জীবনে অর্থহীন অসাড় কাজগুলো বাদ দিয়ে ভালো কাজ করি, ভালো অভ্যেস গড়ে তুলি, আল্লাহর খুশিমত চলার চেষ্টা করি, আমাদের জন্য এই জীবন আর পরকালের জীবন--দুই জীবনেই সাফল্য আসবে ইনশাআল্লাহ।

জন্মদিন পালন করা আমার কাছে খুবই অযথা একটা ব্যাপার মনে হয়।
আমরা বাঙালিরা তো মাথা খাটাতে পছন্দ করি না। বিশেষ করে বাঙালি নারী হলে তো কথাই নেই! ষোলো কলা পূর্ণ! একটা মেয়ে মুখে শশা ঘষতে যেই পরিমাণ সময় ব্যয় করে, তার দশ ভাগের এক ভাগ সময়ও একটা বই পড়ার পেছনে লাগায় না। শশা লাগানোই স্বাভাবিক। আমরা জাতি হিসেবেই ফর্সা পাত্রীর পাগল। তাই খালি নারীদেরকে দোষ দিলেও ভুল হয়। বাংলাদেশের যত আছে রূপ চর্চার ঢল, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। অন্তত হাফ ব্লেইম পুরুষদেরও প্রাপ্য, যারা সাদা মেয়ে হলে গরুগাধা বিয়ে করতেও রাজি...

যে জাতি বই পড়তে পছন্দ করে না, সে জাতির বুদ্ধিমত্তার লেভেল কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই আবজাব যত "ডে" আছে, সব গাধার মত পালন করব আমরা এটাই প্রত্যাশিত। কোন দিন কেন আবিষ্কৃত হয়েছিল, কোন দিনের পেছনে কী ব্যবসা চলে--এইসব ইন্টেলেকচুয়াল ডিসকাশন আমাদের কাছে ভাত পাবে না।
 তাই আমি যদি বলি, এই জন্মদিন পালন ইহুদি-খ্রিস্টানদের থেকে এসেছে। আমি যদি বলি, কার্ড আর চকোলেটের ব্যবসা রমরমা করার জন্যই এসব দিবসকে পপুলার করে তোলা হয়, তাহলে কারোই শুনতে ভালো লাগবে না।

আর আমাদের মত ধর্মীয় অনুভূতি সম্পন্ন মুসলিমদেরকে বার্থডে পালনের ব্যাপারে কিছু বলার আমি কে? হুজুর হয়ে মাথা কিনে নিয়েছি নাকি, হ্যাঁ? একটা কেইক কাটলে কী এমন দোষ হয়? আমরা তো আর পার্টি করছি না!!! ছোট্ট শিশুর আবদার পূরণ করেছি মাত্র। বিশ-তিরিশ বছর বয়সেও এরা কীভাবে যেন নিজেকে ডাইপার পরা গ্যাদা বাচ্চা ভাবতে পছন্দ করে..।

যা বলছিলাম, বার্থডে পালন করা আমার কাছে খুবই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। প্রতি বছর বছর বুড়া হচ্ছি, কোথায় জীবনের গুরুতর বিষয়গুলো নিয়ে ভাববো, তা না। মানুষ ডেকে ডেকে বুড়োপনা উদযাপন করছি! এমনকি মৃত মানুষরাও আমাদের পাগলামো থেকে রক্ষা পায় না। একটা মানুষ কবরে গিয়ে কোথায় শান্তিতে থাকবে, তার জন্য আমরা দু-একটা দু'আ চাইলেও তার লাভ।
 অথচ আমাদের মত হুজুগে জাতি মরা মানুষেরও জন্মদিন পালন করে হুলুস্থূল করে। জীবিত ব্যক্তি হলে তো কথাই নেই। ছোটবেলা থেকেই আমরা বাচ্চাদের বোঝাতে সক্ষম যে, জন্মদিন পালন করলে অনেক লাভ। বাপ-মা কষ্টের টাকায় পার্টি করবে। আর গেস্টরা গণ্ডা গণ্ডা গিফট দিয়ে খেয়ে যাবে। মাঝখানে লাভ কার? বাচ্চার! এভাবে আমাদের বাচ্চারা ছোট থেকেই লোভী হতে শুরু করে.. তাদের মধ্যে লোভের বীজ আমরাই ঢুকাই।

এত গিফট না দিয়ে যদি বছরে দুই-এক দিন তাদেরকে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু কিনে দিতাম, সেই সাথে গরিব বাচ্চাদের কথা শোনাতাম, তাহলে হয়ত তারা কিছুটা মানবিকতা শিখত। এখন আমাদের বাচ্চারা মানবিকতা শিখতে পারে না। তারা শেখে স্বার্থপরতা। এক সমাজে একদিকে মানুষ না খেয়ে মরে, আরেকদিকে আমরা হুদাই একটা দিবস বানায়ে সেলিব্রেইট করি।

কারো কাছে টাকা থাক, না থাক, তাকেও একটা উপহার হাতে করেই পার্টিতে যেতে হবে। এরপর শুধু উপস্থিত হলেই হবে না। পরের মাসে নিজের সন্তানের জন্মদিনে আবার সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াতে হবে। হালাল ভাবে ইনকাম করলে তো এত উপরি টাকা হাতে থাকার কথাও না। বাট আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধবের সামনে মান-ইজ্জত রক্ষা করতে একটা ফাটাফাটি পার্টি দেওয়াই লাগে। হোক তার জন্য ধার-দেনা কিংবা ঘুষ নেওয়া..। কী একটা চক্রের মধ্যে ফেঁসে গেছিরে বাবা! আমার এসব চক্র ভালো লাগে না। দুষ্ট চক্র। এই চক্র থেকে বিরত না হলে আমাদের নৈতিক অধঃপতন ক্রমেই বাড়বে, কমবে না।

আরও অনেক কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু ঐ যে বললাম, বাঙালি জাতি আমরা পড়তে পছন্দ করি না। তাই আর বেশি লিখলাম না। আমাদের জন্য জন্মদিন পালন না করতে একটা কথাই যথেষ্ট থাকা উচিত ছিল। কাজটা আল্লাহ তা'আলার অপছন্দনীয়। তাই এসব সস্তা দিবস পালন থেকে দূরে থাকা উচিত। না, একটিবার উইশ করারও প্রয়োজন নেই। দুয়া চাওয়া, সুন্দর জীবনের শুভকামনা জানানো-- কাজগুলি করার জন্য তো বছরের বাকি ৩৬৪ দিন আছেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য এই একটা বিশেষ দিন ধরে উইশ করা, উপহার দেওয়া, উদযাপন করা বাদ দিই। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এক সময় ঠিক হয়ে যাবে।

জীবনে অর্থহীন অসাড় কাজগুলো বাদ দিয়ে ভালো কাজ করি, ভালো অভ্যেস গড়ে তুলি, আল্লাহর খুশিমত চলার চেষ্টা করি, আমাদের জন্য এই জীবন আর পরকালের জীবন--দুই জীবনেই সাফল্য আসবে ইনশাআল্লাহ।

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

No comments:

Post a Comment

Plz spread this word to your friends