চিন্তা করেনি, কিন্তু চিন্তা করা উচিৎ ছিল। এখন আপনার মেয়ের হাতের পোড়া নাহয় আমি ওষুধ দিয়ে সাড়িয়ে দিলাম, কিন্তু জাহান্নামে তার পোড়ার কোন চিকিৎসাই নেই। তাই সময় থাকতেই সাবধান হয়ে যান।

আজ মহিলা মেয়েকে সাথে নিয়ে ফলোআপের জন্য এসেছিলেন। মেয়েটি আজ লম্বা হাতার সালোয়ার-কামিজ পড়ে মাথায় স্কার্ফ দিয়ে এসেছে। মহিলা ও মেয়েকে এর জন্য ধন্যবাদ দিলাম।

আমি অনেক ধার্মিক পরিবার দেখেছি যারা তাদের সন্তানের ছোটবেলায় ইসলামের অনুশাসন মানার বিষয়ে অনেকটাই উদাসীন থাকেন। গতানুগতিক বাবামায়ের মতো তারাও সন্তানের ক্যারিয়ার নিয়েই বিজি থাকেন। কিন্তু সন্তান যখন বড় হয়ে যায়, তখন আর তারা তাদের ধর্মের পথে ফিরিয়ে আনতে পারেন না। তখন তাদের আফসোসের সীমা থাকে না। আমার এক আত্মীয়ের মেয়ের অবস্থা এমন হয়েছে।

আল্লাহ্‌ বলেছেন "হে ঈমানদারগন, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।"
আপনার সন্তান দুনিয়ায় অনেক সফল হলো, কিন্তু আপনার গাফিলতির জন্য সে যদি আখিরাতে অকৃতকার্য হয়, তাহলে কিন্তু সে তার দায় আপনার উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজে ভারমুক্ত হবার চেষ্টা করবে। সেদিন কে বাবা, কে মা, কে সন্তান কোন হুঁশই থাকবে না। তাই সময় থাতেই নিজে ভারমুক্ত হোন, নিজের সন্তানকে ভারমুক্ত হতে সহায়তা করুন।

লেখক
Ahsan Sabbir.

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

No comments:

Post a Comment

Plz spread this word to your friends